#মৃগতৃষ্ণা-১১
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
★সকাল থেকেই তলপেটের যন্ত্রণা শুরু হয়েছে পঙ্খির। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে রান্না ঘরের কাজে লিপ্ত সে। এই ব্যাথা যে নতুন না। প্রতি মাসেই তাকে এই অসহনীয় পীড়া পোহাতে হয়। এটা যে জীবনের অযাচিত সঙ্গী হয়ে গেছে।লেখিকা-মেহরুমা নূর।কিশোরী বয়সে প্রথম যেদিন এই পীড়া আরম্ভ হয়েছিল তখন বুঝতে না পেরে বড় ভাবীকে বলেছিল তার পীড়ার কথা বলে সাহায্য চেয়েছিল। ভাবি তখন এক কোনায় টেনে নিয়ে ফিসফিস করে বলেছিল, এসব কথা নাকি কাউকে বলতে নেই। লোকে খারাপ বলে। এতে করে নাকি ব্যাথা আরও বেশি হয়। মেয়েদের এসব মুখ বুঁজে চুপচাপ সহ্য করে নিতে হয়। পঙ্খিও সেদিন ভাবীর কথাই মেনে নিয়েছিল। নিজের এই পীড়া নিজেই হজম করতো সে। যদিও পড়াশোনা করে তার যতটুকু জ্ঞান হয়েছে তাতে ভাবীর সেই কথা এখন তার কাছে কেমন বিশ্বাস যোগ্য মনে হয় না। তবুও অভ্যাসের বশিভূত বলা যাক বা জড়তা-সংকোচের কারণে তার এই পীড়ার কথা সে কাউকে বলে উঠতে পারে না। আর বলবেই বা কার কাছে? তার একান্ত আপন বলতে কেই বা আছে যাকে সে এই পীড়া নিবারনের কথা বলতে পারবে? তাইতো মুখ বুঁজে সহ্য করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
সময়ের সাথে পীড়া আরও তীব্র হতে থাকে। পঙ্খি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা। মাথা ঘুরছে ওর।বমি বমি ভাব হচ্ছে। কোনরকমে রান্না শেষ করে কনিকাকে খাবার সার্ভ করতে বলে সে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো। ব্যাথার যন্ত্রণায় ঠিকমতো হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছে পঙ্খির। এলোমেলো পায়ে হাঁটতে নিয়ে হঠাৎ কারোর সাথে ধাক্কা। ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যেতে নিলে সামনের ব্যাক্তি ধরে ফেললো। পঙ্খি মাথা তুলে দেখলো সেই ব্যাক্তি সয়ং ইন্ধন। পঙ্খি দ্রুত নিজেকে ছাড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। ইন্ধন কেমন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। কিছু একটা বলতে গিয়েও যেন বললো না। পঙ্খিও দ্রুত ওখান থেকে নিজের রুমে চলে গেল।
বেলা বাড়ার সাথেই বাড়ছে তিব্র যন্ত্রণা। সকাল গড়িয়ে এখন দুপুর। বিছানায় পেট চেপে ধরে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে পঙ্খি। যন্ত্রণা সইতে না পেরে দাঁত দিয়ে বালিশ কামড়ে ধরলো সে। ঘর্মাক্ত মুখ ব্যাথার যন্ত্রণায় লাল হয়ে উঠেছে। সকাল থেকে কিছু মুখেও দেয়নি সে। এই অবস্থায় খাবারও খেতে পারে না। একটা নাপা বড়ি খেলে হয়তো ব্যাথা কমতো। কিন্তু এই কথাটাই কাকে বলবে ও। অন্তর্মুখী পঙ্খি তাই এবারও সব নিজের মাঝেই আবদ্ধ রাখলো। দাঁত কিড়মিড় করে সব সহ্য করে যাচ্ছে। হঠাৎ দরজার পাশ থেকে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ এলো। পঙ্খি একটু হকচকিয়ে উঠলো। কোনরকমে উঠে দাঁড়িয়ে দরজা কাছে আসলো শব্দের উৎস খুঁজতে। দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলো দরজার বাইরের ফুলদানিটা পড়ে আছে। হয়তো বিড়ালের ধাক্কা টাক্কা লেগেছে। এই ভেবে পঙ্খি দরজা চাপিয়ে আবারও বিছানায় পেট চেপে ধরে শুয়ে রইলো।
