মৃগতৃষ্ণা-১২

1
1430

#মৃগতৃষ্ণা-১২
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★উপস্থিত সবাই বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইলো ইন্ধনের দিকে। রাবেয়া উদ্বিগ্ন হয়ে ছেলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
–কিরে গেদা? কি হয়েছে? এইভাবে ভাতের প্লেট ফেলে দিলি কেন?

ইন্ধন ক্রুদ্ধ কন্ঠে উচ্চস্বরে বলে উঠলো।
–শুধু প্লেট কেন, মনতো চাইছে টেবিলের সব খাবারই ছুঁড়ে ফেলতে। মা এগুলো কোনো খাবার হলো? আমার জীবনে এরচেয়ে বিশ্রী খাবার আমি কখনো খাইনি।মুখে দিতেই নারী ভুঁড়ি উল্টে আসছিল। কে রান্না করেছে এমন জঘন্য খাবার?

–কি বলছিস এতো খারাপ হয়েছে? খাবার তো পঙ্খি রান্না করেছে।আর ওর রান্না তো খারাপ না। ভালোই তো রাঁধে।

–একে তুমি ভালো বলছ মা? আম সরি টু সে বাট এটা মানুষ তো দূরের কথা, কুকুরেরও খাবার অযোগ্য। এমন খাবার খেলে মানুষের মরার জন্য বিষ খাওয়ার দরকার পরবে না। এক্সুয়ালি বিষও এই খবারের থেকে সুস্বাদু হবে। রান্না যখন পারে না তাহলে ওকে কে রান্না ঘরে যেতে বলেছে? খবরদার আজকের পর যদি ওকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেখি, তাহলে আমি বলে দিচ্ছি আমি কিন্তু এবাড়ির কোনো খাবার খাবোনা।

সামছুল মজুমদার এবারে বলে উঠলেন।
–শান্ত হও ইন্ধন। খাবার এতটাও তো খারাপ না। কই আমাদের কাছে তো ঠিকই লাগছে।

–ঠিক তো লাগবেই। কারণ আপনারা এই জঘন্য খাবার খেতে খেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। তাই ভালো মন্দের ফারাক ভুলে গেছেন। কিন্তু আমার টেস্ট এখনও এতো খারাপ হয়নি। আমার দ্বারা এই খাবার খাওয়া সম্ভব না। কাল আমি কিছু নেতাদের দাওয়াত করেছি বাসায়। তাদের কি আমি এই জঘন্য খাবার খাওয়াবো? আমি শেষ বার বলছি। আজকের পর এই মেয়ে রান্না ঘরে ঢুকলে আমি এবাড়ির কোনো খাবারই খাবোনা।

রাবেয়া ছেলেকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললো।
–আচ্ছা ঠিক আছে তুই শান্ত হ। পঙ্খি আর যাবেনা রান্নাঘরে। তবুও তুই আর রাগিস না।

খোদেজাও নাতীর সাথে সায় দিয়ে বললো।
–ঠিকই কছু গেদা। এই ছেড়ির কোনো যোক্তাই নাই। কোনো কামেরই না। অপয়া ছেড়ি আর পারবোই কি? তুই চিন্তা করিস না। এই অকামা ছেড়িরে রান্নাঘরে আর ঢুকতে দিমুনা আমি। রাবেয়া বউ ইন্ধনের খাওয়ার ন্যাইগা অন্য কিছু নিয়ে আসে।

