#মুখোশের অন্তরালে
#পর্ব ৯,১০
#কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
#সম্প্রীতি_রায়
০৯
১৬
মেঝের ওপর চিৎ হয়ে পড়ে রয়েছেন মিস্টার আগরওয়াল.. রক্তে ভেসে যাচ্ছে শ্বেতপাথরের মেঝেটা..চোখ দুটো খোলা, বিস্ফারিত
যেন কিছু দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়েছেন তিনি..
মুখটা অর্ধেক খোলা, তাতে একটা রুমাল গোজা,হাত পায়ের আঙুলগুলো কেউ যেন আসুরিক শক্তিতে বেঁকিয়ে দিয়েছে..
উৎকট নোনা গন্ধ গোটা ঘরজুড়ে,
দমবন্ধকর পরিবেশে হঠাৎ এমন একটা অস্বস্তি অনুভব করে রিক্ত..
গাটা গুলিয়ে ওঠে যেন,
এক ছুট্টে বেরিয়ে যায় বাইরের বাগানে.. হড়হড় করে ভিতরের সব উগরে দেয় মাটিতেই..
বমির সাথে কান্নাটাও বেরিয়ে আসে চোখ ফেটে.. ধপ করে মাটিতেই বসে পড়ে রিক্ত,মুখটা দু হাঁটুর মাঝে গুঁজে দেয়..
হঠাৎ কাঁধে কারোর অযাচিত স্পর্শে পিছন ফিরে তাকায়..
~”একটা জিনিস দেখবি চল,” বলে টানতে টানতে দুর্জয় ওকে নিয়ে চলে ঘরের ভিতরে.. অসার মৃতদেহটা চোখে পড়ে আবারও..বাষ্পটা আটকানো আপ্রাণ চেষ্টা করে রিক্ত.. মুখটা জোর করে ঘুরিয়ে রাখলো অন্যদিকে..
আজ সকালেই প্রোডাকশন হাউজে কত কথাবার্তা হল,আলাপ-আলোচনা ঠাট্টা তামাশা কিছুই বাদ পড়েনি..
পার্টনারশিপ ভেঙে যাওয়ার পর রিক্ত কে আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন ভদ্রলোক..
তার মধ্যেই এই!
আর নিজেকে আটকাতে পারলোনা সে, অবাধ্য নোনতা জলটা বেরিয়ে গেল চোখ বেয়ে..
হাতটা দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে দুর্জয়ের মৃদু ধাক্কায় সম্বিত ফিরে পেল সে, ইতিমধ্যে বিনা ইউনিফর্মে থাকলেও ল্যাটেক্স গ্লাভস পরে নিয়েছে সে..
অতি সন্তর্পনে লাশটার হাত তুলে নির্দেশ করল একটা জায়গায়..
একটা চতুর্ভুজ!
চামড়ার উপরে নিপুন ভাবে খোদাই করে একটা চতুর্ভুজ আঁকা হয়েছে যার একটা বাহুতে ক্রস মার্ক করা..
~”এটা কি!”অপার বিস্ময়ে জানতে চায় রিক্ত..
~”ডোন্ট know! May be ব্লেড বা সেই রকম কোন ধারালো বস্তুর সাহায্যে চামড়াটা চিরে বানানো হয়েছে,ফটো তুলে রাখি দাঁড়া..”বলে উঠলো দুর্জয়,
“তুই একটু অপেক্ষা কর আমি ডিউটি ইনচার্জ এর সাথে কিছু কথা বলে আসি…
ঘরের এক কোণায় দাঁড়িয়ে রইল রিক্ত..
বারবার চোখ চলে যাচ্ছিল আগরওয়ালের মৃতদেহের দিকে, ভদ্রলোক বিপত্নীক, স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আর বিয়ে করেননি,
একমাত্র মেয়েকেও কাছাকাছি পাত্রস্থ করেছেন.. মেয়েটা বারবার সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলছে..
~”কিছু জানতে পারলি?” দুর্জয়কে ফিরে আসতে দেখে প্রশ্ন করে রিক্ত..
~”ক্যারোটিড আর্টারি দুটোকেই একটানে কেটে ফেলা হয়েছে,ভদ্রলোককে হসপিটাল নিয়ে গেলেও হয়তো বাঁচানো যেত না,”খেদে ঝরে পড়ে দুর্জয়ের গলা দিয়ে “আর ক্ষতটা দেখে মনে হলো এটা কোন প্রফেশনাল হাতের কাজ, নইলে একটানে ছুরি চালিয়ে মারা সম্ভব হতো না.. তবে মৃত্যুর আগে প্রচন্ড অত্যাচার করা হয়েছে ভদ্রলোকের উপর, বেঁকেচুরে যাওয়া আঙ্গুলগুলো তার প্রমাণ..”
