#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু ?
#পর্ব- ৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
হলুদের আসরে সকলের সামনে মিরার হবু বর আরফান একটি মেয়েকে কোলে করে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। ছাদ থেকে সেই দৃশ্য মিরাসহ সকলেই দেখতে পেলো। মিরা দূর থেকেই স্পষ্ট দেখতো পেলো, মেয়েটি আর কেউ নয় বরং মিরার বোন অর্ষা। মিরা দ্রুত দৌড়ে নীচে চলে এলো। আরফানের বাবা- মাও নীচে নেমে এসে দেখতে পেলো, আরফান অর্ষাকে শুয়িয়ে দিচ্ছে। নিজেদের ছেলেকে এতোবছর দেখে চোখমুখে আনন্দ ভেঁসে উঠলেও, তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রন করলেন। মিরা ছুটেই নিজের বোনের কাছে গিয়ে, মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে, আরফানের দিকে তাকিয়ে অস্হিরতার সহিত প্রশ্ন ছুড়ে বললো, ‘ কি হয়েছিলো অর্ষার? ওর এমন অবস্হা হলো কী করে? ‘
আরফান মিরাকে হাত দিয়ে শান্ত হওয়ার ইশারা করলো। মিরাও চুপ হয়ে গেলো। আরফান সকলের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আমি গাড়ি পার্ক করতে বাগানের দিকে গিয়েছিলাম, তখনি খেয়াল করি দেখি আমাদের দুতালার ঘরের কিসের যেন আওয়াজ। আমি তা লক্ষ্য করে দ্রুত গিয়ে দেখি, উনি সেই রুমে বন্ধী হয়ে, অজ্ঞান হয়ে পরে ছিলেন। ‘
আরফানের কথা শুনে সকলে অবাক হলো! মিরার ভয়ে ভয়ে অর্ষার কাছে বসে, পুনরায় আরফানের নিকট প্রশ্ন করলো, ‘ কিন্তু আমার বোনের সাথে এমন কাজ কে বা কারা করলো? ‘
আরফান উত্তর দেয়,
‘ কে বা কীভাবে কি হয়েছে, সেসব নিয়ে প্রশ্ন না করে, আমাদের ডক্টর ডাকতে হবে প্রথমে। আচ্ছা বর্ণ কোথায়? ‘
আরফানের প্রশ্নে, তার এক কাজিন উত্তর দিয়ে বলে,
‘ বর্ণ ভাইয়া তো কি ভেবে যেন হুট করে দৌড়ে কোথায় যেন চলে গেলো। ‘
অপরদিকে বর্ণ ঘরে এসে দেখে অর্ষা নেই। অর্ষা কোথায় গেলো? কিংবা কে সেই আগন্তক যে অর্ষার দরজা খুলে দিয়েছে। বর্ণের ভাবনার মাঝেই বর্ণের ফোনে আরফানের মেসেজ এসে উপস্হিত হলো। তাতে স্পষ্ট লেখা, ‘ বর্ণ আমি পৌঁছে গিয়েছে বাসায়। তুই কোথায়? এখানে একটু ঝামালা হয়ে গিয়েছে। তুই যত দ্রুত সম্ভব ডক্টরকে নিয়ে ড্রইং রুমে আয়। ‘
বর্ণ বুঝতে পারলো না আরফান হঠাৎ তাকে ডক্টর নিয়ে যেতে বললো কেন? অন্যদিকে অর্ষাকে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে বর্ণ। অর্ষা কোথায় বা গেল? পরক্ষনে বর্ণ ভাবলো, অর্ষা যেমন স্মার্ট! সে নিশ্চয় কোন বুদ্ধি করে বেড়িয়ে গিয়েছে। বর্ণ সময় নষ্ট না করে, তার একজন পরিচিত ফ্যামেলির ডক্টরকে ফোন দিলো, যিনি শহরের মধ্যে একজন নামি দামি চিকিৎসক।
______________
বর্ণ কিছুক্ষনের মাঝেই চিকিৎসক এনামুল হাসানকে নিয়ে ড্রইং রুমে এসেই চমকে গেলো। অর্ষা সোফায় অজ্ঞান হয়ে শুয়ে রয়েছে। মিরা এবং তার কাজিনেরা
অর্ষার জ্ঞান ফিরানোর প্রচেষ্টায় রয়েছে। আরফানের আব্বু- আম্মু এবং আরফান দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাদের মুখশ্রীতে চিন্তার একরাশ জায়গা এসে দখল করে নিয়েছে। বর্ণ কিছু বলার পূর্বেই, আরফান বর্ণকে দেখে কিছুটা নিশ্চিন্তের সহিত বললো,
‘ তুই এসেছিস ডক্টরকে নিয়ে? ডক্টর আসুন। উনাকে দেখুন একটু। ‘
ডক্টর সাহেব অর্ষার কাছে গিয়ে, অর্ষাকে ভালো করে পর্যবেক্ষন করলো। অতঃপর প্যাড খাতা টা বের করে, তাতে কিছু ওষুধের নাম লিখতে লিখতে বললো,
‘ উনার হয়তো কোন কিছু একটা নিয়ে ফোবিয়া রয়েছে। ‘
ডক্টরের বলার মাঝেই, মিরা বলে উঠলো, ‘ হ্যা অর্ষার অন্ধকারে ফোবিয়া রয়েছে৷ ‘
