মেঘবতীর_শহরে,পর্বঃ০৪,০৫,০৬

0
734

#মেঘবতীর_শহরে,পর্বঃ০৪,০৫,০৬
~নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
০৪


চারিদিকে ঘন আধার নেমে এসেছে।আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে অগনিত মেঘমালা।বাতাসের বেগ বেড়েছে।কফি হাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে জাহিন।খানিক্ষন হবে বাড়িতে পৌছেছে ওরা।আরেকটু দেরি হলে নিশ্চিত এই দমকা ঝড়ের মধ্যে পরতে হতো!

যে কোনো সময়ে মেঘ ভেঙে বৃষ্টি নামবে।কফিতে চুমুক দেয় জাহিন।রুমে এখনো আলো জ্বালায়নি।মন্দ লাগছে না পরিবেশ টা!হঠাৎ তীব্র গর্জন দিয়ে আকাশের বুক চিরে বৃষ্টি নামে!অপরূপ সে দৃশ্য!ব্যস্ত নগরীর ব্যস্ত মানুষগুলো ছুটছে হন্য হয়ে!দেখেই বোঝা যাচ্ছে ইচ্ছের বিরুদ্ধে ভিজছে সবাই।কারো কারো মাথার উপর ছাতা ধরা।

কাঁধে কারও স্পর্শ পেতেই চমকে উঠে জাহিন।এতক্ষণ বুঝি কল্পনার জগতে হারিয়ে গিয়েছিল!পিছু ফিরে তাকাতেই মুখ টা প্রশস্ত হয়ে যায় হাসিতে।

“নানাভাই রুম অন্ধকার কইরা বারান্দায় কি করতাছো?

নানুমনির কথার জবাবে বলে জাহিন,

” প্রকৃতির সাথে কথা বলছি নানুমনি।দেখো কি অপরূপ সুন্দর লাগছে চারিপাশ টা!

“আমি তো চারিপাশ ঝাপসা দেখতাছি নানাভাই!এহানে সুন্দর কই পাও তুমি?বয়স হইছে চোখে কিছু দেখিও না।যাক তোমার যদি এখন এক খানা বউ থাকতো তাহলে এই সুন্দর দৃশ্য তারে লইয়া উপভোগ করতে পারতা।

বিয়ে শব্দটা জাহিনের খুবই বিরক্ত লাগে।তার কাছে বিয়ে মানে জীবনটা ধ্বংস করে দেওয়া!কষ্ট,যন্ত্রণা আর কিছুই দিতে পারে না বিয়ে নামক সম্পর্ক।কপাল কুঁচকে আসে জাহিনের।

রেহানা বেগম তার নাতির উত্তরের আশায় চাতক হয়ে তাকিয়ে আছে।বয়স তার বাড়ছে দিন দিন। বড় নাতির বউ দেখে যাওয়ার শখ।নাতিকে তিনি কিছুতেই রাজি করাতে পারেন না বিয়ের জন্য।পাশে বেতের টেবিলে কফির মগ টা রেখে দেয় জাহিন।চারিদিকটা এখন বিষাক্ত লাগছে!মৃদু বাতাসটা যেন দম বন্ধ করে দিতে চাইছে!

রেহানা বেগম রাগের বশে বললেন,

” বাপের মতো হইস না নানাভাই।

আর একমুহূর্তের জন্য এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না জাহিনের।জগৎ টা এত বিষাক্ত কেন?!ছোট্ট করে কেবল বলে,

