#মেঘবতীর_শহরে,পর্ব-৩৩,৩৪,৩৫
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
৩৩
,
সবটাই নীরব দাঁড়িয়ে দেখছে জাহিন।মাথায় রীতিমতো রক্ত চেপে গেছে যেন!এক্ষুনি সবার সামনে গিয়ে বলে দিবে মুহু ওর বিয়ে করা বউ।
উঠে দাঁড়াতেই খপ করে হাত চেপে ধরে আনান।চোখে মুখে অনুনয় বিনয় এর ছাপ!
“ভাই প্লিজ গ্যান্জাম করিস না এখন।
অবাক হয়ে জবাব দেয় জাহিন,
” কি বলতে চাচ্ছিস তুই?তোর সামনে যদি কেউ রাফসাকে নিয়ে এই ধরনের কথা বলতো তুই মানতে পারতিস?
দাঁত কেলিয়ে বলে আনান,
“অবশ্যই মানতাম।গর্ব হতো আমার।কারণ আমার বউ সুন্দরী বলেই না লোকের নজরে পরেছে।
রাগ দ্বিগুণ হয় জাহিনের।কিসব কথার ছিঁড়ি আনানের।বন্ধু কে আটকাবে তা নয় উল্টো কি বলছে!
রিতা বেগম ফোনে ভিডিও কলে কথা বলতে বলতে জাহিনের সামনে এসে দাঁড়ায়।খানিকটা আবেগি হয়ে জাহিনের হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বলে,
” রিশান কল করেছে।ভাইয়ের বিয়েতে থাকতে পারেনি বলে খুব মন খারাপ।
আনান ততক্ষণে জাহিনকে টেনে পাশে বসিয়ে দেয়।কথায় মত্ত হয়ে যায়।উঁকিঝুঁকি মেরে মুহতাসনিম কে দেখায় ব্যস্ত জাহিন।নাহ এখন আর পূর্বের জায়গায় নেই!ভেতরে ভেতরে রীতিমতো ঘাম ছুটে যাচ্ছে জাহিনের।আফিফ কেও তো কোথাও দেখা যাচ্ছে না!
রিশান বারংবার ডেকে যাচ্ছে জাহিনকে।
“কি ব্রো?এদিক ওদিক কি মেয়ে দেখছো?ভাইয়ার দিকে তাকাও একবার!একটু তো দয়া করো!
স্ক্রিনে তাকিয়ে বলল জাহিন,
“তোর ভাবীকে ছাড়া আর কারো দিকে দৃষ্টি ফেলবার ইচ্ছা নাই।
রিশান হা হয়ে বড় বড় চোখ করে মুখের সামনে হাত রেখে বলল,
” এ আমার জাহিন ভাই?কি শুনছি আমি?এত রোমান্টিক কি করে হলো?
পাশ থেকে মুচকি মুচকি হাসছে আনান।পরক্ষণে বলে,
“জাহিন তো একেবারেই শেষ রে!তুই সামনে থাকলে আরও কতকিছু দেখতে পারতিস!
~~~
ধৈর্য্যে আর কুলোয় নি জাহিনের।উঠে হনহন করে চলে গেল মুহতাসনিম এর খোঁজে।এক প্রকার হন্য হয়েই যেন খুঁজছে জাহিন।নাহ কোথাও তো পাওনা যাচ্ছে না!কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে।
নবনী উদভ্রান্ত ছেলের কাছে ছুটে আসলেন।কিছু একটা হয়তো আন্দাজ করতে পেরেছেন!
“কাউকে খুঁজছিস বাবা?
আশেপাশে দৃষ্টি রেখেই বলল জাহিন,
” মুহু কোথায় মা মণি?
ছেলের সোজা এমন প্রশ্নে খানিকটা চমকে যায় নবনী।কথা মতো তো মুহতাসনিম এর থেকে দূরে দূরে থাকার কথা তার!
“ওদিকটায় আছে মুহতাসনিম।তবে তুই কেন খোঁজ করছিস?
পাল্টা আর কথা বাঁড়ায় না জাহিন ছুটে চলে যায় সেদিকে।
~~~
বিশাল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।পেটের কাছটায় শাড়ি খানিক সরে গিয়েছিল।দ্রুত এদিকটায় আসে ঠিক করার জন্যে।
মুখে সেফটিপিন রেখে আঁচল টা নামিয়ে হাতে নিয়ে ভাঁজ নিয়ে ব্যস্ত মুহতাসনিম।দরজার কাছে আসতেই থমকে দাঁড়ায় জাহিন!দৃষ্টি থমকে যায় মুহতাসনিম এর উন্মুক্ত উদরে!আঁচল টা দিব্যি ভাঁজ করে গায়ে টেনে সেফটিপিন আটকে নেয় মুহতাসনিম।মুহূর্তে সামনে জাহিনকে দেখতে পায়!
