মৃত_কাঠগোলাপ-২০,২১,২২

0
748

#মৃত_কাঠগোলাপ-২০,২১,২২
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
২০

ধ্রুব এবং আয়েশীর বিয়ের কথাবার্তা চলছে। আয়েশী চেয়েছিল বিয়েটা সাদামাটা হবে। কিন্তু ধ্রুব তা শুনে নি। তার ভাষ্যমতে, সমাজে তার নামডাক অনেক। সাদামাটা বিয়ে করলে তার ইজ্জত থাকবে না। সবাই ভাববে, সে টাকার জন্য তার বিয়ে ধুমধাম করে করেনি। যা ধ্রুবর আত্মসম্মানে আঘাত হানবে। আয়েশী প্রথমে এ নিয়ে চেঁচামেচি করলেও, বাবার মুখের দিকে চেয়ে দাতে দাত চেপে সহ্য করেছে।
আয়েশী জানালায় মাথা ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে। চোখ উপসে জল গড়াচ্ছে। এ আর নতুন কি। সদা হয়। মৃদুল মারা যাবার পর আয়েশী ঠিকমত একবারও হেসেছে কিনা মনে পড়েনা।
‘ আয়েশী? ‘
মায়ের কণ্ঠে পেছন ফেরে আয়েশী। মনোয়ারার এক হাতে ভাঁজ করা জামদানি শাড়ি। ওপর হাতে গয়নার বাক্স। মনোয়ারা হাতের সব বিছানার উপর রাখলেন। গয়নার বাক্স খুলে তা ঠিক আছে কিনা পরখ করে বললেন,
‘ ধ্রুব এসেছে। তোকে বিয়ে একটু বেরুবে। ‘
আয়েশী রাগে ফেটে পড়ে। বলে,
‘ আমি যাব না। তার এত শখ জাগছে কেন? সে কি জানে না, আমার পরিস্থিতি কেমন? ‘
মনোয়ারা ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে ‘শুস’ শব্দ করে বলেন,
‘ আস্তে কথা বল। ধ্রুব শুনবে। ‘
আয়েশী আগের চেয়ে দ্বিগুণ শব্দ করে চেঁচায়,
‘ শুনলে শুনুক। আমি কি তাকে ভয় পাই? সে কি শুরু করেছে? যখন যা মন চাইছে তাই করছে। কারো ফিলিংসের কি কোনো দাম নেই তার কাছে? ‘
মনোয়ারা ব্যস্ত পায়ে আয়েশীর পাশে এসে দাঁড়ালেন। আয়েশীর বাহু ধরে সাবধানী কণ্ঠে জানালেন,
‘ দেখ, কোনো অশান্তি করিস না। এমনিতেই তোর বাবার হার্ট ভালো না। তার মধ্যে এত অশান্তি সে নিতে পারবে না। ধ্রুব এসেছে, চুপচাপ তার সঙ্গে যা। একটু ঘুরে আয়। ভালো লাগবে। ‘
আয়েশী মায়ের দিকে চায়। এ কোন জন্মদাত্রীকে দেখছে সে? যে আয়েশীর মনের মধ্যে বয়ে চলা সর্বগ্রাসী তুফান সম্পর্কে অবগত হয়েও, কেমন সুন্দর করে তাকে অন্য পুরুষের সঙ্গে ঘুরে আসতে বলছে। আয়েশী বিস্ময়ে কথা বলতে ভুলে যায়। মায়ের দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে রয়। মনোয়ারা আয়েশীর হাত ধরে তাকে বাথরুমে প্রবেশ করান। ব্লাউজ ও পেটিকোট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন,
‘ যা, পড়ে আয়। ‘