“আমি আসছি নানু মণি।

দিকবেদিক না তাকিয়ে বেরিয়ে যায় জাহিন।রেহানা বেগম বহুবার পিছু ডাকলেন তাতে কোনো লাভ হয়নি।নিজের ভুলের জন্য অনেকটা অনুতপ্ত লাগছে এখন।এই ভয়ানক বৃষ্টিতে ছেলেটা তো জ্বর বাধিয়ে আসবে।কি জবাব দিবে নবনী কে?তার অমন সহজ সরল নাতিটা মোটেও রগচটা নয়।ভয়ানক কষ্ট না পেলে একটুও রাগ অভিমান করে না ছেলেটা!

~~~

মুহতানিম কখন থেকে পাশে বসে চেঁচাচ্ছে।ভয়ানক রাগ দেখাচ্ছে মুহতাসনিম কে।এমন একটা লোক কে বিয়ে করার জন্য কি করে রাজি হলো তার মুহুপু?বাহিরে ঝপাঝপ বৃষ্টির শব্দে পাশের রুমে মুহতানিমের চেচানোর শব্দ যাচ্ছে না।

কোনো হেলদোল নেই মুহতাসনিমের।মাথাটা ধরে আছে প্রচন্ড।

“মুহুপু তুই একবার ভাব ঐ লোকটার আগে একটা বিয়ে হয়েছে তার মেয়ে আছে ক্লাস সেভেনে পরে!আমি তো ভাবতেই পারছি না এমন একটা সম্মন্ধ মা কি করে নিয়ে এসেছে!তুই বাবাকে গিয়ে বল না আপু।

প্রায় অনেক্ক্ষণ পর মুখ খোলে মুহতাসনিম।ভাঙা আওয়াজে বলে,

” আমি যে বাবার মেয়ে সেটা বোধহয় আমার বাবা মন থেকে মানেইনি!কি করিনি আমি এই সংসারের জন্য বল?দিনের পর দিন খেটে গেছি।কক্ষনও নিজের কথা এক চুল ভাবিনি!সকাল থেকে রাত অব্ধি ঘরের কাজ বাইরের কাজ সব করি!তার বিনিময়ে একটু খেতে পাই এতে যতেষ্ট নয়?তারা বিয়ে দিচ্ছে আমার এটাই অনেক না বল?

প্রতিটা কথা কান্না কন্ঠে চিৎকার করে বলেছে মুহতাসনিম।পুরো রুম তার কণ্ঠের ধ্বনি তে ছড়িয়ে আছে!

স্তব্ধ হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে মুহতানিম।তার সহজ সরল বোন টা ভেতরে ভেতরে কত কষ্ট চেপে রেখেছিল?!কোনোদিন তার মুহুপুকে এভাবে কথা বলতে শোনেনি মুহতানিম।এই প্রতিবাদ টা তার মায়ের সামনে করলে এই বিয়েটা আটকানো সম্ভব!তবে মুহতানিম খুব ভাল করে জানে তার মুহুপু কখনও প্রতিবাদ জানাবে না!বাবা মায়ের কথা নিরবে মেনে নিবে।বাবা হয়ত কোনোদিনই জানতে পারবে না তার এই মিষ্টি হাসিমাখা মেয়েটির মনে তারজন্য কতটা তীব্র ঘৃনা পাহাড়সম হয়ে আছে!মুহতানিমের চোখে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ত্যাগীর প্রতীকী টা হচ্ছে তার মুহুপু!

নীরব পায়ে হেটে বেরিয়ে আসে মুহতাসনিম।ভেতরের কষ্ট গুলো আজ মিশিয়ে দিবে এই বৃষ্টির সাথে!পৃথিবী তাকে কত কষ্ট দিবে?আর কত কষ্টের সমুদ্রে ডুবাবে?তবুও মুহুকে একটুও হেলাতে পারবে না!হাসি দিয়ে সবটা জয় করে নিবে মহু।মৃত্যুতেই তার এই কষ্টের একদিন সমাপ্তি ঘটবে!সহস্র বছর তাকে এ নশ্বর দুনিয়ার কষ্ট সইতে হবে না!

খোপা খুলে চুল উন্মুক্ত করে দেয় মুহু।কোমড় ছাড়িয়ে হাটুতে এসে ঠাঁই নেয় চুলগুলো।বৃষ্টির ফোটা ভিজিয়ে দিতে থাকে সর্বাঙ্গ!শরীর ভেদ করে অন্তরের কষ্টটাও ধুঁয়ে যাক আজ!মৃদু ঠান্ডায় শরীর কাঁপছে মুহুর।

জানালা খুলে সে অপরূপ দৃশ্য দেখছে মুহতানিম।এক পবিত্র সৌন্দর্য যেন বিরাজ করছে!মায়াবী মুখ খানা অন্ধকারের জন্য স্পষ্ট নয়!গায়ের হলদেটে রঙে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে!

~~

কয়েক হাত দূরে একজোড়া চোখ মোহাবিষ্ট হয়ে আছে ভেজা মেঘবতীর রূপে!আজও তার মেঘপরী নেমে এসেছে বৃষ্টির সাথে!প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে বেরিয়ে এসেছে জাহিন।এই জায়গাটায় কেন আসলো নিজের কাছেই অজানা!সমস্ত মন খারাপ যেন মুহূর্তে উবে গেছে!চোখের সামনে মেয়েটি কেমন স্বাধীন পাখির মতো উড়ছে!কোনো কষ্ট যেন ছুতে পারেনি মেয়েটিকে!

~তোমাতে মোহাবিষ্ট আকুলতা
এ যেন এক এলোকেশী মায়ালতা~

কয়েক পা এগিয়ে সামনে আসে জাহিন।নিজের স্বপ্নের দুনিয়ায় ব্যস্ত মুহতাসনিম।দূর থেকে দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য দেখছে মুহতানিম।মুহুপুর কাছে কিছু একটা অবয়ব দেখে কপালে সুক্ষ্ম ভাজ পরে!তার মুহুপুর থেকে বেশ অনেকটা লম্বাটে লোকটা।সুঠাম দেহের কোনো পুরুষ দাঁড়িয়ে তাতে কোনো সন্দেহ নেই!তৎক্ষনাৎ দৌড়ে মুহতাসনিমের কাছে আসে মুহতানিম।জাহিনের ধ্যান ভাঙ্গতেই চমকে উঠে!ততক্ষণে প্রশ্ন করে বসে মুহতানিম,

