মেঘবতীর_শহরে,পর্ব-১৫,১৬

0
620

#মেঘবতীর_শহরে,পর্ব-১৫,১৬
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
১৫
,
বাতাসের তোড় বেড়েছে,ঠান্ডা মৃদু হাওয়া জানান দিচ্ছে যে কোনো সময় বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে দিবে।
ছোট ছোট পা ফেলে হেটে চলে যাচ্ছে মুহতাসনিম।সেকেন্ড দু এক তাকিয়ে’ই আবার ভাইদের দিকে তাকায় জাহিন।ততক্ষণে রিশান আর আনান কাছে চলে এসেছে।আনান অবশ্য খেয়াল করেছে বিষয় টা পরক্ষণে জাহিনকে ক্লিয়ার করতে বলল,

“চিনিসনি মেয়েটিকে তাই তো?আরে আমাদের মিনা খালার ভাগ্নি!

রিশানের ফোনে কল আসতেই খানিকটা দূরে সরে যায় রিশান।ব্যস্ত হাতে পকেট থেকে ফোন বের করে জাহিন।স্ক্রিনে আঙ্গুল চালিয়ে আনানের কথা অনেকটা তোয়াক্কা না করেই বলল,

” হুম,কি খবর ব্যবসা কেমন সামলাচ্ছিস?

হাত ঘড়িটায় একবার চোখ বুলায় আনান।ভাবভঙ্গি বলে দিচ্ছে কোথাও যাওয়ার তাড়া!

“আলহামদুলিল্লাহ ভালোই চলছে।বাবার সাথে ব্যবসাটা এবার আর এডজাস্ট রাখবো না ভাবছি।নিজেই বড় করে ব্যবসাটা দাড় করাবো।তুই সাথে থাকলে কবেই হয়তো ব্যবসাটা দাড় করিয়ে ফেলতে পারতাম।ভেবে দেখ না জাহিন আরেকটাবার!

ততক্ষণে রিশান এসেই জাহিনকে জাপটে ধরে।

” ব্রো তুমি এসেছো তার জন্য যে আমি কত খুশি বলে বোঝাতে পারবো না!ভেবেছি তোমার সাথে বুঝি আর দেখা হলো না!কি ভাবে ম্যানেজ করলে শুনি?

জাহিনের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি লেপ্টে আছে।ভাইয়ের খুশি আজ তাকে সত্যিই বিশ্বজয় করার মতো আনন্দানুভূতি দিচ্ছে!
যাক শেষ মুহূর্তে ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছে এতে জাহিনের মন টাও বেশ শান্ত!কত কাঠখড় পুড়িয়ে এসেছে তাও কেবল তিনটে দিনের জন্য!দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দেয় জাহিন,

“ম্যানেজ করেছি যে ভাবেই হোক তবে পরবর্তীতে তার মাশুল তো অবশ্যই দিতে হবে রে!

আনান পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরিয়ে মুখে পুরে বলে,

” এখন জাহিন এমন করছে তো দেখবি বিয়ের পর জাহিন বাড়ি থেকে এক পা’ও নড়াবে না!তাই বলছি আমার সাথে ব্যবসায় হাত লাগা আগেভাগেই!

দীর্ঘশ্বাস ফেলে জাহিন।বিয়ে শব্দ টা আপাতত মাথায় না প্রবেশ করালেও চলবে।কথার প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,

“এসব খাওয়া কবে ছাড়বি তুই?কতবার বলবো স্বাস্থ্যের জন্য একদম ভাল না!