আয়েশী যেন রোবট হয়ে যায়। গা ছেড়ে বাথরুমের খিল আটকায়। বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রয় ঠায়। কিছুক্ষণ নিজের দিকে তাকায়। ভাবে, মৃদুল চলে যাবার পর থেকে সব কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। উলোট-পালোট হয়ে যাচ্ছে। আয়েশীর চারপাশ আর আগের মত সুন্দর না। বদলে গেছে, দূষিত হয়ে গেছে। কেউ আয়েশীকে বুঝে না। কেউ আর আগের মত মুগ্ধ চোখে চেয়ে বলে না,
‘ তুই আমার জীবনের আয়েশ, আয়েশী। তুই আছিস বলেই আমার জীবনে এত সুখ। ‘
সবার চোখে একটাই বাসনা, ‘ আয়েশী যেন সুখে থাকে। ‘
অথচ, মৃদুল ছাড়া আয়েশীর সুখ সে কবেই মরে গেছে। তা কেউ বুঝতে চায়না। কেউ না।
আয়েশীর দিল ছিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বের হয়।
কোথাও কেউ ভালো নেই। সবার মনে দুঃখ। কেউ বলে তো কেউ বলে না। পৃথিবী যেমন সত্য তেমন সত্য এই পৃথিবীর সবার মনের মধ্যে পুষে রাখা দুঃখসমুদ্র!
_____________________________
আয়েশীর মা খুব সুন্দর করে আয়েশীকে নীল জামদানি শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছেন। গলায় সরু সোনার চেইন, কানে সাধারণ ঝুমকো। আয়েশীকে দেখতে আজ খুব সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে স্বর্গ থেকে কোনো পরী এ ধরায় নেমে এসেছে। মনোয়ারা আয়েশীর চোখে কাজল লাগানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু পারছেন না। আয়েশীর চোখের নিচে জমে থাকা জলে, কাজলের রেখা বারবার লেপ্টে যাচ্ছে। মনোয়ারা একসময় বিরক্ত হলেন। ধমকে বললেন,
‘ ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছিস কেন এত? তোকে কি আমরা মেরে ফেলছি? কান্না থামা। ‘

আয়েশী ঠোঁট চেপে ধরে জল আটকাল। মনোয়ারা এবার খুব সুন্দর করে আয়েশীর চোখে কাজল দিয়ে দিলেন। আয়েশীকে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে বললেন,
‘ দেখ, কি সুন্দর দেখাচ্ছে আমার মেয়েকে। ‘
আয়েশী তাকায় না আয়নায়। মাথা নত করে ঠোঁট কামড়ে ধরে। মনোয়ার বুঝেন, আয়েশীর মনের দুঃখ। তাই তিনি আর বেশি ঘাটান না মেয়েকে। মেয়ের শাড়ির আঁচল ঠিক করে দিয়ে বলেন,
‘ যা, ধ্রুব বসে আছে। ‘
আয়েশী গা ছেড়ে দিয়ে হেঁটে যায় বসার ঘরের দিকে। ধ্রুব সোফায় বাবু হয়ে বসে আছে। ধ্রুবর সামনে আয়েশীর বাবা
বসে হবু মেয়ের জামাইয়ের সাথে গল্প করছেন। আয়েশী বাবার পাশে এসে দাঁড়ায়। ধ্রুব আয়েশীর পানে চোখ তুলে তাকায়। সঙ্গেসঙ্গে তার চোখ আটকে যায়, ভষ্ম হয়ে যায়, ঝলসে যায়। আয়েশীকে আজ তার ভাবনার চেয়েও বেশী সুন্দর দেখাচ্ছে। ধ্রুবর বুক ‘ধুকপুক-ধুকপুক’ করে। ধ্রুব বা হাতে নিজের বুকে চাপ দিয়ে বিড়বিড় করে, ‘ ওল ইজ ওয়েল, ওল ইজ ওয়েল ‘

কিছুক্ষণ পর, নিজেকে সামলে নিয়ে ধ্রুব সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আয়েশীর পাশে দাঁড়িয়ে আয়েশীর হাত আকড়ে ধরে। আয়েশীর রাগ হয়। হাত ছাড়াতে চায়, পারে না। ধ্রুব কামরুল হাসানের থেকে বিদায় নেয়। সদর দরজার দিকে হেঁটে যেতে যেতে আয়েশীর কানের কাছে ফিসফিসায়,
‘ তোমায় আজ ভীষন মনমোহিনী লাগছে, রক্তজবা। তোমার থেকে আজ আমার চোখ সরানো যাচ্ছে না। এত সুন্দর কেন তুমি? ‘
আয়েশী দাত খিচে উঠে। এত বেহায়া ছেলে আয়েশী এ জন্মে দেখেনি। রাগ হচ্ছে ভীষন। মন চাচ্ছে, ধ্রুবকে এখনি এক কোপে খু’ন করে ফেলতে। ইশ, যদি করা যেত! তবে আয়েশী আজ ধ্রুবর এই বেহায়া ভালোবাসা থেকে মুক্ত হয়ে যেত।
_________________________________
ধ্রুব-আয়েশী শহরের একটি নামিদামি ক্যাফেতে আসে। ধ্রুবকে দেখে ক্যাফের মালিক ব্যস্ত পায়ে ধ্রুবর পাশে এসে দাঁড়ায়। ধ্রুবর পা ধরে সালাম করলে ধ্রুব বলে,
‘ কেমন আছ, শাহাদাত? ‘
শাহাদাত উঠে দাঁড়ায়। ধ্রুবর থেকে মাথা নিচু করে নম্র গলায় জানায়,
‘ আপনার দোয়ায় ভালো আছি, স্যার। ‘
ধ্রুব হাসে। শাহাদাতের কাধে হাত রাখতেই ভয়ে শাহাদাতের চেহারা নীল বর্ণ ধারণ করে। শাহাদাত কাধ সংকুচিত করে ফেলে। ধ্রুব শাহাদাতের কাধে চাপড় দিয়ে হেসে বলে,
‘ আরো দোয়া চাইলে, আজ আমার ও আমার মিসেসের ভালো করে খাতিরদারি করো। বুঝলে? ‘
শাহাদাত তাৎক্ষণিক মাথা নেড়ে বলে,
‘ অবশ্যই, স্যার। চলুন আমার সাথে। ‘
ধ্রুব আয়েশীকে নিয়ে আগে আগে হাঁটে। পেছন পেছনে ক্যাফের মালিক আসে। মালিকের মুখ শুকিয়ে আধখান হয়ে গেছে। আজ যেন কোনো অঘটন না ঘটে। নাহলে ধ্রুবর হাত থেকে আজ কারও নিস্তার নেই। কারো না!

