মেঘাচ্ছন্ন আকাশ,পর্ব : ২

0
2250

মেঘাচ্ছন্ন আকাশ,পর্ব : ২
আদিল খান

আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে খুব ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে রুবি।
নিজেই নিজের মাথা থেকে পা পর্যন্ত বারবার দেখছে।

পেটের উপর থাকা কাপর সরিয়ে
পেটে হাত বুলাতে থাকে রুমি।
আর নিজের অজান্তেই তার মুখে ফুটে উঠে এ রাজ্য জয় করা হাসি।

রোহন মারিয়াকে ড্রপ করে দিয়ে বাসায় চলে আসে।
এসে দেখে রুবি ব্যালকনিতে দারিয়ে।

রুবি দিকে খেয়াল না করে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায় রোহন।

সাওয়ার শেষ করে রুমে এস দেখলো রুবি তাকে দেখে মিট মিট করে হাসছে।

হাসছো কেন…..?
বলে
রুবির হাসির রহস্য জানতে চাইলে রুবি বলে,,,

কেন বলবো তোমায়….?

মানে….?
(আর তোমার হাসির রহস্য জানার খুব একটা ইচ্ছা ও নাই আমার,,,,,,
মনে মনে বলছে রোহন)

রুবির উত্তরের জন্য অপেক্ষা না করে,,,,

মাথা মুছে আয়নার চাদর সরিয়ে আয়নার সামনে যায় রোহন।

আয়নায় নিজেকে দেখতে গিয়ে একটা লেখা দেখতে পেলো সে।
তাতে আয়নার উপর সুন্দর করে লেখা ছিলো
“””im pregnant”””
we gonna having a bby

লেখাটা দেখে মহুর্তেই থ বনে যায় রোহন।
মাথা ঘুরতে থাকে,,,
রুবির দিকে ফিরে চাইতেই রুবি লজ্জায় মুখ ঢেকে আবারো বলে
আমি কিছু বলল না

রোহন রুবিকে দেখতে থাকে
ভাল ভাবে,,,
রুবির মুখ ঢাকা তবুও।

না এই দেখার মধ্যে কোন ভালবাসা নেই।
আছে ছলনা,অবাক হওয়া।
তবুও ভালবাসার অভিনয় করে রোহন বললো
কবে জানতে পারছো…..?

বললাম না,,, আমি কিছু বলবো না।

আহা বলো না,,,, ডক্টর আংকেল আসছিলো…..?

হুমমম

ও আচ্ছা,,,, ভাল কথা
বলে আয়নার উপর লেখা গুলো মুছে দিয়ে নিকের চুল ঠিক করতে শুরু করলো।

নতুন অতিথি আসার খবর এতটা ইজি ভাবে রোহন গ্রহন করবে সেটা ভাবে নি রুবি।

ভেবেছিলো রোহন হয়তো খুশিতে পাগলামি করবে।
তাকে উপরে তুলে ঘুরাবে।
আদর করে কপালে একটা ভালবাসার চিহ্ন একে দিয়ে বুকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলবে,,,
আজ আমি পৃথিবীর সব চেয়ে বেশী খুশি রুবি।
তুমি আমাদের এই ছোট সংসারে একটা প্রদীপ আনতে চলেছো
এভাবেই বুকে থাকবে তুমি আমার।
কিন্তু এসবের কিছুই হলো না,,,,
রোহন খুব সহজ ভাবেই পুরো বিষয়টা হেন্ডেল করলো।

একটু ভালবাসা পাওয়ার জন্য সারা বিকেল প্লান করে আয়নায় লিখে রাখলো রুবি।
আথচ রোহন…….?

রাত ৮ টা,,,,,

রুবি কিচেনে রান্নায় ব্যাস্ত আর রোহন নিজের ফোনে।
ওপারে অবশ্যই মারিয়া।

কি করছো……?

শুয়ে আছি,,, তুমি….?

আমিও,,,
তোমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলছো….?

নাহ

কেন….?

একটা প্রবলেম হয়ে গেছে।

কি প্রবলেম….?

এখানে বলা যাবে না,,,
মিট করতে হবে।

তুমি আসলে কি চাও রোহন….?

মানে….?

মানে তুমি কি আদৌ আমাকে চাও….?

অবশ্যই চাই,,,,

যদি চাও তাহলে এভাবে সব খিছু এরিয়ে চলছো কেন…?
সিরিয়াসলি নিচ্ছো না কেন….?

বিলিভ মি আমি সিরিয়াস,,,, কিন্তু একটু টাইম দাও প্লিজ

হুমমমম

হুমমম কি…..?