নিশ্চুপ হয়ে কেবল তাকিয়ে থাকে জাহিন।বলবার বুঝি কোনো ভাষা নেই!
জাহিন কখন এলো এখানে?কিভাবে আসলো?ভাবনার মাঝেই বলে মুহতাসনিম,
“আ,,আপনি?কখন এলেন?
মুহতাসনিম এর ডাকে ঘোর কাটে জাহিনের।স্বাভাবিক হয়ে বলে,
” আপনার খোঁজ করতে এসেছিলাম।
“তাই বলে সোজা এখানে চলে আসবেন?
দু কদম হেটে সামনে চলে আসে জাহিন।মুহতাসনিম এর চোখে চোখ রেখে বলে,
” এখানে তো আপনার সাথে কথা বলা নিষেধ।কেউ আপনার সাথে কথা বলতে আসলে দয়া করে দূরত্ব বজায় রাখবেন মুহু।
জাহিনের উল্টাপাল্টা কথা কিছুই বুঝতে পারছে না মুহতাসনিম।আবারও বলে জাহিন,
“সারাক্ষণ দাদু মণির সাথে থাকবেন।
চুপচাপ কিছু একটা ভাবে মুহতাসনিম। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।পরক্ষণে বলে,
” হ্যাঁ দাদুর সাথে থাকলেও তো কতজন কথা বলতে আসে।মানুষকে তো আর ফিরিয়ে দেওয়া যায় না।
ভ্রু কুঞ্চিত করে বলে জাহিন,
“মানে?
” আনান ভাইয়ার এক বন্ধু এসেছিল কথা বলতে।
মুহূর্তেই মুখটা রাগী রাগী হয়ে গেল জাহিনের।
“তা আপনি কি বললেন?
” কি আর কথা বললাম।
“খুব কি প্রয়োজন ছিল মুহু?
” নাহ তবে যে কথা বলতে এসেছিল তার প্রয়োজন ছিল মনে হয়।
আরো একটুও কাছাকাছি এসে দাঁড়ায় জাহিন।চোখ দুটো মনে হচ্ছে চকচক করছে!নিশ্চুপ মুহতাসনিম কেবল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে জাহিনের অক্ষি জোড়ায়!মুহতাসনিম বুঝতে পারছে হার্টবিট দ্রুত হচ্ছে তার!কি চায় লোকটা!
মৃদু শব্দে বলল জাহিন,
“আপনি অন্য কারো সাথে কথা বললে আমার কষ্ট হয় মুহু।আমি সহ্য করতে পারি না।
কিভাবে কি গুছিয়ে বলতে হয় জানা নেই জাহিনের।মনের ভাব টুকু সরাসরি বলে দিয়েছে!
মুহতাসনিম কেবল তাকিয়েই থাকে।
ফিসফিস করে পূনরায় বলে জাহিন,
~যখন নিশ্চুপ আঁখিদ্বয় তোমার
চঞ্চল হয় অধর যুগল আমার~
জাহিনের বলা কাব্যিক কথায় নিশ্চুপ হয়ে কেবল তাকিয়েই আছে মুহতাসনিম।মুহূর্তের জন্যে দিকবিদিকশুন্য যেন দুজনেই!
রেহানা বেগম পান চিবুতে চিবুতে এগিয়ে আসছেন।মুহতাসনিম এর নাম ধরে হাক পারেন।মুহূর্তেই ছিটকে সরে দাঁড়ায় জাহিন।দ্রুত পায়ে দরজার কাছে এগিয়ে আসে মুহতাসনিম।
“ডাকছিলেন দাদু?
” হ কহন থাইকাই খুঁজতাছি তোরে।নবনী বলল তুই এহানেই।
“হ্যাঁ চলুন।
রেহানা বেগম কে হাত ধরে একপ্রকার টেনে নিয়ে গেল মুহতাসনিম।পাছে আর জাহিনের দেখা পায়নি রেহানা বেগম।হাফ ছেড়ে যেন বেঁচেছে জাহিন।দাদু মণি দেখে নিলে কেলেঙ্কারি ঘটে যেত!
~~~
সব আয়োজন শেষে আনান আর রাফসার বিয়ে সম্পন্ন হলো।পুরো সময় জুড়ে মুহতাসনিম কে এক প্রকার চোখে চোখে রেখেছে জাহিন।আফিফ অবশ্য কয়েকবার মুহতাসনিমের সাথে ভাব জমাতে চেয়েছিল!মুহতাসনিম ততবারই এড়িয়ে গেছে।ব্যাপার টা বেশ ভালো লেগেছে জাহিনের।
~~~
আনানের সব কাজিনরা বাসর সাজাতে ব্যস্ত।সবাই হই হুল্লোড়ে মেতে আছে।বাসায় ফেরার পরেই চিলেকোঠায় চলে গেল মুহতাসনিম।অবশ্য রেহানা বেগমই উপরে পাঠিয়ে দিয়েছে।
~~~
সন্ধ্যার ব্যস্ত নগরী ছাদে দাঁড়িয়ে নিষ্পলক দেখছে মুহতাসনিম।আজকাল হুটহাট জাহিনকে দেখলে কথা কেমন জড়িয়ে যায়!লোকটা নেহাৎ মন্দ নয়!তবে নিজের উপর ভরসা নেই বললেই চলে!কিছুটা পাগলাটে স্বভাবের!
