#মৃত_কাঠগোলাপ-৮,৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
আজ আয়েশীর বিয়ে। প্রিয় মানুষের সাথে সারা জীবনের জন্য এক পবিত্র সম্পর্কে বাঁধা পড়া, এ যেন স্বর্গীয় সুখ! বিয়ের আসরে বসে প্রিয়তমের জন্যে অপেক্ষার প্রহর গুনছে আয়েশী। মৃদুল আসবে, আয়েশীকে তার বাম পাজরের হাড় বানাবে। ইশ, আয়েশীর তো সুখে গা কাপিয়ে কান্না আসছে।
বিয়ের সাজে আয়েশীকে আজ ভীষন মিষ্টি দেখাচ্ছে। আয়েশীর মা মনোয়ারা আয়েশীর ঘাড়ে ছোট্ট একটা নজর টিকা এঁকে গদগদ কণ্ঠে বলেছেন,
‘ খুব সুন্দর দেখাচ্ছে আমার মেয়েটাকে। আল্লাহ যেন হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখে আমার সোনার টুকরাকে। ‘
আয়েশী মায়ের কথা শুনে কেঁদে আটখানা। মা বাবাকে ছেড়ে চলে যেতে একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না আয়েশীর। কিন্তু মৃদুলের ঘরের ঘরণী হওয়ার লোভটাও যে ছেড়ে দেওয়া সম্ভব না। আয়েশী মুখ বুজে সারাটাক্ষণ শুধু কেঁদেই গেল।
বরপক্ষ আসতে ইতিমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আয়েশীর বাবা চিন্তিত হয়ে বরপক্ষকে কল করেছেন। তারা জানিয়েছে মৃদুল ও তার চাচাতো ভাই আয়ুশ এক ঘন্টা আগেই বেরিয়ে পড়েছে। আয়েশীর বাবা শুনে আশ্বস্ত হলেন। মৃদুলদের বাড়ি থেকে আয়েশীদের বাড়ি দেড় ঘণ্টার রাস্তা। আর জ্যামে আটকে গেলে আরো দ্বিগুণ সময় কেড়ে নেয়। অগ্যতা আয়েশীর বাবা অপেক্ষা করতে লাগলেন।
ধ্রুব এতক্ষন একজন দায়িত্বশীল বন্ধুর মত বিয়ের খাবার-দাবারের দিকটা দেখছিল। ধ্রুবর এমন খাটুনি দেখে আয়েশীর বাবা রীতিমত লজ্জায় মরে যাচ্ছেন। এত বড় লোক, তাদের বিয়েতে এসেছে সেই তো অনেক। আর এখন নিজের বাড়ি ভেবে বিয়ের দিকটা সামলাচ্ছে, কত বড় মন তার। আয়েশীর বাবা ধ্রুবর পাশে এসে দাঁড়ালেন। ধ্রুব তখন মেহমানদের অ্যাপায়নের দিকটা দেখছিল। আয়েশীর বাবা তা দেখে লজ্জায় আলুথালু হয়ে বললেন,
‘ ধ্রুব বাবা? ‘
ধ্রুব তাকালো কামরুল হাসানের দিকে। অবিরাম কাজ করার দরুন ধ্রুবর শার্ট ঘামে জবুথবু। আসার সময় গায়ে দিয়ে আসা ধূসর রঙের ব্লেজারটিও ভাজহীন পড়ে রয়েছে এক কোণায়। ধ্রুব চমৎকার হেসে বললো,
