উপন্যাস – “মেঘফুল”
পরিচ্ছেদ – ০৪,০৫
লেখক- মিশু মনি
০৪
জাহ্নবী আইরাকে অনেকদিন ধরেই চেনে। শুধু আইরা নয়, অসংখ্য পথশিশুর সঙ্গে ওর বেশ ভাব। আইরা জাহ্নবীকে ভীষণ পছন্দ করে। জাহ্নবী শুকনো হাসি দিয়ে বলল, ‘ভালো আছিস?’
‘হ আপা। আপনাকে অনেক দিন দেখিনাই।’
জাহ্নবী আইরার পাশে গিয়ে বসলো। একটা পথশিশুকে নিয়ে এরকম আধিখ্যেতা মোটেও ভালো লাগছে না পারভীনের। তিনি নিজের ঘরে শুয়ে বিরক্ত হয়ে উঠছেন। কীসে ওনার শান্তি হবে সেটাও জানেন না তিনি। বোধহয় মরণেই একমাত্র শান্তি!
জাভেদ সাহেব অর্ণবকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় ফিরলেন। একই টেবিলে বসে তিন কন্যা ভাত খাচ্ছিল। সঙ্গে আইরা নামের শিশুটি। অর্ণবকে দেখে সবাই একপলক তাকিয়েই আবারও খাওয়ায় মন দিলো। তাদের মনে একটাই প্রশ্ন, ‘এই ছেলেটা আবার কেন এসেছে?’
জাভেদ আলী বললেন, ‘বাবা তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।’
অর্ণব কারও দিকে না তাকিয়েই জাহ্নবীর ঘরের দিকে পা বাড়াল। বিব্রতবোধ করলো জাহ্নবী। বিছানার ওপর ওর বইপত্র এলোমেলো হয়ে আছে। ইন্টারভিউয়ের মেইল পেয়ে সব বই নামিয়ে ফেলেছে সে। তাছাড়া ওর স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেট টা বিছানার ওপর রাখা আছে। ছি ছি, কী লজ্জাজনক ব্যাপার!
জাহ্নবী বলল, ‘শুনুন। আপনি এখানেই বসুন। এখন রুমে যাওয়া যাবে না।’
দাঁড়িয়ে পড়ল অর্ণব। জাভেদ আলী জানতে চাইলেন, ‘যাওয়া যাবে না কেন?’
সামার তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলো, ‘আব্বু তোমার সবকিছু জানতে হবেনা। যাওয়া যাবেনা মানে যাওয়া যাবে না। তোমরা থানায় গিয়েছিলে?’
জাভেদ আলী অর্ণবকে সোফায় বসার ইশারা করে উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ গিয়েছিলাম। ওই ছেলেটার একটা ছবি ম্যানেজ করে দিয়ে আসতে হবে। অর্ণব কোথায় যাবে না যাবে তাই ওকে বাসায় নিয়ে আসলাম। তোর মা কই?’
‘মা শুয়ে আছে।’
অর্ণব সোফায় বসে অস্বস্তিতে ভুগছে। টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে তিন বোন। সে তাদের বিব্রতবোধের কারণ হচ্ছে কী না ভেবেই ওর অস্বস্তি বাড়ছে। ময়লা জামাকাপড় পরা ছোট্ট মেয়েটি বারবার চোখ তুলে তাকাচ্ছে অর্ণবের দিকে। তার চোখেমুখে কৌতুহল। অর্ণবের সঙ্গে বেশ কয়েকবার চোখাচোখি হলো আইরার।
দ্রুত খাওয়া শেষ করে ঘরে চলে এলো জাহ্নবী। পুরো ঘর সুন্দরভাবে গুছিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচল। পরক্ষণেই মনের ভেতর শুরু হলো খচখচানি। ছেলেটা আজ চলে যাবে কী না, এ ব্যাপারে বিস্তর সন্দেহ আছে। সারাদিন তাকে ছোটবোনদের রুমেই কাটাতে হবে মনে হচ্ছে।
জাহ্নবী বসার ঘরে এসে অর্ণবকে বলল, ‘প্লিজ এখন ঘরে যেতে পারেন।’
কথাটা বলেই জাহ্নবীর কেমন যেন লাগল। প্রসঙ্গ এড়াতে জাহ্নবী জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনি তেলাপিয়া মাছ খান তো?’
