মেঘফুল,পরিচ্ছেদ – ০২,০৩

0
811

উপন্যাস – “মেঘফুল”
পরিচ্ছেদ – ০২,০৩
লেখক- মিশু মনি
০৩

অর্ণব বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে। মোবাইল ছাড়া এক মুহুর্ত ভালো লাগে না ওর। দরজায় ঠকঠক শব্দ শুনে কান খাড়া করলো অর্ণব। অন্ধকারে সে ভুলে গেছে দরজাটা কোন স্থানে। হাতড়ে হাতড়ে দরজা খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হলো তাকে।

আলো হাতে দাঁড়িয়ে আছে জাহ্নবী ও সামার। অর্ণব খানিকটা ভড়কে গেলো। টর্চের আলো সরাসরি অর্ণবের মুখে তাক করে সামার বলল, ‘হ্যালো মিস্টার গেস্ট, আশা করছি আমরা বিরক্ত করায় আপনি কষ্ট পান নি।’

অর্ণব আলোর দাপটে চোখ মেলতে পারছে না। পিটপিট করছে চোখ দুটো। জাহ্নবী সামারের হাত টেনে ধরে বলল, ‘সমস্যা কি তোর? প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন না। এক মিনিট আপনাকে একটু বিরক্ত করবো।’

অর্ণব ভদ্রতার সঙ্গে বলল, ‘সমস্যা নেই। আমি কিছু মনে করিনি। আপনারা ভেতরে যান।’

অর্ণব দরজা থেকে সরে বাইরে এসে দাঁড়াল। জাহ্নবী ও সামার আলো হাতে প্রবেশ করলো ঘরে। মাঝেমাঝে দমকা খাওয়ার শব্দ কানে আসছে। অর্ণব বুকে হাত বেঁধে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। দ্রুত বেরিয়ে এলো মেয়ে দুটো। সামার অর্ণবকে বলল, ‘আপনি আর আসার সময় পাননি? এমন মধ্যরাতে কেউ কারও বাসায় বেড়াতে আসে?’

জাহ্নবী সামারের হাত টেনে ধরে ওকে নিয়ে দ্রুতপদে প্রস্থান করলো। অর্ণবের মুখে হাসি ফুটল এবার। অন্ধকারে ওকে ফেলে মেয়েগুলো চলে গেলেও, রেখে গেলো তাদের নিজস্ব রেশ।

জাহ্নবী সামারের ফোনে রিচার্জ করে দিলো। সামার ফোন নিয়ে চলে গেলো বারান্দায়। বিমর্ষ মনে বিছানায় শুয়ে পড়ল জাহ্নবী। ভায়োলেট নিষ্পাপ ঘুমে বিভোর। ওর মতো সহজেই যদি ঘুমাতে পারতো সে! চোখে তন্দ্রা লেগে এসে আবারও কেটে যাচ্ছে। এখনও বিছানায় আসেনি সামার। জাহ্নবী বারবার এপাশ ওপাশ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগল।

সকালবেলা পারভীন বিছানা ছেড়ে উঠলেন না। জাভেদ আলী অনেকটা বাধ্য হয়েই জাহ্নবীকে ডেকে তুলে বললেন, ‘মা, একটু দেখো নাস্তা টাস্তা কিছু করা যায় কিনা। ছেলেটা মনেহয় উঠে পড়েছে।’

জাহ্নবী মুখ ধুয়ে রান্নাঘরে প্রবেশ করলো। সূর্যের মিষ্টি আলোয় রান্নাঘর ঝলমল করছে। মন ভালো হয়ে গেল জাহ্নবীর। সোনালী রোদ্দুর গায়ে মেখে নাস্তা তৈরি করে নিলো সে। বেশ কয়েকবার মায়ের কথা মনে পড়ল তার। জাহ্নবী জানে পারভীন সুস্থ। শরীর একটু খারাপ হলেও রান্নাঘরে না আসার মতো খারাপ নয়। পারভীন ইচ্ছে করেই বিছানা ছাড়ছেন না। এই বয়সে এসে মা কেন এমন আচরণ করছেন জাহ্নবী বোঝে। কিন্তু চুপচাপ দেখা ছাড়া সত্যিই ওর কিছুই করার নেই।

খাবার টেবিলে অর্ণব ও জাভেদ আলী বসে আছেন। নাস্তা পরিবেশন করছে জাহ্নবী। সামার মুখ ধুয়ে নাস্তার টেবিলে বসে পড়ল। জাহ্নবী এক পলক সামারের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট নিশ্বাস ফেলল। ওর মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সামার চাইলেই পারতো বড় বোনকে সহায়তা করতে। অথচ কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে উলটে পালটে ঘুমাচ্ছিল এতক্ষণ। নাস্তা তৈরি হওয়ামাত্রই মুখ ধুয়ে টেবিলে বসে পড়ল।

জাহ্নবী নাস্তা পরিবেশন শেষে রান্নাঘরে এলো চা বানাতে। জাভেদ আলী খাবার খেতে খেতে অর্ণবের সঙ্গে গল্প করছেন। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে সামার। ওদের হাসাহাসির শব্দে জাহ্নবীর বুক ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এই অর্থহীন জীবনকে আর এগিয়ে নিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়না ওর। মিছে বেঁচে থাকার কোনো মানে হয়!

