মেঘদিঘির পাড়ে – ২৩,২৪

0
506

মেঘদিঘির পাড়ে – ২৩,২৪
মালিহা খান
পার্ট-২৩

গ্রামের মেঠোপথে শহরের ন্যায় সোডিয়াম বাতির সারি বেজায় দূষ্প্রাপ্য বস্তু। চিকচিকে চাঁদের আলোই পথ দেখানোর একমাত্র ভরসা। গাড়িটা যেখানে থামানো হয়েছে সেই রাস্তাটা একেবারেই জনমানবশূন্য, ভুতুড়ে ভুতুড়ে ঠেকছে। অদূরবর্তী শতাব্দী পুরনো গাছগুলো অন্যরকম ত্রাস ঢেলে দিয়েছে।
বিভা হুড়মুড় করে দরজার পাশ থেকে চেপে গেলো, মুখ ফিরিয়ে কপট জোর দেখিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

-“কিসব বলছেন? ভেতরে আসুন।”

ইউসুফের কন্ঠে ভাবান্তর ঠাঁই পেলোনা। সে পূর্বের স্বরেই বললো,”আমি তোমাকে বেরোতে বলেছি বিভা, জেদ করবেনা এখন।”

বিভা ফিরে তাকালো। নি:সাড় হয়ে ইউসুফের চোখ পড়ার চেষ্টা করলো। অন্ধকারে চেনা অক্ষরগুলো দৃষ্টিগোচর হলোনা। অথবা, হতে পারে সেখানে কোনো চেনা অক্ষরের অস্তিত্বই ছিলোনা। তৃষ্ণার্থ প্রনয়ীর কল্পনাতীত কোনো ভাষা-ই হয়তো ঘোরাফেরা করছিলো তম্রসায় লুকায়িত সেই অন্তর্ভেদী দৃষ্টিযুগলে।

চাঁদের আলোর বিপরীতে দাড়িয়ে থাকা বিশালদেহী পুরুষটার দিকে তাকিয়ে মুখের উপরের চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিলো বিভা। কাঁচুমাচু হয়ে বললো,”পায়ে ব্যাথা করছে, আমি বেরোবোনা।”

বিভার দু’হাতে চারমুঠ কালো কাঁচের চুড়ি। মেলা থেকে কিনেছে। চুল সরাতে গিয়ে রিনঝিন শব্দ তুলল। ইউসুফ ঝুঁকে বললো,
-“সারা মেলায় তোমার পা ব্যাথা করলোনা, এখন করছে? আবার আমাকে বিশ্বাসও করতে বলছো?” এটুকু বলে থামলো ইউসুফ। অত:পর বিভার হাত টেনে ধরে সোজা দাড়িয়ে নির্বিকার গলায় বললো,

-“দরকার পড়লে বাকিটা পথ আমি তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাব, তবু বেরোতে হবে। এসো।”

বিভা গোবেচারার মতোন চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। চোখ পিটপিট করলো। সামনের ব্যাক্তিটা সত্যিই ইউসুফ নাকি তা নিশ্চিত হবার জন্য ঘাড় ঘুরিয়ে ড্রাইভিং সিটেও চোখ বুলিয়ে নিলো।
এরপর নিশব্দে পা রাখলো গাড়ির বাইরে। কনকনে ঠান্ডায় জমে আসা গলায় বললো,”কি হয়েছে বলবেনতো?”

গাড়ির দরজা আটকে হাতে থাকা চাবি পকেটে ঢুকিয়ে নিলো ইউসুফ। হাতের বাঁধন মজবুত করে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করতেই আশ্চর্যের শিঁখরে পৌছে গেলো বিভা। হাত ঝাঁকিয়ে বললো,

-“কই যাচ্ছেন?”