“কে আপনি?এত রাতে এখানে কি করছেন?

মুহতাসনিমও চমকে যায় বেশ।পিছু ঘুরতেই লম্বা,ফর্সা সুঠাম দেহের এক ছেলেকে আবিষ্কার করে!জাহিন আরেকদফা চমকে যায় মুহতাসনিম আর মুহতানিম কে একসাথে দেখে!আনানের আন্টির বিয়েতে তো এই মেয়ে দুটিকেই দেখেছে!যারা ফুল বিক্রেতা ছিল!এখানে কি করছে এরা?

মুহতানিম ততক্ষণে মুহতাসনিম কে প্রশ্ন করে,

” মুহুপু তুই কি চিনিস এই লোকটাকে?

মুহতাসনিম মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বলে

জাহিনের এতক্ষণে খেয়াল হয় তারমানে সেদিন যে মেঘপরীর সাথে দেখা হয়েছে আসলে এটাই সে মেয়ে?

মুহতানিম কন্ঠে রাগ নিয়ে বলে,

“আপনাকে আমরা কেউ’ই চিনি না।এবার দয়া করে বলবেন আপনি কে?

আমতা আমতা করে জাহিন বলে,

” আ,,,আমি আসলে খুব বৃষ্টি তো তাই এদিকটায় একটু দাঁড়িয়ে ছিলাম।

“আপনাকে তো এ এলাকার মনে হচ্ছে না।আর আপনি তো একেবারে বাড়িতে ঢুকে গিয়েছেন!

মুহতাসনিম তাড়া দেয় মুহতানিমকে

” অচেনা লোকের সাথে কথা বাড়াচ্ছিস কেন মুনা?ভয় করছে না তোর?চল এখান থেকে।


মুহতাসনিমের থেকে অচেনা বাক্যটি শুনে কেমন আহত অনুভব হলো জাহিনের!অবশ্য সে মেয়েটিকে দুইবার দেখেছে নাম টাও জানা!মেয়েটি তো একবারও খেয়াল করেনি জাহিনকে!


মুহতানিম নাছোড়বান্দার মতো প্রশ্ন করে যাচ্ছে।জাহিন বাধ্য হয়ে আনানের মায়ের বাড়ির পরিচয় দিলো।অত দূর থেকে এসেছে জানলে নির্ঘাত প্রশ্নের ঝুড়ি খুলে বসবে মেয়েটা!মুহতানিম হাসি মুখ নিয়ে বলল,

“হ্যাঁ চিনতে পেরেছি।আপনারাও কি আনান ভাইয়াদের সাথে ঢাকায় থাকেন?

জাহিন মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।মেয়েটির কথা কেন জানি বিরক্তি লাগছে।প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।তবে আড়চোখে বারবার মুহতাসনিম কে খেয়াল করছিল।না চাইতেও চোখ সে দিকে চলে যাচ্ছে।রাতের আঁধারে হয়ত কারো চোখেই সেটা ধরা পরেনি!


মুহতাসনিম বার বার মুহতানিম কে তাড়া দিচ্ছে।বোনকে একা রেখে যেতেও পারছে না।রাতের প্রহর বাড়ছে ধীরে ধীরে।জাহিনের প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই মুহতাসনিমের।

মুহতানিমের হঠাৎ করে বলে,

” আমার আপুকে আপনার সাথে ঢাকায় নিয়ে যাবেন?

কথাটা কর্নপাত হতেই আৎকে উঠে মুহতাসনিম।অবাকের শেষ শীমানায় জাহিন!কি বলছে কি মেয়েটা?

চলবে

#মেঘবতীর_শহরে
পর্বঃ০৫
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা



মধ্যে রাতের প্রহর।ছেলের চিন্তায় অস্থির মিসেস নবনী।জাহিনের বড় মামা জাফর সাহেব জানান থানায় ইনফর্ম করবে কিনা।হুটহাট করে বেরিয়ে যাওয়ার মতো ছেলে জাহিন নয়।যতেষ্ট নম্র,ভদ্র স্বভাবের ছেলে তার ভাগ্নে।

ইতিমধ্যে আনান আর রিশান বের হয়ে গেছে জাহিনকে খুঁজতে।রেহানা বেগম অপরাধীর মতো মুখ করে বসে আছে।তার জন্য ছেলেটা আজ ঘরছাড়া।মেয়ের মুখের দিকে তাকানোর সাহস নেই!

জাহিনের বড় মামি মিসেস শায়লা বেগম চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছেন।তার ছেলেটাও যে এই মধ্যে রাতে বেরিয়ে গেছে।রিশানের মা মুখ ফুটে বলেই ফেললেন,

“জাহিন তো আর ছোট ছেলে না।রাগ মিটলে সময়মতো ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসবে।আমার ছোট ছেলেটাও এত রাতে খুঁজতে চলে গেল!যদি কিছু হয়ে যায়?

রেহানা বেগম কন্ঠে রাগ নিয়ে বললেন,

” রিতা তুমি সবসময় একটু বেশিই ভাইবা ফেলো।তোমার রিশানও তো ছোট না।মাঝে মাঝে মেলা দেরি কইরা ঘরে ফিরে না?তখন তোমার এই টেনশন কই যায়?

“মা কথা যতই পেচান আপনি সব দোষ কিন্তু আপনার।কি দরকার ছিল ছেলেটাকে এত রাগিয়ে দেওয়ার?

পরিস্থিতি সামলাতে শায়লা বেগম বললেন,

” আচ্ছা একবার কল করে দেখি ওরা জাহিনকে পেল কিনা?