–আমার এখন খাওয়ার ইচ্ছেই নষ্ট হয়ে গেছে। আমি বরং বাইরেই কিছু খেয়ে নিবো।

কথাটা বলেই হনহন করে বাইরে চলে গেল ইন্ধন।। এতক্ষণ ধরে চুপচাপ মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে থেকে সব শুনছিল পঙ্খি। ইন্ধনের এমন অপমানে পঙ্খির ভেতর টা বিষিয়ে উঠলো। চোখের পানি উপচে পড়তে চাইলো।তবে পঙ্খির কঠোর বাঁধায় সেগুলো বের হতে পারছে না। ইন্ধনের প্রতি রাগ আর ক্ষোভও হলো প্রচুর পরিমাণে।তার খুব বলতে ইচ্ছে করছিল, কই এতদিন ধরে খাবার ঠিকই লাগছিল। এতদিনও তো আমিই রান্না করেছি। তাহলে আজ হঠাৎ তার আমার খাবার এতো বিশ্রী লাগলো কেন?তবে ইচ্ছে হলেও সে সবার সামনে সে চুপ রইলো।বাড়ির বড়দের সামনে কিছু বললে বেয়াদবি হতো,এই ভেবে সে চুপ রইলো। প্রতিবারের মতো সব চুপচাপ হজম করে গেল। এই লোকটার প্রতি পঙ্খির মনে যে ভালো মনোভাব হয়েছিল। তা আজ পুরোপুরি শেষ হয়ে গেল। লোকটার প্রতি শুধু ক্রোধ ছাড়া আর কোন মনোভাবই কাজ করছে না ওর মাঝে। আজপর্যন্ত ওর খাবার নিয়ে কেউ এভাবে বলেনি। বরং সবাই প্রশংসাই করব। আর এই লোকটা কতো নিন্দামন্দ করে গেল। ঠিক আছে আমিও আর কখনো এই অসভ্য লোকটার জন্য রান্না করবোনা।

মনের ক্ষোভ নিয়ে ওখান থেকে সরে রান্নাঘরে এসে বেসিনের ওপর জগটা ঠাস করে রেখে, দিয়ে চোখ বুজে দাঁড়িয়ে রইলো। চোখের পানি এবার অবাধ্য হয়ে বেড়িয়েই এলো। মাঝে মাঝে নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে তুচ্ছ প্রাণী মনে হয়। যার এই পৃথিবীতে কোন প্রয়োজন নেই। সে যেন শুধুই গ্লাণির বোঝা টানতে এসেছে পৃথিবীতে। জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত সে কোন সুখের ঠিকানা পেলনা। আর না সে নিজে কারোর জীবনে সুখের কারণ হলো। তাহলে কি লাভ এই তুচ্ছ জীবনের বোঝা টানার?
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো।
–কেন চলে যাওনা এখান থেকে? এতকিছুর পরেও কেন পড়ে থাকো এখানে? এইসব অপমান সহ্য না করে চলে গেলেই তো পারো। নিজেও শান্তি পাও। আর আমরাও।

পঙ্খি পেছনে ঘুরে দেখলো এসব জাহানারা বলছে।। কথাগুলো বলা শেষে জাহানারা তার হাতের জগটা ভরে নিয়ে চলে গেল। পঙ্খি মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, যাওয়ার জায়গা থাকলে না যাবো। বাপের বাড়ি টা তো শুধুই নামের। যেখানে ফিরে গেলে তারা এবাড়ির লোকের থেকেও বেশি ওকে যাতনা দিবে। তাহলে আর কোথায় যাবে ও? যাওয়ার জায়গা থাকলে কি আর এখানে পড়ে থাকতো ও? এই দুনিয়াতে ওর এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে গিয়ে দুদন্ড শান্তি পাবে। এমন কেউ নেই যে ওকে সুখের ছোট্ট একটা কুঁড়েঘরের সন্ধান দিবে। চোখের পানি মুছে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেল পঙ্খি।
__

ঘরে এসে বসার দুই মিনিট পরই হঠাৎ ছায়া হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলো পঙ্খির ঘরে। ঘরে এসেই সোজা পঙ্খির হাত ধরে বললো।
–এইযে ভাবি এন্টিসেপ্টিক মলম এনেছি। তোমার হাতে লাগিয়ে নাও তাহলে ইনফেকশন হবে না।

