মেঘফুল পরিচ্ছেদঃ ২৭,২৮

0
548

উপন্যাসঃ মেঘফুল
পরিচ্ছেদঃ ২৭,২৮
লেখকঃ মিশু মনি
২৭

ভায়োলেট জাহ্নবীর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, “প্রেম বড় আজব জিনিস রে আপু। যখন আসে, সমস্ত সত্তা কাঁপিয়ে দিয়ে আসে। আর যখন চলে যায়, সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দিয়ে চলে যায়।”

ভায়োলেটের কথা শেষ হতেই জাহ্নবী ওকে জড়িয়ে ধরলো। অনেক ব্যকুল হয়ে জানতে চাইলো, ‘তোরা আলাদা হয়ে গেলি কিভাবে?’
‘সেটা আমি আজও বুঝতে পারিনি। হয়তো কখনো পারবো ও না।’

ভায়োলেটের দীর্ঘশ্বাসের শব্দে ভয় পেয়ে গেল জাহ্নবী। যে সম্পর্কের সূচনা এত সুন্দর ছিল, তার পরিণতি কতটা ভয়ংকরভাবে সমাপ্ত হয়েছে, ভেবেই শিউরে উঠল সে। কিন্তু ভায়োলেটকে আর কোনো প্রশ্ন করার সাহস না পেয়ে বিছানা থেকে উঠে বারান্দার পাশে এসে বসল জাহ্নবী। প্রকৃতির অদ্ভুত সব নিয়ম ওকে সবসময়ই আঘাত দেয়। মিনিট দশেক স্থবির হয়ে বসে থাকার পর জাহ্নবী বিছানায় এসে দেখল, বালিশ বুকে জড়িয়ে নিষ্পাপ ভঙ্গীতে ঘুমিয়ে পড়েছে ভায়োলেট। মেয়েটাকে আর জাগাতে ইচ্ছে করল না। ওর পাশে নিঃশব্দে শুয়ে পড়ল সে। অনেক রাত অবধি এপাশ ওপাশ করেও চোখে ঘুম নামাতে পারলো না। ভোরবেলা ক্লান্ত চোখে অবসন্ন ঘুম নেমে এলো। কৃতজ্ঞতা অভিমানী ঘুমের প্রতি।

আজ জাহ্নবীর জীবনে অন্যতম আনন্দের দিন। চাকরির প্রথম মাসের বেতন হাতে পেয়েছে সে। টাকাটা ভায়োলেটকে দিতে হবে। সেদিনের পর ভায়োলেটের সঙ্গে আর কথাই হল না। মেয়েটাকে বাসায় আসতে বলতে হবে। রুশোর বাকি গল্পটা শুনতে হবে।

জাহ্নবী ভায়োলেটকে ফোন করে চায়ের দোকানে চলে আসতে বলল। ‘when tea meet toast’ এর ভেতরে গিয়ে বসল জাহ্নবী। ভেতরে দুজন ছেলেমেয়ে বসে চা খাচ্ছে। পুরো দোকান ফাঁকা। পান্নাবাহারের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর আর এখানে আসেনি জাহ্নবী। আজকে চা খেতেই আসা। পান্নাবাহারের সঙ্গে দেখা হওয়াটা নিতান্তই ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছে সে৷ যদিও প্রায়ই বেলকনিতে দাঁড়ালে অজান্তেই চোখ চলে যায় এই দোকানের দিকে। আজ অবচেতন মনে সে বারবার পান্নাবাহারকেই খুঁজছিল। সচেতন মনে নিজেকে বলল, ‘আমি কাউকে খুঁজছি না। আমি চা খেয়েই চলে যাবো।’

ভায়োলেট ব্যস্ত ভঙ্গীতে এসে জাহ্নবীকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘আপু! অনেক্ষণ অপেক্ষা করলে না?’
‘আরে ধুর। তুই ঠাণ্ডা হয়ে বস। আমি দুইটা চা অর্ডার দিয়েছি।’
‘আমার একটা ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাচ্ছি খাওয়া দরকার।’

জাহ্নবী ওয়েটারকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো এখানে লাচ্চি পাওয়া যাবে কী না। ওয়েটার উত্তর দিলো, ‘এটা শুধুই চায়ের দোকান। তবে কোল্ড কফির ব্যবস্থা করা যাবে।’
অবশেষে তাই সই। কোল্ড কফি-ই দিতে বলা হল।
জাহ্নবী ভায়োলেটের হাত ধরে খুশি খুশি গলায় বলল, ‘পেয়ে গেছি।’
‘কী!’
‘স্যালারি।’ ফিসফিস করে উত্তর দিলো জাহ্নবী।
ভায়োলেট হেসে বলল, ‘তাই এত খুশি?’
‘হুম। তোর পুরো টাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। নিয়ে যাস।’
‘আপু! থ্যাংক ইউ আপু।’

