মেঘদিঘির পাড়ে – ২৮,২৯
মালিহা খান
পার্ট-২৮
৫৬.
দিনান্তের কান্তিমান নীলাকাশ। দিগন্ত অন্ধকার হয়েছে। হাতভর্তি মেহেদি নিয়েই ঘুমের খাতায় নাম লিখিয়েছে ইভা। বালিশে অবিন্যস্ত ভঙ্গিতে হেলিয়ে আছে তার মাথা। শক্ত খোঁপাটা এখনো খুলেনি। বাহাদুর দুরন্ত বেগে ঘরে ঢুকেই আচমকা পা টেনে গতি থামিয়ে দিলো। দক্ষিনের জানালা খোলা। ঠান্ডায় ইভার চেহারা লাল হয়ে গেছে। বাহাদুর পা টিপে টিপে যেয়ে জানলার কাছে দাড়ালো। আবছা কুহেলিকার দলকে মনে মনে ধমকে দিয়ে জানলা আটকে পর্দা টেনে দিলো। তারপর খাটের কাছে যেয়ে নিজের ছোট্ট হাতদুটো দিয়ে বহুকষ্টে প্রানপ্রিয় বুবুর মাথাটা সোজা করে একনজর হাসলো। বুবুটা অবিকল পুতুলের মতো। ঘুমিয়ে থাকলে বোঝাই যায়না এটা একটা কথা বলা জলজ্যান্ত মানুষ।
বাহাদুর আঙুলের ডগা দিয়ে ইভার আঁখিপল্লব ছুঁয়ে দিলো। ইভা পিটপিট করে চোখ কাঁপাতেই দূর্দান্ত হাসির ঝলক খেলে গেলো বাহাদুরের ঠোঁটজুড়ে।
বদ্ধ ঘরে কোমল নারীহৃদয়ের অবাধ অশ্রুঝড়ানোর তরঙ্গ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। তন্দ্রা মুখ হা করে শ্বাস নিলো। চোখ বুজতেই বুঝলো পাপড়ি ভিজে গেছে। কোনরকমে বিভাকে ছাড়িয়ে দু’হাতের আজলায় কৃষ্ণ নত মুখখানি তুলে ধরলো সে। কি অসহনীয়া যন্ত্রনা চোখদুটোতে। কাওকে মুখ ফুটে বলতেও পারেনি মেয়েটা। তন্দ্রা টেবিল থেকে পানির গ্লাস তুলে নিলো। হাত দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো,”হুঁশ! আর কাঁদেনা। দেখি…একটু পানি খা তো। দম নিতে পারছিস না সোনা।”
বিভাকে কান্না থামানোর চেষ্টা করলো। পানি খেতে গেলে ঠি কমতো খেতেও পারলোনা। কান্নার দমকে পড়ে পড়ে গেলো। তন্দ্রা জোর করলোনা। পানির গ্লাসটা নামিয়ে শাড়ির আঁচলে মুখ মুছিয়ে দিলো। আহ্লাদি গলায় বললো,”আর কাঁদবিনা। কেমন? তোর ভাইজান…।”
তন্দ্রার কথা ফুরালোনা। বিভার মনে ঘটা করে ভয়ের সন্ধ্যা নামলো। দ্রুতবেগে তন্দ্রার হাতদুটো মুঠোয় টেনে বললো,
-“ভাবি, ভাবি দোহাই লাগে তুমি ভাইজানকে কিছু বলবেনা ভাবি। আজ বাদে কাল ইভার বিয়ে। মানুষটা ছোট হয়ে যাবে সবার চোখে। বাড়িতে অশান্তি লেগে যাবে ভাবি..”
তন্দ্রা বুঝলো অবুঝ মেয়েটার ভয়। ঠোঁটের আগায় এক চিলতে নিষ্প্রভ হাসি এনে ধ্রুব কন্ঠে বললো,
-“তোর ভাই তোকে কত ভালোবাসে তুই এখনো জানিসনা সোনা। আন্দজেও নেই তোর। বোন কষ্ট পাচ্ছে শুনলে জানপ্রাণ এক করে দিবে মানুষটা। তাকে আমি চিনি।”
বিভা নি:সহায় চোখে চেয়ে রইলো। সত্যিই কি ভাইজান কিছু করবে? বলেই দেখুক না একবার ভাবি। ভাইজান ভাবিকে খুব ভালোবাসেন। সে বললে কি একটাবার শুনবেনা?