~”চাকর-বাকর এটা কেউ কিছু শুনতে পারেনি?”
~”সেটা তদন্তের পরেই বোঝা যাবে,ওই রুমাল টা বোধহয় ক্লোরোফর্ম জাতীয় কিছু ইউজ করা হয়েছে.. কিন্তু তারপরেও চোখটা খোলা থাকল কি করে!”দুর্জয় কাছে হিসেব টা যেন কিছুতেই মিলছিল না
~”এবার চল বাকি কথা বাড়ী গিয়ে হবে..” রিক্ত তাড়া দিয়ে উঠল দুর্জয়কে,এই পরিবেশটা একদম সহ্য হচ্ছিল না ওর…
বাইরে বের হতেই মিডিয়া পাপারাজ্জিরা প্রায় ছেকে ধরলো ওদের, ভিড় ঠেলে এগোনোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল দুজনেই…
~”এই সময় ওদের পরিবারের পাশে থাকুন,পুলিশকে কাজটা করতে দিন!” গর্জে উঠল রিক্ত ,
দুর্জয় হতবাক হয়ে ওর দিকে চেয়ে রইল,এতটা উত্তেজিত হতে ওকে আগে কখনো দেখেনি..ইতিমধ্যে পুলিশ ভলেন্টিয়ার এসে যাওয়াতে বেশি বেগ পেতে হলো না ওদের,
ফাঁকা রাস্তা পেয়ে গাড়িতে উঠে গেলো ওরা..হাঁফ ছেড়ে বাঁচল ওরা দুজনেই
১৭
অন্ধকার চিরে তীব্র বেগে ছুটে চলেছে ব্লু মেটালিক অডিটা…স্পিডোমিটারে প্রায় আশি ছুঁইছুঁই!
যাত্রী দুজন পাশাপাশি বসে থাকলেও নিস্তব্ধতার করালগ্রাসে কারোর মুখে টু শব্দটি নেই..
~”স্টপ দ্যা কার!” নীরবতা ভেঙে বলে উঠলো দুর্জয়..
নির্বাক রিক্ত একদৃষ্টিতে চেয়ে রইল ওর দিকে কিছু জিজ্ঞাসা করার শক্তিটুকু হারিয়ে বসেছে সে..
ওর চোখের ভাষা বুঝতে ভুল করল না দুর্জয়..স্বগতোক্তির ঢঙে বলে ওঠল,”এই সময়ে rash ড্রাইভিং করা ঠিক নয়..”
~”মিস্টার আগারওয়াল খুন হয়েছে এখন তুই আমার ড্রাইভিং নিয়ে পড়েছিস!” আর থাকতে না পেরে চিল্লিয়ে উঠলো রিক্ত, এমনিতেও ওর ধৈর্য বড্ড কম..তার উপর দুর্জয়ের এই কথাতে আগুনে যেন ঘৃতাহুতি পরল।
~”প্লিজ ড্রাইভিংটা আমাকে হ্যান্ডেল করতে দে,বৃষ্টিতে পথঘাট পিছল হয়ে আছে, যে কোন সময় বড়সড় দুর্ঘটনা হয়ে যেতে পারে..”
শান্ত স্বরে বোঝানোর চেষ্টা করে উঠল দুর্জয়,”I know তুই এখন প্রচন্ড ডিস্টার্বড,রাতে ঠিকমতো ঘুমটাও হচ্ছেনা তোর,প্লিজ..”
ওষুধে কাজ হলো,বাধ্য ছেলের মত ব্যাকসিটে বসে পরলো রিক্ত.. বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়েই চলেছে,
মুখটা গুঁজে দিল হাতের তালুতে,শরীরটা ক্ষণে ক্ষণে কাঁপছে..
কে বলে পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই! দুই হাতের ফাঁক দিয়ে নোনতা জলের ফোঁটা ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে যে!
স্মৃতিগুলো মনে পড়ছে বড্ড, একসাথে আড্ডা পানাহার ….
মিস্টার আগরওয়াল এর সাথে পরিচয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ঢোকার আগে থেকেই, রিক্ত তখনও নিউ কামার,স্ট্রাগলিং পর্যায়ে..
