মেঘমুখ,প্রথম পর্ব

0
1199

#মেঘমুখ,প্রথম পর্ব
#লেখনীতে সবুজ আহম্মদ মুরসালিন

অপেক্ষা!
পৃথিবীর সবচে’ সুন্দরতম অনুভূতির নাম অপেক্ষা! অপেক্ষার সময়গুলো আমাদের কাছে খুব দীর্ঘ মনে হয়। তবে খুব প্রিয় মানুষটার জন্য অপেক্ষা করার মধ্যে যেমন অস্থিরতা আছে, তেমন অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি আছে। ভালো-লাগা আছে। এটা আমার চেয়ে বেশী হয়তো কেউ জানে না।

এই মুহুর্তে আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং আমার সবচে’ প্রিয় একটা মানুষের মেসেজে আসার অপেক্ষা করছি। দীর্ঘ চেষ্টার ফলাফল কি হবে সেটা জানার অপেক্ষায় আছি। এই অনুভূতিটুকু অব্যক্ত।

এই মানুষটাকে আমি খুব পছন্দ করি। খুব বলতে অনেকটা পছন্দ করি এবং সেটা অনেকদিন ধরেই। আমাদের ফেসবুকে বন্ধুত্ব। তবে বন্ধু বলতে সে শুধু আমার ফ্রেন্ড লিস্টে পড়ে আছে। এখন পর্যন্ত প্রথম মেসেজটা কেউ কাউকেই দেয় নি। আমার মধ্যে কেমন একটা দ্বিধা, ভয় কাজ করছে। এই জন্য আমি চাইলেও আগে মেসেজ দিতে পারি নি।

আমাদের কমেন্টে টুকটাক কথা হয়। কিন্তু ওটা কমেন্ট পর্যন্তই। সেটা কখনো মেসেজে পর্যন্ত আগায় না। মেসেজে কথা বলা হয় না। এটা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছে। অনেক ভেবে চিনতে আমি একটা পদক্ষেপ নিয়েছি যে কারণে সে অবশ্যই আমাকে মেসেজ দিবে। সেই জন্যই এখন তার মেসেজের অপেক্ষা করছি। আমি নিশ্চিত সে আমার মেসেজের উত্তর দিবে।

ওহ হ্যাঁ, সরি আমার পরিচয় দিতেই ভুলে গেছি।
আমি অভ্র। আপাতত এটুকু জানলেই হবে। ধীরে ধীরে আমার পরিচয় এবং আমার ভালোবাসার গল্পটাও জানতে পারবেন। চলুন তার আগে কিছুদিন আগের ঘটনা আপনাদের জানাই।

কিছুদিন আগে!
একদিন হঠাৎ সন্ধ্যা বেলা ফেসবুকে নোটিফিকেশন এলো, ‘সেন্ড এ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট।’ একটা মেয়ের রিকোয়েস্ট ছিলো। আগেকার দিনে গৃহিণীরা যেমন করে তাদের অলংকার বড় ট্রাংকে তালাবন্দী করে চাবি কোমড়ে রেখে দিতো, আজকাল মেয়েরা ঠিক সে ভাবেই তালা-চাবি দিয়ে ফেসবুক লক করে রাখে। কিন্তু এই মেয়েটির প্রোফাইল আনলক করা ছিলো। প্রোফাইল দেখে রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলাম। প্রোফাইলে তার নিকনেম ছিলো, ‘বৃষ্টিমেঘা’। বায়ো’তে লেখা, ‘আকাশ ভালবাসি’।

আমিও আকাশ ভালবাসি। কারণ ছাড়া হুটহাট আকাশ দেখি। মন খারাপ থাকলে মেঘেদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দেই। আকাশের প্রতি আমার খুব দুর্বলতা। তাই-তো যে আকাশ ভালবাসে তাকে অপছন্দ করে কি থাকা যায়? আর যে আকাশ ভালবাসতে পারে না সে কোন কিছুই ভালবাসতে পারে না।

বেশ কিছুদিন কেটে গেলো৷ আমাদের কথা হলো না। মেয়েটা কিছুদিন পরপরই ছবি আপলোড করে। ছবিগুলো ভীষণ সুন্দর। দেখা মাত্রই ইচ্ছার বিরুদ্ধে লাভ রিয়েক্ট দেওয়া হয়ে যায়। হয়তো বা মন আগে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলো লাভ রিয়েক্ট দেওয়ার জন্য। স্টোরিতে শেয়ার করা পিকেও সেম লাভ রিয়েক্ট। কালো টিপে মেয়েটাকে ভিষণ সুন্দর লাগে। কাজল ভর্তি চোখে ডুব দিতে ইচ্ছে করে। শাড়িতে সম্পূর্ণ বাঙালি বঁধুর মত লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয়, হয়তো সে কোনো এক স্বপ্নের রাজ্য থেকে টুপ করে নেমে এসেছে এই ভূখন্ডে। নয়-তো সাদামেঘের রাজ্য থেকে এই শহরে এসেছে। কেনো এসেছে সে? আমায় কিছু দুঃখ দিতে? আসুক, সে যদি দুঃখ দিতে আসে, তবে সে আসুক। কিছু দুঃখ দিয়ে যাক৷ তবুও চাই সে কাছে আসুক।

