#মেঘবতীর_শহরে,পর্ব-৩৬,৩৭,৩৮
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
৩৬
চারিদিকে বিরাজ করছে শুনশান নীরবতা।ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে মেয়েটা!বারংবার চুলে হাত বুলায় নবনী।এক হাতে প্লেট থাকায় জড়িয়ে ধরতে পারে না মুহতাসনিম কে।
” মাকে বলবি তো কি হয়েছে?জাহিন কিছু বলেছে?
সোজা হয়ে দাঁড়ায় মুহতাসনিম।চোখমুখ মুছে নেয়।পরক্ষণে বলে,
“না উনি কিছু বলেনি।
” তবে কাঁদছিলি কেন?
নবনীর হাতে খাবার দেখেই জটপট বলল মুহতাসনিম,
“খিদে পেয়েছে।
ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছেড়ে প্লেটের দিকে তাকায় নবনী।পরক্ষণে অপর হাতে খাবার মাখাতে মাখাতে বলে,
” আমারও খাওয়া হয়নি।ভেবেছি আজ এক প্লেটে মা,মেয়ে মিলে খাবো।
একটুখানি মলিন হাসে মুহতাসনিম।পাশেই দোলনায় বসে দুজন।জাহিনের লাগানো ফুল গাছ গুলোয় ফুল ধরেছে রঙবেরঙের।তা থেকে তীব্র সুভাস চারিদিকে মোহিত করে দিয়েছে।পরম যত্নে খাবার মেখে মুহতাসনিমের মুখের কাছে ধরে নবনী।দু দিকে মাথা নেড়ে বলে মুহতাসনিম,
“আগে আপনি খাবেন আন্টি তারপর আমি।
” আগে মায়েদের খেতে নেই।হা কর তো তুই।আর আন্টি কিসের রে?মা বলবি।
বাধ্য মেয়ের মতো হা করে মুহতাসনিম।পুনরায় খাবার মাখাতে থাকে নবনী।খুব সাবলীল ভাবেই মুহতাসনিম কে জিগ্যেস করে,
“এবার বল কাঁদছিলি কেন তুই?
খাবার চিবুতে থাকা মুহতাসনিম থমকে যায়।নিচু দৃষ্টি তার।বুঝতে পারে এ বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।নির্বিকার ভঙ্গিতেই বসে আছে নবনী।কোনো তাড়া নেই যেন।প্রথমেই মুহতাসনিম বলে উঠে,
” আপনার ছেলেকে আমার অস্বাভাবিক লাগে।কোনো সম্পর্ক,অনুভূতির যেন পরোয়া নেই তার!সম্পূর্ণ এক বেপরোয়া সে!আপনি মা হয়ে নিশ্চয়ই জানবেন কারণ টা?
আচমকা স্তব্ধ হয়ে যায় নবনী।শত ভাবনারা মস্তিষ্কের মধ্যে ঘুরতে থাকে।পুনরায় শান্ত গলায় বলে নবনী,
“এটাই তবে তোর কান্নার কারণ? জাহিন ভালোবাসতে পারেনি তোকে?
নবনীর কথায় চমকে উঠে মুহতাসনিম।সে এমনটা কিছুই তো বোঝাতে চায়নি।সে শুধু বলতে চেয়েছে জাহিনের ভাবনাটা এমন কেন?কেন আর পাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের মতো হতে পারেনা সে?
আবারও মুখের কাছে লোকমা ধরে নবনী।মুখে নিয়েই বলে মুহতাসনিম,
” সেটা মোটেও বলিনি।উনার সাথে আমার বিয়েটা স্বাভাবিক নয়।এত সহজে তার ভালোবাসা পাবো এটা আশা রাখিও না আমি।আমার শুধু কৌতুহল টা উনার ভাব ভঙ্গিতে।কেন তিনি সব সম্পর্ককে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না?
মুহতাসনিম এর কথায় দফায় দফায় অবাক হয় নবনী।সে জাহিনের আচরণে যতদূর বুঝতে পেরেছে সে মুহতাসনিম কে ভালোবাসে।তবে পুরোনো সম্পর্কের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে যে অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে তা কি মুহতাসনিম কে বলা খুব দরকার ছিল?সম্পর্কে বিশ্বাস নেই তবে কেন মেয়েটাকে বিয়ে করেছিল সেদিন?মেয়েটার কাঁদার তো কোনো অযৌক্তিক কারণ দেখছে না নবনী।শেষে তার মতোই কি পরিনতি হবে মুহতাসনিম এর?নিজেকে শান্ত রেখেই বলল নবনী,
“তুই কি কোনো কারণে কথার প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাচ্ছিস?নাকি জাহিনের জন্যেই কান্নার কারণ?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে মুহতাসনিম,
” কান্নার তো কারণ আছেই।পুরোটাই ডাক্তার সাহেবকে কেন্দ্র করেই।
নবনীর বুকটা ধ্বক করে উঠে!তার সন্দেহ যেন সত্যি প্রমানিত না হয়!খাবার প্লেটে তাকিয়ে বলে মুহতাসনিম,
“অনেকটা খাওয়া হয়ে গেছে মা।বাকিটা আপনি খেয়ে নিন।
শুধু স্মিথ হাসে নবনী।পরক্ষণে বলে,
” কি করেছে জাহিন?