কিছু না
আচ্ছা আমি রাখছি,,,,

ওকে
বলে মোবাইলটা রেখে দুই হাত মাথার পিছনে দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে রোহন।
ভাবছে রুবিকে কিভাবে সব কিছু বলে দেবে সে….?
কি করে বলবে যে এখন আমি তোমাকে নয় মারিয়াকে ভালোবাসি।
মারিয়া আমার সন্তানের মা হতে চলছে।
তাই এখনি ওকে আমার ঘড়ে নিয়ে আসতে হবে।
আর মারিয়া আসার মানে একটাই রুবিকে ঘড়টা ছারতে হবে।

কিছু কি ভাবছো তুমি…..?
রুবির ডাকে বাস্তবে ফিরলো রোহন

রুবি সদ্য কিচেন থেকে বেরিয়েছে। মুখে ক্লান্তির স্পস্ট। নাকের উপর ছোট ছোট ঘামের বিন্দু।
মুখটা দেখে
মায়া হলো রোহনের
কি নিষ্পাপ একটা মুখ,,,

কি হলো কিছু বলছো না কেন…কি ভাবছো?

না তেমন কিছু না

ওহহ,,,তুমি না বললেও আমি বুঝতে পারি।
টেনশন করো না,,,
সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
আর শোনো,,,,
তোমার যত টেনশন ই থাকুক না কেন আমাদের সন্তানের আগমনে দেখবে সব কিছু দুরে চলে যাবে। একটু ধর্য ধরো।

কথাটা শুনে রোহন থ বনে গেলো
মনে শান্তির ঢেউ অনুভব করলো সে।
এতোক্ষণ যাকে তারানোর কথা ভাবছি সেই এসে বলছে সব ঠিক হয়ে যাবে…..?

ধুর,,,, বেশি টেনশন করো না তো,,,,
চলো খাবে
বলে রোহনকে টেনে নিয়ে টেবিলে বসালো রুবি।

দুজনে ডিনার সেরে রোহন আবারো
ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো।
রুবি আয়নার সামনে।

রুবি কিছুক্ষণ পর এসে শুয়ে পরলেও রোহন শোয় না।
সে মারিয়ার সাথে চ্যাটিং এ ব্যাস্ত।

কিছুক্ষণ পর রোহন ও শুয়ে পরলো।

পরের দিন সকালে রোহন রেডি হচ্ছে অফিসে যাওয়ার জন্য,,,
আর রুবি টিফিন নিয়ে দাড়িয়ে।

রোহন রেডি হয়ে রুবির থেকে টিফিন নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পরলো।

রুবি রোহনের চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে….।
আজ রুবি রোহনের পালামি গুলো খুব মিস করছে।
যখন রুবিকে কিস না করে অফিসে যেত না রোহন।
আর এখন একবার ফিরেও তাকায় না।

আমার কিস টা দাও

এখনি…..?

হুমমম

অফিসে যাচ্ছো তবুও,,,,,,,
পারবো না

তাহলে অফিসেও যাবো না

আরে,,,,,,,

হুমমমমম

ওকে
বলে
রোহনকে টেনে নিয়ে কিস করলো রুবি
আর বললো,,,,, হয়েছে….?

এটুকুই শেষ….?
….?

তাহলে….?

আমার অনেক ক্ষন চাই

মামা বাড়ির আবদার হুমমমম….?

না শশুর বাড়ির বউয়ের কাছে আবদার।
দাও না

না…….
কথাটা বলা শেষ না করতেই রুবির ঠোটে রোহনের ঠোট লেপ্টে যায়।

রোহন রুবির মাথা ধরে কিস করছে আর রুমি ওমম ওমম শব্দ করে হাত পা ছুটাছুটি করছে।

মোবাইলের রিংটোনে দরজার সামনে রোমান্স করা দৃশ্যটা মিলিয়ে গেলো রুবি চোখ।

টেবিল থেকে মোবাইল তুলে দেখলো রোহনের মায়ের কল।
পিক করে
আসসালামু ওয়ালাইকুম মা

ওয়ালাইকুম সালাম,,
কেমন আছিস রুবি…?

ভাল,,,, আপনি…?

আমিও ভালো আছি,,,,

বাবা,,, রাইসা (রোহনের ছোট বোন)
ওনারা কেমন আছে…?

হুমমম ভালো আছে,,,
একটা খুশির খবর আছে রে মা

তাই নাকি মা…?

হুমমম

আমি যদি বলি আপনার থেকেও আমার কাছে বড় খুশির খবর আছে….?

সত্যি কি সেটা….?

আগে আপনি বলুন,,,তারপর আমি বলছি।

ওও আচ্ছা,,, শোনো রাইসার বিয়ে ঠিক হয়েছে,,,
তোমার শশুরের এক বন্ধুর ছেলে।
রোহন ওকে চেনে।
রোহনকে বলবে ও যেন ছুটি নিয়ে তারিখটা জানায়। তাহলে আমরা বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবো।

সত্যি!!! রাইসার বিয়ে ঠিক হয়েছে…?