‘ হ্যা সেই ফোবিয়া থেকেই উনি অজ্ঞান হয়ে পরেছিলেন, আমি এখন ওষুধ লিখে দিচ্ছি। একটা ইঞ্জেকশনও পুশ করে দিচ্ছি। আশা করি জ্ঞান ফিরে আসবে কিছুক্ষনের মাঝেই, ও আচ্ছা বর্ণ বাবা। ‘
ডক্টর সাহেবের হাক শুনে, বর্ণ কিছুটা অপরাধীর ন্যায় সামনে এলো। নিজের কাছে নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে, আজ তার জন্যেই অর্ষার এমন করুণ অবস্হা। ডক্টর চলে যাওয়ার পর পরেই, আরফান বর্ণকে সব খুলে বললো। প্রতিউত্তরে বর্ণ কিছু বলার পূর্বেই, মিরা চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ সবাই দেখো, অর্ষার জ্ঞান ফিরছে। ‘
মিরার কথায় সকলে খেয়াল করে দেখলো অর্ষার আখিজোড়া পিট পিট করছে অনাবরত। কিছুক্ষনের মাঝেই অর্ষা নেত্রপল্লব মেলে তাকায়। মিরা খুশি হয়ে, অর্ষার গালে হাত দিয়ে বলে, ‘ বোন? তুই ঠিক আছিস তো? এখন কেমন লাগছে? কীভাবে কি হলো? তুই ওই রুমে কীভাবে গেলি?’
অর্ষা ধীরস্হভাবে উঠে দাঁড়ায়। মিরা আরফানের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ আজ আরফান না থাকলে, তোর অনেক বড় বিপদ হতে পারতো। ‘
অর্ষা মিরার কথা অনুসরণ করে বর্ণের দিকে তাঁকায়। বর্ণের ঠিক পাশেই আরফান তার সুদর্শন শ্যামবর্ন মুখশ্রীতে এক ফালি হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পড়নে তার হলুদ শেরওয়ানী। সুঠোম দেহীতে তা বেশ মানিয়েছে। আরফানকে দেখেই, হাত পা কেঁপে উঠে অর্ষার। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। মাথায় হাত দিয়ে ফেলে সে। মাথা কেমন করে ঘুড়ছে তার। অর্ষা নিজেকে নিয়ন্ত্রন করার প্রয়াশ করে, যথাসম্ভব। আরফান এক পা এগিয়ে এসে প্রশ্ন করে, ‘ আপনি ঠিক আছেন তো? ‘
আরফান এগিয়ে এলে, দ্রুত গতিতে কিছুটা পিছিয়ে সোফার সাথে ঠেস মেরে বসে থাকে অর্ষা। নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে, স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয়,
‘ হ্যা আসলে…আমি আপাতত ঠিক রয়েছি। ‘
অর্ষার কথা শুনে সকলে স্বস্হির নিঃশ্বাস ফেললো। আরফানের মা বলে উঠলেন, ‘ এইবার তাহলে আমাদের অনুষ্ঠান শুরু করে দেওয়া উচিৎ। এমনিতেও সকলে ছাদে অপেক্ষা করছে। ‘
মিরা অর্ষার দিকে দৃষ্টি অর্পন করতেই, অর্ষা মিরার গালে হাত রেখে শুকনো গলায় বলে,
‘ তুই যা মরু। আমি ঠিক আছি। কিছুক্ষনের মাঝে আমিও চলে আসবো। আজকে তোর জন্যে বিশেষ দিন, তাই সময় নষ্ট করিস না। ‘
অর্ষার কথা শুনে মিরা কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো। আরফানের মা এইবার সকলে ডেকে মিরা এবং আরফানকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে ব্যাব্সহা করলেন। মেয়েরা এসে আরফান এবং মিরার উপর একই শাড়ির আচল উপর দিয়ে ধরে রেখে, নাঁচতে নাঁচতে ছাদের দিকে চলে গেলেন। অর্ষা ভয়ার্থ দৃষ্টিতে আরফানের দিকে তাকিয়ে থাকলেও, আরফান খুব স্বাভাবিকভাবেই সকলের সাথে নাঁচতে নাঁচতে চলে গেলো। সকলে চলে গেলে, অর্ষা নিজে নিজেই দাঁড়িয়ে পড়তেই, তার সামনে বর্ণ এসে দাঁড়ায়। অর্ষা বর্ণকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে, বর্ণ অর্ষার হাত ধরে ফেলে। অর্ষা নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে, বর্ণের থেকে নিজের হাত সরানোর চেষ্টা করে, কিন্তু সে ব্যর্থ হয়। অর্ষা তেজি গলায় উত্তর দেয়, ‘ আপনি আমার হাত ছাড়ুন। সেই শুরু থেকে আপনি আপনার লিমিট ক্রস করছেন। আপনি কিন্তু আমাকে চিনেন না। আমি আপনার লাইফ জাস্ট হেল করে দিবো। ‘
বর্ণ অর্ষার কথার প্রতিউত্তরে গলার স্বর নিম্ন করে বললো, ‘ আমি আপনার কাছে ক্ষমা……..