” মিসেস মুহু?
জাহিনের ডাকে ভাবনার রেশ কাটে মুহতাসনিমের।মৃদু চমকে উঠে!পিছু ফিরে তাকায়।খানিকক্ষণ আগের পরনের জামা চেইঞ্জ করে নিয়েছে জাহিন।পরিপাটি হয়ে যেন দাঁড়িয়ে আছে।কোথাও বেরুবে মনে হচ্ছে।
কৌতুহলী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে মুহতাসনিম।
কয়েক সেকেন্ড নিশ্চুপ দৃষ্টি ফেলে মুহুকে দেখছে জাহিন।পরনে এখনো বেগুনি রঙের শাড়িটা! আলগোছে খোঁপা টা কাঁধ ছুঁয়ে আছে।চোখ দুটো চঞ্চল হয়ে আছে!যেন হাজারো অব্যক্ত কথা জমে আছে!নিরবতা ভেঙে বলে জাহিন,
“আমি চলে যাচ্ছি মুহু!
ছোট্ট এইটুকু কথায় বেশ অবাকই হয়েছে মুহতাসনিম।এখনও তো আনানের বিয়ে শেষ হয়নি!তবে?পরক্ষণে জাহিন বলে,
” আমার ছুটি শেষ মুহু।আমি আসছি।
অজানা এক কারনে বুকের ভেতর টা হুহু করে উঠে!চারিপাশ টা ফাঁকা ফাঁকা মনে হচ্ছে!এ কেমন নিরব অনুভূতি?পাল্টা আর জাহিনকে কিছু বলতে পারলো না মুহতাসনিম।হাজার অব্যক্ত কথা মনের গহীনেই যেন নিশ্চুপ হয়ে লুকিয়ে রইল!
মিনিট এক দাঁড়িয়ে ছিল জাহিন।হয়তো বিদায় বেলা একটুখানি কথা আশা করেছিল মুহুর থেকে!নিরাশা হয়ে কয়েক কদম হেটে চলে যায় জাহিন।
ঠাঁয় দাঁড়িয়ে জাহিনের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে মুহতাসনিম।ফের একবার তাকায় জাহিন পরক্ষনে দ্রুত এগিয়ে আসে।
“মুহু আপনার খোঁপাটা খুলে দেওয়ার একটুখানি অধিকার হবে আমার?
চলবে…….
#মেঘবতীর_শহরে
পর্ব-৩৪
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
,
,
চারিদিকে মৃদুমন্দ বাতাস বইছে।নিষ্পলক কেবল জাহিনের মুখোপানে তাকিয়ে আছে মুহতাসনিম।এক মুহূর্তের জন্যে মনে হচ্ছে লোকটি অধিকার না চেয়ে তো বায়নার সুরেও বলতে পারতো!
আশাহত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে জাহিন।এবারও বুঝি তাকে শূন্য ফিরতে হবে!নিশ্চুপ এক হাহাকার বেরিয়ে আসে ভেতর থেকে।
জাহিনকে অবাক করে দিয়ে দু কদম হেটে সম্মুখে আসে মুহতাসনিম।কপাল জুড়ে অবাধ্য ছোট চুল গুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে।পরক্ষনেই পিছু ঘুরে দাঁড়ায় মুহতাসনিম।পিঠপিছে দাঁড়িয়ে আছে জাহিন।
মুহতাসনিম যে ইঙ্গিতে বোঝাচ্ছে তার খোঁপা খুলে উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্যে তা আর বুঝতে বাকি নেই জাহিনের।মুহূর্তে ই ঠোঁটের কোণে একটুখানি হাসি ফুটে উঠে।অজানা কোনো কারণে চোখ বুজে দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।তৎক্ষনাৎ খোঁপা টা উন্মুক্ত করে দেয় জাহিন।লম্বা ঘন কেশবহুল পিঠ ছুঁড়ে হাটুতে এসে ঠাঁই নেয়!বিস্ময়ে কয়েকবার চোখের পলক ফেলে জাহিন।মুহুকে যেন খোলা চুলেই অসম্ভব সুন্দর লাগে!এক রাশ মায়া এসে তখন ভীর জমায়!
তোমার এক গুচ্ছ এলোকেশ
করে মুগ্ধ আমায়,কাটে না রেশ!
