উপন্যাসঃ মেঘফুল
পরিচ্ছেদঃ ৩৭,৩৮
লেখাঃ মিশু মনি
৩৭
রাত গভীর হলে জাহ্নবী ও ভায়োলেট বারান্দায় এসে বসল। আজকের রাতটা জাহ্নবী’র জীবনে অবিস্মরণীয় একটা রাত হতে চলেছে। যার উত্তেজনা ধরে রাখতে পারছে না সে। আদরের বোন ভায়োলেটের রহস্য জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছটফট করছে।
রাস্তায় গাড়ির চলাচল নেই বললেই চলে। নিস্তব্ধ চারপাশ। বারান্দার বৃক্ষলতা গুলোও বেশ বড় হয়ে উঠেছে, সবুজে ছেয়ে যাচ্ছে বারান্দা’টা। গল্প করার জন্য আগেই জাহ্নবী বারান্দা গুছিয়ে রেখেছে।
ভায়োলেট আরাম করে বসল। মৃদু আলোতে দুই বোন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। কী কথা বলতে চায় ভায়োলেট!
জাহ্নবী বলল, ‘আর তর সইছে না। বল না প্লিজ?’
‘কী বলবো?’
‘যা যা বলতে চেয়েছিলি। আমাকে কীসের দায়িত্ব দিবি তুই?
ভায়োলেট মুচকি হেসে বলল, ‘খুব কঠিন দায়িত্ব কিন্তু।’
‘উফফ এত রহস্য করছিস কেন? পাজি মেয়ে কোথাকার।’
হো হো শব্দে হেসে উঠল ভায়োলেট। জাহ্নবীর এই অস্থিরতা দেখতে তার ভালো লাগছে।
জাহ্নবী বলল, ‘যাঃ এবার উঠে যাবো কিন্তু।’
ভায়োলেট ওর হাত চেপে ধরে বলল, ‘রাগ করো না আপু। বলছি। তোমাকে আমি তোমার স্বপ্নের মতো জীবন এনে দেবো। তুমি সবসময় চেয়েছো না, একটা খোলা বারান্দা ওয়ালা বাসায় থাকবে, ঝুম বৃষ্টিতে ভিজবে?’
‘আমার স্বপ্ন পূর্ণ করে দেয়াটা কি তোর স্বপ্ন?’
ভায়োলেট মুচকি হেসে বলল, ‘ঠিক তা নয়। অনেক ব্যাপার আছে।’
‘ধেৎ আর ভাল্লাগছে না। বড্ড রহস্য করছিস তুই।’
ভায়োলেট হেসে বলল, ‘আপু, একটা সময় আমিও স্বপ্ন দেখতাম একটা ছোট্ট পুরনো বাড়িতে আছি, স্বপ্নের সংসার হবে আমার আর রুশোর। কিন্তু রুশো আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার পর আমি আর এই স্বপ্ন কখনো দেখিনি।’
জাহ্নবী বলল, ‘মন খারাপ করিস না। আজকে রুশোকে নিয়ে কোনো কথা বলবো না বলেছিলাম।’
ভায়োলেট বলল, ‘হুম। তোমাকে এখন একটা জরুরি কথা বলবো। আমি দীর্ঘদিন ধরে একটা স্টার্টআপ প্লান করছি। নিজেকে প্রস্তুত করতে আমার দেড় বছর সময় লেগেছে। এখন মোটামুটি সবকিছু রেডি, আর আমিও প্রস্তুত। শুধু ইনভেস্টমেন্ট পেলেই বিজনেসটা শুরু করবো।’
জাহ্নবী উচ্ছ্বসিত হয়ে জানতে চাইলো, ‘সত্যি বলছিস! এটা তো খুবই ভালো খবর।’
‘আরও একটা ভালো খবর আছে।’
‘তারাতাড়ি বল।’
‘এই বিজনেসে তুমি আমার সঙ্গী হবে। তোমাকে সিইও বানিয়ে দেবো। কারণ, এই জগতে একমাত্র তুমিই আমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত আর তুমিই এর যোগ্য।’
‘কী!’
‘হুম। তবে শুরুতে বেতন পাবে খুব সামান্য। বিজনেসটা দাঁড় করানো পর্যন্ত বেতন দিতে পারবো না। ততদিন তোমার চাকরিটাও চালিয়ে যেও।’
অবিশ্বাস্য ভঙ্গীতে তাকিয়ে রইল জাহ্নবী। ভায়োলেট নামের ছোট্ট বোনটাকে হঠাৎ করেই তার খুব বড় মনে হচ্ছে। চোখ ভিজে উঠতে লাগল তার।
ভায়োলেট বলল, ‘এখন খারাপ খবরটা বলবো।’
‘খারাপ খবর আবার কী!’