ভায়োলেট উঠে এসে জাহ্নবীকে জড়িয়ে ধরল। জাহ্নবী ভায়োলেটের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘আমার মিষ্টি বোনটা। এত হন্তদন্ত হয়ে কোথা থেকে আসলি?’
‘একটা কাজে গিয়েছিলাম’ উত্তর দেয় ভায়োলেট।

জাহ্নবীর চা চলে এলো। কফি আসার অপেক্ষায় বসে রইল সে। ভায়োলেটকে আজ ভীষণ ব্যস্ত দেখাচ্ছে। ছিমছাম গড়নের ভায়োলেটকে দেখলে জাহ্নবী প্রায়ই মনেমনে ভাবে, ‘ও নায়িকা হতে পারতো।’

কোল্ড কফি চলে এলো। কফি খেতে খেতে ভায়োলেট বলল, ‘তুমি জানতে চেয়েছিলে না আমার স্বপ্ন কি? আমি কেমন জীবন চাই?’
‘হুম হুম।’
‘বলবো। আর একটু অপেক্ষা করতে হবে।’
‘আজকেই বলবি?’
ঝলমল করে উঠল জাহ্নবীর গলা। ভায়োলেট মাথা নেড়ে বলল, ‘উহু। আজকে না। আর কিছুদিন সময় লাগবে।’
‘কিছু দিন! কিছু ক্ষণ কেন নয়?’
‘হা হা হা। হুম। ভালো কিছু শোনার জন্য একটু অপেক্ষা তো করতেই হবে আপুমনি।’
‘তা বটে, তা বটে।’

দুইবোন উচ্চশব্দে হেসে উঠল। চা ও কফি খাওয়া শেষ হতেই ভায়োলেট বলল, ‘আপু শোনো। আজকে আমি তোমার এখানে থাকতে পারবো না। আমাকে বাসায় যেতে হবে। কাজ আছে।’
‘কী কাজ?’
‘আছে। পরে বলবো তোমাকে।’
‘তুই অনেক রহস্যময়ী রে ভায়োলেট।’

ভায়োলেট হেসে উত্তর দিলো, ‘আজকে বাসায় যাই। কাল অথবা পরশু আসবো। রাতে থাকবো, অনেক গল্প করবো। বৃহস্পতিবার রাতে আসলে বেশী ভালো হয়। শুক্রবার তোমার ছুটি। অনেক বেলা অবধি ঘুমাবে।’

ভায়োলেটকে আনন্দিত দেখাচ্ছে। জাহ্নবীর নিজেরও আজ মনে অনেক আনন্দ। ছোটবোনের বিপদে সহায়তা করতে পারছে সে। এরচেয়ে আনন্দের ব্যাপার তার জীবনে এখনো ঘটেনি।
ভায়োলেট বলল, ‘আপু, টাকাটা কী সঙ্গে আছে?’
‘কেন রে? এখনই নিবি?’
‘হুম। আমি চাইনা শামীমের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে। ওকে আজকেই টাকাটা দিয়ে দিতে চাই।’
জাহ্নবী বলল, ‘টাকা তো সঙ্গে নেই, বাসায় আছে। চল উঠি। তুই ছেলেটাকে কল দিয়ে আসতে বল। আমরা বাসায় গিয়ে টাকাটা নিয়ে বের হই।’

ভায়োলেট উঠে দাঁড়াল। জাহ্নবী বিল পরিশোধ করে দিয়ে দোকান থেকে বের হয়েছে সবেমাত্র। ঠিক এমন সময় রিকশা থেকে নামল পান্নাবাহার। তাকে দেখে আচমকা স্তব্ধ হয়ে গেল জাহ্নবী। নিশ্বাস অব্দি বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। বুকে ধকধক আওয়াজ টের পেলো সে। ভায়োলেট বলল, ‘আপু চলো।’

জাহ্নবী দাঁড়িয়ে রইল। পান্নাবাহার দোকানের ভেতরে প্রবেশ করেছে। জাহ্নবী কয়েক সেকেণ্ড সময় নিলো নিজেকে স্বাভাবিক করার জন্য। বলল, ‘ আচ্ছা শোন না। আমার না আরেক কাপ চা খেতে ইচ্ছে করছে।’
‘তাহলে চলো টাকাটা নিয়ে এসে এখানে অপেক্ষা করি। আর শামীমকেও এখানে আসতে বলি।’
‘তাই করবি? ঠিক আছে চল।’