মিনিট পাঁচেক পর। কেউ দরজায় টোকা দিলো। পঙ্খি দরজা খুলে দেখলো ছায়া দাঁড়িয়ে আছে। ছায়া হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকেই বলে উঠলো।
–ভাবি তুমি ঠিক আছ? ব্যাথা কি বেশি হচ্ছে? এই নাও নাপা বড়ি এনেছি। খেয়ে নাও ব্যাথা কমে যাবে।
পঙ্খি আচম্বিত চোখে তাকিয়ে বললো।
–তুমি কিভাবে জানলে? আমিতো কাউকে বলিনি।
ছায়া কেমন আমতাআমতা করে বললো।
–আ আরে আমি তোমাকে দেখেছিলাম। তুমি যখন রুমে যাচ্ছিলে তখন। তোমাকে দেখেই মনে হচ্ছিল তোমার কোনো সমস্যা হয়েছে। তারপর দরজার কাছে এসে তোমার কাতরানোর আওয়াজ শুনলাম। তখন বুঝতে পেরেছি তোমার কি হয়েছে। তাই আমি বাবার কাছ থেকে এই নাপা বড়ি নিয়ে এলাম। এটা খেয়ে নাও। একটু আরাম পাবে।
ছায়ার ব্যাখ্যা পঙ্খির কেন যেন বিশ্বাস যোগ্য মনে হলোনা। কারণ ছায়া এতটাও বুদ্ধিমান না যে,এত সহজে সব বুঝে যাবে। তবে আপাতত সেসবে মাথা ঘামানোর মতো অবস্থা নেই পঙ্খির। আগে এই যন্ত্রণার নিবারন করাটাই সর্বোপরি জরুরি। তাই আর কালবিলম্ব না করে ছায়ার কাছ থেকে বড়ি টা নিয়ে খেয়ে নিলো সে। বড়ি খেয়ে আবারও শুয়ে পড়লো পঙ্খি। বড়ি কাজ করতে সময় লাগবে। তাই আবারও পেট চেপে ধরে শুয়ে রইলো। ছায়া কিছুক্ষণ পঙ্খির পাশেই বসে থেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। সময়ের সাথে ধীরে ধীরে ব্যাথার পরিমাণ টা একটু কমে এলো। ছায়া তখন বললো।
–ভাবি কিছু খাবে তুমি? সকাল থেকে না খেয়ে আছ। ভাত নিয়ে আসি।
পঙ্খি দুর্বল কন্ঠে বললো।
–না না লাগবে না। আমি এমনিতেও এখন কিছু খেতে পারবোনা। বমি হয়ে যাবে। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ বোন।তুমি না আসলে আজ হয়তো ব্যাথায় মরেই যেতাম। এখন একটু আরাম লাগছে। তুমি চাইলে যেতে পারো।
–ঠিক আছে ভাবি। তুমি তাহলে আরাম করো।
ছায়া চলে গেল,পঙ্খি ওভাবেই শুয়ে রইলো। ব্যাথা কমলেও, পুরোপুরি সারেনি। তাই চোখ বন্ধ করে ওভাবেই শুয়ে রইলো সে।
__
শুয়ে থাকতে থাকতেই বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো। আকাশে মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে। আবারও হয়তো বৃষ্টি নামবে। বারান্দায় কিছু কাপড় চোপড় নেড়ে দেওয়া আছে। ভিজে যেতে পারে। তাই ধীরে ধীরে দূর্বল শরীরে উঠে দাঁড়াল পঙ্খি। এরই মাঝে ঝুম বৃষ্টিও।শুরু হয়ে গেছে। বারান্দায় গিয়ে কাপড় গুলো দড়ি থেকে নামালো। কাপড় গুছিয়ে ফিরে আসার সময় একটু বাইরের বৃষ্টির পানি ছোঁয়ার মনোভাবে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো বৃষ্টির মাঝে। তখনই ওর নজর গেল নিচে।