মেঘাচ্ছন্ন আকাশ,পর্ব : ১
আদিল খান
রুবি একটা নাইটি পরে শোয়ার জন্য রেডি হয়ে বেড রুমে এসে দেখলো তার বর রোহন ল্যাপটপে কি যেন করছে আর মিটমিট করে হাসছে।
।
রুমি রোহনের হাসি দেখে পিছন থেকে রোহনকে জরিয়ে ধরে বললো আর বললো
এতো কিসের কাজ হুমমম….?
ঘড়ে যে বউ আছে সেটা ভুলে গেলে চলবে….?
।
রুবির কথায় রোহন একটু বিরক্তি হয়ে বললো,,,,
আহা ছাড় না,,, একটা ইমপটেন্ট কাজ করছি এখন বিরক্ত করো না
।
রোহনের কথা শুনে রুবি একটু অভিমানের সুরে বললো
রাতেও তোমার কাজ…?
সারা দিন তো অফিসে কাজ করো।
রাতে তোমায় একটু কাজে পাই,,,
কিন্তু তুমি রাতেও কাজ করলে আমাকে সময় দিবে কখন….?
।
রুবির কথায় রোহন আরো বিরক্ত হয়ে রুবির হাত ঝটকা দিয়ে সিরিয়ে দিয়ে বললো।
,,,,
সব সময় ঘ্যান ঘ্যান না করলেই নয়….?
দেখছো না কাজ করছি।
শুয়ে পর।
।
রুবি আর কোন কথা বললো না,,,,
।
খাটের বাকি অংশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
।
রুবি শুয়ে পরায় রোহন উঠে ঘড়ের লাইট অফ করে ডিম লাইটটা জালিয়ে দিলো।
দিয়ে এসে আবার ল্যাপটপ এ মুখ গুজে দিলো।
।
রুবি শুয়ে শুয়ে ভাবছে তার পুরনো দিনের কথা।
যখন তাদের সদ্য বিয়ে হয়েছিলো।
তখন তাদের সবটা সময় রোমান্টিকতায় ভরপুর ছিলো।
কিন্তু এখন….?
।
রুবি এবং রোহনের বিয়ের ৫ বছর চলছে।
ভালবেসেই বিয়ে করেছিলো দুজন।
৫ বছরের সুখি পরিবার ওদের। যদিও এখনো কোন সন্তান হয়নি।
।
কিন্তু রুবি বুঝতে পারে রোহন এখন আর তাকে খুব একটা সময় দেয় না।
সেটা হতে পারে কাজের চাপে…
আর নয়তো……?
না আর কোন কারণ হতে পারে না।
রুবি সেটা ভাবতেও চায় না।
।
এখনো ঘুমাও নি তাহলে….?
।
তোমার সাথে কথা না বলে কোনদিন ঘুমিয়েছি….?
।
ওলে আমাল বাবু টা,,,,, খাইছো….?
।
হুমমম তুমি….?
।
হুমমম খাইছি,,,
।
কালের নুড গুলো কিন্তু খুব হট ছিলো।
।
তাই…?
।
হুৃমমমম
।
অন্যের বাগান দেখতে বুঝি খুব ভালো লাগে….?
।
কেন অন্যের হবে কেন…?
তুমি তো আমার।
।
শুধু আমার আমার করো,,,
কই বিয়ে করার কথা তো বলো না।
।
সময় হলে সেটাও বলবো।
।
সময়টা কখন হবে….?
।
যখন হবে তখন হবে,,,,
এখন কিছু নুড দাও তো।
।
ইশশশশশশশ,,,,, শখ কত
।
হাহা
।
ঐ হাসবা না
।
কেন….?
।
এমনি,,,,
আজ নুড দিতে পারবো না,,,
কলে আসো,,, একটা গরম খরব আছে।
বাবা মা এখনো ঘুমায় নি,,,,তাই কলে আসতে পারবো না,,,
পিক দাও
।
পিক দিতে পারবো না,,,,
।
আচ্ছা তাহলে বলো কি গরম খরব।
।
বলবো….?
।
হুমমমম
।
খুব তাড়াতাড়ি বাবা ডাক শুনতে চলেছো। (সাথে কিছু লজ্জার ইমুজি)
।
হোয়াট সত্যি…..?
