#মেঘবতীর_শহরে,পর্ব-৩০,৩১,৩২
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
৩০
,
,
,
আকাশে মেঘেরা ভেসে বেড়াচ্ছে।চারিদিকে মৃদু দমকা হাওয়া।দুজনের মাঝে পিনপতন নিরবতা চলছে।নিস্তব্ধতা কাটিয়ে বলে জাহিন,
“আপনার কি শরীর খারাপ করছে মুহু?আপনি ঠিক আছেন তো?
জাহিনকে খানিকটা বিচলিতই যেন মনে হলো।নিজেকে সামলে বলল মুহতাসনিম,
” হ্যাঁ,আমি ঠিক আছি।
ছোট্ট একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বলে জাহিন,
“তাহলে আপনি আমার ভাইয়ের বিয়েতে কেন যেতে চাচ্ছেন না?
সকালে শায়লা বেগমের বলা কথাটা মাথায় ঘুরপাক খায় মুহতাসনিমের।যেচে অপমানিত হওয়ার ইচ্ছে নিশ্চয়ই কারও নেই।তবে জাহিনকে বিষয়টা কিভাবে ক্লিয়ার করবে?বলতেও যে কেমন অসস্থি কাজ করছে।অগোছালো ভাবে কানের পেছনে চুল গুজতে ব্যস্ত মুহতাসনিম।কোনোরকম জাহিনের উদ্দেশ্য বলল,
” দেরি হয়ে যাচ্ছে ডাক্তার সাহেব।আপনি চলে যান।
তাৎক্ষণিক বলে জাহিন,
“আমি তো আমার বউ কে রেখে একা যাবো না।
কথাটা কানে বাজতেই জাহিনের চোখে চোখ রাখে মুহতাসনিম।কথাটা কেমন অদ্ভুত এক অনুভূতি তৈরি করলো যেনো।সে তো এখন কারো বউ!এ কথাটা ভুলে গেলে চলবে কি করে?এখন জাহিনের সামনে দাঁড়াতেও মৃদু লজ্জা লাগছে কেমন।
হটাৎ জাহিনের ফোন বেজে উঠে।পকেট থেকে ফোন বের করতেই দেখে মা মণি কল করেছে।রিসিভ করে ফোন কানে ধরে জাহিন।
” হ্যাঁ মা মণি বলো?
“বাসায় পৌঁছেছিস বাবা?
” হ্যাঁ।
“কখন আসবি?
মুহতাসনিমের দিকে একবার তাকায় জাহিন।পরক্ষণে কন্ঠে যেন একটু অভিমান নিয়েই বলে,
” মুহু তো তৈরি হচ্ছে না।তাহলে কি ভাবে আসি মা মণি?
ওপাশে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে নবনী।
“তোর বড় মামি মণি মনে হয় মুহতাসনিম কে নিষেধ করেছে আনানের বিয়েতে থাকতে।
মুহুর্তেই চোখ মুখ কুঁচকে আসে জাহিনের।রাগে কপালে ভাজ পরে।কঠিন সুরে বলে জাহিন,
” এর কারণ?
“তোর মামি মণি মনে হয় চাইছে না তোর বিয়ের খবর টা কেউ জানুক এখন।
জাহিনের রাগ তীক্ষ্ণ হয়।
” এখানে লুকোচুরি করার কি আছে মা মণি?যেখানে আমি মেনে নিয়েছি সবটা সেখানে ওরা কেন ধামাচাপা দিতে চাইবে?
“এ নিয়ে ঝামেলা করিস না বাবা।তুই এসে পর।মুহু না হয় রেস্ট নিক।মিনা খালাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
” আমি যাবো না।
বলেই ফোন কেটে দেয় জাহিন।
~~~
বড় আকারে গোল গোল বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে।নিষ্পলক দূরে তাকিয়ে আছে জাহিন।অজানা এক কষ্ট ভর করেছে যেন মনে!সম্ভব হলে এ বাসা থেকে মুহতাসনিম কে আর মা মণি কে নিয়ে চলে যেত জাহিন।পাশ থেকে মুহতাসনিম এর কন্ঠস্বর পাওয়া গেল।
“কি বললেন আন্টিকে?আপনি চলে যান।নয়তো আপনার ভাই রাগ করবে।
শক্ত চোখ মুখ নিয়েই বলল জাহিন,
” যেখানে আপনার সম্মান নেই সেখানে আমিও অসম্মানিত মুহু।
“কিন্তু সবাই আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে ডাক্তার সাহেব।
মুহতাসনিমের কথার কোনো জবাব দিলো না জাহিন।নিরব হয়ে আছে।বৃষ্টির ছাট বাড়ছে।ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে জাহিন।বিচলিত হয়ে আবারও বলছে মুহতাসনিম,
” এটা কিন্তু পাগলামি হচ্ছে।আমার জন্যে আপনি কেন থেকে যাবেন?
নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে বলে জাহিন,
“শাড়িটা পরে আসবেন মুহু?
~~~
মন খারাপ করে এক কোণে বসে আছে নবনী।সবাই খুব ইন্জয় করছে।হঠাৎ দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে আনান।তাৎক্ষনিক প্রশ্ন ছোড়ে,
” ফুপ্পি?জাহিন কোথায়?এখনও আসলো না?