‘তিন বছরের মধ্যে আশাকরি আমার ইনভেস্টমেন্ট উঠে আসবে। তারপর বিজনেসের দায়িত্ব তোমার কাঁধে দিয়ে আমি হারিয়ে যাবো।’
এতক্ষণে চমকে উঠলো জাহ্নবী। আবছা আলোয় পাশে বসে থাকা ভায়োলেটকে ওর সত্যিই আজ সম্পূর্ণ অচেনা একজন মানুষ বলে মনে হচ্ছে। হতবিহ্বল অবস্থা কাটিয়ে সে জানতে চাইলো, ‘বুঝলাম না, কোথায় হারিয়ে যাবি তুই?’
ভায়োলেট বলল, ‘সেটা এখনো ঠিক করিনি। হারিয়ে যেতে টাকার দরকার। তাই আগে শক্ত একটা অর্থনৈতিক খুঁটি দাঁড় করাবো যাতে কখনো টাকার সমস্যায় না পড়ি। তুমি আমার বিজনেসটাকে নিজের সন্তানের মতো আঁকড়ে থাকবে। আমার প্রয়োজনীয় খরচটুকু শুধু আমাকে পাঠালেই হবে।’
জাহ্নবী উদ্বিগ্ন গলায় জানতে চাইলো, ‘কোথায় যাবি তুই ভায়োলেট? কেন যাবি?’
ভায়োলেট একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, ‘আপু এই সমাজে থাকতে আমার ভালো লাগে না। এত নেগেটিভিটি, এত নোংরা একটা সমাজব্যবস্থা, সবকিছুর ভীড়ে জীবনটা বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। রুশোকে হারানোর পর থেকে একটা মুহুর্তও নিজের ভেতর শান্তি জিনিসটা অনুভব করিনি আমি। রুশো চেয়েছিল আমি অনেক বড় হই। ওর সেই স্বপ্ন পূরণ করবো। বিজনেসটাকে দেশের সেরা একটা ব্রাণ্ডে পরিণত করবো। রুশো কোনোদিন জানতে পারবে কী না জানিনা, তবে আমি এটা করবো-ই। তারপর দুম করে নিরুদ্দেশ।’
‘আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবি?’
ভায়োলেট জাহ্নবী’র দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, ‘তুমিও গেলে আমার ব্যবসাটাকে দেখে রাখবে কে?’
‘বড় কঠিন দায়িত্ব দিচ্ছিস আমাকে।’
হাসলো ভায়োলেট। জাহ্নবীর হাত চেপে ধরে সে বলল, ‘মাঝেমাঝে তুমি আমার কাছে ভ্যাকেশন কাটাতে যাবে।’
‘আচ্ছা!’
জাহ্নবী’র দৃষ্টিতে বিস্ময়। রাতের অন্ধকার আকাশের দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে রইল সে। তারপর বলল, ‘তুই সত্যি সত্যি স্বপ্নের মতো জীবন পেতে যাচ্ছিস।’
‘না রে আপু। জীবনটা এত সহজ না। এটা তো শুধুমাত্র আমার স্বপ্নের কথা বললাম। পুরো পথটাই এখনো বাকি। আল্লাহ তায়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী। তিনি সবসময় আমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ কোনো পরিকল্পনা করে রাখেন আমাদের জন্য। সবই আল্লাহর হাতে। আমরা শুধু স্বপ্ন দেখতে পারি আর চেষ্টা করতে পারি।’
জাহ্নবী বলল, ‘হুম। তুই হারিয়ে যাবি, ভাবতেই আমার কেমন যেন লাগছে!’
‘ভয় লাগছে?’
‘একটু তো লাগছে ই। দেশের যা অবস্থা! আচ্ছা, তুই কোথায় হারিয়ে যেতে চাস?’