#চলবে

#মৃত_কাঠগোলাপ- ২১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

ধ্রুব চেয়ার টেনে বসল। আয়েশীর জন্য নিজের পাশের চেয়ার টেনে বলল,
‘ বসো। ‘
আয়েশী সেখানে বসল না। একটু দূরের চেয়ার টেনে সেখানে বসল। ধ্রুব দেখল, রাগ হল, খু’ন করতে ইচ্ছে হল। কিন্তু এই দুঃসাহসিক কাজ করা মেয়েটা আয়েশী বলে রাগ গিলে ফেলতে হল। মুখে জোরপূর্বক মুচকি হাসি টেনে মেনু কার্ড এগিয়ে দিল আয়েশীর দিকে। বলল,
‘ ইচ্ছেমত অর্ডার করো। ‘
আয়েশী ম্যানু কার্ড হাতে নিল না। বলল,
‘ আপনি করুন। আমার ভালো লাগছে না। ‘
আয়েশীর খারাপ লাগছে শুনে ধ্রুব তৎপর হয়ে উঠল। চেয়ার ছেড়ে উঠে আয়েশীর পাশে দাঁড়িয়ে কপালে হাত রেখে ব্যস্ত গলায় বলল,
‘ জ্বর নেই তো? না, জ্বর নেই। তাহলে খারাপ লাগছে কেন?’
আয়েশী ধ্রুবর থেকে কপাল সরিয়ে নিয়ে বলল,
‘ আমি অসুস্থ না। খামোকা ব্যস্ত হবেন না। আমার এমনিই ভালো লাগছে না। দ্রুত বাসায় যেতে চাইছি। ‘
ধ্রুব আসলে বুঝতে পেরেছিল আয়েশী ধ্রুবর সংস্পর্শ ভালো লাগছে না। কিন্তু আয়েশীকে একটুখানি ভালোবাসা দেখাতে এই ব্যস্ত হওয়ার ভান করল। তবে এবার বুঝতে পারছে, আয়েশীর ধ্রুবর এই অতিরিক্ত ভালোবাসার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং সে ধ্রুবর থেকে দূরে থাকলে ভালো থাকবে। কিন্তু ধ্রুবর থেকে দূরে থাকা যে অসম্ভব। ধ্রুবর যাকে মনে ধরে, সে তাৎক্ষণিক ধ্রুবর খাচায় আটকে যায়। ধ্রুব যত ইচ্ছে তাকে ভালোভাসে, যখন ইচ্ছে হয় দূরে সরিয়ে দেয়, যখন ইচ্ছে হয় খু’ন কর ফেলে। সর্বপরি সে মানুষটা তখন সম্পূর্ন ধ্রুবর আয়ত্বে চলে আসে। কিন্তু আয়েশীর বেলায় এই ঘটনার ঠিক উল্টোটা ঘটেছে। ধ্রুবর এত কসরতের পরও আয়েশীর মনে ধ্রুব নিজের জন্য একটুও ভালোবাসার উদ্রেক ঘটাতে পারেনি। এই না পারাকে কি বলে আখ্যায়িত করা যায়? ধ্রুবর ব্যর্থতা নাকি মৃদুলের ভালোবাসা জোর? শালা, এই মৃদুলের মধ্যে কি আছে যা ধ্রুবর মধ্যে নেই? মৃদুল মরে যাওয়ার পরও আয়েশীকে নিজের নামে দলিল করে রেখে গেছে। আয়েশীর মনে মৃদুল নিজে একা সমস্ত জায়গা নিয়ে রাজার মত বসে আছে।অন্য কাউকে সে জায়গা দখল করার বিন্দুমাত্র সুযোগ দিচ্ছে না। শালা মরে গিয়েও জিতে গেছে।