‘ জি আঙ্কেল? কোনো দরকার? ‘
‘ মেহমান হয়ে তুমি কেন কাজ করছ? কাজ করার জন্যে মানুষ আছে তো। চলো, ওদিকটায় গিয়ে বিশ্রাম নাও। ‘
ধ্রুব চোখে হেসে বলল,
‘ আঙ্কেল, আমি আপনার নিজের ছেলে হলে কি বলতেন তাকে বিয়ে বাড়ির এত কাজ ফেলে বিশ্রাম নেওয়ার কথা? ‘
কামরুল হাসান লজ্জায় পড়ে গেলেন। দ্রুত সুধালেন,
‘ আরে না না। তুমি তো আমার নিজের ছেলে-ই। আজ তোমার জন্যেই তো আয়েশী ও মৃদুল বাবার বিয়েটা হচ্ছে। আসলে তুমি এত পরিশ্রম করছ, দেখে খারাপ লাগছে। ‘
‘ খারাপ লাগার কোনো কারণ নেই। আপনি গিয়ে বিশ্রাম নিন। আমি সব সামলে নেব। ‘
কামরুল হাসান হেসে উঠলেন। কি ভালো ছেলে! কথাবার্তা কত মার্জিত! একদম সোনার টুকরা ছেলে। এমন ছেলে আজকাল পাওয়া যায় নাকি? যেমন বড় মানুষ, তেমনি তার বড় মন! কামরুল হাসান ধ্রুবর কাধে হাত রাখলেন। কাধে হাত বুলিয়ে বললেন,
‘ বড় হও, বাবা। অনেক অনেক বড় হও। ‘
ধ্রুব হাসল। কামরুল হাসান চোখের পানি আড়ালে মুছে নিয়ে অন্য দিকে চলে গেলেন।
কামরুল হাসান চলে গেলে, ধ্রুবর ঠোঁটে বক্র হাস ফুটে উঠে। ধ্রুব কাউকে কল করে।
‘ কাজ হয়েছে? ‘
‘ জি স্যার। ‘
‘ আমি আসছি। গাড়ির দিকে নজর রাখো। ‘
‘ ওকে স্যার। ‘
ধ্রুব ফোন কেটে পকেটে পুড়ে নিল। অতঃপর সবার অলক্ষে বেরিয়ে পড়ল বিয়ে বাড়ি থেকে।
মৃদুলদের গাড়ি মোহাম্মদপুর একটা ব্রিজের উপর দিয়ে অতিক্রম করছিল। মৃদুলের তর সইছে না। অনেক দেরি হয়ে গেছে। আয়েশী তার জন্যে অপেক্ষা করছে। মৃদুল আয়ুশকে তাড়া দিয়ে বলল,
‘ গাড়ীর স্পিড বাড়িয়ে দে, আয়ুশ। আমাদের দ্রুত যেতে হবে। ও অপেক্ষা করছে। ‘
আয়ুশ বন্ধুর অস্থিরতা বুঝতে পেরে ব্যঙ্গাত্মক হেসে বলল,
‘ কি ভাই? তর সইছে না, নাকি? ‘
মৃদুল আয়ুশের কথার ভঙ্গিমায় হেসে ফেলল। বলল,
‘ তিন বছর প্রেমের পর ফাইনালি বিয়ে করতে যাচ্ছি। তর সইবে কেন? ‘
‘ বাহ,বাহ, বাহ। এত প্রেম। ভাবির তো কপাল খুলে গেল। ‘
মৃদুল চমৎকার হেসে বলল,
‘ ওর কপাল খুলেছে কিনা জানিনা। তবে ওকে বিয়ে করে আমি জিতেছি, সেটা হলফ করে বলতে পারি। ‘
‘ ভীষন ভালোবাসো ভাবীকে, ভাই? ‘
মৃদুল আয়ুশের চোখে চোখ রাখল। প্রবল আত্মবিশ্বাসের সুরে বলল,
‘ ভীষন! ‘
‘ আয়ুশশশ, সামনে তাকাআআ……….’