ছোট্ট একটা তপ্ত শ্বাস ছাড়ে মুহতানিম।পরক্ষণে বলে,
“মা হিসেবে মেয়ের মনের কথা আপনি জানতেই পারেন।অবশ্য আপনাকে বললে আমারও হালকা লাগবে।
ইচ্ছে করেই যেন নবনীর সাথে আজ সখ্যতা গড়ছে মুহতাসনিম।মেয়েটাকে যতটা চুপচাপ ভেবেছে ততটা না।যে ভালোবেসে যত কাছে যেতে পারবে সেই মুহতাসনিম নামক মেয়েকে পুরোটা পড়তে পারবে, জানতে পারবে।তা ছাড়া মেয়েটা উপরিভাগে যতটা মানুষকে দেখাবে সে কেবল তার সম্পর্কে জানতে ততটুকুই সীমাবদ্ধ থাকবে।
” আজকে আমি জানতে পারি আতিক সাহেবের মৃত্যু টা স্বাভাবিক ছিল না।খুন ছিল।সে থেকেই প্রচন্ড মন খারাপ ছিল।এ কারণে বিয়েতেও যেতে চাইনি।তার উপর ডাক্তার সাহেব কাল থেকে ফেরার পর একটাবার আমাকে কল করে জানায়নি পর্যন্ত!অথচ আজকে আপনি বললেন সে দিব্যি আপনাকে দু,তিনবার কল করেছে।আমাকে না হয় একটা মিনিটের জন্যেই বলতো উনি ঠিকঠাক ভাবে পৌঁছেছে!একটু আগে কলও করলেন কথা হলো।আমি তাকে খুলেও বললাম আতিক সাহেবের কথা।এর জন্যে মন খারাপ সে বুঝেছেও!একটু কি শান্তনা দেওয়া যেত না আমায়?আমার মনের অবস্থা টা কেবল আমি বুঝতে পারছি!
নিশ্চুপ হয়ে মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনলো নবনী।বেশ বুঝতে পারলো তার ওমন অস্বাভাবিক ভাবনার ছেলেটাকে মেয়েটা একটু একটু করে ভালোবাসছে!তার হতভাগ্য ছেলেটা বুঝি বুঝতেই পারেনি!একদম বাবার মতো হয়েছে!
“তুমি সবটা বলার পর জাহিন কি বলল?
আবারও দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে মুহতাসনিম,
” উনি এখন ব্যস্ত আছেন।
নবনী যা ভেবেছে তাই!তার ছেলেটা কিছুই বুঝতে পারেনি।মেয়েটা কতটা ভরসা করে তার সাথে কথাগুলো বলল!বিনিময়ে একটুখানি শান্তনা দিবে উল্টো হিংসে করছে।তার অবুঝ ছেলেটা কি বোঝে না আতিক আর ফিরে আসবে না!নিজের ছেলেকে তো খুব ভালো ভাবেই চেনে নবনী।
“জাহিনের হয়তো কাজ ছিল।দেখবে ঠিক আবার তোমার মন ভালো করে দিবে।
নিশ্চুপ কেবল বসে থাকে মুহতাসনিম।তাড়া নিয়ে বলে নবনী,
” খাওয়া হয়ে গেছে কখন।আমি বরং নিচে চলে যাই।তুমি চাইলে জাহিনের রুমটায় আজ থেকেই থাকতে পারো মুহতাসনিম।
নবনী উঠে হাটা ধরতেই বলে মুহতাসনিম,
“আমার প্রশ্নের উত্তর কিন্তু আমি পাইনি মা!
থমকে দাঁড়ায় নবনী।পিছু ফিরে বলে,
” কি জানতে চাও বলো?
“জাহিন সাহেবের এমন ভাবনার কারণ কি?কেন তিনি সম্পর্ক কে সহজ ভাবে মানতে পারেন না?
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে নবনী,
” জাহিনের বাবার কারণে।পৃথিবীতে সব বাবা রা ভালো হয় না মনে মুহতাসনিম।তবে আমি এটুকু আশা রাখি আমার জাহিন খুব ভালো একটা বাবা হবে।
বলেই হনহন করে চলে গেল নবনী।কথার গোলকধাঁধায় যেন ফেলে গেল মুহতাসনিম কে।কি আছে জাহিনের অতীতে?ভদ্রমহিলার মন টা সে খারাপ করে দিয়েছে বেশ বুঝতে পেরেছে।অতীত বুঝি খুব যন্ত্রণার তার!সবসময় সবার অতীতে খোঁচা দিতে হয় না!হোক না শত কারণ!তবে শেষের কথাটা কি বললেন?জাহিন ভালো বাবা হবে?আদৌ কি সম্পর্কের জালে জড়াবে এই ডাক্তার?
