#মেঘবতীর_শহরে,পর্ব-২৮,২৯
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
২৮
লাইনটা টুক করে কেটে দেয় মুহতাসনিম।মৃদু মন্দ বাতাস বইছে।মনে শত চাপা কষ্টের মাঝেও একটুখানি স্বস্তি লাগছে।দূর আকাশে তারা রা জ্বলজ্বল করছে।চোখ বুজে বুক ভরে নিশ্বাস নেয় মুহতাসনিম।আচমকা কাধে কারো স্পর্শ পায়।তৎক্ষনাৎ চোখ খুলে তাকায় মুহতাসনিম।মিসেস নবনী দাঁড়িয়ে আছেন,
“এত রাতে এভাবে ছাদে দাঁড়িয়ে আছো কেন?শরীর তো এমনিতে অনেক খারাপ।
মেঝেতে দৃষ্টি রাখে মুহতাসনিম।বলার মতো কিছু খুঁজে পায় না।মাথায় খানিকটা হাত বুলায় নবনী।চাঁদের উজ্জ্বল আলোয় মুহতাসনিমের হলদাভাব শুকনো মুখ খানি চোখে পরে।
” আমি নিজের হাতে রান্না করেছি খাবে চলো।
নবনীর চোখে চোখ রাখে মুহতাসনিম।বড্ড মায়া মাখানো ছিল যেন মিসেস নবনীর কথায়!
“আমি কিন্তু বারণ শুনবো না।খুব কষ্ট করে রান্না করেছি।আর খাওয়ার পর তুমি নিচেই ঘুমাবে।চিলেকোঠার রুমে আর থাকতে হবে না।
বাধ্য মেয়ের মতো চুপটি করে রাজি হয়ে যায় মুহতাসনিম।মাথা কাত করে সায় জানায়।মুখে হাসির রেখা দীর্ঘ হয় নবনীর।
~~~
ব্যস্ত জাহিনের ফোন অনবরত বাজতে থাকে।সে দিকে নজর দেওয়ার সময় নেই।ইমারজেন্সি রোগী দেখায় ব্যস্ত।ফোনটা অনবরত বেজেই চলেছে।স্ক্রিনে একবার চোখ ফেলে জাহিন।রিশান কল করেছে।পরক্ষণে ফোনটা হাতে নিয়ে সুইচ অফ করে রেখে দেয়।
~~~
মিনা বেগম ছাদের দিকেই এগিয়ে আসেন।নবনীকে দেখতে পেয়েই বলেন,
“আপা রুমে আসেন?
“না এখন আর রুমে যাবো না।মেয়েকে নিতে এসেছি।
মিনা বেগম একবার মুহতাসনিমের দিকে তাকায়।পরক্ষণে কিছু বলার আগেই নবনী আবার বলে,
” নিজের হাতে রান্না করেছি আজকে।মুহতাসনিম খাবে বলেছে!আমার রান্না তো স্বার্থক মিনা আপা।
চোখ দুটো খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠে মিনার।মুহতাসনিম একটু একটু করে স্বাভাবিক হোক এটাই চান তিনি।
“আর শোনো মিনা আপা আজকে কিন্তু আমার সাথেই ঘুমাবে মুহতাসনিম।তুমি ওর ঔষধ পত্র নিচে দিয়ে যেও।
” আমি অহনই নিয়া আসতাছি।
ছুটে রুমের দিকে যায় মিনা বেগম।
“ছেলে সেই বিকেল থেকে আমাকে কল করছে তোমার খোঁজ জানার জন্যে।আমি চিন্তা করেছি রান্না করেই তোমাকে ডাকবো।একটু আগে তো কল করে সোজা বলল, ‘মা মণি তুমি এক্ষুনি মুহুর কাছে যাও,উনি মনে হয় এখনও কিছুই খাননি’
লজ্জায় মাথা তুলে আর তাকাতে পারেনি মুহতাসনিম।হঠাৎ কোথা থেকে এত লজ্জা এসে ঘিরে ধরেছে নিজের কাছেই অজানা!
~~~
ব্যস্ততা শেষে রিশানকে কল করে জাহিন।দুবার বাজতেই রিসিভ হয়ে যায়।এক নাগারে বলতে থাকে রিশান,
“বাহ,বাহ,বাহ!ব্রো তো এখন আমার ধরা,ছোঁয়ার বাহিরে!ফোনটা পর্যন্ত রিসিভ করার সময় নেই!নতুন নতুন বিয়ে হলে বুঝি ব্যস্ততাও বেড়ে যায় ব্রো?
ফোনের এপাশে হাসি চেপে রেখেছে জাহিন।রিশান যে সেই লেভেলের বিচ্ছু তা বলার অপেক্ষা রাখে না! গলাটা যথাসম্ভব কঠিন করে বলে জাহিন,
” এসব কি ধরণের কথা রিশু?বড়দের সাথে এভাবে কথা বলে?
“হুম বিয়ে হয়ে গেছে না?এখন তো মহা বড় হয়ে গেছো!এমন শক্ত গলায় কথা বলছো কেন?ডিস্টার্ব করে ফেলেছিলাম ভাই?
ফোনের ওপাশ থেকে মৃদু হাসির শব্দ পায় রিশান।হাসি নিয়েই জবাব দেয় জাহিন,
“ডিস্টার্ব তো অবশ্যই করেছিস।
তৎক্ষনাৎ বলে রিশান,
” কিহ!আমি কিন্তু এমনিতেই তোমার উপর অভিমান নিয়ে বসে আছি।তুমি বিয়ে করে ফেললে আর একটাবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না?ওই ফুলওয়ালী কে নাকি বিয়ে করেছো?
ছোট্ট করে জবাব দেয় জাহিন,
“হুম’
” ব্রো,ব্রো প্রেম টেম চক্কর ছিল নাকি?আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না!আমি তো ভেবেছি ভাই আমার চিরকুমারই বুঝি থাকবে!শেষ অব্ধি ওই ফুলওয়ালী কিভাবে তোমার মনের গহীনে প্রবেশ করলো?
“তুই তো কথার ফুলঝুরি বসিয়ে দিয়েছিস!আর ফুলওয়ালী বলা বন্ধ কর আপাতত মুহু তোর ভাবী।
” আমি তো নাম টাও জানতাম না!বেশ মিষ্টি নাম ‘মুহু’
খানিকটা গলা ঝেড়ে বলে জাহিন,
“মুহু নয় ওর পুরো নাম মুহতাসনিম।
” যাই হোক আমি মুহু বলেই ডাকবো।
ফোনে খেয়াল হতেই জাহিন বলে,
“আনানও কল করছে,রাখি পরে কথা হবে রিশু।
” আনানের সাথে বসেও তো কথা বলতে পারবে।আমার কথা এখনও শেষ হয়নি ব্রো।
ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে জাহিন,
“আমি হসপিটালে রিশু,দেখা গেল ব্যস্ততার কারণে শেষে আনানের সাথেও কথা হবে না।তোর মতো একই অবস্থা আনানের,সেও এই বিয়ের খবর জানে না।এখন রাখছি।
,
,
লাইনটা কেটেই আনানের ফোন রিসিভ করে জাহিন,
” হ্যাঁ বল?
“বাহ ভাই!জীবনের এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলি সামনে রাখার প্রয়োজন টাও মনে করলি না?আমি তো রুমেই ঘুমাচ্ছিলাম!
” সবটা খুব তড়িঘড়ির মাঝে হয়েছে!মানে তখন পরিস্থিতি টা অন্যরকম ছিল আনান!
“বুঝালে কতকিছুই বোঝানো যায়।দুইদিন যাবৎ কতকিছু হয়ে গেল!তার মধ্যে তুই হঠাৎ করে বিয়ে করেও ফেললি!মানে কি!
” পরিস্থিতি সবার কাছে একরকম নয় আনান।ওই মুহূর্তে আমার যেটা উত্তম মনে হয়েছে আমি তাই করেছি।মেয়েটার মানসিক অবস্থা একেবারেই খারাপ ছিল!
“ওহ আচ্ছা মানবতার খাতিরে বিয়ে করেছিস?তাই বলে এভাবে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে?
” শুধু এতটুকুই বলবো পরিস্থিতি সবার কাছে একরকম নয় আনান।আমার মন যা বলেছে আমি তাই করেছি।
“বাড়ি আসছিস কবে?
” সঠিক বলতে পারছি না।
“মানে?
” তোর বিয়েতে থাকবো টেনশন নিস না।রাখছি।
~~~
অন্ধকার রুমে পায়চারি করছে মুহতানিম।কাল থেকে বোনের একটা খোঁজ নেই!কতবার কল করেছে।অজানা এক ভয়ে শরীর সেধিয়ে যাচ্ছে!রাতের খাবারটাও গলা দিয়ে নামেনি।হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হতেই ভয়ে লাফিয়ে উঠে মুহতানিম।পারুল বেগম রুমে আসেন।
“কিরে ঘুমাস নাই এখনও?
কোনোরকম তুতলিয়ে বলে মুহতানিম,
“যা,,,যাই!
