মৃগতৃষ্ণা-৫

0
747

#মৃগতৃষ্ণা-৫
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

সপ্তাহ শেষে ধানের খন্দের কাজ শেষ হলো।সেই উপলক্ষে আজ দুপুরে সব কামলাদের বড়ো পরিসরে খানাপিনার আয়োজন করা হয়েছে চেয়ারম্যান বাড়িতে। রান্নার কার্যক্রম প্রায় শেষ। উঠোনের মাঝে লম্বা পাটের চাটাই বিছিয়ে কামলাদের বসার আসন পেতে দেওয়া হয়েছে। সব কামলারা এসে সারিবদ্ধ হয়ে বসতে শুরু করলো। ভেতর থেকে বড়ো বড়ো বোলে করে খাবার এনে সবাইকে পরিবেশন করছে। ইন্ধনও নিজ হাতে সবাইকে খাবার পরিবেশন করছে। সবাই মিলে এভাবে বসে খাওয়ার মজাটাই আসলে অন্যরকম। সবাই খুব তৃপ্তির সহিত খাবার গ্রহণ করছে।

রান্না ঘরে আজ কাজের চাপ বেশি। জাহানারা, রাবেয়ার আর কনিকার সাথে পঙ্খিও রান্নার কাজে তাদের সাহায্য করছে। সব রান্না শেষ হলে পঙ্খি রাবেয়া আর জাহানারাকে গিয়ে একটু আরাম করতে বললো।কনিকার শরীর টাও তেমন ভালো না। তাই তাকেও পাঠিয়ে দিলো পঙ্খি। আর নিজে রান্নাঘরের বাদবাকি কাজগুলো গোছাতে লাগলো।লেখিকা-মেহরুমা নূর। গ্রীষ্মের প্রখর গরমের মাঝে সকাল থেকে রান্না ঘরে থেকে পঙ্খি ঘেমে একেবারে নেয়ে গেছে। কপাল থেকে ঘাম চুইয়ে গলা ঘাড় ভিজে যাচ্ছে। চুলগুলো ভিজে কপালের সাথে লেগে আছে। কামিজের পিঠের অংশ ভিজে পিঠের সাথে লেগে আছে। যেহেতু রান্না ঘরে কোন ছেলেমানুষ তেমন আসে না তাই পঙ্খি আপাতত মাথায় ওড়না না দিয়েই কাজ করছে। কিন্তু তার কোন চেতনা নেই যে, একজোড়া চোখ তার সর্বাঙ্গে দৃষ্টি বুলিয়ে যাচ্ছে।পঙ্খির এই ঘর্মাক্ত শরীর তার কাছে প্রচন্ড আবেদনীয় লাগছে। সে যেন নিজেকে কোনরকমে সামলাতেই পারছে। কামনার জ্বালা জ্বলছে তার সর্বত্র। হঠাৎ পঙ্খির কেমন যেন মনে হলো কেউ তার আশেপাশে আছে। পঙ্খি ভ্রু কুঁচকে পেছনে ঘুরে দেখার চেষ্টা করলো। তাকাতেই তার মনে হলো সেদিনের মতো কোন ছায়া সরে গেল। পঙ্খি দরজার বাইরে এসে এদিক ওদিক উঁকি দিলো। কিন্তু কারোর অস্তিত্ব পেল না। পঙ্খি এবার ভালো করে গায়ের ওড়নাটা পেঁচিয়ে নিলো। কি হচ্ছে এসব কিছুই বুঝতে পারছে না ও। ওর এমন কেন মনে হয় কেউ ওকে ফলো করে? মনে হয় কেউ ওকে দেখছিলো? এসব কি আদৌও সত্যি? নাকি ওর মনের ভ্রম?

খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষে ইন্ধন এলাকার কিছু দলনেতাদের সাথে বসে কথা বলছে।শাকিলও এসেছে। সামনের ইলেকশন নিয়ে কথাবার্তা বলছে। এলাকার জন্য ইন্ধনের মনোভাব দেখে সবাই মুগ্ধ হলো।তার সব পরিকল্পনাকে সাপোর্ট করলো তারা। সামনের নির্বাচনে ইন্ধনকে বিজয়ী করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে তারা। ঘন্টাখানিক আলাপচারিতার পর লোকজন চলে গেল। ইন্ধন বাড়ির ভেতর এসে দেখলো ছায়া সোফায় বসে দই খাচ্ছে। ইন্ধন এসে ওর পাশে বসে গা এলিয়ে দিয়ে বললো,
–বাচ কর, এতো খেলে কদিন পর দরজা দিয়ে বের হতে পারবিনা। তা সব কি একাই সাবার করবি নাকি? যা আমার জন্য একটু নিয়ে আয়।