কেউ একজন এই ঝুম বৃষ্টির মাঝে নিচে ব্রেঞ্চের উপর বসে আছে। ভালো করে খেয়াল করতেই বুঝতে পারলো এটা ইন্ধন।লেখিকা-মেহরুমা নূর। ইন্ধন কে এভাবে ভিজতে দেখে একটু বিস্মিত হলো পঙ্খি।লোকটা কি পাগল নাকি? এই ভর সন্ধ্যায় এভাবে বৃষ্টির মাঝে বসে আছে কেন? কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে আবার রুমের ভেতরে চলে এলো পঙ্খি। ইন্ধন যা খুশি করুক, ওসব নিয়ে আমার মাথা ঘামানোর দরকার নেই। পঙ্খি রুমে এসে বাথরুমে গেল ফ্রেশ হতে। পেট এখনো চিনচিন ব্যাথা করছে। সারাদিন না খেয়ে থাকায় শরীর টাও অনেক দূর্বল হয়ে গেছে। ফ্রেশ হয়ে পঙ্খি আবারও শুয়ে পড়লো। দূর্বল আঁখি যুগলে কেমন ঘুম নেমে এলো।
কানে হৈচৈ এর মৃদু শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল পঙ্খির। চোখ মেলে উঠে বসলো সে। দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত ৮ টা পার হয়ে গেছে। বাইরে থেকে কেমন লোকজনের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। যেন গুরুতর কিছু একটা হয়েছে। বিষয় টা দেখতে পঙ্খি আস্তে করে উঠে এসে দরজা খুলে বাইরের দিকে তাকালো। দেখলো সবাই কেমন হন্তদন্ত হয়ে ছোটাছুটি। পঙ্খি এবার করিডরে এলো। কিছুদূর এগুতেই দেখতে পেল ইন্ধনের রুমের সামনে সবাই ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে। সবার মুখে কেমন চিন্তার ছাপ। পঙ্খি কৌতুহলী হয়ে এগিয়ে গেল সেদিকে। দরজার কাছে এসে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো কি হয়েছে। অতঃপর সে দেখতে পেল, ইন্ধন বিছানায় জুবুথুবু হয়ে শুয়ে থেকে থরথর করে কাঁপছে। চোখ মুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে তার। রাবেয়া তার গায়ের ওপর তিন চারটা কাঁথা দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। ছেলের মাথায় হাত বোলাচ্ছেন আর কাঁদছেন তিনি।বাকিরাও চিন্তিত মুখে ঘরের ভেতর বিরাজমান আছে। পঙ্খি ছায়াকে চোখের ইশারায় কাছে ডেকে এনে দরজার বাইরে এসে মৃদু স্বরে বললো।
–কি হয়েছে??
ছায়াও ধীর কন্ঠে বললো,
–আরে ভাবি তুমি দেখি কিছুই জানোনা। ইন্ধন ভাইয়ার অসম্ভব মাত্রায় জ্বর উঠেছে। ভাইয়া নাজানি কখন থেকে বাইরে বৃষ্টিতে ভিজছিল। বৃষ্টি থামার পর বাড়িতে ফেরে। তারপর থেকেই শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসে তার। আসলে ভাইয়ার ছোট বেলা থেকেই বৃষ্টির পানি গায়ে সয়না। ঠান্ডা জ্বর লেগে যায়। আর আজতো মনে হয় অনেকক্ষণ ভিজেছে। তাই অবস্থা খুবই বেগতিক।
–তা উনি যখন জানেই উনার বৃষ্টি সয়না, তাহলে বৃষ্টিতে ভিজতে গেলেন কেন?
–কি জানি? ভাইয়ার মর্জির কথা কে জানে?
–তা ডাক্তার চাচাকে ডাকেনি?
–ডাকতে চেয়েছিল বাবা। কিন্তু ভাইয়াই ডাকতে দেয়নি।
–কেন?
