মৃগতৃষ্ণা-২৪

0
707

#মৃগতৃষ্ণা-২৪
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★অতিবাহিত দিনের সাথে আরও একটা সপ্তাহ যোগ হলো। ইন্ধন একদিন পরেই বাসায় চলে আসে। জহির মজুমদার উকিল ধরে তাঁকে জামিনে ছাড়িয়ে এনেছে। তাঁর আঘাত টাও কমে গেছে অনেকক্ষানি। তবুও পঙ্খির চিন্তা এখনো কমেনি। সে ওই মহিলার কথা কিছুতেই ভুলতে পারে না। মাথায় নানান চিন্তা ঘুরপাক খায়। সেই মহিলাকেও আর দেখতে পায়নি পঙ্খি। তবে ইন্ধন কে এসব বিষয়ে কিছু বলেনি।কারণ সে জানে ইন্ধন এসব কথা হেঁসে উড়িয়ে দিবে।তাই নিজের মনেই এসব দুশ্চিন্তায় ভুগছে সে।

রান্নাঘরে ইন্ধনের জন্য কফি বানাচ্ছিল পঙ্খি। পাশেই রাবেয়া রান্নার জন্য লাল শাক বাছছে।কামলা সকালে খেত থেকে এই শাক এনে দিয়ে গেছে। ইন্ধনের আবার লালশাক খুব পছন্দ। তাই রাবেয়া তার ছেলের জন্য রান্না করবে। তাঁর যেন এটাই মূল কাজ। ছেলের কি পছন্দ তা রান্না করে খাওয়ানো। ছেলের প্রতি তাঁর এতো মমতা দেখে পঙ্খি আবেশিত হয়। মনে মনে ভাবে সেও যেন একদিন উনার মতো আদর্শ মা হতে পারে। কফি বানানো শেষে কফি মগে ঢেলে মগ নিয়ে ফিরতে নিলেই হঠাৎ কারোর সাথে ধাক্কা লাগলো। যার ফলে কফির মগটা ঠাস করে পড়ে গেল নিচে। গরম কফি ছিটকে পঙ্খির হাতে পায়ে। পঙ্খি হাত ঝাড়তে ঝাড়তে সামনে তাকিয়ে দেখলো তুশি দাঁড়িয়ে আছে। এমন একটা কাজের জন্য দুঃখিত হওয়ার বদলে সে আরও তেজ দেখিয়ে বললো।
–অন্ধ নাকি তুমি? দেখে চলতে পারোনা? দিলেতো আমার নতুন জামাটা নষ্ট করে।

পঙ্খির মনে মনে একটু রাগ হলেও আত্মীয় দেখে আর কিছু বললো না সে। হাজার হলেও শাশুড়ীর বোনের মেয়ে। কিছু বললে আবার তিনি মন খারাপ করতে পারেন। তাই রাগ দমিয়ে নিয়ে বললো।
–দুঃখিত, আমি আসলে বুঝতে পারিনি।

তুশি একটা ভেংচি কেটে রাবেয়ার দিকে এগিয়ে গেল। পঙ্খি বেসিনে গরম কফি পড়া জায়গাগুলো পানিতে ধুয়ে নিলো। তখনই তুশির কিছু কথা শুনতে পেল। তুশি রাবেয়াকে বলছে।
–খালা, তোমাদের কি মতিভ্রম হয়ে গেছে? শেষমেশ কিনা একটা বিধবাকে ছেলের বউ করে আনলে? আর আমাদের সাথে এতবড় বেঈমানী করলে কিভাবে? বাবা মাকে আশায় রেখে তাদের সাথে কথার বরখেলাপি করলে? তাও যোগ্য কাউকে আনলে মানা যেত। তোমার এতো সুযোগ্য ছেলের সাথে এই মেয়েকে কোন দিক দিয়ে মানায়?