মলিন মুখে বলে নবনী,
“জাহিন আসবে না আনান।
হঠাৎ রেগে যায় আনান।জাহিনের থেকে এমন টা সে আশা করেনি।
” এসব কি বলছো?আসবে না মানে?হসপিটাল থেকে ছুটি পায়নি?
ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে নবনী,
“জাহিন বাসাতেই।মেয়েটা বাসায় একা।তার উপর কি ঝড় হচ্ছে!
” তো ওর বউকে নিয়েই আসুক না।
“সেটার উপায় নেই আনান।তোর শশুর বাড়ির কেউ জাহিনের বিয়ের ব্যাপার টা জানে না।ভাবী হয়তো চাচ্ছে না মুহতাসনিম এর পরিচয় এখন সবার সামনে আসুক।
স্তব্ধ হয়ে আছে আনান।বলবার মতো কোনো ভাষা নেই।মায়ের উর্ধ্বে গিয়ে কিছু বলার সাধ্য নেই তার।এখন এ বিষয়টা সামনে না আসাই ভালো হবে মনে হচ্ছে।নিরব পায়ে হেটে চলে যায় আনান।
~~~
কালো রঙের জর্জেট শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।অগত্যা জাহিনের কথা কেন জানি ফেলতে পারেনি।লোকটার কথায় কেমন একটা টান ছিল!দূর থেকেই জাহিনকে ডেকে উঠে মুহতাসনিম।ভেজা গাঁয়ে এগিয়ে আসে জাহিন।চুল গুলো ভিজে কপালের সাথে লেপ্টে আছে।একমুহূর্তের জন্য মুহতাসনিম কে দেখে থমকে গিয়েছিল জাহিন!
চিলেকোঠার টিমটিমে আলোয় কালোবর্ন শাড়িতে মুহতাসনিমের হলদাভ রঙ টা উজ্জ্বল দ্যুতি ছড়াচ্ছে!চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য!দিকবিদিকশুন্য হয়ে মুহতাসনিমের দিকে তাকিয়ে আছে জাহিন।এমন চাহনি বরাবরই লজ্জায় ফেলল মুহতাসনিম কে।শাড়ি পরার অনুভূতি আজ অন্যরকম ছিল!গলা ঝেড়ে বলে মুহতাসনিম,
” ঠান্ডা লেগে যাবে ডাক্তার সাহেব।
সম্ভিৎ ফিরতেই বলে জাহিন,
“আপনি কি আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবেন মুহু?
সাতপাঁচ না ভেবে ঝুম বৃষ্টিতে নেমে দাঁড়ায় মুহতাসনিম।ফেলফেল করে কেবল তাকিয়ে থাকে জাহিন।দু কদম হেটে ছাদের মাঝে চলে আসে মুহতাসনিম।পিছু পিছু জাহিন চলে আসে।
” ভিষণ সুন্দর লাগছে মেঘবতী!
জাহিনের মুখে মেঘবতী নাম টা শুনতেই চকিতে ফিরে তাকায় মুহতাসনিম!
দৃষ্টি এখনও মুহুতে বন্ধী জাহিনের।পিছু ফিরে আবারও হেটে চলে যায় মুহতাসনিম।একদম ছাদের কর্নারে এসে দাঁড়ায়।জাহিনের চোখের দিকে তাকানোর সাহস করে উঠতে পারছে না যেন!
বৃষ্টির তেজ বাড়ছে।রাস্তার নিয়ন বাতিগুলো দাঁড়িয়ে যেন ভিজছে!জনমানব শূন্য লাগছে শহর টা!কেবল গাড়ি আর গাড়ি!পাশে কারও অস্তিত্ব টের পায় মুহতাসনিম।বুঝতে পারে জাহিন দাঁড়িয়ে আছে।না তাকিয়েই বলে,
“আপনি গেলেন না কেন ডাক্তার সাহেব?
বৃষ্টির তেজে কথা বলা যাচ্ছে না যেন।কথার প্রসঙ্গ পাল্টে বলে জাহিন,
” এই মুহূর্তে এক মগ কফি হলে মন্দ হবে না তাই না মুহু?আমার কাছে ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে!
জাহিনের বোকা বোকা কথা শুনে হাসি পায় মুহতাসনিমের।এই বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে কেউ কফি খায়?এটা সম্ভব কখনও?ফিক করে হেসে দেয় মুহতাসনিম।
মুগ্ধ হয়ে তাকায় জাহিন।আদৌ এত সৌন্দর্য একসাথে কখনও তার চোখ দেখেছে কিনা জানা নেই!হাসি থামিয়ে বলে মুহতাসনিম,
“তা বেশ রুমে চলুন আমি না হয় কফি করে দিচ্ছি।
ভাবনার ঘোর কাটে জাহিনের।মাথা ঝাকিয়ে বলে,
” থাক লাগবে না কফি।
অগত্যা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে মুহতাসনিম।লোকটার মতিগতি কিছুই বুঝতে পারে না!বৃষ্টির কারনে সারা গায়ে শাড়ি লেপ্টে আছে মুহতাসনিমের।
বৃষ্টির সাথে বাতাস বইছে খুব।আড় চোখে বার বার মুহতাসনিম কে দেখছে জাহিন।মনে হচ্ছে বহুবছর এভাবে কাটিয়ে দিতে পারবে অনায়াসে!