~~~

বোন মজা করুক আর যাই করুক কথাটা ভিষণ রকম রাগিয়ে দিয়েছে মুহতাসনিমকে।দিকবেদিক না তাকিয়ে মুহতানিমের গালে ঠাস্ করে চড় বসিয়ে দিল মুহতাসনিম।রাগে গাঁ কাপছে।কখন থেকে বোঝাচ্ছে চলে আসতে।এই মধ্যে রাতে অচেনা অপরিচিত একটা লোকের সাথে কথা বলা নিশ্চয়ই শোভা পায় না!তার উপর কথার লাগাম ছেড়ে বেরিয়ে গেছে মুহতানিম।


গালে হাত রেখে নিষ্পলক মুহতাসনিমের দিকে তাকিয়ে আছে মুহতানিম।খানিকটা চমকে গেছে জাহিন’ও।ওদের দু বোনের কান্ডকারখানা কিছুই মাথাতে প্রবেশ করছে না!মুহতাসনিম আর একটা মুহূর্তের জন্য দাড়ালো না।টেনে হিচড়ে মুহতানিম কে নিয়ে গড়ের ভেতর চলে যায়।হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে জাহিন।রাগান্বিত মুহতাসনিমের মুখ খানি নিকষ অন্ধকারের মিশেলে বেশ মায়াবী লাগছিল!



নৈশ প্রহর তখন শেষ ভাগে নেমে এসেছে।বৃষ্টি কমে এসেছে সেই কখন।ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি ঝরছে এখন।পরনে টি-শার্ট ভিজে চুপচুপ হয়ে আছে জাহিনের।হালকা মৃদুমন্দ বাতাসে শরীর কাটা দিয়ে উঠছে যেন!মাথায়,বোজা চাপিয়ে দেওয়ার মতো অনুভূতি।এক্ষুনি জাহিনকে বাসায় ফিরতে হবে।নয়ত কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে!



রুমে এসে তোয়ালে নিয়ে মুহতানিমের মাথা মুছিয়ে দিতে থাকে মুহতাসনিম।কিঞ্চিৎ রাগ নিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে আছে মুহতানিম।কি কারণে মুহুপু চড় লাগালো তাকে?আপুর ভালোর জন্যই তো কথাটা বলেছিল মুহতানিম।আলতো হাতে মুহতানিমের দু গালে হাত রাখে মুহতাসনিম।চোখ দুটো জলে ভাসা।

“আমার দিকে তাকা মুনা।খুব কষ্ট হয়েছে নারে?

” মোটেও না।আমি তোমার ভালোর জন্যই বলেছি আপু।আমি চাই না ওই বয়স্ক লোকটার সাথে তোমার বিয়ে হোক!

“তাই বলে একটা অচেনা ছেলের হাতে তুলে দিবি আমায়?লোকটা যে ভাল তার গ্যারান্টি কি?তোর কথা শুনে লোকটা নিশ্চয়ই ভেবেছে তুই একটা বদ্ধ পাগল।তুই বলবি আর ওমনি লোকটা আমায় তার সাথে করে নিয়ে যাবে?

” হ্যাঁ আমি পাগল।তোর ভাল চাইতে আমি সব করতে পারবো।তা ছাড়া লোকটাকে দেখে খারাপ মনে হয়নি আমার।দেখতে পাচারকারী মনে হয় না।

“বাহির টা দেখে কাউকে বিচার করা যায় না মুনা।এতই ভাল হলে এই গভীর রাতে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতো না।

” দাড়ানোর কারণটা তো বলল লোকটা।তবুও ভয় পাচ্ছিলিস তুই?

মুহতাসনিম কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে,

“আমি আগেও দেখেছি উনাকে।

বেশ চমকে উঠে মুহতানিম!!

” কোথায়?কবে?কখন?

“সেদিন রাতে জলন্ত সিগারেট হাতে একটা ছেলেকে দেখতে পাই আমি।চেহারা অত খেয়াল করিনি আমি।এখন আমি পুরোপুরি ক্লিয়ার সেদিনের লোকটা এই লোকই ছিল!

“তারমানে লোকটা তোর জন্যই এসেছিল আবার!

