মেঘলা মন-৮,৯
তারানা তাসনুভা
(৮)
রাকিনের ডাকে নিচে নেমে দেখি সে সিড়ির পাশে দাঁড়িয়ে। আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। ওর হাসিতে আমার হৃদয় যে এফোড় ওফোড় হয় সেটা কি সে জানে?
• আসো তোমাকে রিসোর্টটা ঘুরে দেখাই
• তুমি আগে এসেছ?
• নাহ! সোহেল ভাইয়ের কাছে যা শুনেছি, আর নিজে এক চক্কর দিয়ে এসেছি
• আচ্ছা
• পঞ্চাশ বিঘা জমির উপর করা এই রিসোর্ট, চব্বিশটা থাকার কটেজ, দুটো কনফারেন্স হল, একটা কনভেনশন সেন্টার আছে।
• বাহ৷ অনেক কিছু দেখছি। অনেক খরচ নিশ্চয়ই।
• নাহ! এটা সোহেল ভাইয়ের অফিসের মালিকের রিসোর্ট। উনি অনেক কমে ভাড়া করেছেন।
প্রায় পুরো রিসোর্ট ঘুরে, শেষ প্রান্তে একটা দিঘি পেলাম। ফ্লাড লাইটের আলোয় ঝলমল করছে দিঘির পানি। কপোত-কপোতীরা ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে আছে দিঘির পাড়ের বেঞ্চে। গাছের গুড়ির আড়ালে চলছে অবিরাম ভালোবাসা ! রাকিন এবার যেন একটু লজ্জা পেল। কিন্তু সামলে নিয়ে বলল,
• নৌকায় চড়বে? পুরো দিঘিটা চক্কর দিয়ে আসি?
• হুম
আমি জবাব দিতে পারছিলাম না। স্বপ্নে কি খুব বেশি কথা বলা যায়? এ যেন আমার স্বপ্নের মুহূর্ত! একটু পরেই আমি জেগে উঠবো, মা চিৎকার করে গালাগাল করছে! কিন্তু না! তেমন কিছু হলো না।
রিপোর্টরে এক কর্মীর কাছ থেকে বোট নিল রাকিন৷ পানিতে দুলছে বোট। আমার একটু ভয় করছে। কারণ আমি সাতার জানিনা!
রাকিনের হাতটা চেপে ধরে মনে হলো, আমি মহাশুন্যে ভেসে বেড়াতে পারি! এই হাত ধরে! ও আমাকে সাবধানে বসিয়ে ধির গতিতে প্যাডেল করতে লাগলো।
• কল্পনা করে নাও, আকাশে শ’খানের ফানুস উড়ছে! রাকিনের কন্ঠে অদ্ভুত মাদকতা
• রঙ বেরঙের ফানুস উড়ছে আমার মনের ভেতর! আকাশে ওড়ার দরকার নেই!
• বাহ! দারুণ কথা বলো তুমি!
স্বপ্নিল চোখে আমি রাকিনকে দেখছি! আমার রাকিন! ফ্লাড লাইটের আলো ছায়ার খেলায় বেশ লাগছে। বড় বড় গাছের ছায়া অন্যরকম রহস্যময় করে তুলেছে জায়গাটা।
প্রায় আধঘন্টা আমরা দিঘিতে ঘুরপাক খেয়ে উঠলাম। এবার সোজা রাস্তা দিয়ে হেটে ফিরে গেলাম আমাদের কটেজে। সোহেল ভাইয়ের বন্ধুরা খুঁজছিল রাকিনকে। তাদের সাথে চলে গেল রাকিন। আমার মনে হলো , এভাবে কেন গেল? কিছু তো বলে যাবে! এত চমৎকার রাত! তাও আমার অভিমান কেন হচ্ছে? রাতের খাওয়া সেরে আমরা সবাই মিলে গান শুনছি। সোহেল ভাইয়ের এক বন্ধু গিটার বাজিয়ে গান করছেন। আমার দুই ভাই ফাহিম, ফুয়াদ এসে পাশে বসল। দুজনের মন মরা৷
• কিরে কি হলো তোদের?
• মায়ের সাথে জেদ করে এসেছি। এখন মায়ের জন্য খারাপ লাগছে।
• চাচাকে ফোন করব? এসে নিয়ে যাবে?
• এত রাতে, যদি বকে?
• বকলে বকা খাবি! আমি কল দিচ্ছি।
কল দেয়ার আধ ঘন্টার মধ্যে চাচা গাড়ি নিয়ে হাজির৷
• আমি তোর জন্যই নিশ্চিন্ত ছিলাম। ভাইদের ঠিক দেখে রাখবি!