বিগত ঘন্টাখানেক যাবত তৃষিত হৃদয়ের সমস্ত অভিযোগ নিংড়ে দিয়েছে বিভা। অষ্টাদশী মন তার। আবেগ গোছাতে অপারগ। শক্ত মানুষটার কড়া শাসনের বারণ-নিষেধ মানেনি। মানুষটা কি রাগ করবে?
দরজায় ছিটকিনি দেয়া। তন্দ্রা ঘড়ির দিকে চাইলো। অনেকক্ষণ হয়েছে সে এখানে। সরফরাজ কি কাজে বাইরে গিয়েছিল দুপুরে। এতক্ষণে ফিরে আসার কথা। ফিরেই তার খোঁজ করবে। তন্দ্রা চোখ ফেরালো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঠকঠক শব্দ কর্ণগোচর হলো। গম্ভীর পুরুষ কন্ঠটা ধীর গলায় বললো,
-“বিভা? তোর ভাবি কোথায়? তোর ঘরে?”
বিভাকে আতঙ্কিত দেখালো।,দ্রুত চোখ মুছে নিতে নিতে ভীত অস্ফুটস্বরে বললো,”ভাবি..ভাইজান।”
তন্দ্রার মধ্য বিশেষ কোনো পরিবর্তন দোখা গেলোনা। সে আলগোছে গলা উঁচিয়ে বললো,
-“আমি এখানেই। আপনি যান। আমি আসছি।”
সরফরাজের কন্ঠ শোনা গেলোনা আর। জুতোর শব্দ মিলিয়ে গেলো।
৫৮.
সরফরাজ আলমারি বন্ধ করলো। তন্দ্রা ঘরে ঢুকেছে। ঘরে ঢুকে সে সরফরাজের দিকে তাকালোনা। বিছানায় যেয়ে বসলো। তলপেটে চিনচিন করছে। সরু একটা ব্যাথা। কেনো হচ্ছে?
সে চোখ বুজলো। চোখের উপরের ভাঁজ কিঞ্চিৎ গাঢ় হয়ে উঠছে। একটা ঠান্ডা হাত তার গাল ছুঁলো। কপাল ছুঁলো। হাতের অধিকারী হাঁটুগেড়ে বসে গেলো। চিন্তিত হয়ে বললো,
-“কি হয়েছে তনু? খারাপ লাগে?”
তন্দ্রা চোখ মেলে। সরফরাজের চোখে চেয়ে মৃদু হেসে বলে,
-“উঁহু, একটু ব্যাথা হচ্ছিল।”
-“কেনো?”
তন্দ্রা হেসে ফেললো। সামনে ঝুঁকে সরফরাজের কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,”আমি কি করে বলবো? আপনার মেয়ে জানে।”
সরফরাজের একদৃষ্টে কতক্ষণ চেয়ে থেকে চোখ নামালো। একান্ত স্হানে ছোট্ট আদর এঁকে দিয়ে উঠে দাড়ালো। সরে যেতে নিলেই খপ করে তার কবজি টেনে ধরলো তন্দ্রা। ছেলেমানুষী ছাপিয়ে গম্ভীর হয়ে উঠলো তার কন্ঠ।
-“সরফরাজ, আমি কিছু কথা বলবো।”
সরফরাজ কপাল কুঁচকালো। তন্দ্রার স্হির দৃষ্টি তাকে অস্হির করলো।
-“বলো তন্দ্রাবতী, নির্ভয়ে বলো। তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?”
৫৯.
ইভা নড়েচড়ে উঠলো। পিটপিট করে তাকাতেই চোখে আলো লাগলো। ঘরের আলো নিভানো হয়নি। পাশ তাকাতেই বাহাদুরকে নজরে এলো। তার দিকে চেয়ে আছে। ইভা হেসে বললো,”কি হয়েছে? কি দেখিস?”
