#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু ?
#পর্ব- ৭,০৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
০৭
বর্ণ হুট করে এসে, শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো অর্ষাকে সকলের সামনে। অপর হাত দিয়ে বিপরীত দলের ছেলেটির লা/ঠিটিকে ধরে রাখলো। যা দিয়ে সে অর্ষাকে আ/ঘাত করতে এসেছিলো। বর্ণ শক্ত করে অর্ষা নিজের বক্ষস্হলের মধ্যিখানে সীমাবদ্ধ রাখলো,যেন কোন বাহ্যিক আ/ঘাত কিংবা আ/চ অর্ষার গাঁয়ে না লাগে।অর্ষা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বর্ণের পানে। পাশে থাকা হ্যাংলা পাতলা গড়নের ছেলেটি বারংবার বর্ণের থেকে নিজের লা/ঠি সরানোর প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে, কিন্তু সে ব্যর্থ! অর্ষা বর্ণের বুক থেকে সরে আসতে চাইলে, বর্ণ অর্ষাকে নিজের থেকে সরে যেতে দেয় না। শক্ত করে চেপে ধরে নিজের বক্ষে। পাশের ছেলেটিকে নিজের বা পা দিয়ে লা/ত্থি মেরে দূরে ছিটকে ফেলে। নিজেদের দলের লোকদের মা/রায় বিপরীত দলের ছেলেরা চটে যায় পূর্বের তুলনায়। তারা সকলে বর্ণের দিকে এইবার আক্র/মণ করতে যায়। অর্ষাকে নিজের থেকে সরিয়ে বর্ণ তাদের কাছে গিয়ে মা/রামা/রি করতে থাকে। মূলত বিপরীত দলের ছেলেদের থামানোর জন্যেই, নিজেই ঝাঁপিয়ে পরে বর্ণ। বর্ণ স্পষ্ট বুঝতে পারছিলো অর্ষা তাদের সামলাতে গিয়ে হিমষিম খাচ্ছে। অর্ষা হকি স্টি/ক হাতে নিয়ে এগিয়ে আসতে চাইলে, বর্ণ দ্রুত অর্ষাকে থামিয়ে দিয়ে তেজি গলায় বলে, ‘ একদম আসবেন না আপনি। দাঁড়িয়ে থাকুন আপনি। পরিস্হিত আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে গিয়েছে। এখন আপনার জন্যে বেশ রিস্কি! সো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকুন। আমি হ্যান্ডেল করছি এদিক টা। ‘
বর্ণের কথার পাছে বিপরীত কোন শব্দ উচ্চরণ করলো না অর্ষা। অন্য কেউ হলে কখনোই তার কথা গাহ্য করতো না,কিন্তু বর্ণ কেন যেন খুব আলাদা তার কাছে। তাকে অগাহ্য করার ক্ষমতা অর্ষার নেই। অর্ষা দেখতে পেলো বর্ণের সামনে অনেকেই আ/হত হয়ে পরছে, তারা বর্ণের সাথে কিছুতেই পেরে উঠছে না। বর্ণের মা/র/পিট দেখে এক পলক মুগ্ধ হয়ে তাঁকায় অর্ষা। বিড়বিড়িয়ে বলে, ‘ এত্তো সুন্দর ফাইটিং? আচ্ছা উনি কি রেগুলার ফাইট করে? ‘
_______________
বর্ণের মাথায় ব্যান্ডিজ করে বর্ণের সামনাসামনা বসে অর্ষা। মুখে তার একরাশ রাগ। রিপোর্টটরা মুহুর্তেই চলে এসেছে। তারা সকলে একপ্রকার ভীর জমিয়ে ফেলেছে। অর্ষা একপলক বর্ণের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায়, অতঃপর সামনের দিকে দাঁড়ায়। সেখানে তাদের দলের ছেলেপেলারা ছিলো, তারা রিপোর্টটারদের সামলাচ্ছিলো। অর্ষাকে দেখেই তারা সরে দাঁড়ালো। অর্ষা তাদের সামনে দাঁড়িয়ে, খানিক্টা দাপটতার সহিত সুধালো, ‘ আপনারা তো দেখলেনই! সামনে নির্বাচন, অথচ বিপক্ষের দল কি করলো? রাতে সকলের আড়ালে, আমাদের দলের ছেলেদের উপর আক্রমণ করলো, এমনকি! আমাদের সাধারণ জনগণের উপরও তারা আক্রমণ করেছে, তারা আপাতত হসপিটালে ভর্তি। কিছুতেই তাদের থামালো যাচ্ছো না। আমার মনে হয় তাদের পরিকল্পনা ছিলো যেমন করেই হোক, আমাদের দমিয়ে রাখা, বাট আনফরচোনেটলি, তা তারা পারে নি। ‘
রিপোর্টটরা বড় বড় করে অক্ষরে অর্ষার প্রতিটি বয়ান লিখে রাখলো, সবকিছু লাইভে আজ দেখানো হচ্ছে। দূর থেকে বর্ণ বসে বসে সব পর্যবেক্ষন করছে। নিজেকে মিডিয়ার থেকে ইচ্ছে করেই দূরে সরিয়ে রেখেছে সে। মিডিয়া তাকে দেখলেই উল্টা আজেবাজে নিউজ রটিয়ে ফেলবে, যা তার কম্পানির ইমেজের বেশ খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। অর্ষা রিপোর্টটারদের প্রশ্নের উত্তর বেশ দক্ষতার সাথে দিয়ে, সাইডে সরে এসে বর্ণের কাছে আসলো। মা/রা/মা/রির এক পর্যায়ে একজন এসে পিছন থেকে বর্ণের মাথায় আ/ঘাত দেয়, তখন অর্ষা নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারে না। সে দৌড়ে এসে বর্ণকে ধরে, সে ছেলেটাকে নিজের হ/কি স্টি/ক দিয়ে মারতে মারতে জ/খম করে ফেলে। যদিও বর্ণ নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছিলো। অর্ষা তীব্র শ্বাস ফেলে বলে, ‘ কি দরকার ছিলো মা/রা/মা/রি করার?
মাথা ফা/টিয়ে বসলেন তো এখন। ‘
বর্ণ কিছুটা ভাবের সাথেই, নিজের শার্টের হাত গুটিয়ে বলতে থাকে, ‘ ওইসব আমার কাছে কোন ব্যাপার না, আমার কিছুই হতো না, শুধু ওই রা/স্কেল টা পিছন থেকে এসে, আ/ঘাত করায়, এমন টা হলো। ‘
‘ আপনি এখন বাড়ি ফিরে যান, অনেক রাত হয়েছে।’
‘ আপনি কখন যাবেন? ‘
‘ কিছু কাজ আছে, তা শেষ করে বাড়ি ফিরবো। ‘
অর্ষার স্পষ্ট উত্তর। বর্ণ সায় জানিয়ে উঠে দাঁড়াতেই, অর্ষার কেমন বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো। বর্ণের মাথায় বেশ চ/ট পেয়েছে। কেমন একটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে। যদি গাড়ি চালানোর সময় হুট করে অজ্ঞান হয়ে পরে? মানুষটার জন্যে চিন্তার হচ্ছে তার। অর্ষার একবার মনে প্রশ্ন জাগলো, ‘ আচ্ছা আপনার কি মাথায় ব্যা/থা করছে? ‘
অর্ষার জিজ্ঞাসা করেও করা হলো না। সে নিষ্চুপ হয়ে থাকলো। বর্ণ কি ভেবে যেন অর্ষার কাছে এগিয়ে এসে বললো, ‘ মিস ঝাঁঝওয়ালী আমাকে নিয়ে চিন্তা না করে, নিজের কাজে মনোযোগ দিন। আমি সাবধানে পৌঁছে যাবো। ‘
অর্ষা ভরকে গেলো বর্ণের উত্তরে। মানুষটা সত্যি অদ্ভুদ! কি করে তার মনের ভাব বুঝে যায়? মানুষটা কি মনোবিজ্ঞানী?
নিজের অজান্তেই,অর্ষা বর্ণকে প্রশ্ন করলো, ‘ আপনি কি মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেছেন? ‘
অর্ষার প্রশ্নে বর্ণ আলতো করে হেসে বললো,
‘ মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়েনি, তবে মিস ঝাঁঝওয়ালী আপনার মনের মনোবিজ্ঞানী হতে চাই। হতে দিবেন আমায়? ‘
বর্ণের বিপরীত প্রশ্নের প্রেক্ষিতে পিছনে ঘুড়ে যায়। বর্ণ পুনরায় হাঁসে।
____________________
নিজের ছেলেকে জ/খম অবস্হায় দেখে বর্ণের মা, দ্রুত দৌড়ে এসে, তার ছেলের মাথায় হাত রেখে বলে,
‘ কি হয়েছে বর্ণ তোর? ফোন কেন অফ ছিলো তোর? কি হয়েছে বাবা আমার? তোর মাথায় চ/ট পেলি কীভাবে? ‘
বর্ণের মা একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন। বর্ণ তার মায়ের কথার প্রেক্ষিতে, তার মাকে বসিয়ে বললো, ‘ মা! মা এত্তো চিন্তার কিছুই নেই। ছোট খাটো একটা এক্সিডেন্ট আর কিছুই না। ‘
বর্ণের মা বর্ণের মাথায় হাত বুলিয়ে চিন্তার সুরে বলে,
‘ জানিনা বাপু। তুই আমাদের একমাত্র ছেলে। তোকে নিয়ে আমার চিন্তার শেষ নেই। এদিকে প্রতিদিন তোকে পাত্রির ছবি দেখাতে দেখাতে আমি ক্লান্ত। একটা মেয়েও তোর পছন্দ হয় না। তুই কি আদোও বিয়ে করবি? ‘
বর্ণ সোফায় হেলান দিয়ে বললো, ‘ না মা, ভাবছি আজীবন সন্নাষ্যি থেকেই যাবো। ব্যাপারটা বেশ ইউনিক হবে। বলিউডের ভাইজান সাল্লু ভাই আর আমি দুজনেই সিংগাল থাকার ব্রত পালন করবো। ব্যাপারটা হেব্বি জোস!’