কথা তোয়াক্কা না করে বলে আনান,

” তুই ডাক্তার তাই মন্দ দিকটা পুরোই জানিস, আমি জানি না তাই এসব স্বাস্থ্যর চিন্তা আমার নেই!খাওয়া লাগে ভাই নয়ত মাইন্ড ফ্রেশ হয় না।

রিশান কথা কেড়ে নিয়ে বলল,

“ভাই আসলেই এইবার ছাড়ো এসব খাওয়া।

আনান ধোঁয়া ছেড়ে বলে,

” ওয়ে ভুতের মুখে দেখছি রাম রাম!তুই আগে ছাড় না! পরে অন্যকে বলিস।

মুখটা কাঁচুমাচু ভঙ্গিমা নিয়ে বলে রিশান,

“আমি তো, মানে ছেড়েই দিয়েছি প্রায়।সারাদিনে ঐ একটা,দুটো হয় আরকি,তবে এই তোমার কাসাম সে ভাই,বাইরের কান্ট্রি তে গিয়ে ফুল্লি ছেড়ে দিবো!

হঠাৎ পেছন থেকে ডাক আসে।নবনী রিশানের নাম ধরে ডাকে।
রিশান দৌড়ে যেতেই বলে,

” তোর মা ডাকছে রিশু,তোর কিছু নেওয়া বাকি আছে কিনা চেইক কর গিয়ে।আর তো দু,তিন ঘন্টা বাকি আছে।

“যাচ্ছি ফুপিমনি।

নবনী কে দেখে প্রায় অনেকক্ষণ আগেই সিগারেট টা ফেলে দিয়েছে আনান।মুখের সামনে থেকে মাছি উড়ানোর মতো করে ধোঁয়া তাড়িয়ে বলে,

” এই রে এই সিগারেটের গন্ধ তো চারিদিকে মৌ মৌ করছে! ফুপিমনি এখানে আসলে কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে।আমি গেলাম রে জাহিন পরে তো কথা হচ্ছেই।

~~~

আনান একপ্রকার দৌড়ে চলে যায়।জাহিন খানিকটা হেঁটে গিয়ে ছাদের কোণায় দাঁড়ায়।এই সিগারেটের প্রসঙ্গ ধঁরেই মুহুর সাথে প্রথম দেখা জাহিনের!বৃষ্টিতে সাদা জামা পরিহিতা এলোকেশী সেই রমনী!যা আজো স্বপ্নে এসে ধরা দেয় জাহিনের!বাকি রাতটুকু যে আর ঘুম হয় না তখন।সে স্বপ্নটার কি আজীবন নিরব রজনী’ই সাক্ষী থাকবে?

কাঁধে কারো হাত পেয়ে চমকে উঠে জাহিন!মায়ের শরীরের চেনা সেই তীব্র ঘ্রান টা নাকে এসে ধাক্কা খায়!হাসি মুখ নিয়ে ঘুরে তাকায় জাহিন।

“কিরে বাবা আসার পর সে’ই যে একবার দেখা করলি আর দেখা করলি না কেন?এতটা পথ জার্নি করে এসেছিস কিছু খাসনি নিচে চল খাবি।

” রিশানকে দিয়ে এসেই না হয় খাবো মামণি।এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।

ছেলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কখনও জোড় করেনি নবনী।আজও তার ব্যতিক্রম করলেন না।মৃদু হেসে ‘আচ্ছা’ বলে নবনী।

চোখটা হঠাৎ করেই চিলেকোঠার রুমটার দিকে থমকে যায় নবনীর।রাত ভালই বেড়েছে তবুও ওই ছোট্ট রুমটায় টিমটিম করে আলো জ্বলছে!জানালা খোলা তবে পর্দা টানা।বাতাসে বেগতিক ভাবে পর্দা দুটো দুলছে!

‘মেয়েটা এখনও ঘুমোয়নি?!!’

মায়ের কথায় পাশ ফিরে তাকায় জাহিন।

” কিছু বলছো মামণি?

ছেলের দিকে পুনরায় তাকায় নবনী।পরক্ষণে বলে,

“ওই যে চিলেকোঠার রুমটা তোর মিনা খালাকে দিয়েছি।তোকে বলতে মনে ছিল না।

দূরে দৃষ্টি রাখে জাহিন।মায়ের কথার সাথে স্বমত জানিয়ে বলে,

” হ্যাঁ ভালো করেছো।

“হ্যাঁ কলোনিতে কি কষ্ট করতো ভাগ্নিটাকে নিয়ে।মেয়েটি সত্যি কি লক্ষী রে!আমি কথা বলেছিলাম তোর ব্যপার টা নিয়ে।

জাহিন কিছুটা রাগ নিয়েই বলে,

” তোমায় বারণ করেছিলাম না মা মণি?কি দরকার ছিল?

“দরকার অবশ্যই ছিল।মনে হয়না মেয়েটি আর রেগে আছে।তুই একটু কথা বলে দেখতে পারিস।