” বাজে বকিস না।ঘুমো যা।

~~~

ঘটা করে আলো পরেছে বাহিরে।নবনীর চোখে এক রত্তি ঘুম নেই।ভোর থেকে ছেলের মাথায় জলপট্টি দিয়ে যাচ্ছেন।গাঁ টা এখনও গরম।জ্বর নামতে চাইছে না কিছুতেই।ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে সেই কখন।ছেলে তার বেঘোরে পরে আছে।


পায়ের কাছে বসে আছে রেহানা বেগম।কাল ভোর রাতে ভেজা গাঁয়ে বাড়ি ফিরেছিল জাহিন।নিশ্চয়ই ছেলেটা অনেক্ক্ষণ যাবৎ ভিজছিল!নয়ত এত জ্বর আসার কথা না।শায়লা বেগম এটা ওটা কত কিছু রান্না করে নিয়ে এসেছেন।কিছুই খাওয়ানো গেল না জাহিনকে।বাধ্য হয়ে হসপিটালে কল করে নবনী।

~~~

সকাল থেকে ঘর পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছে পারুল বেগম।ছেলের বাড়ির লোকেরা জানায় তারা আজই এসে বিয়ে পরিয়ে যাবে তারপর ভাল একটা দিন দেখে তারা মুহতাসনিম কে ঘরে তুলবে।এটা যেহেতু ছেলের দ্বিতীয় বিয়ে তাই এত ঘটা করে করার ইচ্ছে নেই তাদের।কোনোরকম বউ ঘরে তুলতে পারলেই হলো।মুহতাসনিম কে আজ একটা কাজেও হাত লাগাতে দেয়নি পারুল বেগম।সব নিজেই সারছেন।



তুখোড় মেজাজ নিয়ে বসে আছে মুহতানিম।ইচ্ছে করছে সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিক।কালকেই দেখতে এলো আর আজই বিয়ে!হাতের মোয়া পেয়েছে তারা?সব চেয়ে বেশী রাগ হচ্ছে তার মুহুপুর উপর।সে কেন এর প্রতিবাদ জানাচ্ছে না?


পারুল বেগম বার কয়েক তাড়া দেয় মুহতাসনিম কে,

“তাড়াতাড়ি গোসল সেরে রেডি হ মুহু।আজকে পার্লারে যাবি মুনার সাথে।শত হোক তুই তো আমার মেয়েই বল?আমাদের কি শক আহ্লাদ নেই?তাদের ছেলের না হয় দ্বিতীয় বিয়ে আমাদের মেয়ের তো আর না!

মুহতানিম জবাব দেয়,

” বিবাহিত একটা পুরুষের সাথে আপুর বিয়ে দিবে কেন মা?

কপট রাগ দেখিয়ে বলে পারুল বেগম,

“তুই আজকের দিনেও মাইর খাইস না মুনা।ছেলে ব্যাটাদের আবার বয়স কিসের?কত বড় বাড়ির সম্মন্ধ জানিস?রাজরানী হয়ে থাকবে আমাদের মুহু টা।

~~~

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল।জাহিনের জ্বর অনেকটা নেমে গেছে।সারাদিনে ছেলের জন্য কিচ্ছুটি মুখে তুলেনি নবনী।খাবার প্লেট নিয়ে জাহিনের সম্মুখে বসে আছেন তিনি।ছেলে নিয়ে একবারে খাবেন।



কোথাও যাওয়ার জন্য বেশ তাড়াহুড়া করছে জাহিন।ছেলের তাড়াহুড়ো দেখে নবনী বলেন,

” এই সবগুলো খাবার এখন শেষ করবি।তারপর বের হবি।

“মা মনি হসপিটাল থেকে কল এসেছে আমাকে এক্ষুনি বের হতে হবে।

” একটু হলেও খেয়ে যাবি।

করুন চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে জাহিন।মায়ের কথা ফেলবার সাধ্য নেই।বাধ্য ছেলের মতো বসে পরে খেতে।

~~~

পার্লারে সাজছে মুহতাসনিম।পাশে মুহতানিম বসে আছে।চোখ দুটো তার জলে ভেজা।সকাল থেকে মুহতানিমের সাথে একটা কথাও বলেনি মুহতাসনিম।ভেতর টা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে মুহতানিমের।


পারুল বেগমের কল আসে।তিনি ফোনের ওপাশ থেকে তাড়া দিতে থাকেন।বরপক্ষ এসে বসে আছে সেই কখন।এক্ষুনি ফিরছে বলে ফোন রেখে দেয় মুহতানিম।

‘চোখ দুটো মুছে এগিয়ে আসে।মুহতাসনিমের প্রায় সাজা শেষ।পার্লারের বিল পরিশোধ করে বেরিয়ে আসে দুজন।

রিকশায় পাশাপাশি বসে আছে দু বোন।মনে আর এই বিষাক্ত চিন্তা আনতে পারছে না মুহতাসনিম!কি হবে তার নিয়তিতে?ভাগ্য এত নিষ্ঠুর হয় কেন?আচমকা মুহতাসনিমের দু হাত চেপে ধরে মুহতানিম।কান্না ভেজা ভাঙা কন্ঠে বলে,