অর্ণব একদিকে মাথা হেলিয়ে উত্তর দিলো, ‘হুম। খাই তো।’
‘অনেকে আবার খায় না তো। এজন্য জিজ্ঞেস করলাম।’
জাহ্নবী আবারও অস্বস্তিতে পড়ল। বসার ঘরে অর্ণব আর সে ছাড়া আর কেউ নেই। ভায়োলেট আইরাকে নিচে নামিয়ে দিতে গেছে, সামার ও বাবা নিজেদের ঘরে। অর্ণব বলল, ‘আপনাদেরকে অনেক বিরক্ত করছি। আসলে আমি একটা বিপদে পড়েছি তাই..। আমার ঢাকা শহরে আত্মীয় স্বজন কেউ নেই।’
‘ওহ। কী বিপদ জানতে পারি? তখন সামার বলছিল থানায় যাওয়ার ব্যাপারে। আমি জানিনা এ ব্যাপারে।’
‘আমার ফোন হারিয়ে গেছে। তো, ওই ছেলের একটা ছবি দিতে হবে।’
‘বুঝলাম না। কার ছবি?’
‘যে আমার ফোনটা নিয়ে গেছে।’
‘মানে কি! চোরের ছবি আপনি কোথায় পাবেন?’
জাহ্নবীর চেহারায় হাস্যকর একটা ভাব ফুটে উঠলো। অর্ণবের সঙ্গে চোখাচোখি হলো তখন। অর্ণব বলল, ‘মানে আমার এক বন্ধুর কাছে মোবাইল আর ব্যাগ রেখে পরীক্ষা দিতে ঢুকেছিলাম। বের হয়ে দেখি ও নেই।’
‘আহারে! আপনার বন্ধুটিকে ভালোমতো চেনেন না?’
‘চিনি। আমাদের এলাকার ছেলে। আব্বুকে ফোন করে জানালাম কিছুক্ষণ আগে। আব্বু ওর ছবি ম্যানেজ করে পাঠাবে।’
জাহ্নবী কী বলবে বুঝতে না পেরে বলল, ‘আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি খাবার দিচ্ছি।’
‘অনেক কষ্ট দিচ্ছি আপনাদের।’
‘আরে না না, এরকম ভাববেন না তো। তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসুন। নিশ্চয়ই অনেক খিদে পেয়েছে।’
অর্ণব ধীরপায়ে জাহ্নবীর ঘরে চলে গেল। সোফায় বসে রইল জাহ্নবী। অর্ণবের ফোন হারানোর ঘটনাটা বেশ মজা লেগেছে ওর। এভাবেও কারও ফোন হারিয়ে যেতে পারে সেটা কে কবে ভেবেছে!
ভায়োলেট এসে বলল, ‘আপু, তোমার রুম তো দখল হয়ে গেলো। এবার কী করবে?’
‘আস্তে বল। লোকটা শুনলে কী ভাব্বে?’
‘ওহ আচ্ছা। লোকটা?’
হাসল ভায়োলেট। ভায়োলেটের মুখে হাসি দেখে হাসি পেয়ে গেলো জাহ্নবীরও। তবে রুম দখল হওয়াটা আসলেই দুঃখজনক, সেটা ভেবে ফ্যাকাশে হয়ে গেল হাসির শেষাংশটুকু।
জাভেদ আলী অর্ণবকে সঙ্গে নিয়ে খেতে বসলেন। জাহ্নবী খাবার পরিবেশন করছে। খাবারের চাইতে জাভেদ আলীর গল্পই বেশী গিলতে হচ্ছে অর্ণবকে। সারাজীবন তিনি কাটিয়েছেন বিমান বাহিনীর শৃঙ্খলাবদ্ধ পরিবেশে। সবসময় নিয়মের মধ্যে থেকে জীবনযাপন করতে গিয়ে ভীষণ একাকী হয়ে পড়েছেন। শেষ বয়সে তার নেই কোনো বন্ধু, কিংবা কাছের কোনো মানুষ। কথা বলার মতো কাউকে পেলেই মন খুলে গল্প জুরে দেন জাভেদ আলী।
জাহ্নবী বলল, ‘আমাদের রান্না খেতে অসুবিধা হচ্ছে না তো আপনার?’
অর্ণব উত্তরে বলল, ‘রান্না তো বেশ মজা হয়েছে।’
কথাটা শেষ হতেই জাহ্নবীর সঙ্গে চোখাচোখি হলো অর্ণবের। জাহ্নবী লজ্জা পেয়ে হাসল।
জাভেদ আলী বললেন, ‘তোমাদের ওখানে তরকারীতে লবণ কম খায় তাইনা?’
‘আমি এসব বুঝিনা আংকেল। আপনি একদিন আসুন না আমাদের ওদিকে। এখন তো আপনার অফিস নেই। কয়েকটা দিন ঘুরে আসবেন।’
‘হা হা। ঠিক আছে। যাবো একদিন।’
অর্ণব জাহ্নবীর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপনিও আসবেন। আপনারা সবাই আমাদের বাড়িতে যাবেন। দাওয়াত রইল। দেখে আসুন আমাদের এলাকাটা কেমন।’
জাভেদ আলী বললেন, ‘জাহ্নবী গিয়েছিল তো চট্টগ্রামে।’
অর্ণব জাহ্নবীকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তাই নাকি?’