~~~

সাইডের জানালা খুলে দিয়ে বৃষ্টির অপেক্ষায় আছে মুহতাসনিম।রাতের বৃষ্টি খুব টানে মুহুকে!প্রায় বেশীরভাগ মানুষ’ই রাতের বৃষ্টিবিলাসী!আর মুহু ঠিক তার উল্টো!জানালার বাইরে হাত ছড়িয়ে বসে আছে মুহতাসনিম!রাতের আধার ঘনিয়ে আসছে ধীরে ধীরে।গোল গোল হয়ে বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে।মুহূর্তেই মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দেয় মুহতাসনিম এর।এক্ষুনি এক দৌড়ে ছাদে নেমে চলে আসবে মুহতাসনিম।

গায়ে কয়েকফোটা বৃষ্টি পড়তেই সম্বিৎ ফিরে পায় জাহিন।মা চলে যাওয়ার পর আবারও সেই রাতের মেঘবতীর ভাবনায় ডুবে গিয়েছিল কিছু সময়ের জন্য!তৎক্ষনাৎ মাথায় হাত রেখে দৌড়ে সিড়ির দরজায় চলে আসে জাহিন।

তক্ষুনি চোখে ধরা দেয় সেই চিরচেনা মেঘবতী!দু হাত মেলে আকাশের দিকে মুখ করে আছে!বৃষ্টির রাজ্যের রানী যেন স্বয়ং এক খন্ড বৃষ্টি হয়ে নেমে এসেছে!বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে জাহিন!একবার হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে রাত একটা বাজতে চলেছে!

মুহূর্তেই খোপা খুলে চুল গুলো সযত্নে নামিয়ে দেয় মুহতাসনিম!কোমড় ছেড়ে হাঁটুর কাছে ঠাঁই নেয় চুলগুলো!বিস্ময়ে চোখ ধাঁধিয়ে যায় জাহিনের!বৃষ্টির তেজ ততক্ষণে ভালই বেড়েছে।অন্ধকারে বৃষ্টির ছাট দেখা না গেলেও শব্দে বেশ ভাল ভাবে অনুমান করা যাচ্ছে তার বেগ।

হঠাৎ ফোনের টোন বাজতেই ঘোর কাটে জাহিনের।পকেটে হাত পুরতেই বালা জোড়া রিনঝিন করে বেজে উঠে!ফোন হাতে নিতেই দেখে রিশানের কল।

” বল?

“এই তো মিনিট দশের মধ্যে বের হবো ব্রো।জলদি নিচে আসো তো।নাকি আবার বৃষ্টিতে ভিজছো?

ছোট্ট করে জবাব দিলো জাহিন,

‘আসছি’