ভায়োলেট উত্তর দিলো, ‘এই ধরো ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জের কোনো একটা ছোট্ট দ্বীপে। যেখানে মানুষের বসতি নেই বললেই চলে, কোলাহল নেই, জীবনের জটিলতা নেই। একটা সাজানো গোছানো ভিলা নিয়ে সেখানে থাকবো৷ রান্না করবো, খাবো, ঘুমাবো, সমুদ্রে বোট নিয়ে যাবো মাছ ধরতে। আর ভিডিও কলে তোমার সঙ্গে মিটিং করবো।’
শেষ কথাটা বলতে গিয়ে হেসে ফেলল ভায়োলেট। মন খারাপ ভাবটা কাটতে শুরু করেছে তার। উৎসুক হয়ে বলল, ‘দারুণ তো! তবে এটা খুব কঠিন কাজ রে। আমি এত বড় স্বপ্ন জীবনেও দেখতে পারতাম না। কোনো মেয়েই পারবে না মনেহয়।’
‘হা হা হা। এরকম ইচ্ছে অনেকেরই হয়। দূরে কোথাও হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে। একা থাকার ইচ্ছে। কিন্তু কেউ পূর্ণ করতে পারার দুঃসাহসিক কাজ হাতে নেয় না। আমি এই রিস্ক নিতে চাই।’
‘তুই অনেক সাহসী। অনেক।’
‘তোমাকেও অনেক সাহস দেখাতে হবে আপু।’
‘সাহস তো অলরেডি দেখিয়েছি। সাহস না হলে বাসা থেকে বেরিয়ে এখানে এসে থাকতে পারতাম? তুই আমাকে স্বাধীনতার স্বাদ পাইয়ে দিয়েছিস। তোর স্বপ্নের মতো সবকিছু হলে আমি আরও স্বাধীন একটা জীবন পাবো। আমি একটা প্রতিষ্ঠান চালাবো, মা গো! ভাবতেই পারছি না।’
ভায়োলেট হেসে বলল, ‘পারবে। আমার মাথায় বিজনেস প্লান আসার পরের দিনই চাইলে দশ বিশ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করতে পারতাম, করিনি। দেড় বছরের বেশী সময় ধরে প্লানটাকে মজবুত করেছি, নিজেকে তৈরি করেছি। তুমিও তৈরি করতে পারবে আপু।’
‘ভায়োলেট, তুই যেখানে যাবি সেখানে তোর একা লাগবে না?’
‘হাজারটা মানুষের ভীড়ে থেকেও তো একা লাগে আপু। তারচেয়ে রূপকথার জগতে গিয়ে একা থাকা ভালো না?’
‘রূপকথার জগত ই তো! আমার ইচ্ছে করছে এখনই ওখানে ঘুরতে যাই।’
‘ক্যারিবিয়ান আইল্যান্ডে অনেক খরচ আপু।’
‘যদি এত টাকা আমাদের না হয়?’
‘না হলে ফ্রান্স কিংবা সুইডেনের কোনো নির্জন জংলা গ্রামে গিয়ে একটা ছোট্ট বাড়ি করে থাকবো।’
‘ইস! তোর কথা শুনে আমার চোখের সামনে ঝলমলে রৌদ্রজ্বল দিনে একটা ঘন নীল পাহাড়ে ঘেরা সমুদ্র ভেসে উঠছে। সমুদ্রের কাছাকাছি একটা ভিলা। আবার এখন দেখছি বরফে ঢাকা একটা নির্জন জায়গায় একটা ছোট্ট বাড়ি। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না ভায়োলেট। এই স্বপ্ন দেখে তুই কীভাবে অপেক্ষা করছিস?’
ভায়োলেট মুচকি হেসে বলল, ‘রুশোকে ছাড়া বেঁচে আছি, আর এটা তো…’
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ভায়োলেট। তারপর উঠে গেল কফি বানাতে। জাহ্নবী মুগ্ধ হয়ে বসে রইল। সবকিছু কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে তার কাছে। রূপকথার গল্পের মতো। আকাশে মিটমিট করে কয়েকটা তারা জ্বলতে দেখে বুকের ভেতর কোথায় যেন স্বপ্নও জ্বলজ্বল করে উঠল।
কফির মগ হাতে নিয়ে এসে বসলো ভায়োলেট। বলল,
এসব তো স্বপ্নের কথা বললাম। এখন বাস্তবে ফিরে আসো। সবচেয়ে কঠিন পদক্ষেপ টা আমাদেরকে এখন নিতে হবে। শুনলে তোমার হার্টবিট বন্ধ হয়ে যায় কী না ভাবছি।’
জাহ্নবী চমকে পাশ ফিরল, ‘আরও কী বাকি আছে!’
‘আগে কফিটা শেষ করো। শান্ত হও তারপর বলছি।’
জাহ্নবী হাত বাড়িয়ে কফির মগ নিলো। খোলা চুলে ভায়োলেট এসে বসলো তার পাশে। আকাশের দিকে তাকিয়ে কফির মগে চুমুক দিয়ে ভায়োলেট বলল, ‘ ‘আমি ছিলাম ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল। সবসময় ভালো রেজাল্ট করে এসেছি। রুশো আমাকে সবসময় বড় বড় স্বপ্নের কথা বলত। ইন্টারমিডিয়েটে আমি যখন জঘন্য একটা রেজাল্ট করলাম, লজ্জায় কাউকে মুখ দেখাতে পারছিলাম না, আমি সেদিন রুশোকেই সব দোষ দিয়েছিলাম। ওকে বলি, তুমি আমার লাইফে আসার কারণেই আমার এই অবস্থা। অনেক বিশ্রীভাবে কথা শুনিয়েছিলাম ওকে। রুশো একটা জবাবও দেয়নি। চুপচাপ শুনেছে। তবুও আমাকে বুঝিয়েছে, যা হবার হয়েছে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি নাও। হয়তো অনেকদিন বোঝানোর পরও ও দেখেছে আমি কিছুতেই ঠিক হচ্ছি না, দিনদিন পাগলামি বেড়েই চলেছে, সে কারণেই কী না জানিনা, রুশো হুট করে হারিয়ে গেল। কেউ ওর খোঁজ দিতে পারলো না। ওর পরিবারের লোকজনও না। রুশো এমনভাবে হারিয়ে গেল, আর কখনো খুঁজে পেলাম না তাকে। বেশ কয়েক মাস পর একদিন দেখলাম ওদের বাসায় তালা দেয়া। পুরো পরিবারটাই চোখের পলকে হারিয়ে গেল আমার কাছ থেকে।’
জাহ্নবী কোনো শব্দ করতে পারল না। নিষ্পলক চোখে সে ভায়োলেটকে দেখছে। নির্বিকার ভঙ্গীতে কফির মগে চুমুক দিয়ে ভায়োলেট বলল, ‘কখনো মনেহয় রুশো আমার আশেপাশেই আছে, কখনো মনেহয় বিয়ে করে হয়তো সংসার সাজিয়েছে, আবার কখনো ভয় হয়, ও হয়তো আমার ওপর অভিমান করে পরিবার থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে কী না!’
জাহ্নবী খানিক্ষন চুপ থেকে উত্তর দিলো, ‘রুশো তোর ভালো চেয়েছিল। সত্যি বলতে আমরা কেউই তোর কাছে তখন ওরকমটা আশা করিনি। রুশোও হয়তো অপরাধবোধে ভুগছিল।’
‘অপরাধবোধ কী আজও কমেনি আপু?’
ভায়োলেটের নির্বিকার কণ্ঠে বিস্ফারিত হল রাগ। নিজেকে সামলে নিয়ে সে বলল, ‘এবার রুশোর স্বপ্নই আমি পূরণ করতে চাই। তারপর কোনো একদিন সে আমাকে খুঁজবে সরি বলার জন্য। কিন্তু আমাকে আর পাবে না। ততদিনে আমিও হারিয়ে যাবো।’
‘ভায়োলেট, প্লিজ বোন আর কষ্ট পাস না।’
‘এখন আর কষ্ট পাই না। কষ্টের পালা শেষ। আমার একাকীত্ব সয়ে গেছে।’
‘তোরও রুশোকে সরি বলা উচিৎ ছিল।’
‘জানি। সেটা বলার সুযোগ দেয়নি। পাগলের মতো খুঁজেছি আমি ওকে। একদিন সেও আমাকে খুঁজবে সরি বলার জন্য। আমিও সুযোগ দেবো না।’
ভায়োলেট চোখ মুছে শান্ত হওয়ার চেষ্টা করল, ‘যাইহোক, এখন তোমাকে একটা সিরিয়াস কথা বলি।’
‘বল।’
‘আমার বিজনেসে ইনভেস্ট করার জন্য প্রথম ধাপে বিশ লক্ষ টাকা দরকার। পরের ধাপে আরও বেশী দরকার হতে পারে। সবমিলিয়ে পঞ্চাশ লাখের মতো হলে আমি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভালো একটা বিপ্লব ঘটিয়ে দিতে পারবো।’
জাহ্নবী কফির মগ ধরে রাখতে পারছে না। হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে। ভায়োলেট বলল, ‘কী হল?
‘তুই পঞ্চাশ হাজার চেয়েছিস, সেটা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল তাই পেরেছি। কিন্তু বোন, পঞ্চাশ লক্ষ তো এ জীবনে সম্ভব না!’
বড় বড় চোখে জাহ্নবীকে চেয়ে থাকতে দেখে ভায়োলেট মুচকি হেসে বলল, ‘জানি। আমি অল্প করে ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজ করতে পারবো। কিন্তু এভাবে তো অনেক বছর লাগবে আমার ব্যবসা দাঁড় করাতে। তাছাড়া ওদেরকে পারসেন্টেজ দিতে দিতেই আমি শেষ, নিজের স্বপ্নটাকে গড়ে তুলবো কখন? আমার ক্যাশ টাকা দরকার।’
‘তাহলে বোন ডাকাতি করতে হবে। ব্যাংক ডাকাতি ছাড়া উপায় দেখছি না। এত টাকা কোথায় পাবি তুই?’
