মেঘবতীর_শহরে,পর্ব-৩৯,৪০,৪১

0
625

#মেঘবতীর_শহরে,পর্ব-৩৯,৪০,৪১
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
৩৯
,

মুহতাসনিম বুঝতে পারছে না জাহিন কি তাকে এখন শাড়িটা পড়তে বলছে নাকি?লোকটার মতিগতি তো আর সহজে বোঝা যায় না।পাল্টা আর জিগ্যেস করে না মুহতাসনিম।

~~~

খোলা বারান্দা থেকে বাতাস ভেসে আসছে।পুনরায় মুহুতে দৃষ্টি আটকে রয় জাহিনের।এত কেন ঘোর কাজ করে মুহুকে কাছ থেকে দেখলে?তখন নিজের কাছেই নিজের অস্তিত্বকে অচেনা লাগে!

আচমকা’ই হাত ধরে মুহতাসনিমকে কাছে দাঁড় করায় জাহিন।এক হাত পেচিয়ে স্পর্শ করে মুহুর কটিদেশ।নিশ্চুপ মুহু কেবল জাহিনের চোখের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে!কি চাইছে এই মুহূর্তে জাহিন?কাটা কাটা শব্দে বলে জাহিন,

” মুহু আমি আপনাকে ভালোবাসতে চাই!

চমকে উঠে মুহু!ভালোবাসতে চায় বলতে কি বোঝালো জাহিন?কন্ঠে যেন তার আকুলতা!গভীর ভাবে অন্তরের ভীত নাড়িয়ে দেয়!সবটাই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে মুহতাসনিমের।এই মুহূর্তে জাহিনের মনে থাকা কোনো সুপ্ত বাসনা থাকলেও মুহতাসনিম তা পূরনে প্রস্তুত নয়!খানিকটা ভয়’ও উঁকি দেয় মনে।এই যে হুট করেই লোকটা কেমন কাছে টেনে নিলো এতেও রাজ্যের অসস্থি এসে ভর করেছে গাঁয়ে!

ধীরে ধীরে মুহতাসনিমকে ছেড়ে দাঁড়ায় জাহিন।মাঝে মাঝে নিজেকে বড্ড অচেনা লাগে জাহিনের।অনুভূতি,আবেগ কে দিব্যি উপেক্ষা করে এসেছে এই অব্ধি!কতশত মেয়ের আবেগমাখা আবেদন পেছনে ফেলে এসেছে সঠিক হিসেব নেই!সব ভাবনা কে দূরে ঠেলে স্বাভাবিক হয় জাহিন।একটু আগে যেন কিছুই হয়নি!স্বাভাবিক ভাবেই বলে,

“বারান্দায় চলুন মুহু বৃষ্টি দেখবো!

বলেই বারান্দায় চলে যায় জাহিন।অগত্যা পিছু যায় মুহতাসনিম।এখনও জপজপ বৃষ্টি পড়ছে।যতদূর চোখ যায় কেবল কুয়াশার মতো বৃষ্টিপাত!কান যতদূর শুনতে পায় শুধুই বৃষ্টির জল তরঙ্গ!ছোট্ট একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে জাহিন,

” আতিকের সাথে থাকলে আপনি খুব সুখি হতেন মুহু।আতিক ভালোবাসা,সম্পর্কের মূল্য শুধু বোঝেই না বরং অনেক ভালোভাবেই বোঝে!সম্পর্কের টানাপোড়েনের মাঝেই বেড়ে উঠেছে আতিক।

মুহতাসনিম বুঝতে পারলো না হঠাৎ এ কথা কেন বলছে জাহিন?সে কি আতিকের সম্পর্কে আরও কিছু জানতে পারলো?নিজ গতিতে বলে যাচ্ছে জাহিন,

“আতিকের বাবার সাথে বিয়ে হওয়ার আগেই ওই লোকটার সাথে আতিকের মায়ের সম্পর্ক ছিল।ভদ্রমহিলার বাবা এই সম্পর্কে রাজি ছিলেন না বিধায় আতিকের বাবার সাথে ওনার বিয়ে দেয়।বিয়ের কয়েক বছর পর সেই পুরোনো প্রেমিকের সাথেই আবার সম্পর্কে জড়ান ভদ্রমহিলা।ততদিনে আতিক ছিল তিন বছরের শিশু।

ছোট্ট একটা শ্বাস নিয়ে পুনরায় বলে জাহিন,