আমি মনে মনে হাসলাম। আমি জানতামও না ওরা জেদ ধরেছে এখানে থাকার জন্য!
আমি আমার জন্য নির্ধারিত রুমে শুয়ে পড়লাম। মিনিট দশেক বাদে রাকিনের মেসেজ!
• স্যরি ভাইদের সামনে, বিদায় নিতে পারিনি।
• ঠিক আছে। কোন সমস্যা নেই। অনেক ধন্যবাদ। খুব চমৎকার সময় উপহার দেওয়ার জন্য।
• তুমি রাগ করেছ?
• রাগ করবো কেন?
উত্তর লিখে চোখ গড়িয়ে জল বালিশে পড়লো।
• বেশ নিচে নাম। ভাইয়া চমৎকার গান গাইছেন।
• আমার ঘুম পাচ্ছে, শুভ রাত্রি।
লিখে ফোন বন্ধ করে দিলাম। অনেক হয়েছে । ঘুমাতে হবে৷ কাল অনেক কাজ আছে।
আমার রুমের মেয়েগুলো কখন এসেছে জানিনা। আমার ঘুম ভাঙল ফজরের অনেক পরে । মেয়েগুলো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আমি নামাজ পড়ে বের হলাম। নাস্তার তদারকি করছে রাকিন। আমাকে দেখে ভাইদের সামনেই ছুটে এলো,
• গুড মর্নিং !
• গুড মর্নিং!
• এসো নাস্তা করবে।
• সবার সাথেই বসি।
• কাল রাতের জন্য আমি আবার স্যরি ।
• আচ্ছা ঠিক আছে ! আমি হেসে দিলাম। ও নিশ্চিন্তে দায়িত্ব পালন করতে চলে গেল।
আমি খেতে খেতে ভাবছি, যার জন্য আমার মনে এক সমুদ্র প্রেম ,তার মনে আমার জন্য কি?
দিনার শ্বশুরবাড়ি,
ফুলশয্যার রাত শেষে দিনার মনে অদ্ভুত প্রশান্তি। তাহমীদের কথা অনেক আগেই ভুলে গেছে। দাদী বলত, মেয়েরা যে পাত্রে রাখা হয়, তার আকার ধারণ করে। দুদিনেই সে সোহেলের আকার ধারণ করেছে!
রাতে মায়ের সাথে কথা হলেও বাবার সাথে কথা হয়নি। খুব কাঁদছিল বাবা। গাড়িতে ওঠার আগে বাবার দিকে তাকাতে পারেনি দিনা। কনেপক্ষের পরদিন আসার কথা। ওরা কতদূর সেটাও জানা দরকার। ফোনে বাবাকে না পেয়ে, রান্নাঘরে যাবে দিনা। আজকের দিনে শাশুড়ি একপদ রান্না করাবেন৷ মা এমনটাই বলেছেন। সেও প্রস্তুত। সে বের হতেই দুই ননাশ ( সোহেলের দুই বড় বোন)
ধরলো, ওকে তাদের ঘরে নিয়ে তুমুল আড্ডা শুরু। তাদের কথা রান্না পরেও হবে। আমাদের তো সবসময় পাবেনা। দিনার খুব ভালো লাগছে। নিজের বড় বোন ছিল না, বড় বোনের আদর শাসন কিছুই পায়নি সে!