চায়ের দুধ উথলে চুলার আগুন নিভিয়ে দিলো। এমন সময় রান্নাঘরে প্রবেশ করলেন পারভীন। বিরক্তির সঙ্গে বললেন, ‘মন কোনদিকে যে থাকে মানুষের.. ‘

জাহ্নবী বলল, ‘মা তুমি এই শরীর নিয়ে রান্নাঘরে এসেছো কেন? তুমিও নাস্তা করে নাও।’
‘আর নাস্তা..’

একটা গভীর নিশ্বাস ফেললেন পারভীন। আজকাল মাকে দেখতেও দুঃখী দুঃখী লাগে। জাহ্নবী কয়েক সেকেন্ড মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। এরপর চা নিয়ে গেল খাবার টেবিলে।
জাভেদ আলী তখন জাহ্নবীকে নিয়েই কথা বলছিলেন, ‘ও তো সবসময় ফার্স্ট হতো। ম্যাট্রিকে তো আমাদের বোর্ডে নয় নাম্বার হয়েছিল। স্কুলের সব বাচ্চাকে মিষ্টি খাইয়েছি আমি। আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতেও মিষ্টির কার্টুন পাঠিয়েছি।’

জাহ্নবী নিঃশব্দে টেবিলে চা রেখে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। সামার বলল, ‘আপু তুই নাস্তা খাবি না?’
‘পরে খাবো।’
‘এখানে বস তো। সকাল থেকে এইগুলাই করলি। এখন আর কি কাজ আছে? নাস্তা খেয়ে নে।’

জাহ্নবী একবার জাভেদ আলীর দিকে তাকালো। চোখাচোখি হলো দুজনের। জাভেদ আলীর দৃষ্টি ভাষাহীন। সামারের জোরাজোরিতে জাহ্নবীও একটা চেয়ারে বসে পড়ল। অর্ণব দ্রুত চা শেষ করে বলল, ‘আংকেল আমি তাহলে উঠি?’
‘আরে না। কথাই তো শেষ হলো না। বসো গল্প করি।’

ইতস্তত বোধ করছে অর্ণব। জাহ্নবী বিষয়টা বুঝতে পেরে প্লেট হাতে নিয়ে সামারের ঘরে চলে গেলো। অর্ণব লজ্জায় মাটিতে দৃষ্টি নামিয়ে রাখলো। জাভেদ আলী সহজ গলাতেই বললেন, ‘তোমার বাবার ব্যাপারে কি যেন বলছিলে?’

সামার বলল, ‘আপনার বাবা সাঁতার কাটতে কাটতে মাঝপুকুরে গিয়ে ডুবে গেলেন। তারপর কী হলো?’
অর্ণব বলতে শুরু করলো। সামার বারবার হেসে উঠছিল অর্ণবের গল্প শুনে। জাভেদ আলীও দারুণ মজা পাচ্ছেন। রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে এই কাণ্ড দেখে বিরক্তবোধ করছেন পারভীন। ওনার অকারণেই মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে। মেজাজ ঝাড়ার মতো সুযোগ পাচ্ছেন না। অবশেষে ভায়োলেটকে ডাকতে চলে এলেন তিনি।

লক্ষী মেয়ের মতো ঘুমাচ্ছে ভায়োলেট। বিছানার এক কোণায় বসে নাস্তা খাচ্ছে জাহ্নবী। পারভীন তিক্ত সুরে বললেন, ‘ও এখনও ঘুমাচ্ছে না? তাছাড়া আর করবে কি। কাম নেই কাজ নেই, সারাক্ষণ ঘুম। ডেকে তোল ওকে। আমার জীবনটা ছাড়খার করে দিলো এই মেয়েগুলো। এ জীবনে একবেলা শান্তিতে খাইতে পারলাম না ওদের জন্য।’

জাহ্নবী পরোটা মুখে দিয়ে স্তব্ধ হয়ে পারভীনের দিকে তাকিয়ে রইল। মা কী বলছেন সেটা কি উনি নিজেই বুঝতে পারছেন? এমন উলটা পালটা কথা কেন বলছেন তিনি! বাসায় মেহমান আছে। জাহ্নবী গম্ভীর হয়ে গেল। খাবার গলা দিয়ে নামছে না ওর।