পঙ্খি বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো ছায়ার পানে। আজকাল মেয়েটা ওকে ক্ষনে ক্ষনে অবাক করছে। হঠাৎই যেন বোকা মেয়েটার বুদ্ধিমত্তা পরিমাণের তুলনায় একটু বেশিই প্রতীয়মান হচ্ছে। আর এই ঔষধ গুলোই বা এতো ফটাফট কোথায় পাচ্ছে? গ্রামে সেই বাজার ছাড়া তো কোথাও ফার্মেসী বা ঔষধের দোকান নেই। আর পঙ্খির জানামতে ছায়া নাপা আর প্যারাসিটামল কি জিনিস তাই হয়তো জানে না। অথচ আজকাল মুহূর্তের মাঝেই কোথাথেকে যেন ওর সবকিছু নিয়ে আসে। ব্যাপার টা যথেষ্ট ভাবায় পঙ্খিকে। পঙ্খির ভাবনার মাঝেই ছায়া ওর আঙুলে ক্রিম লাগিয়ে দিলো। পঙ্খি বলে উঠলো।
–তুমি এই ক্রিম কোথায় পেলে? আমার জানামতে তো এবাড়িতে এটা ছিলোনা।

পঙ্খির প্রশ্নে ছায়ার চেহারায় কেমন অপ্রস্তুত ভাব দেখা গেল। ছায়া আমতাআমতা করে বললো।
–আরে ভাবি তুমি কি আর সব খবর রাখো নাকি? এটা বাবার ঘরে ছিলো। সেখান থেকেই এনেছি।

ছায়ার কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে না হলেও আপাতত সেটাই মেনে নিলো পঙ্খি। ক্রিম লাগানো শেষে ছায়া বলে উঠলো।
–আজ স্কুল শেষে উল্লাপাড়া মার্কেটে যাবো বান্ধবীদের সাথে। অনেক কেনাকাটা করবো আজ।আমি সারারা ড্রেস কিনবো। তোমার জন্য কিছু আনতে হলে বলো, নিয়ে আসবো।

পঙ্খি মুচকি হেঁসে বললো।
–না না আমার কিছু লাগবে না। তা হঠাৎ কেনাকাটা? এতো টাকা কোথায় পেলে শুনি?

–পেয়েছি এক জনের কাছ থেকে। কারোর কাজ করে দেওয়ার পুরস্কার পেয়েছি।

–কার কাজ করে দেওয়ার? দেখ ছায়া তুমি আবার কোনো ভুলভাল কিছু করোনি তো?

–আরে ভাবি তুমি একদম চিন্তা করোনা।তুমি যা ভাবছ তেমন কিছুই না। আমি কোন ভুল কিছু করিনি। তবে তোমাকে এখন কিছু বলতে পারবোনা। সময় হলে তুমি নিজেই জানতে পারবে।

কথাটা বলেই ছায়া পঙ্খির প্রতিত্তোরের পূর্বেই ওখান থেকে চলে গেল। আর পঙ্খির মাথায় ঘুরতে থাকলো নানান চিন্তার ধূম্রজাল।

একটু পরে পঙ্খি আবার রুমের বাইরে এলো। তখন তো রাগ করে না খেয়েই চলে গিয়েছিল। তবে এখন ক্ষুধা লাগছে ওর। তাই কিছু খাওয়ার জন্য ডাইনিং টেবিলের কাছে আসলো। তখনই জুবায়েদ আর কনিকাকে বসার ঘরের এদিকে আসতে দেখলো। সামছুল মজুমদার সোফায় বসে পেপার পড়ছিলেন। জাহানারা বসে পান বানাচ্ছিলেন। সামছুল মজুমদার ওদের কে দেখে বলে উঠলেন।
–কি ব্যাপার কোথাও যাচ্ছো নাকি তোমরা?

জুবায়েদ বললো,
–হ্যাঁ আব্বা। আসলে কনিকার একটু শরীর খারাপ করেছে তাই উল্লাপাড়া ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছি।

জাহানারা চিন্তিত সুরে বললেন।
–কি হয়েছে বউমার?