বাহাদুর হাসলো। হাসি থামিয়ে আলতো স্বরে বললো,
-“বুবু তুমি শহরে চলে যাবে?”
ইভা উঠে বসলো। হাতের মেহেদি শুকিয়ে খরখরে হয়ে গেছে। তার হাত ফর্সা। মেহেদীতে কোনোদিন রং আসেনা। কমলা হয়ে থাকে। হাহ্।
ইভা বাহাদুরের ঝাঁকড়া চুল এলোমেলো করে বললো,
-“সে তো পরে যাবো। অনেক সময় বাকি।”
-“কত পরে বুবু?”বাহাদুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। ইভা তার শুভ্রখানি নিষ্পাপ মুখটায় নিদারুন
উদাসীনতা দেখতে পেলো। কপালের চুল হাতিয়ে দিতে দিতে বললো,
-“তোর মন খারাপ? আমি গেলে তোকেও নিয়ে যাব বাচ্চা। কেমন?”
-“সত্যি বলছো?”
-“পুরোপুরি।”
৬০.
বিভা সবে জানলাটা খুলেছে। বদ্ধ ঘরের বাতাবায়নে দমবন্ধ লাগছিলো। ঠান্ডা বাতাস গা ছুঁতে আরাম লাগলো। মনটা হাল্কা অনুভব হচ্ছে।
দরজায় আঙুলের টোকায় ধ্যান ভাঙলো। জানলা আটকে ঘরে অন্ধকার ঘরে আলো জ্বালালো সে। আয়নায় নিজেকে দেখে নিলো। ঠান্ডা পানি দেয়ায় চোখের ফোলা কমেছে কিছুটা৷
দরজা খুলেই সরফরাজের সাথে চোখাচোখি হলো। বিভা হকচকিয়ে গেলো। অদ্ভুত লজ্জায় গলা শুকনো হলো। চোখ নামিয়ে মৃদুস্বরে বললো,”ভাইজান..”
সরফরাজ উওর দিলোনা। ভেতরে ঢুকতে দেবার ইশারা করলো। বিভা গুটিগুটি পায়ে সরে দাড়ালো।
নিজেকে কেমন ছোট ছোট লাগলো। একবার চোখ তুলে ভাইয়ের থমথমে মুখ দেখে আবার মাথা নোয়ালো সে।
-“ভাইজান আমি..”
সরফরাজ তাকে কথা বলার সুযোগ দিলোনা। হাত বাড়িয়ে বুকে টেনে নিলো। থমথমে চোখ নরম হয়ে এলো। বিন্দুমাত্র কাঠিন্যেতা ঠাঁই পেলোনা কন্ঠে। বোনের উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুঁড়লো,
-“তোকে আমি ঠিক কতটা আদর করি তোর ধারণা আছে?”
-“ভাইজান!”বিভার কন্ঠ অতিব করুণ।
-“উওর দে।”
-“আব্বা মানবেননা ভাইজান। আব্বা মানবেননা।”বিভার স্বর ভেঙে এলো। সরফরাজ মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
-“তুই মানলেই হলো।”
৬১.
রাত গাঢ়। বিয়ে বাড়ির আলো নিভানো। ইউসুফের নির্দেশেই নিভিয়ে দেয়া হয়েছে। চমৎকার জোৎস্না উঠেছে। কৃত্রিম আলো বেমানান ঠেকছিলো। সে আজও দাড়িয়ে আছে বারান্দায়। বিভার ঘরের দরজা আটকানো। ভেতর থেকে কোনোরুপ সারাশব্দ আসছেনা। আজ আর কৃষ্ণকন্যার দেখা মিলবেনা। সারাদিনও মিলেনি। মেয়েটা চোখের দেখাও দেয়না।
সে বেশ মগ্ন ছিলো। সরফরাজ কখন পাশে এসে দাড়িয়েছে টের পায়নি। বুঝতেই চমকে তাকালো। সরফরাজ রেলিংয়ে হাত রেখে ধীরকন্ঠে বললো,”একা একা দাড়িয়ে আছিস যে?”
ইউসুফ গলা ঝেড়ে উওর দিলো,”না এমনিই, তুই জেগে আছিস কেনো? ভাবির শরীর খারাপ?”