ভায়োলেট জাহ্নবী’র হাত খপ করে ধরে বলল, ‘আব্বুর কাছে চাইবো।’
‘তোর মাথা খারাপ!’ জাহ্নবী অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বলে ফেলল।
পরিবারের সবাই জানে জাভেদ আলীর সারা বছরের সঞ্চয় আর পেনশনের টাকা মিলিয়ে তিনি ষাট লাখের মতো টাকা রেখেছেন নিজের ফ্ল্যাটের কাজ সম্পন্ন করার জন্য। জমি কিনে ফেলে রেখেছেন দীর্ঘদিন। অনেকের প্রস্তুতি বাকি ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই বাড়ির কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। ওই বাড়িতে মাত্র একটা ফ্ল্যাট পাবেন জাভেদ আলী। যেটার বিনিময় মূল্য প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। সেই টাকা তিনি কীভাবে মেয়েদেরকে দিয়ে দেবেন! এটা তো পঞ্চাশ ষাট টাকা নয়।
জাহ্নবী এতক্ষণে কল্পনার রঙিন জগত থেকে বাস্তবে ফিরে এসেছে। আর এই বাস্তব জগতটা তার কাছে ভীষণ কঠিন। কল্পনা করা যতটা সহজ, বাস্তবে বাস করাটা তার চাইতে দ্বিগুণ কঠিন।
ভায়োলেট বলল, ‘আমি জানি এটা ভয়ংকর রিস্কি একটা ব্যাপার হয়ে যাবে। কিন্তু আমার স্টার্টআপের জন্য এই রিস্ক নিতেই হবে আপু। আমি তিন বছরের মধ্যেই বাবার পুরো টাকাটা দিয়ে দিতে পারবো আশাকরি।’
‘আর ফ্ল্যাটের কাজ?’
ভায়োলেট একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, ‘অপশন এক, সবাইকে বোঝাতে হবে। সবাই সবার ফ্ল্যাটের কাজ করবে, বাবারটা বাকি থাকবে। তিন বছর সময় নেবে বাবা। এর মধ্যে যদি আমরা টাকা ম্যানেজ করতে পারি, আস্তে আস্তে কাজ হবে আর নয়তো ফ্ল্যাটটা অন্য কারও কাছে হস্তান্তর করা ছাড়া উপায় নেই।’
জাহ্নবী শিউরে উঠে বলল, ‘বাবা শুনলে ভীষণ অবাক হবে ভায়োলেট। বাবা আমাদের শখ আহ্লাদ পূরণ করে মানে এই না যে আমাদেরকে ছেলে খেলার মতো এতগুলো টাকা দিয়ে দেবে। আর তাছাড়া আম্মু শুনলে নির্ঘাত স্ট্রোক করবে।’
ভায়োলেট বলল, ‘আমরা দুইজন মিলে বাবার সঙ্গে বসবো। প্রথমে বিশ লাখ চাইবো। বাড়ির কাজ শুরু হতে হতে আরও মাস ছয়েক লেগে যাবে তুমি দেখো। ততদিনে আমার ব্যবসা শুরু করে দেবো। আমাদের ডেভেলপমেন্ট দেখলে দ্বিতীয় ধাপে বাবা নিজেই টাকা দেবেন আশাকরি।’
জাহ্নবী একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, ‘বুঝতে পারছি না কী করা উচিত। আমার হাত পা কাঁপছে।’
ভায়োলেট জাহ্নবী’র হাত ধরল। টের পেলো সত্যিই তার হাত কাঁপছে। এমন ভয়ংকর কম্পনের ভেতরেও দুই বোন ঠিকই ভেতরে ভেতরে উত্তেজিত হয়ে উঠল। কিন্তু ভয়ংকর পদক্ষেপ, জাভেদ আলীকে তারা রাজি করাবে কী করে!
চলবে..
উপন্যাসঃ মেঘফুল
পরিচ্ছেদঃ ৩৮
লেখাঃ মিশু মনি
জাভেদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনায় বসেছে তার দুই মেয়ে জাহ্নবী ও ভায়োলেট। কথা শুরুর আগেই ক্রমাগত ঘামছে জাহ্নবী।
ভায়োলেট আগে মুখ খুলল, ‘বাবা, তোমাকে একটা কথা বলবো। রাগ করতে পারবে না।’
‘রাগ করার মতো কথা তোরা বলবিও না আমি জানি।’ হেসে উত্তর দিলেন জাভেদ আলী।
ভায়োলেট এক পলক জাহ্নবীর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘বাবা, আজকের কথাটা রাগ করার মতোই। আমি জানি এটা তোমাকে বলা ঠিক হবে না, কিন্তু তুমি ছাড়া তো আর কেউ নেই বলার মতো।’
‘আহা না বললে বুঝবো কীভাবে মা?’
‘বাবা আমি একটা ব্যবসা করতে চাই।’
‘ব্যবসা করবি! তুই?’
‘হ্যাঁ। আমি আর আপু দুইজন মিলে। জাভেদ আলী দুই মেয়ের মুখের দিকে তাকান। জাহ্নবী ঘামছে এখনও। বাবার খুব কাছের হয়েও তাকে ভীষণ ভয় পায় সে।
ভায়োলেট বলল, ‘আমার পুরো বিজনেস প্লান রেডি। দুই বছর ধরে এটাকে গড়ে তুলেছি। তুমি কী শুনতে চাও?’
