মুখোশের অন্তরালে # পর্ব ৪,০৫,০৬

0
878

# মুখোশের অন্তরালে
# পর্ব ৪,০৫,০৬
# কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
#সম্প্রীতি রায়
০৪

আলো- আধাঁরিতে দুটো নগ্ন শরীর আদিম খেলাতে মেতে উঠেছে, শক্ত পুরুষালী হাতের নিপুণ ছোয়ায় নারী শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠছে.. নেশাতুর দুই শরীর যৌনক্রিয়ায় একে অপরকে ছাপিয়ে যাচ্ছে,মৃদু শীৎকার ভরে উঠেছে গোটা ঘরখানা..
সজোরে ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দিল রিক্ত.., রাগে অপমানে হাত পা থর থর করে কাঁপছে ..অব্যক্ত যন্ত্রণায় মুখের শিরা-উপশিরাগুলো ফুলে ফুলে উঠছে..

তিন মিনিটের ভিডিওটা এই নিয়ে পাঁচ বার দেখা হয়ে গেছে ওর.. বারে বারে দেখলেও বাস্তবটা কি মুছে ফেলা অতই সহজ..?
পর্দার নরনারী দুটো যে আর কেউ নয়..লিজা আর সে নিজেই,অত্যাধুনিক টেকনোলজির দ্বারা মেয়েটার মুখ blur করে দিলেও দীর্ঘদিনের শয্যাসঙ্গী থাকার সুবাদে চিনতে ভুল করেনি সে ..
ওহ্,সজোরে রগ দুটো চেপে বিছানায় বসে পড়ে রিক্ত,জীবনে এই প্রথম বার এতটা অসহায় বোধ হচ্ছে নিজেকে.. একটানে বিছানায় শরীরটাকে ফেলে দেয় সে,যন্ত্রণায় মুখটা যেন বেঁকেচুরে যাচ্ছে, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রুমেও বিন্দু বিন্দু ঘামে শরীরটা ভিজে উঠছে ক্রমশ..
কোনোমতে শরীরটাকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে টলতে টলতে এগিয়ে যায় সে,একটানে ড্রয়ারটা খুলে কাঁপা হাতে প্রেসক্রাইবড ঘুমের ওষুধ গুলো বার করে,
আচ্ছা সবগুলো খেয়ে নিলে কি খুব ভুল হয়ে যাবে..?
হঠাৎই ঘোরটা ভেঙে গেল মুঠোফোনের কর্কশ রিংটনে..
~”হ্যাঁ দুর্জয় বল”
কলটা hang up করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল রিক্ত,এতগুলো খারাপের মাঝে কিছু তো অন্তত ভালো হলো..
হারাধন মাহাতোর লাশটা বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে চালান হয়ে যাবে, এখন নমো নমো করে পোস্টমর্টেমটা সেরে ফেললেই ল্যাঠা চুকে যায়!পরিবার-পরিজন কেউ ছিলনা বোধহয় বেচারার..
সকাল থেকে একের পর এক দমবন্ধকর করে পরিবেশে এই খবরটা যেন রিক্তর কাছে একমুঠো অক্সিজেন,

আচ্ছা পুলিশের কাছে কি যাওয়া ঠিক হবে.. কিন্তু নিরপেক্ষ তদন্ত হলে সে নিজেই যে নিজের জালে জড়িয়ে যাবে..
Womens ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের জেনারেল সেক্রেটারি মিস্টার রিক্ত বাসুর কেচ্ছা পাবলিক মিডিয়া গোগ্রাসে গিলে খাবে, ইমেজের আড়ালে তার কদর্য রূপটা ফুটে উঠবে নিমেষেই..

~”না!যা করার আমি নিজেই করব”বলে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে পার্সেলটার দিকে, এর ভিতরেই রাখা ছিল সিডিটা, সুদৃশ্য কভারের এক কোণে সযত্নে লেখা”FOR MY BELOVED ONES”

দমবন্ধকর অনুভূতিটা আবারো ফিরে আসছে,মাথাটা দপদপ করছে আবারো…তার ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও ক্যাপচার তাও আবার সাউন্ড সমেত , কার ষড়যন্ত্রের শিকার সে?