ফোনটা রেখে পুনরায় আগের জায়গায় দৃষ্টি দেয় জাহিন।বিন্দু মাত্র’ও ইচ্ছে করছে না নিচে যেতে!কোনো এক অদ্ভুত মোহ চোখ দুটোকে আটকে দিয়েছে যেন!সম্ভব হলে এখানেই আজ সময়টাকে থমকে দিতো জাহিন!সত্যিই কি সময় থমকে দেওয়া সম্ভব?কেমন উদ্ভট চিন্তা ভর করে মাথায়!

~~~

রিশানকে এয়ারপোর্টে রেখে জাহিনদের ফিরতে ফিরতে একদম ভোর হয়ে গেছে।বৃষ্টি ততক্ষণে অনেকটা কমে গেছে।ইলশেগুঁড়ির মতো কিছুটা বৃষ্টি এখনও পরছে।আকাশটা এখনও ঘোলাটে আর গুমোট হয়ে আছে।হাল্কা শীত শীত অনুভুত হচ্ছে।বাসায় ফিরে হাত মুখ ধুঁয়ে কিছুটা খেয়ে নেয় জাহিন।পরক্ষণে রুমে এসে ড্রয়ার থেকে চাদর নিয়ে গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পরে।
চোখ দুটো ঘুমে কেমন নিভে যাচ্ছে!মনে হচ্ছে বহু দিন পর চিন্তামুক্ত হয়ে বিছানায় গা এলিয়েছে জাহিন!তন্দ্রার অথৈ সমুদ্রে মুহূর্তেই তলিয়ে যায়!

~~~

সারারাত বৃষ্টির কারণে আবহাওয়া আজ অনেকটা ঠান্ডা।রোদের তাপ মৃদু।শরীরে যথেষ্ট সহনীয়।সাদার মাঝে নীল রঙের অরগেন্ডি থ্রিপিস পরেছে মুহতাসনিম।সকাল সকাল’ই বেরিয়ে পরেছে।কাল রাতে ভেজার ফলে মাথা খানিকটা ভার হয়ে আছে মুহুর।সচরাচর এমন হয় না কখনও।

~~~

দুপুর নাগাত ঘুম ভাঙ্গে জাহিনের।আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে।কতদিন পর ভাল ঘুম হলো।হসপিটাল থাকলে ঘুমের খুব অনিয়ম হয়।নবনী হাসি মুখ নিয়ে নাস্তার ট্রে হাতে এগিয়ে আসলো,

“ঘুম ভাঙ্গলো আমার বাবার?আমি এক্ষুনি ডাকতাম।কত বেলা হয়েছে জানিস?

ভাঙ্গা ঘুম জড়ানো কন্ঠে জবাব দিলো জাহিন,

“ভোরে ঘুমিয়েছি তাই জাগতে দেরি হলো মামণি।তুমি খেয়েছো?

” হুম।তুই ফ্রেশ হয়ে আয় তো।

উঠে ওয়াশরুমে চলে যায় জাহিন।আয়েশী ভঙ্গিতে ছেলের খাটে উঠে বসে নবনী।আজ নিজ হাতে ছেলেকে খাইয়ে দিবেন।ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এসে সোজা মায়ের সামনে বসে জাহিন।

“তোমার হাতে খাবো মামণি।

” জানি।সে জন্যই তো বসলাম এখানে।

পরম যত্নে ছেলেকে খাইয়ে দিচ্ছেন নবনী।পরক্ষনে বায়নার সূরে বলে,

“এবার মাস খানেক থাকতেই হবে তোকে এই বলে দিলাম।

মায়ের কথায় ভিষম খায় জাহিন।
তক্ষুনি রেহানা বেগম পান চিবুতে চিবুতে রুমে প্রবেশ করেন।

” হায় মাবুদ!এত বড় পোলারে কেউ হাতে তুইলা খাওয়ায়?কয়দিন পর বিয়া করবো তখন কি বউ খাওয়ায় দিবো?

নবনীর ঠোঁটের কোণে হাসি।মুখটা পানসে করে খাবার গিলছে জাহিন।নানুমনির কথা বরাবরেই খারাপ লাগছে তার।

~~~

বিকেল নাগাত বাড়ি ফিরেছে মুহতাসনিম।হাত ভর্তি বাজারের ব্যাগ।ফেরার সময় কাঁচাবাজার সেরে এসেছে।ছাদে উঠতেই হাঁপিয়ে উঠে মুহতাসনিম।সামনে হঠাৎ দৃষ্টি থমকায়।

হালকা আকাশী রঙের টি-শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে জাহিন।পিঠ পেছনে দেখে জাহিন কে দেখে চিনতে ভুল হয়নি একটুও।

তৎক্ষনাৎ ব্যাগ রেখে সে দিকে এগিয়ে যায় মুহতাসনিম।পেছন থেকে ডাকে,

“ডাক্তার সাহেব?