কেন জানি আজ জাহিনের রুমে থাকতে ইচ্ছে হলো মুহতাসনিমের।যেই ভাবনা সেই কাজ।মিনা খালাকে বলে চলে যায় জাহিনের রুমে।
পুরো রুমটা যেন শুভ্র মেঘের রাজ্য!বেশ পরিপাটি থাকে!অবশ্য লোকটা থাকেই দু,চারদিন।গেইস্ট দের মতোই বলা চলে।রুমের এক কোণা অংশ জুড়ে শুধু বই আর বই!জাহিন যে পড়ুয়া পাগল ছেলে বুঝতে বাকি নেই!কয়েকটা ঘেটে একটা বই নিয়ে খাটে আসে মুহতাসনিম।মন টা আজ ভিষণ খারাপ।ঘুম সহজে চোখে ধরা দিবে না।
ঘড়ির কাটা রাত দুটোর কোটায়।অর্ধেক টা বই পড়ে নিয়েছে মুহতাসনিম।চোখে বুঝি একটু একটু তন্দ্রার ঘোর লাগছে ঠিক তক্ষুনি ফোনটা বেজে উঠে!চমকে উঠতেই খেয়াল করে মুহতাসনিম,স্ক্রিনে জাহিনের নাম।হাতড়ে ফোন রিসিভ করে।
“এখনও যে ঘুমোননি শরীর খারাপ করবে মুহু।
বেশ অবাক হলো মুহতাসনিম।সেটা লুকিয়ে বলল,
” আপনি কিভাবে জানলেন আমি জেগে আছি?
“আতিকের খবর নিয়েছি তো।জানার ইচ্ছে ছিল তো আপনার?দেখা গেল সে চিন্তায় আপনার ঘুম হলো না!
জাহিনের কথায় একটু বিরক্ত ধরে মুহতাসনিম এর।পরক্ষণে বলে,
” দেখুন এই মৃত্যু টা নিয়ে কম কথা শুনতে হয়নি আমার।সদ্য বিয়ের আসরে বসা একটি মেয়ের হবু জামাই মারা যাওয়াটা তার মানসিক অবস্থায় কিরুপ প্রভাব পরেছে সেটা আপনি বুঝবেন না।সবাই জানুক তার মৃত্যু টা কিভাবে হয়েছে!আর একটা মানুষকে তো এত সহজে ভোলা যায় না!যে কিনা হবু স্বামী ছিল!নিশ্চয়ই তাকে নিয়ে আমার একটু হলেও জল্পনা কল্পনা ছিল!
সে কথা তোয়াক্কা না করে,শান্ত গলায় বলল জাহিন,
“কয়েকমাস ধরে একটা কেইস নিয়ে লড়ছিল আতিক।এত স্বনামধন্য একজন এডভোকেট হয়েও কেসে জেতা টা তার জন্যে টাফ হয়ে গিয়েছিল শুধু তার মায়ের কারণে।
ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে মুহতাসনিম,
” মানে?
“আতিকের মা পরকীয়ায় লিপ্ত ছিল মুহু।আর যার সাথে সম্পর্কে ছিল সে ছিল খুনি।তার আগের পক্ষের বউকে সে খুন করে।এতে অবশ্য আতিকের মায়ের কোনো যোগসূত্র ছিল না।কিন্তু আতিকের আর ওর ভাইয়ের খুনের ব্যাপার টা নিয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না এতে তাদের মায়ের হাত আছে কিনা!ওই লোকটা সেদিন আতিকের গাড়ি টা এক্সিডেন্ট করায়।জানা যায় উনি এখন আমেরিকায় পলাতক আছে।এদিকে আতিকের মাকে চিকিৎসার জন্যে তার ভাইয়েরা আমেরিকায় পাঠিয়েছে।এবার বাকি হিসেব আপনি মিলিয়ে নিন মুহু।
” আপনি জানলেন কি করে এত খবর?
“আনান বলল।গোয়েন্দা পুলিশ হয়তো বিষয় টা খতিয়ে দেখছে।কোনো ইনফরমেশন দরকার হলে তারা আপনার কাছেও আসতে পারে মুহু।
” আসুক।কিছু জানার থাকলে তাদের অবশ্যই বলবো আমি।তবে আতিকের মাকে বড্ড বেশি ভালো ভেবেছিলাম।ভদ্র মহিলা দিব্যি অভিনয় জানেন দেখছি!
“হুম।অতিরিক্ত কোনো ইনফরমেশন দেওয়ার দরকার নেই মুহু।আপনি যা জানেন এবং যতটুকু বলার সাধ্য থাকে ততটুকুই বলবেন।আপনি একজন বুদ্ধিমতী মেয়ে আশা করি আমার কথা বুঝতে পেরেছেন।
” জ্বী।
চলবে………
#মেঘবতীর_শহরে
পর্ব-৩৭
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
,
,
ব্যস্ত শহর তার ব্যস্ততম রাস্তা!সূর্য টা যেন খানিক নেমে এসেছে আরও কাছে।অসহ্যকর গরম পরেছে।চারিদিকে গাড়ির হর্ন বেজে চলেছে অনবরত।ওড়না দিয়ে বারংবার কপালের ঘাম মুছছে মুহতাসনিম।একটা টিউশনি থেকে টাকা নিয়েছে এটা এখন বিকাশে মুনা কে পাঠাবে।বাকি টিউশনিটা থেকে যে টাকা পাবে এ মাসের খরচ বাবদ মিনা খালার হাতে তুলে দিবে।
~~~
খাবার টেবিলে বসে মুহতাসনিমের ব্যপারে কথা উঠালো শায়লা বেগম।বাকি সবাই নিশ্চুপ খাচ্ছে।মিনা খালা রান্না ঘর থেকে কান খাড়া করে শুনছেন শায়লা বেগম কি বলে।
“মেয়েটাকে দেখলাম সকালে জাহিনের রুম থেকে বের হতে।ওখানেই শুয়েছিল নাকি?