জাহিনের কথায় চোখ মেলে তাকায় মুহতাসনিম।লোকটার টুকটাক কাব্যিক কথাগুলো বেশ ভালো লাগে!অজানা এক জড়তায় পেছন ফিরেই নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।শেষ বার জাহিন শুধু বলল,
“একবার ঘুরে তাকাবেন মুহু?
ঘুরে তাকায় মুহতাসনিম।একটুখানি হেসেই ফের হাটা দেয় জাহিন।কি বুঝে চট করেই প্রশ্ন করে বসে মুহতাসনিম,
” আবার কবে আসবেন ডাক্তার সাহেব?
থমকে দাঁড়ায় জাহিন।কথাটা কানে বাজতেই মন চনমনে হয়ে উঠে!ঠোঁটের কোণে একটু হাসিও উঁকি দেয়!তবে কি মুহতাসনিম তার অপেক্ষার প্রহর গুনবে?
ফিরে ছোট্ট করে জবাব দেয় জাহিন,
“জানাবো।
পরমুহূর্তেই চলে যায় জাহিন।উত্তর টা যেন সন্তুষ্ট করতে পারলো না মুহতাসনিম কে।আরেকটু খোলাসা করে বললে কি হতো?
~~~
আজকে আনানের বৌভাতের অনুষ্ঠান হবে।জাহিনের অনুপস্থিতি তে সবারই মন খারাপ।জাফর সাহেব রীতিমতো রাগান্বিত।একে তো জাহিন হলুদে ছিল না।আজকে বৌভাতেও নেই!সবে একটা দিনের ছুটি নিয়ে এসেছে!অবশ্য এ নিয়ে নবনীকে তেমন কিছুই বলেননি।ভেতরে রাগ পুষে রেখেছেন।
তৈরি হয়ে সবাই কমিউনিটি সেন্টারে যাওয়ার জন্যে ব্যস্ত।নবনী মিনা বেগমকে উপরে পাঠালেন মুহতাসনিম কে তৈরি হওয়ার জন্যে।
~~~
ব্যস্ত জাহিন জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।সবে একটু অবসর হয়েছে।কাল রাতের দিকেই ফিরতে হয়েছে তার।অবশ্য ইমারজেন্সি কল এসেছিল।কাজের মাঝেও আজকে বারংবার মুহতাসনিমের ভাবনায় ঢুবে ছিল!কাজে ব্যঘাত ঘটেছে কয়েকবার।অবশ্য ডাক্তারদের অতো ভুলোমনা হলে চলে না!কালকে একমুহূর্তের জন্য মুহতাসনিম কে ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করছিল না জাহিনের!বিদায় বেলা খুব করে ইচ্ছে করছিল মুহুকে একটুখানি শক্ত করে আষ্টেপৃষ্টে বুকে জড়িয়ে ধরতে!যে ভাবে জড়িয়ে ধরলে প্রিয় মানুষটা মিশে যায় আত্নায় আত্নায়!জাহিনের এই তীব্র ইচ্ছাটুকু কি কখনও জানবে মুহু?হবে কি এইটুকু ইচ্ছে পূরণ?একবার অবশ্য খুব কাছে থেকে মুহুকে জড়িয়ে ধরার সৌভাগ্য হয়েছিল সেটা পুরোটাই অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল!শত ভাবনার মাঝে ঘড়ির দিকে তাকায় জাহিন।সকাল দশটা বেজে গেছে।কালকে ফেরার পর কাজের চাপে মুহতাসনিমকে জানানো হয়নি।
~~~
হাটু তুলে জানালার ধারে বসে আছে মুহতাসনিম।কাল থেকে জাহিন একটা কলও করেনি।চিন্তায় সারারাত বিছানায় ছটফট করেছে মুহতানিম।ফোনটাও বন্ধ ছিল!মিনা বেগম সেই কখন থেকে বলে যাচ্ছেন তৈরি হওয়ার জন্যে।সে দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই মুহতাসনিমের।
“নবনী আপা রাগ করবো পরে।তারাতাড়ি তৈরি হ।ওরা পার্লারে যাইবো এহন তোরেও নিয়া যাইবো।
চোখমুখ কুচকে বলে মুহতাসনিম,
” খালা আমার একটুও ভালো লাগছে না।তুমি গিয়ে বলো আমার শরীর টা ভালো না।
“তুই তো সুস্থই!
” খালা আমার সত্যিই ভালো লাগছে না।
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে মিনা বেগম।
“তাইলে আমিও থাকি?
” না তোমার থাকতে হবে না।এই বেলা আমি একাই থাকতে পারবো।ওখানে তোমাকে দরকার পরতে পারে।
“তাও কথা।আইচ্ছা আমি বরং গেলাম।
দরজার কাছে গিয়েও ফিরে আসে মিনা বেগম।আমতা আমতা করে বলে,
” আতিকের ব্যপারে খবর শুনছোস কিছু?
মুহূর্তেই বুকটা ধ্বক করে উঠে মুহতাসনিমের!