–ভাইয়া বলছে সে গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার দেখাবেনা। সদরের তানজিলা নামের কোনো মহিলা ডাক্তারের কথা বলছে। ভাইয়া জেদ ধরে বসে আছে ওই ডাক্তার কে ছাড়া আর কাউকে দেখাবে না। বাবা ফোন করেছে সদর হাসপাতালে। ডাক্তার আসছে। কিন্তু এতদূর থেকে আসতে তো সময় লাগবে।
পঙ্খি ভাবলো লোকটার মাথায় সত্যিই কোন সমস্যা আছে। নাহলে এমন আজব কাজ কাম কে করে? ডাক্তার হলে হলো একজন।নাহ, উনিতো আবার বিদেশ ফেরত। গ্রামের সাধারণ ডাক্তারের ওপর ভরসা নেই তার। সাধারণ জ্বরের জন্য এখন তার সদরের ডাক্তার লাগবে।কি অদ্ভুত কথা।পঙ্খির ভাবনার মাঝেই ছায়া বলে উঠলো।
–ভাবি তোমার পেটের ব্যাথা এখন কেমন? কমেছে? তুমি তো বোধহয় খাওনি কিছু। কিছু খাবে?
পঙ্খি কৃতজ্ঞতা স্বরুপ স্মিথ হেঁসে বললো।
–আরে না। এখন আপাতত আমার চিন্তা করতে হবে না। তুমি তোমার ভাইয়াকে দেখ। আমি এখন ঠিক আছি। খেতে মন চাইলে আমি নিজেই নিয়ে নিবো।
–ঠিক আছে ভাবি তুমি যাও আরাম করো। আমি ভাইয়াকে দেখে আসি। দেখিতো ডাক্তার এলো নাকি।
পঙ্খি মাথা নেড়ে আবার নিজের রুমে চলে গেল। রুমে এসে শুয়ে থাকতে থাকতে ত্রিশ মিনিট পর ওর দরজায় কেউ নক করলো। পঙ্খি ভেতরে আসার অনুমতি দিলো। তখন দরজা ঠেলে ছায়া একজন মহিলাকে নিয়ে হাজির হলো। মহিলাটির হাতে ডাক্তারি ব্যাগ আর গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলানো দেখে পঙ্খি বুঝতে পারলো মহিলাটি ডাক্তার। পঙ্খি বুঝতে পারলো না ডাক্তার এখানে কেন এসেছে? ছায়া ডাক্তার কে পঙ্খির কাছে নিয়ে এলো। ডাক্তার পঙ্খির সামনে বসে নরম সুরে বললো।
–হ্যাঁ তো বলো কি সমস্যা তোমার? পিরিয়ডের সময় কি তোমার পেট ব্যাথা করে?
পঙ্খি অবাক চোখে একবার ডাক্তার, তো একবার ছায়ার দিকে তাকাচ্ছে। ও বুঝতে পারছে না ডাক্তার এসব জানলো কি করে? তাহলে কি ছায়া সব বলেছে? ডাক্তার আবারও বললো।
–দেখ ঘাবড়ানোর কিছু নেই।আমিতো এখানে ইন্ধন কে দেখতে এসেছিলাম। তারপর তোমার কথা শুনলাম। তাই চেকআপ করতে এসেছি। মেয়েদের এসব সমস্যা লুকাতে নেই। এতে সমস্যা আরও বড় আকার ধারণ করে। তাই আমাকে সব খুলে বলো। কি কি সমস্যা হয় তোমার?