হুমমম,,, এবার তোমার খুশির খবর টা বলো।

আগে বলুন স্টকে টাকা আছে….?

কেন তোমার টাকা লাগবে নাকি….?

আরে না,,,,,
মিষ্টি কিনতে হবে।

কেন…? মিষ্টি কেন…?

আপনা নাতি/নাতনী আসতেছে

কি!!!

হুমমমম।

তার মানে তুমি মা হতে চলেছো,,, আর আমি দাদী….?

হুমমমম

কবে জানতে পারছো…..?

কাল দুপুরে

কাল দুপুরে জানছো আর আমাকে বলছো এখন….?

আসলে মা ব্যাস্ত ছিলাম,,,
আজ জানাবো ভাবছিলাম।।

ভালো হয়েছে,,,,
একদিকে রাইসার বিয়ের খবর আর একদিকে নতুন অথিতির খবর।
আল্লাহ্‌র কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।

আচ্ছা মা রাখছি,,,,

আচ্ছা সাবধানে থাকবে

জ্বি,,,, আসসালামু ওয়াকাইকুম

বলে কলটা কেটে দিলো রুবি।

বিকেল বেলা অফিস শেষ করে অফিস থেকে বের হতেই রোহনের সামনে মারিয়া হাজির।

রোহন মারিয়াকে দেখে এক প্রকার চমকে গিয়ে বললো।
আরে তুমি এখানে….?

কেন অবাক হলে….?
আসলে তোমার অবাক হওয়ার ই কথা,,,,
কেননা তোমার তো সমস্যা না,,,
সমস্যা আমার।
সমাজ খারাপ বললে আমাকে বলবে।

অফিসের সামনে এমন বিহেভ করো না।

চলো কোথাও বসি,,,

তারপর রোহন মারিয়া দুইজনে একটা পার্কে ঢুকে
ঘাসের উপর বসে পড়লো।

আজ সারা দিন কল ধরলা না কেন…?

ওওও তাই তুমি আমার অফিসে চলে আসছো…?

আজ তো অফিসে গিয়েছি,,,
কাল বাসায় যাবো।

আরে না না,,,, ওসব করবা না,,,,
আর তোমার ৭ দিন মনে আছে আমার।

হুমমম সেটাই ভালো হবে।

কথা বলার সময় রোহনের মোবাইল বেজে উঠল।

মোবাইল বের করে দেখে ওর মা
পিক করে
হ্যালো মা
কেমন আছো…?

ভাল,,, তবে আরো ভালো থাকতে পারতাম।

কেন…?
অবাক হয়ে

রুবি যে প্রেগন্যান্ট সেটা যদি তোর মুখে

………

মোবাইলে রুবির কথা বলতেই রোহন মারিয়া
১ মিনিটের কথা বলে একটু দুরে সরে গেলো।
গিয়ে বললো
হ্যা মা বলো

তুই যে বাবা হচ্ছিস সেটা বললি না কেন,,,

আসলে সময় পাই নি,,, আর রুবি তো তোমায় বলছে।

হুমমম,,,, আর সোন রাইসার বিয়ে ঠিক হয়েছে,,,
ছুটি নিয়ে বউমাকে নিয়ে চলে আয়।

আচ্ছা মা আমি দেখছি কি করা যায়
বলে কলটা কেটে দেয় রোহন।
আবার চলে আসে মারিয়ার কাছে,,,,
আর বলে চলো

কোথায়….?

তোমার রাস্তা সাফ করতে হবে তো।
চলো
বলে দুজনে উঠে পরে
আর পার্ক থেকে বেড়িয়ে যে যার মতো
চলে যায় একে অপরকে বায় বলে।

বিকাল গড়িয়ে সন্ধা নামে

রুবি বসে বসে একটা উপন্যাস পরছিলো।
এমন সময় রোহন ঘড়ে প্রবেশ করলে রুবি উপন্যাস টা রেখে
রোহনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো
জানো আজ মা ফোন করেছে।

হুমমম,, কিন্তু তুমি যে প্রেগন্যান্ট সেটা বলছো কেন….?

কেন বলবো মানে….?
আমার তো কালই বলা উচিৎ ছিলো।
খুশির খবর দিতে দেরি করতে নাই।

আর খুশির খবর,,,

হোয়াট,,,,,, কি বলছো তুমি….?

হুমমম আমি কি বলছি শুনতে পাও নি….?
তুমি আমার বাবা মাকে কেন বলছি তুমি,,,
যে তুমি প্রেগন্যান্ট…?
কি গ্যারান্টি আছে যে তোমার পেটে আমারই সন্তান…?
কিসের উপর ভিত্তি করে আমি বিশ্বাস করবো যে ওটা কোন পাপের ফসল না।


চলবে…..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here