দোকানের দিকে এক পলক তাকিয়ে বাসায় রওনা দিলো জাহ্নবী। ওর হৃদস্পন্দন দ্রুত বাড়ছে। নিজেকে দেখে অবাক লাগছে ওর। সে কখনো ছেলেদের প্রতি বিন্দুমাত্র আকর্ষণ অনুভব করতো না। কতগুলো বিয়ের সম্বন্ধ ভেঙে দিয়েছে সে। শুধুমাত্র ছেলেদের প্রতি, বিয়ে বা প্রেমের প্রতি আগ্রহ নেই বলে। কী অদ্ভুতভাবে এখন সে-ই একটা মানুষের প্রতি দুর্বলতাবোধ করছে। পান্নাবাহারকে দেখলেই ওর কেমন যেন লাগে। সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।

ড্রয়ার থেকে টাকা বের করে ভায়োলেটের হাতে দিলো জাহ্নবী। বিছানার ওপর থ হয়ে বসে রইল সে। ভায়োলেট টাকা গুণে ব্যাগে রেখে বলল, ‘আপু। চলো?’

জাহ্নবীর ভাবান্তর হল না। ভায়োলেট বলল, ‘যাবে না?’
‘তোর বন্ধু এসেছে?’
‘পনের বিশ মিনিট লাগবে বললো।’
‘ওহ আচ্ছা।’
‘তুমি নাকি চা খাবে?’
‘হুম।’

জাহ্নবী ধীরেধীরে উঠে দাঁড়াল। পান্নাবাহারকে দেখলেই ওর সবকিছু ওলট পালট হয়ে যাবে। কিন্তু তাকে দেখে যাওয়ার বাইরে আর কিছুই করতে পারবে না সে। হয়ত মানুষটা বিবাহিত, হয়তো তার প্রেমিকা আছে, হতে পারে সে জাহ্নবীকে পছন্দই করবে না। সেসব তো পরের কথা, জাহ্নবী তাকে মনের কথা জানাতেই পারবে না কখনো। অযথা তাকে দেখতে গিয়ে কী লাভ হবে তার?

জাহ্নবী বলল, ‘আমরা আর কিছুক্ষণ পর যাই?’
‘চা খাবে না?’

জাহ্নবী অসহায় ভঙ্গীমায় এদিক সেদিক তাকালো। ওর ভালো লাগছে না। তার মনের অনুভূতি আজীবন মনেই বসে লুকোচুরি খেলবে। অযথা তাকে জ্বালাতন করার মানে হয় না। তবুও কোনো এক অদৃশ্য স্রোত তাকে টেনে নিয়ে চললো বাসার নিচে। ‘when tea meet toast’ এর কাঁচের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে জাহ্নবীর হৃদস্পন্দন বাড়তে লাগল। দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশের সময় হঠাৎ খুব বেশী স্পন্দন অনুভূত হতে লাগল তার। কিন্তু ভেতরে ঢুকেই সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গেল। অদৃশ্য স্রোতটাও হারিয়ে গেল। পুরো দোকান ফাঁকা। কোথায় পান্নাবাহার?

সে চলে গেছে!

জাহ্নবী অস্বস্তি নিয়ে চেয়ারে বসলো। চায়ের অর্ডার দেয়ার জন্য ভায়োলেট জানতে চাইলো, ‘আপু, কোনটা খাবে?’
‘চা খেতে ইচ্ছে করছে না।’
‘তুমি না বললে খাবে?’

জাহ্নবীর মনোভাবের হুটহাট পরিবর্তন খেয়াল করছিল ভায়োলেট। বেশ বুঝতে পারল আপু কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা নিয়ে কথা বলা দরকার।
চা দিতে বলল ভায়োলেট। তারপর জাহ্নবীর হাত ধরে মধুর গলায় জানতে চাইলো, ‘আপু, তোমার কী হয়েছে আমাকে বলা যাবে?’