মৃদুলের চিৎকার শুনে আয়ুশ ঘাড় ঘুরিয়ে দ্রুত সামনে তাকালো। একটা ট্রাক গাড়ীর সামনে চলে আসতেই আয়ুশ হন্তদন্ত হয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে নিল। কিন্তু ততক্ষণে যা দু*র্ঘটনা হওয়ার হয়ে গেছে। একটা মালবাহী বিশাল ট্রাক এসে ধাক্কা খেয়েছে মৃদুলদের গাড়িতে। সঙ্গেসঙ্গে গাড়ির সামনের কাঁচ ফেঁটে চৌচির হয়ে গেছে। সমস্ত ভাঙা কাঁচ মৃদুল ও আয়ুশের মুখে ঝড়ের বেগে ঢুকে গেছে। একটা বড় ভাঙা কাঁচের টুকরো আয়ুশের গলায় বিঁধে যেতেই আয়ুশ দুবার গা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। তারপরই ক্রমশ তার গা ঠান্ডা হয়ে গেল। স্টিয়ারিংয়ে থাকা হাত নিস্তেজ হয়ে নেমে এলো সিটে।
মৃদুলের সম্পূর্ন মুখ ভর্তি কাঁচের টুকরো। তার মুখ বেয়ে র*ক্তের ফোয়ারা বইছে। মৃদুলের বাম চোখে কাঁচ ঢুকে চোখের মনি কোটর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। মৃদুল আ*হত চোখ এক হাতে ধরে, আয়ুশের গা ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে ডেকে উঠল,
‘ আ-আ-আ-য়ুশ, এই আ-আয়ুশ? উঠ না রে। এই আ-আয়ুশ? ‘
আফসোস, মৃদুলের কান্না মাখা কণ্ঠ আয়ুশের কান অব্দি পৌঁছালো না। আয়ুশ তখন ম*রন ঘুমে মগ্ন। যে ঘুম আর কখনো ভাঙবার নয়।
আয়ুশকে কথা বলতে না দেখে, মৃদুলের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল জলের ফোয়ারা। নোনতা জল কাঁটা চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়তেই কাঁ*টাস্থান আগুনের ন্যায় জ্বলে উঠল।
মৃদুল ব্য*থায়-জ্ব*লায় কুঁ*কড়ে গেল।
‘ আ-আয়েশী? ‘
মৃ*ত্যু*পথের যাত্রায় মৃদুলের মনে পড়ল প্রিয়তমার হাদিমাখা মুখটা! প্রিয়তমা অপেক্ষা করছে বর বেসে মৃদুলকে দেখতে। কিন্তু সে কি জানে, তার আর বর বেসে মৃদুলকে দেখা হবে না! সে দেখবে এক র*ক্তসমুদ্রে স্নান করে আসা এক নতুন মৃদুলকে! যার গায়ের প্রতিটা অংশ আ*ঘাতের শত চিন্হ। আয়েশী র*ক্তা*ক্ত মৃদুলকে দেখে কি করবে তখন? মৃদুলের গলা জড়িয়ে কেঁদে উঠবে? ম*রার আগে একবার বলবে কি, মৃদুল আমি তোকে ভালবাসি। ভীষন ভীষন ভালোবাসি। এতটা ভালো বোধহয় আমি আর কাউকে এখনো বেসে উঠতে পারিনি। ‘
না, না। শেষবারের মত আয়েশীর মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনতে হলেও মৃদুলকে আয়েশীর কাছে যেতে হবে। আয়েশী কোলে মাথা রেখে তার ম*রনও হবে সুখের ম*রন।
মৃদুল প্রচণ্ড কষ্ট নিয়ে গাড়ির দরজা খোলার চেষ্টা করল। গাড়ীর দরজা অর্ধেক ভেঙে গিয়ে মৃদুলের সিটে দেবে গেছে। মৃদুল অনেক কষ্ট নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো। তাকে যেকোনো মূল্যেই পৌঁছাতে হবে আয়েশীর কাছে। তার আয়েশী অপেক্ষা করছে তার জন্যে। সে যদি আজ না যায়, আয়েশী ম*রে যাবে। জীবিত থেকেও জ্যান্ত লা*শ হয়ে যাবে তার প্রিয়তমা। মৃদুল বিড়বিড় করে আয়েশীর নাম জপ করতে করতে এগিয়ে গেল ব্রিজ ধরে।