কত ফ্রড এজেন্সি ওকে অ্যাপ্রোচ করার চেষ্টা চালিয়েছে,হাজার হাজার স্ক্যান্ডালে নাম জড়িয়েছে..সেই সব দিনগুলোতে অভিভাবকের মতো আগলে রেখেছিলেন রিক্তকে..
কোনো প্রবলেমে জড়ালেই সবার আগে আগরওয়ালের নামটাই মনে পড়তো তার..
সেটা পার্সোনাল হোক বা অফিশিয়াল..
সেই মানুষটি খুন হয়েছেন তাও আবার তার নিজের বাড়িতেই.. কার এমন বিকৃত প্রতি হিংসা বোধ!
হঠাৎই বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো চমকে উঠল রিক্ত..
~”দুর্জয় স্টপ দ্যা car now!”রিক্তর এমন গম্ভীর স্বর শুনে দুর্জয় চমকে গেল,”দুর্জয় তুই sure হারাধন মাহাতোর কোনো পরিবার-পরিজন ছিল না..!প্লিজ remind once again..”
~”মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে এসব কি শুরু করেছিস!”
~” just টেল মি দ্যা ট্রুথ!” রিক্তর কণ্ঠে তখন হিমশীতলতা..
~”বডির দাবি-দাওয়া তো কেউই ছিল না , কেস চলাকালীনও কোন পরিবার পরিজনকে দেখি নি.. আমতা আমতা করে বলল দুর্জয়..”কিন্তু এখন এসব জিজ্ঞাসা করছিস কেন!”
~”because আগরওয়াল এর মৃত্যুর সাথে এটা রিলেটেড!”
~”হোয়াট!” ক্যাচ করে এমন ভাবে ব্রেক চাপল যে হুমড়ি খেয়ে পড়ল ওরা দুজনেই..
~”ইয়েস! কারণ হারাধন মাহাতোর সুইসাইড এরপর এসব হচ্ছে .. রিক্তকে তখন যেন মজা পেয়ে বসেছে, পা নাচাতে নাচাতে বলে উঠলো, আমার মনে হচ্ছে কেসটা reopen করে ইনভেস্টিগেট করা দরকার.. অরিন্দম কে বলতে হবে ইমিডিয়েটলি,
মাথাটা টলে গেল দূর্জয়ের,
হ্যাঁ! ঠিকই তো এটা তো একবারও ওর মাথাতেই আসেনি, হারাধনের সুইসাইড এরপরই এমন হচ্ছে!
নিজের নির্বুদ্ধিতায় লজ্জা পেলো নিজেই.. রিক্তর প্রশংসা না করে পারল না সে
“ব্রাভো!প্রোডিউসার না হয়ে ইনভেস্টিগেটর হতে পারতিস! হো হো করে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে হেসে উঠল দুর্জয়..
ক্রিং ক্রিং
মুঠোফোনের স্ক্রিনে নামটা দেখে বেশ অবাক রিক্ত.. কিছুটা বিরক্তও ..দিয়া!
~”হ্যাঁ বল!” গলাটা যতটা সম্ভব গম্ভীর রেখে উত্তর দিলো রিক্ত..
~”তোমার গলাটা এরকম শোনাচ্ছে ? শরীর খারাপ?”
~”নানা বলো,” নির্জীব গলায় উত্তর দিল রিক্ত এই মেয়েটাকে এখন মাথায় তোলার কোন মানেই হয়না..যখন খুশি নিজের ইচ্ছামত ফোন করবে,দেখা করতে চাইবে কিন্তু রিসিভ করার বেলায় নৈব নৈব চ..
~”আমি জানি তুমি আমার উপর অনেক রাগ করেছ আসলে এতটা ব্যস্ত ছিলাম যে রিংব্যাক টুকু করার সময় পাইনি,”আদুরে গলায় বলে উঠলো দিয়া।
~”আমায় ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ো নাতো! রাখো!পরে কথা বলে নেব..
ওপ্রান্ত তখন নিশ্চুপ দেখে মনটা একটু নরম হলো রিক্তর,”বলো কি জন্য ফোন করেছিলে?”
~”তোমার খোঁজ নেওয়ার জন্য,থাক ব্যস্ত যখন পরে কথা বলে নেব..”
~”নানা প্লিজ বলো..”
~”একটা পরীক্ষা চলছিল আমার, প্রস্তুতিতে এতটাই মগ্ন ছিলাম যে…
কথাটা শেষ করতে দিল না রিক্ত,”কেমন হলো পরীক্ষা?”