” আপু প্লিজ তুই এ বিয়েটা করিস না।আমার সাথে তো কথাও বলছিস না তুই।আমার এই একটা কথা রাখ।জীবনে আর কিছু চাই না তোর কাছে।

কোনো হেলদোল নেই মুহতাসনিমের।আর মাত্র কয়েকটা ঘন্টা তারপর জীবন পাল্টে যাবে পুরোপুরি।

“মুহুপু আমি জানি তুই এ বিয়েতে রাজি নস।আ,,,আপু তুই পালিয়ে যা।এই নরকে থাকতে হবে না তোকে।

এতক্ষণে মুহতানিমের কথার জবাব দেয় মুহতাসনিম,,,

চলবে

#মেঘবতীর_শহরে
পর্বঃ০৬
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা


সন্ধ্যার প্রহর কেটে রাত নেমেছে।ধোঁয়া উঠা কফির মগ হাতে নিয়ে জানালার পাশে দাড়িয়ে আছে জাহিন।সারাদিনের ডিউটি শেষে এক কাপ হট কফি পুরো দিনের ক্লান্তিকে নিমিষে বিলীন করে দেয় যেন!


আজকে আর নাইট ডিউটি নেই জাহিনের।বাহিরে ভালোই বাতাসের তোড় বেড়েছে।বৃষ্টি নামবে যে কোনো সময়।বাসার গাড়িটা আজ সঙ্গে করেই নিয়ে এসেছে জাহিন।

হুট করে ফোনটা বেজে উঠে!ফোন ধরতেও যেন আলসেমি!অনবরত বেজেই যাচ্ছে ফোনটা!ডাক্তারদের তো আর রাত,বিরেতে কফি হাতে প্রকৃতি উপভোগ করতে নেই!না চাইতেও ফোন রিসিভ করে জাহিন,


ফোনের ওপাশে কেউ একজন জানায় ইমারজেন্সি একবার তাদের হসপিটালে যেতে হবে জাহিনকে।বাকি কথা শেষ হতেই ফোন কেটে যায়।আধো খাওয়া কফির মগটা ফেলে এপ্রন হাতে বেরিয়ে যায় জাহিন।


তার উপভোগ্য সময়ের চেয়ে একজন মানুষের জীবণ নিশ্চয়ই অধিক মূল্যবান!এদিকে দমকা হাওয়া বাড়ছে,বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে বেশ।আবহাওয়ার অবস্থাও ভাল নয়।

গাড়ির সিটে পরে থাকা ফোন অনবরত বাজছে জাহিনের।স্ক্রিনে নাম ভেসে আছে ”Maa moni”
ফোন তুলবার সময় কই তার?রাস্তা অনেকটা ফাঁকা বিধায় সামান্য গতি বৃদ্ধি তে গাড়ি চালাচ্ছে জাহিন।

~~~

মিসেস নবনী বেশ ভাল করেই জানেন আজকে ছেলের ডিউটি নেই কোথাও।আকাশের অবস্থাও ভাল নয় যে কোনো সময় বর্ষণ হবে।ঘরের সবার খাওয়া হয়ে গেলেও বাকি রয়ে গেলেন নবনী।খাবার প্লেট সামনে নিয়ে বসে আছে ছেলের অপেক্ষায়।রেহানা বেগম বার কয়েক খাবার সাধেন মেয়েকে।বারবার নবনী জানায় জাহিন না আসা অব্দি খাবে না।রেহানা বেগম কপট রাগ দেখিয়ে বলেন,

“যে চাকরি তে মায়ের এত টেনশান হয়!দরকার কি ওই চাকরি করার?

“এটা জাহিনের ছোট বেলার স্বপ্ন মা।আমি মা হয়ে কি করে ওর স্বপ্নে বাধা দেই বলো?

” খুব যে ভালা কিছু বানাচ্ছিস ছেলেটারে তা কিন্তু নয়।এই ডাক্তার ফাক্তার আমার ভালা লাগে না।ডাক্তার রা মানুষ হয় নাকি?আমার দুই চক্ষের বিশ হইলো এই ডাক্তার।

বসে থাকা নবনী দীর্ঘশ্বাস ফেলে।ভেতর টা ফুলে উঠে কষ্টে।সবকিছু,সবসময় যে একই ঘটবে তা তো নয়!

“সবাই কিন্তু এক নয় মা।সবাইকে এক পাল্লায় মাপা যায় না।

” জাহিনের শরীরে ডাক্তারের রক্ত বইতাছে স্বভাব টা তো সেরকমই পাইবো।এর বেশিকিছু বলার দরকার নাই আমার।কতদিন কইছি জাফরের লগে ব্যবসা সামলাক।তোর ছেলে তো সে কথা শুনেই না।

নীরব হয়ে মায়ের কথা শুনছে নবনী।তার’ই বা কি বলার আছে?

~~~

ইমার্জেন্সি পেসেন্ট দেখতে এসে থমকে দাড়িয়ে আছে জাহিন।একমুহূর্তের জন্য সবটা কেমন ঘোলাটে লাগছে চোখের সামনে।আদৌ কি সব ঠিক দেখছে জাহিন?