~~~
জাফর সাহেব রেগে আছেন ভিষন।নবনীর উদ্দেশ্য বললেন,
“জাহিন তো বাচ্চা ছেলে নয় যে ব্যাপার টা বুঝবে না।তাই বলে ও আসবে না?আমি এটা আশা করিনি নবনী।একে তো ছেলের বিয়ে দিয়েছিস আমাদের কাউকে না জানিয়ে!
নবনী এতক্ষণ এই ভয় টাই পাচ্ছিলো।ভাইয়ের মুখের উপর তর্ক করার সাধ্য তার নেই।ঝামেলা এড়াতেই বলেছিল জাহিনকে আসতে।রেহানা বেগম পাশ থেকে বললেন,
” নানা ভাইয়ের এই কাজে আমি অনেক কষ্ট পাইছি নবনী।বাড়ি গিয়া এর একটা বিহিত করবো।
চুপচাপ সবার কথা শুনে যায় নবনী।বলার মতো কোনো উত্তর তার ছিল না।পাশেই অপরাধীর মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে মিনা বেগম।বাড়িতে কোনো তুলকালাম ঘটে কিনা কে জানে!তবে অজানা ভয় যেন গ্রাস করে নেয়!
আনানের হলুদে সবাই উপস্থিত থাকলেও জাহিন নেই!আনানের মন টা ভার হয়ে আছে খুব।রাফিয়ার সব কাজিনরা জাহিনের খোঁজ করছে।
~~~
বৃষ্টির সাথে ঠান্ডা বাতাসটা সহ্য হচ্ছে না জাহিনের।মাথাটা হঠাৎই ভার হয়ে আসে।কথার মাঝে জাহিনের পানে দৃষ্টি স্থির হয় মুহতাসনিমের।
“ঠান্ডা লাগছে আপনার?
মুহতাসনিমের দিকে তাকায় জাহিন।চুল গুলো ঝাকিয়ে নিয়ে বলে,
” মাথা টা ভার লাগছে মনে হচ্ছে।
বৃষ্টির ছাট কমে এসেছে।বিচলিত হয়ে বলে মুহতাসনিম,
“তো রুমে চলুন চেইন্জ করে নিন।আমি কফি করে দিচ্ছি।
তৎক্ষনাৎ জাহিন বলে,
“আমি চেইন্জ করে আসছি।এখানে এসেই কফি খাবো।
অগত্যা আর নিচে যায়নি মুহতাসনিম।
~~~
ঘড়ির কাটা রাত এগারোটায়!বৃষ্টি শেষে চারিদিকে ঠান্ডা বাতাস বইছে।নিচ থেকে চেইন্জ করে এসে কফি খেয়েই জড়োসড়ো হয়ে চিলেকোঠার রুমেই শুয়ে পরেছে জাহিন।শরীর হয়তো ভালো লাগছে না।
জানালার ধারে হাটু মুড়ে বসে আছে মুহতাসনিম।ঘুমন্ত জাহিনের দিকে তাকিয়ে আছে।কতটা নিষ্পাপ লাগছে মুখশ্রী!খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জাহিনকে অনুধাবন করছে যেন।জানালা গলে বাতাস আসতেই আরেকটু জড়োসড়ো হয়ে যায় জাহিন।শীত শীত অনুভূতি হচ্ছে ভেবে পাশ থেকে চাদর নিয়ে জাহিনের দিকে এগিয়ে যায় মুহতাসনিম।গায়ের উপর চাদর টা টেনে দেয়।আচমকা হাতের সাথে স্পর্শ লাগতেই বুঝতে পারে গাঁ গরম!তৎক্ষনাৎ কপালে হাত ছোঁয়ায় মুহতাসনিম।বেশ গরম মনে হচ্ছে।সন্ধ্যা থেকে টানা তিনঘণ্টা ভিজেছে লোকটা!ঘুমিয়েছে সেই কখন!
চিন্তার ভাজ পরেছে মুহতাসনিমের কপালে।বাসায় কেউ নেই এখন!তার মধ্যে যদি জ্বর তীব্র হয়ে যায়?দৌড়ে গিয়ে জানালার পর্দা টেনে দেয় মুহতাসনিম।জাহিনের গায়ে কাঁথা টেনে দেয়।ঠিক যা আন্দাজ করেছে তাই হলো জ্বর বাড়ছে ধীরে ধীরে!
কপালে,গালে বারংবার হাত বুলিয়ে যাচ্ছে মুহতাসনিম!চিন্তায় গলা শুকিয়ে আসছে কেমন।আচমকা মুহতাসনিমের হাত টা জড়িয়ে বুকের কাছে নিয়ে রাখে জাহিন।বিচলিত হয়ে জিগ্যেস করে মুহতাসনিম,
” ডাক্তার সাহেব আপনি ঠিক আছেন?
আধো চোখ মেলে তাকায় জাহিন।চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারণ করে আছে যেন!আৎতে উঠে মুহতাসনিম!
“আপনার তো অনেক জ্বর!আন্টিকে বরং কল করি একটা।
জড়ানো কন্ঠে বলে জাহিন,
” শাড়িটা কি চেইন্জ করে নিয়েছেন মুহু?
পরনে সেলোয়ার-কামিজের দিকে তাকিয়ে বলে মুহতাসনিম।
“সেই কখন।
” শাড়িতেই তো ভিষণ সুন্দর লাগছিল!
জাহিনের এসব কথা এখন মোটেও ভালো লাগছে না মুহতাসনিমের।একে তো জ্বরে গাঁ পুরে যাচ্ছে!
“হাত টা ছাড়ুন তো আমি মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিই।
দুদিকে কেবল মাথা নাড়ে জাহিন।
” আপনি এত বেখেয়ালি কেন মুহু?শাড়িটাও ঠিকঠাক ভাবে পরতে জানেন না দেখছি!অনেক অনেক সৌন্দর্য আজ চোখে পরেছে আমার।সে সৌন্দর্য এ চোখ আগে দেখেনি মুহু!
জ্বরের ঘোরেই কথাগুলো বলে যাচ্ছে জাহিন।ভ্রু বাকিয়ে বলে মুহতাসনিম,
“ক্ কি সৌন্দর্য দেখলেন?
” আপনার লুকিয়ে থাকা সব সৌন্দর্য!জানেন মুহু তখন একটুখানি ছোঁয়ার তীব্র ইচ্ছে হচ্ছিল কেমন!
চলবে…..
#মেঘবতীর_শহরে
পর্ব-৩১
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
,
,
বাইরে এখনও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে।তার সাথে মৃদুমন্দ বাতাস বইছে।জাহিনের কথাগুলো মুহূর্তেই কেমন শিউরে দিলো মুহতাসনিমকে!ঠান্ডা পরিবেশে গা কাটা দেওয়ার মতো অনুভূতি ছিল!
অবচেতনের মতো বিছানায় পরে আছে জাহিন!আচমকা নিজের ফোনটা বেজে উঠে।স্ক্রিনে আননোন নাম্বার ভেসে আছে।না চাইতেও রিসিভ করে মুহতাসনিম।ওপাশ থেকে যেন তাড়া নিয়েই বলছে মুহতানিম,
“মুহুপু তুই আমার ফোনে কল দিস না।
কন্ঠে ভয়ার্ত ছাপ স্পষ্ট!গলা কাঁপছিলো কিছুটা।ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে আসে মুহতাসনিমের।পরিস্থিতি কেমন ভয়ানক লাগছে।একনাগাড়ে বলতে থাকে মুহতানিম।
” মা জেনে গেছে তোর সাথে আমার যোগাযোগ আছে।ফোনটা নিয়ে নিয়েছে।
ভয়ে অন্তত আত্মা কেঁপে উঠে মুহতাসনিমের।শুকনো গলায় কেবল বলে,
“আমি কোথায় আছি এটা কোনোভাবেই বলিস না মুনা।
ওপাশ থেকে যেন হাঁপিয়ে উঠেছে মুহতানিম।
” কিচ্ছু বলিনি।এমনকি তোদের বিয়ের ব্যাপার টাও গোপন করে গেছি।
হাপ ছেড়ে দাঁড়ায় মুহতাসনিম।মুহূর্তেই কপাল বেয়ে ঘাম ছুটে গিয়েছিল যেন!
হঠাৎ লাইন কেটে যায়।বারংবার ডাকার পরেও সারা মেলেনি ওপাশ থেকে।পুনরায় আর কল করেনি মুহতাসনিম।সোজা ফোন সুইচ অফ করে রেখে দিয়েছে।
মৃদু গোঙ্গানির শব্দ হচ্ছে।তাৎক্ষণিক জাহিনের পানে তাকায় মুহতাসনিম।কপালে হাত রাখতেই বুঝতে পারে জ্বর বেড়ে তীব্র হয়েছে!দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে পানি নিয়ে আসে মুহতাসনিম মাথায় জলপট্টি দিয়ে দেয়।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিনা বেগম।মুখখানা তার থমথমে।মুহতাসনিম নিজ কাজে ব্যস্ত।
“কি হইছে মুহু?
মিনা খালার শব্দ পেতেই দরজায় তাকায় মুহতাসনিম।অনেকটা বিচলিত লাগছে তাকে!কোনোরকম কাঁদো কাঁদো মুখে জবাব দেয়,
” দেখো না খালা উনার জ্বর বেধে কি অবস্থা হয়েছে।সন্ধ্যা বেলাও তো দিব্যি ভালো ছিল!
তাৎক্ষণিক এগিয়ে আসে মিনা বেগম।
“নবনী আপারে জানাইতে হইবো না?