খাবার চিবুতে চিবুতে বলে নবনী,
” হ্যাঁ ভাবী।
শায়লা বেগমের চোখে মুখে যেন খানিক বিরক্তিই ফুটে উঠেছে।কাঠ গলায় বললেন তিনি,
“আজকে তো রাফসা আর আনান ওদের বাড়ি থেকে ফিরবে।মেয়েটাকে এভাবে জাহিনের রুমে ঘুরঘুর করতে দেখলে রাফসা কি ভাববে?
নবনী মনে মনে এটাই ভেবেছিল মুহতাসনিমের থাকা নিয়ে ফের জামেলা করবে ভাবী।মায়ের জন্যে কিছু বলতেও পারে না নবনী।নয়তো কবেই এ বাড়ি ছেড়ে দিয়ে চলে যেত।তার ছেলের যতেষ্ট সামর্থ আছে মা,বউ নিয়ে নতুন ফ্ল্যাট কিনে থাকার।জাহিন বেশ কয়েকবার বলেছেও নবনী নিজেই নিষেধ করেছে।পাশ থেকে রেহানা বেগম বলেন,
” জাহিনের বিয়া করা বউ।বাইরের মাইয়া তো আর তার ঘরে যায় নাই।কথা ছিল বিয়া পর্যন্ত কেউ জানবো না।এখন তো বিয়া শ্যাষ!তাইলে এটা নিয়া আবার কথা উঠে ক্যান?
রেহানা বেগমের কথায় সবাই নিশ্চুপ হয়ে যায়।শাশুড়ির মুখের উপর তর্ক করার সাধ্য নেই শায়লা বেগমের।তিনিই এখন ঘরের কর্তী।তার কথাই শেষ কথা হিসেবে গন্য হয়।
মিনা বেগম পানির জগ নিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,
“আমার দুইদিনের ছুটি লাগবো ম্যাডাম।দেশে যাইতে হইবো দরকারি কাজে।
মিনা বেগম খুব প্রয়োজন না হলে ছুটি নেন না।ভাই বোনদের জন্যেই তার দেশের বাড়ি যাওয়া হয়।এ ছাড়া তো আর কোনো পিছুটান নেই।বিনাবাক্য সবাই রাজি হয়ে যায় ছুটির জন্যে।বিকেলেই রওনা হবে মিনা বেগম।সিদ্ধান্ত টা হঠাৎ করেই নেওয়া।খুব যে দরকার এ মুহূর্তে তার যাওয়ার।
~~~
ক্লান্ত শরীরে বিকেল বেলা বাড়ি ফেরে মুহতাসনিম।ততক্ষণে তৈরি হয়ে বসে আছে মিনা।কেবল মুহতাসনিমের থেকে বিদায় নেওয়ার জন্যে।
” এতক্ষণে তোর আসার সময় হইলো?আমি দেশে যাইতাছি দুইদিন পর আসমু।খেয়াল রাখিস নিজের।
ক্লান্ত মুহুর সারা মুখ জু্ড়ে এখন বিষন্নতার ছাপ!এই শহরে মিনা খালা ছাড়া আপন বলতে কাউকে পায়নি।তার অসহায় মুহূর্তে মিনা খালা পাশে না দাঁড়ালে মুহুর ঠিকানা আজ ঠিক কোথায় হতো জানা নেই!বাড়ির কথা শুনেও মন টা আকুপাকু করছে!নিজের চেনা ছোট্ট শহর টা কি আর কখনও দেখা হবে মুহতাসনিমের?ভাবতেই ভেতর টা হুহু করে উঠে!
“কোনো দরকার খালা?হঠাৎই যাবে বলছো?
” হ,অনেক হিসাব বাকি আছে।সে জন্যি যাচ্ছি।
“কিসের হিসেব খালা?
“বাকিটা ফিরাই বলবো।
” আচ্ছা।
নিশ্চুপ মুহতাসনিম কেবল মিনার যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে।পরক্ষণে এসে ক্লান্ত শরীর টা খাটে এলিয়ে চোখ বোজে।
~~~
নবনী বেশ কয়েকবার ছেলের ফোনে কল দিয়েছেন।ব্যস্ত বলে হয়তো ছেলেটা ফোনটা দেখারও সুযোগ পাচ্ছে না!এসব ভাবনার মাঝেই জাহিনের কল আসে।তড়িঘড়ি করে রিসিভ করে নবনী।
“হ্যাঁ মামণি বলো?