এতক্ষণে যেনো দৃড়তা ঝড়ে পড়ল কন্ঠ থেকে। নিষ্প্রভ হয়ে পড়লো গাঢ় দীর্ঘশ্বাসে,

-,”কোথাও না, হাঁটবো। হুঁশ!।”

খসখসে জুতোর শব্দ ধীরগতিতে পথ এগোলো। শতাব্দী পুরনো গাছ আর একটি নির্বাক রুপালি চাঁদ নিরবে দেখে গেলো তাদের। আর কেউ দেখলোনা। কেউ না।

ঘড়ির কাঁটা বারোটা পেরোতেই ফোন বাজলো ইউসুফের। পদচারণ একমূহুর্ত থামলো। পকেট থেকে ফোন বের করে আবার চলতে শুরু করলো। বিভা ইউসুফের পাশ ঘেঁষেই হাঁটছিলো, বোধ হচ্ছিলো এই বুঝি শিয়ালের দল পাশের ঝোঁপ থেকে হামলে পড়বে তারউপর। ফোনের স্ক্রিন সহজেই নজরে পড়লো। সরফরাজ ভাইজান ফোন করেছে। বিভা কিছু বলবে তার আগেই ফোন তুলে কানে লাগালো ইউসুফ। দাড়িয়ে গিয়ে পরিষ্কার গলায় বললো,”হ্যাঁ বল..।”

চারিদিকে নিস্তব্ধতার স্বরুপ ওপাশের কথাগুলো শোনা গেলো বেশ সহজে। বিভা কান খাড়া করলো।

-“সব ঠিক আছে? এখন কোথায় তোরা?”

-“উওরপাড়ার রাস্তা ভেঙে গেছে। অন্যপথে আসছি। দেরি হবে একটু।”

বিভার ভ্রু কুঁচকে গেলো। অন্যপথে আসছে? কই তাকে তো বললোনা।
সরফরাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধাতস্থ হয়ে বললো,
-“ওহ আচ্ছা! সাবধানে আসিস। বিভা কোথায়? মাথা ঠান্ডা হয়েছে ওর? দে দেখি।”

ইউসুফ একপলক বিভার দিকে তাকালো। ভাইয়ের সাথে কথা বলার জন্য ‘দিন’ বলতেই নিচ্ছিলো বিভা। ইউসুফ আচমকা হাত ছেড়ে মুখ চেপে ধরায় আর শব্দ বের করা গেলোনা। বিভা বিস্ফোরিত চোখে তাকালো।

ইউসুফ পলকে কন্ঠ চিন্তিত করে ফেললো। বললো,

-“ও তো ঘুমিয়ে পড়েছে।….আচ্ছা ডেকে দেই..একমিনিট।”

সরফরাজ সাথে সাথেই থামিয়ে দিলো তাকে। তারপর আর কথা হলোনা বেশিক্ষণ। ইউসুফকে সাবধানে গাড়ি চালাতে বলে ফোন রেখে দিলো সরফরাজ। ইউসুফ কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গিমায় ফোনটা পকেটে ঢোকালো। তারপর বিভার মুখ ছেড়ে দিলো।
কিৎকর্তব্যবিমূঢ় বিভা চরম উত্তেজিত, আশ্চার্যন্বিত হয়ে হতবাক কন্ঠে বললো,

-“মিথ্যে বললেন কেনো?”

-“আসার জন্য তো পাগল হয়ে গিয়েছিলে, এখন যাবার জন্য পাগল হচ্ছো কেনো?”

৪৫.
ইভার ঘুম আসছেনা। ছোট্ট বাহাদুরের হাত সরিয়ে সে অস্থির চিত্তে উঠে বসলো। বিছানা ছেড়ে একচোট বারান্দায় গেলো। ঠান্ডায় টি কতে না পেরে আবার হুড়মুড়িয়ে ঘরে ফিরে এলো। বাহাদুর গা থেকে লেপ সরিয়ে ফেলেছে। ইভা তাড়াতাড়ি যেয়ে লেপ টেনে দেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খায়।
বাহাদুর তার আপন ভাই না। তাদের ছোটচাচার ছেলে। একদম ছোটচাচার। ইকবাল চাচার পরেরজন।
কিন্তু চাচা চাচী কেউই বেঁচে নেই। শুনেছিলো ট্রলারডুবিতে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। তারা এ বাড়িতে থাকতেন না। শহরে থাকতেন হয়তো। ইভা খুব একটা জানেনা, কিন্তু জন্মের পর থেকে সে কখনো চাচা চাচীকে দেখেনি। বছর পাঁচেক আগে ছোট্ট বাহাদুরকে যখন আনা হলো তখনই প্রথম জানলো তাদের আরো এক চাচা আছে। বাহাদুর তখন হাঁটতেও পারতোনা ঠিক করে। তাকে হাঁটা শেখানো, কথা শেখানো। সবই ইভার হাতে। ইভা নিজেও তখন ছোট।মাত্র বারো বছর বয়স ছিলো। তখন থেকেই বাহাদুর তার সাথে। বাচ্চাটাকে সে এতো ভালোবাসে। তাকে ছাড়া থাকবার কথা ভাবনাতেও আসেনা।
ইভা স্মিত হাসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আবারো চুমু খেলো বাহাদুরের মাথায়।