চলবে……….

#মেঘবতীর_শহরে
পর্ব-১৬
নাদিয়া_ইসলাম সানজিদা


বিকেলের মৃদু ঠান্ডা আবহাওয়ার মাঝে চিকন মেয়েলি কন্ঠটা কানে এসে বেজে উঠে জাহিনের!কয়েক সেকেন্ড মুহূর্ত নিয়েই ঘুরে তাকায় জাহিন।

কোমড়ে এক হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।কপাল চুইয়ে ঘাম ঝরছে।বিধ্বস্ত লাগছে যেন মুখ খানি!ক্লান্ত চোখ দুটো যেন বহুক্ষণ ধরে তন্দ্রার স্বাদ পায়নি! সামনে থাকা কিছুটা চুল হলদা বর্ণের গালের সাথে লেপ্টে আছে।সবকিছুই খুব সুক্ষ্ম ভাবে যেন পর্যবেক্ষণ করছে জাহিন।

জাহিনকে চুপ থাকতে দেখে পাল্টা আবার ডেকে উঠে মুহতাসনিম,

“আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?

চমকিত ভাবে ঘোর কাটে জাহিনের!এক আগেও যে মুহতাসনিম এর সাথে রেষারেষি হয়েছে তার বিন্দু মাত্র প্রভাব নেই!নিঃসংকোচে কথা বলছে মুহতাসনিম।জাহিন বেশ ভাল ভাবে বুঝেছে মামণি রাগের আর ছিটেফোঁটাও মিস মুহুর মনে জমা রাখতে দেয়নি।

” জ্বী বলুন?

হাতে থাকা ব্যাগ টার চেইন খুলে সেখান থেলে কচকচা এক হাজার টাকার দুটো নোট বের করে জাহিনের দিকে বাড়িয়ে দেয় মুহতাসনিম।ভ্রু কুঁচকে মুহতাসনিম এর কান্ডকারখানা পর্যবেক্ষণ করছে জাহিন।মেয়েটাকে আসলেই কখনও কখনও বেশ অদ্ভুত লাগে!

“এবার আমার বালা জোড়া ফিরিয়ে দিবেন দয়া করে।আর টাকা টা রেখে আমাকে উদ্ধার করুন।

মনে মনে দারুণ রাগ হয় জাহিনের।টাকা টা দেওয়াতে আত্মসম্মানে লাগে কেমন!অবশ্য দোষ জাহিনের সে এতদিন যাবৎ বালা জোড়া নিজের কাছে রেখে দিয়েছিল তার বিনিময়ে মেয়েটি টাকা সাধবে এটাই তো স্বাভাবিক!

পকেট থেকে বালা জোড়া বের করে মুহতাসনিম এর দিকে এগিয়ে দেয় জাহিন।

” নিন আপনার চুড়ি?

চুড়ি জোড়া হাতে নিয়ে ফের টাকা হাতে দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে দূরে দৃষ্টি রেখে দাঁড়িয়ে থাকে জাহিন।

“কখন থেকে সাধছি ধরুন?কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো আমি?

রাগটা কোনোরকম গিলে নেয় জাহিন।পরক্ষণে বলে,

” লাগবে না।ওটা আপনার কাছেই রেখে দিন।

ভ্রু কুচকে জবাব দেয় মুহতাসনিম,

“আমি ঋন রাখতে পছন্দ করি না।আর যদি বলেন টাকা টা আপনার লাগবে না তাহলে বলবো কারও দয়া আমি চাই না।

বাকি আর কথা বাড়ায় না জাহিন অপর পাশ তাকিয়েই টাকা টা হাতে নেয়।পরক্ষণে স্থান ত্যাগ করে মুহতাসনিম।কি ভেবে ফের পিছু একবার তাকায় জাহিন।বাজারের ব্যাগ হাতে নিশব্দে হেটে চিলেকোঠার রুমটায় চলে যায় মুহতাসনিম।

~~~

রাতে একসাথে খেতে বসেছে সবাই।রিশানের অনুপস্থিতিতে সবার মন খানিকটা ভার।খাওয়ার মাঝে আনানের বিয়ে নিয়ে কথা ওঠে।রেহানা বেগম বলেন,

” জাহিনের বিয়ার আশায় থাকলে নাতবউ আর দেখা লাগবো না।আপাতত আনানের বউ টাই দেখে চোখ শান্তি করি।

জাফর সাহেব খাওয়ার মাঝে বললেন,

“আমার বন্ধুর মেয়ে।আমি দেখেছি কয়েকবার।দেখতে শুনতে ভালই।মনে হয় না আনান অমত করবে।

আনান চুপচাপ খাচ্ছে।জাহিনের মুখে খানিক দুষ্টু হাসি।নবনী বলেই ফেলল,

” বাহ্ এতদূর?শুধু আমরাই দেখলাম না?

শায়লা বেগম পাশ থেকে বলল,

“না নবনী, আমিও এখনও দেখিনি কাল সবাই মিলে দেখে আসবো।

” তাহলে তো বেশ ভালো।আমার জাহিনও আছে এখন সেও যেতে পারবে।

~~~

খাওয়া পর্ব শেষ হতেই জাহিন ছুটে গেল আনানের রুমে।পেছন থেকে আটকে বলল,

“ওই শালা দাড়া!তলে তলে সব পাকিয়ে বসে আছিস দেখছি!লাভ কেইস তা তো বেশ বুঝতে পারছি।বাকি টা বল এবার?

আনান খানিকটা অবাক হয়ে বলে,

” এসব ব্যাপারে তুই ইন্টারেস্ট?সিরিয়াসলি জাহিন?

“কাহিনী বল।আমি অন্যের টায় ইন্টারেস্ট বুঝলি?

বলেই শব্দ করে হেসে উঠে।

” ওই আরকি তোর হবু ভাবীর নাম রাফসা।একটু আধটু চিনি এই যাহ!

“একটু আধটু?!!হুম?ভাল ভাল!

” আরে পরিচয় মাত্র কয়েকটা দিনের বুঝলি?এর মধ্যেই বাবা হয়তো কিছু টের পেয়েছে ওমনি রাফসার বাবার কাছে প্রস্তাব দিয়ে দিয়েছে!ব্যস বাকি টা তো জানিসই।

“হুম বুঝলাম।কিন্তু রিশানটা শুনলে কষ্ট পাবে রে।

” রিশু জানে।সব গোড়ার প্যাচ আমাদের রিশুই রে।

“বাহ্ মাঝে বাদ শুধু আমিই?

” তুই তো বাসায় থাকিসই না!ফোনে কি আর এসব গুছিয়ে বলা যায়?