ভায়োলেট চোখ কচলে বলল, ‘কী হয়েছে মা? এত চেঁচাচ্ছো কেন?’
পারভীন বললেন, ‘আমি চেঁচাচ্ছি? তাই তো মনে হবে। মাকে এখন ভালো লাগে না কারও।’

পারভীন ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে ভায়োলেট বিছানা থেকে নামলো। জাহ্নবীকে ওর বিছানায় নাস্তা করতে দেখে বেশ অবাক হয়েছে ও। জাহ্নবী সচরাচর ওদের রুমে আসে না। হাই তুলতে তুলতে নির্বিকার ভঙ্গীতে বাথরুমে চলে গেলো ভায়োলেট।

জাভেদ আলী পারভীনকে শান্ত করার জন্য নিজের ঘরে গেছেন। টেবিলে মুখোমুখি বসে আছে অর্ণব ও সামার। অর্ণব বুঝতে পারছে না তার এখন উঠে রুমে যাওয়া উচিৎ হবে কী না? আবার এটাও বুঝতে পারছে না, এখানে সামারের মুখোমুখি বসে থাকাটা সঙ্গত কী না? দোটানায় ভুগছিল বেশ। সামার বলল, ‘আপনার চাকরি হবে বলে মনে হচ্ছে?’

অর্ণব ঠোঁট কামড়ে ধরে কয়েক সেকেন্ড ভেবে বলল, ‘মনে হয়, না। পরীক্ষা ভালো দেইনি।’
‘যদি চাকরি হয়ে যায়?’
‘হলেই তো ভালো।’
‘আপনার চাকরি হলে তখন কোথায় থাকবেন?’
‘জানি না। আগে তো হোক।’
‘জানেন না ভালো কথা। আমি জানিয়ে দিচ্ছি। আমাদের বাসায় আসবেন, খাবেন, রেস্ট নেবেন, গল্প গুজব করবেন। চাইলে ক্রিকেট খেলাও দেখতে পারেন। আমাদের টিভিটা অনেক বড়। বড় না?’
অর্ণব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, ‘জি।’
‘কিন্তু..’
‘কিন্তু কী?’
‘এটা এখন বলবো না। চাকরি হলে বলবো।’

অর্ণব অবাক হয়েছে ভীষণ। সামার খুব চনমনে একটা মেয়ে। এ ধরনের মেয়েগুলোকে ওর বেশ ভালোই লাগে। অর্ণব মুখে হাসি ধরে রেখে মাথা নিচু করে রইল। কিছুক্ষণ পর বলল, ‘যদি চাকরিটা না হয়, তাহলে তো আমার আর কখনো এই কথাটা শোনা হবে না।’

সামার টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। অদ্ভুত হেসে বলল, ‘চাকরি না হলে এই কথাটা আপনার কোনোদিনো শোনার প্রয়োজন নেই।’

চলে গেল সামার। কিন্তু অর্ণবের বড্ড মন উশখুশ করতে লাগল। সামার কী কথা বলতে চাইছে সেটা শোনার জন্যই ওর চাকরি হওয়াটা ভীষণ জরুরি।

ভায়োলেট হাতমুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে এসে দেখল টেবিলে অপরিষ্কার থালাবাসন পড়ে আছে। নাস্তা না খেয়ে আগে সেগুলো রান্নাঘরে নিয়ে এলো সে। সব বাসন পরিষ্কার করে তারপর নাস্তা করার জন্য টেবিলে এসে বসলো। আম্মুর মেজাজ খারাপ মানে অনেক্ষণ সে রুম থেকে বের হবে না। ভায়োলেট খাবার খাওয়ার সময় জাহ্নবীর ঘর থেকে অর্ণবকে বেরিয়ে আসতে দেখে প্রথমে ভড়কে গেল ভায়োলেট। পরক্ষণেই বুঝতে পারলো নিশ্চয়ই ইনি কোনো মেহমান, যার কারণে জাহ্নবী আজ ওদের রুমে বসে নাস্তা খাচ্ছিল।

ভায়োলেট বলল, ‘আপনি কে? চিনতে পারলাম না তো?’
‘আমি অর্ণব।’
‘ও আচ্ছা। বাবার গেস্ট?’
‘জি।’
‘ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে চলে যাচ্ছেন নাকি?’
‘জি।’
‘ওহ আচ্ছা।’

ভায়োলেট খাবারের দিকে মনোযোগ দিলো। অর্ণব বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ভায়োলেটের খাবার খাওয়া দেখছিল। ভায়োলেট মুখ তুলে ওর দিকে তাকাতেই অর্ণব বলল, ‘আংকেল কোথায়? ওনাকে বলে যেতাম।’
‘আপনি সোফায় বসুন। আমি ডাকছি।’