ঘুম থেকে উঠে সোহেল দেখে, দিনা পাশে নেই। মফস্বলের মেয়ে! নির্ঘাত রান্নাঘরে চলে গেছে! উঠে ফ্রেস হয়ে দেখে দিনার ফোন পড়ে আছে ড্রেসিং টেবিলের উপর। তাতে ওর বাবার মিসড কল। সে সুযোগ পেয়ে গেল, বৌকে ঘরে ডাকার। বের হয়ে, বোনদের ঘর থেকে হাসির শব্দ পেল। বুঝলো দিনা ওখানেই আছে।
• সবাইকে রেস্ট হাউসে রেখে বর মশাই খুব আরাম করে বৌয়ের সাথে সময় কাটাচ্ছে! তাই না? বড় আপু বলেন
• আমার ভাইয়ের মাথায় যে এত বুদ্ধি আগে বুঝিনি। মেঝ আপু ফুট কাটেন
দুই বোনের রসিকতায় ভালোই লাগছে দিনার৷ বাবার মিসড কল শুনে সে ফোন করতে রুমে গেল। কিন্তু সোহেল কে আটকে দিল বোনেরা। হাসির শব্দ আসছে। নিজেদের বিরাট বাড়ি ছেড়ে এই ফ্ল্যাট খুব ছোট আর আটকা লাগছে। বিরাট বাড়ি, সামনে পিছনে খোলা জায়গা! হঠাৎই দিনা নিজের ঘর মিস করতে শুরু করে। বাবাকে ফোন জানতে পারে, রওনা দিতে একটু দেরি হয়েছে, সময়মত তারা পৌঁছে যাবে। অনুষ্ঠান তো রাতে সমস্যা নেই। দেরি কেন হলো? প্রশ্নটা মাথায় একবার এলেও করলো না দিনা।
নাস্তার ডাক এসেছে, সেও এগিয়ে গেল ডাইনিং রুমে।
তিমিরের কথা,
রাতে বিশাল আয়োজন। কমপক্ষে হাজার লোকের নিমন্ত্রণ! সোহেল ভাইয়ের অফিসের সবাই এসেছে, আত্মীয় বন্ধু, প্রতিবেশী কাউকে বাদ দেয়নি। দুপুরে রাকিন আমাকে দিনা আপুর শ্বশুরবাড়ি নিয়ে গেল। সেখান থেকে পার্লার, জীবনে প্রথম শাড়ি পরলাম তাও পার্লারে। দিনা আপুকে ভীষণ সুখি দেখাচ্ছে । বিয়ের সাজ খুব সময় সাপেক্ষ, আমার সাজ খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে, আমি বসে বসে ঝিমাচ্ছি। রাকিন মেসেজ দিল,
• আর কতক্ষন?
• জানিনা!
বিকালের আলোয় আমাদের দেখলো রাকিন। সে পার্লারের বাইরে গাড়ির কাছে অপেক্ষা করছিল। আমার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রাকিন। আমি সেই দৃষ্টিতেই যেন আবার ভেঙেচুরে প্রেমে পড়লাম।
মেয়েরা বোকা হয়? নাকি আমি একাই বোকা! বুঝিনা। রাকিন মেহমানদারী করে বেড়াচ্ছে আর আমার চোখ বুভুক্ষের মতো ও কে খুঁজে ফিরছে! অদ্ভুত এক সমীকরণ।
( চলবে)
মেঘলা মন ৯
চাচা চাচীকে কয়দিনেই খুব অসুস্থ দেখাচ্ছে। বিয়েতে চাপ গেছে। কিন্তু তাই বলে এই হাল কেন? দিশা আপু আসেনি। দিনা আপু প্রশ্ন করলেও চাচী উত্তর দেননি। তখনই বুঝেছি কোন সমস্যা আছে। ঢাকায় কয়দিন থাকার কথা থাকলেও, থাকা হলো না। রিসোর্ট থেকে সরাসরি বাড়ি ফিরছি। ভেবেছিলাম কি! আর হলো কি! রাকিনকে বলেছিলাম পুরো রাস্তা ওর পাশে বসে ফিরতে চাই। কিন্তু ফেরার বাসে আমার ফেরা হলো না। চাচা আমাকে সাথে নিয়ে যেতে চাইলেন। আমিও থাকার জন্য জেদ করলাম না। রাকিন থাকবে আরো দুই দিন। দিনা আপুরা হানিমুনে যাবে। তার প্রস্তুতির জন্য আমার থাকার কথা ছিল। হঠাৎ করেই যেন দিনার আপুর বিয়ের হাসি আনন্দে ভাটা পড়লো। তাও যতটুকু পেয়েছি, আমার জন্য অনেক। চাচী গাড়িতে উঠেই কান্না আরম্ভ করলেন। চাচার মুখ থমথমে। আমি কোন প্রশ্ন করার সাহস পেলাম না। বাড়ি ফিরে দেখি দিশা আপু বিছানা নিয়েছে । বৌভাতের দিন সকালে আপু অজ্ঞান হয়ে গেছিল। তাই চাচা,চাচীর যেতে দেরি হয়েছে। আপু খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, পানিও স্পর্শ করেনা। হাতে স্যালাইন ঝুলছে। আমি আপুর মাথার কাছে বসে আছি। চাচী তার ফোন এনে বললেন, তুইই কথা বল,
বাবার ফোন!
• আসসালামু আলাইকুম
• ওয়ালাইকুম আসসালাম। দিশা এখন কেমন আছে?
• আছে মোটামুটি
• দেখ মা। এরকম কিছু হবে সেটা তো আমি আগে জানতাম না। তোর চাচা, চাচী আমাকে দোষ দিয়ে যাচ্ছেন!