জাহ্নবী লাজুক হেসে বলল, ‘অনেক ছোটবেলায় গিয়েছিলাম। আমার মনেই নেই।’
‘তাহলে সবাই মিলে একদিন আসুন আমাদের বাসায়। অনেক খুশি হবো।’
জাভেদ আলী অর্ণবের পিঠে ভালবাসার সঙ্গে হাত বুলিয়ে দিলেন। জাহ্নবী একটা চেয়ারে বসে পড়ল। জাভেদ আলী’র মুখ থেকে জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার গল্প শুনতে ওনার ভীষণ ভালো লাগে।
সামার বিছানায় শুয়ে জানালার রেলিংয়ে পা তুলে দিয়ে মোবাইল টিপছে। মেসেঞ্জার চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত সে। হঠাৎ করে ভিডিও কল এলো ফোনে। সামার এক লাফে কলটা রিসিভ করে হাসতে হাসতে বলল, ‘কারও পারমিশন না নিয়ে কল করাটা ভারী অন্যায় মিস্টার টুইস্ট।’
কথা বলতে বলতে হা হা করে হাসল সামার। ভায়োলেট কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে বলল, ‘আপু একটু আস্তে। আমি বই পড়ছি।’
সামার বলল, ‘গল্পের বই সারাদিন পড়তে হবেনা তো। যা ওই চাটগাঁইয়া ব্যাটার সঙ্গে গল্প কর গিয়ে।’
‘আপু!’
ভায়োলেট বইতে মুখ গুঁজে দিলো। সামার ফোনে বলতে লাগল, ‘আর বলো না, বাসায় একটা চাটগাঁইয়া পোলা আসছে। চাট টটট গাঁইয়া। হা হা হা।’
সামার জোরে জোরে হাসতে লাগল। অবাক হয়ে সামারের দিকে তাকালো ভায়োলেট। বড় আপু জাহ্নবী যেমন শান্ত ও মার্জিত, ছোট আপু সামার ঠিক ততটাই চঞ্চল ও দুষ্টু। দুজন পুরোপুরি দুই মেরুর মতো। ভায়োলেট মনেমনে ভাবলো, ‘আচ্ছা আমি কিরকম? আমি তো চঞ্চল নই, আবার শান্তও নই। আমি তো খুব বেশী ভদ্রও নই আবার দুষ্টুও নই। আমি কী তাহলে?’
সামারের হাসি ও কথার শব্দে রুমে থাকাই মুশকিল হয়ে উঠলো। ভায়োলেট কী করবে বুঝতে পারছে না। লাইব্রেরিতে গিয়ে আরাম করে বই পড়া যেতো। কিন্তু আজ সকালেই সেখানে একটা নতুন কর্মচারীর সঙ্গে রীতিমতো রাগারাগি করে এসেছে সে, এখন আবার কীভাবে যাবে সেখানে! অন্তত আগামী দশ পনেরো দিন ওই লাইব্রেরিতে যাওয়াই উচিৎ হবে না। আগে বেচারা ভায়োলেটের মুখচ্ছবি ভুলে যাক, তারপর ভাবা যাবে।
ভায়োলেট বারান্দায় এসে দাঁড়াল। রাস্তায় ভ্যানগাড়িতে করে সবজি বিক্রি করছে একজন। এক মহিলা সবজি টিপে টিপে পরীক্ষা করে তারপর সেটা নিচ্ছেন। ব্যাপারটা মজার তো! ভায়োলেট চোখ বড়বড় করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল।
মহিলাটি প্রত্যেকটা টমেটো টিপে টিপে তারপর কিনলেন, একইভাবে বেগুন, আলু, পটল সবকিছু ভালোমতো পরখ করে কিনলেন। ভায়োলেট জানতো না এভাবে সবজি কিনতে হয়। অবাক লাগছে ওর। এই পৃথিবীতে বিস্মিত হওয়ার মতো কত কত বিষয়!
রাত সারে দশটায় একবারে বিদায় নিলো অর্ণব। যাওয়ার সময় জাহ্নবীকে বলল, ‘অনেক কষ্ট দিয়েছি আপনাদের। ক্ষমা করে দেবেন।’
‘কী যে বলছেন! আমরা মোটেও কষ্ট পাই নি।’
অর্ণব হাসিমুখে বেরিয়ে গেল। এবারও জাভেদ আলী ওকে রিকশায় তুলে দিতে গেলেন। জাহ্নবী দরজা আটকে দিয়ে মনেমনে ভাবল, ‘গেস্ট চলে গেছে। এখন আমাকে মন দিয়ে পড়তে হবে, ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। একটা চাকরি পেতেই হবে আমার।’
জাহ্নবী সবেমাত্র পড়তে বসেছে। ভায়োলেট দরজায় শব্দ করে বলল, ‘আপু আসবো?’