আতিকের কথাটা কিছুতেই ভুলতে পারে না।এই যে জাহিনের জন্যে চিন্তা হয় ছটফট অনুভূতি হয় তা তো আতিক কে হারানোর জন্যেই!আতিককে হারিয়ে যেন অজানা এক ভয় কাজ করে সারাক্ষণ!চোখ দুটো মুহুর্তে ভিজে উঠে মুহতাসনিমের।ভাঙা আওয়াজে কেবল বলে,
“কি?
ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিনা বেগম।পরক্ষণে বলে,
” আতিক এক্সিডেন করে নাই।ওরে নাকি প্ল্যান কইরা মারছে।উকিল মানুষ কতশত শত্রু লাইগা ছিল কে জানে?আতিকের মায়ের নাকি মানসিক অবস্থা বেশি ভালো না।দেশের বাহিরে পাঠাইছে চিকিৎসার জন্যে।
নিশ্চুপ মুহতাসনিম কেবল নিরব হয়ে কথাগুলো শুনছে।মুখের সামনে আতিকের হাসি হাসি মুখটা ভেসে উঠেছে।জগৎ টা তো চিরদিনের না!তবে কেন মানুষ নিজেদের মধ্যে এত লড়াই করে?যার বিনিময়ে প্রানও দিতে হয়!নাক টেনে বলে মুহতাসনিম,
“উনি তো খুব ভালো মানুষ ছিল খালা।তাহলে কেন খুন করা হলো উনাকে?
” বেশি ভালো বইলাই হয়তো।এই যুগে কে কারে পারা দিয়া মাটির সাথে মিশাইয়া উপরে উঠবো!হায়রে মানুষ অথচ চিরদিনের জন্যে কিন্তু কেউ জগতে আসে নাই!
পাল্টা আর কিছু বলতে পারেনি মুহতাসনিম।কান্না গুলো কেমন গলায় দলাপেকে আছে।
নিশ্চুপ মুহতাসনিম কে রেখে চলে যায় মিনা বেগম।মেয়েটার মনের অবস্থা এখন বেশ বুঝতে পারছেন।উত্তাল ঢেউ বইছে ভেতরে।তাই আর কথা বাড়াননি।
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠে মুহতাসনিমের।স্ক্রিনে অপরিচিত নাম্বার ভেসে আছে।তীব্র অনিচ্ছা থাকা সর্তেও কল রিসিভ করে মুহতাসনিম।ওপাশ থেকে মৃদু শব্দে কেউ কথা বলছে।
“আপু তোর কি খবর?
মুনার কন্ঠস্বর পেয়ে মন খানিকটা শান্ত হয় মুহতাসনিমের।
” এই তো ভালো।তুই কেমন আছিস?বাসার সবাই ভালো?
“হ্যাঁ ভালো।জিজুর কি খবর আপু?এখনও তো তাকে দেখাই হলো না।
আচমকা থমকে যায় মুহতাসনিম।আতিকের মৃত্যুর খবর তার উপর জাহিনের সাথে হুট করেই বিয়ে সবমিলিয়ে কিছুই তো বলা হয়ে উঠেনি মুনাকে!এপাশ নিশ্চুপ থাকায় বারংবার হ্যালো হ্যালো বলে যাচ্ছে মুনা।সম্বিৎ ফিরতেই বলে মুহতাসনিম,
” হু,,হ্যাঁ ভালো।
কেন জানি খোলাসা করে কিছুই বলতে পারলো না বোনকে।কোথাও একটা তীব্র জড়তা কাজ করছে।কিভাবেই বা বলতে এত কিছু?
ওপাশ থেকে মৃদু হাসির শব্দ আসে।পরক্ষণে বলে মুনা,
“তোদের কবে যে একসাথে দেখবো।
পাল্টা আর কিছু বলে না মুহতাসনিম।ফের দুজনের মাঝে পিনপতন নিরবতা।অনেক জড়তা নিয়েই যেন মুনা বলে,
” আপু কিছু টাকার দরকার ছিল।মা আমাকে এক টা টাকাও দেয়নি।বলেছে তোর পুরো পরিচয় না দিলে আমার পড়াশোনা বন্ধ।
কথা বলার সময় গলা কেমন ধরে আসছিল মুনার।
আগের মাসেও তো টাকা পায়নি মুহতাসনিম।ঠিক মতো পড়াতে পারলো কই?নাম্বার না থাকায় যোগাযোগ টাও যে হলো না।তবুও আশ্বস্ত কন্ঠে বলে মুহতাসনিম,
“দুদিনের মধ্যে দিলে চলবে মুনা?
” হ্যাঁ আপু………………….
হঠাৎ দরজার বাইরে থেকে নবনী ডেকে উঠে।তৎক্ষনাৎ কান থেকে ফোন নামিয়ে লাইন কেটে দেয় মুহতাসনিম।সোজা ঘরে প্রবেশ করে নবনী।মুখ জুড়ে তার চিন্তার ছাপ।
“তুমি নাকি অসুস্থ?