এগিয়ে এসে খপ করে মেয়ের হাত চেপে ধরে পারুল বেগম।ভয়ে গলা আরও শুকিয়ে আসে মুহতানিমের।
” কি হয়েছে মা?
“তোর হাবভাব কেমন জানি মনে হচ্ছে!তুই কিছু লুকচ্ছিস মুনা।
হাত টা ছাড়িয়ে নেয় মুহতানিম,
” ক,,,কি লুকাবো?
“মুহুর খবর পেয়েছিস?সত্যি বলবি এই যে আমার গাঁ ছুঁয়ে বল!
~~~
ডাইনিং টেবিলে বসে আছে মুহতাসনিম।নবনী নিজের হাতে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।নিজের কাছে কেমনজানি লাগছে মুহতাসনিমের।কোনোরকম বলে উঠে,
” আ,,,আমি নিয়ে খেতে পারবো।
“উহুম আমি নিজের হাতে খাইয়ে দিবো।চুপচাপ বসো মেয়ে।
” আপনি খাবেন না?
প্লেটে ভাজা ইলিশ মাছের পিসটা নিয়ে গরম ভাতের সাথে মাখাতে মাখাতে বলল নবনী,
“এখন না।ভাই,আনান ফিরুক তারপর সবার সাথে খাবো।তুমি হা করো তো।
এক লোকমা খাওয়াতেই পাশে নবনীর ফোন বেজে উঠে।জাহিন কল করেছে।মুচকি হেসে বলে নবনী,
” ওই তো জাহিন কল করেছে।
একহাতে ফোন নিয়ে রিসিভ করে নবনী,
“হ্যাঁ বাবা বল?
” মুহু কি খেয়েছে মা মণি?
“এই তো খাইয়ে দিচ্ছি।বিশ্বাস না হলে ভিডিও কল করে দেখে নিতে পারিস।
” লাগবে না।
বলেই লাইনটা কেটে দেয় জাহিন।মায়ের কথা লজ্জায় ফেলে দিয়েছিল বুঝি খানিক।মুচকি হেসে আবারও খাওয়াতে মনোযোগী হয় নবনী।
~~~
জাহিনের রুমে এই প্রথম আসেনি মুহতাসনিম।এর আগেও একবার আসা হয়েছিল।রুমটায় ভালো করে একটু চোখ বুলিয়ে নেয়।জানালার পর্দা থেকে শুরু করে খাটের চাদর অব্ধি সব সাদা রঙের!যেন শুভ্র মেঘের রাজ্যে!দেয়ালে জাহিনের কয়েকটা ছবি টানানো।লোকটা দেখতে মন্দ নয় বরং অনেকটা বেশিই সুন্দর!হাসিতে অদ্ভুত রকমের মায়া!
দরজার পাশে নবনীর শব্দ পেয়ে সে দিকে তাকায় মুহতাসনিম।ভেতরে প্রবেশ করতে করতে বলে নবনী,
“এই যে ঔষধ নিয়ে এসেছি খেয়ে চুপচাপ ঘুমাবে।আর আজকে আমিও তোমার সাথে ঘুমাবো।এমনিতে মায়ের সাথেই ঘুমাতাম।
তৎক্ষনাৎ বলে মুহতাসনিম,
“নানুর তো বয়স হয়েছে কতকিছু লাগতে পারে আপনি না হয় সেখানেই ঘুমান।আমি একা থাকতে পারবো।
” তোমারও তো শরীর ঠিক নেই।তোমার নানুর পা টিপে না দিলে রাতে ঘুম হয় না।বাতের ব্যাথা আছে তার।
“সমস্যা নেই আপনি নানুর কাছে যান।আমি একা শুতে পারবো।
” আমি মায়ের পা টিপে ঘুম পারিয়ে রাতে আসবো কেমন?তুমি ঘুমাও।
বাধ্য মেয়ের মতো ঔষধ খেয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে মুহতাসনিম।
~~~
সবার সাথে খেতে বসে নবনী।শায়লা বেগম আর রিতা চুপচাপ খাচ্ছে।জাফর সাহেবের উদ্দেশ্য রেহানা বেগম বললেন,
“জাহিনের বিয়ার খবর পাইছস?