‘হুম আয়।’
ভায়োলেটের এক হাতে বালিশ আর অন্যহাতে কোলবালিশ। জাহ্নবী কৌতুহলী হয়ে তাকিয়ে রইল। ভায়োলেট বলল, ‘আমি আজকে তোমার সঙ্গে ঘুমাবো। অসুবিধা হবে?’
জাহ্নবী হেসে বলল, ‘না।’
‘ছোট আপু আমাকে বের করে দিলো। আকাশে মেঘ করেছে। বলছে বৃষ্টি হবে নাকি। সারা রাত সে একাকী ফোনে কথা বলবে।’
জাহ্নবীর বুকে এক ধরণের শিহরণ বয়ে গেল। হঠাৎ ওর ইচ্ছে করল জিজ্ঞেস করতে, সামার সারা রাত কী কথা বলে ফোনে? কিন্তু কোনো এক অদ্ভুত কারণে জাহ্নবী তা জিজ্ঞেস করতে পারল না।
ভায়োলেট বালিশে শুয়ে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে বলক, ‘গুড নাইট আপু। আমি চোখ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়বো। তুমি দেখতে চাও?’
জাহ্নবী হেসে বলল, ‘হ্যাঁ চাই।’
ভায়োলেট চোখ বন্ধ করে ফেলল। জাহ্নবী আবারও হাসল। বইয়ের দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকালো জাহ্নবী। ওর বুকের ভেতর কেমন যেন হচ্ছে। ফোনে কথা বলতে কেমন লাগে, কে জানে! খুব মজা নিশ্চয়ই। প্রিয় মানুষ, সারা রাত ফোন কানে ধরে শত সহস্র কথা হৃদয় ফুড়ে বেরিয়ে আসে। সেখানে মিশে থাকে প্রেম, মান, অভিমান, সোহা, আরও কত কী! জাহ্নবীর হৃদয়ে ব্যথার তীক্ষ্ম সূচ ফুটতে আরম্ভ করল।
ব্যথাকে হালকা করতে জাহ্নবী ভায়োলেটকে বলল, ‘আচ্ছা তোর একটা বান্ধবী ছিল না গুলশানে?’
ভায়োলেটের কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। জাহ্নবী হেসে ফেলল। এত দ্রুত ভায়োলেট ঘুমিয়ে পড়তে পারে, ভেবেই হাসি পাচ্ছে। ভায়োলেটকে দেখলেই মনে হয়, ভীষণ লক্ষী ও সুখী সুখী একটা মেয়ে। এক ধরনের শান্তি অনুভূত হয় ওর দিকে তাকালে।
রাত এগারোটা। সামার জাহ্নবীর দরজায় শব্দ করে বলল, ‘আপু, ভায়োলেট কি ঘুম?’
‘হ্যাঁ, কেন?’
‘ওর ফোন এসেছে। ফোনটা তো আমার রুমেই রেখে এসেছে ও। বুঝিনা ফোন ছাড়া মানুষ থাকে কীভাবে?’
সামারের কানে ফোন, কথা বলছে সে। বাম হাতে ভায়োলেটের মোবাইল এগিয়ে দিলো জাহ্নবীর দিকে। জাহ্নবী ভায়োলেটের ফোনটা নিয়ে রেখে দিলো। আর দুই পৃষ্ঠা পড়ে শুয়ে পড়বে ভাবছে।
এমন সময় আবারও ভায়োলেটের ফোন কাঁপতে লাগল। জাহ্নবী ফোনের স্ক্রিনে চোখ রাখল। নাম্বার সেইভ করা নেই। ভায়োলেট সাধারণ কখনো ই ফোন সাইলেন্ট করে রাখে না। আজ নিশ্চয়ই সামার ওর ফোনে বিরক্ত হয়ে সাইলেন্ট করে দিয়েছে। কিন্তু এত রাতে ভায়োলেটকে কে কল দেবে? ওর ফোনে তো কল আসে না বললেই চলে।
জাহ্নবীর বুকে ধক ধক আওয়াজ হতে লাগল। দ্রুত হার্টবিট বাড়ছে ওর। ‘কে ফোন করলো’, এত রাতে কী কথা বলতে চায়? প্রশ্ন দুটো মনে যতই ঘুরতে লাগল, জাহ্নবীর হৃদস্পন্দন তত বেশী বেড়ে গেল। ভায়োলেট রোজ এগারোটার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে। আর ওর ঘুম ভীষণ গাঢ়। জাহ্নবীর পুরো শরীর এবার কাঁপতে লাগল। কে ফোন দিয়েছে ভায়োলেটকে!