ধ্রুব নিজে দেখে খাবার অর্ডার করেছে। ধ্রুব সবসময় হেলদি খাবার খায়। সবজি, সালাদ খেয়েও ধ্রুব অভ্যস্ত। তবে আজ আয়েশী পাশে আছে বলে ধ্রুব সব আয়েশীর পছন্দমত খাবার অর্ডার দিয়েছে। ধ্রুবর মুখে নিজের সব পছন্দের খাবারের নাম শুনে আয়েশী বিস্মিত। মৃদুল,বাবা, মা,ভাই ছাড়া আয়েশীর পছন্দের খাবারের নাম কেউ জানে না। তাহলে দুদিনের পরিচয়ে এই ধ্রুব কি করে জেনে ফেলল? আয়েশী কৌতূহল দিমিয়ে না রাখতে পেরে প্রশ্ন করে বসল,
‘ আপনি কি করা আমার পছন্দের খাবার জানলেন? ‘
ধ্রুব হাসে। টেবিলের উপর আড়াআড়ি হাত ভাঁজ করে আয়েশীর মুখের দিকে ঝুঁকে আসে। চোখে চোখ রেখে গভীর কণ্ঠে বলে,
‘ কারণ আমি তোমায় ভালোবাসি। ‘
আয়েশীর দিল কাপে। মৃদুলের পর কেউ আয়েশীকে এই প্রথম এত নিঃসংকোচে ভালোবাসি বলেছে। কিন্তু তবুও সে মৃদুলের মত আয়েশীর হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করতে পারেনি। তার মনের সমুদ্রে ঢেউ খেলাতে পারেনি। কারণ সে আয়েশীর মৃদুল না। বরং সে অন্য কেউ, যাকে আয়েশী কখনো ভালোবাসতে পারবে না।
ধ্রুব খাচ্ছে। আয়েশী শুধু চামচ নাড়ছে। ধ্রুব তা লক্ষ করতে পেরে, নিজের ভাগের খাবার চামচে তুলে আয়েশীর মুখের দিকে এগিয়ে আনল। বলল,
‘ খাও। ‘
আয়েশী মানা করল। ধ্রুব শুনল না। জোরপূর্বক আয়েশীর মুখে খাবার গুঁজে দিয়ে বলল,
‘ না ছাড়া তোমার ডিকশনারিতে আর কোনো শব্দ আছে? যা জিজ্ঞেস করি তাতেই না, না, না। এত না, না বলো কেন? বিয়ে হয়নি, বাচ্চাও হয়নি। তার আগেই নানা বানিয়ে দিচ্ছ। এটা ভালো না। ‘
আয়েশী রাগ হয়। দাতে দাত খিচে বলে,
‘ আজগুবি কথা কেন বলছেন? আমার এসব কথা পছন্দ না । ‘
‘ সে তো আমাকেও তোমার পছন্দ না। এখন আমি কি তোমায় ছেড়ে দেব? উহু, নিঃশ্বাসে আটকে গেছ তুমি। তাই তো এত অপমান সহ্য করে এখনো তোমার কাছে পড়ে আছি। নাহলে এই ধ্রুবর পেছনে হাজার মেয়ে ঘুরে। ‘
আয়েশী ভেঙায়। বলে,
‘ তাহলে সেই মেয়েগুলোকে ধরে ধরে বিয়ে করে ফেলুন না। আমাকে পেছনে পড়ে আছেন কেন? ‘
ধ্রুব হাসে। পুনরায় আরো এক চামচ খাবার আয়েশীর মুখে জোরপূর্বক গুঁজে দিয়ে বলে,
‘ কারণ সেই একই। সে মেয়েগুলোকে আমি ভালোবাসি না, তোমায় ভালোবাসি। ‘
আয়েশী কথা বলে না। রাগ নিয়ে চুপ করে খাবার গিলে। ধ্রুবর মুখে ভালোবাসি শব্দ শুনলে আয়েশীর কানে জ্বালা ধরে, পোকা কিলবিল করে, ম’রে যেতে ইচ্ছে হয়। যে কান মৃদুল ব্যতীত অন্য কারো মুখে ভালোবাসি শুনে, সে কানকে ছু’রি দিয়ে কে’টে ঝাঁ’জরা করে ফেলতে ইচ্ছে হয়।