-উঁহুম, তন্দ্রা ঠিক আছে।”বলে থামলো সরফরাজ। হাত উঠিয়ে ইউসুফের কাঁধে রেখে ভনিতা ছাড়াই বললো,
-“আমার বোনকে এতটা কষ্টে রাখার অধিকার তোকে আমি দেইনি ইউসুফ।”
ইউসুফ তাকালো। খানিকটা ভড়কালো। মেয়েটাকে এতো সাবধান করলো, তবু সব বলে দিয়েছে?
খুব সাবধানে নিজের অভিব্যক্তি লুকিয়ে নিয়ে চোখ ফেরালো সে। সামনের দিকে চেয়ে শক্ত কন্ঠে বললো,
-“তোর বোনকে আমি কষ্টে রাখিনি। সে নিজেই যেয়ে কষ্টের নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে। দেয়ার আগে আমার হাতটাও শক্ত করে ধরে নিয়েছে।”
চলবে
মেঘদিঘির পাড়ে – ২৯
মালিহা খান
সরফরাজ রুপালি চাঁদের দিকে চেয়ে মৃদু হাসলো। ইউসুফ চোখ বুজেছে। বিভার কন্ঠটা কানে বাজছে বারংবার। হঠাৎ নিষ্প্রাণ হওয়া রমণী যেনো এখনো হিমঠান্ডা বুকে মাথা রেখে বিরবির করে বলছে,”বিশ্বাস করেন, আপনাকে আমি বেশি ভালোবাসি। আমার মতো করে আপনি কখনো ভালোবাসতে পারবেন না। কোনোদিন পারবেননা। কক্ষনো না।” সত্যিই তো বলে আধপাগলটা। নিশ্চিত সত্যি!
-“বিয়ে কবে করবি সেটা বল।”
ইউসুফের চোখ খুলে যায়। নীরসনয়নে সরফরাজের দিকে তাকায়। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
-“বোনের সাথে সাথে তোর মাথাও গিয়েছে?”
-“আমার বোনের মাথা গিয়েছে তোকে কে বললো?”
ইউসুফ মুখ ফিরিয়ে নেয়। দীর্ঘশ্বাস টানে। শ্বাস ফেলে আবার তাকায়। মৃতপ্রায় গলায় বলে,
-“তুই জানিসনা চাচা-চাচীর কথা? তাও ওকে প্রশ্রয় দিচ্ছিস কেনো সরফরাজ? ও বুঝেনা, ছোট। তোর বুঝ নেই?”
সরফরাজ নির্বিকার গলায় বলে,
-“অত অতীত ঘেঁটে আমার লাভ নেই। বিভা যা চায় তা যদি অন্যায় কিছু না হয় তবে সেটা ওর সামনে হাজির করতে আমি বিন্দুমাত্র ভাববোনা। তোর আত্মসম্মান অত্যাধিক বেশি আমি জানি। কথা বলিস মেপে মেপে। নিজের মর্জি ছাড়া একপাও নড়িসনা। কিন্তু আমার বোন তোকে পছন্দ করেছে মানে তুই নির্ধারিত হয়ে গেছিস। তুই যাই কর আর নাই কর, বিয়ে তোকে ওকেই করতে হবে।”
ইউসুফ ঘাড় ঘুরিয়ে একবার বিভার দরজায় তাকালো। দিব্যি ঘুমাচ্ছে হয়তো। চাঁদের আলো সোজা পড়ছে সরফরাজের চোখেমুখে। ইউসুফ আবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সরফরাজের স্বভাব সে জানে। এইতো কয়েকমাস আগেই। ইভার সাথে চরম অসভ্যতামির শাস্তি হিসেবে রাতবিরাতে গ্রামের এক ছেলেকে আটকে কি মারলো। শেষমেষ তো মারাই গেলো। বোনদের ব্যাপারে অতিরিক্ত রক্ষণশীলতা তার বরাবরই। অবাক হলোনা ইউসুফ। হাঁফ ছেড়ে বললো,”বেশ!”