” তুমি ডেকে নিয়ে আসো উনাকে।
~~~
নিস্তব্ধ রাত।ঘুমে তলিয়ে আছে সবাই।ফোন হাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে পারুল বেগম।সাতপাঁচ ভেবে কল করে বসে মুহতাসনিম কে।পরক্ষণে ওপাশ থেকে বলছে সংযোগ প্রদান সম্ভব নয়!এটা যে মুহতানিমের কারসাজি সেটা বেশ বুঝতে পেরেছেন তিনি।যে করেই হোক মুহুর খোঁজ তিনি নিয়েই ছাড়বেন।এত সহজে ছেড়ে দিলে হবে নাকি?কত হিসেব যে বাকি এখনও!
~~~
বিচলিত নবনী বারংবার ছেলের কপাল ছুঁয়ে যাচ্ছেন।
“ছেলেটা একদম বৃষ্টির পানি সহ্য করতে পারে না।জ্বর বেঁধে যায়।
স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।জাহিন তো অনেক্ক্ষণ যাবৎ ভিজেছে!উনি নিশ্চয়ই জানতো বৃষ্টির পানিতে তার শরীর খারাপ করে।তাহলে কেন ভিজতে গেল লোকটা?মনে মনে ভিষণ রাগ হলো জাহিনের উপর।
দরজার কাছে এসে দাঁড়ায় রিতা বেগম।অনেকটা তড়িঘড়ি নিয়েই বলে,
” নবনী আপা নিচে মা ডাকছে আপনাকে।
হঠাৎ এই অবস্থা দেখে থমকে যায় রিতা বেগম।
“জাহিনের কি হলো আপা?
” জ্বরে গাঁ পুরে যাচ্ছে।
“হঠাৎ জ্বর কেন বাঁধলো?বৃষ্টিতে ভিজেছিলো?
ছেলেটার তো ছোট থেকেই বৃষ্টি সহ্য হয় না,বেহাল অবস্থা হয়ে যেত।আজকে যদি আনানের বিয়েতে যেতো তাহলে হয়তো জ্বর টা বাঁধতো না।
কপালে জলপট্টি দিয়ে যাচ্ছে নবনী।চোখে,মুখে চিন্তার ছাপ!রিতা ফের বলে,
“এই মেয়ে নিশ্চয়ই দেখেছিলো জাহিন বৃষ্টিতে ভিজেছে।নিষেধ করলেই পারতো।
মিনা বেগম পাশ থেকে বললেন,
” মুহু তো আর জানে না বৃষ্টির পানি জাহিন বাবার সহ্য হয় না।
মুখটা খানিক বাঁকিয়ে বলল রিতা,
“না জানার তো কোনো কথা না।আগে থেকেই ওদের ভালো মন্দ সবকিছু জানাশোনা তার মধ্যে এটা অজানা থাকে কি করে?
নিরবতা ভেঙ্গে বলল নবনী,
” আমি আসছি নিচে যাও রিতা।
“হুম।
নিস্তব্ধ মুহতাসনিমের চোখ গড়িয়ে জল পরছে।ঘুমের বেঘরে কয়েকবার মুহতাসনিম কে ডাকে জাহিন।নবনী উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
” আমি মেডিসিন পাঠিয়ে দিচ্ছি মিনা আপাকে দিয়ে।জাহিনের খেয়াল রেখো মুহতাসনিম।
কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল মুহতাসনিম।কোথাও একটা জড়তা থেকে যায়!নবনীর যাওয়ার পানে কেবল নিশ্চুপ তাকিয়ে থাকে মুহতাসনিম।
মিনিট দশ পরে ঔষধ দিয়ে যায় মিনা বেগম।আর জানিয়ে গেলেন আজকে তিনি নিচেই থাকবেন।বিয়ে বাড়িতে কত কাজ পরে আছে।পাল্টা আর কিছু বলেনি মুহতাসনিম।
~~~
ঘড়ি রাত তিনটের কাটা ছুঁয়েছে সেই কখন।বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও নেই এখন।বদ্ধ রুমে মেঝেতে হাটুমুড়ে বসে আছে মুহতাসনিম।লোকটার সাথে এক ঘরে থাকাটা নিতান্তই অসস্থিতে ফেলেছে তাকে।ঔষধ খাইয়ে দিয়েছে সেই কখন।কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে জাহিন।জ্বর টা কি কমলো?বেশ জানতে ইচ্ছে করছে মুহতাসনিমের।
উঠে কয়েক পা এগিয়ে আসে জাহিনের সম্মুখে।দ্বিধা নিয়েও কপাল ছুঁয়ে ফেলে!পাছে যদি লোকটার ঘুম ভেঙ্গে যায়?আচমকা মুহতাসনিমের এক হাত জড়িয়ে নেয় জাহিন!নিশ্চুপ তাকিয়ে আছে মুহতাসনিম।এখনও ঘুমের ঘোরে লোকটা।জ্বর কিছুটা আছে এখনও।আবদ্ধ হাত নিয়েই বিছানার এক কোণে বসে পরে।চোখ দুটো ভিষণ জ্বালা করছে।রাত থেকে এক ফোটাও ঘুম হয়নি মুহতাসনিমের!মাথাটাও ভার ভার লাগছে!
~~~
ভোরে ঘুম কেটে যায় জাহিনের।গলদেশে মনে হচ্ছে উত্তপ্ত শ্বাসপ্রশ্বাস ছুঁয়ে যাচ্ছে।চোখের পাতা ভার লাগছে জাহিনের।মাথাটা ঝিম মেরে আছে।কোনোরকম চোখ মেলে তাকাতেই দেখে মুহু তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে!বেঘোরে ঘুমোচ্ছে মেয়েটা!সারামুখে চুল ছড়িয়ে আছে।একমুহূর্তের জন্যে স্তব্ধ হয়ে যায় জাহিন!আশপাশ খেয়াল হতেই দেখে সে চিলেকোঠার রুমেই শুয়ে আছে!কাল রাতের কথা মনে পরলো নিশ্চয়ই ভয়ানক জ্বর বাঁধিয়ে নিয়েছিল!
পরক্ষণে মুহুর দিকে দৃষ্টি থমকায়।মেয়েটা কি সারারাত জেগে তার সেবা করেছে?ভাবতেই একরাশ ভালোলাগা ছুঁয়ে দিচ্ছে!পরক্ষণে মনে হচ্ছে এটা স্বপ্ন নয়তো!মুহুর গাঁ থেকে একটা মেয়েলি সুভাস আসছে।ঘ্রান টা তীব্র করতে মাথা খানিকটা নিচু করে নেয় জাহিন।মুহূর্তেই মুহুর গলদেশে নাক, মুখ ডুবিয়ে নেয়!মৃদু নড়েচড়ে উঠে মুহতাসনিম।শেষ রাতে ঘুমিয়েছে এখনও বেশ তীব্র হয়ে আছে ঘুম ভাব।কাঁত হয়ে শুয়ে আবারও জাহিনকে জড়িয়ে রাখে মুহতাসনিম।ঘুমন্ত মুহুর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে জাহিন।
”””””নিদ্রার অতলে যখন তুমি
নিশ্চুপ ঘুম হই আমি!”””””’
বদ্ধ ঘরে আবছা আলোয় মুহুর দিকে দৃষ্টি জাহিনের।সম্পূর্ণ যেন ঘোর মনে হচ্ছে!কি বুঝে টুক করে মুহতাসনিমের গলদেশে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো!
মুহূর্তে ঘুম কেটে যায় মুহতাসনিমের।চোখ দুটো লালচে হয়ে আছে!নিজেকে জাহিনের এতটা কাছে দেখবে ভাবতে পারেনি!হুরমুড়িয়ে উঠে বসে গায়ে উড়না টেনে নেয়।জড়তা যেন কাটতেই চাইছে না।সামনে তাকানোর দূ সাহস নেই!সবটাই নিরব পর্যবেক্ষণ চালালো জাহিন।
“আপনার কাঁচা ঘুমটা তো ভেঙ্গে গেলো মুহু!
জাহিন ভাবছে মুহু কি তবে কিছু আন্দাজ করতে পারলো?মুহুর এতটা কাছে এসে যেন খেই হারিয়ে ফেলেছিলো জাহিন!এতটা অবাধ্য হওয়া মোটেও উচিৎ হয়নি।পাছে পেয়েটা এখন দুশ্চরিত্র ভেবে না বসে!মন টা আজকাল বড্ড বেশিই অবাধ্য হয়ে উঠে!
শুকনো গলায় কাটা কাটা শব্দে বলে মুহতাসনিম,
” আ,,আসলে শেষ রাতে আপনার জ্বর চেইক করতে এসেছিলাম।কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম।
মুহতাসনিমের চোখে,মুখে স্পষ্ট অপরাধীর ছাপ!ভেতরে ভেতরে খুব হাসি পাচ্ছে জাহিনের।যথাসম্ভব হাসি আটকে বলল,
“আমার জ্বর এসেছিল নাকি?
আড় চোখে তাকায় মুহতাসনিম।চোখে মুখে রাগ,
“আপনি এত বেখেয়ালি কেন?বৃষ্টির পানি আপনার সহ্য হয় না সেটা আগে বলবেন না?
” মাঝে মাঝে অজান্তে অনেক কিছুই বেখেয়ালি হয়ে যায় মুহু!
একদম স্তব্ধ হয়ে যায় মুহতাসনিম।কাল রাতে জাহিনের জ্বরের ঘোরে বলা কথাটুকু মনে পরে!কি ভয়ংকর ছিল কথাগুলো!
“যাক আপনার সেবা পেয়ে সুস্থ হলাম তবে।
” আন্টি অনেক চিন্তা করছেন।আপনি বরং তার সাথে দেখা করে আসুন।
মাথা কাত করে সায় জানায় জাহিন।
~~~
আজকে আনানের বিয়ে।সবাই যথারিতি তৈরি হচ্ছে কমিউনিটি সেন্টারে যাওয়ার জন্যে।আনান মিনিট দশ ধরে জাহিনকে বোঝাচ্ছে যাওয়ার জন্যে।জাহিন না গেলে সে এই বিয়ে করবে না।জাহিনের একটাই কথা গেলে মুহুকে নিয়ে তবেই যাবে।এটা কোনো লুকোচুরি খেলা নয়।মুহতাসনিম তার বিবাহিতা স্ত্রী!
শায়লা বেগম নারাজ তিনি মুহুকে কোনোভাবে নিবেন না।রিতা বেগম সবার কথার মাঝে বললেন,
“দেখো জাহিন আজকে একটা শুভ দিন।আমার মনে হয় কি ওই মেয়ে টা না গেলেই বরং ভালো হবে।
ছোট্ট করে কেবল বলে জাহিন,
” মুহু আমার অর্ধাঙ্গিনী!
রেহানা বেগম বললেন,
“নানা ভাই সেখানে তোমার বউ যাইবো ঠিক আছে, কিন্তু তোমার বউ পরিচয়ে না।আমার সাথে যাইবো।অহন আমার নাতি টারে আর কষ্ট দিও না যাও তৈরি হও গিয়া।
চলবে….
#মেঘবতীর_শহরে
পর্ব-৩২
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
,
,
রেহানা বেগমের কথার উপর পাল্টা কথা বলতে পারলো না জাহিন।দাদু মণির কথার উর্ধ্বে যাওয়ার সাধ্য তার নেই।এমনিতেও কালকে আনানের হলুদে ছিল না।এতে আনানের মন বেশ ভার হয়ে আছে।
“ঠিক আছে আমি যাবো।
আনানের মুখে মুহূর্তেই হাসি ফুটে উঠেছে।রেহানা বেগম জাহিনের উদ্দেশ্যে বললেন,
” যাও নাত বউকে তৈরি হইতে বলো।
বাধ্য ছেলের মতো চিলেকোঠার দিকে রওনা হয় জাহিন।ভেতরে এতটুকু ভেবে আনন্দ হচ্ছে যেভাবেই হোক মুহু তো যাচ্ছে!
~~~
আয়নায় দাঁড়িয়ে আনমনা মুহু ভাবনায় মগ্ন।এ বাড়ির কেউ কি তাকে মন থেকে গ্রহণ করেনি?যার জন্য এত অপমান এত লাঞ্চনা!তবে কি বিয়ে টা করা উচিত হয়নি মুহুর?
“এত কি ভাবা হচ্ছে?
হঠাৎ জাহিনের শব্দ পেতেই চমকে উঠে মুহতাসনিম!লোকটা কখন আসলো?স্বাভাবিক হয়ে বলে মুহতাসনিম,
” কিছু না।
“নিন এবার তৈরি হয়ে আসুন।
বেশ খানিকটা অবাক হয় মুহতাসনিম।পরক্ষণে বলে,
” কেন?
“কেন আবার?আনানের বিয়েতে যাবেন।
মুখটা মলিন হয়ে আসে মুহতাসনিমের।শুকনো গলায় মৃদু শব্দে বলে,
” আমি যাবো না।
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে জাহিন,
“আমি জানি আপনি কেন যেতে চাচ্ছেন না মুহু।আপনি দাদুমনির সাথে যাবেন।সেখানে আপনার পরিচয় কেউ জানবে না।কোনো সমস্যা হবে না আপনি বরং তৈরি হয়ে নিন।
স্তব্ধ হয়ে জাহিনের কথা শুনছে মুহতাসনিম।জাহিনের কথা বোধগম্য হতে অনেকটা কষ্টই হচ্ছে যেন!কি বোঝাতে চাচ্ছেন উনি?ঠোঁটের কোণে খানিকটা হাসির রেখা টানে মুহতাসনিম।খুব বিনয়তার সাথেই বলে,
” এত কষ্ট করে লুকোচুরি করে নেওয়ার তো কোনো প্রয়োজন নেই ডাক্তার সাহেব।দেখা গেল আমার পরিচয় লুকাতে আপনার দাদুকে আরও অনেক মিথ্যা বলতে হলো!
ঠান্ডা গলায় বলল জাহিন,
“আমি আপনাকে ছাড়া যাবো না মুহু!
” আমাকে নেওয়ার হলে আমার যোগ্য পরিচয় দিয়েই নিবেন।এত লুকোচুরি কেন?
মুহতাসনিমের কথা গুলো ভেতরে তীরের মতো আঘাত করছে জাহিনের।মুহু তো স্পষ্ট জাহিনকে দোষারোপ করছে এখানে।মুহু কি বোঝে না জাহিন কি চায়?সে এই পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে আছে!
“আমাকে আপনি কতটুকু বিশ্বাস করেন মুহু?
জাহিনের এমন প্রশ্নে থমকে যায় মুহতাসনিম।হঠাৎ এ কথা বলছে কেন?মুহতাসনিম এর উত্তর এর অপেক্ষা না করে বলল জাহিন,
” মৃত্যুর আগ অব্ধি আমি আপনার পাশে থাকবো মুহু।সারা দুনিয়া আমাদের পরিচয় কি জানলো তাতে আমার কিছু আসে যায় না।শুধু আপনি কি পরিচয়ে আমাকে গ্রহন করবেন সেটাই মূখ্য বিষয় আমার কাছে।
চুপ করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।একটু আগের ভাবনা গুলো তার মাথা পুরোপুরি বিগড়ে দিয়েছিল!ভাবনার রেশ কাটলো যেন এখন।ততক্ষণে জাহিন বেরিয়ে গেছে।
~~~
বেলা গড়াচ্ছে।বাড়িতে এখনও হই হুল্লোড় লেগে আছে।জানালার ধারে নিস্তব্ধ মুহতাসনিম দাঁড়িয়ে।জাহিনকে ওভাবে বলা উচিত হয়নি।কালকে লোকটা তার জন্যই তো গেল না!আজকে হয়তো মুহুকে নেওয়ার কোনো উপায় পেয়েছে তাই অমন ছুটে এসেছিল!বড্ড অপরাধ বোধ হচ্ছে মুহতাসনিম এর।
“কিরে তুই অহনো রেডি হোস নাই?