ভায়োলেট খাবারের মাঝখানে উঠে বাবাকে ডাকতে গেল। বসে রইল অর্ণব। জাভেদ আলী বলেছিলেন ওনার তিনজন মেয়ে। কিন্তু তিনটা মেয়েই এত বড় হয়ে গেছে সেটা ভাবে নি অর্ণব। যার বাসায় এমন বড় বড় মেয়ে থাকে, সেখানে মেহমান হয়ে যেতেও লজ্জা লাগে।
জাভেদ আলী এসে বললেন, ‘সে কী, তুমি এখনই চলে যাচ্ছো নাকি? দুপুরে খেয়ে বের হইয়ো।’

‘না আংকেল। আমি এখন থানায় গিয়ে একটা জিডি করবো। তারপর চলে যাবো। এখানে থেকে আসলেই আমার কোনো লাভ নেই।’
‘তাই বলে এখনই তোমাকে যেতে দিবো নাকি? তুমি বিশ্রাম করো। তোমার সঙ্গে গল্প গুজব করি।’

অর্ণব ইতস্ততবোধ করছে। ভায়োলেট আবারও এসে বাকি খাবারটা খাওয়া শেষ করলো। অর্ণবের ব্যাপারে কোনো আগ্রহই নেই ওর। খাবারটা মজা হয়েছে, সেটাই আগ্রহ নিয়ে খাচ্ছে ভায়োলেট। বড় আপুর হাতের রান্না খেলেই বুঝতে পারে ও।

অর্ণবকে বাবা ধরে রাখলেন। প্রায় এক ঘন্টা বসে গল্প করলেন ওনারা। পারভীন নিজের রুমে শুয়ে রইলেন। অর্ণবকে একবার দেখেই দেখার ইচ্ছে মরে গেছে ওনার। চলে যাওয়ার সময় জাভেদ আলী এসে বললেন, ‘ ছেলেটা বিদায় নেয়ার জন্য ডাকছে তোমাকে।’
পারভীন বললেন, ‘ডাকুক। বলো আন্টির শরীর খারাপ।’
‘সে কি! যাও গিয়ে বিদায় টা দিয়ে আসো।’
‘সে কি আমার ঘরের জামাই নাকি? না আমার ছেলে? উঠতে পারবো না। তোমার গেস্ট, তুমি বিদায় দিয়ে আসো।’

জাভেদ আলীর মন খারাপ হলো। তথাপি মুখে হাসি নিয়ে তিনি অর্ণবের কাছে গিয়ে বললেন, ‘তোমার নান্টির শরীর খারাপ, শুয়ে আছে।’
‘ সমস্যা নেই। আন্টিকে আমার সালাম দিবেন।’
‘অবশ্যই।’

জাভেদ আলী অর্ণবকে বাসার সামনে রাস্তায় এসে রিকশায় তুলে দিলেন। রিকশা ছেড়ে দিলে পেছন থেকে ডেকে তিনি নিজেও উঠে পড়লেন রিকশায়। থানায় যাবেন জিডি করাতে। আসলে এই মুহুর্তে ওনার কোনো কাজ নেই। বাসায় ফিরে পারভীনের সামনে বসে থাকতে একদমই ইচ্ছে করছে না।

জাহ্নবী ঘরে এসে বিছানা গুছিয়ে নিলো। মাত্র একরাত্রি অতিথি ঘুমিয়েছে এখানে, অথচ ওর মনে হচ্ছে চাদরটা ধুয়ে দেয়া উচিৎ। কিন্তু এইমুহুর্তে চাদর ধোয়ারও ইচ্ছে নেই। বিছানা থেকে চাদর সরিয়ে তোষকের ওপর শুয়ে রইল সে। সামার এসে ওর টেবিলের ওপর একটা একশো টাকার নোট রেখে বলল, ‘আপু এই যে তোর টাকা।’

জাহ্নবী উত্তর দিলো না। মাথা তুলে তাকালো না অব্দি। সামার বলল, ‘আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। আম্মুকে বলিস।’

দরজা আটকে দিয়ে সামার বেরিয়ে গেল। জাহ্নবী চোখ মেলে একটা নিশ্বাস ফেলল। সামার প্রায় প্রতিদিনই বাইরে যায়। পড়াশোনা শেষ করার পরও ওর যাওয়ার জায়গার অভাব নেই। বন্ধু বান্ধবীদের নিয়ে আড্ডা দেয়া, মার্কেটে ঘোরাঘুরি করা আবার কখনো লম্বা ট্রিপে ঢাকার বাইরে চলে যায় ও। ভীষণ আনন্দে আছে মেয়েটা। জাহ্নবীর মাঝেমাঝেই মনে হয়, এই শহরের সবচেয়ে আনন্দিত মেয়েটা সামার। ওর নাম আসলে আনন্দিতা হওয়া উচিৎ ছিল। জাহ্নবী চাইলেও কখনো ওর মতো হতে পারবে না। কোনো মেয়েই পারবে না।