“আতিফ কিন্তু আতিকের আপন ভাই নয়।সেটা ভদ্রমহিলার পরকিয়ার ফল!এতকিছুর পরেও আতিকের বাবা কিন্তু কিছু বলেনি।চুপচাপ সহ্য করে গেছেন।কারণ তিনি আতিকের মাকে ভিষণ ভালোবাসতেন।হয়তো চেয়েছেন সম্পর্ক টা টিকে থাকুক সারাজীবন।প্রকৃত পক্ষে তিনিও কিন্তু ব্যর্থদের তালিকাভুক্ত ছিলেন!তবুও কোথাও তিনি স্বার্থক ছিলেন।আপনার কথা অনুযায়ী’ই কিন্তু বললাম মুহু।একটা জিনিস কি জানেন মুহু?কেউ একটা মাত্র একটা কারণ খুঁজে থেকে যাওয়ার জন্যে আর কেউ কোনো কারণ ছাড়াই ছেড়ে চলে যায়!এবার বলুন,আপনার কি মনে হয় না,ভালো না বেসে কোনো সম্পর্কে যাওয়া উচিৎ নয়?যেমনটা করেছেন আতিকের মা।ভালোবেসেছেন একজন কে আর সম্পর্কে জড়িয়েছেন আরেক জনের সাথে!

বেশ ভাবনায় পরলো মুহতাসনিম।পরক্ষণে বলল,

” একবার কাউকে ভালোবাসলে দ্বিতীয় বার যে কাউকে ভালোবাসা যায় না এটা ভুল।আতিকের বাবাকেও তিনি ভালোবেসে সুখি হতে পারতেন।ভাগ্যে হয়তো সে লোকটি ছিল না।এখন তো দুজনকেই ঠকানো হলো!আতিকের বাবার সাথে তিনি সুখি হলে ওই লোকটাও দিনশেষে বউ নিয়ে সুখি হতো!এখন তো ওই লোকটার ওয়াইফের মৃত্যুর জন্যে আতিকের মা’ই দায়ী!

“হয়তো।ভালোবাসা,সম্পর্ক বলতে এসব কিছুই নেই।প্রকৃত পক্ষে যে যার কাছে শান্তি পায় কেবল তার কাছেই ছোটে!স্বীয় স্বার্থ সবাই দেখে।মানুষ নিজের দিকটাই কেবল বিবেচনা করে সুখের খোঁজে ছোটে।এসব ভালোবাসা আসলে নামে!মূল্যহীন,ভিত্তিহীন সম্পর্ক!

” আমি বুঝলাম না আপনি সব কিছু এভাবে কেন ভাবেন?জগতে কি আরও মানুষ সম্পর্কে নেই?অনেক,অনেক সুখি দম্পতি আছে।তাদের দেখুন উদাহরণ সরূপ!

“সম্পর্ক খুব সুন্দর মুহু আবার এই সম্পর্কই খুব ভয়ানক!সব সম্পর্কের নাম সুন্দর হয় না।যেমন টা আতিকের মায়ের। দেখুন মুহু,আতিক তার জীবণ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে যে শিক্ষা পেয়েছে তার মতে, এক তরফা ভালোবেসেও স্বার্থক হওয়া যায়।ব্যর্থ হলেও অনেক সময় জিতে যাওয়া যায়!আর আমার ক্ষেত্রে হয়তো শিক্ষাটা অন্যরকম ছিল মুহু!আমার অতীতের অভিজ্ঞতা হয়তো ভিন্ন কিছুও ছিল!যার কারনে সম্পর্ক,ভালোবাসার কোনো ভিত্তি নেই আমার কাছে!একটা মানুষ একটা মানুষকে ভালোবেসেও ছেড়ে যেতে পারে মুহু।তবে মায়া কখনও কাটানো যায় না!সকল কিছুর উর্ধ্বে হলো “মায়া” আপনি ভালোবাসা উপেক্ষা করতে পারবেন কিন্ত মায়া উপেক্ষার সাধ্য নেই!

মুহতাসনিম বেশ বুঝতে পারে জাহিনের অতীত টা ভালো নয়।তবে কি জাহিন আগে কারো সাথে সম্পর্কে গিয়েছিল?কেউ কি খুব বাজে ভাবে ঠকিয়েছে জাহিনকে?নাকি বিশ্বাস ভেঙ্গে চূর্নবিচূর্ন করে দিয়েছে?আদৌ কি স্বাভাবিক আছে জাহিন?সবটাই যে জানতে হবে মুহতাসনিম কে।

“আপনার অতীতে কি এমন হয়েছিল ডাক্তার?যার কারণে এমন ভাবনা আপনার?

রুমে থাকা ঘড়িটার দিকে একপলক তাকায় জাহিন।পরক্ষণে বলে,

” আজ আর সময় নেই মুহু।আপনি অবশ্যই একদিন আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন।প্রক্ষান্তরে আমার কথাগুলোও একটু ভেবে দেখবেন আমি কিছু ভুল বলেছি কিনা।