রামশরণ..? লিজাকে আনার খবর তো শুধু সেই জানত.. কিন্তু আগেও তো অনেকবার অনেক মেয়েকে সে নিয়ে এসেছে তার পেন্টহাউসে,তখন তো এসব কিছু হয়নি!
মাথাটা কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে ওর!একটা ড্রিঙ্কসের এক্ষুনি প্রয়োজন!দ্রুত হাতে বোতলটা খুলতেই হঠাৎই নামটা এক ঝটকায় মনে পড়ে যায় ওর…
মালবিকা!মালবিকা সিংহ রায়..লিজাকে আনার খবরটা তো ওরও জানার কথা নয়,কিন্তু সকালের তর্কাতর্কিতে লিজার নামটা যে উচ্চারণ করেছিল সেটা রিক্ত মোটেই ভোলে নি!
~”ব্লাডি হোর!”
রাগে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে বোতলটা আছাড় মেরে ভেঙে শত টুকরো করে দিল.. ভাঙা কাচ মাড়িয়েই ছুটে গেল ফোনের কাছে..
একি !একবার রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে যে.. ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে রিক্ত.. চ্যাটবক্স,কললগ,সোশ্যাল মিডিয়ার সবকিছু থেকে
Blacklisted করে দিয়েছে ওকে মালবিকা..

কিন্তু ওর অজান্তে ওর ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও ক্যাপচারড হলো কী করে! ওর অনুমতি ছাড়া পেন্টহাউসে যে মাছি গলার সাধ্য নেই..
সেখানে বেডরুম অব্দি মালবিকা পৌঁছালো কি করে।
কিছু তো আছে যেটা ওর নজরের আড়ালে রয়ে যাচ্ছে
“কুল ডাউন রিক্ত কুল ডাউন”নিজেকে নিজেই বলে ওঠে রিক্ত..”ভাবো ভাবো.. কোন মানুষ সশরীরে ওর নজরবন্দির আড়ালে এত উন্নত মানের ভিডিও ক্যাপচার করা একপ্রকার অসম্ভব..
হঠাৎই শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে যায় ওর..
“তবে কি”!
~”রামু এই রামু একটা বড় টুল দিয়ে যা তো” চিৎকার করে ডেকে ওঠে রিক্ত..

আতিপাতি করে খুঁজতে শুরু করে বেডরুম-লিভিংরুম ডাইনিং..
ঘন্টা দুয়েকের প্রচেষ্টায় টোটাল আটটা হিডেন ক্যামেরা উদ্ধার করতে পেরেছে রিক্ত।
কিন্তু sixth Sense জানান দিচ্ছে আরো কিছু পাওয়া বাকি..
~” রামশরণ লোহার রডটা দে তো!”
দৃঢ় হাতে রডটা দিয়ে পরপর দুবার সজোরে বাড়ি মারলো স্নানঘরের সুদৃশ্য বেলজিয়াম আয়নায়.. ঝনঝন করে ভেঙ্গে গেল কাচটা..
সব শুদ্ধ বারোটা হিডেন ক্যামেরা নিয়ে সযত্নে ডিভানের উপর গুছিয়ে রাখল রিক্ত,মুখে কুটিল হাসি,চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলো
~”মিস্টার রিক্ত বাসুর সাথে পাঙ্গা”
কিন্তু এত বড় ষড়যন্ত্র কার দ্বারা সম্ভব!

হঠাৎ মনে পড়ল মাসখানেক আগেই পেন্টহাউসর রিনোভেশন হয়েছে..

~”হ্যালো মা কি করছো ?আসলে একটা দরকারে তোমায় এই অসময়ে ফোন করা।”

~”এই মিনু মেয়েটাকে লেখা শেখাছিলাম বাবা.. বল কি দরকার।’

~” তুমি আবার বাড়ির কাজের লোকদের ছেলে মেয়ে পড়াচ্ছো,কখন কোথা থেকে কি রোগ বাঁধিয়ে বসবে!”ঝাঁজিয়ে উঠলো রিক্ত

~” কি দরকার বল ”

~”ইন্টেরিয়ার ডেকোরেটরের কন্টাক্ট নাম্বারটা চাই ইমিডিয়েটলি ..মিস্টার আগারওয়াল রেনোভেশন করাবেন এই মাসেই..”