এমন সময় ফোনে ভাইব্রেশনের আওয়াজ হলো। জাহ্নবী নোটিফিকেশন চেক করে দেখলো একটা নতুন ইমেইল এসেছে। কিছুদিন আগে চাকরির জন্য আবেদন করেছিল সে। সেখানে ইন্টারভিউয়ের তারিখ জানিয়েছে তারা। খুশিতে টগবগ করে উঠলো জাহ্নবীর মন। চাকরিটা হলে সে ব্যস্ত থাকার একটা কারণ পেয়ে যেতো।

চলবে..

উপন্যাস – “মেঘফুল”
পরিচ্ছেদ – ০৩
লেখক- মিশু মনি

রৌদ্রজ্জল সোনালী দিন ভালো লাগে ভায়োলেটের। সারা রাত মুষলধারে ঝড় বৃষ্টির পর চারদিক সোনালী আলোয় ঝলমল করছে। ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে ভায়োলেট বেরিয়ে পড়ল। বাইরে ওর বিশেষ কোনো কাজ নেই। বাসাতেও কোনো কাজ ছিল না। মিছেমিছি ঘরে বসে থাকার চাইতে লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ে সময় কাটাতে ওর বেশী ভালো লাগে।

লাইব্রেরি পুরোটাই ফাঁকা আজ। দু একজন লাল শার্ট পরিহিত কর্মচারী দাঁড়িয়ে তাদের ডিউটি করছে। ভায়োলেট একটা টেবিলের এক কোণায় গিয়ে বসলো। পাশেই কাঁচের বিশাল স্বচ্ছ জানালা। ইচ্ছে করলেই বই থেকে মাথা তুলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকানো যায়। তিনতলা কফিশপের দোতলা জুরে পুরোটাই লাইব্রেরি। এখানে বসে নিচে তাকিয়ে থাকতেও ভালো লাগে ওর।

লাল শার্ট পরা একজন কর্মচারী এসে ভায়োলেটকে বলল, ‘গুড মর্নিং ম্যাম।’
ভায়োলেট হেসে বলল, ‘গুড মর্নিং।’
‘ম্যাম কফি দেবো আপনাকে?’
‘না, ধন্যবাদ।’

ভায়োলেট মাথা ঘুরিয়ে ছেলেটাকে দেখলো। ছেলেটা নিশ্চয়ই নতুন জয়েন করেছে। পুরনো প্রত্যেকটা কর্মচারী ভায়োলেটকে চেনে। আর ভায়োলেটও কমবেশী পরিচিত সবার সঙ্গে।

শেলফ থেকে বই খোঁজার সময় ছেলেটা আবারও এসে জিজ্ঞেস করলো, ‘ম্যাম কোন বইটি খুঁজছেন? আমি কি আপনাকে হেল্প করতে পারি?’
‘না, ধন্যবাদ। আমি নিজে পছন্দ করে একটা বই নিয়ে বসবো।’
‘শিওর। ম্যাম, কোনো প্রয়োজন হলে আমাদেরকে জানাবেন।’
‘ধন্যবাদ।’

“দ্য গডফাদার” বই নিয়ে বসলো ভায়োলেট। আশেপাশেই ঘুরঘুর করছে ছেলেটা। যদিও ওর দিকে তাকাচ্ছে না একবারও। তবুও বিরক্ত লাগছে ওর। এর আগে কোনো কর্মচারী এমন ছিল না। স্বাধীনভাবে বই পড়ার জন্যই এখানে আসা, অথচ ওর পছন্দের এই লাইব্রেরিটাও প্রফেশনাল হয়ে যাচ্ছে।

প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা পড়ে ভায়োলেট মাথা তুলে বাইরে তাকালো। রাস্তায় গাড়ি নেই তেমন একটা। মানুষজন হাঁটাচলা করছে। মনে হচ্ছে এই শহরে ব্যস্ততা বলে কিছু নেই। এএয়ারকন্ডিশনের শীতলতায় বইয়ে চোখ রাখতে রাখতে ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে।

ভায়োলেট আরও কয়েক পৃষ্ঠা পড়ল। ধীরেধীরে লাইব্রেরিতে মানুষজন বাড়ছে। কড়া কফির সুঘ্রাণ ভেসে আসছে নাকে। সেই ছেলেটা একে একে সবার সঙ্গেই আলাপ বিনিময় করছে। ভায়োলেট বেশ কিছু পৃষ্ঠা পড়ার পর উঠে এলো।