জাহ্নবী চমকে উঠলো। তার কী হয়েছে সেটা সে নিজেই জানে নাকি? সে ঘোরের ভেতর আছে। এই বয়সে এসে তার এমন ঘোরের কথা ভায়োলেটকে বলা যাবে না। অনেক লজ্জায় পড়ে যাবে সে।

জাহ্নবী হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘কিছু না তো।’
‘এটাকে বলে মুড সুয়িং।’
‘হ্যাঁ। মুড সুয়িং হচ্ছে।’
জাহ্নবী লজ্জা পেয়ে হাসল। ভায়োলেট তাকিয়ে রইল ওর দিকে। আপুর মুড সুয়িং ভালো করে দিতে মজার মজার গল্প বলতে আরম্ভ করল সে। জাহ্নবী চেষ্টা করলো হাসিমুখে বসে থাকতে।

ভায়োলেট শামীমকে টাকা দিয়ে যখন বাসায় ফিরলো, তখন রাত নয়টা। ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে বাবা, সামার ও অর্ণব। ভায়োলেটকে দেখে হাসিমুখে অর্ণব বলল, ‘কেমন আছেন?’
‘ভালো আছি ভাইয়া। আপনি?’
‘অনেক ভালো। বসুন, আমাদের সঙ্গে খাবার খান।’

ভায়োলেট সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে ঘরে প্রবেশ করল। ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখা একটা গিফট বক্স। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে হাতমুখ ধুয়ে খেতে আসল ভায়োলেট।
পারভীনকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি অনেক আনন্দে আছেন। মোরগ পোলাও রান্না করেছেন। নিজের হাতে খাবার খাওয়াচ্ছেন সবাইকে। ভায়োলেট নিঃশব্দে চেয়ার টেনে নিয়ে খেতে বসলো।

পারভীন বললেন, ‘অর্ণব কী পাগল বল। আজকে বেতন পেয়েছে। প্রথম বেতন পেয়েই দুই কেজি মিষ্টি, ইলিশ মাছ, তোর আব্বার জন্য পাঞ্জাবি, আমার শাড়ি, তোদের তিন বোনের জন্যও কী যেন এনেছে। কী দরকার ছিল এসবের। পাগল একটা ছেলে।’

পারভীন হাসি হাসি মুখে কথাগুলো বললেন ভায়োলেটকে। ভায়োলেট খাবার মুখে দিতে গিয়েও দিতে পারল না। ওর কেমন যেন মন খারাপ হয়ে গেল। আজকে বড় আপুও প্রথম বেতন পেয়েছে। আপুর ইচ্ছে ছিল সবার জন্য কত কী কিনে আনবে। কিন্তু আপু সেটা পারলো না। হয়তো আপুর এতে খুব কষ্ট হচ্ছে। সেটা ভেবেই হয়তো আজকে টাকা দেয়ার পর আপুর মন খারাপ হয়ে গিয়েছে। এদিকে মা নিশ্চয়ই আপুর কাণ্ড দেখলে আরও অনেক খুশি হত! সব ভেস্তে গেল তার জন্য।

জাভেদ আলী বললেন, ‘কী রে মা, কিছু খাচ্ছিস না কেন?’
ভায়োলেট খেতে আরম্ভ করলো। কিন্তু বড় আপাকে ছাড়া খাবার ভেতরে যাচ্ছে না ওর। আপা ওর জন্য কীভাবে সব টাকা দিয়ে দিলেন! বাকি মাস কীভাবে চলবে সে। সব ভাবনায় বিষণ্ণ হয়ে রইল ভায়োলেট।
খাওয়া শেষে অর্ণব একটা গিফট বক্স এগিয়ে দিলো ভায়োলেটকে। ধন্যবাদ জানিয়ে ঘরে চলে এলো ভায়োলেট। সামার ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত। ভায়োলেট ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। কাজ আছে তার।
কিছুক্ষণ পর সামার এসে বলল, ‘ভায়োলেট, একটা কথা ভাবছি।’
‘হুম, বল।’
‘ভাবছি অর্ণবকে আরজুর কথা বলবো। বাবা মা দুজনেই অর্ণবকে অনেক পছন্দ করে। অর্ণব যদি আমার রিলেশনের কথাটা ওদেরকে জানায়, আব্বু আম্মু কেউই আপত্তি করবে না। তারপর নাহয় আরজুর ফ্যামিলিকে আসতে বলবো। কী বলিস তুই?’

ভায়োলেট কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিলো, ‘তাহলে আজকেই কথাটা বলে ফেল। দেরী করলে পরে পস্তাতে হবে।’
‘কেন? পস্তাতে হবে কেন?’
‘সেটা বলতে চাচ্ছি না। অর্ণব ভাইয়া চলে যাওয়ার আগেই তুমি যাও। ওকে আজকেই ভাইয়ার কথাটা জানাও।’

সামার উঠে দাঁড়াল। অর্ণব ভালো ছেলে। দিলখোলা স্বভাবের। তাকে ভালভাবে বুঝিয়ে বললে নিশ্চয়ই আরজু ও সামারের বিয়ের ব্যাপারে সহায়তা করবে সে।

চলবে..