।
হুমমমম।
।
ইয়া হু বলে চিৎকার দিতে গিয়েও পারলো না রোহন।
তারপর কিছু লাভ ইমুজি সেন্ট করে বললো।
।
জীবনে এতোটা খুশির খবর আর পাই নি।
লাভ ইউ বাবু
।
তাহলে
এবার আমাকেও খুশি করো,,,,
।
বলো তুমি কি চাও
।
তোমাকে,,, শুধু তোামাকে,,,
মিসেস রোহন হতে চাই আমি…।
।
হুমমম খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।
এখন
অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পরো
।
হুমমম,,,গুড নাইট ওম্মাহ
বলে শুয়ে পড়লো মারিয়া।
।
এদিকে রোহন ও মহা আনন্দে ঘুমাতে চলে গেলো।
।
এতোক্ষনে হয়তো বুঝতে পারছেন মারিয়া আর রোহন সম্পর্কে।
।
হুমমম,,,
ওরা একে অপরকে ভালবাসে।
আজ থেকে ২ বছর আগে একটা পাবলিক বাসে মারিয়াকে দেখে রোহন।
সেখান থেকে বন্ধুত্ব তারপর প্রেম।
মারিয়া একটা প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে অনার্স করছে।
তার সম্পর্কে শুধু এতোটুকুই জানে রোহন।
আর মারিয়া জানে রোহন অবিবাহিত।
যে যেমনটা যার কাছে বলেছে,,
সে ঠিক ততটাই জানে।
।
পরের দিন সকালে রুবি গোসল করে নামাজ পড় ফ্লোরে বসে কোরআন তিলাওয়াত করছে।
এমন সময় রোহন ঘুম থেকে উঠে ব্যালকনিতে যায়।
।
রুবি কিছুক্ষণের জন্য তিলাওয়াত বন্ধ করে রোহনের দিকে তাকায় আর ভাবে
কতই না ভালো ছিলো সেই দিন গুলো।
যখন রোহন ঘুম থেকে উঠে আগে রুবিকে খুজতো।
রুবি যেখানেই থাকত সেখানে গিয়ে তাকে জরিয়ে ধরে থাকতো কিছুক্ষণ।
আজ রোহনের সেই ছোট ছোট আদর গুলো মিস করছে রুবি।
রোহনের দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে আবার পড়তে মনোযোগ দিলো রুবি।
।
এদিকে রোহন মারিয়াকে ম্যাসেস করে জানিয়ে দিলো আজ সারা তাকে নিয়ে ঘুরবে সে।
।
সকাল ৯ টা,,,,,
রোহন খাবার সেরে আয়নার সামনে
এসে রেডি হচ্ছে অফিসে যাওয়ার জন্য।
।
আর রুবি রোহনের জন্য টিফিন রেডি করছে।
।
রোহনের হাতে টিফিন দিতে দিতে রুবি বললো
আজ একটু তাড়াতারি ফিরতে পারবে…?
।
কেন….?
।
আমার শরীরটা কেমন যেন লাগছে,,, তারাতরি এসো প্লিজ।
।
পারবো না,,,, আজ মিটিং আছে।
আমি ডক্টর আংকেলকে পাঠিয়ে দিচ্ছি,,,
।
রুবি আর কিছু বললো না,,,,
।
রোহন চলে গেলো।
।
বাসা থেকে বেরিয়ে মারিয়াকে কল দেয় রোহন,,,
।
মারিয়া কল পিক করে
,,,
হ্যালো
।
সকালে ম্যাসেস করছি,, দেখছো….?
।
হুমমম
।
রেডি তো..?
।
হুমমম,,, তুমি কোথায়…?