তুমুল হৃদস্পন্দন নিয়েই ভায়োলেটের মোবাইল তুলে নিলো জাহ্নবী। ফোনে কোনো পাসওয়ার্ড কিংবা লকও নেই। ডায়ালে একটা অপরিচিত নাম্বার। মাত্র দু’বার কল এসেছে সেই নাম্বার থেকে। একটা কল এসেছে দশ মিনিট আগে, আর একটা কল এইমাত্র। এছাড়া বাকি সব নাম্বার খুব পরিচিত। আব্বু, বড় আপু, ছোট আপু, নন্দিনী ফ্রেন্ড, ছোটমামা এসব। তাহলে এই নাম্বারটা কার!
জাহ্নবীর শরীর জুরে কেমন যেন আন্দোলন চলতে লাগল। ওর খুব জানতে ইচ্ছে করে, কেমন লাগে ফোনে কথা বলতে! মন বলছে, কাজটা ঠিক হচ্ছে না। হৃদয় বলছে, হ্যাঁ তুমি কাজটা করো। এক দোটানায় জাহ্নবী দুলছে। কাঁপছে রীতিমতো। সে অবশেষে কল দিয়েই ফেলল অপরিচিত নাম্বারটাতে।
রিং হতেই ওপাশ থেকে একজন ভরাট গলার পুরুষ রিসিভ করে বলল, ‘যাক আমি সৌভাগ্যবান। আপনি তাহলে ঘুমান নি। কল রিসিভ হলো না বলে ভেবেছিলাম আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমার পরিচয়টা দিয়ে নেই। আজকে লাইব্রেরিতে যেই মানুষটাকে আপনি অনেকগুলো কথা শুনিয়েছেন আমিই সেই ব্যক্তি। প্লিজ আগেই রেগে যাবেন না। আমার সব কথা শুনুন। আপনার নাম্বার জোগাড় করে কল দেয়াটা নিতান্তই অনুচিত হয়েছে। তার ওপর আপনার সঙ্গে আমার আজকেই প্রথম দেখা। প্লিজ, রেগে যাবেন না। আমার কথা শুনুন। হ্যালো, আপনি কী শুনতে পাচ্ছেন?’
জাহ্নবীর সমস্ত শিরা উপশিরায় এক ধরণের অচেনা সুর বয়ে গেল। এই সুরের তাল, লয় এতটাই সুমধুর যে, মনে হলো সে স্বপ্নীল এক রাজ্যে প্রবেশ করেছে। জাহ্নবী আর স্থির হয়ে থাকতে পারছিল না। ওর দেহ কাঁপছে। দ্রুতপদে বারান্দায় চলে এলো জাহ্নবী।
ওপাশের সেই সুমধুর কণ্ঠের পুরুষটি বলল, ‘আপনি শুনতে পাচ্ছেন? হ্যালো…’
জাহ্নবীর বুক কেঁপে উঠল। কাঁপা গলায় ভেতর থেকে আওয়াজ এলো জাহ্নবীর, ‘হ্যালো..’
ওপাশের সেই পুরুষ বলল, ‘রাগ করলেন?’
‘না।’
‘ওকে ওকে। আমি কল ব্যাক দিচ্ছি।’
কল কেটে গেল। জাহ্নবীর গা ঝনঝন করে উঠল। দুই সেকেন্ড পরেই কল এলো আবারও। জাহ্নবী ফোন হাতে নিয়ে বারান্দার দরজায় দাঁড়িয়ে বিছানার দিকে তাকাল। ল্যাম্পশেডের হলুদাভ আলোয় ঘুমন্ত ভায়োলেটের মুখটা দেখা যাচ্ছে। কী নিষ্পাপ মায়াবী সেই মুখ! ভায়োলেটের অজান্তেই আজ প্রথমবার একটি অপরাধ করতে যাচ্ছে জাহ্নবী। হোক না অপরাধ, কিছু অপরাধ সুখের হয়।
জাহ্নবী ফোন রিসিভ করে কাঁপা গলায় বলল, ‘হ্যালো…’
চলবে..
উপন্যাস – “মেঘফুল”
পরিচ্ছেদ – ০৫
লেখক- মিশু মনি
‘আপনার গলার স্বর আমার ভীষণ পরিচিত। যেন বহুবার কোথাও শুনেছি এই কণ্ঠ।’ বেশ আবেগ ফুটে উঠলো ফোনের ওপাশের মানুষটার কথায়।
জাহ্নবী শিহরিত হলো। সামার কী তবে সারাক্ষণ এমন মিষ্টি কথায় মুখর হয়ে থাকে! ওর হৃদয় আন্দোলিত হলো। কাঁপা কাঁপা গলায় জাহ্নবী বলল, ‘আপনি এত রাতে কেন ফোন করেছেন?’
কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই জাহ্নবীর বুক ধড়ফড় করতে শুরু করল। একইসাথে সেই তীক্ষ্ম ব্যথার বীণ বাজতে লাগল। জাহ্নবী বারান্দার রেলিংয়ে হাতের মুঠো রেখে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে।
লোকটা বলল, ‘আমি আপনাকে সরি বলার তাগিদ অনুভব করছি। আপনাকে বারবার বিরক্ত করাটা আমার উচিৎ হয় নি।’
‘আচ্ছা। ‘
‘আর ‘হ্যা, আপনাকে ফোন দেয়ার আরও একটা কারণ হচ্ছে ধন্যবাদ জানানো। আপনি আজ ওভাবে না রিয়েক্ট না করলে এই বিষয়টা আমার কখনোই শেখা হতো না। থ্যাংকস ম্যাডাম।’
‘আচ্ছা? তাই?’
জাহ্নবী জানেনা এই আগন্তুকের সঙ্গে ভায়োলেটের ঠিক কী বিষয়ে কথা হয়েছে। নিতান্তই না জানার কারণে ‘আচ্ছা’ আর ‘তাই’ শব্দ দিয়ে কথা চালিয়ে যেতে হল ওকে।
লোকটা বলল, ‘আমাদের কম্পিউটারে সবার ডাটা থাকে সেটা তো জানেনই। সেখান থেকেই নাম্বার নিয়ে কল দিয়েছি। কিছু মনে করেননি তো?’
‘মনে করাটাই কী স্বাভাবিক নয়?’
উত্তরটা দিতেই জাহ্নবী টের পেলো ওর গলা কাঁপছে। বলল,’ কেউ সেচ্ছায় ফোন নাম্বার না দিলে তাকে কোনোভাবেই ফোন করা উচিত না।’
‘ইস, তাহলে আরেকটা ভুল করে ফেললাম। এই ভুলের জন্য কী ক্ষমা করা যাবে?’
জাহ্নবীর মনে অন্যরকম একটা সুখের দোলা লাগল। মৃদু হেসে বলল, ‘না যাবে না।’
‘তাহলে কী শাস্তি দেবেন আমায়?’
জাহ্নবী চুপ করে রইল। শাস্তি? সে ওই লোকটাকে কীভাবে শাস্তি দেবে? যাকে চেনেই না সে। ভায়োলেটের সঙ্গে কোন ঘটনার মধ্য দিয়ে পরিচয় হয়েছে সেটাও ওর অজানা।
লোকটা বলল, ‘আপনি কি লাইব্রেরিতে আসা বন্ধ করে দেবেন?’
জাহ্নবী কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে বলল, ‘ হ্যাঁ। আমি লাইব্রেরিতে যাওয়া বন্ধ করে দেবো।’
‘এটাই কি আমার শাস্তি?’
‘জি। বুঝতে পেরেছেন নাকি আরও বুঝিয়ে বলবো?’
জাহ্নবী মধুর সুরে শেষ কথাটা বললো ঠিকই কিন্তু নিজের মাঝেও মধুপানের স্বাদটুকু উপভোগ করলো। কারও সাথে কথা বলতে বুঝি এতটাই ভালো লাগে! এই আস্বাদন আরও পেতে চায় জাহ্নবী।
লোকটা বলল, ‘আপনার নামটা খুব সুন্দর, ভায়োলেট। আমার মনেহয় বাংলাদেশে এই নাম আর কারও নেই।’
জাহ্নবীর বলতে ইচ্ছে করলো, ‘আমার নাম ভায়োলেট নয়।’ কিন্তু বলতে পারলো না। ওর মন খারাপ হয়ে গেল। মনের ভাটায় টান পড়ে তা যেন শুকিয়ে আরও খরায় রূপ নিলো।
জাহ্নবী নিঃশব্দে ফোন কানে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওপাশের ছেলেটার গলায় তখন মাখো মাখো উদ্বেগ, , ‘আপনি কথা বলছেন না কেন? বিরক্ত হচ্ছেন?’
‘যদি বলি হচ্ছি?’ মুখ টিপে হেসে উত্তর দিলো জাহ্নবী।
‘তাহলে বিরক্ত করার দায়ে এই অধমের গর্দান কাটা যাবে।’
‘ তাই? এত সহজেই বুঝি গর্দান দিয়ে দেবেন?’
‘ আপনি চাইলে তো দিয়ে দেবো-ই।’
‘ কেন? আমি চাইলে কেন দিয়ে দিবেন?’