জাফর সাহেব নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন,
” হ্যাঁ,আনান বলেছিল।
রিতা বেগম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন।জাফর সাহেব পুনরায় বলেন,
“তবে নবনীর থেকে এমনটা আমি আশা করিনি।ভাই হিসেবে আমি জানার অধিকার রাখি।হয়তো আমার কোনো ইম্পর্টেন্ট নেই ওদের কাছে।
নবনী মুখটা অপরাধীর মতো করে বলল,
” তুমি তো জানই ভাই আমার ছেলেটা কেমন।জাহিনকে কখনও বিয়ে করাতে পারবো ভাবিনি।ছেলে রাজি ছিল তাই আর দেরি করিনি।ফোনে বলতাম কিন্তু এটা বেমানান লাগে।ভেবেছি বাড়িতে আসলেই বুঝিয়ে বলবো।
“হুম।তবে ঠিকঠাক সংসার করতে পারলেই হলো।তোর মতো কপাল যেনো আবার না হয়।তুই তো নিজের পছন্দেই বিয়ে করেছিলি।
রেহানা বেগম কথা টেনে নিয়ে বললেন,
” আগের কথা ক্যান উঠতাছে?সব ভালা হইলেই ভালা।
“হুম।
~~~
মুহতানিম থরথর করে কাঁপছে।মা এতবড় একটা কথা বলে ফেলবে ভাবতে পারেনি।মার গাঁ ছুঁয়ে মিথ্যাও বলতে পারবে না!শুকনো ঢোক গিলে বলে মুহতানিম,
” হ,,,হুম আমি জানি মুহুপু কোথায়।
~~~
ঘড়ির কাটা রাত দুটোর ঘরে।ঘুমের মাঝে এক তীব্র ভয়ানক স্বপ্নে ঘুম ভাঙ্গে মুহতাসনিমের!আচমকা উঠে বসে!ভয়ে বুক উঠানামা করছে বেগতিক ভাবে!জানালা গলে মৃদু্ বাতাস ঘামে ভেজা শরীর কে কেমন শিরশির করে তুলছে!পাশে নবনী নেই।তড়িঘড়ি করে হাতড়ে ফোন নেয় মুহতাসনিম।কল করে জাহিনকে।কয়েকবার বাজতেই রিসিভ হয়।ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলে জাহিন,
“হুম বলুন মুহু?
জাহিনের কন্ঠ পেতেই সব ভয় যেন মুহূর্তে উবে যায় মুহতাসনিমের।
“কি করছেন?
” এই তো হসপিটালেই।মাত্রই শুয়ে ছিলাম।চোখ লেগে গেছে পুরোপুরি।
“আচ্ছা রাখছি তবে,আপনি ঘুমান।
” মুহু?
“হুম?
” এত রাতে কল করলেন?আপনি কোথায় এখন?
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে মুহতাসনিম,
“আপনার রুমে।
” একা ঘুমিয়েছেন?
ছোট্ট করে বলে মুহতাসনিম,
“হুম’
” আপনি কি ভয় পাচ্ছেন মুহু?
চলবে…….
#মেঘবতীর_শহরে
পর্ব-২৯
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
,
,
নিস্তব্ধ অন্ধকার রুম।দেয়ালের এক কোণে টিমটিম করে ডিম লাইট জ্বলছে।কাঁচের জানালা একপাশ বন্ধ করে পর্দা টেনে দেওয়া।দরজাটা বাইরে থেকে লাগানো মনে হচ্ছে!সবটাই চোখ মেলে দেখে নিলো মুহতাসনিম।পরক্ষণে ভয় কাটিয়ে মৃদু শব্দে বলল,
“আমি ঠিক আছি।
ঘুম যেন মুহূর্তেই উধাও হয়ে গিয়েছিল জাহিনের।চটপট বলল জাহিন,
” জানালার সাথেই কর্নারে দেখুন বুক সেলফ আছে,ওখানে অনেক রকমের বই আছে।ঘুম না আসলে আপনি সময় কাটাতে পারেন।তবে আপনার জন্যে এখন ঘুমানো টা খুব বেশি জরুরি মুহু!
জাহিন কে এভাবে মাঝরাতে কল করে ঘুমের ডিস্টার্ব করে ফেলেছে মুহতাসনিম ভাবতেই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।মানুষটা তো আর এমনি বসে থাকে না সারাক্ষণ!কাজের মধ্যে থাকে।পরক্ষনে বলে,
“আপনি ঘুমান তবে।
ছোট্ট একটা তপ্ত নিশ্বাস ছাঁড়ে জাহিন।পরক্ষণে বলে,
“ঘুম আসবে না আর।
” কেন?
“ঘুম তো এসেছিলো আপনি তাড়িয়ে দিলেন!