ছায়া বসে থেকেই গলার স্বর উঁচু করে পঙ্খিকে ডেকে বললো।
–ভাবিইইই ভাইয়াকে এক প্রিজ দই এনে দাও তো।

ইন্ধন ছায়ার মাথায় হালকা করে চাটি মেরে বললো।
–আলসেমির ঢেকি হয়ে যাচ্ছিস দিন দিন। নিজে না এনে বসে বসে হুকুম করছিস? পঙ্খিরা সকাল থেকে রান্নাঘরে কাজ করছে। আর তুই তারওপর আবার হুকুম চালাচ্ছিস? তোর মতো আলসের ঢেকিকে বিয়ে করবে কে?

ছায়া খেতে খেতে বললো।
–আমি বিয়ে করলে তো। আমার চিন্তা করতে হবে না। তুমি নিজের টা দেখ।

পঙ্খি ট্রেতে করে ইন্ধনের জন্য দই নিয়ে আসছিলো। তবে তাকে মাঝ পথে থামিয়ে দিল কেউ।পঙ্খির হাতের ট্রে টা সে নিজের হাতে নিয়ে নিলো।পঙ্খিও আর কিছু বললো না। ট্রে টা নিয়ে সে হেলেদুলে ইন্ধনের পাশে ঘা ঘেঁষে বসলো। দইয়ের প্রিজ টা হাতে নিয়ে ইন্ধনের সামনে এগিয়ে দিয়ে মুচকি হেঁসে বললো।
–ইন্ধন তোমার দই।

ছায়ার দিকে ঘুরে কথা বলছিলো ইন্ধন। হঠাৎ অপরিচিত মেয়েলি কন্ঠ শুনে পাশে ফিরে তাকালো সে। সম্মুখে বসা মেয়েটাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে আসলো তার। সাজসজ্জার নামে নিজের ওপর একপ্রকার সরঞ্জামাদির বিস্ফোরণ করা মেয়েটাকে সে চিনতে পারছেনা। নিজের থেকে একটু সরে বসে বললো।
–এক মিনিট! কে আপনি চিনতে পারলাম না।

মেয়েটা যেন ইন্ধনের কাছ থেকে এমন কথার আশা করেনি। সেতো ভেবেই নিয়েছিল যে ইন্ধন তাকে দেখেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাবে। অন্তত নিজের এই অসীম রুপের ওপর তো ওর শতভাগ বিশ্বাস ছিলো। যাইহোক এখনই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। নিজের মুখের অপ্রয়োজনীয় লাজুক ভাবটা বজায় রেখে সে বলে উঠলো।
–আরে আমাকে চিনলে না? আমি তুশি। তোমার হালিমা খালার মেয়ে।

ইন্ধনের কপালের ভাজ গাঢ় হলো। চিন্তার সাগরে ডুব দিয়ে সে তুশি নামের মানবিকে মনে করার চেষ্টা করলো। অতঃপর মনে পড়লো তার। কপালের ভাজ টান টান করে সে বলে উঠলো।
–আরে তুই সেই তুষ (ধানের খোসা)? যার সারাবছর নাকের সর্দি গড়ে গড়ে মুখের ভেতর যেত, আর তুই হাতের উল্টো পিঠ সেগুলো ক্রিমের মতো গালের সাথে মেখে নিতিস?

তুশির সম্পর্কে এতসুন্দর বর্ননা শুনে ছায়া ফিক করে হেঁসে দিল। তুশির থোতা মুখ যেন ভোঁতা হয়ে গেল।তার ফাস্ট ইম্প্রেশনই ফালুদা হয়ে গেল বেচারির। তবুও এতো সহজে নিরাশ হলোনা সে। নিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে সে বলতে লাগলো।
–আরে ওসব তো ছোটবেলার কথা। তখন কি আর ওমন বুদ্ধি ছিলো নাকি। তবে এখন আমি একটুও আগের মতো নেই। জানো আশেপাশের দুই চার গ্রামের মাঝে আমার মতো সুন্দরী মেয়ে একটাও নেই। শুধু রুপ না গুনের দিক দিয়েও আমাকে কেউ টেক্কা দিতে পারবেনা। এই গ্রামে আমি প্রথম মেয়ে যে ইংলিশে হর্স( অনার্স) করছি।