উপন্যাসঃ মেঘফুল
পরিচ্ছেদঃ ২৮
লেখাঃ মিশু মনি

নির্ঘুম চোখে বসে আছে জাহ্নবী। কোলের ওপর রাখা একটা বই। পান্নাবাহারকে পুনরায় দেখতে না পাওয়ার শোকটা কাটিয়ে উঠলেও তাকে ভুলতে না পারার শোক আঁকড়ে রয়েছে জাহ্নবীকে। বারবার নিজেকে বলছে সে, ‘যে আমার নয়, তাকে নিয়ে ভাব্বার অধিকারও আমার নেই।’

মানব মনের সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, কাউকে ভুলতে চেষ্টা করা মানে তাকে বারবার স্মরণ করা। জাহ্নবী যতবার পান্নাবাহারকে ভুলে যেতে চাইছে, ততবারই মনে জেগে উঠছে তার মুখচ্ছবি। রিকশা থেকে নেমে মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে ভাড়া দিচ্ছিল যখন, কী অপূর্বই না লাগছিল তাকে! ভেতর থেকে আরও একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ওর। ভায়োলেট বাসায় গিয়েছে। মা বাবা হয়তো আশা করে আছেন জাহ্নবী স্যালারি পেলেই তাদের কাছে ছুটে যাবে। কিন্তু হাত একদম ফাঁকা করে ফেলেছে সে। এদিকে বাবা মা কী ভাবছেন কে জানে!

পারভীন অর্ণবের কথা ভাবছেন। ছেলেটার বাবা মা কেউ নেই এ শহরে। তাই তো প্রথম বেতন পেয়েই সবার আগে তার কাছে ছুটে এসেছে। নিজের ছেলের মতো তাকে স্নেহ করতে না পারলে ছেলেটা ভীষণ কষ্ট পাবে। তাই অর্ণবের সঙ্গে বসে গল্প করছেন তিনি। অর্ণব তার বাবা, মায়ের কথা শোনাচ্ছে।

সামার এসে পারভীনের পাশে বসতে বসতে বলল, ‘মা, আমি অর্ণব ভাইকে নিয়ে একটু ছাদে যাই? ওনার সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছে।’
পারভীন ভ্রু কুঁচকে ফেললেন। খানিকটা অবাক হয়েছেন তিনি। প্রথমে ‘না’ বলতে চাইলেও পরক্ষণেই কী যেন ভেবে ওনাকে আনন্দিত দেখালো। তিনি বললেন, ‘একটু পর যা।’
‘না আমার এখনই যেতে হবে। খুব জরুরি কথা। অর্ণব ভাইয়া, চলেন আমার সঙ্গে।’

পারভীন এবার বিরক্ত হলেন। এই মেয়ের একটুও লাজ লজ্জা বলে কিছু নেই। মনেমনে বললেন, অর্ণবের সঙ্গে তোর কথা থাকতেই পারে, তাই বলে মায়ের সামনে থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যেতে হবে! তার বাকি দুই মেয়ের চাইতে এই মেয়েটা সম্পূর্ণ আলাদা হয়েছে। তিনি বিব্রত ভঙ্গীতে উঠে নিজের ঘরে গেলেন।

সামার হাসিমুখে বলল, ‘চলুন।’
অর্ণব লাজুক হাসলো। চোখ তুলে সামারের দিকে তাকাতেও লজ্জা করছিল ওর। ছেলেদের লজ্জা পেতে দেখলে সামারের ভীষণ হাসি পায়। মুখ টিপে হেসে অর্ণবকে নিয়ে ছাদে চললো সে।
ছাদের চারপাশ জুরে টবে অসংখ্য গাছ লাগানো। কিছু গাছ বেশ লম্বা হয়ে উঠেছে। সামার দু একটা গাছের পাতায় হাত বুলিয়ে গুণগুণ করে গান গাইছে। অর্ণবের হৃদস্পন্দন আকাশচুম্বী। আজ খুব অন্যরকম লাগছে তার।
সামার হাত ঘুরিয়ে নাচার ভঙ্গীতে অর্ণবের দিকে ফিরে বলল, ‘আমাকে আপনার ভালো লাগে?’
অর্ণব চমকে উঠল। গলা শুকিয়ে এলো তার। চোখ বন্ধ করে দ্রুত শ্বাস নিতে লাগল সে।
সামার বলল, ‘আমাকে মা পছন্দ করে না। কারণ আমি মুখে যা আসে তাই বলে দেই। অনেকেরই এটা পছন্দ না। তাই জিজ্ঞেস করলাম আমাকে আপনার ভালো লাগে কী না। ভালো না লাগলে আমি কথাটা বলবো না।’
অর্ণব ঢোক গিলে দাঁড়িয়ে রইল। চোখ পিটপিট করছে সে। সামার আরও একটা গাছের পাতা ছুঁয়ে দিয়ে বলল, ‘আমার আম গাছ ভালো লাগে। কিন্তু আম খেতে ভালো লাগে না। এজন্য যখনই গাছে আম ধরে, আমি ছিঁড়ে খেলতে খেলতে ফেলে দেই। এজন্যও আম্মু আমাকে দেখতে পারে না।’
শব্দ করে হাসলো সামার। অর্ণব মুচকি হেসে বলল, ‘কিন্তু এই স্বভাবগুলোর জন্যই তো আপনি সামার। এগুলোই আপনাকে আর সবার চাইতে আলাদা করেছে।’
‘বাহ আপনি তো সবকিছু বেশ ভালো বোঝেন। জানেন আমিও এটাই বলি। আমার মতো মেয়ে এই ভুখণ্ডে আর একটিও নেই। ঠিক বলেছি?’
‘হুম একদম ঠিক বলেছেন।’