–তেমন কিছু না। ওই এসিডিটির সমস্যা হয়েছে।
পঙ্খি কনিকার দিকে খেয়াল করে দেখলো কনিকার চোখ মুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে। আর কেমন যেন ভীতি দেখা যাচ্ছে তার চোখে। আসলেই কি উনার শরীর খারাপ? নাকি অন্য কিছু হয়েছে? পঙ্খি কনিকার কাছে এগিয়ে এসে কনিকার হাত ধরে মৃদুস্বরে বললো।
–ভাবি আপনি ঠিক আছেন তো? কি হয়েছে আপনার? আমাকে বলবেন?

পঙ্খির কথায় কনিকা কেমন করুন অসহায় দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো।কনিকাও এবার দুই হাতে শক্ত করে পঙ্খির হাত টা ধরলো। চোখের ভাষা বয়ান করছে সে অনেক কিছু বলতে চাচ্ছে। তবে জবান তাকে অনুমতি দিচ্ছে না। জুবায়েদ কনিকার দিকে তাকিয়ে বললো।
–চলো যাওয়া যাক।

কনিকা তবুও পঙ্খির হাত ছাড়ছে না। আরও শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। জুবায়েদ এবার কনিকার হাতের বাহু ধরে পঙ্খির কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে ঠোঁটে মিথ্যে হাসির রেখা ফুটিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–কনিকা চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে। পড়ে আবার ডাক্তার কে পাওয়া যাবে না।

কনিকা কিছুতেই যেন পঙ্খির হাত ছাড়তে চাইছে না।(লেখিকা-মেহরুমা নূর) অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে চাইছে সে। মানুষ অতি বিপদে পড়লে যেমন টা সাহায্যের আশায় কারোর পানে তাকায় তেমনই একটা চাহুনি কনিকার চোখে। পঙ্খির কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে ব্যাপার টা। কনিকার জন্য হৃদয় টা কেমন করছে ওর। পঙ্খি কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই জুবায়েদ এক প্রকার কনিকার হাত ধরে জোরে টান দিয়ে পঙ্খির কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বাইরের দিকে চলে গেল। যেতে যেতেও কনিকা অসহায় করুন দৃষ্টিতে পঙ্খির পানে তাকিয়ে রইলো। তাকিয়ে থাকতে থাকতে চলে গেল সে। পঙ্খি ভাবনায় পড়ে গেল। কনিকার কিছু একটা তো হয়েছে। যা ও বলতে পারছে না। মনে হচ্ছে কিছু একটা বেঠিক হচ্ছে। কিন্তু কি সেটা বুঝে উঠতে অক্ষম হচ্ছে পঙ্খি। নাকি ওই একটু বেশি ভাবছে? কনিকা ভাবি ফিরে আসলে কথা বলতে হবে।
___

মাগরিবের নামাজ শেষে পড়ার টেবিলে বসেছে পঙ্খি। হাতের ব্যাথাটা এখন একটু কমেছে। ছায়া দুপুরে আবার ব্যাথার ঔষধ এনে দিয়েছিল ওকে। ওটা খেয়ে ব্যাথাটা অনেক কমে গেছে। যেহেতু রান্না ঘরে যাওয়া মানা তাই এখন পড়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবে। লোকটার ওই খারাপ আচরণের কারণে একটা উপকার তো হয়েছে। এখন পড়াশোনার জন্য যথেষ্ট সময় পাবে ও। রান্না বান্না করার ঝামেলা নেই আর। কথাটা মনে আসতেই একটু অবাক হলো পঙ্খি। লোকটা কি তাহলে ওর উপকার করলো? অজান্তেই হোক তবুও উপকার তো হয়েছে। তবে লোকটার ওই অপমান সে কখনো ভুলতে পারবেনা। আর না তাঁর জন্য ভালো কোনো মনোভাব আনবে মনে।ওই অভদ্র লোকটার কথা ভাবতেও চাইনা আমি।

রাত আটটার দিকে ছায়া এলো পঙ্খিকে খাবার জন্য ডাকতে। পঙ্খির তখন কনিকার কথা মনে আসলো। সে বলে উঠলো।
–কনিকা ভাবি ফিরেছে?