• সব ঠিক হয়ে যাবে
বলে ফোন রাখলাম। কথা বাড়াতে ইচ্ছে করেনি।
দাদীর কাছে বিস্তারিত শুনলাম,
বেচারি তার বড় ছেলের ঘরের বড় পৌত্রীর বৌভাতে যেতে পারল না দিশা আপুর জন্য। দিশা আপুর এমন নাওয়া খাওয়া বন্ধের কারণ হলো তাহমীদ ভাই। দুবাই পুলিশ উনাকে গ্রেফতার করেছে কোম্পানির টাকা আত্মসাৎ করার অপরাধে, বাবার চাকরিও নাকি হুমকির মুখে। আমার মাথায় মনে হলো বাজ পড়ল! দিশা আপুর কতটা কষ্ট হচ্ছে?
দিশা আপুর সেরে উঠতে সপ্তাহ খানেক লাগলো। দিনা আপুর কাছে বেশিদিন গোপন রাখা যায়নি। দিনা আপু দেখতে চলে এসেছে। বাসার পরিবেশটা আবার উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে, আবার বাজার করেছেন বড় চাচা, আপুর পছন্দের সব পদ রান্না হবে৷ আপুর শ্বশুরবাড়ি থেকে আমার জন্য গিফট এসেছে। আমি এই প্রচলনের কথা জানতামই না! খুব সুন্দর একটা শাড়ি, সাথে ম্যাচিং ব্যাগ, চুড়ি, কানের দুল। গিফট দেখছি , দিনা আপু পাশে এসে বসল,
• এগুলো কার কেনা জানিস?
• কার?
• রাকিনের
• আচ্ছা! আমার গাল দুটো গরম হয়ে যাচ্ছে !
• দেখ, আমি জানি, আসলে এসব বলে লাভ নেই, তাও বলছি
• কি বলবে? খুলে বলো আপু
• তোদের জীবনে সামনে বড় একটা পরিবর্তন আসবে, এইচএসসির পর, কে কোথায় চান্স পাবি, তার উপর নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ। আমি জানি রাকিন খুব ভালো ছেলে, দায়িত্বশীল । কিন্তু নিজের জীবনের উন্নতি সবাই চায়। তোর চেয়ে ভালো কাউকে পেলে…..
• চিন্তা করো না আপু। জীবনে কষ্ট তো কম পাইনি
• এ জন্যই বলছি, কষ্ট বাড়াস না
আমি কি চাইলেই মন ফেরাতে পারব?
চাইলেই আর রাকিনকে দেখব না? চাইলেই রাকিনের মেসেজের উত্তর দেব না? চাইলেই পারা যায়?
তিন দিন কেটে গেল চোখের পলকে। আপু ঢাকা ফিরে গেল। চাচী আমাকে কলেজে পাঠালেন জোর করে। অনেক ক্লাস মিস হয়েছে। সব নোটস লাগবে। কোচিং এ গিয়ে দেখি রাকিন আবার আগের মতো, কারো সামনে কথা বলেনা। অচেনার মতো ভান করে। তবে নোটস ফটোকপি করে এনেছে আমার জন্য। সাথে একটা চিঠি,
খাদিজা
আমি জানি আমি তোমার প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। আমি নিজেও এই মুহূর্তে এমন কোন সম্পর্কে জড়াতে চাইনা যার কোন ভবিষ্যৎ নেই! তোমার, আমার বাবা মা কেউ নেই। আমাদের উভয়ের জীবন ভীষণ কঠিন। কাউকে পাশে পাবো না আমরা। তাই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেদের গুছিয়ে নিতে হবে। আশাকরি বোঝাতে পেরেছি।
ইতি
রাকিন
আমি ছাদে বসে কয়েকবার পড়লাম চিঠিটা। দিনা আপুর কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেল। রাকিন আমার থেকে অনেক ভালো মেয়ে পাবে৷ আর সে আমাকে কোনদিন মুখ ফুটে বলেনি, সে আমাকে ভালোবাসে, আমিই বোকার মতো কত শত স্বপ্ন বুনে গেছি।
কদিন পর পরীক্ষা শুরু,
দিশা আপুকে চোখে চোখে রাখতে হয়, পরীক্ষার জন্য কোচিং বন্ধ, চাচা রোজ খেতে বসে পড়ার খবর নেন৷ নাহলে হয়তো আর পড়তেই ইচ্ছে করত না। ছোট চাচারা আজকাল দিনা আপুর শ্বশুরবাড়ি যায় ছুটি পেলেই। বড় চাচী বলেন,