ক্ষিপ্র হাতে নাম্বারটা রাইটিং প্যাডে টুকে নিল রিক্ত..
~”হ্যালো, Roy interior?”

#মুখোশের অন্তরালে
#পর্ব পাঁচ
#কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
#সম্প্রীতি রায়

ডিভানে বসে বসে একমনে পা নাচাচ্ছে রিক্ত..এক হাতে জ্বলন্ত সিগারেট অন্য হাতে গ্লাস.. দৃষ্টি দেওয়ালের দিকে স্থির একটু আগেই ‘roy ইন্টেরিয়র’-এর কর্ণধার এর সাথে কথা হয়েছে ওর, ভদ্রলোক প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই যেন মিষ্টভাষী.. রিক্তর পরিচয় জানার পর আমন্ত্রণই করে বসলেন ওকে..
তবে রিক্ত ও গভীর জলের মাছ ..এসব ব্যবসায়ীদের deal করার উপায় ভালোমতোই জানা আছে ওর…
~”কিছুই জানা গেল না তবে, হাল ছাড়লে চলবে না মিস্টার রিক্ত বাসু ,কান টানলে তবেই তো মাথা আসবে”
আপন মনেই বলে ওঠে সে.. আর এসব ফোনে বলাও বেশ রিস্কি হয়ে যাবে.. সামনাসামনি পরশু কথা বলে নিলেই হবে,” একদৃষ্টে চেয়ে রইল পার্সেল টার দিকে.. গোটা গোটা অক্ষরের হাতের লেখাটা জ্বলজ্বল করছে .. উদ্দেশ্যটা ঠিক স্পষ্ট নয় ওর কাছে..
কোন টাকা পয়সার দাবি-দাওয়া করা হয়নি যদিও,তবে কি এটা নিছকই threatening কেস!
হুইস্কিটা এক চুমুকে খেয়ে গেলাসটা ঠক করে রেখে দিল টেবিলে..নেশাটা চড়েছে ভালোই,ঝিমঝিম করছে মাথাটা..

অনেকক্ষণ ধরেই রিংটোনটা কানের কাছে মুঠোফোনের অস্তিত্ব জানান দিলেও নেশার ঘোরেই হোক বা ঘুমের,রিসিভ করতে পারছিল না রিক্ত..
ক্রিং ক্রিং!আবার বাজছে..

~”ধুত্তেরি” বলে কোনমতে চোখটা মেলে ধরে স্ক্রিনটায় চোখ যায় ওর,
তড়াক করে বসে পড়ে রিক্ত..
~”দিয়া! এই অসময়..
এক ঝটকায় নেশাটা গেল কেটে, গলাটা যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে বলে,
~” হ্যালো, এত রাতে?” সারাদিনের ঝামেলা মেটানোর পর মেয়েটাকে ফোন করার সুযোগই পায়নি সে।

~”সরি অমন পিকিউলিয়ার বিহেভিয়ার এর জন্য আসলে…”
কথাটা শেষ করতে দিল রিক্ত..”নো প্রবলেম, শরীর এখন ঠিকঠাক আছে?আর next মিট কবে করছি তাহলে,আসলে তোমাকে কিছু কথা বলার আমার খুবই প্রয়োজন..তাই কিছুটা তাড়াহুড়ো করছি বলতে পারো,”একদমে বলে গেল ও..

~” কালই।”

~”এটা কি স্টেটমেন্ট,নাকি অর্ডার,নাকি স্রেফ রিকোয়েস্ট?কৌতুক করার লোভ সামলাতে পারলোনা রিক্ত।
~”রিকোয়েস্ট ই ধরে নিন..আর এবার স্পট টাইম ডিসাইড করার দায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনার”..

ব্লু মেটালিক কালার অডিটা যখন থামল,তখন নটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিট.. কব্জিটা উল্টিয়ে ঘড়ি টা একবার দেখে নিল রিক্ত,
~”আজ আর আগের দিনের মতো লেট হয়ে যায়নি..”