জাহিনের কথার অর্থ বুঝতে পারেনি মুহতাসনিম।শুধু ছোট্ট করে বলল,
” ঘুমান।
~~~
লাইনটা কেটে পুনরায় শুয়ে পরে মুহতাসনিম।মৃদু ডিম লাইটের আলোয় দেয়ালো জাহিনের ছবিতে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে!কি থেকে কি হয়ে গেল!ভাবতেই শরীর শিউরে উঠে!নিয়তি সত্যিই বড্ড অদ্ভুত!হঠাৎ মুনার কথা মনে হতেই ফোন হাতে নেয় মুহতাসনিম।বোনটা যে তার চিন্তায় একটুও ঘুমায়নি সেটা বুঝতে বাকি নেই।পরক্ষণেই মুহতানিম কে কল করে মুহতাসনিম।
~~~
পারুল বেগম একে একে সব কথা জেনে নেয় মুহতানিমের কাছ থেকে।রাগে ওনার গাঁ জ্বলে যাচ্ছে!শহরে গিয়ে টাকা ইনকাম করছে আর বাবা,মায়ের কথা বেমালুম ভুলে গেল!রাগে কটমট করে বলল পারুল বেগম,
“তুই তো আমার আপন মেয়ে!তোরে আমি পেটে ধরছিলাম না?তুইও ক্যান সৎবোনের সাথে মিলে এমন করলি?সংসার টা কিভাবে চলে সেই খোঁজ আছে তোর?ওই মেয়ে তো সংসার অচল করে দিয়ে কবেই উধাও হয়েছে!
হঠাৎ কল বেজে উঠতেই কেঁপে উঠে মুহতানিম!স্ক্রিনে মুহতাসনিমের নাম দেখেই চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠে পারুল বেগমের!ভয়ে কলিজা ধ্বক করে উঠে মুহতানিমের।মায়ের কাছে তো বোনের বিয়ের ব্যাপার টা লুকিয়ে গিয়েছিল!এখন কি হবে?এদিকে তাড়া দেয় পারুল বেগম,
” ফোন টা রিসিভ করে লাউডে দে!জলদি কর।
কাঁপা হাতে ফোনটা তুলে নেয় মুহতানিম।এক্ষুনি কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে যে!
~~~
মুহতাসনিম ভাবছে মুনা কি তবে ঘুমিয়ে গেল?একটু আগেও তো কল করেছিল!হঠাৎ দরজা ঠেলে ভেতরে আসে নবনী।তৎক্ষনাৎ ফোনটা কান থেকে নামিয়ে নেয় মুহতাসনিম।একদম সুইচ অফ করে বিছানার পাশে ফেলে রাখে।
~~~
রিসিভ করে হ্যালো বলতেই লাইন টা কেটে যায়।স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে মুহতানিম।পারুম বেগম রাগের মাত্রা বাড়িয়ে বলেন,
“কি হলো?লাউডে দে ফোন!
” কেটে গেছে মা!
“কেটে গেছে মানে?তুই কল দে।
” থাক না মা।দরকার হলে মুহুপু না হয় আবার কল দিবে।
“তোরে কল দিতে বলেছি,তুই কল দে।
মায়ের নাছোড়বান্দার মতো অবস্থা ভেতরে ভেতরে আরও বেশি ভয় পাইয়ে দিচ্ছে মুহতানিম কে।শুকনো ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে বলে মুহতানিম,
“ফোনে ব্যালেন্স নেই মা।
ভ্রু কুঞ্চিত করে বলে পারুল,
” মায়ের সাথে মিথ্যা কথায় পাড় পাবি না।কল দে জলদি।
অবশেষে বাধ্য হয়ে কল ব্যাক করে মুহতানিম।অপর পাশ থেকে ফোন বন্ধ বলছে।পরক্ষণে ছোঁ মেরে ফোনটা নিজের কাছে নিয়ে নেয় পারুল বেগম।বাঁকা হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।মায়ের সাথে পাল্টা প্রতিবাদ করতে পারেনি মুহতানিম।সেই সাধ্য যে তার নেই!