তুশির কথাগুলো পঙ্খির আত্মসম্মানে আঘাত হানলো। জ্বালা হলো তার বুকে।খুব ইচ্ছে হলো প্রতিত্তোরে কিছু বলার। তবে তার আগেই রাবেয়াই বলে উঠলো।
–এই তুশি কি বলছিস এসব? পড়ালেখা করে কি দিনদিন আদব কায়দা ভুলে যাচ্ছিস। পঙ্খি যথেষ্ট ভালো মেয়ে। ঘটনাচক্রে বাধ্যতামূলক বিয়ে টা হলেও ইন্ধন আর পঙ্খিকে একসাথে অনেক ভালো মানায়। আর আমার ছেলেকেও খুশিই দেখা যায়। আর আমার ছেলের খুশি মানেই আমার খুশি। আর রইলো তোর সাথে বিয়ের কথা, সেটাতো ইন্ধন প্রথমেই মানা করে দিয়েছে। তো ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিভাবে হবে?

–হ্যাঁ সেটাই তো কথা। আমার সাথে বিয়ের কথা শুনে উনি বললেন উনার নাকি কোন গার্লফ্রেন্ড আছে। তাঁকে ছাড়া উনি কাউকে বিয়ে করবেন না। তা এখন কোথায় গেল উনার গার্লফ্রেন্ড? কই এখন তো আর উনার গার্লফ্রেন্ডের কথা বলছেন না। দিব্যি বউ নিয়ে সংসার করছেন। তাহলে কি ওসব মিথ্যে ছিলো? শুধুমাত্র আমাদের ঠকানোর জন্য?

তুশির এবারের কথায় পঙ্খি একটু ঘাবড়ে গেল। এরা যদি ইন্ধনের মিথ্যে কথাটা বুঝে যায় তাহলে কি হবে? আর সত্যিটাও তো বলা সম্ভব না। রাবেয়া তুশির প্রতিত্তোরে বললো।
–ওসব আমি জানি না বাপু। গার্লফ্রেন্ড ফার্লফ্রেন্ড বুঝি না। ওদের বিয়ে হয়ে গেছে। এটাই বড়ো সত্যি। তাই ওসব ঘাঁটার দরকার নেই। আর তুইও ওসব মন থেকে ঝেড়ে ফেল। দেখবি তোকেও আমরা অনেক ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেবো।

রাবেয়ার কথায় সন্তুষ্ট হলোনা তুশি। তারতো ইন্ধনই চাই। বাই হুক, অর বাই ক্রুক।
__

পঙ্খি আবারও কফি বানিয়ে ইন্ধনের জন্য নিয়ে এলো। ইন্ধন ড্রেসিং টেবিলের সামনে হাতের ঘড়ি ঠিক করছে সে। পঙ্খি শুকনো মুখে এগিয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের ওপর কফির মগটা রাখলো। পঙ্খিকে দেখে ইন্ধন বলে উঠলো।
–এসেছ তুমি? পাঞ্জাবির বোতাম গুলো জলদি লাগিয়ে দাও। তুমি আমার অভ্যাস খারাপ করে দিয়েছ। এখন আর তোমাকে ছাড়া আমার কোন কাজ হয়না।

পঙ্খি কিছু না বলে চুপচাপ ইন্ধনের পাঞ্জাবির বোতামগুলো লাগিয়ে দিচ্ছে। পঙ্খির এমন শুকনো মুখ দেখে ইন্ধন পঙ্খির কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো।
–কি ব্যাপার? আমার চাঁদের মুখে এমন আমাবস্যা ছেয়ে গিয়েছে কেন? কি হলো আমার বউটার?

পঙ্খি ম্লান হেঁসে বললো।
–কই কিছু হয়নি তো? আমার আবার কি হবে?