নির্দিষ্ট সিটে বসে আপন মনে ঘন নীল আকাশটা দেখছিল রিক্ত, ভরা শ্রাবণে এমন একটা ঝকঝকে দিন পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার..

~” হাই!”

চমক টা ভেঙে গেল রিক্তর.. নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল দিয়ার দিকে.
কি অপূর্ব সুন্দর লাগছে আজ তাকে,
সরষে হলুদরঙা শাড়ি, সাথে মানানসই ব্লাউজ..ফর্সা নরম বাহুদুটো জামা মুক্ত হয়ে ওর জৌলুস বাড়িয়েছে বহুগুণ, কপালে নাকে ফুটে উঠেছে ঘামের বিন্দু বিন্দু দানা.. ফর্সা মুখটা তেতে উঠেছে, হয়তো অনেকটা পথ হেঁটে এসেছে রোদের মধ্যে..
রিক্তর চোখের মুগ্ধ দৃষ্টি নজর এড়ায় না দিয়ার.. ~”বস বস, আজ সত্যিই অপূর্ব লাগছে তোমায় দিয়া..” বলেই ফেললো রিক্ত..

~”আগের দিন কি বিচ্ছিরি লাগছিল?”
চুল টাকে বুকের উপর ফেলে আলগা হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠল দিয়া,”জাস্ট কিডিং!বল কি বলবে তুমি..”

শাড়িতে যে তোমাকে পূর্ণ যুবতী লাগছে দিয়া, ছোট্ট গলাখাকারি দিয়ে শুরু করলো রিক্ত,”আমার প্রথম স্ত্রী,অহনা ডিপ্রেশনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছিল। কলেজ জীবন থেকে সম্পর্ক থাকলেও বিয়ের পর পারস্পরিক তিক্ততা সন্দেহ অভিমান বাড়তে থাকে আমাদের..
একে অপরের এতটাই দূরে সরে গিয়েছিলাম যে ওর একাকীত্বটা বুঝতে পারিনি সময়মতো, তাছাড়া ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে শত্রুর অভাব নেই..স্ক্যান্ডাল,গসিপ পিছু ছাড়েনি কখনো.. পেশার খাতিরে অনেক কিছুর সাথেই deal করতে হয়েছে,
স্ট্যাটাস মেনটেন রাখতে পার্টি ক্লাবিং, আউটিং.. একদমে কথাগুলো বলে ঢকঢক করে জল খায় রিক্ত, কয়েক মুহুর্ত চুপ থেকে আবারো বলে ওঠে সবকিছু বুঝে জেনে তুমি যদি এগোতে পারো তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই..”

রিক্তর হাতটা নিজের দুহাতে ভরে নেয় দিয়া। মৃদুস্বরে বলে ওঠে,”আমার মনে হয় প্রতিটা সম্পর্কে যেমন ভরসা থাকা জরুরী তেমন স্পেস থাকাটাও.. ব্যক্তিগতভাবে আমি পার্টি clubing পছন্দ না করলেও তোমার ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবো না।”

যাক ওষুধে কাজ হয়েছে তবে,আপন মনেই হেসে ফেলে রিক্ত..
এমনটাই তো সে চাইতো অহনার কাছ থেকে.. নিঃশর্ত বাধ্যতা,কিন্তু পেত কি..
তার প্রত্যেক খুঁটিনাটি ব্যাপারে অহনার নাক গলানো, দমবন্ধকর অভিমান আর সাথে ইমোশনাল প্যানপ্যানানি
“সময় দাও,কেয়ার দাও!”
নিজে থেকে দেওয়ার মানসিকতা না এলে কি আকাশ থেকে পেড়ে এনে দেবে.. বিয়ে নেওয়ার পর পরই বাচ্চা নেওয়ার ইচ্ছে চাগাড় দিয়ে উঠেছিল ওর!পাতি মিডিল ক্লাস মেন্টালিটি যাকে বলে..
disgusting!

দিয়াকে ড্রপ করে দিতে চাইলেও কিছুতেই রাজী হল না মেয়েটা..
~”এই রোদে তেতেপুড়ে সেই অত দুর যাবে?
আর পৌঁছে কল করে দিও..”