~”ভালোই,সবেতো একটামাত্র হলো এখনো তিনটে বাকি।”
রিক্তর সব রাগ তখন গলে জল…শুধুশুধু এই মেয়েটাকে ভুল বুঝছিল সে..
~”কালকে আমরা দেখা করতে পারি প্লিজ?”
আর্তি ঝরে পড়ল দিয়ার গলাতে..
Sampriti Roy
#মুখোশের অন্তরালে
#পর্ব ১০
#কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
#সম্প্রীতি রায়
১৮
~”একি তুমি আমার ডায়রি পড়ছো!”
দিয়ার ডাকে চমকে পিছন ফিরে তাকালো,
~”না মানে..”আমতা আমতা করতে লাগল রিক্ত…
দিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখটা আর ফেরাতে পারল না ও..
সদ্যস্নাতা দিয়ার চুল বেয়ে টপ টপ করে জল পড়ছে..
সরু রুপোলি ধারাটা নির্লজ্জের মতো ক্লিভেজটাকে ছুঁয়ে নামছে আরো নিচে, শ্বেতশুভ্র কপালে কিছু চূর্ণ-কুন্তল লেপ্টে আছে.. ফর্সা লাবণ্য মন্ডিত মুখে প্রসাধনের ছিটেফোঁটাও নেই এমন সাধারন পোশাকেই মেয়েটাকে কি অসাধারণ লাগছে!
~”কি করে দেখছো অমন করে?” কোমর ছাপানো চুলটা একধারে ফেলে মুছতে মুছতে বলে উঠলো দিয়া.. মোছার তালে তালে ওর ভারী নিতম্বটা কেঁপে কেঁপে উঠছে…
~”তোমাকে,”দৃষ্টিটা সেদিকে নিবদ্ধ রেখে উত্তর দিলো রিক্ত..
~”দেখার মত কি আছে শুনি! আর ফিয়ান্সে হওয়ার সুবাদে তুমি আমার পার্সোনাল ডায়েরি পড়বে!কপট রাগ ফুটে উঠল ওর চোখে মুখে..
রিক্ত পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল ওর দিকে,
কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওর পুরুষালী শক্ত ঠোঁটটা দিয়ে চেপে ধরল দিয়ার নরম ভরাট ঠোঁট..
কতক্ষন দুজনে এভাবে ছিল কারো খেয়াল নেই..হঠাৎ দিয়ার মৃদু ঠেলায় যেন সম্বিত ফিরে পেল রিক্ত,
~”অসভ্য,ছাড়ো..
এক ঝটকায় সরিয়ে দিলো রিক্তকে।
দুজনের ঠোঁটেই তখন লেগে আছে রক্তের নোনতা স্বাদ,হঠাৎ কেমন আত্মতৃপ্তি অনুভব করল রিক্ত..
আচ্ছা প্রেমিকাকে শারীরিক কষ্ট দেওয়ার মধ্যে প্রেমিকের অবচেতনে কি সুখ লুকিয়ে থাকে..? দয়িতার শরীরে যেমন খোদিত থাকে দয়িতের চিহ্ন!
নাকি নরম পেলবের মতো আগলে রাখাতেই প্রেমের সার্থকতা..? উত্তর খুঁজে পেল না রিক্ত..
বেশ কিছু সময় দুজনের মুখে কোন কথা নেই,দিয়াও হতভম্ব এই ঘটনার আকস্মিকতায়..
~”দেখি কি লিখেছে আমার ফিয়ান্সে!” অস্বস্তিটা কাটাতে বলে উঠলো রিক্ত..
হৃদ মাঝারে নতুন টান?
নাকি ব্যস্ততার আবর্তনে পুঞ্জীভূত অভিমান
অঘোষিত বিষন্নতায় চাপা খুনসুটির ঢেউ,
মনের বসতবাড়িতে সখি তুই ছাড়া নেই অন্য কেউ
ভালোবাসার আগল দিয়ে রাখবো তোকে সুখে
অভিমানহীন ব্যাসার্ধের কোমল চক্রব্যূহে…
~দিয়া চ্যাটার্জী
~”এক্সিলেন্ট!তুমি এত সুন্দর গুছিয়ে কবিতা লেখো জানিনা তো!উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল রিক্ত..
~”ওই একটু আধটু মাঝে-সাঝে”সলজ্জ ভঙ্গীতে হেসে উত্তর দিল দিয়া..