” তোর ব্যস্ততা মাঝে মাঝে সত্যিই বিরক্ত ধরায়!যাক এখন কি তুই ফ্রী আছিস?
“হ্যাঁ বলো?
সোজাসাপ্টা বলে উঠে নবনী,
” তুই সম্পর্কের ভিত্তি বিশ্বাস করিস না।তাহলে মুহতাসনিম কে কেন বিয়ে করেছিস?কষ্ট দিতে?কি সুখ পাচ্ছিস মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে?
মায়ের কথায় স্তব্ধ হয়ে যায় জাহিন।এ তো বেশ আগের কথা!ওসবে এখন জাহিন মাথা ঘামায় না!মুহতাসনিমের সাথে সম্পর্কে জড়ানোর পর থেকে নতুন করে বিশ্বাস জন্মেছে তার!তবে এতদিনে এই কথা কেন উঠবে?শান্ত গলায় বলে জাহিন,
“মুহু কি কিছু বলেছে তোমায়?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে নবনী,
” হুম।তুই নিজেই নাকি বলেছিস!
অবাক হয়ে বলে জাহিন,
“সে তো অনেক আগে!আতিকের সাথে যখন মুহুর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তখন আমি উনাকে নিষেধ করি!কেন জানি আমার মনে হচ্ছিল এই বিয়ে করলে মুহুও সুখ পাবে না!বারংবার আমি নিষেধ করেছিলাম।বলেছিলাম ভেবে দেখতে তার জীবন নিয়ে।কারো জীবন এতটাও ঠুনকো নয় যে আরেক জন এসে সম্পর্কের দায় গছিয়ে দিয়ে চলে যাবে!
ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে নবনী,
” মেয়েটাকে তুই ভালোবাসিস জাহিন।আর সে ভালোবাসাটা ভিন্ন ভাবে প্রকাশ পেয়ে গেল!যেটা মুহতাসনিম এর মনে উল্টো বিরূপ প্রভাব ফেলেছে!সারাটা জীবন এই মেয়ে তোকে নিয়ে সংশয়ে ভুগবে!
“মুহুর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে আমি তাকে একই কথা বলতাম মা মণি।জীবন নিয়ে আরও একবার ভাবতে বলতাম।
“তবে এখন সংসার নামক সম্পর্কে জড়িয়ে নিজেকে বোকা প্রমাণ করলি না?চুই চাসনি সেই তুই’ই আবার সংসারের মায়া জালে আটকে পরলি!
” না মামণি।মুহুই সেদিন আমাকে বুঝিয়েছেন সম্পর্ক মানে কি।একটা সম্পর্ক অতটাও ঠুনকো নয়।তার পরে হুট করেই আমি মুহুর সাথে বিয়ে নামক সম্পর্কে জড়িয়ে যাই!
“তারমানে বলতে চাচ্ছিস তুই মুহতাসনিম কে ভালোবাসিস না?ওর জায়গায় যে কেউ এটা বোঝালে তুই ওকেই বিয়ে করে নিতিস?
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে জাহিন,
“মায়া” মুহুতে আমি মায়ায় আবদ্ধ মামণি!চাইলেই মায়া কাটানো যায় না!এরপর বাকিটা আমি আর ভাবিনি।আদৌ আমি উনাকে ভালোবাসি কিনা জানি না।তবে এটুকু বলতে পারবো আমি এই মায়া কাটিয়ে কখনই মুহুর থেকে আলাদা হতে পারবো না।এতটুকু বিশ্বাস নিজের প্রতি আছে।
নিশ্চুপ নবনী ছেলের কথা শুনে যাচ্ছেন।সত্যিই তো যেখানে মায়ার জন্ম হয় না সেটা আবার ভালোবাসা নাকি?ভালোবাসার চেয়েও তীব্র শক্তিশালী হচ্ছে মায়া!যে একবার মায়ায় বশবতী হয় সে জানে কেবল কেটে আসা কতটা দায়!নির্বিকার বলে নবনী,
“মেয়েটা তোর উপর রেগে আছে জাহিন।তীব্র অভিমান বলতে পারিস।
ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে আসে জাহিনের।সে তো এমন কিছুই করেনি!তবে?
” কেন মামণি?
“কালকে আতিকের কথা বলার পর মেয়েটার মনটা বড্ড ভার ছিল!একটু কি শান্তনা পাওনা ছিল না তোর কাছে?এখন তো মেয়েটার মনে হবে বেঁচে থাকলে আতিকের কাছেই সে ভালোবাসা,সুখ সবই পেত!
বোকা বনে যায় জাহিন।সে কেবল নিজ স্বার্থটা দেখেছে।ভেতরের প্রতিহিংসায় নিজেই অভিমানের পাহাড় তুলে বসে আছে।অপর দিকের ব্যাক্তিটার কথা কি একটু ভাবান্তর হয়েছে তার?ছোট্ট করে কেবল বলে জাহিন,
” রাখছি মা মণি।
চলবে…….
#মেঘবতীর_শহরে
পর্ব-৩৮
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
,
,
নয়ন বলে তারে দেখি,
মন সেথায় আগলে রাখি,
একটুখানি আড়াল হইলে,
মায়া জন্মে হৃদয় ছুঁইলে!