একবার হাত ঘড়িটার দিকে চোখ বুলায় জাহিন।রাত ১২ঃ১৪ মিনিট!সামনে বেডে শুয়ে আছে লাল রঙা বেনারসি পরিহিতা এক মেয়ে!কপাল চুইয়ে রক্ত এসে জমাট বেধেছে গালে!চিরচেনা সেই মুখ খানা দেখে একমুহূর্তের জন্য থমকে গেছে জাহিন!বুকের বাঁ পাশ টা কেমব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে!অনুভূতি শূন্য!

~~~

হুলুস্থুল বিয়ের আসর ফাঁকা হয়ে গেছে সেই কখন।একটার পর একটা জবাবদিহি করতে করতে হাপিয়ে উঠেছে মুহতানিম।পারুল বেগম ভয়ানক রকমের রেগে আছেন।মুহতাসনিমের পালানোর পেছনে যে মুহতানিমের হাত আছে সেটা তিনি ১০০% নিশ্চিত।



ভরা বিয়ের আসরে মানসম্মান যা খোয়া গেছে তা তো গেছেই!ছেলে পক্ষ অপমানিত হয়ে মুহতাসনিমের জায়গায় মুহতানিমকে চায়।শেষে কান্নাকাটি করে পায়ে পরে এই বিয়ে আটকান পারুল বেগম।তার এই ছোট্ট মেয়েটার জীবন তিনি কি করে এমন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিবেন?মা হয়ে এটা তিনি কখনই মানতে পারবেন না।তখনকার কথা মনে হলেই কেমন গাঁ কাটা দেয়!


চিন্তায় ভেতরে ভেতরে একদম শেষ হয়ে যাচ্ছে মুহতানিম।না জানি কোথায় কিভাবে আছে তার মুহুপু!ভয়ে শরীর কাঁপন দিয়ে উঠছে বারংবার!পারুল বেগম কখন থেকে বকেই যাচ্ছে মুহতানিম কে,

“কোথায় ভাগিয়ে দিয়েছিস মুখ পুরি টাকে?চারিদিকে এত এত খারাপ ঘটনা ঘটতাছে সেই বিষয়ে খবর আছে তোর?

মায়ের কথায় অন্তর আত্মা কেঁপে উঠছে মুহতানিমের।

” মুহুটার কিছু হইলে এর দায় তোর।সময় থাকতে বল কোথায় আছে মাইয়াটা?

চুপ করে বসে বসে চোখের জল ফেলেছে মুহতানিম।যা হবার তা তো হয়েই গেছে।এখন সত্যি টা কিছুতেই কাউকে বলবে না।মনে মনে দোয়া পড়ছে যেন মিনা খালার সাথে খুব শিঘ্রই তার মুহুপুর দেখা হয়ে যায়!

~~~

মুহতাসনিমের জ্ঞান ফিরেছে,মাথার কাছে পেছন দিকটায় বসে আছে জাহিন।বড় ধরনের কোনো আঘাত পায়নি।যে দু একজন মুহতাসনিম কে হসপিটালে নিয়ে এসেছে তারা জানায় গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে মুহতানিমের।ভাগ্য ভাল বড় ধরনের কোনো আঘাত পায়নি।জ্ঞান ফেরার পর কেউ একজন বলছে পুলিশে খবর দিবে।আচমকা চিৎকার করে সবার উদ্দেশ্য বলে উঠে মুহতানিম,

“আপনারা কেউ পুলিশকে খবর দিবেন না দয়া করে।আমি আমার খালার বাসায় যাচ্ছিলাম।এখন ঠিক চলে যেতে পারবো আমি।আপনারা আমায় হসপিটাল অব্ধি নিয়ে এসেছেন এর জন্য কৃতজ্ঞ আমি।এবার আপনারা আসতে পারেন।আমি এখন সম্পুর্ন ঠিক আছি।

জাহিন সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায়।মেয়েটা যে মিথ্যে বলছে বেশ বোঝা যাচ্ছে।


মুহতাসনিম হয়ত এতক্ষণে জাহিনকে খেয়াল করেনি।আস্তে আস্তে কেবিন ফাঁকা হয়ে যায়।ধীরে ধীরে উঠে দাড়ায় মুহতাসনিম।মাথাটা ভিষণ ঘুরছে।শরীর অসার লাগছে কেমন!এই ঝড়বৃষ্টির রাতে হেটে যেতে পারবে তো মুহতাসনিম?আচমকা কেউ বলে উঠে,

” মিস মুহু আপনি এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন।দয়া করে আর হাটার বৃথা চেষ্টা করবেন না।

অচেনা কারও মুখে ‘মুহু’ নাম শুনতেই কলিজা ধ্বক করে উঠে মুহতাসনিমের।ফিরে তাকাতেই আরেকদফা চমকে উঠে!জাহিন তার কাছে অচেনা কেউ নয়!দু বার দেখেছে।কিন্তু এই ছেলে এখানে কি করছে?তাকে ফলো করে আসেনি তো?ভাবতেই ভয় আরও ঝেকে বসেছে শরীরে।গলা শুকিয়ে আসছে!কোনোরকম বলে মুহতাসনিম,

“আ…..আপনি?যারা আমায় হসপিটাল নিয়ে এসেছে আপনি নিশ্চয়ই তাদের সাথে এসেছেন?