~”হ্যাঁ”ছোট্ট একটা হাসি উপহার দিয়ে দিয়া পা বাড়ালো তার গন্তব্যে..
ভারী অদ্ভুত মেয়ে তো! সর্বক্ষণনিজের খেয়ালেই ব্যস্ত.. বাই অব্ধি বলল না..

১০

ফাইভ bhk পেন্টহাউস এর নিজস্ব মিনি বারটায় আজ মোচ্ছব বসেছে.. রংবেরঙের তরলের মাঝে উদ্যমতা যেন ছলকে উঠছে।

সাউন্ড বক্সটা কমিয়ে দিয়ে দুর্জয় বলে উঠলো,”যাক!সাপও মরলো লাঠিও ভাঙলো না..

~”ইয়ে আপনে বিলকুল সাহি কাহা..”তালে তাল মিলিয়ে বলে উঠলেন আগরওয়াল, হারাধন কা কই রিস্তেদার ভি তো নেহি থা”

~”তবে যাই বল রিক্ত, অরিন্দম না থাকলে কিছুই পসিবল হতো না..জেলে পচে মরতে হতো সব্বাইকে, প্রথমে পুলিশের ডিউটি ইনচার্জকে বদলি তারপর প্রমোশন দিয়ে সেই পদে আমায় বসানো.. তদন্তের মোড়টাই ঘুরিয়ে দিয়েছিলাম, কিছু ক্রেডিট তো আমারও প্রাপ্য।”

যাকে নিয়ে বলা হচ্ছে সে ধোপদুরস্ত পাঞ্জাবি পাজামা পড়ে পাশেই উপবিষ্ট,লালচে চোখটা কোনো মতে মেলে জড়ানো গলাতেই বলে উঠলো,”যাক আমার নাম মনে পড়লো অবশেষে ভিড়ের মাঝে যে হারিয়ে যাচ্ছিলাম,
আর তোর ক্লিপস টা পাঠানো কার কাজ ধরতে পারলি? বেশিদিন ফেলে রাখিস না,”

~”দুর্জয় পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এ থাকলেও অভিযোগ করা যাবে না,খুব সন্তর্পনে কাজটা সারতে হবে,মিডিয়া পাপারাজ্জিরা জেনে গেলে হাজার হিট ফিল্ম দিলেও হাসির পাত্র হয়ে থাকতে হবে সারাজীবন তারপর বাড়িতে..”
কথাটা শেষ হতে পারে না ও,মুঠোফোনটা ভাইব্রেট করে ওঠে..
স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল মার নাম ভেসে উঠেছে,

~”এই অসময়ে!” কেঁপে উঠলো রিক্ত

#মুখোশের অন্তরালে
#পর্ব ছয়
#কঠোরভাবে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য
#সম্প্রীতি রায়

১১

~”হ্যাঁ মা বলো” গলাটাকে আপ্রাণ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে লাগলো রিক্ত..

~”দিয়াকে কেমন লাগলো কিছু জানালি না যে..আর তোর গলাটা এমন শোনাচ্ছে!”

~”চলবে… জেনারেশন গ্যাপ থাকলেও আমার সাথে কম্প্যাটিবল।”

~” গলাটা এমন শোনাচ্ছে কেন?”আবারো জিজ্ঞেস করে উঠলেন অনুসূয়া দেবী।

~” স্টপ your nonsense মা! আমি কোনো ছোট্ট বাচ্চা নই যে তোমার সব নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করব!
অহনার মত তুমিও শুরু করো না প্লিজ.. নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার সবার আছে,”
একবুক শ্বাস নিয়ে বলে উঠলো আবারো,
“এই জীবনটা তুমি আমাকে উপহার দিয়েছো..কোন ঋণ নয়!”
নেশাটা এতটাই চড়ে গেছে যে, কার সাথে কিভাবে কখন কথা বলছে সেটাই ভুলতে বসেছে রিক্ত!