৪৬.
সামনে মৃদু আলো জ্বলছে। সচেতন চোখে একটু ভালোকরে নজর দিতেই বোঝা গেলো একটা বন্ধপ্রায় চায়ের দোকান। সামনের খদ্দের বসার কাঠের বেন্চিটা ফাঁকা পড়ে আছে। শীতের রাতে যদিও টং দোকানে ভীড় থাকে কিন্তু এখন একটু বেশিই রাত হয়ে গেছে।। অল্প ওয়াটের বাতিটা দোকানের আশপাশের চার সীমাতে বন্দি। দোকানটা এখনো খোলা।
বিভা থমকে দাড়ালো। যদিও সে জায়গাটা চিনতে পারছেনা তবু তাদের গ্রামেরই তো। দোকানী নিশ্চয়ই ইউসুফকে চিনবে। সঙ্গে তাকে দেখলে ব্যাপারটা খুব খারাপ হয়ে যাবে।
ফিরে যাবার কথা বলার আগেই পাশ থেকে ইউসুফ নিচু গলায় প্রশ্ন করলো,

-“দাড়ালে যে? চা খাবে?”

-“পাগল হয়েছেন?”বিভা আবারো অবাক।

-“পাগল হবার মতো কিছু বললাম নাকি?…এসো, চা খাবো। ঠান্ডা পড়েছে খুব।”ইউসুফ নির্বিকার।

উদ্ভ্রান্ত বিভাকে সঙ্গে নিয়ে টং দোকানের দিকে এগোলো ইউসুফ। দোকানী ছেলেটাকে এককাপ দুধ চা আর এককাপ রঙ চা দিতে বলে আয়েশ করে কাঠের বেন্চিটায় বসে পড়লো। বিভাকে উদ্দেশ্য করে বললো,”দাড়িয়ে আছো কেনো? বসো। তোমার না পায়ে ব্যাথা?”

বিভা ধপ করে বসলো। ছেলেটা কাপে টুংটাং চামচ ঘোরাচ্ছে। এদিকে তাকাচ্ছেনা তেমন। বিভা সন্দেহের চোখে এদিক ওদিক তাকালো। স্বর নামিয়ে থমথমে গলায় বললো,”এটা ঠিক কোথায় বলুনতো? আমাদের গ্রাম না, তাইনা?”

ইউসুফ চাপা হাসলো। তার হাসিতেই উওর বুঝে গেলো বিভা। ভীষণ চিন্তিত হয়ে বললো,”আপনি বাসায় ফিরবেন কখন? কত রাত হয়েছে। হায় আল্লাহ!”

দোকানী ছেলেটা এগিয়ে আসাতে কথা শেষ না করে চুপ করে গেলো বিভা। ছেলেটা ইউসুফকে চা দিয়ে তার চা টা এগিয়ে দিলো। বিনীত গলায় বললো,

-“ভাবী আপনেরটা।”

বিভা শুকনো ঢোঁক গিললো দু’বার। ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে খুব চেনা অথচ প্রচন্ড অচেনা মানুষটার দিকে বিভ্রান্ত হয়ে চেয়ে রইলো।

চলবে

মেঘদিঘির পাড়ে – ২৪
মালিহা খান

দোকানী ছেলেটার সাথে টুকটাক কথা বলছে ইউসুফ। বিভা নির্বাক শ্রোতার ভূমিকায়। সে চুপচাপ মাটির দিকে চেয়ে চা খাচ্ছে। চোখজোড়া চিন্তিত, ভ্রান্তিতে ভরপুর। তার কিছুতেই ভালো লাগছেনা। অধৈর্য, ছটফটে লাগছে। মন স্হির করতে পারছেনা। কি হচ্ছে এসব? কেনো হচ্ছে? কেনো প্রত্যাশিত পুরুষের নিবিড় সঙ্গ তাকে স্বস্তি দিতে পারছেনা?
বিভা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মুখ তুলে বললো,”দোকান বন্ধ হবে কখন?”