কোনোরকম হাসার চেষ্টা করে বলল মুহতাসনিম,
” হ্যাঁ ওই একটু মাথা ধরেছে।ঘুমটা হয়নি ঠিকঠাক ভাবে।
“তোমাকে রেখে কি করে যাবো?এইটুকু অসুস্থ তে কিছু হবে না চলো।
মুহুর যে প্রচন্ড মন খারাপ।শরীরের অসুখের চেয়েও যে ভয়ানক অসুখ হচ্ছে মনের ব্যাধি!নবনীর মুখের উপর তর্ক করতে পারলো না মুহতাসনিম।
” ঠিক আছে আমি তৈরি হচ্ছি।
“আচ্ছা।
~~~
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল।বাসায় এখন অব্দি কল করেনি জাহিন।অবশ্য সময়ও তেমন পায়নি।ভেবেছিল মুহু বুঝি একটুখানি মনে করবে তাকে!আশায় একবালতি জল পরলো!নিজে থেকেই প্রথমে মাকে কল করলো জাহিন।দুবার বাজতেই রিসিভ হলো।
” কিরে বাবা পৌছেছিস?কাল থেকে একটা কল পাইনি তোর।ফোনটাও বন্ধ রেখেছিস!
“আসলে মা মণি কাজে ছিলাম।ফোনে চার্জ ছিল না।কালকে রাতেই পৌঁছেছি।ওদিকে সব ঠিক আছে?
হতাশ গলায় বলে নবনী,
” তোর মামা রেগে আছে তোর উপর।
“আমার কি করার ছিল মা মণি?ইমারজেন্সি কল এসেছিল।
” বলেছি তোর মামাকে।বুঝতে চায় না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে জাহিন,
“তবে এতে তো আর আমার কিছু করার নেই মা মণি
“হুম।আমি ঠিক সামলে নিবো।
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে জাহিন,
” মুহু কি তোমার সাথে মা মণি?
নবনী একবার আশেপাশে তাকায় পরক্ষণে বলে,
“হ্যাঁ আশেপাশেই।ওই তো আফিফ এর সাথে কথা বলছে।ডেকে দিবো?
হুট করেই লাইন টা কেটে যায়।ছেলের ব্যস্ততার কথা ভেবে অগত্যা আর ফোন করে না নবনী।
চলবে…..
#মেঘবতীর_শহরে
পর্ব-৩৫
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
,
,
সন্ধ্যার প্রহর কেটে এখন রাতের প্রহর।চারিদিকে বাতাসের তোড় বেড়েছে।খোলা চুলে ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।ইষত ঠান্ডা বাতাস শরীর টা দুলিয়ে দিচ্ছে।খানিকক্ষণ আগেই ফিরেছে কমিউনিটি সেন্টার থেকে।সকাল থেকেই বড্ড মন ভার লাগছে তার।সমস্ত ভাবনা গুলো আরও একবার ওলোট পালোট করে দিয়েছে তাকে!
আতিক আজ বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই তাদের সুন্দর একটা সংসার হতো?যেখানে থাকতো অফুরন্ত ভালোবাসা!না চাইতেও মনের কুঠুরি তে আতিক কে জায়গা দিয়ে ফেলেছিল মুহতাসনিম!মাঝে থেকে সবটা গড়মিল হয়ে জীবন জড়িয়েছে জাহিনের সাথে!যে মানুষটা নাকি সম্পর্কের মানে টাই বোঝে না!ভালোবাসা বলতে একটা দায়িত্ব কে অনিচ্ছা সর্তেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়াকে বোঝে!জগতে এমন অদ্ভুত মানুষ আর একটাও দেখেনি মুহতাসনিম।অবশ্য মুহতাসনিম কে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত টা ঠান্ডা মস্তিষ্কে নেয়নি জাহিন।
বলা চলে অনিশ্চিত এক সম্পর্ক কে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে মুহতাসনিম।আদৌ সামনে তার ভাগ্যে কি নিয়ে বসে আছে তার জন্য জানা নেই!জগৎ টা সত্যিই বড্ড কঠিন বড্ড!যারা টিকে থাকার লড়াই করে কেবল তারা’ই জানে।
ভাবনার মাঝে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে মুহতাসনিম এর।চোখের কোণা টা কখন ভিজে আসে টের পায় না।পাশে এক মগ গরম কফি হাতে এগিয়ে আসে মিনা বেগম।
“এই ঠান্ডা বাতাসে কহন থিকা দাঁড়ায় আছস।তোর না মাথা ধরছে?এই কফিটা খা ভালো লাগবো।
পাশ ফিরে স্মিত হেসে কফির মগ হাতে নেয় মুহতাসনিম।
” তুমি আমার এত খেয়াল কেন রাখো খালা?যেখানে আমার মা,বাবা কোনো খোঁজখবর নেয় না আমার।আমি বেঁচে আছি কিনা আমার বাবা হয়তো আদৌ জানেই না।আচ্ছা বাবা রা এত নিষ্ঠুর হয় খালা?