‘কারণ ভায়োলেট নামে বাংলাদেশে আর কেউ নেই। তাই।’
‘হা হা হা।’
জাহ্নবী হাসছে। ওর মজা লাগছে কথা বলতে। একইসাথে খারাপ লাগছে এই ভেবে যে, কেন ওর নাম ভায়োলেট হলো না?
জাহ্নবী বাচ্চাদের মতো হঠাৎ জানতে চাইলো, ‘ আচ্ছা, আপনার নাম কি?’
‘ অর্জন।’
‘ স্বাধীনতা অর্জন?’
‘ হা হা হা।’ হাসতে লাগল অর্জন। আর জাহ্নবী মনেমনে ভাবতে লাগল, কী বলে ছেলেটাকে মুগ্ধ করা যায়। যেভাবে ছেলেটা কিছুক্ষণ আগে ওকে মুগ্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু তেমন কিছু তো ওর মাথায় আসে না। ও একটা গবেট।
মুখ টিপে হাসলো জাহ্নবী।
অর্জন বলল, ‘আপনি কী ভাবছেন আমি জানি।’
জাহ্নবী চমকে উঠলো, ‘কী ভাবছি?’
‘ভাবছেন অর্জন নামেও বাংলাদেশে আর কেউ নেই।’
জাহ্নবী হেসে উঠলো। লোকটা চমৎকার কথা জানে। পরক্ষণেই হাসি মিলিয়ে গেল ওর। আচ্ছা, সে কি আদৌ কোনো লোক? নাকি ছেলে? বয়স কত হবে তার? প্রশ্নগুলো মনের কোণে উঁকি দেয়ামাত্রই জাহ্নবীর শরীরে কাটা দিতে লাগল।
জাহ্নবী হঠাৎ কিছু না বলেই কল কেটে দিলো। নিজের ভেতর এক ধরনের অপরাধবোধ কাজ করতে শুরু করেছে। ফোনটা সে না ধরলেও পারতো। এই অপরাধবোধে আজ সারা রাত ঘুমাতে পারবে না সে।
অপরিচিত নাম্বারটা থেকে আবারও এলো কল। জাহ্নবী ফোনটা সাইলেন্ট করে ভায়োলেটের বালিশের কাছে রেখে দিলো। মানুষের যখন কেউ থাকে না, তখন একাকীত্ব তাকে এমনভাবে চেপে ধরে যে, একটা মানুষ পাবার জন্য পাগল হয়ে ওঠে সে। মন হয় প্রচণ্ড ব্যকুল। এই ব্যকুলতাই এই অপরাধ করতে উৎসাহিত করেছে ওকে।
জাহ্নবী শুয়ে পড়ল ভায়োলেটের পাশে। ভায়োলেটের গা থেকে একটা মিহি সুবাস ভেসে আসছে। জাহ্নবীর ইচ্ছে করছে ঘর থেকে বের হয়ে পাগলের মতো কোনো একদিকে চলে যেতে। মনস্তাত্ত্বিক জটিলতাগুলোকে অশান্তির সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে দিচ্ছে ওকে।
কয়েক মিনিট বাদে জাহ্নবী আবারও ভায়োলেটের ফোনটা হাতে তুলে নিলো। অর্জন একবার কল দিয়েছে মাত্র। জাহ্নবীর আশা ছিল আরও কয়েকবার কল আসবে। হতে পারে অর্জন নিতান্তই ভদ্রলোক। ভায়োলেট কোনো সমস্যায় পড়তে পারে, সেই ভেবে আর কল দেয় নি।
জাহ্নবী কয়েকবার এপাশ ওপাশ করল। ভায়োলেটের মোবাইল নিজের বালিশের নিচে লুকিয়ে রাখল। ওর ভীষণ অস্থির লাগছে। শরীরে এক ধরণের আবেদন অনুভব করছে সে। একইসাথে অপরাধবোধের প্রবল যন্ত্রণা ওকে গ্রাস করতে লাগল। এই দু’য়ের মাঝে দুলতে দুলতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ল জাহ্নবী।
পারভীনের চেঁচামেচিতে ঘুম ভাংলো যথারীতি। ভায়োলেট এখনও ঘুমে। জাহ্নবী ভায়োলেটের মোবাইল বের করে একবার দেখেই রেখে দিলো। অর্জন কোনো মেসেজ দিয়েছে কিনা সেটা দেখাই ছিল ওর উদ্দেশ্য।
সবার নাস্তা যখন প্রায় শেষ, ভায়োলেট তখন উঠে এলো ঘুম থেকে। জাহ্নবী থালাবাসন ধুচ্ছে। ভায়োলেট এক কাপ চা নিয়ে খাবার টেবিলে বসল।
জাহ্নবী ছুটে এসে বলল, ‘ পরোটা দেই তোকে?’