~~~

নৈশবেলার তৃতীয় প্রহরেই নিশ্চুপ বিদায় নিয়ে প্রস্থান করে জাহিন।অযাচিত অনেক প্রশ্নের নিরুত্তর রেখে যায় মুহতাসনিমের জন্যে।খোলা বারান্দায় দূর দৃষ্টি পড়তেই খেয়াল করে মুহতাসনিম,অন্ধকারে কালো রঙা গাড়িটি সাই করে ছুটে যাচ্ছে!

বৃষ্টির তেজ কমেছে সেই কখন।ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।আকাশ ঘোলাটে হয়ে আবছা সাদায় আবৃত হচ্ছে!ভোর হবার প্রস্তুতি!নিরবে হেটে জাহিনের খাটে গিয়ে শুয়ে পরে মুহতাসনিম।মুহূর্তেই চোখ জোড়ায় রাজ্যের ঘুম এসে ভর করে!

~~~

জানালা গলে তীব্র রোদের আলো চোখে মুখে লাগতেই ধরফরিয়ে উঠে বসে মুহতাসনিম।হাসি মুখ নিয়ে জানালার পর্দা খুলে দিচ্ছে নবনী।চোখ ডলে একবার ঘড়ির দিকে তাকায় মুহতাসনিম।সকাল দশটা বেজে গেছে!আরেকটু দেরি হলেই যে টিউশনি টা মিস যাবে তার!তরাৎ করে খাট থেকে নেমে দাঁড়ায়।

“কালকে কখন আসলি জাহিনের রুমে?তুই না বললি নিচে থাকবি না!অবশ্য মিনা খালা নেই ভয়ে নিশ্চয়ই নিচে চলে এসেছিস?আমাকে ডাকতে পারতি তো!

অনর্গল নিজের মতো করে বলে যাচ্ছে নবনী।তাড়া নিয়ে দরজার দিকে ছুটতে ছুটতে বলে মুহতাসনিম,

” ভোর বেলায় এসেছি।দেরি হয়ে যাচ্ছে আসছি মা।

রুম থেকে বেরুতেই রাফসার মুখোমুখি হয় মুহতাসনিম।ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে রাফসা!মুহতাসনিমের মুখে স্পষ্ট মা ডাকটা তার কর্নকূহরে পৌছেছে!তার উপর জাহিনের রুম থেকে এত বেলা করে বেরিয়েছে মুহতাসনিম!গায়ে ওড়না পর্যন্ত নেই!

স্তব্ধ হয়ে রাফসার মুখোপানে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে’ই হন্তদন্ত হয়ে চিলেকোঠার রুমের দিকে রওনা হয় মুহতাসনিম।অত কিছু ভাববার যে সময় নেই তার!

চলবে…….

#মেঘবতীর_শহরে
পর্ব-৪০
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
,
,

সারারাত বৃষ্টির পর সকালটা অনেকটা ঝকঝকে!তার উপর কোমল রোদের আলো!চিলেকোঠার রুমে এসে জটপট তৈরি হয়ে নেয় মুহতাসনিম।টিউশনি কোনোমতেই মিস দেওয়া সম্ভব নয়।

দরজায় দাঁড়িয়ে হাতে খাবার নিয়ে মুহতাসনিম কে ডাকে নবনী।কড়া আদেশের সুরে বলে,

“তোর তারা আছে বেশ বুঝতে পারছি।তবুও এই খাবার টা এখন শেষ করে যাবি।

অসহায়ের মতো তাকায় মুহতাসনিম।আদেশ অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই বোঝা যাচ্ছে।বিনা বাক্যে খাবার খাওয়ার জন্যে তাকে রাজি হতে হবে।মাথা কাত করে সায় জানায় মুহতাসনিম।তারমানে সে খাবার টা এখন খাবে।

প্রসস্থ ওষ্ঠে হাসে নবনী।পরক্ষণে এগিয়ে এসে নিজ হাতে খাইয়ে দেয়।হিজাব বাঁধায় ব্যস্ত মুহতাসনিম।স্থির দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে নবনী।মেয়েটার মুখখানি সত্যি বড্ড মায়া মাখানো!চোখের নিচে গাঢ় করে কাজল টেনে নেয় মুহতাসনিম।পরক্ষণে বিদায় নিয়ে চলে যায়।

~~~

মুখের সামনে খবরের কাগজ নিয়ে বেলকনিতে বসে আছে আনান।পাশে ধোঁয়া উঠা কফির মগ।রাফসা প্রশ্নবিদ্ধ চোখে খানিকক্ষণ আনানের দিকে তাকিয়ে রইল।পরক্ষণে আমতা আমতা করে বলল,

” একটা কথা জানার ছিল আনান।

নির্বিকার ভাবে বলে আনান,

“একটা কেন আমার বউ এর হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দিতেও আমি সদা প্রস্তুত!

” ওই মেয়েটা মানে আতিক ভাইয়ার সাথে যে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল ওকে দেখলাম এলোমেলো অবস্থায় জাহিন ভাইয়ার রুম থেকে বেরুতে।

তাৎক্ষণিক খবরের কাগজ টা সাইড করে রাখে আনান।শুকনো একটা ঢোক গিলে বলে,

“জাহিন তো বাসায় নেই তাই না?

” ভাইয়া তো হসপিটালে।তুমিই না বললে?বুঝলাম না এই মেয়ে ভাইয়ার রুমে কেন?তার চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো নবনী ফুপিকে মা বলে সম্মোধন করেছে!