কিন্তু কারো ধাক্কায় মুখ থুবড়ে পড়ে গেল মাটিতে। মাটিতে আ*ঘাত পেয়ে নাক ফেটে র*ক্ত ছিটকে রাস্তায় পড়ল। মৃদুল ব্যা*থায় চিৎকার করে উঠল। তবুও মৃদুল হার মানলো না। উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই গায়ের শক্তিতে কুলিয়ে উঠতে পারল না। মুখ থুবড়ে পুনরায় পড়ে গেল মাটিতে। একটু দূরেই পড়ে আছে মৃদুলের মোবাইল। মৃদুল শেষ ভরসা এই মোবাইল। আয়েশীকে ফোন করে বলবে সে, ‘ তার মৃদুল কষ্ট পাচ্ছে। প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছে। সে মরে যাচ্ছে। আয়েশী একবার যেন এসে যেন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মৃদুল কষ্ট পেয়ে ম*রতে চায়না। আয়েশীর কোলে মাথা রেখে সুখের ম*রন ম*রতে চায়। ‘
মৃদুল হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে গেল পড়ে থাকা মোবাইলের দিকে। কিন্তু আটকে গেল সে। বুট জুতো পরিধানকারী কেউ পা দিয়ে পি*ষে ধরল মৃদুলের ডান হাত। মৃদুল চমকে উঠল। মাথা তুলে তাকিয়ে দেখবার চেষ্টা করল সেই মানুষকে। এক চোখ অন্ধ। অপর চোখে ঝাপসা দেখছে সে। মৃদুল চোখের পাপড়ি ফেলল কয়েকবার। অতঃপর চোখ মেলে দেখল এ পৃথিবীর এক পাষণ্ড বিশ্বাসঘাতককে।
#চলবে
#মৃত_কাঠগোলাপ- ৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
‘ ধ্রুব, তু-তুমি? ‘
মৃদুল বিস্ময়ে কথা বলতে ভুলে গেল। চোখের কোণ ঘেঁষে গড়িয়ে পড়ল অশ্রুবিন্দু। ধ্রুব ঠোঁট টেনে হেসে পা দিয়ে আরো হিং*স্রভাবে চেপে ধরল মৃদুলের হাতখানা। মৃদুল ব্যথায় সজোরে কুকিয়ে উঠল। ব্যথায় তার শরীর বেঁকে আসছে। ধ্রুব মৃদুলের হাতে পা রেখে মৃদুলের পাশে বসল। মৃদুলের মুখ, নাক দিয়ে গলগল করে র*ক্ত পড়ছে। ঠোঁটে, নাকের নিচে র*ক্ত জমে আছে। ধ্রুব কিছুটা র*ক্ত আঙ্গুল দিয়ে নিজের হাতে নিল। অতঃপর সেই র*ক্ত দিয়ে রাঙিয়ে দিল মৃদুলের কপাল। মৃদুল চোখ খিঁচে নিল। ধ্রুব বলল,
‘ য*ন্ত্র*ণা হচ্ছে, বন্ধু? ‘
মৃদুল এখনো ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে! বিশ্বাস করতে ভীষন কষ্ট হচ্ছে, তার এত ভালো একজন বন্ধু তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। মৃদুল কম্পিত কণ্ঠে বলল,
‘ আমি তোমায় বিশ্বাস করেছিলাম। ‘
ধ্রুব হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে একপ্রকার লুটিয়েই পড়ল মৃদুলের গায়ের উপর। মৃদুলের চোখের চাওনি ক্রমশ কাতর হচ্ছে। ধ্রুব হাসি চেপে বলল,