ছেলেটা এসে জিজ্ঞেস করলো, ‘ম্যাম, বইটা কেমন লেগেছে?’
‘ভালো।’
‘আপনাকে দিয়ে দেবো ম্যাম?’
অবাক হলো ভায়োলেট। বিস্ময়ের সঙ্গে অন্য একজন কর্মচারীর দিকে তাকালো। সেই লোকটা নিরীহ ভঙ্গীতে ভায়োলেটকে দেখছে।
ছেলেটা বলল, ‘ম্যাম, চা বা কফি কিছুই খাবেন না?’
‘না। ধন্যবাদ।’
‘ম্যাম, এ নিয়ে অনেকবার আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আমাকেও ধন্যবাদ জানানোর সুযোগ দিন।’

ভায়োলেট খানিকটা জোরগলায় বলল, ‘আচ্ছা, সমস্যা কী আপনাদের? এটা তো আপনারা পাবলিকদের জন্যই খুলে দিয়েছেন তাইনা? আমি এখানে বই পড়তে এসেছি। কফি খাবো কি না খাবো সেটা আমার ব্যাপার। আমি খেলে নিশ্চয়ই আপনাকে বলতাম? বা সরাসরি তিনতলায় কফিশপে গিয়ে বসতাম। আপনি আমাকে বিরক্ত করছেন কেন বারবার?’

ছেলেটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইল। আমতা আমতা করতে লাগল, যেন বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
ভায়োলেট বলল, ‘আপনাদের এটা কফিশপ বুঝতে পারছি। কিন্তু এটা তো লাইব্রেরি এবং কফিশপ তাইনা? লাইব্রেরি পাবলিকদের জন্য। কারও মন চাইলে তারা কফি খাবে, মন চাইলে বই কিনবে। মন না চাইলে তো কোনো বাধ্য বাধ্যকতা নেই। আপনি আমাকে বারবার প্রশ্ন করে বিব্রত করছেন কেন? আমি তো আজকে টাকা নিয়ে আসিনি। আপনি যখন বই কিনতে বা কফি খেতে বলছেন, আমি কি লজ্জাবোধ করছি না? এই আপনাদের সেবা?’

বাকি দু তিনজন কর্মচারী ছুটে এসে বলল, ‘ম্যাম, সরি ম্যাম। আপনি প্লিজ কিছু মনে করবেন না।’
ছেলেটা এখনো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ভায়োলেটের দিকে চেয়ে আছে। বাকিরা চেয়ে আছে ছেলেটার দিকে। ভায়োলেট আর কথা না বাড়িয়ে সোজা বেরিয়ে এলো সেখানে থেকে। দরজার কাছে আসতেই ভায়োলেটের পরিচিত একজন কর্মচারী এসে বলল, ‘আসলে উনি নতুন এসেছেন, তেমন কিছু জানেন না। তাছাড়া উনি আমাদের কোম্পানি মালিকের ছেলে।’
ভায়োলেট খানিকটা বিস্মিত হলেও কোনো উত্তর দিলো না। মালিকের ছেলে হোক বা সাধারণ কোনো কর্মচারী, নিয়ম সবার জন্যই এক হওয়া দরকার। ভায়োলেট বলল, ‘ওকে। তবে উনি যেহেতু ডিউটি করছেন, ওনারও উচিৎ সবকিছু সেভাবেই দেখাশোনা করা।’
‘উনি আজকেই ডিউটিতে এসেছেন। গতকাল আমাদের কোম্পানি ওনার স্যার নিজে এসে ওনার সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দেন। আমরা জানিনা উনি কেন এই কাজ করছেন। হয়তো শখের বসে। বড়লোকদের অনেক রকমের শখ থাকে।’
‘তাই তো দেখছি। ওনার শখের আনন্দ আমি মাটি করে দিলাম না তো?’
হাসলো কর্মচারী ছেলেটা। ভায়োলেটও হেসে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে এলো। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে, সেইসাথে বেড়েছে মানুষের চলাফেরাও। এখন এই শহরকে বেশ ব্যস্ত নগরী বলে মনে হচ্ছে। শহরের পরিচিত রূপ কখনো বদলে গেলে ভালো লাগে না।

ফুটপাত ধরে হাঁটার সময় একটা নয় বছর বয়সী মেয়ে ভায়োলেটকে লক্ষ করে এগোচ্ছিল। ভায়োলেট মিষ্টি হেসে মেয়েটাকে কাছে ডেকে জানতে চাইলো, ‘কি গো তোমার নাম কি?’
মেয়েটা মুচকি হেসে উত্তর দিলো, ‘আইরা।’
‘আইরা? বাহ সুন্দর নাম তো। আমার দিকে কি দেখছো?’
‘আপনি অনেক সুন্দর।’
‘তাই?’
হেসে ফেললো ভায়োলেট। আইরা বলল, ‘হ আপা। আপনি অনেক সুন্দর। আমার সুন্দর মাইয়া দেখলে ভাল্লাগে।’