–নাতো। আজ নাকি ভাই ভাবি ফিরবে না। ভাই ফোন করে বলেছে, ভাবির নাকি বাপের বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছিল তাই ওখানে নিয়ে গেছে। কাল হয়তো আসবে।

–ও আচ্ছা। ঠিক আছে চলো।
__

পরদিন সন্ধ্যায় ইন্ধনের পার্টির কিছু লোকজন এসেছে রাতের খাবারের দাওয়াতে। পঙ্খিকে মানা করায় সে আর রান্নার কাজে যায়নি। এমনিতেও বাইরের লোকজনের সামনে পঙ্খি খুব একটা দরকার ছাড়া যায়না। আর এখানে তো সব বাইরের পুরুষ থাকবে। তাই পঙ্খি আর ঘর থেকে বের হয়নি। ঘরে বসে একটু পড়ার চেষ্টা করছে। একটু পরে ছায়াও হেলেদুলে এলো পঙ্খির রুমে। মুখে তার বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। পঙ্খি মুচকি হেঁসে বললো।
–কি হলো ছায়ারাণীর? মুখটা এমন বাংলার পাঁচ বানিয়ে রেখেছ কেন?

ছায়া বিছানার উপর ধপ করে বসে বিরক্তির সুরে বললো।
–আর বলোনা ভাবি। আজ লেজ কাটা একটা বাঁদর এসেছে না? এসেই আমার মাথা খাচ্ছে। অসভ্য লোক একটা। কোন মদন যে ওকে পুলিশ বানিয়েছে কে জানে? ছি ছি ছি পুলিশের কি দিন আসলো। শেষমেশ কিনা এই লোক? ওতো থানার ঝাড়ুদার হওয়ারও যোগ্য না। পুলিশের ওপর তো এমনিতেও ভরসা নেই জাতির। তাও যা একটু ছিল, এই লোকটা পুলিশ হওয়ায় সেটুকুও শেষ।

ছায়ার কথায় হেঁসে দিল পঙ্খি। হেঁসে উঠে বললো।
–তা সেই অসভ্য পুলিশ টা তোমাকে কি করলো শুনি?

–আরে আমাকে, এই ছায়া মজুমদার কে বলে কিনা আমি গর্দভ! কত্তবড় সাহস! আরে আমার মতো বুদ্ধিমান এই সিরাজগঞ্জ জেলার মাঝে আছে নাকি? হারিকেন লাগিয়ে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না।আমার মতো বুদ্ধিমান মেয়ে ।এই সিরাজগঞ্জ জেলা একদিন আমার নামে জানা যাবে দেইখো। সরকার সিরাজগঞ্জের জায়গায় নাম দিবে ছায়াগঞ্জ জেলা।হাঁহ্, আর আমাকে বলে কিনা আমি গর্দভ?

ছায়ার কথার ধরনে পঙ্খির হাসি আরও বৃদ্ধি পেল। (লেখিকা-মেহরুমা নূর)
দাওয়াতে আসা লোকজনের মাঝে মারুফ নামের এক লোক পঙ্খির রুমের সামনে দিয়েই যাচ্ছিলো। তাঁর ফোনের নেটওয়ার্ক পাচ্ছিল না। তাই সে কথা বলার জন্য ছাঁদে যাচ্ছিল। তখনই পঙ্খির হাসির শব্দ শুনতে পায়। সে কৌতুহল বশত দরজার পর্দা হালকা একটু সরিয়ে ভেতরে উঁকি দেয়। হাস্যজ্বল পঙ্খিকে দেখেই মারুফের কু,নজর পড়ে যায়। সে বুঝতে পারে এটাই হয়তো নাঈমের বিধবা। কথাটা ভাবতেই তার ভেতরের কামনা জেগে ওঠে। জুবায়েদের সাথে বন্ধুত্ব থাকার সুবাদে মারুফ অনেক বার জুবায়েদের মুখে পঙ্খির নাম শুনেছে। আজ পঙ্খিকে সামনা-সামনি দেখে মারুফ বুঝতে পারছে জুবায়েদ কেন এতো এই মেয়েটার কথা বলে। এমন কচি যুবতী রমণীকে চোখের সামনে দেখে কেমনে সামলাবে কেউ। জুবায়েদ তো পারেনি। তবে আজ সে এই নারীকে চেখে দেখবেই।