।
তুমি ঐ মোড়ে আসো,,, আমিও আসতেছি।
।
রুবি রোহনের চলে যাওয়ার পর বসে বসে একটা উপন্যাস পড়ছি কিন্তু কিছুই ভাল লাগতেছিলো না,,,
তাই রোহনের ডক্টর আংকেল কে কল করে একটু আসতে বললো।
।
রুবি এবং রোহন ঢাকায় থাকে
রোহনের বাবা মা রাজশাহী তে
।
একটু পর কলিং বেল বাজলে রুবি সাথে সাথে গিয়ে দরজা কুলে দিলো।
।
ডক্টর ভিতরে প্রবেশ করলো।।
।
তারপর ডক্টর কে সব খুলে বললো রুবি,,,
।
রুবির কথা শুনে ডক্টর একটু মুসকি হাসি দিয়ে বললো,,,
।
তুমি শুয়ে পরো,,, আমি একটু দেখি,,
।
রুবি শুয়ে পরলে ডক্টর কিছুক্ষণ প্রেশার, সহ আরো কিছু টেস্ট করে বললো
রোহন কোথায়….?
।
ডক্টরের জবাবে রুবি বললো,,, সে ত অফিসে।
।
ওওও,,,
খুশির খবর টা তাহলে ওর টাটকা শোনা হলো না।
।
কেন আংকেল কি হয়েছে…?
।
তুমি মা হতে চলেছো মা,,, রোহনকে বলবে,,,
আমার চেম্বারে যেন মিস্টির কার্টুন যায়।
।
ডক্টর আংকেলের কথায় রুবি একটু লজ্জা পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললো
ঠিক আছে বলবো।
।
হা হা,,,
দেখ মেয়ের কান্ড,,, লজ্জার কি আছে…?
আমি তো তোমার বাবার মতো।
আর হুমমমম,,,
একটা ইনজেকশন দিয়েছি,,, এখনি উঠবে না,,,
একটু রেস্ট নিয়ে তারপর উঠবে কেমন….?
।
জ্বি আংকেল।
।
তুমি আমাকে বিয়ে কবে করছো রোহন….?
।
কিছুদিন সময় দাও,,,
।
কত সময় লাগবে….?
এসব সবার জানাজানি হবে তারপর…..?
।
আরে নাহ,,,,
চলে ফুসকা খাবে….?
।
হুমমম
।
তারপর রোহন মারিয়া ফুসকা নিয়ে পার্কের একটা কোনে গিয়ে বসলো।
।
মারিয়া একটা ফুসকা মুখে দিতে দিতে বললো
১ সপ্তাহ সময় দিলাম এর মধ্যে সব ঠিক করে আমাকে তোমার ঘড়ে তুলবে ওকে…?
।
হুমমম ওকে,,,, এবার খুশি….?
।
হুমমম খুব
।
রোহন মনে মনে ভাবতে ভাবছে রুবিকে আজকেই বলবো
মারিয়ার কথা,,,
ওকে বলবো আমি এখন তোমাকে নয়।
মারিয়াকে ভালবাসি,,,
তাই তোমাকে আমার জীবন থেকে চলে যেতে হবে,,,
।
বিকাল ৫ টা,,,,,
রোহন মারিয়ার সাথে সারাদিন ঘুরে রুবিকে কিভাবে তাদের ডিভোর্স এর কথা বলবে সেটার প্লান করতে করতে বাসার দিকে রওনা হলো।
।
এদিকে ডক্টর আংকেলের কথা মতো রেস্ট নিতে গিয়ে কখন গুমিয়ে পড়ে নিজেও জানে না রুবি। বিকালে বিছানা থেকে উঠে রুবি।
।
প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা শুয়ে থাকার কারণে মাথাটা একটু ভার লাগলেও সেদিকে খেয়াল নেই মেয়েটার কারণ…..?
।
কারণ সে আজ জানতে পেরে গেছে সে মা হতে চলছে….?
।
বিছানা থেকে উঠে আয়নার সামনে আসে রুবি।
।
এসে বুকের উপর থেকে আচল টা এক ঝটকায় ফেলে দেয়।
দিয়ে নিজেকে নিরির ভাবে পর্যবেক্ষক করতে শুরু করে।
।
নিজেই নিজের মাঝে একটু পরিবর্তন লক্ষ করে রুবি।
।
তারপর নিজে পেটে হাত বুলাতে থাকে..
কিন্তু সে জানে না তার মেঘহীন আকাশটা ধীরে ধীরে মেঘাচ্ছন্ন হতে শুরু করেছে।
হঠাৎ একটা ঝড় আসতে চলছে তার জীবনে।
।
।
।
চলবে….