মুহতাসনিম এর কথায় চোখ ভিজে উঠে মিনার।মেয়েটা ভেতরে এক পাহাড় সম কষ্ট পুষছে!তবুও দিব্যি শক্ত আছে!কেন জানি মেয়েটার প্রতি বড্ড মায়া হয় মিনার।নিজের আজকে একটা সংসার থাকলে হয়তো তারও এমন একটা মেয়ে থাকতো!কফিতে চুমুক দিয়ে বলে মুহতাসনিম,
“খালা তুমি দ্বিতীয় বার আর সংসারে জড়াও নাই কেন?
খুব সঙ্গোপনে চোখ মুছে নেয় মিনা বেগম।ছোট্ট একটুখানি হাহাকার নিয়ে বলে,
” এক জীবনে দুই বার ভালোবাসা যায় না।ওই পাষান নিষ্ঠুর টারে মনে জায়গা দেওয়ার পর আর কাউরে দিতে পারি নাই।আমার পুরো না হওয়া সংসার টা ফালাইয়া আসছি।দ্বিতীয় বার সংসার সাজানের সাহস ছিল না।এক পুরুষের ছোঁয়া গায়ে মাখছি দ্বিতীয় বার কোনো পুরুষ ছুঁইবো এটা কল্পনায়ও আনতে পারি নাই রে মা।
নিশ্চুপ মনোযোগ নিয়ে খালার কথা শুনে যাচ্ছে মুহতাসনিম।একটা মানুষ একজনকে ঠিক কতটা ভালোবাসলে আরেকজনের কথা কল্পনাতেও আনতে পারে না!অবশ্য মিনা খালাকে যে হারিয়েছে সে সত্যিই অভাগা!কপাল পোড়া যাকে বলে।এক জীবনে সবার ভাগ্যে এত সুন্দর ভালোবাসা জোটে না!পোড়া কপালদের দলে যে মুহতাসনিমও অন্তর্ভুক্ত!নয়তো আতিক কে এভাবে হারাতে হতো না তার।মুহতাসনিম কে নিশ্চুপ দেখে বলে মিনা,
“ঘরে আয়।রাইত হইছে খাবি না?
” তুমি যাও খালা আমি পরে আসছি।
~~~
কিছুক্ষণ আগেই ছোট্ট একটা অপারেশন এর কাজ শেষ করে এসেছে জাহিন।আজকাল নিজেকে কেমন রোবট মনে হয় তার।না আছে কোনো অনুভূতি আর না আছে ব্যক্তিগত জীবন!এই কারনেই হয়তো এ পেশায় মা মণি তাকে আসতে দেয়নি।সবার অসন্তুষ্টি তার এই পেশা নিয়ে!
ছোট বেলা থেকেই যেন ডাক্তার হওয়ার তীব্র নেশা ঝেঁকে বসেছিল মাথায়!জাহিনের বাবাও পেশায় একজন ডাক্তার ছিলেন।এখন অব্ধিও লোকটার বেশ নাম ডাক আছে দেশে।অবশ্য ডাক্তারি পেশায় আসার পর কখনও বাবার মুখোমুখি হয়নি জাহিন।তিনি হয়তো জানেও না তার ছেলেও এ দেশের একজন সনামধন্য ডাক্তার!পৃথিবীতে এই একটা মানুষের প্রতি তীব্র ঘৃনা!যার জন্যে সম্পর্ক,ভালোবাসার প্রতি এত অনীহা জাহিনের।তবে মুহুকে দেখলে খুব করে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।পরম যত্নে বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে মন চায়।একটা ছোট্ট সংসার সাজানোর স্বপ্ন দেখে জাহিনও!অথচ কয়েকটা মাস আগেও যে জাহিন এসব বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তি খুঁজে পেত না!শত ভাবনা বুক ভারী করে দেয় জাহিনের।
ফোনের স্ক্রীনে একবার তাকায়।মুহতাসনিম কে কল করার ইচ্ছে থাকা সর্তেও করছে না।খানিক অভিমান হয়েছে দুপুরে যখন জানতে পারলো আফিফের সাথে কথা বলছে।অবশ্য এত মান অভিমান নিয়ে বসে থাকার সময় কই তার?খানিক্ষন পর হয়তো আবারও ব্যস্ত হয়ে যাবে।না চাইতেও মুহুকে তার ভুলে থাকতে হবে।অবশ্য মুহুর থেকে একটা কল অন্তত আশা করেছিল জাহিন।সমস্ত ভাবনাকে দূরে ঠেলে মুহুর নাম্বারে ডায়াল করে।
~~~
বিশাল আকাশে শূন্য দৃষ্টি রেখে দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।খুব করে জাহিনের কথা মনে পরছে।লোকটা ফিরেছে এক দিন হতে চলল!একটাবার কি তাকে কল করার সময় হলো না?নবনী আন্টির সাথে নাকি বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে!তবে তার বেলায় এত ব্যস্ত কেন?পরক্ষণে মুহুর মনে হয় যে লোক সম্পর্কের মানে বোঝে না তার থেকে কিছু আশা করাটা নিছক বোকামি।তবুও অবাধ্য মন টা অশান্ত হয়ে থাকে নিরবে।ফুপিয়ে কেঁদে উঠে মুহতাসনিম।পেছন থেকে মিনা বেগম বলেন,
“তোর ফোন বাজতাছিল মুহু।
তড়িঘড়ি করে চোখ মুছে ফোন হাতে নেয় মুহতাসনিম।মিনা বেগম ততক্ষণে স্থান ত্যাগ করে।জাহিন কল করেছে দেখতেই নিজে থেকে কল করে মুহতাসনিম।একবার বাজতেই রিসিভ হয়।নিশ্চুপ হয়ে আছে মুহতাসনিম।ওপাশ থেকে বলল জাহিন,
” কি করছেন মুহু?