________________________
ধ্রুব-আয়েশী একটা পার্কে এসে বসে। ধ্রুব এক টোঙা বাতাম কিনে আয়েশীর হাতে দেয়। আয়েশী সেটা হাতে নিয়েই বসে থাকে। খায় না। ধ্রুব তা দেখে নিজেই বাতাম ভেঙে আয়েশীকে খাইয়ে দেয়।
অনেকক্ষণ ধরে তারা বসে আছে। অথচ আয়েশী কোনো কথা বলছে না। ধ্রুব ভ্রু বাকায়। আয়েশীকে কি করে পটানো যায় তা ভাবে। হঠাৎ তার মনে পড়ে বাবার বলা কথা, মেয়ে মানুষের মন হল মোমের তৈরি। তারা কষ্টের আগুন দেখলেই গলে যায়। ধ্রুব হাসে। সামনে দিয়ে এক ফুলের মালা হাতে এক পথশিশু হেঁটে গেলে ধ্রুব তাকে ডাকে। পথশিশু হাসিমুখে এগিয়ে আসে ধ্রুবর দিকে। পথশিশুর গা থেকে দুর্গন্ধ-এ ধ্রুবর গা গুলিয়ে আসে। কিন্তু আয়েশীকে পটাতে গেলে এটুকু কষ্ট তো করতেই হয়। ধ্রুব ঠোঁট চেপে সহ্য করে গন্ধ। পথশিশুর ময়লা চুলে হাত বুলাতেই হাত আঠা আঠা হয়ে যায়। তবুও ধ্রুব হাসিমুখে বলে,
‘ নাম কি তোমার? ‘
পথশিশু মিষ্টি হেসে বলে,
‘ সারা। ‘
‘ সুন্দর নাম। মালা কত করে? ‘
‘ দশ টাহা। ‘
‘ আমি সবগুলো মালা নিব? ১০০০ দিব। চলবে? ‘
ধ্রুবর কথা শুনে আয়েশী এবং পথশিশু উভয়েই অবাক হয়। পথশিশু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে,
‘ এ্যা…এত্ত টাহা আপনি আমার ক্যান দিবেন? ‘
ধ্রুব মুচকি হেসে বলে,
‘ আমার জীবনে ভালোবাসার খুব অভাব। তাই অন্যকে ভালোবাসতে আমার ভালো লাগে। তাই দিচ্ছি। চলবে না? ‘
ধ্রুবর কথা শুনে আয়েশী আড়চোখে চায়। নিষ্পাপ পথশিশু ধ্রুবর চালাকি ধরতে পারে না। খুশি হয়ে বলে,
‘ খুব চলব। ‘
পথশিশুর কণ্ঠে খুশি, মুখে উজ্জ্বলতা খেলে বেড়ায়। ধ্রুব পকেট থেকে এক হাজার টাকার নোট বের করে পথশিশুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
‘ নাও। এটা আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য ভালোবাসা। ‘
পথশিশু টাকা নিয়ে, হাতের মালগুলো ধ্রুবকে দেয়। ধ্রুব নেয়না। বলে,
‘ আমার পাশে যে বসে আছে তাকে দাও। আর বল, প্রেয়সীর কোলে মাথা রেখে ধ্রুব ইউহান শেখের সুখের মৃ’ত্যু হোক! ‘
আয়েশী অবাক হয় তাকায় ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব ভ্রু বেকে চেয়ে রয় আয়েশীর পানে। পথশিশু মুচকি হেসে মালার ঢালা আয়েশীর কোলে উপুড় করে দিয়ে হেসে বলে,
‘ এই বালা মানুষ ধ্রুব সাহেবের আপনার কোলে মাথা রাইখা সুখের ম’রণ হোক। ‘
আয়েশী নিশ্চুপ হয়ে পথশিশুর পানে চেয়ে রয়। শিশুটা কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে। অথচ এই নিষ্পাপ শিশুটা জানেই না, সে আয়েশীকে না জেনে কত বড় অভিশাপ দিয়ে গেল। হায়, কি নিষ্পাপ তার মন!