পেছন থেকে নবনী বলে,

“জাহিন তুই এখানে?তোর রুমে গিয়ে পেলাম না তোকে।

” আসছি মামনি তুমি যাও।

“হুম।

~~~

জাহিন রুমে আসতেই দেখে নবনী আগে থেকে দাঁড়িয়ে আছে।জাহিন কে দেখে হাসিমুখে বলে,

“জাহিন পারলে কিছু টাকা আমার হাতে দিস।কালকে আনানের বউ কে তো খালি হাতে দেখতে পারবো না।

” তুমি এভাবে বলছো কেন মামণি?আমি কার জন্যে টাকা ইনকাম করি?সব আমার মায়ের জন্য।

পকেটে হাত রাখে জাহিন বিকেলে মুহুর দেওয়া টাকা টা হাতে নিতেই পরক্ষণে আবার টাকা টা পকেটে রেখে দেয়।এগিয়ে গিয়ে ওয়ালেট থেকে টাকা নিয়ে মামণির হাতে দেয়।

“এতে হবে মামণি?

” হুম যতেষ্ট।

নবনী চলে যেতে গিয়েও থেমে যায়।পরক্ষণে বলে,

“আনানের বিয়ের কথা শুনে বাড়িতে সবাই খুব খুশি নারে জাহিন?

মায়ের কথার ধরণ বুঝতে পেরে বলে জাহিন,

” হওয়াটা স্বাভাবিক মামণি।আনান এই বাড়ির ছেলে।তার উপর বড় ছেলে।আনন্দ হবার কথাই।

জাহিনের কথায় কলিজা কেঁপে উঠে নবনীর!ছেলে তার কতটা কষ্ট নিয়ে সরল উক্তিতে কথাটা বলে দিলো!আর একমুহূর্ত দেরি না করে বেরিয়ে যায় নবনী।
,
,

দু কদম হেটে বেলকনিতে চলে আসে জাহিন।নিস্তব্ধত রাতের বুকে খন্ড খন্ড হয়ে আলো দিচ্ছে মিটিমিটি তারা’রা।পাশেই মস্ত চাঁদ টা একাই যেন রাতের বুকে সিংহভাগ জায়গা দখল করে আছে।মায়ের কষ্টের মুখ খানা বড্ড যন্ত্রণা দেয় জাহিনকে।যেদিন মায়ের হাত ধরে চিরজীবনের মতো নানু বাসায় এসে উঠেছে সেদিন থেকেই মনে মনে অনেক কিছুর হিসেব কষে নিয়েছে।মাকে নিয়ে আপন ভূবণে নিজের ছোট্ট শহর টা নিয়েই বাঁচতে চায় জাহিন।

~~~

ভোর সকালেই ঘুম ভেঙ্গে যায় জাহিনের।সকাল টা উপভোগ করতে বেশ ভাল লাগে।সচরাচর সকাল টা উপভোগ করা হয় না জাহিনের।বাড়ি আসলেই মনের মতো ইচ্ছে গুলো কিছুটা হলেও পূরণ হয়।

নিজেই রান্নাঘরে গিয়ে এক মগ কফি বানিয়ে নেয় জাহিন।পরক্ষণে খোলা বারান্দায় দাড়িয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে প্রকৃতি উপভোগে মত্ত হয়!পাশে চোখ পরতেই দেখে বেলকনির গাছগুলো কেমন নিষ্প্রাণ লাগছে!গাছে কিছুটা পানি দেয়।পরক্ষনে হাতে একটা বই নিয়ে বিছানায় চলে আসে।

~~~

ঘড়িতে চোখ বুলায় মুহতাসনিম।সকাল দশটা বেজে গেছে!তড়িঘড়ি করে তৈরি হয়ে নেয় মুহতাসনিম।আজকে একটু দেরি হয়ে যায়।

নিচে রাস্তায় এসে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।ব্যস্ত হয়ে হাত ঘড়িটা বার বার দেখে নিচ্ছে।তক্ষুনি জাহিন গাড়ি নিয়ে বের হয়।ডানদিকে চোর পরতেই মুহতাসনিম কে দেখতে পায়।বেশ বিচলিত লাগছে কেমন!রোদের পখরে হলদা মুখ খানি কেমন লালচে বর্ন ধারণ করেছে!কিছু একটা আন্দাজ করে গাড়ি নিয়ে মুহতাসনিম এর সামনে আসে জাহিন।জানালা দিয়ে মাথা টা খানিক বের করে বলে,

“সামনেই যাচ্ছি,আপনি চাইলে আমি নামিয়ে দিতে পারি।

চলবে……

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিযোগ্য)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here