নাকটা একটুখানি টেনে বলে মুহতাসনিম,
“কিছুনা।
ফোনের এপাশে খানিকটা ঘাবড়ে যায় জাহিন।মুহতাসনিম কাঁদছে এটা হলফ করে বলতে পারবে।তবে কেন কাঁদছে মেয়েটা?কেউকি তাকে কিছু বলেছে?মুহূর্তেই উত্তাল সাগরের ঢেউ এর মতো অশান্ত হয়ে যায় মন!অজানা এক ভয়ও কাজ করে!সবকিছু দমিয়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে জাহিন।
” আপনি ঠিক আছেন মুহু?
এবার যেন মৃদু শব্দ আসে কান্নার।এদিকে জাহিনের উদ্বেগ বাড়তে থাকে।একমিনিটে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে তার মুহুর কাছে।নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে নয়তো এভাবে কাঁদবে কেন মেয়েটা!ভেজা গলায় বলে মুহতাসনিম,
“আতিক সাহেব কে যে খুন করা হয়েছে আপনি জানেন?
মুহুর্তেই সকল অস্থিরতার অবসান ঘটে জাহিনের।অশান্ত মন টা একদম দিঘির জলের ন্যায় শান্ত হয়ে আসে!তবে মুহুর কান্নার কারণ টা আতিক ছিল!মুহু কি এখনও আতিক কে ভালোবাসে?কেন জানি মৃত আতিক কে এই মুহুর্তে সহ্য হচ্ছে না জাহিনের।ছোট্ট করে কেবল বলে জাহিন,
” কিভাবে?
“উনাকে প্ল্যান মাফিক এক্সিডেন্ট করানো হয়েছে।আমি শুধু এতটুকু জানি।আপনি আনান ভাইয়াকে জিগ্যেস করলে সবটা জানতে পারবেন ডাক্তার সাহেব।
মুহতাসনিম কে বেশ মরিয়া মনে হচ্ছিল জাহিনের।কন্ঠে ছিল অস্থিরতা।সব রহস্যের উদঘাটন করতে চায় যেন মুহু!বিচার না হওয়া অব্ধি যেন দুদণ্ড শান্তি মিলবে না তার!
” ঠিক আছে আমি জানাবো।রাখছি মুহু আমার কাজ আছে।
~~~
কমিউনিটি সেন্টার থেকে বেঁচে যাওয়া খাবার পার্সেল সমেত রেহানা ভিলাতে পাঠানো হয়েছে।সবার খাওয়া হয়ে গেলে খানিকটা খাবার নিয়ে ছাদের রুম চিলেকোঠায় আসে নবনী।মেয়েটা ধ্যানমগ্ন হয়েই দাঁড়িয়ে আছে ছাদে।পিছু ডাকে নবনী।ভাবনার জগৎ রেখে ফিরে তাকায় মুহতাসনিম।চোখ জোড়া কেমন নিষ্প্রাণ লাগছে!উদভ্রান্তের মতো কেবল তাকিয়ে আছে নবনীর মুখো পানে।
ভেতর টা মুচড়ে উঠে নবনীর।চাহনি বলে দিচ্ছে মেয়েটা ভালো নেই!ভেতরে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে!মাথায় হাত রাখে নবনী।আস্থার একটু ছোঁয়া পেতেই দিকবিদিকশুন্য হয়ে নবনীকে জড়িয়ে ধরে মুহতাসনিম।কান্নায় ভেসে যায়!ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে আসে নবনীর!!
“ঠিক আছিস তুই?
চলবে……