এইবার অর্ষা নিজের হাত ছাড়িয়ে, নিজের জিন্সের পকেটে হাত রেখে, কিছুটা তাচ্ছ্যিলের সুরে বলতে থাকে,
‘ আমি জানি আপনি আমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছেন, বাট আই ডোন্ট নিড ইউর সো কলড সরি। আই জাস্ট লাভ রিভেন্জ। ‘
বর্ণ প্রতিউত্তরে অর্ষার দিকে ঝুঁকে, অর্ষার ঠোটে আঙ্গুল রেখে, চোখ মেরে জবাব দেয়,
‘ হ্যা আমি একটু অপরাধবোধে ভুগছিলাম, কিন্তু আমি সরি চাইতে আসেনি। আমি জাস্ট বলতে এসেছিলাম যে, আজকে আমি আপনাকে বন্দী করে রেখেছি, কাল আপনি আমাকে বন্দী করে রাখিয়েন। স্পিম্পল! শোধ বোধ। ‘
বর্ণের কথা শুনে অর্ষার মুখ বেশ বড় হয়ে যায়। লোকটা কি সত্যিই পাগল নাকি অন্যকিছু?
‘ মিস ঝাঁজওয়ালী মুখ অফ করুন, নাহলে আপনার সুন্দর মুখশ্রীতে মাছি ঢুকে যাবে তো। ‘
বর্ণের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে মুখ বন্ধ করে ফেলে অর্ষা। বর্ণ সামান্য হেসে সিড়ি বেয়ে উপরে যেতে যেতে, হুট করে পিছন ঘুড়ে তাকিয়ে, অর্ষাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ কখনো কখনো অতীতের কালো অধ্যায়কে আকড়ে ধরে বাঁচতে হয়। বেঁচে থাকলে অতীতের সমক্ষীন হতে হবেই, তাই বলে কি মানুষ বেঁচে থাকে না মিস ঝাঁজওয়ালী? ‘
অর্ষার অবাক মুখশ্রী দেখে, তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে উপরের দিকে পা বাড়ায় বর্ণ। অর্ষা বসে পরে। বর্ণের মন – মস্তিষ্কে আদোও চলছে টা কী? অর্ষা পুনরায় বসে পড়লো। সে আপাতত বর্ণকে নিয়ে ভাবতে চাচ্ছে না। তার মস্তিষ্ক আপাতত জুড়ে রয়েছে আরফান নামক ব্যক্তি! এতোবছর পর তাকে দেখলো অর্ষা। আরফান তার বোনের হবু স্বামী, তা জানতো না অর্ষা। আরফানের কথা অর্ষা মিরার মুখে অনেকবার শুনলেও, তার কোন ছবি বা ভিডিও দেখার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিলো না তার। অর্ষা কম্পিত গলায় বললো, ‘ আবারো সেই অতীত! ‘
______________
বর্ণ ছাদে আসতেই, মেয়েরা বর্ণকে ঘিড়ে ধরে এবং তাদের আবদার যেন বর্ণ তাদের সাথে বিশেষ করে অরুর সাথে একটা কাপল ডান্স যেন দেয়। অরু মিরার সম্পর্কে আপন বোন হয়। এখানে এসেই অরুর বর্ণের প্রতি আলাদা ভালোলাগা সৃষ্টি হয়, কিন্তু বর্ণ তাদের একপ্রকার এড়িয়েই, নিজের বন্ধুমহলের কাছে গিয়ে বসে। বর্ণের কাছে প্রতাক্ষান পেয়ে, অরু রাগে নিজের চেয়ারে বসে পড়ে। অরুর পিছনে তার কাজিনেরাও চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ে। অপরদিকে
অর্ষা ছাদে আসতেই আরফান তার সামনে এসে দাঁড়ায়। আরফানকে দেখে………
চলবে কি?
লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি