#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু ?
#পর্ব- ১,০২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
০১
‘উম!এইটা চেঞ্জিং রুম মিস! নিজের বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে রোমান্স করার জায়গা নয়। সো গেট লস্ট। ‘
ভারী গম্ভীর কন্ঠে কেউ মিরাকে উদ্দেশ্য করে বলে। মিরা কথাটি শুনে পিছনে ঘুড়ে বিরক্তির সাথে। সঙ্গে সঙ্গে অর্ষাও পিছনে ঘুড়ে তাঁকায়। তাদের সামনেই সাদা শার্ট পরা একজন ফর্সা লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার পড়নের শার্টখানাই স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে, লোকটা মাত্রাধিক সুদর্শন। অর্ষা এবং মিরা দুজনেই লোকটির অদ্ভুদ আগমনে বেশ অবাক!
অর্ষা শার্টের হাতা ভালো করে গুটিয়ে লোকটির কাছে গিয়ে, একপ্রকার আঙ্গুল তাঁক করে বলে, ‘ এইযে মিঃ অভদ্র! আপনার কি কোন সেন্স নেই? হুট করে মেয়েদের চেঞ্জিং রুমে ঢুকে যাবেন আবার আমাদেরকেই বলেন চলে যেতে! হাউ ডেয়ার ইউ হ্যা? কে আপনি? ‘
বর্ণ অর্ষার ভারী কন্ঠে বলা কথাটি শুনে বিষম খায়। টিস্যু বের করে, কপালের চিনচিনে থাকা ঘামটুকু মুছে দেয়। আসলেই সে ভুল করে ফেলেছে, যাকে বলে বিরাট ভুল! সে নিজেই জেন্স চেঞ্জিং রুম ভেবে, লেডিস চেঞ্জিং রুমে ঢুকে পরেছিলো। অতঃপর বর্ণ দেখতে পেলো, একটি ছেলে ঘুড়ে একটি মেয়ের কপালে হাত রেখে, উচু হয়ে কিছু একটা করছিলো। যে কোন সুস্হ মষ্তিষ্কের মানুষ দেখে ভাব্বে দুজনে আপত্তিকর কোন কাজ করছিলো। অর্ষার পড়নে ছেলেদের পোষাক থাকায়, অর্ষাকে ছেলে ভেবেছিলো বর্ণ। তার মধ্যে অর্ষা পিছনে ঘুড়ে ছিলো, কিন্তু মিরাকে স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলো বর্ণ। অতঃপর অর্ষা যখন পিছনে ঘুড়ে, তখন বর্ণের সমগ্র ভুল ধারণা নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। বর্ণের ভাবনার মাঝেই, অর্ষা হাতে তুড়ি বাজিয়ে বর্ণকে ডাকে,
‘ কি হলো? কি যেন বলছিলেন আপনি? আমরা এখানে কি করছি তাইতো? ‘
বর্ণ প্রতিউত্তরে কোন জবাব দেয় না। অর্ষা বিরক্ত হয়। লোকটা তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে সেই কখন ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে, শুধু ভেবেই চলছে। আচ্ছা লোকটা কি লেখক? কি এতো ভাবে সারাদিন? অর্ষা বিষয়টিকে মাথা থেকে ঝেড়ে দিয়ে, মিরাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ আমি আর আমার মরু বিয়ের জন্যে শপিং করতে এসেছিলাম, মরুর চোখে ময়লা ঢুকে গিয়েছিলো। তাই আমি ওর চোখে ফু দিয়ে দিচ্ছিলাম। ‘
বর্ণ মাথা চুলকে সরি বলার পূর্ব মুহুর্তেই, অর্ষা মিরার কাছে গিয়ে, মিরার হাত ধরে একপ্রকার টেনে নিয়ে যেতে যেতে, বর্ণকে উদ্দেশ্য করে কটাক্ষ করে বলে উঠে,
‘ আমিও বা যাকে তাকে ব্যাখা দিচ্ছি কেন? যত্তসব!’
অর্ষার কথার প্রতিউত্তরে বর্ণও গলা উচিয়ে জবাব দেয়, ‘ মানুষ মাত্রই ভুল হয়ে থাকে, আর আপনি যাকে তাকে বলছেন কাকে? আমার পরিচয় সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা আছে?’
কথাটি বলেই, পকেটে হাত গুজে দাঁড়ালো বর্ণ। অর্ষা বুঝতে সক্ষম হলো, লোকটা নিজের পরিচয় নিয়ে,নিজেই গর্ব করছে। যা অর্ষাকে বর্ণের প্রতি আরো বিরক্ত করে ফেলে।
অর্ষা এগিতো নিলে,মিরা অর্ষার হাত খপ করে ধরে ইশারায় বুঝিয়ে দেয়, সে যেন কোন ঝামেলা না করে। অর্ষা তার দৈনন্দিন দিনের মতো আজও মিরার কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে, এগিয়ে গেলো। অর্ষার মতো জেদি, একরোখা মেয়েকে নিয়ে মিরা পরেছে বিপদে। অর্ষা বর্নের সামনাসামনি দাঁড়ায়, যদিও বর্ণ কাধ অব্দিও সে পৌঁছানোর ক্ষমতা রাখেনা,তবুও দাপটের সাথে কোমড়ে হাত রেখে বলে,
‘ হ্যা আপনার পরিচয় আমি খুব করে জানি।আপনি একজন নির্লজ্জ মানুষ, যে কিনা লেডিস চেঞ্জিং রুমে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে। ‘
বর্ণ দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে রইলো। অর্ষা নিজের পকেট থেকে কালো সানগ্লাসখানা বের করে, তা চোখে পরে নেয়। অতঃপর,
‘লেট’স গো! ‘ বলে বেড়িয়ে যায়। অহনাও পিছনে পিছনে বেড়িয়ে যায়। বর্ণ দেয়ালে ঠেস মেরে দাঁড়িয়ে, কিছু একটা ভেবে বলে,
‘ মেয়ে তো নয় যেন মিস ঝাঁজওয়ালী। ‘
বর্ণ অর্ষার বিষয় বাদ দিয়ে ফোনে কারো সাথে কথা বলতে বলতে বেড়িয়ে যায়। দুটো বড় বড় প্রযেক্ট নিয়ে তার আজকে মিটিং আছে। বাবা অসুস্হ থাকায়, গোটা আরএস কম্পানিকে নিজ হাতে সামলায় সে। ক্যানাডা থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে, সদ্য নতুন এমডি হিসেবে নিজের বাবার কম্পানিতে
নিয়োগ হয়েছে। সবাই তাকে বর্ণ আহমেদ নামেই চিনে। ২৬বছর বর্ষে পা রাখলেও, প্রেম নামক জটিল বন্ধন তার মনে প্রবেশ করতে পারেনি।
________________
অর্ষা গটগট পায়ে হেঁটে নিজের গাড়িতে বসলো। ছোটবেলা থেকেই, অর্ষাকে নিজের ছোট্ট বোনের মতোই নিজ হাতে আগলে রেখেছে মিরা। মিরা সম্পর্কে অর্ষার মামাতো বোন । তাদের বয়সের তফাৎ দু বছর হলেও, তারা একে- অপরের বেস্টফ্রেন্ড। মিরার পুরো বিপরীত অর্ষা। ছেলেদের মতো পোষাক, চালচলন। চুলগুলোকে খোপা করে রেখে,মাথায় ক্যাপ দিয়ে রাখে। যে কেউ দূর থেকে অর্ষাকে ভাব্বে সে একজন ছেলে, ছেলেদের মতোই চালচলন তার। অর্ষা এবং মিরা এসেছিলো, মিরার বিয়ের জন্যে শপিং করতে। পরশু গাঁয়ে হলুদ। সব শপিং শেষ হলেও, টুকটাক কেনাকাটা করতে দুজনে আজ এসেছিলো এবং এসেই বর্ণের মতো অসভ্য অপরিচিত লোকের সাথে অর্ষার দেখা হয়, যদিও
সেই অজ্ঞাত ব্যাক্তির সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই,কেমন একটা অস্হির অস্হির লাগছে সবকিছু! কিন্তু কেন? জানেনা অর্ষা। শুধু মনে হচ্ছে লোকটির সাথে যেন তার দেখা না হয়।
অহনা অর্ষার দিকে একপলক তাকিয়ে রইলো। অর্ষা অত্যান্ত মনোযোগ দিয়ে ফোনে ভিডিও গেমস খেলছে। আশে পাশের অবস্হা নিয়ে তাঁকানোর সময় নেই। মিরা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে আনমনে ভাবতে লাগলো, ‘ অর্ষাও তো আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো লাইফ লিড করতে পারতো, তবে কেন সে আজ ব্যাতিক্রম! হ্যা অতীতে লুকিয়ে থাকা কোন এক ভয়ংকর ঘটনার জন্যে,আজ অর্ষা সকলের কাছে ব্যাতিক্রম। ‘
__________________________
মিরাকে তার বাসায় পৌঁছে দিয়ে, নিজের বাড়িতে এসেই নিজের রুমে ঢুকে পরে অর্ষা। তড়িৎ গতিতে নিজের পোষাক পাল্টে, কাউকে ফোন করে জানায়,
‘ তুই সব রেডি করে রাখ তন্ময়। আমি আসছি। আমাদের এলাকায় এসে, আমাদের এলাকার ছেলেকেই মারধোর করবে, আর আমি অর্ষা রেজওয়ান তা মোটেও সহ্য করবো না। ‘
‘ তোর বাবা একজন জর্জ বুঝতে পারছিস? সোসাইটিতে সকলে তাকে বেশ সম্মানের নজরে দেখতো, কিন্তু তুই উনার মেয়ে ছেলেদের মতো মারামারি করে এলাকায় ঘুড়ে বেড়াচ্ছিস! এইসব কি ঠিক বল?তোর বাবা…. ‘
পরেরটুকু বলতে পারলেন না অর্ষার মা। তার আগেই উত্তেজিত হয়ে, অর্ষা একপ্রকার তার মায়ের দিকে তেড়ে এসে,প্রশ্ন করে,
‘ কে আমার বাবা? কিসের বাবা? উনি আমার বাবা নন। উনার মেয়ে ৫ বছর আগেই মরে গিয়েছে। তুমিও জানো আমি শুধুমাত্র তোমার জন্যই এই বাড়িতে থাকি, নাহলে কবেই চলে যেতাম। ”
‘ এইভাবে বলিস না মা! তুই আমাদের একমাত্র সন্তান। তোর বাবা একজন জর্জ। তার সম্মানের দিকটাও তোর ভাবা উচিৎ। ‘
অর্ষা এইবার তার মায়ের দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে নরম সুরে বললো,
‘ কিসের জর্জ মা? কিসের মান -সম্মান? উনি তো নিজের মান- সম্মানের জন্যে নিজের সন্তানকেও ন্যায় বিচার দিতে পারেননি। থেমে গিয়েছিলেন। সেদিন কতটা অসহায় ছিলাম আমি। ভেবে দেখেছো মা? আমি সেদিন ন্যায় বিচার পাইনি মা। পাইনি আমি। ‘
কথাটি বলতে বলতে একপ্রকার দৌড়ে ছুটে বেড়িয়ে যায় অর্ষা। মেয়ের কথা শুনে মুখ চেপে উঠে অর্ষার মা। জানালায় উকি দিয়ে দেখতে পায়, নিজের মুখশ্রী শক্ত করে, বাইক নিয়ে বাগানের গেট দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে অর্ষা। উদ্দেশ্যে আজকেও কাউকে হসপিটালে পাঠিয়ে দেওয়া। নিজের এলাকায় বেশ অল্পসময়ের মধ্যেই নিজের জায়গা করে নিয়েছে অর্ষা। পলিটিক্সে থাকার সুবিধায়ে বেশ বড় বড় মানুষের সাথে পরিচয় তার।
______________
বর্ণ চুল সেট করতে করতে গাঁয়ে হলুদের স্টেজের জন্যে ছাঁদের দিকে যাচ্ছিলো। সে খেয়াল করে দেখে, কয়েকজন মেয়ে তার দিকে তাঁকিয়ে, খুঁটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। হলুদ শেরওয়ানীর
সাথে, কালো কুটি পড়েছে। চোখে কালো সানগ্লাস লাগিয়ে। যে কারো নজর কেড়ে নেওয়ার মতো সুদর্শন যুবক সে! মূলত নিজের বন্ধুর বিয়ে এটেন্ড করতে এসেছে সে। কাল বিয়ে। বন্ধুর বিয়ে হলেও,তার কাজ কম নয়। আরফানের বাবা সম্পূর্ন দায়িত্ব বর্ণের কাঁধের উপর ছেড়ে দিয়েছেন, তার ভাষ্যমতে বর্ণ একজন দায়িত্ববান ছেলে। তাকে যেকোন দায়িত্ব দিয়ে নিশিন্ত থাকা যায়। বর্ণ স্টেজে গিয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষন করছিলো। আরফানের বাবা বিশাল ছাঁদেই, ছেলে মেয়ের গাঁয়ে হলুদ একত্রে আয়োজন করেছেন। কিছুক্ষনের মাঝেই পাত্রিপক্ষ চলে আসবে। যদিও আরফান এখনো উপস্হিত হয়নি।