জাভেদ আলী উৎসাহের সঙ্গে বললেন, ‘অবশ্যই শুনতে চাই। আমার দুই মেয়ে আমার কলিজার টুকরা। তারা বিজনেস করবে আর সেই আইডিয়া আমি শুনবো না?’
‘বাবা, আগে বলো আমাদের ওপর তোমার ভরসা আছে তো?’
‘এতদিন পরেও তোরা বুঝতে পারছিস না আমার তোদের ওপর ভরসা আছে কী না?’
জাহ্নবী বলল, ‘আব্বু, আমরা সবসময় যা করতে চেয়েছি, তুমি আমাদেরকে সেটারই অনুমতি দিয়েছো। আমি অনেক বিয়ে ভেঙে দিয়েছি, তুমি কখনো কিছু বলো নি। কিন্তু এখন যেটা বলবো সেটা শোনার পর হয়তো ভাব্বে এটা আমাদের ছেলেমানুষী আবদার। আসলে এটা কোনো ছেলেমানুষী নয়। এই আইডিয়া সফল হলে আমাদের সমাজের উন্নতিতে যেমন কাজ করবে, তেমনই ভায়োলেটের এতদিনের গড়ে তোলা স্বপ্নটাও পূরণ হবে।’
জাভেদ আলীর চোখে ও মুখে তীব্র কৌতুহল ফুটে উঠল। মেধাবী মেয়েদেরকে নিয়ে তিনি সবসময়ই গর্ববোধ করেন। তার মেয়েরা আর যাই করুক, কখনো অন্যায় আবদার করবে না, এই বিশ্বাস তার আছে।
ভায়োলেট তার পুরো ‘স্টার্টআপ’ পরিকল্পনা বাবাকে খুলে বললো। সবটা শুনে মাথা ঝাঁকালেন জাভেদ আলী। অনেক্ষণ গম্ভীর মুখে বসে থেকে তিনি আইডিয়া নিয়ে ভাবলেন। বাবার কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে জাহ্নবী ও ভায়োলেট একে অপরের হাত চেপে ধরে আতংকিত হয়ে পড়ল।
জাভেদ আলী বললেন, ‘এই আইডিয়া তোর মাথায় এসেছে মা?’
ভায়োলেট বলল, ‘হ্যাঁ বাবা। তোমার ভালো লাগে নি?’
‘অনেক বড় আইডিয়া। এই বিজনেস দাঁড় করাতে অনেক অভিজ্ঞ লোকজন দরকার।’
‘আমার সবকিছু ঠিক করা আছে বাবা। কোন সেক্টরে কোন ধরনের লোক নিয়োগ দিতে হবে সব কিছু ভেবে রেখেছি।’
‘তাহলে তো ভালো। কিন্তু অভিজ্ঞ লোকদের বেতনও দিতে হবে অনেক।’
‘তা তো দিতেই হবে।’
‘কিন্তু মা, ব্যবসার শুরুতে সবাইকে বেতন দেয়ার মতো এত টাকা তো আসবে না।’
ভায়োলেট মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ বাবা। সেজন্য বেশী করে ইনভেস্ট করতে হবে। তুমি কোনোকিছু নিয়ে চিন্তা করো না। আমার সব প্লান রেডি। শুধু ইনভেস্টমেন্ট পেলেই কাজটা শুরু করবো।’
‘ইনভেস্ট করতে কত টাকা লাগবে?’
‘প্রথম ধাপে বিশ লাখ লাগবে বাবা।’
জাভেদ আলী কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, ‘হুম। এরকম এমাউন্ট আমিও ভাবছিলাম। ইনভেস্ট করবে কে ব্যবসায়?’
জাহ্নবী মুখ খুলতে যাচ্ছিল। ভায়োলেট তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘বাবা, ইনভেস্টর পাচ্ছি না। আমরা তো নতুন উদ্যোক্তা, ব্যাংক থেকে লোন দেবে না আমাদের। আর আমার তো তেমন কেউ পরিচিত নেই যার কাছে এত টাকা চাইতে পারি।’
জাভেদ আলী গম্ভীর মুখে বললেন, ‘হুম। বুঝতে পারছি।’
‘একজনকে রাজি করানো যেত, উনি বেশী ইন্টারেস্ট চান। প্রতি মাসে যদি ব্যবসা থেকে এত পরিমাণে টাকা সুদ দিতে হয়, ব্যবসা করবো কী করে বলো?’
‘তাহলে কী করতে চাস মা? ব্যাংক হোক বা কোনো প্রতিষ্ঠান, ইনভেস্ট করলে তাদেরকে ইন্টারেস্ট দিতেই হবে।’
‘আমি কারও কাছে লোন নিতেই চাই না।’
‘তাহলে?’