বোতাম লাগানো শেষে পঙ্খি আবার চলে যেতে নিলে ইন্ধন পেছন থেকে হাত টেনে ধরলো। হাতে কফি পড়ে লাল হয়ে ওঠা জায়গায় ইন্ধন চেপে ধরায় হাতে জ্বলন হলো। ব্যাথায় হালকা ককিয়ে উঠলো সে।
–আহহ্

চমকে উঠলো ইন্ধন। ভ্রু কুঁচকে পঙ্খির হাতের দিকে ভালো করে খেয়াল করলো সে। হাতের এই অবস্থা দেখে চোখ মুখ কঠিন হয়ে গেল তার। দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–এটা কিভাবে হলো?

পঙ্খি ঘাবড়ে গেল। ইন্ধন পুরো ব্যাপার জানলে বাড়িতে তুলকালাম বাঁধিয়ে দিবে। তাই ওকে সত্যি টা বলা যাবে না। পঙ্খি জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো।
–ও ওটা কিছুই না। এমনিই একটু গরমে এমন হয়েছে বোধহয়।

–ডোন্ট ট্রাই টু ফুল মি পঙ্খি। সত্যি বলো কিভাবে হয়েছে এটা? নিশ্চয় রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে নিয়েছ তাইনা? আমি এই কারণেই তোমাকে রান্নাঘরে যেতে মানা করেছিলাম। কিন্তু তুমি তো আমার কথা না শোনার পণ করে নিয়েছ।

ইন্ধন কপট রাগ দেখিয়ে দ্রুত কাবার্ড থেকে অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম এনে পঙ্খির হাতে লাগিয়ে দিলো। পঙ্খি নরম সুরে বললো।
–দেখুন বাড়ির বউ হয়ে কি রান্নাঘরে না গিয়ে থাকা যায়? কেমন অশোভনীয় দেখায়। মা চাচী রান্না ঘরে কাজ করবে আর আমি কিভাবে বসে থাকবো? দয়া করে বোঝার চেষ্টা করুন।

–ঠিক আছে। তবে সাবধানে। এমন আর দ্বিতীয় বার হলে কিন্তু আমি কোন কথা শুনবোনা। আর হ্যাঁ আজকে কোন কাজে হাত দিবেনা তুমি। রুমে আরাম করো। আমি মিটিং শেষ করে জলদি চলে আসবো।

–আচ্ছা।
__

কথা অনুযায়ী বিকাল হতেই ইন্ধন বাড়িতে ফিরে এলো। রুমে এসে দেখলো পঙ্খি টেবিলে পড়াশোনা করছে। ইন্ধন এগিয়ে এসে পঙ্খির কাঁধে একটা চুমু দিয়ে বললো।
–বাইরে যাওনি তো?

পঙ্খি মুচকি হেঁসে বললো।
–উহুম,আপনিই তো না করলেন।

–গুড গার্ল। আচ্ছা আমি একটু শাওয়ার নিয়ে আসি। ঘামে শরীরের অবস্থা খারাপ।

–আচ্ছা যান। আমি ততক্ষণে আপনার জন্য কফি নিয়ে আসি।

–ওঁকে।

আরেকটা চুমু পঙ্খির ললাটে এঁকে দিয়ে উঠে গেল ইন্ধন। ভালোলাগার আবেশে মুড়ে পঙ্খিও উঠে গেল ইন্ধনের জন্য কফি আনতে। মিনিট বিশেক পর কফি নিয়ে নিজের রুমের সামনে আসতেই ভ্রু কুঁচকে আসলো পঙ্খির। দরজার একপাশে তুশিকে দেখেই এমনটা হলো তার।তুশি দরজার একপাশে দাঁড়িয়ে ভেতরে উঁকি দিয়ে কি যেন দেখছে। পঙ্খি ঘরের ভেতর তাকিয়ে দেখলো ইন্ধন শাওয়ার নিয়ে তোয়ালে পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝাড়ছে। এই মেয়েটা তাহলে ইন্ধনকেই এভাবে দেখছে। ভাবতেই শরীর পুড়ে উঠলো পঙ্খির। রাগে ভরে উঠলো সর্বাঙ্গ। এবার তো এই মেয়েটা বেয়াদবির মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। একেতো কিছু বলতেই হবে। পঙ্খি কফির মগটা করিডরের একটা ফুলদানির টুলের ওপর রাখলো। তারপর এগিয়ে গিয়ে খপ করে তুশির হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। তুশি থতমত খেয়ে গেল। নিজের হাত খাড়ান চেষ্টা করে বললো।
–এই মেয়ে কি করছ? ছাড়ো আমাকে। ভালো হবেনা কিন্তু বলে দিলাম।