মারুফ দরজার একপাশে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। একটু পরে ছায়া পঙ্খির রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। মারুফ সুযোগ বুঝে দরজা খুলে রুমের ভেতরে ঢুকে পড়ে, ফট করে দরজা আটকে দিলো। পঙ্খি বইয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো। দরজা আটকানোর শব্দে সে মাথা তুলে তাকালো। অপরিচিত পুরুষকে নিজের রুমে দেখে চমকে উঠলো সে। দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে মাথার ওড়না ভালো করে টেনে নিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে বললো।
–জ্বি মাফ করবেন। কে আপনি? আর এখানে কি করছেন?

মারুফ সয়তানি হাসি দিয়ে পঙ্খির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো।
–আজকের দিনে আমাকে তোমার সেবক ভাবতে পারো। আমি আজ তোমার কষ্ট দূর করতে এসেছি।

পঙ্খি প্রচুর ভয় পেয়ে গেল। লোকটাকে মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না। সে ভীতু স্বরে বললো।
–মানে? কি বলছেন এসব? আপনি দয়া করে এখান থেকে যান।

মারুফ পঙ্খির কাছে এসে ওর হাত চেপে ধরলো। ভয়ে পঙ্খির অন্তর কেঁপে উঠল। আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে সে বললো।
–কি কি করছেন এসব? ছাড়ুন বলছি।

–আরে আরে ভয় পাচ্ছ কেন? দেখ ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আমি জানি তোমারও কিছু চাহিদা আছে। তোমার তো স্বামী নেই। তাই চাহিদাটাও অপূর্ণ থেকে যায়। তবে চিন্তা করোনা। আমি আজ তোমার চাহিদা পূরন করবো। ভয় নেই কেউ টের পাবে না।

ভয়ে পঙ্খির হৃদপিণ্ড জমে যাচ্ছে।এই নিকৃষ্ট লোকটার জঘন্য কথা শুনে ঘৃনায় গা গুলিয়ে আসছে। পঙ্খি ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললো।
–কি আজেবাজে কথা বলছেন এসব? এক্ষুনি বেরিয়ে যান আমার ঘর থেকে। নাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করে সবাইকে ডাকবো।

–ডাকো। তাতে কি হবে? বরং উল্টো তোমারই বদনাম হবে। তারচেয়ে চুপচাপ আমার কথা মেনে নেও। এতে দুজনেরই সুবিধা হবে।

কথাটা বলে মারুফ পঙ্খির শরীরের দিকে অন্য হাতটা বাড়িয়ে দিলো। পঙ্খি এবার সর্বশক্তি দিয়ে মারুফ কে একটা ধাক্কা মেরে দিয়ে দৌড়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু সক্ষম হলো না সে। মারুফ আবারও পেছন থেকে এসে ধরে ফেললো। এক হাত দিয়ে পঙ্খির দুই হাত পেছন দিকে মুচড়ে ধরলো। আর অন্য হাতে পঙ্খির মুখ চেপে ধরে বললো।
–মা* ভালো কথার মানুষ না তুই।ভালো ব্যবহার করলাম পছন্দ হলোনা। এখন দেখ আমি কি করি।

পঙ্খির আত্মা বেড়িয়ে আসছে। মুখ চেপে ধরায় আওয়াজও বের করতে পারছেনা সে।চোখ দিয়ে যেন র,ক্ত ঝরছে। তবে কি আজ সত্যিই তার সব শেষ হয়ে যাবে?

চলবে….

1 COMMENT

  1. মৃগতৃষ্ণা গল্পের বাকি পর্ব গুলো পাচ্ছি না কেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here