‘ পরে খাবো৷’
‘ ডিম ভাজি করেছি। ধনেপাতা কুচি দিয়ে, তোর তো খুব প্রিয়?’
ভায়োলেট একপলক জাহ্নবীর দিকে তাকিয়ে মুহুর্তেই চোখ নামিয়ে নিলো। জাহ্নবী চমকে উঠলো। আবারও থালাবাসন ধুতে চলে এলো সে। মানুষ যখন কোনো অন্যায় করে, সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকে সে। জাহ্নবীর এখন সেই দশা চলছে।
ভায়োলেট বলল, ‘বাবা কোথায়? নাস্তা খেয়েছে সবাই?’
জাহ্নবী রান্নাঘর হতে উত্তর দিলো, ‘ খেয়েছে। আব্বু নিচে গেছে।’
‘ মেজো আপু খেয়েছে?’
‘ ও এখনও ঘুমে।’
‘ মেজোপুর এখন সুখের সময়। ওর সুখ দেখলে হিংসে হয় না তোমার?’
জাহ্নবী থালাবাসন ধোয়া বন্ধ করে উত্তর দিলো, ‘আমার তো তোর সুখ দেখলে হিংসে হয়।’
ভায়োলেট হাসতে হাসতে বললো, ‘ ভালো বলেছো। আমি আসলেই সুখী।’
‘তোর মতো সুখী যদি হতে পারতাম!’
ভায়োলেট চায়ের কাপ রান্নাঘরে রেখে বলল, ‘সুখী হতে চাইলে এই বাড়ি ছেড়ে বের হও আপা। অনেক সুখী হবা।’
জাহ্নবী বিস্ময়ে হা করে ভায়োলেটের দিকে তাকিয়ে রইল। ভায়োলেট বেরিয়ে গেছে। কিন্তু ওর কথার রেশ জাহ্নবীর গায়ে বাতাসের মতো লেপ্টে আছে এখনও।
জাহ্নবী কাজ শেষ করে ভায়োলেটের ঘরের দরজায় এসে বলল, ‘আসবো?’
সামার শুয়ে শুয়ে মোবাইলে চোখ বুলাচ্ছে। রীতিমতো অবাক হয়ে বলল, ‘আসেন ম্যাডাম। আমাদের রুমে ঢোকার আগে পারমিশন নিতে হবে বুঝি?’
‘হ্যাঁ নিতে হবে না? তোরা বড় হয়েছিস তো।’
‘বারে, বড় হয়েছি তো কী হয়েছে? আমরা কি সাতসকালে বড়দের মতো কাজ করবো নাকি?’
কথাটা বলেই হেসে উঠলো সামার। হাসলো ভায়োলেটও। জাহ্নবী ইতস্তত বোধ করল। সামার বলল, ‘বড়দের কাজকারবার রাতেই শেষ। এখন শুধু রেস্টের সময়। বলো কী বলবা?’
জাহ্নবী লজ্জায় তাকাতে পারছে না। সামার দ্বিধাহীনভাবে সব ধরনের মজা করতে পারলেও সে পারে না।
ভায়োলেট বলল, ‘আমি জানি বড় আপু কি বলতে চায়?’
জাহ্নবী শিউরে উঠল। বুক ধক করে উঠলো তার। ভায়োলেটের দিকে অবাক হয়ে তাকাল সে। ভায়োলেট হাসতে হাসতে বলল, ‘আরে আপু, আমাদের সঙ্গে একটু সহজ হও না।’
জাহ্নবী স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ভায়োলেট কী তাহলে মোবাইল দেখে ফেলেছে? নাকি শুনে ফেলেছে সব কথা!
ভায়োলেট বলল, ‘আপুকে একটু আগে বলেছি সুখী হতে চাইলে বাড়ি থেকে বের হও। নিশ্চয় এটা নিয়ে টেনশান করছে। তাইনা আপু?’
নিশ্চিত হলো জাহ্নবী। স্বস্তির সঙ্গে তাকালো ভায়োলেটের দিকে। এদেশে যদি কারও মোবাইল ফোনের দিকে বিন্দুমাত্র আগ্রহ না থাকে, তবে সে হচ্ছে ভায়োলেট। প্রতিটা মানুষই বোধহয় ঘুম থেকে উঠেই আগে মোবাইল নিয়ে একবার চেক করার অভ্যাস আছে। ভায়োলেট সেখানে সবার চাইতে আলাদা।
জাহ্নবী ভায়োলেটকে বলল, ‘আমার রুমে আয় তো।’
ভায়োলেট হেসে বলল, ‘চলো।’
চলবে..