#চলবে ( শব্দসংখ্যা- ১০০০)

#মৃত_কাঠগোলাপ – ২২
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘেদের স্তর। বৃষ্টি নামবে নামবে ভাব। এমনই এক বৃষ্টিস্নাত দিনে আয়েশী এবং ধ্রুবর বিয়ে ধার্য করা হয়েছে। হ্যাঁ, আজ আয়েশী-ধ্রুবর বিয়ে।
আয়েশীদের বাড়ি পুনরায় সেজে উঠেছে হরেক রঙে। টিভি চ্যানেলে প্রকাশিত হচ্ছে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ধ্রুব ইউহান শেখের বিয়ের তাজা খবর। চারপাশে হল্লোল-কল্লোল! এত বড় ঘরে বিয়ে হওয়ায় আয়েশীকে অনেকে বাঁকা চোখেও দেখছেন, আবার অনেকে আয়েশীর কপাল খুলে গেছে বলেও মন্তব্য করলেন। এসব কিছুতে আয়েশী নির্বিকার। কে কি বলছে, কে কি করছে কিছুতেই তার কোনো মাথাব্যথা নেই। কনে সেজে চুপটি করে স্টেজে বসে আছে সে।
ধ্রুবর বিজনেস পার্টনার অনেকেই ধ্রুব-আয়েশীর কাছে এসে ছবি তুলছেন। ধ্রুব তাদের হাসিমুখে সামলাচ্ছে। তবে আয়েশী বিরক্ত। এসব ফর্মালিটি, ঠোঁটে কৃত্রিম হাসি টেনে রাখতে তার ভালো লাগছে না। ভালোই ভালোই বিয়েটা মিটে গেলেই বাঁচে।
আয়েশী একনজর নিজের হাস্যোজ্বল পরিবারের দিকে তাকায়। ওই তো বাবা গর্ব করে বলছেন, মেয়ে আমার রাজরানী হয়ে থাকবে। জামাই পেয়েছি লাখে একটা।
মা পাড়ার মহিলাদের সাথে বসে মিষ্টি খাচ্ছেন। হাসি যেন সরছেই না মুখ থেকে। তুষার ভাই ব্যস্ত সবাইকে অ্যাপায়ন করতে। বোনের বিয়েতে কোথাও যেন কোনো কমতি না থাকে। সে কি ব্যস্ততা তার।
সবাই খুশি, শুধু আয়েশী বাদে। আজ যদি ধ্রুবর জায়গায় মৃদুল থাকত, তবে আয়েশীও খুশি হত। কিন্তু সে নেই। তাই পরিবারের খুশিই আয়েশীর খুশি!

ধ্রুব সবার থেকে মনোযোগ সরিয়ে আয়েশীর দিকে তাকাল। আয়েশী তখন ঘাড়ে হাত রেখে কিছু একটা খুঁটছে। ধ্রুব একটু ঝুঁকে বলল,
‘ এনিথিং রং? ‘
আয়েশী তাৎক্ষণিক ঘাড় থেকে হাত সরাল। স্পষ্ট কণ্ঠে জানাল,
‘ না। ‘
ধ্রুব মানল না। আয়েশীর ঘাড় নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে দেখতে লাগল কি সমস্যা। আয়েশী কাচুমাচু করছে। শাড়ির ঘাড়ের কাছের সেফটিপিন আয়েশীর ঘাড়ে ফুটে গেছে। সেফটিপিনের সূচের আ’ঘাতে নরম ত্বক ছিঁড়ে কিছুটা র’ক্তও বেরিয়ে গেছে। ধ্রুব সেফটিপিন হাতে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে বিরক্ত হয়ে বলল,
‘ যা সামলাতে পারো না, তা পড় কেন? ‘
আয়েশী কথা বলল না। চুপ করে সরে গেল ধ্রুবর থেকে। ধ্রুব ঠিক হয়ে বসল। বাম হাতে আয়েশীর অলক্ষে একপাশে লুকিয়ে নিয়ে, আঙ্গুল দিয়ে সেফটিপিন মুঁ’চড়ে দিল। যার দরুন সেফটিপিনের সূচের আ’ঘাতে ধ্রুবর আঙ্গুল ঝাঁ’জরা হয়ে গেল। র’ক্ত ফিনকি দিয়ে বের হল। অথচ এত মারাত্মক আঘাতে ধ্রুব নির্বিকার। হিং’স্র চোখে চেয়ে রয়েছে র’ক্তে রাঙ্গানো সেফটিপিনের দিকে। অতঃপর সে সেফটিপিন পায়ের নিচে রেখে জুতো দ্বারা পি’ষে ক্ষান্ত হল সে। তার র’ক্তজবাকে আঘাত করার অধিকার একমাত্র ধ্রুব ব্যতীত আর কারো না। যে জিনিস আয়েশীকে আঘাত করবে, সে মুহূর্তেই ধ্রুবর হিং’স্র থা’বায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। চাই সেটা লোহার ছোট এক সেফটিপিন’ই হোক না কেন!