পঙ্খি কোন কিছু না বলে তুশির হাত ধরে ওকে ছাঁদে নিয়ে এলো। তারপর ওর হাত ছেড়ে দিয়ে শক্ত গলায় বললো।
–কি করছিলেন আপনি ওখানে?

তুশি জোর গলায় বললো।
–কি করছিলাম মানে? কি বলতে চাও তুমি?

–দেখুন আপনি এবাড়ির মেহমান। তাই কিছু বলছিলাম না। তবে আপনি যা করছেন তাতে কিছু কথা না বললেই নয়। প্রথমত,আমি ইন্ধনের বউ। সেই হিসেবে আপনার বড়ো ভাইয়ের বউ। আমি আপনার ভাবি হই। তো আমাকে ভাবি হিসেবে আপনি বলে সম্বোধন করবেন। আর দ্বিতীয়ত, আপনি যা করছিলেন সেটা একটা খুবই নিম্নতর অযাচিত কাজ। এভাবে একটা বিবাহিত পুরুষকে তাঁর বেডরুমে গিয়ে আপনি নজর দিতে পারেন না। দেখুন মানছি আপনার সাথে উনার বিয়ের কথা ছিলো। আর এইজন্য হয়তো আপনার মনে তাঁর প্রতি কিছু অনুভূতিও ছিলো। তবে আপনাকে বুঝতে হবে উনি এখন বিবাহিত। আর একজন বিবাহিত পুরুষের প্রতি কোনরকম অনুভূতি রাখাও পাপ। এমনিতেও উনি কখনো আপনাকে কোন আশা দেয়নি। তাহলে আপনি কেন তাঁকে এখনো পাওয়ার আশা করছেন? দেখুন এসব ভুলে নিজের জীবনে অগ্রসর হোন। এটা আমার উপদেশ ভাবুন আর হুমকি সেটা আপনার ইচ্ছা।তবে এসব কাজ দ্বিতীয় বার হলে আমি কিন্তু চুপ থাকবো না।

তুশি এপর্যায়ে তেতে উঠে বললো।
–হাউ ডেয়ার ইউ। তোর সাহস কি করে হলো আমাকে এভাবে শাসানোর? আপনি তো দূরে থাক তোকে তো আমি তুই করে বলারও যোগ্য মনে করি না। আর আমি কি করবো না করবো সেটা বলার তুই কে? আমাকে বলার আগে নিজের টা দেখ তুই। তোর কোন যোগ্যতা আছে ইন্ধনের বউ হবার? কোথায় ও আর কোথায় তুই? একটা বিধবা হয়ে ইন্ধনের বউ হওয়া মানায় না তোকে। আর এতো গর্ব কিসের করছিস? ইন্ধন তোকে মনের ইচ্ছে তে বিয়ে করেনি। ঘটনাচক্রে বংশের সম্মান বাঁচাতে ইন্ধনের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তোকে। ইন্ধন তোকে কোন ভালো টালো বাসেনা। বাচ অনিচ্ছাকৃত ভাবে সহ্য করছে তোকে। দেখবি সুযোগ পেতেই তোকে তালাক দিয়ে তোর থেকে হাত ঝেড়ে নিবে। তাই বেশি স্বপ্ন সাজাছ না। তোকে আবারও সেই আগের মতো জীবনেই ফিরে যেতে হবে।