ভায়োলেট আইরার হাত ধরে ফুটপাতের পাশে একটা গাছের নিচে এসে বসল। আইরা পাশে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ভায়োলেট জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি থাকো কই?’
‘চানকারপুল।’
‘এখানে কি করছিলে?’
‘এমনি হাঁটি।’
‘তুমি স্কুলে যাও না?’
‘যাই। মাজেমইদ্যে।’
‘সবসময় যাও না কেন?’
‘কাম করোন লাগে, হেরলাইগা।’

ভায়োলেট কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। আইরা অসহায় ভঙ্গীতে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ‘আপা, বিশটা টাকা দিবেন?’
‘কি করবা বিশ টাকা?’
‘ভাত খামু।’

ভায়োলেট খানিক্ষন আইরার দিকে তাকিয়ে থেকে ফ্যাকাশে হাসি দিয়ে বলল, ‘আমি আজকে টাকা নিয়ে বের হই নাই। বের হবো কোথ থেকে? আমার কাছে নিয়ে আসার মতো টাকাও ছিল না। আমি একটা গরীব বুঝছো?’
হা হা করে হেসে আইরা বলল, ‘আপনাকে দেখলে তো বড়লোক মনে হয়।’
‘তাই নাকি?’ হাসলো ভায়োলেট। একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, ‘আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। এখন আব্বুর কাছে টাকা চাইতে আমার খুব লজ্জা লাগে। তাই খুব বেশী প্রয়োজন না হলে টাকা চাই না।’

আইরা চুপ করে রইল। ভায়োলেট বলল, ‘আমার বাড়ি কাছেই। হচলো হাঁটতে হাঁটতে যাই। তোমাকে ভাত খাওয়াবো।’
আইরাকে সাথে নিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরলো ভায়োলেট। পারভীন রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছেন। তরকারি কুটছে জাহ্নবী। ভায়োলেট আইরাকে বলল, ‘তুমি এখানে বসো। রান্না হতে আর কিছুক্ষণ লাগবে।’

পারভীন আইরার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেললেন। আইরার জামাকাপড় দেখে তিনি বুঝতে পেরেছেন আইরা পথশিশু। নিষ্পাপ চাহনিতে আইরা পারভীনকে দেখছেন।
ভায়োলেট হাতমুখ ধুয়ে এসে আইরাকে সোফায় বসতে বলল। ইতস্তত করতে করতে বসে পড়ল আইরা। ভায়োলেট বলল, ‘টিভি দেখবে?’
আইরা দুদিকে মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বোঝালো। ভায়োলেট তবুও রিমোট নিয়ে টেলিভিশন চালু করে দিলো। জাহ্নবী রান্না তুলে দিয়েছে। পারভীন খানিক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে বললেন, ‘ওকে আনছো কি জন্য?’
ভায়োলেট নরম গলায় উত্তর দিলো, ‘একটা কাজের জন্য আম্মু।’
‘কি কাজ বুঝিনা আমি? ভাত খাওয়াইতে আনছো। বাপটার মতোই হইছো, তাইনা? অভাবের সংসারে নিজেরাই খাইতে পারিনা, রাস্তা থেকে মানুষ ধরে ধরে আনতেছে ভাত খাওয়ানোর জন্য। তোমার বাপ নিয়ে আসছে মঝরাতে, আর দিনের বেলা তোমরা।’

ভায়োলেট লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়ে গেল। আইরা হা করে পারভীনের দিকে তাকিয়ে আছে। ভায়োলেট বিব্রতকর ভঙ্গীতেই বলল, ‘মা, আমরা যথেষ্ট ভালো আছি। জোর করে নিজেদেরকে অভাবী বলছো কেন?’
‘তা তোমরা কি বুঝবা? আমার স্বামী রিটায়ার্ড, তিন তিনটা মেয়ে বেকার বসে আছে ঘরে। আমি কিভাবে সংসার চালাই সেটা আমি বুঝি।’

পারভীন নিজের ঘরে চলে গেলেন। ভায়োলেট লজ্জায় মুখ তুলতে পারছিল না। এই পরিস্থিতি এড়াতে ফিসফিস করে আইরাকে বলল, ‘তুমি কিছু মনে কোরো না। আম্মুর জ্বর বুঝছো? জ্বর হলে আম্মু একটু রেগে থাকে।’