সরফরাজ দু’বার চাপড় দিলো তার কাঁধে। পরিবেশ সহজ করতে গলা কেঁশে বললো,
-“ওইদিন রাতে মিথ্যে বলেছিলি তাহলে, বিভা ঘুমিয়ে ছিলো না।”
ইউসুফ কিছু বলবে তার আগেই গহীন নিশার সুক্ষ্ম নিস্তব্ধতা ভেঙে ঝনঝন ধ্বনিতে স্টিলের কিছু পড়ে যাবার শব্দ এলো। সরফরাজের ঘর থেকে। সরফরাজ চকিতে সেদিকে ফিরে তাকালো। ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
-“আমি দেখছি। তোর ভাবি পানির গ্লাস ফেলে দিয়েছে হয়তো।”
সরফরাজ দ্রুত ঘরে গেলো। ধারণা সঠিক। তন্দ্রা হাত থেকে পানি ফেলে দিয়েছে। মেঝেতে পানি ছড়িয়ে গ্লাসটা দূরে পড়ে আছে। সরফরাজ সুইচ চেপে বাতি জ্বালালো। তন্দ্রা ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখদুটো ছোট ছোট করে তাকালো। নিচু গলায় শুধালো,”পড়ে গেলো কিভাবে যেনো, পানির গ্লাসটা এতো ভারি লাগলো কেনো সরফরাজ?”
সরফরাজের কপালে গাঢ় ভাঁজ। এগিয়ে গিয়ে গ্লাসটা তুলে নিলো। জগ থেকে আরেক গ্লাস পানি ঢেলে তন্দ্রার মুখের সামনে ধরলো। উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“তোমার দূর্বল লাগছে তনু? গ্লাস পড়ে গেলো যে!”
তন্দ্রা পানি খেতে খেতেই এদিক ওদিক মাথা নাড়ালো। পানি খেয়ে সে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। ইউসুফ একবার এসে জিজ্ঞেস করলো,”ভাবি ঠিক আছে?”
সরফরাজ “ঠিক আছে” উওর দিলেও সারারাত ধরে মনের মধ্য উশখুশ তার রয়েই গেলো।
৬২.
গেরুয়া রঙের ফুলে বাড়ি মৌ মৌ করছে। গাঁদা ফুলগুলো তাঁজা। ভোরসকালে বাজার থেকে আনানো হয়েছে। ইভার শাড়ি ঠিক করে জাহানারা উঠে দাড়ালেন। চুলে চিরুনি লাগালেন। মেয়েটার চুল এতো ঘন। মোটা দাঁতের চিরুনি না হলে চিরুনির দাঁত ভেঙে ভেঙে আসে।
তন্দ্রার মেজাজ চটে আছে। বোনের বিয়ে অথচ লোকটার নাকি এখনো কাজের অজুহাত। রাগে গমগম করতে করতেই সে ইভার ঘরে ঢুকলো। জাহানারা একনজর তার চেহারার দিকে চেয়ে বললেন,
-“তোর কি হয়েছে? মেজাজ খারাপ কেনো?”
তন্দ্রা বিরক্তি নিয়ে বললো,”আপনি জানেন উনি কি বলছেন চাচি? ইভাকে হলুদ ছুঁইয়েই নাকি সে চলে যাবে। আসবে কাল। এত ব্যস্ত একটা দিনে উনি কিকরে বাড়ি থেকে যেতে পারে? কি এত জরুরি কাজ বলেন?”
ইভা ঠোঁট গোল করে বললো,”ভাইজান থাকবেননা?”
তন্দ্রার নীরব চোখে রাগ ঝরে পড়ছে। জাহানারা আস্তে করে বললেন,”খুব জরুরি বলেই হয়তো যাচ্ছে বউমা। রাগ করোনা।”
কাজের ফাঁকে একঝলক জাহানারাকে ডেকে নিলো সরফরাজ। অতিব দূরে বসে থাকা অর্ধাঙ্গিনীর দিকে চেয়ে বললো,
-“আমি গেলে ওর একটু খেয়াল রেখো চাচি, শরীরটা খারাপ। মেহমানদের মাঝে বেশি দৌড়োদৌড়ি করতে দিওনা। তুমি কিছু বলে বুঝিয়ে ঘরেই রেখো। কথা শুনতে চায়না তো।”
চলবে