সামারের মন ফুরফুরে। দক্ষিণা বাতাস গায়ে দোল দিচ্ছে। ফতফত শব্দ করে উড়ছে গাছের পাতা। একটি পাতার সঙ্গে আরেকটি পাতার সন্ধিতে যে শব্দ হচ্ছে, তাতেও মনে প্রেম জাগছে অর্ণবের।

হাঁটতে হাঁটতে ছাদের অন্যদিকে এসে দাঁড়ায় সামার। রাতের শহর ছাদ থেকে দেখার মজাই আলাদা। সবকিছুকে কেমন অচেনা অচেনা লাগে তখন। সে এখনই কথাটা অর্ণবকে বলে দেবে।

অর্ণব হা করে সামারের দিকে চেয়ে আছে। সামারের কথাটা শোনার জন্য তার একটুও তাড়া নেই। কথা শেষ হলেই তো এই মুহুর্তটি শেষ। যদিও অর্ণব জানেনা কথাটি কী বিষয়ে! তবে এই মুহুর্তকে দ্রুত ফুরিয়ে যেতে দিতে রাজি নয় সে। দরকার হলে সামারের কথা শোনার জন্য সে সারা রাত অপেক্ষা করবে।

‘আপনার প্রেমিকা আছে?’

সামারের প্রশ্ন শুনে চমকে উঠলো অর্ণব। এমন প্রশ্ন সোজাসাপটা মুখের ওপর বলে দেয়া যায় নাকি! উফফ হাত পা কেমন শিরশির করে উঠল অর্ণবের।
লাজুক কণ্ঠে সে বলল, ‘না নেই।
‘ কখনো করেছেন?’
‘কী!’
‘প্রেম।’
অর্ণব লাজুক ভঙ্গীতে হাসলো। ‘করবো না আবার। আজকাল তো সবাই প্রেমে পড়ে। প্রেম না করলে কী এত বড় হতে পারতাম? হে হে।’

নিষ্পাপদের মতো শব্দ করে অর্ণব হাসছে। সামার কয়েক মুহুর্ত অর্ণবের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হুট করেই বলে ফেলল, ‘আমি একজনকে ভালবাসি।’
অর্ণব শিহরিত হল। কেন যে মনে হচ্ছে সামার তার কথাই বলবে ওকে। সামারের মুখে অর্ণবকে ভালবাসার কথা বলার চাইতে আর স্মৃতিমধুর কোনো মুহুর্তই আসবে না অর্ণবের জীবনে।
অর্ণব লাজুক গলায় বলল, ‘তাই!’
‘হুম। দেখেন সব কথা আমি সবাইকে মুখের ওপর বলে দেই। আপনি কিছু মনে করেন নি তো?’

অর্ণব মুচকি হাসল। সে কিছু মনে করেনি। সে নিশ্চিত হয়ে গেল সামার তাকেই ভালবেসে ফেলেছে। শহুরে এই রাত্রিকে ভয়ংকর সুন্দর মনে হতে লাগল অর্ণবের। সেদিনের শাড়ি পরে তার সঙ্গে দেখা করতে আসা, তার অপেক্ষায় বসে থাকা, আজ ছাদে ডেকে নিয়ে এসে ভালবাসার কথা বলা, সবকিছুই যেন একটা ইঙ্গিত ই দেয়, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি অর্ণব।’