আইরা হা করে তাকিয়ে রইল। কোনো ভাবান্তর এলো না এর চেহারায়। ভায়োলেট জাহ্নবীর কাছে এসে বলল, ‘আপু, তুমি কষ্ট পাচ্ছো জানি। মন খারাপ কোরো না প্লিজ। সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন।’
‘আমাদের বিয়ে না হলে মা ঠিক হবে না রে।’

ভায়োলেট কী বলবে বুঝতেই পারলো না। স্থির ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে রইলো ভায়োলেট। আইরা এখনও বিমূঢ়ভাবে বসে আছে। ভায়োলেট বসার ঘরে আসতেই আইরা বলল, ‘আপা আমি চইলা যাই?’
‘আরে না। আর কিছুক্ষণ লাগবে, বসো।’
‘না আপা, আমার আসলে একটা কাম আছে। আমি যাই?’
‘প্লিজ ভাত খেয়ে যাও। নয়তো আমি খুব কষ্ট পাবো।’
আইরা কান্নাভেজা গলায় বলল, ‘আপনি অনেক নরম। আপা আমাকে মাফ কইরা দেন, একটা মিথ্যা কথা বলসি আপনাকে।’
‘কি!’
‘আমার নাম আইরা না। আমার নাম রিক্তা আক্তার। এই নামটা আমার পছন্দ না। আপনাদের নামগুলো অনেক সুন্দর হয় সেইজন্য আমি নিজের নাম রাখছি আইরা।’

হেসে ফেলল ভায়োলেট। হাসতে হাসতে বলল, ‘রিক্তা আক্তার নামটাও তো চমৎকার। তোমার যদি ভালো না লাগে তুমি তোমার বাবা মাকে বলবে তারা যেন তোমাকে আইরা বলে ডাকে। তাহলেই আর মিথ্যা বলতে হবেনা।’
আইরা হাসছে। ভায়োলেট বিব্রতকর চাহনিতে এদিক সেদিক তাকাতে লাগল। গরমে রান্নাঘরে ঘামছে জাহ্নবী। জাহ্নবী এতটাই মেধাবী মেয়ে ছিল যে, সবাই ভাবতো জাহ্নবী একদিন অনেক বড় কিছু হবে। অথচ এখন হতাশায় গুমরে মরে মেয়েটা। ভাবলেই ভীষণ কষ্ট হয় ভায়োলেটের।

এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। সামার এসেছে। বেশ ফুরফুরে মেজাজে নিজের ঘরে যাচ্ছিল সে। বসার ঘরে আইরাকে দেখে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘হেই লিটল প্রিন্সেস, হোয়াটস ইয়োর নেইম?’
‘মাই নেইম ইজ রিক্তা আক্তার। এন্ড ইউ?’
‘সামার।’

নিজের ঘরে চলে গেল সামার। একটা পথশিশু ইংরেজিতে ওর প্রশ্নের উত্তর দিলো সেটা যেন খুবই স্বাভাবিক বিষয়। সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ কিংবা বিস্ময় কোনোটাই নেই সামারের। ভায়োলেট অবাক হয়ে আইরাকে বলল, ‘তুমি ইংরেজি জানো!’
আইরা লজ্জা পেয়ে হেসে বলল’আমার স্কুলের বইতে এইগুলা পড়ছি তো।’
‘বাহ!’

ভায়োলেটের বিস্ময় কাটছে না। সামার হাতমুখ ধুয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আপু রান্না কতদূর? প্রচণ্ড খিদা লাগছে।’
‘এইতো প্রায় হয়ে গেছে। মাছ রান্না বাকি।’
সামার সোফায় এসে বসলো। কল কেটে দিয়ে ফোনে ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে আইরাকে বলল, ‘হ্যালো রিক্তা।’

আইরা লজ্জা পেয়ে হাসল। ভায়োলেট উঠে গেল জাহ্নবীকে সহায়তা করতে। অনেক্ষণ ধরেই ওর ইচ্ছে করছিল জাহ্নবীর সঙ্গে রান্নাবান্নার কাজে সহায়তা করতে। ঘরে আইরাকে একা রেখে যাওয়ার নিশ্চয়তা পাচ্ছিল না সে। এখন সামার এসেছে, তাই নিশ্চিত হয়ে রান্নাঘরে এলো ভায়োলেট। জাহ্নবীকে বলল, ‘আপু, আমি মাছটা রাঁধছি। তুমি কিছুক্ষণ ফ্যানের নিচে গিয়ে বসো।’
জাহ্নবী কোনো উত্তর দিলো না। ওর হাত থেকে চামচ নিজের হাতে তুলে নিলো ভায়োলেট। জাহ্নবী একটা বাক্যও উচ্চারণ করলো না। চুপচাপ রান্নাঘর হতে বেরিয়ে এলো। আইরা জাহ্নবীকে দেখেই বলে উঠলো, ‘আরে জান্না আপু! আপনি এইখানে!’

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here