মেয়েটার পোস্টের কমেন্টে আমাদের কথা হতো মাঝেমধ্যে। কিন্তু সেটা এমন, “ছবিটা সুন্দর। সে রিপ্লাই দিতো, ধন্যবাদ।” তারপর টুকটাক কথা হতো কমেন্ট বক্সেই।
সে কখনো নিজ থেকে মেসেজ দেয় না। এদিকে আমার মেসেজ দিতে সাহস হয় না। আমি কিন্তু এতো ভীতু না। কিন্তু কেনো জানি মনে হচ্ছিলো, আকাশ’কে দূর থেকে দেখতে হয়, তাকে দূর থেকে ভালবাসতে হয়। ছুঁতে চাইলে কষ্ট পেতে হয়।” তাই হয়তো, দু’মুঠো স্বপ্নকে ছুঁতে খুব ভয়। ভয় থেকে মেসেজ দেওয়া হয়ে উঠে না। কিন্তু মেয়েটা কি একবার নিজ থেকে আমাকে মেসেজ দিতে পারে না? একবার শুধু ছোট একটা মেসেজ ‘হাই’ পর্যন্ত দিতে পারে না? মেয়েটা এমন কেনো? নাকি এই ক্ষুদ্র আমিটা তার কাছে ধুলিকনার মত। এই ক্ষুদ্র আমিটা সমুদ্রের মধ্যে এক বিন্দু শিশিরে মত। যার মূল্য সমদ্রের কাছে কিছুই না।

রাতে ঘুম হয় না৷ মেয়েটা আমার ভাবনার জগৎ সম্পূর্ণ দখল করে রাখে৷ জীবনে সব কিছু এলোমেলো করে সে তার মত আছে। অনেক ভেবে হঠাৎ একটা বুদ্ধি এলো মাথায়। বুদ্ধি মত কাজ করে ঘুমিয়ে গেলাম।

এইতো তখন থেকে আমার অপেক্ষা শুরু!

সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। কোন মেসেজ আসেনি। সকাল কেটে দুপুর হয়ে গেলো। অপেক্ষার সময় আর শেষ হয়না। ঠিক বিকালে মেসেজ এলো, ‘আপনি আমার ৫টা পিকে হাহা রিয়েক্ট দিয়েছেন কেনো? আমি দেখতে কি এতো খারাপ? না কি আমাকে দেখে হাসি পায় আপনার?’

আমি তো মেসেজ পেয়ে খুশিতে সব কিছু ভুলে লাফিয়ে উঠলাম। স্বপ্নের মানুষের মেসেজ এসেছে এই ভেবে রুমের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলাম। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি।

আমি লিখলাম, ‘আপনার সাথে কথা বলার খুব ইচ্ছে। আপনাকে কখনো মেসেজ দিতে সাহস করে উঠতে পারি না। তাই অনেক ভেবে হা হা রিয়েক্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে আপনি রাগ করে হলেও আমাকে একটিবার মেসেজ দেন৷’

মেয়েটা লিখলো, ‘আমি কি ভাল্লুক, নাকি ভয় পাবার মত কনো অদ্ভুত প্রাণী? জানেন, আপনাকে রিকোয়েস্ট দেওয়ার পর থেকে প্রতিদিন আমিও আপনার আইডি খুলে অপেক্ষা করেছি। ভেবেছি এই বুঝি মেসেজ দিলেন। আপনিও কখনো দেন নি। আর এখন হা হা রিয়েক্ট?’

‘সরি, আসলে কথা শুরু করার জন্য এমনটা করেছি। রাগ করবেন না।’

এভাবেই আমাদের পরিচয়, প্রথম কথা বলা। হ্যাঁ, ফেসবুকেই আমাদের পরিচয় হয়। আমরা একে অন্যের ছবি দেখেই পছন্দ করে ফেলি। কিন্তু তখন সেটা কৌতুহল ছিলো, শুধুই একটা ভালো লাগা ছিলো। ভালোবাসাটা প্রথম দেখায় শুরু হয়। এই প্রথম আমি আমার মেঘকে খুব কাছ থেকে দেখি। আপনারাই বলেন, ভালোনাবেসে কি থাকা যায়?

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here