__________
অপরদিকে, অর্ষা এবং মিরার অন্যান্য কাজিনেরা এবং আত্বীয়সজন আরফানদের বাড়ির সামনে নিজেদের গাডি থামায়। সঙ্গে সঙ্গে আকাশে আতশবাজি শুরু হয়। প্রথমে অর্ষা বের হয়ে, মিরার হাত ধরে আস্তে আস্তে সামনের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। তাদের উপর বর্ষিত হতে থাকা ফুল। আজ যদিও লেডিস শর্ট একটি টপ্স পড়েছে অর্ষা। চুলগুলো বরাবরের মতো খোপা করে, ড্রেসের সাথে মিলিয়ে একটা ক্যাপ পড়েছে৷ মিরা এতোবার বলেও, অর্ষাকে শাড়ি পড়তে রাজি করাতে পারলো না। তা নিয়ে, ব্যর্থতার রেশ মুখশ্রীতে ফুঠে উঠেছে মিরার।
সকলকে স্বাগতম জানিয়ে, ভেতরের দিকে নিয়ে থাকে আরফানের আম্মু এবং আব্বু। অপরদিকে জরুরী ফোন পেয়ে, ভিতরে না ঢুকে অর্ষা বাগানের দিকে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকে। কথা বলার মাঝে নিজের ক্যাপটা হাতে নিয়ে নেয় অর্ষা। তখনি পিছন থেকে কেউ অধরার খোপা করে চুলে………..
চলবে কী?
#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু ?
#পর্ব- ২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অর্ষার চুলের মু/ঠি ধরে টানতে টানতে সকলের সামনে ফেলে দিয়ে, পেটে অনাবরত লা/ত্থি মারতে থাকে সামনে থাকা অ/মানুষটা । সঙ্গে সঙ্গে নিজের আখিজোড়া খুলে পিটপিট করে তাঁকায় অর্ষা। কথা বলার মাঝে, যখন সে অনুভব করলো, কেউ তার চুল ছেড়ে দিয়েছে, তখনি তার নেত্রপল্লব বন্ধ হয়ে যায়। ভেঁসে উঠে অতীতের কিছু ভয়ংকর দৃশ্য। অর্ষা পরক্ষনেই রাগে ক্ষোভে নিজের হাতজোড়া মুঠো করে, সামনে থাকা ব্যক্তিকে ঠাটিয়ে চ/র বসিয়ে দেয়। চ/র খেয়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বর্ণ, কিন্তু তার আখিজোড়া এক মুহুর্তের জন্যে স্হীর হয়ে পরে অর্ষার দিকে। অর্ষার কালো কোকড়া , ঘন চুল, কোমড় ছাড়িয়ে হাটু অব্দি ছুই ছুই করছে। বর্ণ কিছুক্ষনের মাঝেও ঘোরে চলে গেলেও, অর্ষার দিকে তাকিয়ে বাস্তব জগতে ফিরে আসে। অর্ষা রক্তচক্ষু নিয়ে তাঁকিয়ে আছে বর্ণের দিকে। অর্ষা দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘ আপনি সেই অভদ্র লোকটা না? আবারো আমাদের পিছনে পিছনে চলে এসেছেন অসভ্যতামী করতে? হাউ ডেয়ার ইউ ইডিয়েট! আমার চুলে হাত দেওয়ার সাহস কীভাবে হয়? আজকে আপনাকে আমি…’
কথাটি সম্পূর্ন শেষ না করে, অর্ষা পুনরায় বর্ণের দিকে হাত উঁচু করতে নিলে, বর্ণ খপ করে হাত ধরে ফেলে। অর্ষা শত চেষ্টা করেও নিজের হাত ছাড়াতে পারছে না বর্ণের থেকে। বর্ণের বিশাল পেশিবিশিষ্ট হাত দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে, লোকটা নিয়মিত জিম করে। এতো বিশাল পেশিবিশিষ্ট হাতের কাছে, নিজের হাতকে অত্যান্ত নঘন্য মনে হচ্ছে অর্ষার। অর্ষার মনের ভাব কিছুটা হলেও বুঝতে সক্ষম হয়েছে বর্ণ। বর্ণ বাঁকা হেসে বলে, অর্ষাকে নিজের দিকে কিছুটা ঝুঁকিয়ে জবাব দেয়,
‘ আমি আপনাদের এলাকার সেই ছ্যাচরা কিংবা বখাটে ছেলে গুলো নই, তাই ওদের গাঁয়ে আপনি হাত দিতে পেরেছেন বলে, আমার সাথেও তাই করবেন! তা ভুলেও ভাবতে যাবেন না। বর্ণ আহমেদের সাথে গুন্ডামি করে লাভ নেই। একবার রেন্ডমলি চর খেয়েছি বলে, বার বার খাবো! হাউ ডেয়ার ইউ গার্ল? ‘
অর্ষা কিছু বলার পূর্বেই, একটা ছোট্ট বাচ্চা দৌড়াতে দৌড়াতে এসে, অনুনয়ের সুরে অর্ষাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ আন্টি! আন্টি! তুমি আংকেলকে মারলে কেন? আংকেল তো সবেমাত্র আসলো। কিছুটা মজা করে, আমি তো তোমার চুল খোপা দেখে ছেড়ে দিয়েছিলাম। তুমি পানেস্মেন্ট দিতে চাইলে, আমাকে দাও। আংকেলের কোন দোষ নেই। ‘
অর্ষা বাচ্ছাটার কথা শুনে, জ্বিবে কামড় দিয়ে সামান্য মাথা চুলকায়। সে বেশ বড় ভুল করে ফেলেছে, শুধু শুধু লোকটার দোষ না থাকা সত্ত্বেও, লোকটার গাঁয়ে হাত তুলেছে। এই প্রথমবার কাউকে মেরে, লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলেছে অর্ষা। বর্ণের দিকে তাঁকানোর সাহস পাচ্ছে না অর্ষা। সে বুঝতে পারছে বর্ণের চোখমুখ দিয়ে একপ্রকার অগ্নিশিখা বের হচ্ছে। অর্ষা একবার ভাবলো বর্ণের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবে, কিন্তু পরক্ষনে সে তার মত পাল্টিয়ে ফেললো। সে কেন ক্ষমা চাইবে? অর্ষা রেজওয়ান কিছুতেই ক্ষমা চাইবে না। বর্ণ অর্ষার কানে ফিসফিস করে বলে,
‘ আমি জানি আপনি ক্ষমা চাইবেন না। এলাকার বখাটেরা যেখানে আপনার পা ধরে মাফ চায়, সেখানে আমার মতো অতি সামান্য যুবকের কাছে আপনি ক্ষমা চাইবেনই বা কেন? ‘
অর্ষা বর্ণের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাতেই, বর্ণ মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
‘ আপনি হয়তো ভাবছেন, আমি কি করে আপনার সব খবরাখবর জানি ,তাইতো? ‘
অর্ষা দ্রুততার সাথে মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানালো। অর্থাৎ হ্যা সে জানতে চায়। বর্ণ পুনরায় ঝুঁকে গিয়ে, অর্ষার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
‘ ইটস কলড ম্যাজিক! মিস ঝাঁজওয়ালী। ‘
অর্ষা বর্ণের কথার সম্পূর্ন ভাব বুঝতে সক্ষম হওয়ার পূর্বেই, বর্ণ পুনরায় বলে উঠলো,
‘ আপনার বোন আমার হবু ভাবি! সেই সুবাধে আপনার খবরও সব আজকে পেয়েছি আর কি। ‘
বর্ন অর্ষার হাত শক্ত করে হুট করে ধরে, একপ্রকার টেনেই নিয়ে যেতে থাকে। অর্ষা শত চেষ্টা করেও, নিজের হাত ছাড়াতে পারছে না। বর্ণ অর্ষার হাত ধরে বাগানের পিছনের দিকে একটা দুতালা ঘর আছে, সেখানে নিয়ে যেতে থাকে। এদিকটা একপ্রকার নিশ্চুপ! কেউ এদিকে যাতায়াত করেনা। জনশূন্য একটি জায়গা। অর্ষা বার বার জিজ্ঞাসা করছে, তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কিন্তু প্রতিবারের ন্যায়, বর্ণ চুপচাপ। মুখশ্রী অদ্ভুদ্ভাবে লাল হয়ে আছে তার। ফর্সা মুখের এক পাশে ঠায় করে নিয়েছে, অর্ষার দেওয়া সেই চরের চিহ্ন! বর্ণ দুতালার একটি অন্ধকার ঘরে নিয়ে এসে, অর্ষার হাত ছেড়ে দেয়। অর্ষা রাগে ক্ষোভে চেচিয়ে প্রশ্ন করে,
‘ আপনার সাহস দেখে আমি বার বার অবাক হচ্ছি! আপনি কিন্তু লিমিট ক্রস করছেন…..’
অর্ষার কথার মাঝেই,দেয়ালের সাথে অর্ষার বাহু চেপে ধরে, দ্বিগুন চেচিয়ে গর্জে উঠে বলে,
‘ লিমিট তো আপনি ক্রস করেছেন, মিস ঝাজওয়ালী!
যার গাঁয়ে কখনো কেউ ফুলের টোকা দেওয়ার সাহস পাইনি, তাকে আপনি চর মেরেছি। আপনাকে তো তার দাম দিতেই হবে। ‘
অর্ষা নিজের থেকে সজোড়ে ধাক্কা দেয়। অর্ষা ধাক্কা খেয়ে কিছুটা দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বর্ণ। অর্ষা পকেটের পিছনে থেকে ধারালো ছু/রি খানা বের করে, বর্ণের দিকে তাক করে ক্ষিপ্ত সুরে বলে উঠে,
‘ আমি আপনাকে আগেও বলেছিলাম, আমাকে অন্য মেয়েদের মতো অসহায় ভাব্বেন না। আপনি কি ভেবেছেন? এই অন্ধকার ঘরে আমাকে একা নিয়ে এসে, অসভ্যতামি করবেন। আপনার কু মতলব আমি কি বুঝি না? ‘
বর্ণ দেয়ালে ঠেস মেরে দাঁড়িয়ে, অর্ষার চারদিকে ঘুড়তে ঘুড়তে অধরের কোণে অদ্ভুদ হাসি ঝুলিয়, বলতে থাকে, ‘ আপনি ঠিকই ধরেছেন মিস ঝাঁজওয়ালী। আমার অসৎ উদ্দেশ্য তো আছেই, কিন্তু তা আপনার কল্পনারও বাইরে। ‘
কথাটি বলার সাথে সাথে, অর্ষার হাত থেকে কৌশলে ছু/রি খানা কেড়ে নিয়ে, বর্ণ অর্ষার হাত পিছন থেকে একপ্রকার মো/চরে ধরে, অর্ষার গলা বরাবর ছু/রি ধরে। ঘটনাটি এতো দ্রুততম সময় ঘটে যাওয়ায়, কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না অর্ষা। লোকটা সত্যিই এক অদ্ভুদ রহস্যময় চরিত্র মনে হচ্ছে অর্ষার কাছে। বর্ণ বেশ দূরত্ব নিয়ে অর্ষার থেকে সরে এসে নিম্ন সুরে বললো,
‘ আমি আপনাকে বলেছিলাম মিস ঝাঁজওয়ালী। আমাকে আপনার এলাকার বখাটাদের সাথে কমপেয়ার করতে যাবেন না। আমাকে কাবু করা এত্তো সহজ না, তাও আবার এইসব সামান্য ছু/রি দিয়ে। ‘
বর্ণ কথাটি বলে, ছু/রি টা ফেলে দিয়ে। এক পা দু পা করে বাইরে বেড়িয়ে, দরজা বাইরে থেকে আটকে দেয়। অর্ষা দ্রুত দৌড়ে, দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে,
‘ আপনি বাইরে থেকে দরজা আটকালেন কেন? এখুনি খুলুন বলছি, নাহলে আমি!..
‘ নাহলে কি? আপনি তো অন্য মেয়েদের মতো নন। খুব তো সাহসী। তাহলে আমাকেও একটু সাহস দেখান। আমিও দেখতে চাই, কতটুকু সাহস আপনার। বর্ণ আহমেদকে চর মারার জন্যে ইউ হেভ টু পে ফর দিজ!’
