#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু ?
#পর্ব- ৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আরফান অর্ষার জীবনের ভয়ংকর এক অতীত যে বর্তমানে নিজের বোনের হবু স্বামী।তাকে দেখে দ্রুত পায়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো অর্ষা। আরফান ভ্রু নাড়িয়ে, কিছুটা এগিয়ে আসলো অর্ষার দিকে। অতঃপর অর্ষাকে পা থেকে মাথা অব্দি এক পলক দেখে কুৎসিতভাবে হেসে বলতে লাগলো, ‘ অনেক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছো তুমি অর্ষা। যাক গে, তুমি কি কোনভাবে আমাকে ভয় পাচ্ছো অর্ষা? উফ কামন!
আমরা তো এখন থেকে আত্বীয়। তুমি আমার শালিকা। আমি তোমার দুলাভাই। আর জানো তো? শালি মানে হচ্ছে আধি ঘরওয়ালী। ‘
কথাটি বলেই আরফান অর্ষার কাধে হাত রেখে, সঙ্গে সঙ্গে আরফানের হাত নিজের শরীর থেকে সরিয়ে ফেলে। আরফান তার হাত সরিয়ে মুষ্ঠিবদ্ধ করে রাখে। রক্তবর্ণ হয়ে উঠেছে অর্ষার মুখশ্রী। রাগে শরীর রি রি করে উঠছে তার। অর্ষা দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘ আরফান, আমাকে তোমার নোংরা হাত দিয়ে টাচ করার মূল্য তোমার থেকে আমি ঠিকই সময়মতো নিয়ে নিবো। ‘
দূর থেকে বর্ণ আরফান এবং অর্ষাকে খেয়াল করছিলো। বর্ণ উঠে দাঁড়িয়ে স্টেজের কাছে গিয়ে, মাইক হাতে নিয়ে সকলের উদ্দেশ্য বলতে লাগলো,
‘ লেডিস এন্ড জেন্টালমেন! লিসেন! লিসেন! কিছুক্ষনের মাঝেই হলুদের অনুষ্টান শুরু হয়ে যাবে। সো তার আগে নাঁচ গান হয়ে যাক? কি বলুন সবাই?’
সকলে হাত উচু করে বললো, ‘ হ্যা! হ্যা! হয়ে যাক। ‘
বিশেষ করে কাজিনমহল এবং বর্ণ, আরফানের বন্ধুগন বেশ উৎসাহের সাথে প্রথমে বর্ণকে বললো সে যেন প্রথমে শুরু করে। অরু আবারো গিয়ে বর্ণের কাছে আবদার করে বলে, ‘ বর্ণ ভাইয়া, শুনেছি আপনি অনেক ভালো ডান্সার ছিলেন। খুব ভালো গান ও গাইতে পারেন। সো আপনিই গান শুরু করুন। আমি মানে আমরা তো আপনার সঙ্গ দেওয়ার জন্যে রয়েছিই। ‘
বর্ণ অরুর কথায় হাল্কা হেসে অর্ষার দিকে তাকিলো। সে আরফানের থেকে দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আরফান কিছুটা অপমান নিয়ে, মিরার কাছে গিয়ে বসে পরে। বর্ণ অর্ষার দিকে তাকিয়েই বললো,
‘ সে পাশে থাকলে দুনিয়ার অন্য কারো সঙ্গের প্রয়োজন হয় না। ‘
বর্ণের দৃষ্টি অনুসরন করে অরুও দৃষ্টিপাত করলো অর্ষার। সঙ্গে সঙ্গে বেশ বড়ভাবে ভরকে গেলো।
মিরা আড়চোখে নিজের পাশে থাকা প্রেমিক পুরুষ আরফানকে দেখে নিলো। মুখে গাম্ভীর্যের হাল্কা ভাব, তবুও মানুষটার সৌন্দর্যের কমতি নেই।
এই মানুষটাকে এতোদিন ছবির পাতায় দেখে আসলেও, আজ সরাসরি তাকে দেখার ভাগ্য হয়েছে মিরার। ছবিতে আরফানকে প্রথম দেখায় তার মনে ভালোলাগার উৎপত্তি ঘটে মিরার। আস্তে ধীরে কথা বলতে বলতে তা আজ ভালোবাসায় রুপান্তর হয়েছে। মিরার মনের বাসনা কোন বিপদ যেন তাদের জীবনে না আসে।
অপরদিকে বর্ণ ধীর পায়ে অর্ষার দিকে এগোতে এগোতে গাইতে থাকে,
‘তোমার চোখে আকাশ আমার চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা’..
গানটি শুনে ভিতর থেকে বুক ছেদ করে উঠে অর্ষার। আখিজোড়া হয়ে উঠে ছলছল। বর্ণ অর্ষার কাছে গিয়ে ধীর কন্ঠে গেয়ে উঠে,
‘ভেতর থেকে বলছে হৃদয় তুমি আমার প্রিয়তমা..’
অর্ষা নিজের জামা খামচে ধরে বর্ণের দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অর্ষা স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারছে বর্ণের গলা ভেজা। কেমন একটা ভেজা গলায় গান গাইছে বর্ণ! আচ্ছা বর্ণ কি কেঁদেছে? আচ্ছা ছেলেরাও কি কাঁদতে পারে? কিন্তু বর্ণ কেন কেঁদেছে?বর্ণ অর্ষার চারপাশে ঘুড়তে ঘুড়তে গাঁইতে থাকে,
‘পথের শুরু থেকে শেষে যাবো তোমায় ভালোবেসে
বুকে আছে তোমার জন্য অনেক কথা জমা। ‘
গানটি গাইতে গাইতে বর্ণ অর্ষার হাত ধরে সকলের সামনে এনে, অর্ষার হাত নিজের হাত রেখে নাঁচতে নাঁচতে গাইতে থাকে,
‘তোমার চোখে আকাশ আমার চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা
ভেতর থেকে বলছে হৃদয় তুমি আমার প্রিয়তমা’
মিরা অদ্ভুদ্ভাবে অর্ষার দিকে তাঁকালো। বর্ণ অর্ষাকে স্পর্শ করলো অথচ অর্ষা কোন প্রতিক্রিয়া করলো না কেন?এলাকার কোন ছেলে হলে তো, তাকে এতোক্ষনে জমের ঘরে পাঠিয়ে দিতো, কিন্তু আজ কি হলো অর্ষার? অর্ষার চাহনী স্হীর, নির্জীব। বর্ণের স্পর্শে অদ্ভুদভাবে কেঁপে উঠেছে তার হৃদয়। সে কেন যেন দূর্বল হয়ে পরছে। অপরদিকে অরু ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে দুজনের দিকে। বিড়বিড় করে বলে যাচ্ছে, ‘ আমাকে রিযেক্ট করে, অর্ষা আপুর সাথে ঠিকই নাঁচ্ছে বর্ণ। আচ্ছা ওই অর্ষা আপুর মধ্যে বর্ণ ভাইয়া কি এমন পেলো? ‘
বর্ণ হুট করে গান থামিয়ে দিলো। সকলে একসাথে হাতে তালি দিতে লাগলো। আরফান শুধু বসে রইলো। সকলের হাতে তালির শব্দে, ধ্যান ফিরলো অর্ষার। অর্ষা হুট করে বলে উঠে,
‘ আপনি আমার কাছে কোন এক গল্পের রহস্যময় চরিত্র। ‘
‘ সেই চরিত্রের সূচনা হয়েছে আপনাকে ঘিড়ে মিস ঝাঁঝওয়ালী। ‘
বর্ণের পাল্টা উত্তরে, সে নিজেকে বর্ণের থেকে সরিয়ে, দ্রুত পায়ে হেটে নীচের দিকে চলে গেলো। অর্ষা চলে যেতেই, বর্ণের বন্ধুমহল বর্ণের কাছে এসে বলতে লাগলো,
‘ বাহ দোস্ত! তুই তো তোর বেয়ানের সাথে সেইরকম ভাবে ফাটিয়ে দিলি। ‘
বর্ণ মাথা নিচু করে ছোট্ট করে হাসি দিলো। আরফান উঠে দাঁড়ালো। মিরা আরফানের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে প্রশ্ন করলো,
‘ কোথায় যাচ্ছো তুমি? একটু পরেই তো অনুষ্টান শুরু হয়ে যাবে। ‘
আরফান যেতে যেতে বললো, ‘ এইতো চলে আসছি এখুনি। ‘
আরফান দূরে এসে কাউকে ফোন দেয়।
______________
গাঁয়ে হলুদের অনুষ্টান সম্পূর্ন হলে, পাত্রীপক্ষ বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি। কালকে বিকালে রংয়ের অনুষ্টান রয়েছে মিরার বাড়িতে। আরফানদের বাড়ির নিয়ম হচ্ছে হলুদের পর নয়, বরং রং খেলার উৎসবের পরে বিয়ের অনুষ্টান হয়। সে অনুযায়ী কালকে মিরাদের বাড়িতে রং খেলার অনুষ্টান। অর্ষা মিরার কাছে গিয়ে বলে, ‘ মরু তুই গাড়িতে উঠ, আমি এখুনি আসছি। ‘
মিরা মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়। অর্ষা তার পকেটে হাত রেখে শিষ বাজাতে বাজাতে, সোজা আরফানের রুমে ঢুকে। আরফান ওয়াশরুম থেকে সবেমাত্র বের হয়েছিলো। অর্ষাকে দেখেই হেসে বললো,
‘ ওয়াট আ সারপ্রাইজ! মিস অর্ষা রেজওয়ান নিজ থেকে আমার রুমে এসে আমাকে একপ্রকার ধন্য করিলেন। আমি সত্যি গ্রেটফুল! তা বর্ণের সাথে তো ভালোই ধেই ধেই করে নাঁচলে, আর আমি টাচ করলেই দোষ? ‘
অর্ষা, আরফানের কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই, আরফানের গলা চেপে ধরে, পিছন দিয়ে আরফানের
হাত মোচরে ধরে। আরফান চাইলেও নিজের থেকে অর্ষাকে সরাতে পারেনা। অর্ষা আরফানের গলা চেপে ধরে, অধরের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে, ধীর গলায় বলে,
‘ বেবস! বলেছিলাম না? আমাকে টাচ করার মূল্য তোমার উপর ভারি পরবে। আমি ৫বছর আগের অর্ষা নই, আমি অর্ষা রেজওয়ান। হিসাব কড়া কন্ডায় ভালো করে নিতে জানি। হিসাবের তো কেবল শুরু মাত্র।’
এতো জোড়ে গলা চেপে ধরায় ঠিক মতো কথাও বলতে পারছে না আরফান। শুধু তোতলিয়ে বলে,
‘ ভূলে যেও না, আমার সাথে তোমার বোনের বিয়ে হচ্ছে, তোমার জন্যে কিন্তু তোমার বোনকে সাফার করতে হবে। ‘
‘ বিয়েটা আদোও কি হবে? ‘
অর্ষার হেয়ালি প্রশ্নে অবাক হয়ে পরে আরফান। তা দেখে পুনরায় হেসে উঠে অর্ষা। অপরদিকে অর্ষার দেরী হওয়াতে একপ্রকার চিন্তিত হয়েই, মিরা গাড়ি থেকে বেড়িয়ে, অরুকে সাথে নিয়ে ভেতরের দিকে চলে আসে। আরফানের বাবা মা এখনো ছাদে নিজেদের গেস্টদের খাওয়ানের ব্যবস্হা করছেন। অন্যদিকে অর্ষা আরফানের গলা এমনভাবে চেপে ধরেছে, যেন আরো কিছুক্ষন রাখলে শ্বাসরোধ হয়ে ম/রে যাবে আরফান। অর্ষার আরফানকে দেখে মস্তিষ্ক একপ্রকার কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তার শুধু অতীতের সেই দিনগুলোর কথা মনে পরে যাচ্ছে। মিরা এবং অরু নীচে থেকেই শুনতে পেলো, আরফানের ঘরে কিছু একটা নিয়ে আওয়াজ হচ্ছে। আওয়াজ পেয়ে দুজনেই আরফানের রুমের সামনে আসে। মিরা আরফানের রুমের দরজা ধাক্কা দিতেই……
চলবে কী?