~”অহনার কাল প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী..ছোট্ট একটা স্মরণসভার আয়োজন করেছিলাম কাল,
কিন্তু বর্তমানে তোমাকে আমন্ত্রণের কোন প্রয়োজন বোধ করছি না.. তোমাকে ছাড়াই বরং অনুষ্ঠানটা পূর্ণতা পাবে!”
কেটে কেটে বলে উঠলেন অনুসূয়া দেবী,”এতটাই নিচে নেমে গেছো তুমি, ইয়ার-বন্ধুদের সাথে pre-planned পার্টি মনে রেখেছো.. কিন্তু স্বর্গত স্ত্রীর মৃত্যু বার্ষিকী ভুলে গিয়েছো!
অহনাকে তুমি তোমার প্রাপ্য সম্মান না দিলেও, মা হিসেবে আমার তো কিছু কর্তব্য আছে!”
বলেই কট লাইনটা ডিসকানেক্ট করে দিলেন তিনি।

দুঃখে অপমানে তখন তখন রিক্তর চোখটা জ্বালা করছে, হিসহিসিয়ে বলে উঠলো,”বেঁচে থাকতে আমার আর মরার পর মায়ের মাথার উপরে চেপে বসেছে!কোন কুক্ষণে যে ওকে বিয়ের পর স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলাম!পরের মেয়ের জন্য দরদ উথলে উঠেছে একেবারে..”

ফোনটা রেখে চাইতেই দেখল,রিক্তর দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে সবাই..
~”অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছে… বেরিয়ে পড়লাম সবাই বুঝলি!”তুতলিয়ে বলে উঠল দুর্জয়,
আসলে এরকম একটা ঘটনার জন্য ওরা প্রস্তুত ছিলনা মোটেই,
এই সময়টা হয়ত ওকে একলা কিছুক্ষণ ছেড়ে দেওয়াই বেটার

১১

বিনয় রয় মানুষটি ভীষণই অমায়িক.. নামের সাথে চরিত্রের যেন অদ্ভুত মিল ওনার..রিক্ত আসার পর আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি রাখেননি তিনি,
সুদৃশ্য কফি টেবিলে জুস,বেশ কিছু ড্রাইফুড রাখা থাকলেও রিক্ত ছুঁয়েও দেখেনি.. রীতিমতো অধৈর্য্য লাগছে ওর..
অস্থিরতা কাটাতে ঘরকে খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করলো ও.. এই একটা বদ অভ্যাস ওর, কোন নতুন জায়গায় গেলেই ঘরখানা ভালো করে পর্যবেক্ষণ না করলে যেন শান্তি হয় না ওর..

ভদ্রলোক তার নিজস্ব কেবিনটা কে ছোটখাটো লাইব্রেরিই বানিয়ে দিয়েছেন প্রায়..
শেক্সপিয়ার, হেনরি জেমস,Fyodor এর সাথে গীতা কথামৃতও উঁকি দিচ্ছে..
~”বাহ!”প্রশংসা না করে পারল না রিক্ত.. আভিজাত্যের বিড়ম্বনা না থাকলেও মার্জিত রুচির ছাপ স্পষ্ট সর্বত্রই..

~”সরি মিস্টার বাসু,বেশি wait করাই নিতো আপনাকে?”

~”একদমই না! বরং আপনি চলে আসায় ঘরখানা আর খুঁটিয়ে দেখা হলো না আমার!”
হোহো করে হেসে উঠলেন দুজনাই..

~”কিভাবে সাহায্য করতে পারি বলুন আপনাকে।”

চট করে কথাগুলো নিজের মধ্যে গুছিয়ে নিল রিক্ত,” দরকার টা আমার নয় আমার এক কলিগের, পেন্টহাউসর রিনোভেশন দেখে এতটাই ইম্প্রেসড হয়েছে যে, রীতিমতো তাগাদা দিচ্ছে আপনার কাছে আসার জন্য…
তাছাড়া এত সূক্ষ্ম হাতের কাজ আপনারা ছাড়া আর কেউই করতে পারবেনা..” চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠল রিক্ত।
কথাটা ঠিক ধরতে পারলেন না বিনয় বাবু… আপ্লুত ভঙ্গিতে হেসে উঠলেন তিনি,”আসলে কর্মচারীরা খুবই দক্ষ..কাজের প্রতি ওদের ভালোবাসা খাঁটি.. ওরা না থাকলে হয়তো এত অল্প দিনে ব্যবসাটাকে দাড় করতে পারতাম না আমি.. হে হে.. বুঝতেই তো পারছেন চারিদিকে যা ইঁদুর দৌড়!”