ইন্ধন নিজের হাসি চেপে ধরে বললো।
–রিয়েলি? তা শুধুই হর্স করছিস? আই মিন এলিফ্যান্ট, জিরাফ, ডঙ্কি ওরা কি দোষ করলো। ওদেরও করতিস।

পঙ্খি ডাইনিং টেবিলের এটো প্লেট বাসন নিতে এসেছিল। তখনই ইন্ধনের কথা শুনতে পায় সে।লেখিকা-মেহরুমা নূর। আর হঠাৎ এমন কথা শুনে মুখ ফস্কে হাসি বেড়িয়ে যায় তার। তবে জোরপূর্বক আবারও নিজের হাসি দমিয়ে নেয় সে। অন্যদিকে ছায়াতো হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে। একদমই ঠিক হয়েছে। এই তুশি ফুশিকে ওর একদমই পছন্দ হয়না। টিভি সিরিয়ালের মাত্রাতিরিক্ত মেকাপে ভরা ভ্যাম্প মনে হয় ছায়ার কাছে। এখানে যে ইন্ধন ভাইয়াকে ফাঁসাতে এসেছে তা ভালো করেই জানে ও। এদের এমন বিদ্রুপপূর্ণ হাসি দেখে তুশির মনে মনে চরম রাগ হলেও সেটার বহিঃপ্রকাশ করেনা সে। রাগলে যে ওকে চলবেনা। নিজের মঞ্জিল পেতে হলে এমন একটু আদটু অপমান কোন ব্যাপার না। তুশি আবারও জোরপূর্বক হেসে বললো।
–ইন্ধন তুমিও না, সত্যিই অনেক মজা করতে পারো।

ইন্ধন এবার একটু গম্ভীর কন্ঠে বললো।
–এক মিনিট! ইন্ধন আবার কি? আমি তোর বড়ো ভাই ভুলে গেছিস? ভইয়া বলে ডাকবি আমাকে। আর আপনি করে সম্বোধন করবি।

–কি বলো ইন্ধন? আমাদের কি ভাই বোন ওয়ালা সম্পর্ক নাকি? কিছুদিন পরই তো আমরা বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হবো।

ইন্ধন চটে উঠে বললো।
–হোয়াট? বিয়ে? আর তোর সাথে? কে বলেছে তোকে এসব?

–কেন তুমি জানোনা? আমাদের বিয়ে তো ছোটবেলায়ই ঠিক হয়েছিল। খালা খালু আর আব্বা মা ঠিক করেছিল।

ইন্ধনের মাথা গরম হয়ে গেল। সে ঠাস করে উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে রাবেয়াকে ডাকতে লাগলো। ইন্ধনের ডাকাডাকিতে রাবেয়া সহ বাড়ির বাকিরাও এসে জড়ো হয়ে গেল। রাবেয়া ছেলের সম্মুখে এসে বললো।
–কি হয়েছে বাবা? এভাবে চিল্লাচিল্লি করছিস কেন?

ইন্ধন তেজী গলায় বললো।
–মা এই তুষ কি বলছে? কিসের বিয়ের কথা বলছে ও? সত্যিই করে বলো?

–শান্ত হ বাবা।

–আগে বলো এসব সত্যি কিনা?

–হ্যাঁ, আসলে তোদের ছোটবেলায় কথায় কথায় আমরা বলেছিলাম বড়ো হলে তোদের বিয়ে দেবো। তো হালিমা এখনো ওই কথার ওপরই ভরসা করে আছে।

–হোয়াট ননসেন্স ইস দিস? এটা কি কোন পুতুল খেলা নাকি? বললেই হলো? আমি কিছুতেই এসব মানি না।

–কিন্তু সমস্যা কি বাবা? কখনো না কখনো তো বিয়ে করতে হবে তোকে তাইনা? আর বিয়ের বয়সও হয়েছে এখন। তাহলে তুশিকে বিয়ে করলে কি সমস্যা?

–সমস্যা আছে মা।

এতক্ষণে জহির মজুমদার বলে উঠলেন।
–কি সমস্যা সেটাই তো জানতে চাচ্ছি। বলছনা কেন তুশিকে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়? যথেষ্ট সুন্দর আর শিক্ষিত সে। তাহলে সমস্যা কি?