~~~
মুহতাসনিম কে এখনও জেগে থাকতে দেখে বলে নবনী,
“এখনও ঘুমোওনি?আমার আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে নয়তো এতক্ষণে তোমাকে ঠিক ঘুম পারিয়ে দিতাম।
কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে বলল মুহতাসনিম,
” নতুন জায়গা তো তাই ঘুম আসছে না।
“এসো আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিই,দেখবে এক্ষুনি ঘুম চলে আসবে।
অনেকটা ইতস্তত ভাব নিয়ে এগিয়ে আসে মুহতাসনিম।পরক্ষণে নবনীর পাশ বালিশটায় শুয়ে পরে।পরম যত্নে মুহুর মাথায় হাত বুলাতে থাকে নবনী।মায়ের কথা আজ বড্ড মনে পরছে মুহতাসনিমের।নিজের মায়ের আদর কপালে জোটেনি বললেই চলে।সৎ মা তো কখনও মেয়ে মনে করে দুটো ভালো কথা বলে দেখেনি!আজ যদি সৎ মা একটু আদর যত্ন নিয়ে বড় করতো তবে এই কঠিন দিনগুলো হয়তো দেখতে হতো না মুহতাসনিম কে।জগতটা সবার জন্যে সহজ আর মসৃণ হয় না!তবে মন থেকে নবনীকে মায়ের আসনে বসিয়ে নিয়েছে মুহতাসনিম!
~~~~
আনানের বিয়ের দিন প্রায় ঘনিয়ে এসেছে।রাফসাদের বাড়িতে জাহিনের বিয়ের ব্যাপারটা এখনও জানানো হয়নি।আজকে আনানের হলুদ তারপর পরশু বিয়ে।সে হিসেবে বাড়িতে এখনই ধুম পরে গেছে বিয়ের।বাড়ির সবার মাঝেই আনন্দ!বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা।মেহমান প্রায় আসতে শুরু করে দিয়েছে।মুহতাসনিম বেশ কয়েকবার জানিয়েছে সে এই দুটোদিন চিলেকোঠার রুমেই থাকবে।নবনী বলেছে কোথাও যেতে হবে না এই রুমেই থাকবে মুহতাসনিম।
এত এত মেহমানের ভীরে বড্ড অসস্থি লাগছে মুহতাসনিমের।এদিকে মিনা বেগম অনেক ব্যস্ত।বাড়ির বেশির ভাগ কাজই তাকে সামলাতে হচ্ছে।
নবনীকে কিচেন রুমে দেখতে পেয়েই এগিয়ে আসে শায়লা বেগম।চা বানাতে ব্যস্ত নবনী।শায়লা বেগম গলা ঝেড়ে বললেন,
” ওই মেয়েটা কি এখানেই থাকবে নবনী?
শায়লা বেগমের দিকে একবার দৃষ্টি ফেলে নবনী।পরক্ষণে নির্বিঘ্নে বলে,
“আমার ছেলের বউ তো তার রুমেই থাকবে ভাবী।
” জাহিনের বিয়েটা আপাতত কেও জানে না নবনী।আমার বাবার বাসা থেকে কত আত্মীয়স্বজন আসবে,আমি বলি কি এই দুটোদিন ওই মেয়েকে চিলেকোঠার রুমেই পাঠিয়ে দাও।
নবনী নিশ্চুপ হয়ে শায়লা বেগমের দিকে তাকিয়ে থাকে।পরক্ষণে বলে,
“ঠিক আছে।
~~~
সকালের নরম রৌদ্র জানালা ভেদ করে রুমে এসেছে।কাঁচের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।প্রায় সপ্তাহ খানেক হবে টিউশনি তে যায় না।কয়েকবার ফোনও এসেছিল।আজকে শরীর টা একটু ভালো মনে হচ্ছে।অযথা রুমে বসে না থেকে টিউশনিতে যাওয়া টা উত্তম মনে হচ্ছে মুহতাসনিমের।হঠাৎ পিছু ডাকে নবনী।ঘুরে তাকায় মুহতাসনিম।
” মুহতাসনিম সকালের ঔষধ খেয়েছো?
“জ্বী’
কয়েক সেকেন্ড নিশ্চুপ থাকে নবনী।পরক্ষণে দ্বিধা নিয়ে বলে,
” দুটো দিন না হয় তুমি চিলেকোঠার রুমেই থাকো।বাড়ি ভর্তি গেস্ট,এখানে তোমার ঘুম,খাওয়া সবকিছুই অনিয়ম হবে।
বিনা বাক্যে রাজি হয় মুহতাসনিম।সে তো মনে মনে এটাই চাচ্ছিল!ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড খুশি হয়।
“আচ্ছা।
~~~
তৈরি হয়ে মাথায় হিজাব বাঁধায় ব্যস্ত মুহতাসনিম।মিনা বেগম ব্যস্ত পায়ে রুমে প্রবেশ করতেই থ মেরে দাঁড়িয়ে বলে,
“তুই কই যাইতাছস মুহ?
কাজে মনোযোগী হয়েই বলে মুহতাসনিম,
” টিউশনিতে যাই খালা।
অবাক হয়ে বলে মিনা বেগম,
“কার পারমিশন নিয়া যাইতাছস?তোর শাশুড়ী জানে?জামাইর পারমিশন নিছস?