ফোনের স্ক্রিনে মুতাসনিমের ছবির দিকে তাকিয়ে কথাগুলো আউড়ে যাচ্ছে জাহিন।আপন মনে বলে যাচ্ছে,আমি যে অভিমান বুঝি না মেঘবতী!ভালোবাসা টাও ঠিকঠাক ভাবে হয়না আমাকে দিয়ে!বড্ড হেয়ালিপনা আমি।আপনাকেই যে যত্নসহকারে ভালোবাসা শেখাতে হবে আমায়!আমি শুধু একরাশ মায়া নিয়ে তাকিয়ে থাকবো।একবুক মায়া নিয়ে আপনাকে আগলে রাখবো!এক আকাশ মায়া নিয়ে আপনাকে ধরে রাখবো!এর বেশি যে সাধ্য নেই আমার!বিনিময়ে ভালোবাসার সাগরে ভাসাবেন আপনি!এক জীবনে এইটুকুই তো চাওয়া!
~~~
রাতের নির্জন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মুহতাসনিম।আজকে আর জাহিনের রুমে তার যাওয়ার হয়নি।রাফসা এসেছে বাসায়।মূলত এই কারনেই যাওয়া হয়নি।নবনী অবশ্য কয়েকবার ডেকেছে।চিলেকোঠায়ই থাকবে জানায় মুহতাসনিম।
আকাশে আজ মেঘ জমেছে!বিশাল বড় বড় ভাসমান মেঘের ভেলা!বিদঘুটে অন্ধকার আকাশ!বিদ্যুৎ চমকে হুংকার দিয়ে উঠছে যেন আকাশ!মনের মধ্যে বিন্দু মাত্র ভয় নেই মুহতাসনিমের।রুমের লাইট বন্ধ করে জানালার ধারে বসে আছে।জোড় বেগে বাতাস বইছে!চোখ বুজে কেবল বসে আছে মুহতাসনিম।আচমকা দরজায় টোকার শব্দ হয়।ভাবনার রাজ্যে থেকে বেরিয়ে আসে মুহতাসনিম।মনের ভ্রম মনে হয়।পরক্ষণে সিউর হতে জিগ্যেস করে,
“কে?
ওপাশ থেকে ছোট্ট একটা ডাক আসে।
” মুহু?
শব্দ টা ঠাহর করতে বেশ খানিকক্ষণ সময় লাগলো মুহতাসনিমের।নিজের কান কে বিশ্বাস হচ্ছে না কয়েক সেকেন্ডের জন্যে।সত্যিই কি সে জাহিনের কন্ঠস্বর পেল?এত রাতে ডাক্তার আসবে কি করে?সে তো হসপিটালে!আকাশ গর্জন দিয়ে উঠে!ভাবনার রেশ কাটে মুহতাসনিমের।গলাটা কেমন শুকনো শুকনো লাগছে।নিশ্চিত হতে আবারও জিগ্যেস করে মুহতাসনিম,
“বাহিরে কে?
কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে বলে জাহিন,
” আমি জাহিন।
মুহূর্তেই পায়ের তলা শিরশির করে উঠে!জানালা গলে আসা তীব্র বাতাসের তোড় সর্বাঙ্গে কাটার মতো বিধে!খোলা চুল গুলো হাত খোপা করে এগিয়ে যায় মুহতাসনিম।খট করে খুলে দেয় দরজাটা।
শুভ্র টি-শার্ট গায়ে জড়ানো জাহিন ট্রাউজারের পকেটে হাত পুরো দাঁড়িয়ে আছে।সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মুহতাসনিম কয়েকটা ফাঁকা ঢোক গিলে বলে,
“এত রাতে আপনি?
ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি জাহিনের।আবছা অন্ধকারে হয়তো মুহুর ভয়ার্ত চাহনিটা তার দৃষ্টিগোচর হয়নি!আচমকা বিদ্যুৎ চমকে জাহিনের মুখশ্রী উজ্জ্বল দীপ্তের মতো ফুটে উঠে!স্পষ্ট কেমন বাঁকা হাসি চোখে ধরা দেয় মুহতাসনিমের।মুহূর্তেই আকাশ চিরে জপজপিয়ে শুরু হয় বর্ষন!ভয়ার্ত মুহতাসনিম ঠায় দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে।
” আপনি কি ভয় পাচ্ছেন মুহু?আজকে না হয় আমার রুমে থাকতে পারতেন।
মুহূর্তেই ভয়ানক ভাবে আকাশ গর্জন দিয়ে উঠে!আচমকা সামনে থাকা জাহিনকে জাপটে ধরে মুহতাসনিম।চোখ জোড়া কুচকে বুজে থাকে!এতক্ষণ তো দিব্যি একা বসে ছিল কই তখন তো তার এত ভয় করেনি!এই মুহূর্তে নিজেকে প্রচন্ড দূর্বল মনে হচ্ছে মুহতাসনিমের।পা দুটি অবশের মতো লাগছে।হৃদপিণ্ড দ্রুতগতিতে উঠানামা করছে!পাশে থাকা আরও একজনের হৃদপিণ্ড গতিও যে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে মুহতাসনিম!দুজনের মাঝে সুতো পরিমাণ দুরত্ব টুকু নেই!চারিদিকে কেবল মেঘের প্রতিধ্বনি!
মৃদু শব্দে বার কয়েক মুহতাসনিম কে ডাকে জাহিন।সে শব্দ বুঝি কান অব্ধি পৌছায়নি মুহতাসনিমের।অনেকটা জোরপূর্বক মুহতাসনিমকে ছাড়িয়ে দাড় করায় জাহিন।লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।এমন টা করা তার মোটেও উচিৎ হয়নি।অবশ্য ইচ্ছাকৃত তো কিছু করেনি মুহতাসনিম।
“জানালা টা লাগিয়ে দিন মুহু।খাটের পাশ টা ভিজে যাচ্ছে।
সম্ভিৎ ফিরতেই দ্রুত গিয়ে জানালা আটকে দেয় মুহতাসনিম।ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে যায় পুরো রুম।লাইট অন করতেই মুহতাসনিম খেয়াল করে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই!জাহিন ঠায় বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছে।চারিদিকে কেবলই অন্ধকার!শান্ত গলায় বলে জাহিন,
” নিচে যাবেন মুহু?আমার রুমে অন্ধকার নেই!
ছোট্ট করে কেবল বলে মুহতাসনিম।
“আপনি রুমে চলে যান।এখানে অন্ধকার।
ছোট্ট একটা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে জাহিন,
” থেকে যাওয়া জন্যে আসিনি মুহু।আমি চলেই যাবো।
এই মুহূর্তে জাহিনকে কি বলা উচিৎ?লোকটা কি তাকে কিছু বলতে এসেছে?এত রাতে হুট করেই বা কেন এলো?অযাচিত কত প্রশ্ন ঘুরপাক খায় মাথায়!
“আপনি আমার উপর অভিমান করে আছেন তাই না মুহু?
জাহিনের কথায় দফায় দফায় অবাক হয় মুহতাসনিম।লোকটা এত রাতে কি এই পাগলের প্রলাপ পারতেই এসেছে?সোজা প্রশ্ন ছোড়ে মুহতাসনিম,
” আপনি কি কিছু বলতে এসেছেন ডাক্তার সাহেব?এত রাতেই বা কোথা থেকে আসলেন আপনি?
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে জাহিন,
“সব প্রশ্নের উত্তর দিবো।তার আগে বলুন আপনি কি অভিমান করে আছেন আমার উপর?
চুপ করে আছে মুহতাসনিম।সে সত্যিই তো অভিমান করে আছে।কেউ অভিমান করলেই কি সোজা বলতে পারে? ” আমি আপনার উপর অভিমান করেছি”ছোট্ট করে কেবল ‘না’ বলে।
“আপনি আমার উপর অভিমান করেছেন মুহু।আসলে আমি বুঝতে পারিনি।ফোনে কিভাবে আপনার অভিমান ভাঙ্গাবো বুঝতে পারছিলাম না।হয়তো উল্টো আপনার রাগ আরও বেড়ে যেতে পারে।হাতে কেবল কয়েকটা ঘন্টার সময় পেতেই আমি ছুটে এসেছি।মা মণিও জানে না আমি এখন বাসায়।
বাইরের বৃষ্টির ছাট জাহিনকে ভিজিয়ে দিচ্ছে।সে দিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই!খেয়াল হতেই মুহতাসনিম বলে,
” আপনি তো ভিজে যাচ্ছেন!
সেসব কথা কানে না নিয়ে বলে জাহিন,
“স্যরি মুহু।আপনার অভিমান কি এখনো আছে?
জাহিনের বোকা কথায় হাসি পায় মুহতাসনিমের।লোকটাকে একদম রক্তে মাংসে গড়া একটা রোবট মনে হয়!দুদিকে মাথা নাড়িয়ে ‘নাবোধক’ বোঝায় মুহতাসনিম।সত্যিই এই মুহূর্তে তার একটুও অভিমান নেই।
বৃষ্টির ছাট আর ঠান্ডা বাতাস নাকে লাগতেই হাঁচি উঠে জাহিনের।টনকনড়ে মুহতাসনিমের!ব্যস্ত হয়ে হাত টেনে এনে রুমের মধ্যে দাঁড় করায় জাহিনকে।
অবাক জাহিন কেবল নিশ্চুপ হয়ে মুহুর কান্ড দেখছে।গাঁ থেকে ওড়না নিতে গিয়ে খেয়াল হয় মুহতাসনিমের, সে বিনা ওড়নাতেই দাঁড়িয়ে ছিল এতক্ষণ!মুহূর্তে অন্ধকার রুমে হাতড়ে খুজতে থাকে ওড়নাটা!ঘুটঘুটে অন্ধকার রুমে কেবল মুহুর গাঁয়ের মেয়েলি সুভাসে মোহিত হয়ে আছে।
” কি খুঁজছেন মুহু?
ততক্ষণে আরও একবার বিকট শব্দে আকাশ গর্জে উঠে।দু কান চেপে চিৎকার করে উঠে মুহতাসনিম।খানিকটা ভরকে গিয়েছিল জাহিনও!
এলোমেলো পা ফেলে এগিয়ে এসে মুহতাসনিম কে কোলে তুলে নেয় জাহিন।ঘটনার আকস্মিকতায় নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে মুহতাসনিম।কি করছে জাহিন?
চিলেকোঠার রুম পেরিয়ে সিড়ির কাছাকাছি চলে আসি জাহিন।মুহুকে নিয়ে নামতে থাকে নিচে।পাল্টা আর প্রশ্ন করতে পারে না মুহতাসনিম।হয়ত অবাকতার রেশ তার কাটেইনি!
জাহিনের রুমে এসে মুহতাসনিম কে নামিয়ে দেয় জাহিন।নির্বিঘ্নে বলে,
“আপনি খুব ভয় পাচ্ছিলেন মুহু।বার বার আকাশ গর্জন দিয়ে উঠছিল!বাধ্য হয়ে আমার রুমে নিয়ে এলাম।আপনি আসতে চাইছিলেন না।
টিমটিম করে একটা ডিম লাইট জ্বলছে জাহিনের রুমে।আশপাশ টা একবার তাকিয়ে প্রশ্ন ছোড়ে মুহতাসনিম,
“আপনি আর কতক্ষণ থাকবেন?
ঘড়িতে চোখ বুলায় জাহিন।পরক্ষণে বলে,
” ভোড় পাঁচটা নাগাদ চলে যাবো।
মুহতাসনিম বুঝতে পারে জাহিনের হাতে আরও বেশ খানিকটা সময় আছে।পুনরায় শান্ত গলায় প্রশ্ন করে জাহিন,
“আপনার কি ঘুম পেয়েছে মুহু?
” না।আপনার তোয়ালে টা কোথায়?
জাহিন তোয়ালে টা দেখিয়ে দিতেই জটপট তোয়ালে হাতে এগিয়ে আসে মুহতাসনিম।জাহিনকে বলে এবার মাথাটা মুছে নিন।টি-শার্টের দিকে তাকিয়ে বলে জাহিন।
“ওয়েট আগে টি-শার্ট চেইঞ্জ করে আসি।ভিজে গেছি একদম।
~~~
তোয়ালে হাতে দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।ফিরে এসে চুপচাপ খাটে বসে জাহিন।মুহতাসনিমকে বলে তার মাথা টা মুছে দেওয়ার জন্যে।
খানিকটা ইতস্তত ভাব নিয়েই মুছে দিতে থাকে মুহতাসনিম।একমুহূর্তের জন্যে জাহিনের ইচ্ছে হয় মুহুকে আষ্টেপৃষ্টে বুকের সাথে জড়িয়ে নিতে!মুহুর শরীরের তীব্র মেয়েলি সুভাস টা যেন পাগলের মতো টানছে জাহিনকে!এরুপ অনুভূতি স্বীকার আগে কখনও হয়নি জাহিন!মাথা মোছা শেষ হলেই তোয়ালে টা আগের জায়গায় মেলে আসে মুহতাসনিম।ফিরে আসতেই জাহিন বলে,
” আপনার সাথে খানিকক্ষণ গল্প করবো মুহু।আপনার আপত্তি আছে?
“আপত্তি কেন থাকবে?আপনার তো কালকে কাজ আছে।একটু না হয় ঘুমিয়ে নিন।ভালো লাগবে।
পূর্ণ দৃষ্টি মেলে মুহতাসনিমের দিকে তাকায় জাহিন।পরক্ষণে বলে,
“ঘুম আসবে না মুহু।আপনি যতক্ষণ কাছে থাকবেন আমি চাইলেও দু চোখের পাতা এক করতে পারবো না।
কথার প্রসঙ্গ পাল্টায় মুহতাসনিম,
” এত রাতে কেবল আমার অভিমান ভাঙ্গাতেই ছুটে আসা আপনার?
“হুম
” কেন?আমার অভিমানে এত কি যায় আসতো?পরে কল করেই বলতে পারতেন।
ডিম লাইটের আলোয় কেবল মুহুর দিকে স্থির দৃষ্টি রাখে জাহিন।চোখ দুটো ভীষণ মায়াবী মুহুর!ঘন আঁখি পল্লব!আর চিকন অধরযুগল নাড়িয়ে যখন কথা বলে মুহতাসনিম তখন জাহিনের ইচ্ছে করে অনন্ত কাল এভাবে তাকিয়ে থাকুক!অজানা এক মায়া তখন পুরোপুরি গ্রাস করে নেয়!
হঠাৎ খেয়াল হতেই জাহিন দেখে গলা তার ভিষণ কাঠ কাঠ লাগছে!উঠে আলমিরার কাছে যায় জাহিন।কিছু একটা প্যাকেট বের করে এনে মুহতাসনিমের হাতে দেয়।
“এখানে একটা শাড়ি আছে।শাড়িতে আপনাকে ভিষণ সুন্দর লাগে মুহু।
চলবে……..