‘ হ্যালো মিস্টার ধ্রুব! বিয়ে করে তো বেশ ফুর্তিতেই আছ দেখছি। ‘
বহু বছরের পুরনো শ’ত্রুর কণ্ঠ চিনতে ধ্রুবর একটুও বিলম্ব হল না। ধ্রুব নয়নে তীক্ষতা ঢেলে মধ্যবয়স্ক লোকটার দিকে তাকাল। আকরাম খালিক নাম তার। একসময় ধ্রুবর বাবার শত্রু ছিল, এখন ধ্রুবর। রাজনীতি করেন, কিন্তু রাজনীতির দুনিয়ার পাশাপাশি তার নিজের এক কালো সাম্রাজ্য আছে। ধ্রুব এবং খালিক পরস্পর দন্ধ প্রতিযোগী।
খালিক ধ্রুবর পাশে এসে দাঁড়াল। ধ্রুবর হাতে গিফট প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে ধ্রুবর কানেকানে বলল,
‘ সুন্দর মেয়ে বিয়ে করেছ, ভাতিজা। তার সৌন্দর্য্যের ভাগ কিছুটা চাচাকেও দিও। চেখে দেখি একটু, নয়া মাল নাকি আধখাওয়া? হা হা হা! ‘
ধ্রুবর চক্ষু র’ক্তে পরিণত হল। হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে চোখ বুজে ফেলল। অত্যধিক রাগে কান ধপধপ করছে। কপালের দুটো রগ ফুলে নীল হয়ে গেছে। ধ্রুব শুধু এটুকু বলল,
‘ আমার জিনিসের দিকে নজর দিস না। নাহলে চোখ দিয়ে কিছু দেখার মত অবস্থায় রাখব না। চোখ দুটো গেলে উপড়ে ফেলব,শালা। ‘
খালিক খারাপভাবে হাসল। বলল,
‘ একটা শুভ দিনে এই কা’টাকাটি মা’রামারির কথা না বলাই কি ভালো নয়? আসি তবে। আর হ্যাঁ, খাবার দারুন হয়েছে। বহুদিন পর পেট পুড়ে খেলাম। আচ্ছা এখন আসি। নতুন জীবনের জন্য অ-শুভকামনা। ‘