• মেয়ের বাড়ি থেকে লোকজন যাওয়া ভালো। মাধবীর মন বড়। সে তো আর খালি হাতে যায়না। মায়ের জায়গায় চাচী যায় আমার মেয়েকে দেখতে। আমার মেয়ের কপাল ভালো।
এতদিন আমরা যার কপাল ভালো দেখেছি তার আজ অদ্ভুত এক দশা। অনার্স ফাইনালে বসল না। বললো, এখন তো আর চাপ নাই। অনার্স-মাস্টার্স শেষে দুবাই যাওয়ার। আস্তে ধীরে পড়লে ক্ষতি কি? চাচা কোন চাপ দিলেন না মেয়েকে।
সে আজকাল রান্না করে, সেলাই শেখে পেছনের টানা বারান্দায় গাছ ও লাগাচ্ছে। মনে চাইলে আমাকে পড়া দেখায়৷ আমিও আপুকে যতটা পারি সময় দেই। ছাদে বসে আমরা চাঁদ দেখি, দিনা আপুকে ভিডিও কল করি।
শেষ পরীক্ষার দিন,
মন বেশ হালকা লাগছে। ধীর গতিতে পায়ে হেটে বাড়ি ফিরছি। জালাল উদ্দীন আর কখনো রাস্তা কাটেনি। কিন্তু রাস্তায় রাকিন দাঁড়ানো। বুকের ভেতর আবার সেই উথাল পাথাল ঢেউ!
আমার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
• একটু কথা ছিল
• বলো
• কোথাও বসি?
• আমাদের বাহির ঘরে বসতে পার
• না না! বাসায় না।
• তাহলে কোথায়?
• বড় মসজিদের নিচের মার্কেটে নতুন কফিশপ খুলেছে, যাবা?
• চলো
কফি আমার কাছে কখনোই পছন্দসই কিছু না। কেমন একটা দুধ পোড়া গন্ধ, তার উপর আবার এখন ফেনা দেওয়া! মালাই চা এর থেকে ঢের ভালো! দাম কম, খেতেও চমৎকার। যারা এসেছে সব জুটি! বুঝলাম এটা প্রেমকুঞ্জ!
• কি বলবা?
• একেবারে কথা বন্ধ করে দিলা?
• তুমিই চিঠি দিয়েছিলে
• হ্যা, আমি তোমায় কোন মিথ্যা আশা দিতে চাইনা, আমাদের জীবনের সত্যিটাই লিখেছি, তুমি এভাবে চুপ করে যাবে, কথা বন্ধ করে দিবে তা তো বুঝিনি!
• মিথ্যা স্বপ্ন আমি দেখেছি৷ সেই শাস্তি আমি পাচ্ছি।
• কি স্বপ্ন?
• কফি জিনিসটা আমার পছন্দ না। তিতা বাজে একটা পানীয়! দাম টাও খুব বেশি! বলে আমি উঠে বের হয়ে গেলাম,
কাউন্টারে এক কাপ কফির দাম রেখে এসেছি, এক লাফে পাশে দাঁড়ানো রিক্সায় চড়ে বসলাম। রিক্সা ওয়ালা মামাকে টানতে বললাম। মামা সত্যিই জোরে টেনে বাসায় পৌঁছে দিল। আমার চোখের পানি কেউ দেখুক সেটা আমি চাইনা। তার উপর বিশেষ করে রাকিন দেখুক সেটা তো একেবারেই না! বাড়িতে ঢুকেই আমাদের ঘরে চলে গেলাম। দিশা আপু বারান্দায়। ভালো হলো। কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে না। সোজা বাথরুমে ঢুকে গেলাম।
পরদিন সন্ধ্যায়,
বিকেলে একটু ঘুমিয়েছি দুজনেই। চাচী কখনো ডাকে না। আজ ডেকে বলল,পুরো বিকেল নাকি তাহমীদ ভাই বাহির ঘরে অপেক্ষা করছে। আমি যেন দিশা আপুকে উঠিয়ে নিয়ে যাই। দিশা আপুকে ডাকলাম। কিছুতেই দেখা করতে রাজি না। কিন্তু চাচার হুকুমে যেতে হলো। সে কাপড় বদলাবে না। অগত্যা নামাজের চওড়া ওড়না জড়িয়ে নিয়ে গেলাম। আমাদের দেখে তাহমীদ ভাই উঠে দাড়ান। আমি বের হয়ে আসতে যাই, দিশা আপু বসতে বলে। ঘরের কোণার সোফায় বসলাম। অনেকক্ষন পর তারা কথা শুরু করল।
(চলবে)