পঙ্খি তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
–আসলে আমারই ভুল। ভেবেছিলাম আপনার হয়তো মন ভেঙেছে তাই কষ্ট পাচ্ছেন। ঠিক বেঠিকের তফাৎ বুঝতে পারছেন না।তাই না বুঝে এসব করছেন। আপনাকে ভালো করে বুঝালে হয়তো বুঝতে পারবেন। তবে আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম, যাঁরা চোখ থাকতেও অন্ধ আর মস্তিষ্ক থাকতেও বোধশক্তিহীন। তাদের কিছু বলা আর না বলা একই কথা। শুধু একটা কথাই বলবো। এগুলো করে আপনি শুধু নিকেরই ক্ষতি করবেন। কারণ ইন্ধন আর আমি স্বামী স্ত্রী। আর স্বামী স্ত্রীর মাঝে যে তৃতীয় ব্যাক্তি হতে চায় সে শুধু বরবাদি ছাড় আর কিছুই পায়না।

তুশিও জ্বলে উঠে বললো।
–বরবাদ কে হয় সেটা সময় আসলেই বুঝতে পারবি। দুদিন আগে হোক বা পরে ইন্ধন কে তো আমি পেয়েই ছাড়বো। তুই শুধু দেখে যা।তোর চোখের সামনে কিভাবে আমি ইন্ধন কে তোর কাছ থেকে কেঁড়ে নেই।

কথাটা বলেই তুশি তেজ দেখিয়ে চলে গেল ওখান থেকে। অন্যদিকে আরেকজন ব্যাক্তি যে ওদের সব কথা শুনছিলো তা জানলো না ওরা। সেই ব্যাক্তির চোখে যেন তপ্ত লাভা ঢেলে পড়ছে। ক্রোধে ফেটে যাচ্ছে তাঁর মস্তিষ্ক।
__

পঙ্খি রুমে এসে দেখলো ইন্ধন রুমে নেই। কফি ঠান্ডা হয়ে যাওয়ায় সে আবারও গরম কফি বানিয়ে এনেছে। কিন্তু উনিতো রুমেই নেই। কোথায় গেল? কফিতো আবার ঠান্ডা হয়ে যাবে। ভাবনার মাঝেই দরজা খোলার শব্দে পেছনে ফিরে দেখলো ইন্ধন এসেছে । পঙ্খি বলে উঠলো।
–কোথায় ছিলেন কফি তো ঠান্ডা হয়ে গেল।

–হোক। রেখে দাও। আমার খেতে মন চাইছে না এখন।

পঙ্খি খেয়াল করলো ইন্ধনের মুখমন্ডলে কেমন রাগের আভা দেখা যাচ্ছে।একটু আগেও তো হাসিখুশি দেখাচ্ছিল।তাহলে কি হলো হঠাৎ? পঙ্খি কফির মগটা রেখে ইন্ধনের কাছে এসে বললো।
–কেন? আপনিই তো বললেন খাবেন? এখন আবার কি হলো? আপনার কি কোন কারণে রাগ হয়েছে?

ইন্ধন পঙ্খির হাত ধরে নিয়ে এসে ওকে বিছানায় বসালো। তারপর নিজেও বিছানায় উঠে পঙ্খির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে বললো।
–ওসব ছাড়ো। এখন তোমার হাতের যাদু চালাও তো একটু। মাথাটা অনেক যন্ত্রণা করছে।

পঙ্খি মুচকি হেঁসে ইন্ধনের চুলে হাত গলিয়ে দিয়ে বিলি কেটে দিতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর ইন্ধন আরাম পেয়ে বললো।
–তোমার হাতে সত্যিই যাদু আছে। মাথা ব্যাথার সাথে সব স্ট্রেসও দূর হয়ে যায়।

পঙ্খি ভ্রু কুঁচকে বললো।
–স্ট্রেস? কিসের স্ট্রেস আপনার?