খালিক চলে গেল। ধ্রুব শুধু তাকিয়ে রইল। সময় এসে গেছে, শিয়ালের মাথা কে’টে বলি দেবার। ম’রার জন্য বড্ড তড়পাচ্ছে।
____________________
ধ্রুব এবং আয়েশীকে গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়েছে। নিয়মমাফিক আয়েশীর এখন কান্না করা উচিৎ। অথচ সে কাঁদছে না। চুপ করে গাড়ির এক পাশে বসে রয়েছে। জানালার দিকে চেয়ে কি যেন ভাবছে। হয়তো মৃদুলের কথা! ধ্রুব লক্ষ করেছে বিষয়টা। ধ্রুব একটু সরে আয়েশীর পাশে এসে বসল। আয়েশী বুঝত পারল! বিয়ে হতে না হতেই কাছ ঘেঁষা শুরু। বেহায়া লোক!
আয়েশী আরো একটু চেপে বসল জানালার পাশে। ধ্রুব মুচকি হাসল। কৌতুক করে বলল,
‘ ওদিকে আর জায়গা নেই। আরো সরতে চাইলে দরজা খুলে বেরিয়ে যেতে হবে। ‘
আয়েশী রাগ হল। ধ্রুবর গা থেকে সুন্দর ঘ্রাণ নাকে আসছে। দামি সুগন্ধি ব্যবহার করেছে বোধহয়। আয়েশী চুপ করে জানলার সাথে ঠেসে বসে রইল। ধ্রুব বলল,
‘ চা খাবে? ‘
আয়েশী মাথা নেড়ে না জানাল। ধ্রুব ভাবল, আয়েশী কখনোই তার বলা কোনো কিছুতে হ্যাঁ জানাবে না। অতএব তার না’টাকেই হ্যাঁ ধরে নিতে হবে। ধ্রুব ড্রাইভারকে বলল,
‘ হিমেশ, গাড়ি থামাও। ‘
ড্রাইভার গাড়ি থামাল। ধ্রুব গাড়ি থেকে নেমে আয়েশীর দিকের দরজা খুলে দিল। হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ নামো। ‘
আয়েশী হাত ধরল না, নেমে দাঁড়াল গাড়ি থেকে। ধ্রুব হাত বটে নিল। আয়েশীর হাত না ধরার বিষয়টায় ধ্রুবর আত্মসম্মানে আ’ঘাত হেনেছে ঠিকই। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে সে আ’ঘাতকে সহ্য করে গেছে। শেরওয়ানি গায়ে দিয়ে ধ্রুব বুক টানটান করে হেঁটে গেল টঙের দোকানের সামনে। সদ্য বিয়ে করে আসা বরকে দেখে টঙের মালিক ফ্যালফ্যাল চোখে ধ্রুবর দিকে তাকাল। বলল,
‘ আফনে কি বিয়ে ছাইড়া পলাইয়া আসছেন? ‘
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে তাকাল। বলল,
‘ বেশি কথা না বলে, দু কাপ কড়া লিকারের চা দাও।’
আয়েশী ধ্রুব ও দোকানদারের কথা শুনে সেদিকে তাকাল। বাবার বয়সী দোকানদারের সাথে এমন কঠিন ভাবে কথা বলছে কেন ধ্রুব?
একটু পর ধ্রুব হাতে দু কাপ চা নিয়ে হেঁটে আসল। আয়েশীকে এক কাপ চা এগিয়ে দিল। আয়েশী কাপ হাতে নিল। গা বড্ড ম্যাজম্যাজ করছে। ক্লান্তিতে হাত পা মুঁ’চড়ে আসছে। এ সময় চা খেতে পেয়ে বেশ ভালো লাগছে। গায়ে ফুরফুরে ভাব আসছে। ধ্রুব চায়ে চুমুক দিয়ে মুখ কুঁচকে ফেলল। সামান্য শব্দ করে চেঁচিয়ে বলল,
‘ এসব কি চা? মনে হচ্ছে চিনি গুলিয়ে খাচ্ছি। বাজে টেস্ট। ‘
ধ্রুবর অভিযোগ শুনে আয়েশী চোখ তুলে তাকাল। বলল,
‘ চা এতটাও খারাপ হয়নি। ‘
ধ্রুব শুনেও যেন শুনল না। তার কাছে খারাপ লেগেছে সুতরাং সবার কাছে খারাপ লাগবে, লাগা উচিৎ। ধ্রুব রা’গে নিজের হাতের চায়ের কাপ মাটিতে ছুঁ’ড়ে ফেলে দিল। কাঁচের কাপ মাটিতে আছড়ে পড়ে ঝনঝন শব্দ তুলে ভে’ঙে গেল। নিজের কাপ ভেঙে ধ্রুব এবার আয়েশীর কাপ কেড়ে নিয়ে মাটিতে আ’ছাড় দিয়ে ভে’ঙে ফেলল। আয়েশীর চোখ কপালে উঠে গেল। উত্তেজিত হয়ে বলল,
‘ এটা কি করলেন আপনি? ‘
ধ্রুব স্বাভাবিক সুরে জানাল,
‘ যা আমার পছন্দ হয়নি, তা তোমার পছন্দ হোক সেটা আমার সহ্য হবে না। তাই ফেলে দিলাম। উত্তর পেয়ে গেছ? আর চা খেতে হবে না। গাড়িতে উঠ। ‘
আয়েশী ড্যাবড্যাব চোখে ভে’ঙে ফেলা কাপের দিকে তাকিয়ে রইল। কাপটা কি নির্দয় ভাবে মাটিতে ভেঙে পড়ে আছে। একটু আগে ঝকঝক করা কাপ এখন সামান্য কয়েকটা ফেলনা কাঁচের টুকরো হয়ে গেছে। ইশ!
ধ্রুব আয়েশীকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজে টেনে নিয়ে গাড়িতে উঠাল। গাড়ির দরজা ঠাস করে বন্ধ করে দিয়ে টঙের দোকানে গেল। দোকানদার তাড়া দিয়ে বলল,
‘ দুই কাপ চা, দশ টাহা। টাকা দিন, আমি দোকান বন্ধ করুম। ‘
ধ্রুব শুনল না সেসব। হিং’স্রতা তখন তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বহমান। ধ্রুব হাত বাড়িয়ে মুহূর্তেই বেঞ্চের উপর থাকা সমস্ত চায়ের কাপ মাটিতে ফেলে দিল। কাঁ’চের কাপ মাটিতে পড়ে একে একে সবগুলো ঝনঝন শব্দ তুলে ভে’ঙে গেল। দোকানদার কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল চোখে ধ্রুবর দিকে তাকাল। পরক্ষণেই মাথায় হাত দিয়ে চোখের পানি ছেড়ে বলল,
‘ এ আফনে কি করলেন? আমার কত বড় সর্বনাশ কইরা দিলেন। এত টাহার ব্যবসা আমার। সব নষ্ট কইরা দিলেন। হায় আল্লাহ! আমার লস হওয়া টাহা দিন। নাইলে আপনারে ছাড়ুম না আইজ। ‘

ধ্রুব বাঁকা হাসল। পকেট থেকে এক হাজার টাকার নোট দোকানদারের মুখের উপর ছুঁড়ে ফেলে বলল,
‘ এ টাকা দিয়ে ভালো চা বানানো শিখে নিস। ‘

ধ্রুব চলে গেল। পেছন থেকে দোকানদার অশ্রুভেজা চোখে চেয়ে রইল। তার পঞ্চাশ বছরের জীবনে এইভাবে কেউ তার সাথে বেয়াদবি করেনি। আজকালকার ছেলেদের উপর বেয়াদবির হিড়িক পড়ে গেছে। তাই জন্যেই আজ পৃথিবীতে এত গজব পড়েছে। মধ্যবয়স্ক দোকানদার টাকা হাতে মলিন বদনে বসে রইলেন।

#চলবে ( শব্দসংখ্যা- ১২০০+)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here