~”তা কতজন কাজ করে আপনার আন্ডারে?” ততক্ষণে যা বোঝার বুঝে গেছে রিক্ত..এত বড় ষড়যন্ত্র বিনয় বাবুর দ্বারা সম্ভব নয়,মানুষটা বড্ড সাদাসিধে, কাজপাগল…
~”লেবার,ইঞ্জিনিয়ার,একাউন্টেন্ট মিলিয়ে প্রায় একশ তো হবেই…প্রায় সবই গড়েপিটে নেওয়া বুঝলেন রিক্তবাবু.. পুঁথিগত শিক্ষায় সবাই শিক্ষিত না হলেও নিখুঁত হাতের কাজ..”

“আর সূক্ষ্মও বটে..” ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে রিক্ত ~”আচ্ছা তারপর”

~”One should help the needy not the greedy!আমি নিজেও অজপাড়াগাঁ থেকেই এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি,তাই দুঃস্থ সৎ নির্লোভ ছেলেদেরকেই রিক্রুট করেছি নিজ হাতে..
এত ভালো শ্রোতা পেয়ে বিনয় বাবুকে যেন কথায় পেয়ে বসেছে,”আমরা সংস্থা কম,পরিবার বেশি,অসুখ-বিসুখ বা অন্য সমস্যাতে আমরাই এগিয়ে যাই..”

~”কিন্তু এত ভালোও যে ভালো নয়!”কথার মাঝেই বলে বসল রিক্ত..”বেইমানের তো অভাব নেই!”

~”তাতো বটেই কিন্তু একজনের জন্য তো সবাইকে দোষ দিয়ে লাভ নেই!” খেদ ঝরে পড়ে বিনয়বাবুর গলায়..

~”মানে?”

~”এক বছরের কন্ট্রাক্ট শেষ হতে আর মাসদুই বাকি ছিল,মায়ের শরীর খারাপের দোহাই দিয়ে অ্যাডভান্স নিয়ে গ্রামে ফিরে গেল ছেলেটা.. কি নিখুঁত কাজ ছিল.. আপনার অ্যাপার্টমেন্ট এর furnishing এর দায়িত্বেও তো ওই ছিল…

~ওহ্..” স্বভাবসিদ্ধ কুটিল হাসি তখন ফুটে উঠেছে রিক্তর মুখে..
যা জানার জানা হয়ে গেছে ,এবার এই লোকটার ভাট বকা বন্ধ হলে বাঁচি..

পাক্কা আধ ঘন্টা বাদে roy interior থেকে বেরিয়ে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো রিক্ত… সিটবেল্টটা লাগিয়ে সোজা ফোন করল দুর্জয়কে..

~”আপনি তো রীতিমতো গোয়েন্দাগিরি শুরু করেছেন বস!বিকালের মধ্যে ইনফো জোগাড় করে যাচ্ছি তোর বাড়ি…”হেসে ওঠে দুর্জয়..
কলটা ডিসকানেক্ট করে নিজের মনেই হেসে উঠলো রিক্ত..
বিনয়বাবু সত্যিই বড্ড বেশি দিলখোলা,কথা বলতে কিছু মানুষ কি ভালোই যে বাসে!well done মিস্টার রিক্ত বাসু,নিজেই নিজেই তারিফ করে উঠলো সে..
বহুৎদিন নতুন চিড়িয়া টেস্ট করা হয়নি,Celebration তো বানতা hain..

~”হ্যালো মিস্টার আগরওয়াল!”ড্রাইভ করতে করতেই কল লাগল রিক্ত
আত্মতুষ্টিতে লক্ষ্য করলোনা একটা ব্ল্যাক sedan ওর পিছু নিয়েছে..
পরের পর্বে চমক আছে

সম্প্রীতি রায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here