দোকানী ছেলেটা একবার ইউসুফের দিকে তাকালো। তারপর একফালি হেসে উওর দিলো,”এইতো এহনই বন্ধ হইয়া যাইবো ভাবি। আপনাগো হইলেই বাত্তি নিভাইয়া দিমু। আবার খুলুম ভোরের দিকে। মাইনষে মসজিদে যায় তো। ওইকালে আবার ভালো কাস্টমার পাওন যায়।”

বিভা মাথা দোলালো। গলার স্বর নামিয়ে ইউসুফকে বললো,

-“যাবেন না? রাত হয়েছে।”

ইউসুফ উওর দিলোনা। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করতে করতে ইশারায় দোকানী ছেলেটাকে কাছে ডাকলো। সে আসলে নির্ধারিত মূল্যর খানিক বেশি এগিয়ে দিতেই বেচারা স্বলজ্জ হাসলো। নিতে চাইলোনা। ইউসুফ নম্রকন্ঠে বললো,
-“তোমার রাখতেই হবে। এই দু’কাপ চা আমার জন্য খুব বিশেষ।”

বিভার কানদুটো ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো। সে কোনোভাবেই হজম করতে পারছেনা। ইউসুফ কেনো এমন ব্যবহার করছে? কেনো তার নির্লিপ্ততায় আজ রাজ্যসম ভঙ্গুর ধরলো? বিভা উওর খুঁজে পেলোনা। প্রশ্ন করতে মন টানলোনা।
ইউসুফ আস্তে করে হাত ধরতেই সম্ভিৎ ফিরলো। একপলক চোখে চোখ পড়লো। চোখ নামিয়ে ধীরগতিতে সেই আদেশে পা মেলালো বিভা।

ইউসুফের হাতটা অসম্ভব ঠান্ডা। নরম চাঁদের মোহনিয়া আলোয় তার সুন্দর মুখখানার দিকেই বুঁদ হয়ে চেয়েছিলো বিভা। তার চোখে অদ্ভুত অপারগতা। বেহায়া চোখ কিছুতেই নামছেনা। আচমকা সে হোঁচট খেলো। মুখ থুবড়ে পড়ে যাবার আগেই হাত টেনে সামলিয়ে দিলো ইউসুফ। ফিচেল গলায় বললো,”রাস্তা দেখে হাঁটো বিভা। অন্যকিছু পড়েও দেখা যাবে।”

ঝুমঝুমে মেয়েলি মনে হয়তো তীব্র ঠান্ডাও ততোটা কাবু করতে পারেনি যতটা কাবু করলো এই অতিসামান্য ছোট্ট বাক্যযুগল। বিভা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজালো। মিনমিন করে বললো,

-“আমি রাস্তা দেখেই হাঁটছি। অন্যকিছু না।”

-“তাই নাকি? ভালোতো!”তার কন্ঠে স্পষ্ট বিদ্রুপ।

বিভা উশখুশ করলো কিছুক্ষণ। তারপর না পেরে ডেকে উঠলো,

-“শোনেন?”

অসহ্য অধৈর্য কন্ঠটা রাস্তার নিস্তব্ধতা ফুঁড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করলো। প্রতিধ্বনির মতোন বেজে উঠলো। ইউসুফ নরম গলায় উওর দিলো,”বলো?”

-“আপনি ঠিক আছেন তো?”

ইউসুফ হাসলো, উওর দিলো,”তোমার কি মনে হয়?”

-“নেই। আপনি ঠিক নেই নিশ্চিত।”

-“আছি। আমি ঠিক আছি।”

বিভা থমকালো। শক্ত হাতের বাঁধন কি আরো একটু শক্ত হয়ে উঠলো? যত শক্ত হলে তাতে আর ভাঙন ধরানো যায়না?