‘ মৃদুল, বোকা ছেলে! এত বড় হয়েছ, অথচ মানুষ চিনতে পারলে না এখনও। আমি হলাম ধ্রুব! যে কখনো কারো বিশ্বাসের যোগ্য না। তার জন্মই হয়েছে ধোঁকা দেবার জন্যে। যার জন্ম হলো এ পৃথিবীর জন্যে ক*লঙ্ক। অ*শুভ লগ্নে তার জন্ম। সে যেখানে নজর রাখে, তাই হয়ে উঠে অ*শুভ! যেদিন আমি জন্ম নিয়েছে, পুরো পৃথিবী সেদিন কেঁদেছে, বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তোমাকেও কাঁদতে হবে, মৃদুল। ধ্রুব মানেই পাহাড়সম অশ্রু। যে ধ্রুবকে ভালোবেসেছে, সে নিজ ইচ্ছায় অশ্রুকে আপন করছে। তুমি আমায় বিশ্বাস করে ভুল করেছ, মৃদুল। মহা ভুল করেছ। এখন এই ভুলের মাসুল তো গুনতে হবে তোমার। ‘
ধ্রুবর এমন হিং*স্রতা মৃদুল পূর্বে দেখেনি। ধ্রুব হাসছে, পরক্ষণেই দাঁতে দাঁত খিচে অদ্ভুত শব্দ করছে। নীরব, ঘুটঘুটে অন্ধকার রাস্তা, ধ্রুবর তৈরি শব্দে ভয়ংকর গা ছমছমে লাগছে। মৃদুল শেষবারের মত বলল,
‘ আমায় ছেড়ে দাও, ধ্রুব। আয়েশী অপেক্ষা করছে আমার জন্যে। আমি আজ না গেলে ও মরে যাবে, ধ্রুব। ‘
ধ্রুব আবার হাসল। মৃদুলের গলায় হাত রেখে আঙ্গুল দিয়ে টিপে ধরল মৃদুলের তুলতুলে গলদেশ। মৃদুল ব্যথায় চোখ খিঁচে নিল। ধ্রুব ঘাড় ফুটিয়ে শব্দ করল। বলল,
‘ আজকের পর থেকে আয়েশী শুধু আমার জন্যে অপেক্ষা করবে, আমার জন্যে মরবে, আমার জন্যে বাঁচবে। তার প্রতিটা শ্বাস জুড়ে শুধু আমি থাকবো। তার প্রতিটা দোয়া জুড়ে আমার নাম থাকবে। আমার নাম, এই ধ্রুবর নাম। কিন্তু, কিন্তু… তার জন্যে তো তোকে ম*রতে হবে। তুই না মরলে আমার সমস্ত প্ল্যান ঘেঁটে ঘ হয়ে যাবে। ”
ধ্রুব নিজের ধারালো নখ চেপে ধরল মৃদুলের গলায়। নখের আঁচড়ে মৃদুলের গলা কেটে র*ক্ত বের হলো। মৃদুল ছটফট করতে লাগল। মৃদুলের য*ন্ত্রণা দেখে ধ্রুবর সুখ সুখ অনুভব হতে লাগল। ধ্রুবর চোখে খেলা করতে লাগল হিং*স্রতার র*ক্ত। ধ্রুবর চোখের সাদা অংশ লাল টকটকে হয়ে এল। ধ্রুব পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাককে ইশারা করল। ট্রাকের ড্রাইভার ইশারা বুঝে মাথা হেলালো। ধ্রুব সরে এল মৃদুলের থেকে। মৃদুল তখন অর্ধমৃ*ত। শরীর ছেড়ে দিয়ে মাটিতে পড়ে আছে সে। হঠাৎ ট্রাকের সামনের বাতি জ্বলে উঠতে দেখে, মৃদুলের গলা শুকিয়ে এল। হামাগুড়ি দিয়ে পালিয়ে যেতে চাইল ট্রাকের সামনে থেকে। তবে তার ভাগ্য তার সহায় হলো না। ট্রাক মৃদুলের গায়ের উপর দিয়ে চলে গেল। মালবাহী ভারী ট্রাকের নিচে চা*পা পড়ে মৃদুলের গা থে*তলে গেল। মৃদুল কিছুক্ষণ গলা কাটা মুরগীর ন্যায় ছটফট করে, সেখানেই মৃ*ত্য*বরণ করল।
ধ্রুব মৃদুলের মৃ*ত দেহের দিকে চেয়ে হাসল আবার। মৃত মৃদুলকে দেখতে ভীষন সুন্দর লাগছে। ধ্রুব একটা ভেজা টিস্যু দিয়ে হাতের র*ক্তটুকু মুছে নিল। তার পাশে থাকা পোষা মানুষরুপী কুকুরকে বলল,
‘ ফোন করে প্রেমিকাকে জানিয়ে দাও, তার প্রেমিকের নিষ্ঠুর মৃ*ত্যুর কথা। এও জানিয়ে দাও, তার আরেক প্রেমিক আসছে তাকে লুট করে নিয়ে যেতে। হা হা হা! ‘
ধ্রুব পাগলের মত হাসছে! তার পাশে দাড়িয়ে থাকা সেই গোলাম হতবম্ব চোখে চেয়ে রইল, পৃথিবীর এক বিশুদ্ধ ভালোবাসার মানুষের থেতলে যাওয়া ম*র*ণদেহের পানে!