আচমকা ব্যস্ত হাত থমকে যায় মুহতাসনিমের।নিজের একটা সংসার,আপন জগৎ আছে সেটা যেন মাথাতেই ছিল না!মুহুর তো এখন আপন একটা মানুষ আছে যাকে বলে নিজের মানুষ!মুহতাসনিম কি কখনও সেভাবে ভেবেছে?মিনা বেগম আবারও বলে উঠেন,
” নবনী আপার কাছে বলে যা।আমি এর দায় নিতে পারমু না।পরে কথা তো আমারেই শুনতে হইবো।
ভাবনা থেকে বেরিয়ে বলে মুহতাসনিম,
“আমি আন্টির কাছে বলেই বের হবো খালা।
” আন্টি কিরে?মা বলতে পারস না?
নিচু হয়ে হেটে বেরিয়ে চলে আসে মুহতাসনিম।
~~~
ঘর ভর্তি লোক।ইতিউতি তাকিয়ে নবনীকে খুঁজছে মুহতাসনিম।হঠাৎ রিতা বেগম চলে আসেন।ভ্রু বাঁকিয়ে মুহতাসনিমের উদ্দ্যেশ্য বলে উঠেন,
“এদিক সেদিক কি দেখো?
ভয়ে কথা জড়িয়ে যায় মুহতাসনিমের।কোনোরকম বলে উঠে,
“ন,,,নবনী আন্টি আছে?
” আছে।কিন্তু তোমার তো নিচতলায় আসা বারণ!তবুও এখানে কি চাই?
চুপচাপ রিতা বেগমের কথা শুনছে মুহতাসনিম।আসলেই সে জানতো না এখানে আসা তার বারণ।নয়তো মিনা খালাকে দিয়েই নবনী আন্টির খোঁজ করতো।
শায়লা বেগম এদিকে মুহতাসনিম কে খেয়াল করতেই দ্রুত এগিয়ে আসেন।চোখে মুখে তার কাঠিন্য রূপ!
“এখানে কি চাই?
মুহতাসনিম ভয়ে অনেকটা জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।গলা দিয়ে যেন শব্দ বের হচ্ছে না!
খানিকটা ধমকের সূরে বলে শায়লা বেগম,
” দুইদিন যেন এই ফ্ল্যাটে তোমাকে না দেখি।আনানের বিয়েতে থাকবে না তুমি।যাও বলছি এখান থেকে।
তড়িঘড়ি করে নেমে চলে আসে মুহতাসনিম।চোখ দুটো আপনাআপনি ভিজে উঠে।
~~~
মিনা বেগম ঘরের নানা কাজে ব্যস্ত।নবনী এগিয়ে এসে জিগ্যেস করছে,
“মুহতাসনিম কোথায় মিনা আপা?খেয়েছে ও?
মিনা বেগম খানিকটা অবাক হয়েই বলে,
” মুহু তো টিউশানি তে গেছে।যাওয়ার আগে বলছে আপনারে বইলা যাইবো।
ভ্রু কুঞ্চিত করে বলে নবনী,
“কই আমার কাছে তো আসেইনি মুহতাসনিম!
” মুহু তো না বইলা যাওয়ার মতো মাইয়া না!
“যাই হোক মুহতাসনিমের এই কাজ আমার পছন্দ হয়নি মিনা আপা।
~~~
সবকটা টিউশনিই শেষ করেছে মুহতাসনিম।শরীর বেশ দূর্বল লাগছে!দুপুরের তপ্ত রোদ টা নেমে গেছে কখন।রাস্তার সাইড দিয়ে হাটছে মুহতাসনিম।এতদিন পর পড়াতে যাওয়ায় বেশ খানিকটা ঝাড়ি শুনতে হয়েছে।
পাশেই একটা রিকশা ডেকে উঠে পরে মুহতাসনিম।বিকেলের নরম রৌদ্র চোখে,মুখে লাগছে।চোখ বন্ধ করে লম্বা করে দম নেয় মুহতাসনিম।মৃদু বাতাস টা মন্দ লাগছে না।পরক্ষণেই পরলো ভয়ানক জ্যামে!প্রায় ঘন্টাখানেক জ্যাম পেরিয়ে বাসার সামনে এসেছে।
ততক্ষণে আকাশ কালো বর্ন ধারণ করতে শুরু করেছে!বিকেল পেরিয়ে বেলা গড়িয়ে ঠাঁই নিয়েছে সন্ধ্যায়।ক্লান্ত শরীরে ব্যাগ থেকে রিকশা ভাড়া বের করতেই পাশ থেকে ভরাট পুরুষালি কন্ঠস্বর কর্নকুহুরে বেজে উঠলো!
