#মুখোশের আড়ালে তুমি
কাহিনী ঃ ফারহানা কবীর মানাল
পার্ট-৩
চাবি দিয়ে দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করতেই আমি ৪৮০ ভোল্টের শক খেলাম। মিতা ঘাটের উপর দিব্যি ঘুমিয়ে আছে তাহলে মিতার মত দেখতে আমি কাকে নিয়ে এসেছি? অস্পষ্ট হলেও মিতার সাথে যে লোকটি ছিলো তার সাথেই আমি ওর ছবি দেখেছি। আমার এতো ভাবনার মাঝে আমি যাকে ধরে নিয়ে এসেছি সে আমার চোখে মরিচের গুঁড়ো মেরে দিলো। চোখে মরিচ যাওয়ার কারণে চোখ জ্বলতে শুরু করলো। অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম। আমার চিৎকার শুনে মিতা ঘুম থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠলো।
— কি হয়েছে তোমার?
— আমার চোখে মরিচের গুঁড়ো গেছে আমাকে পানির কাছে নিয়ে চলো।
মিতা আমাকে ধরে ব্যস্ত ভাবে পানির কাছে নিয়ে গেলো। চোখে অনেক সময় পানি দেওয়ার পর জ্বালা একটু কমলো। মিতা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে হয়তো কিছু বুঝতে পারেনি। আমি মিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। আমার ভাবনা যেন ঠিক হয়। মিতা যেন আমাকে কিছু করতে না চায়। সত্যি বলতে আজ মিতার মতো কাউকে দেখে আমার মনে কোথাও একটু আশা জেগেছে যে এসব অন্য কারো কাজ। মিতাকে সত্যি আমি খুব ভালোবাসি। ওর বিশ্বাসঘাতকতা আমি কিছুতে মানতে পারবো না। মিতা আমাকে জিজ্ঞেস করলো—
— কি হয়েছে তোমার?
— আমি মিতাকে কিছু বলতে চাইলাম না শুধু মাথা নেড়ে বললাম কিছু হয়নি। আমি ঘুমাতে চাই।
মিতা চুপচাপ আমাকে ঘুমাতে দিলো। মিতা ব্যবহারে পরিবর্তন এসেছে খেয়াল করছি। কিন্তু আজ যা হলো তারপর প্রমাণ ছাড়া মিতাকে কিছু বলতেও পারছি না। কি করে এই অদ্ভুত সমস্যার সমাধান করবো আমার জানা নেই। তবে আমি নিজের কানে শুনেছি মিতা আমাকে মারার কথা বলছে। তাছাড়া ওই খাবার খেয়ে ইদুরটাও মারা পড়ে আছে। খাবারের কথা মনে পড়তেই সেখানে গেলাম। খাবারটা আগের জায়গাতেই আছে তাহলে এখন ওটা নিয়ে ফরেনসিক বিভাগে দিয়ে আসলে ভালো হতো। যেমন ভাবা তেমন কাজ। খাবারটা প্যাকেট করে নিয়ে গিয়ে ফরেনসিক বিভাগে। আসার সময় আমাক কলিগ মনির ভাইকে বললাম ঃ- ভাই আমি একটা রহস্য খুঁজতে চাই। মনির ভাই সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলো। আমরা দুইজন মিলে সকল রহস্য খুঁজে বের করবো। আমি মনির ভাইকে সব কিছু খুলে বললাম। মনির ভাই সব শুনে অনেক বেশি এক্সাইটেড হয়ে গেছে।
— ওই মহিলার যদি আপনার থেকে পালাতেই চাইবো তাহলে রাস্তাও মরিচের গুঁড়ো মারতে পারতো। বাড়ির ভিতর পর্যন্ত কেন গেলো আপনার সাথে? ( মনির ভাই)
হ্যা এই ব্যাপারটা আমি ভেবে দেখিনি তো। সবকিছু ভিতর মাথা থেকে এই ব্যাপারটা বের হয়ে গেছে। মনির ভাইকে বলে বেশ উপকার হয়ছে। আমাদের স্কুলে গনিত পড়ায় মনির। আমার থেকে বয়সে কিছুটা ছোট। এখনো বিয়ে করেনি। একা একা মেসে থাকে। এইসব রহস্যের ব্যাপারে তার খুব আগ্যহ তাই মনিরকে বলা।
— নাজিম ভাই আপনাকে যে ছবিটা দিয়ে ছিলো ওইটা একটু দেখান আমাকে।