~”দারুন!”মুগ্ধতার রেশ তখনও কাটেনি রিক্তর..”অবশ্য তোমাকে এখনো জানলামই বা কোথায়! দুইদিন তো নিজের টুকু বলেই কেটে গেল..”স্বগতোক্তির ঢঙে বলে উঠলো ও..
মা তার জন্য একদম সেরাটাই বেছেছে..
~”এবার জেনে নেবেন “মৃদু স্বরে জবাব দিল দিয়া,”এখনো অনেক সময় বাকি..”
~”তুমি কি বরাবরই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকো, আর বাড়ি থেকে কতক্ষণ লাগে এখানে আসতে?” হাল্কা গলাখাঁকারি দিয়ে উঠলো রিক্ত..দিয়ার ব্যাপারে মায়ের কাছে সেভাবে জানা সুযোগই পায়নি ও..সরাসরি জিজ্ঞেস করতেও কেমন বাঁধে,
~”কেন কাকিমা তোমায় বলেনি?” যেটার আশঙ্কা করছিল সেটাই হলো..” না আসলে কিছুদিন অতিরিক্ত কাজের প্রেসারে মায়ের সাথে কথা বলে উঠতে পারিনি,”একটু থেমে আবার যোগ করল,”প্রোডাকশন হাউজের ফিউচার নিয়ে বেশ চাপে আছি.. তারমধ্যে আগরওয়াল খুন হয়ে গেল!
বলাবাহুল্য sex ক্লিপটার কথা চেপে গেল দিয়ার কাছে..
কালকের অস্বস্তিটা আবার ফিরে আসছে ওর, দিয়ার নরম সান্নিধ্যে মনের গুমোট ভাবটা সাময়িকভাবে কেটে গেলও পাকাপাকি সুরাহা হলো না,নিজের অজান্তেই মুখটা নীচু হয়ে গেল ওর..
~”ডোন্ট worry.. সব ঠিক হয়ে যাবে” সান্ত্বনার ভঙ্গীতে বলে বিপদজনক দুরত্বে এগিয়ে এল দিয়া.. রিক্তর মুখটা ওর দুহাতে ভরে নিয়ে বলল,”আমি আছি”।
হয়তো এই প্রথম,নিজে থেকে রিক্তর এতটা কাছে এল দিয়া.. ওর শরীর থেকে বেরোনো তীব্র মেয়েলী সুবাসে কেমন আচ্ছন্নের মত হয়ে গেল রিক্ত..
পরম আশ্লেষে জড়িয়ে ধরল দিয়াকে..
~”ভালোবাসি” ফিসফিসিয়ে উঠলো রিক্ত..
অহনার মধ্যে শান্তি, আনুগত্য চেয়েছিল তা যেন পূর্ণতা পেল দেয়ার মাধ্যমে,
~” আমি দেখি অর্ডারটা কদ্দুর, কিছু খেতে তো হবে..” রিক্তকে ছাড়িয়ে উঠে গেল দিয়া,”আর হ্যাঁ!এবার থেকে আমরা আর বাইরে বাইরে মিট করব না,আমার ফ্ল্যাটে তোমার আসাটা হয়তো সব থেকে নিরাপদ হবে..
তোমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকেও কাছে আর মিডিয়ার অযাচিত কৌতুহল থেকেও রেহাই..সম্পর্কটা এটলিস্ট পাবলিক ইন্টারটেইনমেন্ট material হয়ে বসবে না
১৯
বিলাসবহুল বিল্ডিংটার টপ মোস্ট পেন্টহাউসে আজ শ্মশানের নিস্তব্ধতা গ্রাস করেছে..বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি নামলেও ঘরের আবহাওয়া বেশ গুমোট..
~”আগরওয়ালের কেসটার কি হলো” নিস্তব্ধতা ভেঙে বলে উঠলো অরিন্দম..
~”পুলিশ তদন্ত করছে”অস্ফুটে বলে দুর্জয়..
~”সে তো করছে কিন্তু তোরা আলাদাভাবে কি জানতে পারলি!”খেঁকিয়ে ওঠে অরিন্দম..
~”সেই জন্যই তো আজ তোমাকে এখানে ডাকা”..একবুক শ্বাস নিল দুর্জয়..”আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে আগরওয়াল এর মৃত্যুর সাথে হারাধন মাহাতো কোন ভাবে জড়িত,এত নির্মম হত্যার মূলে কোনো তীব্র প্রতিহিংসাবোধ থাকা আশ্চর্যের কিছু না!