–কারণ আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।

ইন্ধনের কথায় সবাই অবাক হয়ে গেল। কিছু মুহূর্তের জন্য সবাই নীরব হয়ে গেল। ইন্ধন আবারও বলে উঠলো
–হ্যাঁ, আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। আই মিন আমি কাউকে ভালোবাসি। অনেক দিন হলো আমাদের সম্পর্ক। আর বিয়ে করলে আমি তাকেই করবো।

নীরবতা ভেঙে সামছুল মজুমদার বলে উঠলেন।
–মেয়েটা কে? কোথায় থাকে? বংশ পরিচয় কি?

–কানাডায় আমার সাথেই পড়তো।

–বিদেশি মেয়ে?

–না বাংলাদেশেরই। আমার মতোই পড়াশোনা করতে গিয়েছিল। আমার এক বছরের জুনিয়র। ওর স্টাডি শেষ হতে আরও বছরখানেক লাগবে। তারপর ও দেশে ফিরে আসবে।

জহির মজুমদার বলে উঠলো।
–কিন্তু তোমার খালা খালু তো আশা নিয়ে বসে আছে। তাদের এখন কি বলবো আমরা?

–সেটা আপনাদের বিষয়। কথা দেওয়ার সময় তো আর আমাকে জিজ্ঞেস করে দেননি। তাহলে এখন কি করবেন সেটা কেন জিজ্ঞেস করছেন? যা খুশি তাই বলুন। তবে আমি অন্য কাওকে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবোনা। এটা আমার শেষ কথা। এটা নিয়ে আর কোন দ্বিতীয় কথা আমি শুনবোনা।

কথাগুলো বলে রাগে হনহন করে নিজের রুমে চলে গেল ইন্ধন। বুকের ভেতর কেমন অশান্তি হচ্ছে। এই মুহূর্তে ওর প্রিয়তমার সাথে কথা বলাটা খুব জরুরি। তাহলেই একটু শান্তি পাবে। ইন্ধন চলে যেতেই সামছুল মজুমদার তার ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন।
–এই বিষয়ে আর কথা না বাড়ানোই ভালো। ইন্ধন কোন মেয়ে না যে,ওর সাথে জোর চলবে।আর তাছাড়া ইন্ধনের কথায় বোঝা যাচ্ছে মেয়ের বংশও উন্নত হবে। তাই আর কোন দ্বিমত করার দরকার নেই। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

ভাইয়ের কথার প্রতিত্তোরে আর কিছু বললেন না জহির মজুমদার। তিনি বরাবরই একজন আজ্ঞাকারী ভাই। সামছুল মজুমদারের কথা তার কাছে সর্বোপরি। তিনি কখনো তার কথার বরখেলাপ করেন না। অতঃপর ধীরে ধীরে সবাই জায়গা প্রস্থান করলেন।লেখিকা-মেহরুমা নূর। পঙ্খিও নিজের রুমে চলে গেল।এসব বিষয়ে তার কোন প্রতিক্রিয়া নেই। সারাদিন কাজ করে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে। এখন গিয়ে একটু গোসল দিবে। সবাই চলে গেলেও তুশি ঠাই দাঁড়িয়ে রইল। ইন্ধনের এই প্রত্যাখ্যান সে কিছুতেই মানতে পারছেনা। না, সে এতো সহজে হার মানবে না। ইন্ধন কে তো সে বশে এনেই ছাড়বে।
__________

বেলা তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেলে আসা শুরু করেছে মাত্র। সূর্যের তীব্রতা কমে আসছে ধীরে ধীরে। নদীর বুকে পাল তুলে মাঝ ধরা নৌকা চলছে। মাঝ নদীতে জেলে জাল ফেলে পানির মাঝগুলো ছাকনীর মতো ছেঁকে তুলছে। নদীর কিনারে গাছের ছায়ার নিচে ঘাসের উপর বসে আছে এক কিশোর। ছোট ছোট পাথরের টুকরো নিয়ে পানিতে একটা একটা করে ঢিল ছুড়ছে আর জেলেদের মাঝ ধরা দেখছে।গায়ের জামাকাপড়ে ময়লা মাটি লেগে আছে। কোন এক কারণে মেজাজ টা তার খুব খারাপ হয়ে আছে। তাই একাকী এখানে বসে আছে।