৪৭.
তন্দ্রার ঘুম ভেঙে গেছে। সে উঠে বসে আছে। চাতক পাখির মতো আধো অন্ধকার ঘরটায় চোখ বুলাচ্ছে। সরফরাজ গভীর ঘুম। তন্দ্রা উঠে বসেছে সে টের পায়নি। পেলে এতক্ষণে তন্দ্রাকে ঘুমিয়ে পড়তে হতো। যেভাবেই হোক তাকে ঘুম পাড়ানো হতো। তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাতভর পায়চারি করা হতো।
তন্দ্রা হাই তুললো। ঘাড় ফিরিয়ে সরফরাজের কাছে ঝুঁকে গেলো। মুখটায় দুশ্চিন্তায় ছাপ ফুটে উঠেছে। ইভার বিয়ে নিয়ে হাজারখানেক ভাবনায় ডুবে থাকে। প্রকাশ করেনা, কিন্তু সে বুঝতে পারে। এই এখানে যাচ্ছে, ওখানে যাচ্ছে। কোনোকিছুতে একটু ক্রুটি রাখা চলবেনা তার।
তন্দ্রা পেলব হাত দিয়ে আলতো করে সরফরাজের চুল নেড়ে দিলো। সরফরাজ একটু নড়েচড়ে আয়েশ করে ঘুমালো। খুব ক্লান্ত বোঝা যাচ্ছে। তন্দ্রা তাকে আর বিরক্ত করলোনা। আস্তে আস্তে বিছানা ছাড়লো। গুঁটি গুঁটি পায়ে দরজার ছিঁটকিনি নামালো। তারপর বেরিয়ে পড়লো। বারান্দার মৃদু আলো জ্বালানো। কিছুক্ষণ একা একা দাড়িয়ে থেকে ইভার ঘরের কাছে যেয়ে দাড়ালো তন্দ্রা। দরজাটা একটু ফাঁক করলো। ইভা, বাহাদুরকে ঘুমে বিভোর দেখে মুচকি হাসলো। দরজা ভিড়িয়ে দিলো আবার। একটু সামনে এগোতেই বিভার ঘর পড়লো।
বিভা দরজা আটকে ঘুমায়, তবু কি ভেবে যেনো আলতো ধাক্কা দিলো তন্দ্রা। তাকে অবাক করে দিয়ে দরজা খুলে গেলো। চাঁদের আলো আসা খালি বিছানাটার দিকে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইলো তন্দ্রা। ওরা এখনো ফিরেনি?

৪৮.
খোলা চুলগুলো বাঁধা দরকার। খুব যন্ত্রনা করছে। আস্তে করে ইউসুফের হাত ছাড়িয়ে দু’হাতে আলগোছে চুলগুলো মুঠো বন্দি করলো বিভা। কাঁচের চুড়ি রিনঝিন করে বেজে উঠলো। সাথে সাথেই ইউসুফ ঘাড় ফিরিয়ে প্রায় ধমকে উঠে বললো,

-“চুল বাঁধছো কেনো?”

বিভা হতচকিত হলো। দু’সেকেন্ড ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থেকে বোকার মতো হাত নামিয়ে ফেললো। বিরবির করে বললো,”না, বাঁধছিনা।”

তারপর আবার সব চুপচাপ।
একলা চাঁদের আলো, কনকনে ঠান্ডা আর ঘন্টা তিনেক ধরে গলায় আটকে থাকা অস্বস্তি উপেক্ষা করে
খুব ধীরগলায় ইউসুফ ডেকে উঠলো,”বিভা?

-“হু?”অন্যমনস্ক উওর।

-“আমি তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসি বিভা। ঠিক ততটাই ভালোবাসি যতটা ভালোবাসলে আর ভালোবাসা যায়না।”

বিভা একবার চমকে তাকালো। ইউসুফ সামনের দিকে তাকিয়ে আছে বিধায় দৃষ্টি বিনিময় হবার সুযোগ হলোনা। অনেকক্ষণ পর্যন্ত কোনো প্রত্যুওরও পাওয়া গেলোনা। তবে একটু সময় যেতে না যেতেই একটা ভীষণ সুখী মেয়েলি কন্ঠ হু হু করে ফুঁপিয়ে উঠলো। তপ্ত জল গড়িয়ে পড়লো তার হিমশীতল ঠান্ডা গাল বেয়ে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here