“ভাড়া কত হয়েছে?
তৎক্ষনাৎ মুখ উঁচু করে তাকায় মুহতাসনিম।পাশে জাহিন দাঁড়িয়ে আছে।ওয়ালেট থেকে টাকা বের করায় ব্যস্ত।রিকশাওয়ালা ততক্ষণে ভাড়া বাবদ ৫০ টাকা বলে দিলেন।জাহিনকে দেখে অনেকটা চমকে উঠে মুহতাসনিম!শুকনো গলায় কেবল বলে,
” আমার কাছে টাকা ছিল তো!
কথার পরোয়া করলো না জাহিন।রিকশাওয়ালা টাকা নিয়ে চলে গেলেন।জাহিনের ভাবসাব বলছে সে যেন এতক্ষণ যাবৎ মুহতাসনিমের অপেক্ষায় ছিল।দু’হাত প্যান্টের পকেটে পুরে নেয় জাহিন।পরক্ষণে মুহতাসনিমের চোখের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বলে,
“এত অবাধ্য কেন আপনি?
জাহিনের চোখে চোখ রাখতে পারে না মুহতাসনিম।দৃষ্টি নিচু করে নেয়।কথাগুলো গলায় এসে কেমন জমাট বেধে আছে।পুনরায় বলে জাহিন,
” আপনার শরীর ঠিক নেই মুহু!আপনি টিউশনি পড়ান তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই,কিন্তু নিজের খেয়ালও তো রাখতে হবে!আপনি যাওয়ার আগে মা মণি কে তো অনন্তত বলে যেতে পারতেন।
চুপ করে জাহিনের কথা শুনছে মুহতাসনিম।পরক্ষণে নিচু স্বরে বলে,
“আন্টি ব্যস্ত ছিল।
কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকে জাহিন।পরক্ষণে বলে,
“ঠিক আছে উপরে চলুন।
মুহতাসনিম খানিকটা ইতস্তত ভাবে বলে,
” আমি চেইন্জ করে আসি।
“হুম।
~~~
রুমে মিনা খালাকে দেখতে না পেয়ে খানিকটা অবাকই যায় মুহতাসনিম।এখন তো কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা!পরক্ষণে লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে মুহতাসনিম।সারাদিনের ক্লান্তি যেন নিমিষে শেষ!রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে আসতেই থমকে যায়।
ছাদে কোণে আকাশ পানে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জাহিন।জাহিনের কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল মুহতাসনিম।লোকটা এতক্ষণ নিশ্চয়ই তার অপেক্ষায় ছিল?!খানিক অপরাধবোধ হলো নিজের কাছে।
মৃদু পায়ে এগিয়ে আসে মুহতাসনিম।কারও অস্তিত্ব বুঝতে পেরে পিছু তাকায় জাহিন।ভেজা চুল খুলে দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।মুখে এখনও পানির বিন্দু ছড়িয়ে!টিপটিপ চোখে তাকিয়ে আছে জাহিনের দিকে।দু’হাত পেটের কাছে নিয়ে জড়োসড়ো করে কচলাচ্ছে।পরক্ষণে অপরাধী মুখ নিয়ে বলল,
” আমি বুঝতে পারিনি আপনি আমার জন্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
নিষ্পলক তাঁকিয়ে ভেজা মেঘবতী তে মত্ত জাহিন!মুহুর ভেজা লম্বা চুলগুলো থেকে টপটপ পানি পরছে ছাদের মেঝেতে!ঝাপসা অন্ধকারেও কেমন স্নিগ্ধ লাগছে মুখশ্রী!
ছোট্ট একটা তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ে জাহিন।মুখে মৃদু হাসি টেনে,একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“সমস্যা নেই আমি আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছি, আপনি বরং শাড়ি টা পরে আসুন।
চমকে তাকায় মুহতাসনিম।পরক্ষণে আবার জাহিন বলে,
“আনানের হলুদ আজকে।সবাই কমিউনিটি সেন্টারে আছে।মিনা আন্টিও সেখানে।আমি আপনার জন্যে থেকে গিয়েছি।দয়া করে এখন তৈরি হয়ে আসুন ম্যাডাম!
সকালের কথা মনে পরে মুহতাসনিমের।পরক্ষণে অনেকটা দ্বিধা নিয়েই বলে,
” আমি যাবো না ডাক্তার সাহেব।
চলবে……