~”তার সাথে হারাধনের লিঙ্ক কোথায়!আগারওয়াল তো কম লোকের সর্বনাশ করে নি পার্টিকুলারলি হারাধন কে কেন টার্গেট লিস্টে ফেলছিস!” অরিন্দমের চোখ-মুখ স্পষ্ট বিরক্তিভাব “এইসব কথা বলার জন্য আমাকে ডেকে আনলি! ব্লাডি crap!অশ্রাব্য গালিগালাজ বেরিয়ে এলো তার মুখ চিরে,”এর জন্য আমি এত ইম্পরট্যান্ট মিটিং ক্যান্সেল করলাম!” বলে ওঠার তোড়জোড় করল অরিন্দম..
~”বস!” হাতটা ধরে টেনে বসিয়ে দিল রিক্ত.. এতক্ষণ বাদে যেন মুখে বুলি ফুটল ওর, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,” হারাধনের কেসটায় আমরা চারজনই কমবেশি জড়িত ছিলাম..
~”তো? খুন শুধু আগরওয়াল হলো!” অরিন্দম এর গলায় স্পষ্টত উত্তেজনা..
~”শুধু আগরওয়াল না, আমিও কিন্তু সাফার করেছি সাথে দুর্জয়ও..” বলে দূর্জয়ের মাথায় বাঁধার ব্যান্ডেজ টার দিকে নির্দেশ করে রিক্ত..
~”আজব কথা বলিস তুই!গাড়িটা ঠিকমতো হ্যান্ডেল করতে পারলে দুর্জয় কি অ্যাক্সিডেন্ট করে বসতো?”
~”কিন্তু আমারও…”
মুখের কথাটা কেড়ে নিল অরিন্দম “ওটা জাস্ট একটা co incidence!ব্ল্যাক গাড়ি দেখে ভেবে ফেলেছিস ওই গাড়িটাই দূর্জয়কে attack করেছে,আর কিছুই না..আর বাকি রইল তোর সেক্স ক্লিপস,
যেটা তুই তোর মাগীবাজীর ফল পেয়েছিস!বউটা জীবিত থাকার সময়ও অন্য শরীরের প্রতি তোর ছুকছুকানি কোনো অংশে কমেনি…
ক্লিপস এ যে মেয়েটার সাথে শুয়েছিস তারই কীর্তি এটা..এবার ফল ভোগ কর!’
~”বাস্টার্ড! মাগীবাজ তুই কাকে বলছিস” চিৎকার করে উঠলো রিক্ত..ওর চোখ মুখের চেহারা পুরো বদলে গেছে,হাতের পাশে গ্লাসটা দেওয়ালের ছুড়ে মারল সশব্দে…” ভুলিস না তোর উইমেন্স ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন এনজিও আড়ালে একটা এসকর্ট এজেন্সি!
আমি পয়সার বিনিময়ে শরীর খাই..আর তুই ,ভুলিয়ে-ভালিয়ে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তারপর ঠান্ডা মাথায় পাচার…”কথাটা শেষ করতে পারলো না রিক্ত,সপাটে একটা চড় এসে আছড়ে পড়ল ওর গালে..অরিন্দম রাগে ফুঁসছে ,
এতোটাই জোরে মেরেছে যে সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেছে রিক্ত
“ভুলিস না তুই কার সাথে কথা বলছিস!রুলিং পার্টি প্রতিনিধি আমি!তোকে তো প্রোডাকশন হাউস সমেত এমন জায়গায় পুঁতে দেবো যে কাকপক্ষী টের পাবেনা..”
~”স্টপ স্টপ শান্ত হও দুজনে প্লীজ”আর থাকতে না পেরে বলে উঠলো দুর্জয়.. রীতিমত হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম দেখে সে ভয় পেয়ে গেল ..”তোমরা দুজনে শান্ত হও!
অরিন্দম, আমরা দুজনেই চাইছি হারাধন case re-ওপেন হোক,যদিও মারা…”
~”Ok এটাই হবে..তোরা যা চাইছিস সেটাই হবে now প্লিজ লিভ মি এলোন”বলে দুজনকে পাশ কাটিয়ে হন হন করে এগিয়ে গেল সে
“অ্যান্ড one more তোরা দুজনেই বেকার পন্ডশ্রম করছিস হারাধনের লাশটা এতক্ষণে কোন মেডিকেল কলেজের ডিসেক্টিং মেটেরিয়াল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে!”