এসব ভাবতে ভাবতে অর্ণব কাল্পনিক এক রাজ্যে প্রবেশ করলো। তার চোখের সামনে ভেসে উঠল তার ও সামারের দুই রুমের একটা ছোট্ট বাসার সংসার। মেঝেতে ঝকঝকে সাদা টাইলস। জানালা দিয়ে মিঠে রোদ আসে তাতে৷ শীতকালের কাচামিঠে রোদে স্নান করে চুল শুকাতে বসে সামার। পরনে আকাশী রঙের শাড়ি। মুচকি হেসে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে সামার জিজ্ঞেস করবে, ‘এই কী দেখছো অমন করে?’
অর্ণব কী বলবে তখন? ‘তোমাকে দেখছি। জগতের শ্রেষ্ঠ রূপবতী মেয়েটি আমার স্ত্রী৷ আমি সেটা ভাবছি।’
সামার লাজুক হেসে অর্ণবকে মারতে আসবে। সামারের হাত ধরে ওকে কাছে টেনে নেবে অর্ণব। আহ! কল্পনায় ভবিষ্যতের স্বপ্নমধুর দিনের স্পর্শ পেয়ে অর্ণব বর্তমানের সুখটাকে আরও চারগুণ বাড়িয়ে ফেলল। ছাদে ভেসে আসা বাতাসকে ওর মনে হতে লাগল স্বর্গের হাওয়া।
সামার বলল, ‘কিন্তু একটা সমস্যা আছে।’
‘কী সমস্যা?’
‘আমি কিছুতেই আব্বু আম্মুকে এটা বলতে পারছি না। আসলে লাইফে এখন বিশেষ কিছুই নেই করার। এখনই বিয়েটা করতে পারলে জোশ হয়। বিয়ে মানে একটা নতুন এডভেঞ্চার। কিন্তু নিজের বিয়ের কথা তো আর নিজে বলা যায় না।’

অর্ণব লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। আজ সবকিছু এত ভালো লাগছে কেন তার! সে জানতে চাইলো, ‘আপনি কী এখনই বিয়ে করতে চাইছেন?’
‘হুম। চাইছি বলতে বড় আপার ব্যাপারটা হয়তো জানেন। আমি আর ফ্যামিলিকে প্রেশারে রাখতে চাই না। মেয়েদের বিয়ে না হলে বাবা মা অনেক টেনশনে থাকে। কিন্তু তারা বোঝেই না, ইউরোপ আমেরিকায় মেয়েরা সারাজীবন বিয়ে না করেও কাটিয়ে দিতে পারে।’
শব্দ করে হাসলো অর্ণব। সামারের কথা শুনতে ওর ভীষণ ভালো লাগে। চঞ্চল এই মেয়েটার দিকে তাকালেই ওর বুকে মৃদঙ্গ বেজে উঠে। হাসি থামতেই সামার অর্ণবের হাত ধরে ফেলল। চমকে উঠলো অর্ণব।
সামার অনুরোধের সুরে বলল, ‘প্লিজ অর্ণব ভাই। আপনি আব্বুকে বলেন। আব্বু আপনাকে অনেক পছন্দ করে। আম্মুও করে। আপনি যদি তাদেরকে আমার পছন্দের কথা জানান, তারা কিছুতেই না করতে পারবে না। আগে প্রাথমিকভাবে জানান আপনি। বাকিটা আমি ম্যানেজ করবো। পাত্রপক্ষ কবে আমাকে দেখতে আসবে সেসব আমিই ঠিক করে নেবো। আপনি জাস্ট প্রাথমিকভাবে আব্বু আম্মুকে জানান, আমি একজনকে পছন্দ করি। বড় আপা যদি এখন বিয়ে না করে, তাহলে তারা যেন…’

সামার হাত সরিয়ে নিলো। আরজুর সঙ্গে অর্ণবের পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। আরজুকে দেখলেই অর্ণবের ভালো লেগে যাবে। আর একবার ভালো লেগে গেলে সে নিশ্চয়ই মনের মাধুরি মিশিয়ে বাবা মাকে আরজুর ব্যাপারে বলতে পারবে।

অর্ণব মুগ্ধতায় মাখামাখি। এত সুন্দর মুহুর্ত তার জীবনে আসেনি কখনো। সামার নিজেই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে এ কথা স্বপ্নেও ভাবেনি সে। খুব দ্রুতই সে জাভেদ আলীর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলবে।
সামার বলল, ‘আপনি চুপ করে আছেন কেন? আচ্ছা শুনু। আপনি কাল ফ্রি থাকলে বাইরে আমার সঙ্গে কোথাও দেখা করুন।’
‘অবশ্যই। কাল আমি অফিসের পর সারা রাত ফ্রি।’