কথাটি বলেই বর্ণ বেড়িয়ে যায়। যদিও শুধুমাত্র দশ মিনিটের জন্যেই অর্ষাকে আটকে রাখার পরিকল্পনা বর্ণের। বর্ণ গাঁয়ে হুলুদের অনুষ্টানে গিয়ে, মিরার কাছে গিয়ে বসে বলে,
‘ আমার হবু ভাবিজ্বী! কালকের জন্যে আমি রেইলি সরি। আমি আপনাকে চিনতে পারেনি।’
মিরা মিষ্টি হেসে বলে, ‘ আরে দূর বোকা সমস্যা নেই।’
বর্ণ কিছুটা ঠাট্টার সুরেই মিরাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ আচ্ছা ভাবি আগে এইটা বলুন তো? আপনি এত্তো মিষ্টি, কিন্তু আপনার বোন অর্থাৎ মিস ঝাঁজওয়ালী এতো ঝাল কেন? পুরাই যেন মিরচি। ‘
বর্ণের কথা শুনে মিরাসহ, মিরার বাকি কাজিনেরা সকলে হেসে উঠে। তখনি মিরার একজন কাজিন অর্পি স্টেজে এসে, বর্ণের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ শুধু কি ভাবির সাথেই কথা বললে হবে জনাব? একটু বেয়াইনদের দিকেও নজর দেন। ‘
বর্ণ প্রতিউত্তরে মুচকি হাসি দেয়। মিরার হবু বর আরফান এখনো উপস্হিত হয়নি। সে গত ৫বছর ধরে ক্যানাডা ছিলো বর্ণের সাথে। বর্ণ কিছুদিন আগে চলে এলেও, আরফান তার চাকরীর সুবাধে ক্যানাডায় থেকে যায়। আজকে তার দেশে ল্যান্ড করার কথা। মিরার সাথে পারিবারিকভাবেই বিয়েটা ঠিক হয়েছে আরফানের। আরফানের বাবা বার বার তার ছেলেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে অনাবরত, কিন্তু আরফান রিসিভ করছে না। আরফানের বাবা বেশ চিন্তিত তা নিয়ে। সময়ের মধ্যে তার ছেলে আসতে ব্যর্থ হলে, পুরো অনুষ্টানেই নষ্ট হয়ে যাবে। মেয়েপক্ষের সামনে সব মান – সম্মান শেষ হয়ে যাবে আরফানের বাবার।
_________
অপরদিকে অর্ষা অন্ধকার রুমের দিকে তাকিয়ে হুট করে কেঁদে উঠে। জায়গাটা তার কাছে, কেমন যেন অনেক পরিচিত মনে হচ্ছে। অর্ষার কানে ভেসে উঠে, কোন এক মেয়ের আর্তনাদ। অর্ষা দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ধপ করে মেঝেতে বসে,ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। চিৎকার করে বলে উঠে,
‘ আমার বাচ্চা। ‘
কথাটি বলে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পরে যায় সে। এদিকে বার বার অর্ষার ফোনে প্রতিনিয়ত ফোন করে যাচ্ছে মিরা, কিন্তু কিছুতেই রিসিভ করছে না অর্ষা। মিরা স্টেজ থেকে উঠে গিয়ে, নিজের কাজিনদের কাছে যায়। সেখানে বর্ণও ছিলো। মিরা সকলের কাছে গিয়ে, চিন্তিত সুরে বললো,
‘ অর্ষার কোন খবর পাচ্ছি না, সে যে ফোনে কথা বলতে কোথায় গেলো। তারপর থেকে কোন খবরই নেই। তোরা কেউ জানিস? অর্ষা কোথায়? ‘
সকলে মাথা নাড়িয়ে না জানায়। অর্থাৎ তারা জানে না। বর্ণ একপলক ঘড়ির দিকে তাঁকালো। প্রায় ২০ মিনিট পেরিয়ে গিয়েছে। আড্ডার মাঝে সে অর্ষার কথা একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিলো।
বর্ণ মুখ দিয়ে ‘ ওহ শিট’ উচ্চারণ করে দ্রুত দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো। সকলের বর্ণের হুট করে করা এমন আচরণে বেশ খানিক্টা অবাক হয়ে গেলো। বর্ণ দৌড়ে সেই বাগানের শেষে থাকা দোতলার ঘরের কাছে গিয়ে দেখলো সেখানে দরজা খুলা। এতে বেশ অবাক হলো বর্ণ। বর্ণের মনে অজানা এক ভয়ের উৎপত্তি ঘটলো। বর্ণ রুমের ভিতরে ঢুকে গিয়ে দেখে……….
লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি
চলবে কী????