ইন্ধন পঙ্খির দিকে কাত হয়ে শুয়ে পঙ্খির কোমড় জড়িয়ে ধরলো। উদরের কাছের শাড়ি সরিয়ে দিয়ে উন্মুক্ত কোমল উদরে মুখ গুঁজে দিয়ে বললো।
–এখন আমি তোমার সাথে আছি। তাই অন্য কোন বিষয়ে কথা বলে আমাদের সময়টা নষ্ট করার ইচ্ছা নেই আমার। তোমার আমার মাঝে অন্য কোন কিছু আসতে দেবোনা আমি। এখন আমি শুধু এই মুহূর্ত উপলব্ধি করতে চাই। শুধু তোমাতে বিলীন হতে চাই।

কথাটা বলে পঙ্খির উদরের গভীরে অধর ছোঁয়ালো ইন্ধন। ইন্ধনের চুল শক্ত করে ধরে চোখ বুজে ফেললো পঙ্খি। এতদিন হয়ে গেল বিয়ের। তবুও ইন্ধনের এই ছোট ছোট স্পর্শও বক্ষপিঞ্জর কাঁপিয়ে দেয় পঙ্খির। মনে হয় যেন এখুনি জান বেড়িয়ে যাবে। ইন্ধনের বাহুতে দ্রবীভূত হয়ে মিশে যায় সে।
__

প্রাতঃকালেই নিত্যকার ন্যায় ঘুম ভাঙে পঙ্খির।আর রোজকার মতোই ইন্ধন তাকে জাপ্টে ধরে আছে। অনেকে কষ্টে নিজেকে তাঁর বাহু বন্ধন থেকে ছাড়িয়ে বিছানা ছাড়ে পঙ্খি। গোসল সেরে এসে নামায আদায় করে নেয় সে। ইন্ধন এখনো উপুড় হয়ে ঘুমিয়েই আছে। পঙ্খি হতাশাজনক হাসলো। এতদিন ধরে বলেও লোকটাকে সকালে নামাজের জন্য উঠানোর অভ্যাস করতে পারলোনা সে। এতো ঘুম লোকটার। ঠেলেও জাগানো যায়না তাঁকে। পঙ্খির মাথায় হঠাৎ একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো।।সে উঠে গিয়ে নিজের ভেজা চুলগুলো ইন্ধনের মুখের ওপর ঝাড়তে লাগলো। ইন্ধন কপাল কুঁচকে চোখ বন্ধ রেখেই ঘুম জড়ানো গলায় বললো।
–উমমম.. পঙ্খি… ভালো হবেনা কিন্তু। ঘুমুতে দাও আমাকে।

পঙ্খি শুনলো না।সে তার কাজ জারি রেখে।বললো।
–ঘুম না। উঠতে হবে আপনাকে। জলদি উঠুন।

এবার ঘুম সত্যিই ভেঙে গেল ইন্ধনের। চোখ খুলেই পঙ্খির হাত ধরে টান দিয়ে নিজের ওপরে ফেললো সে। তারপর দুষ্টু হেঁসে বললো।
–অনেক দুষ্টুমি হচ্ছিল তাইনা? এখন আমিও মজা দেখাচ্ছি।
কথাটা বলে ইন্ধন পঙ্খিকে ঘুরিয়ে বিছানায় ফেললো। পঙ্খি অনুরোধের সুরে বললো।
–দেখুন এখন কোন দুষ্টুমি না প্লিজ। আপনি দয়া করে গোসল করে নামাজ পড়ে নিন।

–ওঁকে ঠিক আছে। কিন্তু কথা দাও তারপর আমি যা বলবো তাই শুনবে?

