— হ্যা চিন্তা করবেন না। আমি আজই ওকে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলবো।
……………………………..
— নাহ আমার হাত কাঁপবে না। আপনি চিন্তা করবেন না। কাজ হয়ে যাবে। নিজের স্বামী বলে আমি ওকে ছাড় দিবো না।
আমি নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছি না। যে স্ত্রী আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। সে কিনা আমাকে মেরে ফেলার প্লান করতে পারে। কিন্তু কেন ও এমন করতে চাইবে? তাহলে কি আমার সাথে ওর পুরনো কোনো শত্রুতা আছে। তাই হলে তো এতোদিন আমাকে মেরে ফেলতে পারতো। নিজের প্রাণের মায়া না করে যে আমাকে বাঁচাতে পারে সে কি করে আমাকে মেরে ফেলতে পারে। তাও খাবারে বিষ মিশিয়ে। আমাকে নিয়ে যদি ওর কোনো সমস্যা হয় তাহলে সরাসরি তো বলতে পারে কিন্তু তা করে। তাহলে কি ও পরকীয়াতে জড়িত। কিন্তু এমন হলে তো আমি আগে এর প্রমাণ পেতাম। উফফ মাথাটা মনে হয় ফেটে যাবে আমার। এমন সময় মিতা আমাকে দেখতে পেয়ে–
— একি তুমি কখন এলে?
— এইতো মাত্রই এলাম। এই নেও তোমার বেলিফুলের মালা।
শান্ত ভাবে মিতা আমার হাত থেকে বেলিফুলের মালাটা নিলো। তারপর চুপচাপ চলে গেলো। মালাটা রেখে আমাকে বললো
— তুমি খেতে এসো আমি খাবার বাড়ছি।
আমার মনে নিজের অজান্তেই ভয় জন্ম নিতে লাগলো মিতা যদি আমাকে সত্যি মেরে ফেলে তাহলে তো এখন খাবার খেলেও আমি মারা যেতে পারি। কিন্তু রোজ অফিস থেকে ফিরে আমার খাবার খাওয়ার অভ্যাস। আজ কোন বাহানা দিয়ে খাবার না খাওয়া যায় সেটাই ভাবছি এখন। আমি নাজিম। একটা বেসরকারি স্কুল শিক্ষকতা করি আমার স্ত্রী মিতা। আমাদের কারোই মা বাবা কেউ নেই। আমি মায়ের সাথে বড় হয়েছি। মা-ই মিতাকে পছন্দ করে আমার বউ করে নিয়ে এসেছিলো। আমাদের ভিতর ভালোবাসার কোনো অভাব ছিলো না। খুব সুখেই আমাদের দিন কাটছিলো। কিন্তু আজ হঠাৎ করে এমন ঝড় আসবে কিছুতে ভাবতে পারিনি। কিন্তু বাড়ি কিছুতে খাবার খাওয়া যাবে না। যে করে হোক এখন খাবার খাওয়া চলবে না। মিতা কেন আমাকে খুন করতে চায় আর কাকে চিন্তা করতে নিষেধ করছে আমাকে জানতেই হবে৷ মিতার কথা আমার ধ্যান ভাঙলো।
— আমি খাবার দিয়ে দিয়েছি তুমি খেতে এসো।
আমি খাবার টেবিলে বসে মিতাকে বললাম একটা ডিম ভেজে নিয়ে এসো তো এখন মাছ খেতে ভালো লাগছে না। মিতা বললো ঃ- ঘরে এখন ডিম নেই৷ তুমি মাছ দিয়েই খেয়ে নেও।
আমি খাবার টেবিল থেকে উঠে মিতাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। মুচকি হেসে বললাম ঃ- চলো না আজ বাইরে খেয়ে নিই। এখন মাছ খেতে একদম ভালো লাগছে না। মিতা প্রথমে রাজি না হলেও পরে আমার জোরাজোরিতে রাজি হলো। মিতা রেডি হওয়ার সময় দেখতে পেলাম ফ্রিজে কম হলেও পাঁচ ছয়টা ডিম রাখা। খাবারটা পরীক্ষা করবো বলে লুকিয়ে রাখলাম৷ মিতা জিজ্ঞেস করলে বললাম আমি ফেলে দিয়েছি খাবারটা। বাইরে খাওয়ার সময় দেখলাম মিতা কেমন মন মরা হয়ে আছে। যেন তার কোনো পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে গেছে। বাড়িতে আসার সময়ও মিতা চুপচাপ হয়ে আছে। অন্যদিন হলে আমি মিতার কথায় বিরক্ত হয়ে যেতাম কিন্তু আজ সম্পূর্ণ নিরব কেন আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না।
বাড়ি ফিরে মিতা চুপচাপ ঘুমিয়ে গেলো৷ ওকে ঘুমাতে দেখে আমি বিকালের খাবারটা ঠিক আছে কিনা দেখতে গেলাম। খাবারটা যেখানে লুকিয়ে রেখেছিলাম তার কাছে একটা ইদুর মারা পড়ে আছে৷ হয়তো খাবারে বিষ মেশানো তার জন্য। চোখের কোনে জমে থাকা পানিটা মুছে ঘরে গিয়ে দেখলাম মিতা ঘরে নেই। ওকে খুঁজতে ওয়াশরুমে গেলাম কিন্তু সেখানে নেই। ছাদে গিয়ে দেখি মিতার সাথে একটা ছায়ামূর্তি দাড়িয়ে আছে। মিতাকে স্পষ্ট বোঝা গেলেও তাকে বোঝা যাচ্ছে না। কে হতে পারে এই লোক?
চলবে…
পার্ট -১
#মুখোশের আড়ালে তুমি
#ফারহানা কবীর মানাল