দুদিকে মাথা নাড়িয়ে এগিয়ে আসে জাহিন।পাশে থাকা মেডিসিন গুলো নিয়ে দেখিয়ে দিতে থাকে কোনটা কখন খাবে।মুহতাসনিমের এখন ভয়ের চেয়ে রাগ হচ্ছে বেশী।

” দয়া করে আসুন আপনি।আমি ডাক্তার কে জিগ্যেস করে নিবো।

দুই হাত ভাজ করে দাড়ায় জাহিন।

“ঠিক আছে।

কিছু একটা ভাবনার ভঙ্গিতে মুহতাসনিম বলে,”

“হসপিটালের অনেক বিল হয়েছে তাই না?আমার কাছে তো অত টাকা নেই!নিশ্চয়ই টাকা টা আপনি দিয়েছেন?আপনার নাম্বার টা দিন আমি ঠিক পরিশোধ করে দিবো।

কথার তোয়াক্কা না করে বলে জাহিন,

” আপনি নিশ্চয়ই কিছু খাননি অনেক্ক্ষণ যাবৎ আমি খাবার নিয়ে আসছি।

“না,না থাক।এমনিতে আপনার কত টাকা খরচ হয়ে গেছে।

” চুপচাপ এখানে বসুন।আমি আসছি।পরে না হয় শোধ করে দিবেন।

মুহতাসনিম ভাবছে ‘না খেয়ে তো আর ঔষধ খাওয়া যাবে না।পরে তো শোধই করে দিবে।অগত্যা বাধ্য মেয়ের মতো বসে থাকে।




মিনিট দশ পরে খাবার নিয়ে আসে জাহিন।খাবার গুলো দেখে কেমন ভয় লাগছে মুহতাসনিমের।যদি ছেলেটা খাবারে কিছু মিশিয়ে নিয়ে আসে?না,না কিছুতেই এই খাবার খাওয়া যাবে না।

কিছুক্ষণের মধ্যেই নার্স আসে।জাহিনের উদ্দেশ্য বলে,

“স্যার এখন কোন কোন মেডিসিন দিতে হবে?

” আমি দিয়ে দিবো।আপনি আসুন।

“আচ্ছা স্যার।দরকার পরলে ডাকবেন আমায়।

আবারও ফোন বেজে উঠে জাহিনের।এবার আর এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।তড়িঘড়ি করে ফোন রিসিভ করে জাহিন।

” হ্যাঁ মা মনি বলো?

“আমি কখন থেকে তোর আশায় বসে আছি বল তো?আজকে তো তোর ডিউটি নেই তাহলে বাসায় ফিরবি কখন?

” জরুরি ডিউটি পরে গেছে মা মনি।আজকে আর আসতে পারবো না।হসপিটালেই থাকতে হবে।আমি সকালেই বাড়ি পৌছে যাবো।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন কেটে দেয় নবনী।

মুহতাসনিম বুঝতে পারে জাহিনই হচ্ছে ডাক্তার।এতটা বোকা সে কি করে হলো?এত টা অবিশ্বাস করছিল এই লোকটাকে।আশ্চর্যের বিষয় হলো জাহিন একবারও কোনো আউট বা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করেনি।অন্য কেউ হলে নিশ্চয়ই হাজার টা প্রশ্ন করে বসতো তার এই সাজসজ্জার জন্য?মুহতাসনিম নিজে থেকেই বলে,

“আ….আসলে খালার মেয়ের বিয়ে তা….তাই সেজেগুজে………..

কথা থামিয়ে দেয় জাহিন।

” অযথা মিথ্যা বলার প্রয়োজন নেই।আমি কিছু জানতে চাইনি আপনার কাছে।

পরবর্তীতে আর একটাও কথা বাড়ায়নি মুহতাসনিম।খাওয়া,ঔষধ এর বাহিরে আর একটাও কথা বলেনি জাহিন।সময়মতো মেডিসিন দিয়ে বেরিয়ে আসে।

~~~

ভোরের আলো ফুটেছে বাহিরে।জানালা গলে কিছুটা চোখে আসতেই ঘুম কেটে যায় জাহিনের।শেষ রাতে চোখ লেগে গিয়েছিল মনে হয়।মুহতাসনিম কে মাঝে দুইবার দেখে এসেছে।ঘুমচ্ছিল মেয়েটা।

হঠাৎ একজন নার্স আসে হন্তদন্ত হয়ে,

“স্যার কালকে আপনার পরিচিত যে মেয়েটাকে এডমিট করা হয়েছে ওই মেয়েটা নেই।কোথাও নেই।মনে হয় পালিয়েছে!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here