ছবিটা দেখাতে ইচ্ছে করছিলো না। তাই মিতার অন্য একটা ছবি দেখালাম। মিতাকে মনির চেনে তাই তেমন গায়ে লাগিয়ে দেখলো না।
ওই দিনের মত মনির আর আমি যার যার মত কাজে চলে গেলাম। বাড়ি ফিরে দেখলাম মিতা ঘুমিয়ে আছে। আজ কাল মেয়েটা বেশিই ঘুমাচ্ছে। ওকে বিরক্ত না করে নিজের মত করে ঘুমিয়ে গেলাম। ওইদিনের পর থেকে আমি আর বাড়িতে খাবার খাইনি। সকালে মনিরের ফোন কলে ঘুম ভেঙে গেলো।
— ভাই আমি এইরকম দেখতে আর একটা মেয়ের সন্ধান পেয়ে গেছি। আপনি তারাতাড়ি স্কুলে চলে আসেন৷
— হুম আমি আসছি বিশ মিনিট সময় দেও আমাকে।
মনির ছেলেটা বেশ কাজের। একদিনে সব খোঁজ পেয়ে গেছে। ওই মেয়েটাকে পেলে আমরা অনেক কিছু জানতে পারবো।
— কি করে খবর পেলে মনির? ( নাজিম)
— আমার মেসে যে মেয়েটা কাজ করে। ওদের বস্তিতে থাকে ওই মেয়ে। ওর নাম তুলি। একবার ছবি দেখাতেই চিনে গেছে। (মনির)
— ওদের বস্তিতে চলো তাহলে।
— না ভাই ওইখানে যাওয়া উচিত হবে না।
— তাহলে কি করবো?
— ওই মেয়েটা রোজ সকালের দিকে কাজে যায়। ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। ওকে আমারা ফলো করবো।
— ঠিক আছে চলো।
স্কুল শেষে বের হয়ে দুইজন মিলে ওদের বস্তিতে ঢোকার রাস্তাতে দাঁড়িয়ে রইলাম। তুলি মেয়েটা ওড়নাতে মুখ ডেকে আসছে। আমাকে দেখলে চিনতে পারে তাই মনির গেলো কথা বলতে।
— তুলি…
— কে আপনি? আমার নাম জানেন কি করে?
— রহিমা আপা বলেছে। আসলে আমার একটু বাসার কাজের জন্য লোক দরকার ছিলো। আমি একাই থাকি তো তাই।
— আমি কাম করা ছাইড়া দিছি। আমি পারুম না৷
মনির পকেট থেকে পিস্তলটা বের করে তুলির মাথায় ঠেকালো। মনিরের হাতে পিস্তল দেখে আমিও কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম।
— সব সত্যি করে বল। না হলে।
— কি করছি আমি সাব? কে আপনি?
— তোর চেহারা এমন কেন? কি রহস্য এই চেহারার?
— আমি কিছু জানি না৷ আমাকে ছেড়ে দেন৷
— তুই কিছু না জানলে তোর বেঁচে থেকে কি লাভ?
— না সাব বলছি। আমার মা অনেক অসুস্থ। আমার অনেক টাকার দরকার। বেশ কিছু দিন আগে কিছুলোক আমাকে বলে ওরা আমার চেহারা পাল্টে দিবে। সাথে অনেক টাকাও দিবে। আমি অসহায় হয়ে রাজি হয়ে যাই। ওরা আমাকে আমার চেহারার মত একটা মেয়েকে দেখায় আর তার ঠিকানা খুঁজতে বলে। আমি ওদের ঠিকানা খুঁজে দিই। এরপর ওরা আমাকে ওই মেয়েটার সংসার ভাংতে বলে। আর কিছু বুদ্ধি দেয়। আমি ওদের কথা মতো কাজ করি। আমাকে মারবেন না।
— ওরা কারা তুলি?
— ওরা………………
আর কিছু বলার আগে একটা গুলি তুলির পিঠে লাগে। তুলি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমি ওদের কাছে দৌড়ে যাই।
— তুলি কিছু হবে না তোমার আমরা তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো। ( নাজিম)
— কিন্তু আমি চাইনি সাব মেয়েটার সংসার ভাংতে তাই ওইদিন সাহেবের সাথে তার বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে সাহেবকে দেখিয়েছিলাম আমি আর তার বউ আলাদা।
তুলি মারা গেলো। আমরা পুলিশকে খবর দিলাম। পুলিশ ওর লাশ নিয়ে চলে গেলো। সব আশা শেষ হয়ে গেলো আমার। কিন্তু কে আমার আর মিতার সংসার ভাংতে চাইবে?
চলবে