পঙ্খি মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বুঝালো। ইন্ধন মুচকি হেঁসে উঠে গেল। গোসল সেরে নামাজ পড়ে নিলো সে।তারপর বারান্দায় এসে দেখলো পঙ্খি ততক্ষণে বারান্দায় কাপড় চোপড় নেড়ে দিয়ে তার ভেজা চুলগুলো ঝাড়ছে। চুলের পানি মুক্ত দানার মতো লেগে আছে তার সুবর্ণ অঙ্গে। ইন্ধন এগিয়ে এসে পেছন থেকে পঙ্খিকে জড়িয়ে ধরে পঙ্খির কাঁধে জমে থাকা এক বিন্দু পানি সে অধর দ্বারা শুষে নিয়ে বললো।
–জানো এই পানিগুলোর ওপর আমার ভীষণ হিংসে হচ্ছে। শালাদের সাহস কতো। আমার বউয়ের গায়ে লেগে থাকে।

পঙ্খি লাজুক হেঁসে বললো।
–কি বলছেন এসব? ছাড়ুন, কেউ দেখে ফেলবে।
–নো ছাড়াছাড়ি। বলেছিলাম না নামাজের পর যা বলবো তাই শুনতে হবে। এখন আমাকে একদম বাঁধা দিবেনা।
কথাটা বলেই ইন্ধন পঙ্খিকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে ঘরের ভেতর আসলো। হঠাৎ তখনই দরজায় কড়াঘাত করলো কেউ। পঙ্খি হকচকিয়ে উঠে বললো।
–নামান প্লিজ। দরজায় কেউ এসেছে।

ইন্ধন বিরক্তির সুরে বললো
–এই সময় আবার কে এলো? আসার আর সময় পেলনা। সকাল সকাল আবার কার মউত এলো?

–আগে নামালে না দেখতে পারবো। নামান না?

–কোন দরকার নেই। কতক্ষণ নক করে একাই চলে যাবে।

–কি বলছেন? কেউ হয়তো কোন প্রয়োজনে এসেছে। নাহলে এতো সকালে কেন আসবে? প্লিজ দেখতে দিন না?

–ওঁকে ফাইন যাও।

ইন্ধন পঙ্খিকে নামিয়ে দিলে সে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজার সামনে ছায়া দাড়িয়ে আছে। সে কেমন যেন হাঁপাচ্ছে। চোখেমুখে তাঁর আতঙ্ক ছেয়ে আছে। পঙ্খি ভ্রু কুঁচকে চিন্তিত সুরে বললো।
–ছায়া, কি হয়েছে তোমার? এমন আতঙ্কিত দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?

ছায়া হাঁপাতে হাঁপাতে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো।
–ভা ভাবি ও ওই..

ছায়া আতঙ্কে ঠিকমতো কথাই বলতে পারছেনা। এতক্ষণে ইন্ধনও এগিয়ে এলো ওখানে। সেও জিজ্ঞেস করলো।
–কিরে কি হয়েছে?

–ভাইয়া আমাদের গ্রামের মজিদের আমবাগানে “তুশির” লা,শ পড়ে আছে। কে বা কারা যেন কাল রাতে “তুশিকে” খু,ন করে ফেলে রেখেছে। সকাল সকাল মজিদ বাগানে গিয়ে ওর লাশ পায়। আর এখানে এসে মাত্রই সেই খবর দিলো। বাকিরা সবাই ওখানে গেছে।

ছায়ার কথায় হতভম্ব হয়ে গেল পঙ্খি। সকাল সকাল এমন খবর যেন বিস্ফোরণ ছড়ালো। কি মনোভাব দিবে বুঝতে পারছে না পঙ্খি।

খবর শুনে সবাই এলো দেখতে। লা,শ দেখেই চিৎকার দিয়ে উঠলো পঙ্খি। এতো ভয়ংকর লা,শ দেখে অন্তর কেঁপে উঠল তাঁর। খুবই ক্রুর ভাবে তাকে মারা হয়েছে। চা,কু দিয়ে চোখের মনি তুলে নিয়েছে। এমন বিভৎসকর লা,শ দেখতে পারলোনা পঙ্খি। ভয়ে সে ইন্ধনের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেললো। কোন শত্রুরও এমন মৃ,ত্যু আশা করে না কেউ। কে মারলো তাকে এভাবে?

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here