মিনা বেগমের কথায় সম্বিৎ ফিরে পায় মুহতাসনিম।কথা না বাড়িয়ে তৈরি হতে চলে যায়।
~~~
গাড়িতে সবাই আনন্দে ডুবে আছে।আনানের ঠিক পাশে বসে আছে জাহিন।মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলানো।অবশ্য ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড মন খারাপ।কেন তাকে একটুখানি বুঝলো না মুহু?গাড়ির জানালা ভেদ করে বাহিরে তাকিয়ে আছে জাহিন।
~~~
তৈরি হয়ে মিনা বেগমের সাথে নিচে আসে মুহতাসনিম।জড়তা যেন কাটতেই চাচ্ছে না!জাহিনের জন্য তৈরি হয়েছে মুহতাসনিম নয়তো কখনই যেত না।ইতিউতি বারংবার তাকাচ্ছে।হয়তো চোখ দুটো চেনা কারো মুখের দর্শন চাইছে!নবনী হাসি মুখে এগিয়ে এসে বলে,
” তৈরি হয়ে গেছো দেখছি!বাহ!বেশ মিষ্টি লাগছে কিন্তু!
রেহানা বেগম তাড়া দিয়ে বললেন,
“ওদের গাড়ি সেই কহন চলি গেছে।তারাতাড়ি আসো তোমরা।
রিতা বেগম আর শায়লা বেগম মুখ ভার করে গাড়িতে উঠে বসলেন।
মুহতাসনিম বুঝতে পেরেছে তার মানে জাহিন চলে গেছে!অজানা এক কারণে মনটা ভার হয়ে গেল!
~~~
রাফসার সব কাজিনরা জাহিনকে ঘিরে বসে আছে।অবশ্য সবার কাছেই জাহিন অবিবাহিত একজন পুরুষ।সবার সাথে আড্ডা জমাতে চাইছে জাহিন।মন খারাপ নিয়ে কোনো কাজেই সস্থি মেলে না!অবশ্য আনানের কাজিনরাও সবাই উপস্থিত আছে।
মুহতাসনিম রা মেইন গেইট দিয়ে প্রবেশ করতেই প্রথমেই মুহুর দৃষ্টি থমকালো নীল রঙা স্যুট কোট পরা জাহিনের দিকে!অগনিত মেয়ের মাঝে জাহিন একা পুরুষ!অবশ্য আরও দু চারজন ছেলে আছে তারা আনানের কাছে।মুহূর্তের মধ্যে ভিষণ রকম মেজাজ চড়ে গেল মুহতাসনিমের!লোকটাকে এখন অসভ্য,চরিত্রহীন ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না!
পাশেই রেহানা বেগম খপ করে মুহতাসনিমের হাত জড়িয়ে ধরে বলল,
” শুনো মাইয়া আমার সাথে সাথেই থাকবা।
মাথা কাত করে সায় জানায় মুহতাসনিম।এদিকে আড় চোখে আবার জাহিনকে দেখে নেয়।
আচমকা দূরে দৃষ্টি থমকে যায় জাহিনের।বেগুনি রঙের জর্জেট শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না জাহিন!সত্যি মুহতাসনিম এসেছে?তড়িঘড়ি করে মেয়েদের মাঝ থেকে উঠে আনানের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।অবশ্য জাহিন বসার পর মেয়ে গুলি নিজে থেকেই এসেছিল!এই দৃশ্য মুহুর চোখে পরলে কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে।ইচ্ছে হলেও মুহুর ধারের কাছে যেতে পারছে না জাহিন।আড় চোখে দেখেই দৃষ্টি কে শান্ত করছে!
~~~
রেহানা বেগম সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন মুহু উনার দূর্সম্পকের ভাগনীর মেয়ে।
দূর থেকে আনানের এক বন্ধু মুহতাসনিম কে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ওই যে বেগুনি রঙের শাড়ি পরা মেয়ে টা কে রে আনান?
চকিতে ফিরে তাকায় জাহিন!আনান একবার আড় চোখে জাহিনকে দেখে বলে,
” ক,,,কাজিন হয় আমার।
“তোর এত সুন্দরী কাজিন আছে আগে জানতাম না তো!
হাসার চেষ্টা করে বলে আনান,
” বাদ দে তো।
“উহুম!আফিফ এর চোখে যখন এই সুন্দরী ধরা পরেছে তখন আর ছাড়া নেই!
শুকনো ঢোক গিলে জাহিনের দিকে তাকায় আনান।পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে এখন কে জানে।এদিকে আফিফ সোজা মুহতাসনিম এর দিকে হাঁটা দেয়।
চলবে……