পঙ্খি নিজেকে একটু সামলে নিয়ে ধীরে ধীরে সব খুলে বললো ডাক্তার কে। ডাক্তার সব শুনে বললো,
–তো তুমি এতদিন ধরে কাউকে কিছু বলোনি কেন? জানো এসব অসাবধানতার কারণেই কতো বড়ো বড়ো রোগের সৃষ্টি হয়? আচ্ছা যাইহোক আমি আপাতত তোমাকে কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে যাচ্ছি। এগুলো খাও। আশা করি ব্যাথা সেরে যাবে।ঔষধের কোর্স শেষ করলে পরবর্তীতে আর ব্যাথা হবে না। আর সময় করে একবার হাসপাতালে এসে কিছু পরিক্ষা করিয়ে নিও। তাহলে আর কোন সংশয় থাকবে না।
–জ্বি অনেক ধন্যবাদ আপা।
–ঠিক আছে আমি তাহলে আসি এখন। ঔষধ গুলো ঠিকমতো খেয়ে নিও।
ডাক্তার চলে যেতেই পঙ্খি ছায়ার হাত ধরে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো।
–তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেবো জানা নেই আমার। আজ তুমি আমার অনেক বড় উপকার করলে। তুমি আমার সত্যিই ছোট বোন।
ছায়া প্রতিত্তোরে কিছু বললো না। শুধু ঠোঁটে জোরপূর্বক হাসি আনার চেষ্টা করলো সে।
__
মাঝখানে আরও একদিন চলে যায়।ডাক্তারের দেওয়া ঔষধ খেয়ে পঙ্খি এখন প্রায় সুস্থ। পেটে ব্যাথাও আর নেই। ছায়া স্কুলে যাওয়ার সময় পঙ্খির কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন টা নিয়ে যায়। তারপর স্কুল থেকে ফিরে ঔষধ গুলো দিয়েছিল পঙ্খিকে। ছায়ার হঠাৎ এতো বুদ্ধিমত্তা দেখে পঙ্খি মাঝে মাঝে বিস্মিত হয়ে যায়। ওর কেন যেন বিশ্বাসই হয়না যে এতকিছু সব ছায়া নিজের বুদ্ধিতেই করছে। আবার ভাবে হয়তো মেয়েটা সত্যিই বুদ্ধিমান হয়েছে। নাহলে আর কেইবা ওকে নিয়ে এতো ভাববে?
ইন্ধনও আগের থেকে সুস্থ। জ্বর আর নেই তার।
সকালে যথারীতি পঙ্খি রান্নাঘরে রান্নার কাজ করছে। অনেক টা জলদি জলদি কাজ সারতে চাচ্ছে সে। ওকে আবার পড়তেও বসতে হবে। একটা পরিক্ষা শেষ হলেও চাপ কমেনি। কিছুদিন পরেই আবার ওর ইয়ার চেঞ্জ পরিক্ষা। তাই পড়ার টেবিলে এখন বেশি বেশি সময় দেওয়া জরুরি। তবে সংসারের কাজে সে পড়ার সময়ই ঠিকমতো বের করতে পারে না। ভাবনা চিন্তার মাঝে তড়িঘড়ি করে সবজি কাটতে গিয়ে হঠাৎ বেখেয়ালিতে পঙ্খির বৃদ্ধাঙ্গুলের মাথায় কেটে গেল। রক্ত বের হয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো। পঙ্খি দ্রুত উঠে গিয়ে বেসিনের নিচে হাত ধরলো।ধারালো বটিতে কাটায় হাত জ্বলছে ভীষণ। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে সেটা হজম করে নিলো সে। হাত ধোঁয়া শেষে কোনরকমে একটা তেনা বেঁধে নিলো আঙ্গুলে। তারপর আবারও কাজে লেগে পড়লো। রান্না শেষ করে এক এক করে সব টেবিলে রাখছে। এতক্ষণে সবাই ডাইনিং টেবিলে চলে এসেছে। পঙ্খি তরকারির বোল ধরে আনার সময় কাটা আঙুলে একটু খোঁচা লেগে বোলের পাশে হালকা একটু রক্ত লেগে গেল। তবে পঙ্খি সেটা খেয়াল না করেই বোলটা টেবিলে রেখে দিয়ে খাবার সার্ভ করতে লাগলো।লেখিকা-মেহরুমা নূর। সবাই খাওয়া শুরু করলো। পানির জগ খালি দেখে পঙ্খি সেটা ভরার জন্য জগ নিয়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে নিলেই হঠাৎ ঠাস করে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ পেল। পঙ্খি চকিত হয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখলো ইন্ধনের খাবার প্লেট নিচে পড়ে খন্ড খন্ড হয়ে আছে। মনে হচ্ছে কেউ আছাড় মেরেছে। ইন্ধনের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে কেমন অগ্নিমূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। তার সারা মুখে প্রচন্ড রাগের আভাস ভেসে উঠেছে। তবে উনিই এই প্লেট ছুড়ে ফেলেছে? কিন্তু কেন?
চলবে……