জাভেদ আলী মেয়েদের মুখের দিকে তাকালেন। একজন বাবা জন্মের পর থেকে পরম আদরে মেয়েদের বড় করে তুলেছেন। এত বছর পর সেই মেয়ের মুখ দেখে ঘটনা বুঝতে তার অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। জাহ্নবী ও ভায়োলেটের মুখ দেখে তিনিও সবকিছু স্পষ্ট অনুধাবন করতে পারছেন।
খানিক্ষন চুপ থেকে তিনি বললেন, ‘তোদের কোনো ইচ্ছে তো কখনো অপূর্ণ রাখিনি মা।’
জাহ্নবী বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘বাবা ভায়োলেট একদিন তোমাকে একটা ফ্ল্যাট নয়, একটা বাড়িই তৈরি করে দেবে দেখো। তুমি সবাইকে গর্ব করে বলবে, আমার মেয়ে অমুক কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা।’
জাভেদ আলী স্তব্ধ হয়ে থাকেন। জাহ্নবী বাবাকে জড়িয়ে ধরে আবেগপ্রধান হয়ে পড়ে। ভেজা গলায় বলে, ‘বাবা, তুমি ওকে ব্যবসা করার টাকা দাও। ও আমাদের সবাইকে রাজপ্রাসাদ বানিয়ে দেবে। ভায়োলেট অনেক ট্যালেন্টেড একটা মেয়ে।’
বলতে বলতে গলা ধরে আসে জাহ্নবী’র। চোখ বেয়ে অশ্রু গড়াতে থাকে। আর কিছু বলতে পারে না সে। ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ভায়োলেট কিছু বলে না, শান্ত হয়ে বসে থাকে বাবার পাশে। জাভেদ আলী কোনো কথা বলেন না।
কয়েক মুহুর্ত কেটে যায় নিরবে। ভায়োলেট স্বাভাবিক গলায় বলল, ‘মাকে কিছু বলো না বাবা। রেগে যাবে।’
‘আচ্ছা।’
‘আমি আর কিছুক্ষণ তোমার পাশে বসে থাকি?’
জাভেদ আলী মাথা ঝাঁকান। তার মুখে কোনো শব্দ আসে না। মেয়েদের ওপর যথেষ্ট ভরসা করেন তিনি। কিন্তু এতগুলো টাকা দিয়ে দিলে তাদের ভবিষ্যতে আসলেই কী ঘটবে তা কেউ জানে না। শঙ্কা, দ্বিধা ও উত্তেজনা নিয়ে তিনি স্তব্ধ হয়ে বসে থাকেন।
সকালে ঘুম ভাঙার পর জাহ্নবী ফোন হাতে নিয়ে দেখে, নাদির মেসেজ পাঠিয়েছে। জরুরি মিটিংয়ে বসতে চাইছে সে। আজকে ছুটির দিন। দুপুরে একসাথে খাবার খেয়ে আলোচনায় বসার নিমন্ত্রণ জানিয়েছে। জাহ্নবী ঘুম লেপ্টে থাকা চোখ মুখে পানির ছিটা দিতে দিতে আয়নায় তাকিয়ে ভাবে, ‘আমার ভাগ্যে এ কোন অদ্ভুত পরিস্থিতি এসে জুটল! এক জীবনে যাকে দেখে আপন ভেবে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম, তার সঙ্গে আমার কখনোই এক হওয়া সম্ভব না। সেই মানুষটার সঙ্গেই আমার বারবার মুখোমুখি হতে হবে। প্রকৃতি এভাবে খেলা না করলেও পারত।’
রেস্তোরাঁর এক কোণায় বসেছে তারা। পান্নাবাহারের পরনে সাদা পাঞ্জাবি, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। জাহ্নবীর সঙ্গে আজ চোখাচোখি হল না তার।
আলোচনা শেষ করতে করতে বিকেল গড়িয়ে এলো। নাদির খুব দ্রুত অফিসের চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের ব্যবসায় নামবে। এখানে উপস্থিত সবাইকে পাশে চায় সে। জাহ্নবী’র বলতে ইচ্ছে করছিল, ‘আমি পারবো না থাকতে।’ কিন্তু বলতে পারল না। প্রথমত, নাদির স্যারের দেয়া সম্মানকে তুচ্ছ করতে চায় না সে। আর দ্বিতীয়ত, তার অভিজ্ঞতার প্রয়োজন।
বিদায়ের সময় নাদির জাহ্নবীকে বলল, ‘আমার গাড়িতে চলুন, আপনার ওদিকেই যাচ্ছি। নামিয়ে দেবো।’
জাহ্নবী বারংবার ‘না, না’ বললে রীতিমতো জোর করেই জাহ্নবীকে গাড়িতে উঠতে বাধ্য করল নাদির। গাড়ি চালাচ্ছে পান্নাবাহার। পেছনের সিটে নাদিরের সঙ্গে বসলো জাহ্নবী।
নাদির অনেকটা সময় ব্যবসা নিয়ে কথা চালিয়ে গেল। হঠাৎ একটা ফোনকল আসায় কথায় বিরতি দিলো সে। ফোন রেখে বলল, ‘আমাকে এক জায়গায় যেতে হবে। ভাইয়া, তুই ওনাকে নামিয়ে দিয়ে আসবি?’
‘আচ্ছা, দিয়ে আসবো।’
মুহুর্তেই গাড়ি থেকে নেমে গেল নাদির। জাহ্নবী অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে গেল। পান্নাবাহার গাড়ি চালু করে জানতে চাইলো, ‘কোথায় যাবেন যেন?’
জাহ্নবী উত্তর দিলো না। মাথা নিচু করে বিরক্তিভাব কাটানোর চেষ্টা করছে সে।
পান্নাবাহার আবারও জানতে চাইলো, ‘কোথায় যাবেন? কিছু হয়েছে?’
‘না তো।’
‘কথার জবাব দিচ্ছেন না।’
‘আপনি বরং আমাকে এখানেই নামিয়ে দিন, আমি একটা গাড়ি নিয়ে চলে যাবো।’
পান্নাবাহার পেছন ফিরে তাকাল, ‘কেন?’
চোখাচোখি হল দুজনাতে। হঠাৎ জাহ্নবী’র বুকের মধ্যিখানে ধক করে ওঠে। সে মৃদুস্বরে উত্তর দেয়, ‘আপনাকে কষ্ট দিতে চাচ্ছি না।’
‘আপনি গাড়ি থেকে নেমে গেলে কী গাড়ি আমাকে একা একাই বাসায় পৌঁছে দেবে? আমাকে চালাতে হবে না?’
‘তা বলছি না। আবার অতদূর যাবেন..’
‘অতদূরটা কোথায় সেটা বলতে অসুবিধা কিসে? নাকি আমাকে বাসার ঠিকানা বলতে চান না? ভয় পাচ্ছেন? আরে বাবা বিনা দাওয়াতে যাবো না আপনার বাসায়।’
‘আমি কী সেটা বোঝাতে চেয়েছি?’
‘এখন তো সেটাই মনে হচ্ছে।’
‘বেশী বেশী মনে হচ্ছে। আপনার মেয়ে কেমন আছে?’
‘ভালো আছে। ও সবসময় ভালোই থাকে। হাসিখুশি, আনন্দমুখর।’
জাহ্নবী আর কিছু বলল না। পান্নাবাহার বলল, ‘গাড়ি এভাবে চলতে থাকলে ঢাকা পেরিয়ে যমুনায় গিয়ে পড়বো।’
জাহ্নবী মৃদুস্বরে বাসার ঠিকানা বলতে বাধ্য হল। বাসার কাছাকাছি পৌঁছে পান্নাবাহার জানতে চাইলো, ‘চা খাবেন?’
জাহ্নবী ক্ষণিকের জন্য হতভম্ব হয়ে যায়। এই সেই দোকান যেখানে প্রথমবার পান্নাবাহারকে দেখেছিল সে। আজ সেই দোকানেই পান্নাবাহার তাকে চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে!
জাহ্নবী উত্তর দেয়, ‘ না। এতদূর কষ্ট করে আসার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।’
‘ওয়েলকাম। ভাবলাম আপনার উছিলায় আমারও এক কাপ চা খাওয়া হবে। আজ আর খাওয়া হল না।’
বাসার সামনে গাড়ি দাঁড় করালো পান্নাবাহার। জাহ্নবী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নেমে গেল গাড়ি থেকে। পান্নাবাহার গাড়ি ঘুরিয়ে ইশারায় বিদায় জানালো তাকে। ভেতর থেকে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে জাহ্নবী’র। প্রকৃতি এত অদ্ভুত খেলা খেলে কেন মানুষকে নিয়ে!
বাসায় প্রবেশের সাথে সাথেই ভায়োলেটের ফোন। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে ভায়োলেট বলল, ‘আপু, বাবা আমাকে বিশ লাখ টাকা দিচ্ছে ব্যবসা করার জন্য।’
জাহ্নবীর ইচ্ছে করছে আনন্দে লাফিয়ে উঠতে। স্বপ্ন পূরণের এক অদম্য বাসনা ভেতর থেকে উঁকি দেয়। খুশির জোয়ারে ভাসতে ভাসতে জাহ্নবী বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। চোখ বন্ধ করতেই তার মনে ভেসে উঠল এক অপূর্ব দৃশ্য। সে হেঁটে যাচ্ছে তার কর্পোরেট অফিসে। আশেপাশে বসে থাকা সব স্টাফ দাঁড়িয়ে তাকে ‘গুড মর্নিং ম্যাম’ বলছে। জাহ্নবী লাজুক হেসে তাদেরকে বলে, ‘প্লিজ আমাকে ম্যাম ডাকবেন না। আমাকে আপনারা আপা ডাকতে পারেন।’
চলবে..