সামার বলল, ‘তাহলে কাল দেখা করুন। একটা জরুরি বিষয় বলবো আপনাকে।’
অর্ণব দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। ভীষণ উত্তেজিত বোধ করছে সে। অতীতে অনেক মেয়েই তাকে বলেছে, ‘আপনি একটা বোকা। অর্ণব, তুমি এত বোকা কেন?’ এই কারণে একটাও ভালো মতো প্রেম হয়নি তার। হলেও বেশিদিন টেকেনি। সেখানে সামারের মতো একজন রাজকুমারী এই বোকাটাকে ভালবাসেছে, বিয়ে করতে চাইছে, এটা তার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। অর্ণব মনেমনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল সৃষ্টিকর্তার প্রতি।
সামার বলল, ‘আপনি তাহলে যান। আমি আরও কিছুক্ষণ ছাদে থাকবো।’
অর্ণবের বলতে ইচ্ছে করছিল, ‘আমিও থাকি?’ কিন্তু আজকে এরবেশী চাওয়াটা অনৈতিক হয়ে যাবে। না চাইতেই অনেক কিছু পেয়ে গিয়েছে সে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে ঠিকমতো বাসায় পৌঁছাতে পারবে তো, ভাবতে ভাবতে অর্ণব সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগল।

আরজুকে ফোন করে ঝলমলে গলায় সামার বলল, ‘অর্ণব ভাইকে বলেছি তোমার কথা। বাবার সঙ্গে আলাপ করতেও বলেছি।’
‘ওকে মিষ্টি পাখিটা। ওদিকটা তুমি সামলাও, আমি এদিকে আমার বাসায় ম্যানেজ করি।’
‘আমরা কী সত্যি সত্যি বিয়ে করবো আরজু?’
‘হুম। তাই তো মনে হচ্ছে।’
‘কিন্তু আরজু, আরও কিছুদিন প্রেম করলে ভালো হতো না?’
‘সে কী! আমিই এই কথা গত কয়েকদিন যাবত বলছি। আর তুমি উলটো আমাকে বুঝাচ্ছো এই সময়ে বিয়ে করলে আমরা আরও অনেক বেশী সময় একসঙ্গে থাকতে পারবো ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন আবার নিজেই এই কথা বলছো?’
সামার খিলখিল করে হাসলো। হাসতে হাসতে গাছের পাতায় হাত বুলিয়ে সামার বলল, ‘আমি বিয়েতে কিন্তু লাল শাড়ি পরবো না।’
‘তো কী প্প্রবে?’
‘অন্য যেকোনো কালার। এই ধরো সাদা, বাদামী, খয়েরী।’
‘লাল আর খয়েরীর মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে?’
‘ আছে না আবার? তুমি আমাকে মাঝেমাঝে বলো আমি নাকি শ্রদ্ধা কাপুরের মতো দেখতে। আমাদের মধ্যে পার্থক্য আছে নাকি নেই?’
‘নাহ নেই।’
‘এই, একটা মাইর খাবে। সামার ইজ সামার। নো কম্পেয়ার হুম।’

খুশির আবেগ মেশানো আনন্দময় কণ্ঠে কথা বলতে লাগল সামার। রাত গভীর হতে থাকে। একসময় জাভেদ আলী ছাদে এলেন মেয়েকে ডাকতে। বাবার হাত ধরে সামার বলল, ‘আব্বু, আমি অনেক দ্রুত বড় হয়ে গেছি তাইনা?’
‘হুম রে মা। বড়রা বড় হয়না, তারা একইরকম থাকে। অথচ ছোটরা বড় হয়।’
‘মানে!’
‘জাহ্নবীকে গত পনেরো বছর ধরে মনে হচ্ছে একইরকম দেখছি। বড় হচ্ছে না। কোনো চেঞ্জ নেই। অথচ তুই আর ভায়োলেট কত দ্রুত বড় হয়ে গেলি।’
‘বাহ দারুণ একটা কথা বলেছো তো আব্বু। বড়রা বড় হয় না, বড় হয় ছোটরা।’
‘আমি তো এককালে দার্শনিক ছিলাম।’
‘দার্শনিক জাভেদ আলী। হা হা হা।’

বাবা ও মেয়ে অনেক্ষণ শব্দ করে হাসলেন। একসঙ্গে দাঁড়িয়ে রইলেন ছাদে৷ জীবনটা অতটাও খারাপ না, যতটা মানুষ বলে। ভাবতে ভাবতে হেসে উঠল সামার।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here