বসে থাকতে থাকতেই হঠাৎ পাশে তাকাতেই কিছুটা দূরে একটা মেয়ের ওপর নজর পড়লো তার। ছয় সাত বছরের একটা মেয়ে। মেয়েটা ছাগল চড়াচ্ছে। তবে মেয়েটাকে দেখার কারণ হলো মেয়েটা ওর ছাগল গুলোর সাথে কি যেন কথা বলছে। মেয়েটার এই অদ্ভুত কান্ড দেখে কিশোর ছেলেটা হো হো করে হেঁসে উঠলো। তার হাসির ধ্বনিতে মেয়েটা তার দিকে ফিরে তাকলো। চোখ ঘুচি করে কোমড়ে দুই হাত ঠেকিয়ে বললো।
–এই এই তুমি হাসতাছ ক্যন?

কিশোর তার হাসি কিছুটা থামিয়ে বলে উঠলো।
–তুমি কি পাগল? ছাগলের সাথে কেউ কথা বলে?

মেয়েটা একবার ওর ছাগলগুলোর দিকে তাকালো। তারপর ছেলেটির উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
–হ্যাঁ তা ঠিক। কিন্তু এগুলা তো ছাগল না।

–তাহলে কি? ভেড়া?

–উহুম তাও না।

–তাহলে কি?

–কওয়া যাইবো না। এডো অনেক গোপনীয় বিষয়। তোমাকে কলি তুমি একথা সবাইকে বলে দিবে।

ছেলেটার এবার একটু কৌতুহল জাগলো। সে মেয়েটার কিছুটা কাছে গিয়ে বসলো। তারপর কৌতুহলী হয়ে বললো।
–কসম! কাওকে বলবোনা। বলোনা কি গোপন কথা?

–হুম ঠিক আছে তুমি যখন এতো করে কইতাছ তাহলে কইতাছি শোন। আসলে এরা হলো আমার বাহক।

–মানে?

–মানে আমি কোন সাধারণ মাইয়া না। আমি একজন স্বপ্নরাজ্যের রাজকন্যা। আর এরা হইলো আমার ঘোড়ার গাড়ির ঘোড়া। আমরা যাদুর সাহায্যে এমন ছদ্মবেশ ধরে এহেনে আইছি।

কিশোর ছেলেটা আবারও হেঁসে উঠে বললো।
–ধুরর,,এসব তো রুপকথার গল্পে হয়। বাস্তবে এসব হয় নাকি? পাগল কোথাকার।

–ঠিক আছে বিশ্বাস না করলে সেডো তোমার ব্যাপার। আমি তাইলে গেলাম। আমার রাজ্যে ফিরে যাওয়ার সময় হইছে।

কিশোর মজা করে বললো।
–তা রাজকুমারী এখানে কিসের জন্য এসেছেন শুনি?

–আমার রাজপুত্র কে উটকাইতে(খুঁজতে)। হুনছি এদিকেই নাকি কোথাও রাজপুত্র আছে। আচ্ছা আমার কথা তো জানলে তা তুমি কেডো তাতো কইলা না?

কিশোর হাসিমুখে বললো।
–আমি??আরে আমাকে চিনলে না? আমিই তো সেই রাজপুত্র।

–যাহ্ রাজাপুত্র এমন হয় নাকি? সেতো শাহী পোশাকে থাকে।

–তো তুমি কি ভেবেছ ছদ্মবেশ শুধু তুমিই নিতে পারো? আরে আমিও তো যাদুর সাহায্যে ছদ্মবেশ ধরে এসেছি। আমি জানতাম তুমি এখানেই আছ। তাইতো আমিও এসেছি।

–হত্যি কইতাছ?

–একদম সত্যি।

–তাইলে আজ থাইকা তুমি আমার রাজপুত্র। আর আমি তোমার রাজকুমারী ঠিক আছে।

–ঠিক আছে।

–আচ্ছা এখন আমি যাই। আমার রাজ্যে ফিরা যাওয়ার সময় হইছে। কাইলকা আবার দেখা হইবো কেমন?

–আচ্ছা।

মেয়েটা তার ছাগলগুলো নিয়ে গুটিগুটি পায়ে লাফাতে লাফাতে চলে গেল। কিশোর মেয়েটার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটার সাথে কথা বলতে বলতে ওর মন মেজাজ কখন ভালো হয়ে গেছে তা বুঝতেই পারেনি ও। ঠোঁটের কোনে তার হাসির রেখা ফুটে উঠলো।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here