খুব সতর্কতার সাথে প্রশ্ন করে আনান।পাছে যদি রাফসা কিছু টের পেয়ে যায়!

“এই বিষয় টা মাকে জানিয়েছো?

” না।রান্নাঘর থেকে কফি হাতে সোজা এখানে চলে আসলাম।

“আরে তোমাকে বলেছিলাম না মিনা আন্টির ভাগ্নি?মেয়েটার বাবা,মা কেউ নেই!তাই ফুপিকে মা ডাকে।বলতে পারো ফুপির পার্সোনাল কেয়ারটেকার।আর ফুপিকে তো চেনোই কতটুকু দয়ালু!

” তা তো বুঝলাম।তাই বলে ভাইয়ার রুম থেকে বের হবে?গায়ের জামাকাপড়ও পর্যন্ত ঠিক ছিল না!এ বিষয় টা ভাবার মতোই আনান।

“আরে জাহিন কি রুমে ছিল নাকি?বাদ দাও তো এসব কথা।

বলতে বলতে উঠে দাঁড়ায় আনান।হাত ধরে রাফসা কে কাছে টেনে নেয়।সামনের কাটা চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বলে,

“কি বলো তো রাফু আমার না অফিসে যেতেই ইচ্ছে করছে না তোমাকে রেখে!বাবার নিজেরই অফিস তাও এত কম ছুটি কেন দিলো বলো তো?

লজ্জায় মুখ নামিয়ে বলে রাফসা,

” নিজেদের অফিসে আবার ছুটি হয় নাকি?এটা দায়িত্বের মধ্যে পরে।তুমি যতদিন অফিস মিস দিবে ততদিন ক্ষতি টা তোমার’ই হবে।

চট করেই বলে আনান,

“ঠিক বলেছো আমার অফিস আমি যখন ইচ্ছে ছুটি নেবো!ক্ষতি হলে আমিই পুষিয়ে নেবো!কিন্তু এই যে এখনকার সময়ের ক্ষতিটা আমি আজন্মও পোষাতে পারবো না রাফু!

চোখ গোলগোল করে তাকায় রাফসা।পরক্ষণে প্রশ্ন ছোড়ে,

” মানে কি আজকে অফিস যাবে না?

দুদিকে মাথা নাড়ায় আনান।পরক্ষণে রাফসাকে কোলে তুলে নেয়!নামার জন্যে বৃথা চেষ্টা করতে থাকে রাফসা।গুনগুন করে গান গাইতে থাকে আনান,

‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন
‘কপোলের কালো তিল পরবে চোখে
‘ফুটবে যখন ফুল বকুল শাখে
‘ভোমর যে এসেছিলো জানবে লোকে!

~~~

কাল থেকে একবারও কল করেনি জাহিন।অথচ দিনে একবার হলেও মাকে কল করে।বিচলিত হয়ে ছেলেকে কয়েকবার কল করে নবনী।ছেলে তার এতটাও ব্যস্ত থাকার কথা নয়!সাতবারের মাথায় কল রিসিভ করে জাহিন।ওপাশ থেকে ঘুমন্ত ভাঙা আওয়াজ!

“হ্যাঁ মামণি বলো?

অবাক হয়ে বলে নবনী,

” তুই কি ঘুমোচ্ছিস জাহিন?

“হু,মামণি।

ঘড়িতে একপলক তাকালো নবনী।পরক্ষণে বলে,

” এখন দুপুর দুটো বাজে!এই অবেলায় ঘুমোচ্ছিস বাবা?শরীর ঠিক আছে তো?

আশ্বস্ত কন্ঠে বলে জাহিন,

“আমি ঠিক আছি মা মণি।ঘুমের খানিক ব্যাঘাত ঘটেছিল তাই সময় পেতেই একটু ঘুমোচ্ছিলাম।

” আচ্ছা তবে ঘুমা।ডিস্টার্ব করে ফেললাম আমি।

“না মা মণি আমি এখনই ওঠতাম।

” আচ্ছা রাখছি।

“হুম।

~~~

দুপুরের তপ্ত রোদ টা কখন কমে গেছে।বিকেলে কেবল নরম একফালি রোদ।রাস্তার সাইড দিয়ে হাটছে মুহতাসনিম।ক্লান্ত শরীর টা শেষ বেলায় আর চলতে চায় না।হাটার মাঝেই হুট করে বাম পায়ের জুতাটা ছিড়ে যায়!তীব্র বিরক্ত নিয়ে পায়ের কাছে তাকায় মুহতাসনিম।একে তো পিচঢালা রাস্তা থেকে উত্তপ্ত তাপ আসছে তার মধ্যে এই এক জোড়া জুতোই অবশিষ্ট ছিল!

হাতে এই মাসে পর্যাপ্ত টাকাও নেই এক জোড়া জুতো কেনার।ফুস করে দম ছেড়ে জুতা জোড়া রাস্তায় ফেলে হাটা শুরু করে মুহতাসনিম।সামনে রিকশা পেতেই উঠে বসে।চলন্ত রিকশায় উঠলে বাতাসে কেমন গাঁ শীতল হয়ে এক রকম প্রশান্তি বিরাজ করে!লম্বা লম্বা করে দম নেয় মুহতাসনিম।

~~~

মিনা বেগমের অনুপস্থিতিতে বিপত্তি ঘটলো বাসার কাজ নিয়ে।টুকটাক সবার কাজ সবাইকেই করতে হচ্ছে।

বাসায় ফিরতেই মুহতাসনিমের মনে হলে নবনীকে বলে যাক আজ নিজেই রান্না করে খাবে।অসুস্থ শরীর নিয়ে কষ্ট করে রান্না করেন ভদ্রমহিলা।অবশ্য ওদের ফ্ল্যাটে তো এক প্রকার যাওয়াই নিষেধ মুহতাসনিমের।নয়তো নবনীর সব কাজ মুহতাসনিম করে দিতো অনায়াসে

শত ভাবনার মাঝে কলিং বেল চেপে দাঁড়িয়ে থাকে মুহতাসনিম।কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে রাফসা এসে দরজা খুলে দেয়।মুহতাসনিমকে দেখে যেন বেশ খুশিই মনে হলো রাফসাকে।

সামনে রাফসাকে দেখে অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় পরেছে মুহতাসনিম।ততক্ষণে মুহতাসনিম কে টেনে ভেতরে নিয়ে আসে রাফসা।এরুপ আচরনে বেশ অবাক হয় মুহতাসনিম।তৎক্ষনাৎ প্রশ্ন ছোড়ে রাফসা,

“সারাদিন কোথায় ছিলে শুনি?চিলেকোঠার রুমে কয়েকবার যাওয়ার পরেও তো পেলাম না।জব টব করো নাকি?

মৃদু আওয়াজে কেবল বলল মুহতাসনিম,

” টিউশনি করাই।

রাফসার কথায় দফায় দফায় চমকে উঠে মুহতাসনিম।রাফসা তার অপেক্ষায় ছিল!কিন্তু কেন?মুহতাসনিমের ভাবনার মাঝেই বলে রাফসা,

“তোমার আন্টি মানে মিনা আন্টির তো আসতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।আমার আর আনানের কাপড় জমেছে কতগুলো।তুমি না হয় কেঁচে দাও।আমি কখনও এসব কাপড় কাঁচিনি!আর দুদিন আগেই ম্যানিকিউর করা হয়েছে।এখন কাপড় ধুলে হাতের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।তুমি চিন্তা করো না তোমাকে এক্সট্রা বকশিস দিবো।

রাফসার কথায় প্রচন্ড রকমের আহত হয় মুহতাসনিম।একে তো এই বাড়িতে তার কোনো সম্মান নেই!তার উপর এখন বাড়ির কাজগুলোও তার করতে হবে?কি বলে প্রতিবাদ করবে মুহতাসনিম?বারংবার চোখ জোড়া নবনীকে খুঁজে চলছে।

ততক্ষণে মুহতাসনিমকে টেনে আনানের রুমে নিয়ে আসে রাফসা।বাইরের রুমে আসতেই বিষয়টা দৃষ্টিগোচর হয় না নবনীর।মুহূর্তেই তাদের পিছু রাফসার রুমে চলে আসে নবনী।রাফসা একগাদা নোংরা কাপড় মুহতাসনিমের হাতে ধরিয়ে দিতেই বলে নবনী,

” এগুলো মুহতাসনিমে কেন দিচ্ছো রাফসা?

মুখে হাসি টেনে বলে রাফসা,

“ধোঁয়ার জন্যে ফুপি।ওর আন্টি নেই তাই ওকে বলেছিলাম।সমস্যা নেই আমি ওকে আলাদা করে টাকা দিয়ে দিবো।

রাগত্ব দৃষ্টিতে তাকায় নবনী।অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।ব্যাপার টা তার জন্যে ভীষণ রকম লজ্জাজনক!একে তো এই বাড়িতে তার কোনো সম্মান নেই!কাঠ গলায় বলল নবনী,

” তুমি তো যতেষ্ট শিক্ষিতা রাফসা।একজন মেয়েকে হুটহাট টেনে এনে কাজ গছিয়ে দিচ্ছো!আদৌ এটার যোগ্য সে কিনা একবার বিবেচনা করবে না?তোমার শিক্ষিত বিবেক কি বলে?যে মেয়েটা টিউশনি করায় সে কি করে লোকের বাড়ির কাজ করবে?তাহলে তো সে এই পেশাটাই বেছে নিতো!

কাচুমাচু ভঙ্গিতে বলে রাফসা,

“আসলে ফুপি ওর আন্টিও তো এই পেশায়ই আছেন।আর কোনো কাজ তো ছোট নয়।

” তেমনি নিজের কাজও নিজে করতে হয় রাফসা।এটা ভুলে গেলে কি করে হবে?

“এসব কাপড় ধুঁয়ে অভ্যস্ত নই আমি।আর একদিন কাপড় কাঁচলে কিছু হবে না এতে ওর গাঁয়ে কাজের লোকের ট্যাগ পরে যাবে না।হ্যাঁ আপনি ওকে খুব ভালোবাসেন মানছি।

সহসা ভঙ্গির নবনীর রাগ তীব্রতর হয়।ভুল করেছে এটা স্বীকার না করে কেমন মুখে মুখে তর্ক জুড়ে দিয়েছে রাফসা!শান্ত আর সাবলিল ভাবেই বলল নবনী,

” আমার ছেলের বউ কে আমি এসব কাজ করতে দিবো না রাফসা।

চলবে……..

#মেঘবতীর_শহরে
পর্ব-৪১
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
,
,

নবনীর কথায় একমুহূর্তের জন্যে থমকে রইল রাফসা!সে সঠিক শুনেছে তো!নিশ্চিত হতে পুনরায় জিগ্যেস করে রাফসা,

“কি বললেন ফুপি?

শান্ত গলায় বলে নবনী,

” আমার জাহিনের বউ কে দিয়ে আমি কাজের লোকের কাজ কেন করাবো?তুমি যেমন এ বাড়ির বউ তেমনি মুহতাসনিমও এ বাড়িরই বউ।

রাফসার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম!এত বড় একটি সত্যি কিভাবে তার অজানা!সকালে আনানকে বলা শর্তেও একটিবার সেও বলল না!মাথা কেমন ভঁনভঁন করতে লাগলো রাফসার।ততক্ষণে মুহতাসনিমের হাত ধরে রুম থেকে বেরিয়ে আসে নবনী।

নবনীর এরুপ আচরণে ভেতর থেকে অনেকটা খুশি হয় মুহতাসনিম।তার সব অপমানের জবাব যেন ছিল এটা!ক্লান্ত মুহতাসনিম বিষন্ন গলায় বলল,

“মা আমি উপরে যাবো এখন।ফ্রেস হতে হবে আমায়।

চোখেমুখে অপরাধী ভাব!চরম অনুতপ্ত নিয়ে বলে নবনী,

” তুই খুব কষ্ট পেয়েছিস তাই না?

ওষ্ঠ ছড়িয়ে হাসে মুহতাসনিম।অপর হাত টা নবনীর হাতের উপর রেখে বলে,

“একটুও যে পাইনি তা বলবো না।তবে এখন একটুও কষ্ট নেই।

মুহতাসনিমের কথায় আশ্বস্ত হয় নবনী।মাথায় খানিক হাত ভুলিয়ে উপরে পাঠিয়ে দেয় মুহতাসনিমকে।যাওয়ার আগে সে জানিয়ে যায় আজকে নিজেই রান্না করবে আর নবনীনেও বলে চিলেকোঠায় গিয়ে ডিনার করতে।খুশি মনে রাজি হয়ে যায় নবনী।

~~~

নৈশবেলার নিকষ কালো অন্ধকারে বেলকনির আলো নিভিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাফসা।আজকেও আকাশে মেঘ করেছে বেশ!অযাচিত কতশত প্রশ্ন মনে উঁকিঝুঁকি করছে।কিছুতেই কোনো হিসেব মেলাতে পারছে না!হঠাৎই আনানের অস্তিত্ব অনুভব করে রাফসা।পেছন থেকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে।কোনো হেলদোল নেই রাফসার।জড়ানো কন্ঠে বলে আনান,

” রাফুর কি মন খারাপ আজ?

তড়িৎ গতিতে প্রশ্ন ছোড়ে রাফসা,

“তুমিও আমায় মিথ্যে বললে আনান?

চমকে উঠে আনান।দ্রুততার সাথে রাফসাকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে,

” কি নিয়ে মিথ্যে বললাম তোমায়?

ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাফসা।পরক্ষণে বলে,

“সকালে তোমাকে কতশত প্রশ্ন করলাম একটা বারের জন্যে বললে না মুহতাসনিম যে জাহিন ভাইয়ার বউ!

রাফসার কথায় আরও এক দফা চমকে উঠে আনান।এই গোপন কথার খোঁজ সে কি করে পেল?আমতা আমতা করে বলে আনান,

” আসলে বিয়ে টা সে ভাবে হয়নি মানে লোক জানানোর মতো।তুমি কি করে পেলে এ খবর?

ঘুরে দাঁড়ায় রাফসা।আনানের চোখে চোখ রেখে বলে,

“হোক যেভাবে!বিয়ে তো আর সামান্য ব্যপার নয়।এত বড় কথা টা লুকিয়ে গেলে কি করে,?

” আরে এই বিয়ের কোনো মূল্য আছে নাকি?দয়া করে ওই মেয়েকে বিয়ে করেছে জাহিন।আদৌ ওদের সংসার টিকে কিনা কে জানে।এসব সম্পর্কের মারপ্যাচ জাহিন কখনই পছন্দ করতো না।এবার ভাবো সে কি করে সম্পর্কে জড়ালো?

“সাধারণ কথা এত কেন প্যাচাচ্ছো বুঝতে পারছি না।যাই হোক এই মেয়েটার তো তোমার বন্ধু আতিকের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল?তবে তার মৃত্যুর পর জাহিন ভাইয়ার সাথেই বা কবে বিয়ে হলো?

ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলে আনান,

” আতিকের মৃত্যুর পরদিনই জাহিনের বিয়ে হয়।মেয়েটা মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পরেছিল।বাধ্য হয়ে জাহিন বিয়ে করে নেয়।সেদিন আমরা কেউ উপস্থিত ছিলাম না ওর বিয়েতে।শুধু দাদু মণি ছিল।করুণা করেছে জাহিন।

মৃদু শব্দ করে হাসে রাফসা।

“এত বোকার মতো কেন কথা বলো আনান।নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে তো আর কেউ কাওকে দয়া,করুনা করবে না।আচ্ছা ভাইয়া যেন কোন বিভাগে আছে?

” নিউরোলজি বিভাগে।

“আর মুহতাসনিম মেয়েটা?ওর সম্পর্কে কতখানি জানো তোমরা?

ফের ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে আনান,

” কিছুই না।আদৌ বাবা,মা আছে কিনা কে জানে।পড়াশোনা টাও অত না!

“এরকম একটা মেয়ে যে কিনা ভাইয়ার যোগ্যর ধারের কাছেও না!আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আনান।এ বিষয়ে বলার মতো উত্তর তার কাছে নেই।পিনপতন নিরবতার পর বলে রাফসা,

” একটা কথা জিগ্যেস করি আনান?বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক নিবে।আমি শুধু জানার জন্যে জিগ্যেস করবো।

“হুম বলো?

” জাহিন ভাইয়ার কি দাদু বাড়ি নেই?তারা তোমাদের এখানে পরে আছে যে?দাদু মণি কি সবার সম্পত্তির ভাগ বুঝিয়ে দিয়ে দিয়েছে?

কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে আনান,

“দাদু মণির ইচ্ছাতেই থাকে এখানে।সম্পত্তি ভাগ করতে চাইলেও ফুপি কখনও রাজি হয়নি।বলেছে সবটাই বাবার।অন্য কোথাও থাকলে তো সারাক্ষণ একা থাকতে হতো ফুপিকে।আর জাহিন তো মাসে,সপ্তাহে আসে।আর এবাড়ির খরচ বেশিরভাগই জাহিন দেয়।বাবা অনেক নিষেধ করে তবুও ফুপি মানে না।নিজের মতো করে খরচ করে সংসারে।আলাদা বাসায় উঠার এবিলিটি তাদের আছে।বলতে পারো পিছু টানে পরে আছে।

কথা শেষ করেই বলে আনান,

” প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে রাফু।সেই কখন ফিরেছি।খাবার দিবে চলো।

“হু,

~~~

আজকে সকাল সকাল জেগেছে মুহতাসনিম।কালকে রাতে তারাতাড়ি ঘুম চলে এসেছিল।নবনী অনেক বলা শর্তেও জাহিনের রুমে যায়নি মুহতাসনিম।রাফসার বলা কথা গুলো বার বার মনে পরেছে।ও বাড়ির সব লোক নিশ্চয়ই ঝেকে ধরতো তাকে।এমনিতে তাদের আচার,ব্যবহার মোটেও ভালো লাগে না মুহতাসনিমের।

তৈরি হয়ে বের হবার আগ মুহূর্তে খেয়াল হয় অবশিষ্ট আর জুতা নেই তার কাছে!মিনা খালার জুতা তার পায়ে ঠিকঠাক হয় না।হাতে এই মুহূর্তে টাকাও নেই নতুন জোড়া কেনার।ধপ করে খাটে বসে পরে মুহতাসনিম।চোখে মুখে বিরক্তি!

পরক্ষণে নিচে এসে কলিং বেল চাপে মুহতাসনিম।কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে দরজা খুলে দেয় নবনী।হাফ ছেড়ে বাঁচে মুহতাসনিম।হাসি মুখ নিয়ে বলে নবনী,

” কিরে সকালের খাবার খেয়েছিস?

“হুম খাওয়া হয়েছে।

” এখনি চলে যাচ্ছিস?

মাথা নাড়িয়ে হুম বলে মুহতাসনিম।হাত জোড়া পেটের কাছে নিয়ে কচলাতে থাকে।ইতস্তত ভাব সারা মুখ জুড়ে!বিষয়টা খেয়াল হতেই বলে নবনী,

“কিছু বলবি?

” হুম।মানে আপনার এক জোড়া জুতো হবে?পুরোনো হলেই হবে।

চট করে মুহতাসনিমের পায়ের দিকে তাকায় নবনী।নগ্ন পায়ে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা।উদাস কন্ঠে বলে নবনী,

“ছেলেটা আমার বড্ড হেয়ালিপনা!তার বউ এর কখন কি লাগবে সে দিকে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই।সত্যিই আমি লজ্জিত।

নবনীর কথা মুহতাসনিমকে আরও অস্বস্তিতে ফেলছে।ছেড়া জুতো জোড়ার উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।আর কয়েকটা দিন পর ছিঁড়লে কি হতো!

ততক্ষণে নবনী গিয়ে একজোড়া জুতো এনে দেয়।সেটা পায়ে পরতেই মুহতাসনিম খেয়াল করে তার পায়ের মাপ মতো হয়নি।পায়ের পেছন দিকটা কিছুটা বের হয়ে আছে।ছোট্ট একটা তপ্ত শ্বাস ছাড়ে মুহতাসনিম।পরক্ষণে হাসি মুখ নিয়েই বলে,

” এতেই হবে।

গটগট করে চলে যায় মুহতাসনিম।ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে নবনী।মেয়েটাকে বড্ড অদ্ভুত লাগে!অল্পতেই কেমন তুষ্ট!ফোনের শব্দ হতেই ঘোর কাটে নবনীর।দৌড়ে রুমের দিকে ছোটে।যা আন্দাজ করেছিল তা’ই,জাহিন কল করেছে।কিঞ্চিৎ রেগে আছে নবনী।তবুও ফোনটা রিসিভ করে।ওপাশ থেকে শান্ত পুরুষালী কন্ঠ ধীর ভাবে বলে,

“কি করছো মা মণি?

” মুহতাসনিম কে বিদায় দিয়ে আসলাম।

কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে জাহিন,

“মুহু কি টিউশনি তে চলে গেছে?

কথার প্রসঙ্গ পাল্টে বলে নবনী,

” এত বেখেয়ালি হলে কি করে হয় জাহিন?

মায়ের কথা বুঝতে না পেরে বলে জাহিন,

“কি ব্যাপারে মা মণি?

“মেয়েটা কখন খায় কখন কোথায় যায়,কি অবস্থায় আছে আদৌ কি জানতে চাস তুই?বিয়ে নামক সম্পর্কে শুধু জড়ালেই হয় না তার সাথে অপর মানুষটার দায়িত্ব নিতে হয়।সুখ,দুঃখ সবটা ভাগ হয় তখন।এত ব্যস্ততা দিয়ে জীবন চলে না জাহিন।

মায়ের কথার প্রতিত্তোরে কি বলবে জাহিন?মুহুর সাথে এখনও জড়তা কাটাতে পারেনি ভালো করে।তেমন ভাবে তো মেয়েটার খোঁজটাও নেওয়া হয় না!সময় দেওয়া তো বহু দূরে!এ নিয়ে আবার অভিযোগ করে বসেনি তো মেয়েটা!

” কি হয়েছে মা মণি?

সহসা ভঙ্গিতেই বলে নবনী,

“মেয়েটা আজ পুরোনো এক জোড়া জুতো চাইতে এসেছে আমার কাছে।আমি খুব লজ্জায় পরেছিলাম তখন।আমি তো ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি তুই যে মেয়েটার প্রতি এত উদাসীন!তাহলে তার কখন কি লাগবে সবটা দায়িত্ব আমিই নিতাম।নামেই স্বামী হয়ে থাক তুই।

চুপ করে আছে জাহিন।এখন পর্যন্ত মুহু কে কিছুই দেওয়া হয়নি তার।মেয়েটার চরম আত্মসম্মান বোধ।কখনও তো কিছু চায়ওনি!

” চুপ করে আছিস যে এখন?বলার ভাষা নেই?এখন অব্ধি মেয়েটাকে “আপনি” থেকে “তুমি” তেই সম্মোধন করতে পারলি না!এত কিসের দূরত্ব জাহিন? মা,হলেও বিষয়টা আমি জানতে চাই।

খানিক নিরবতা নিয়ে বলে জাহিন,

“বিয়ে হুট করে হয়েছে মা মণি।আদৌ মুহু এ বিয়েতে রাজি ছিল নাকি আমার জানা নেই।উনিও আমায় সম্পূর্ণ রূপে চায় কিনা সেটা নিশ্চিত হতে হবে।তবেই এই দূরত্ব ঘুচবে।

ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে নবনী,

“বিয়ের সময় মেয়েটাকে কিছুই দিতে পারিনি আমি।তোর বাবা যা কিছু দিয়েছিল তা আমি পুনরায় ফিরিয়ে দিয়ে এসেছি।তোর নানুমণি যা দিয়েছে সেগুলো মায়ের কাছেই আছে।দরকার পরেনি তাই চাইওনি।আমি চাই মুহতাসনিম কে নিয়ে হানিমুনে যা তুই।তার সম্পূর্ণ খরচ আমার।

আবারও খানিক নিরবতা।পরক্ষণে বলে জাহিন,

” তুমি মুহুকে জানাও মা মণি।তোমার ছেলের বউ রাজি থাকলে আমি অবশ্যই তার জন্যে সময় বের করবো।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here