__________________________________
বিয়ে বাড়ির ঝমকালো আয়োজনে ক্রমশ ভাটা পড়ছে। বিয়ে হবে না ভেবে একে একে আত্মীয়রা চলে যাচ্ছে। কিছু সংখ্যক আত্মীয়রা এখনো রয়ে গেছে। তবে তারা ব্যস্ত একে অপরের সাথে কানাঘুষা করতে। বিয়েতে বর আসে নি, কি যে লজ্জার কথা! মেয়ের দোষ আছে বোধহয়! মেয়ের চরিত্রে কি দোষ আছে? হবে হয়তো। আজকালের মেয়ে বাবা। দেখো গিয়ে কোথায় কোন নাগরের সাথে ফষ্টিনষ্টি করেছে। বিয়ের দিন বর জানতে পেরে গেছে মেয়ের লুতুপুতুর কথা, তাই বিয়েতেই আসেনি। হায় আল্লাহ! এখন এই মেয়ের কি হবে? কে বিয়ে করবে এই কলঙ্কিনী মেয়েকে?
আশপাশের মানুষজনের এসব কানাঘুষা সবই কানে আসছে আয়েশীর। তবুও আয়েশী চুপ করে বসে আছে চেয়ারে। কারো কথার উপর টু শব্দটি অব্দি করছে না। করবে কেন? সে জানে, মৃদুল আসবে। মৃদুল তাকে কথা দিয়েছে। মৃদুল কখনো তার কথার খেলাপ করবে না। আয়েশী জানে, তার মৃদুল আসবে, আসবে মৃদুল।
বড্ড ক্লান্ত লাগছে আয়েশীর। ব্রাইডাল মেকআপ নষ্ট হয়েছে কবেই। গরমে মেকআপ গলে বিচ্ছিরি লাগছে দেখতে তাকে। অনেকেই আয়েশীর মুখ দেখে মুখ টিপে হাসছে। অথচ আফসোস, কেউ আয়েশীর মনের মধ্যে বয়ে যাওয়া এক সর্বগ্রাসী তুফানকে বুঝতে পারল না।
আয়েশীর ভাই, তুষার আয়েশীর পাশে এসে দাঁড়াল। আয়েশী তখন মৃদুলের অপেক্ষায় সদর দরজার দিকে চেয়ে। তুষার দরজার থেকে তাকাল। কেউ নেই সেখানে। আর কেউ আসবেও না। তুষার আয়েশীর কাঁধে হাত রাখল। আয়েশীর চোখ বেয়ে টপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। তুষার বলল
‘ আয়েশী, বোন আমার। ঘরে চল। আর কতক্ষণ এভাবে অপেক্ষা করবি? মৃদুল আসার হলে এতক্ষণে এসে যেত। ‘
আয়েশী দুহাতে চোখ মুছলো। পরক্ষণেই আবার ভিজে উঠল কাজল নষ্ট হওয়া তার দু চোখ। আয়েশী কম্পিত কণ্ঠে বলল,
‘ সে আসবে, ভাই। আমি জানি সে আসবে। ‘
তুষার দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সে জানে, তার বোন পাগলের মত মৃদুলকে ভালোবাসে। তুষার গেল না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল বোনের পাশে। আয়েশী একটু পর গলা নামিয়ে বলল,
‘ ভাই, একটু প-পানি খাওয়াবি? গ-গলাটা খ-খুব জ্বলছে। ‘
আয়েশীর কণ্ঠে কান্নার স্রোত। অনেক কষ্টে মেয়েটা কান্না চেপে রেখেছে। পানির কথা বলতে বলতেও আয়েশী চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। বোনের এমন করুন অবস্থা দেখে তুষারের কান্না পেয়ে যাচ্ছে। তুষার আর দাঁড়ালো না সেখানে। বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে চুপচাপ পানি আনতে চলে গেল। তুষার চলে গেলে, আয়েশী আবারও চোখ রাখল সদর দরজার দিকে। মৃদুল এখনও আসছে না কেন?
#চলবে