ছেলের কথায় বর্ণের মা বর্ণকে আলতো মে/রে বললো, ‘ তোর মজা শেষ হবে না তাইনা? সব বিষয়েই মজা করতে হবে? ‘
মায়ের কথার বিপরীতে বর্ণ হু হা করে হেসে উঠে। অতঃপর পেটে হাত রেখে অসহায় সহিত বলে,
‘ মা অনেক ক্ষুধা লেগেছে, খাবারের ব্যবস্হা করো। ‘
বর্ণের মা খাবারের টেবিলে যেতে যেতে বলে,
‘ আরফানেরও বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে, আমি কিন্তু তোরও বিয়ে ঠিক করে ফেলবো। এইবার তোর কোন বাহানা আমি শুনবো না। ‘
____________________
আজ মিরা এবং আরফানের রং খেলার উৎসব। অর্ষা আজ সকাল সকাল তৈরি হয়ে রয়েছে। অপেক্ষা আরফানের। আজ আরফানের সাথে বেশ কিছু হিসাব রয়েছে তার। অপরদিকে অরু আজ অন্যদিনের তুলনায় বেশ সাজগুজ করে, অর্ষার কাছে এসে দাঁড়িয়ে নিজের লেহেংগা দেখিয়ে বললো,
‘ অর্ষা আপু আমাকে আজ কেমন লাগছে? ‘
‘ ভালোই লাগছে। ‘
ছোট্ট করে বললো অর্ষা। অরু পুনরায় কি ভেবে যেন প্রশ্ন করলো ‘ আজ আমায় দেখে বর্ণ ভাইয়া ক্রাশ খাবে তো অর্ষা আপু? ‘
অরু একপ্রকার ইচ্ছে করেই অর্ষাকে প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করলো। অরুর প্রশ্ন বেশ বিরক্ত করলো অর্ষা। সে বিরক্তির সহিত তেজি গলায় জবাব দিলো,
‘ একদমই ক্রাশ খাবে না। এমন ভুতের মতো সাঁজলে, শুধু বর্ণ কেন কেউই ক্রাশ খাবে না। বরং সবাই ভুত ভেবে ভয় পেয়ে পালাবে। ‘
চলবে কি?
#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু ?
#পর্ব- ৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
বিয়ের আগের দিন আরফানের কানাডার প্রেমিকা অনাবরত ফোন দিয়ে যাচ্ছে আরফানকে। আরফান পরেছে মহাবিপদে। কাল তার বিয়ে অথচ রোজিয়ানা তাকে একপ্রকার জ্বালিয়ে মারছে। আরফান রোজিয়ানাকে ফোন করে, শান্ত সুরে বলে, ‘ দেখো রোজিয়ানা, আমি বলেছি কানাডা এসেই তোমার সাথে মিট করবো। ওকে বেবী? ‘
রোজিয়ানা একপ্রকার গর্জেই উত্তর দেয়, ‘ কিসের ওকে হ্যা? কিসের ওকে? তুমি আমাকে না জানিয়েই বিডিতে চলে গেলে, আমার কল ব্যাক করছো না। কি হয়েছে তোমার? আচ্ছা তুমি কোনভাবে আমাকে চিট করার ট্রাই করছো না তো আরফান? ‘
আরফানের ললাটে বিন্দু বিন্দু ঘামের সৃষ্টি হতে লাগলো। হাত বাড়িয়ে তা দ্রুত মুছে সে মিনমিনিয়ে বলতে লাগলো, ‘ কি বলছো রোজিয়ানা? এমন কিছুই না। আমাকে তুমি সন্দেহ করছো? মানে আমার প্রতি তোমার কোন ট্রাস্টই নেই। ‘
‘ না নেই। ‘
রোজিয়ানার সোজা উত্তর। এক দুই কথায় আরফানের এবং রোজিয়ানার বেশ বড়সর ঝগড়া বেঁধে গেলো। অপরদিকে পাত্রপক্ষ সকলেই প্রায় মিরার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে, কিন্তু রোজিয়ানার ঝামেলার জন্যে, আরফানের দেরী হয়ে যাচ্ছে।
__________________________
‘অরুকে তো বেশ সুন্দরই লাগছে মিস ঝাঁঝওয়ালী।’
পিছন থেকে বর্ণ কথাটি বলে সামনে এলো। অরু বর্ণের দিকে একপলক তাকিয়ে খুশিতে প্রায় আত্বহারা হয়ে গেলো। তার ক্রাশ তাকে সুন্দর বলেছে, সে যেন আকাশের চাঁদ পেয়ে গেলো। অরুর খুশি দেখে সে? সে বর্ণের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখিয়ে বললো, ‘ বর্ণ ভাইয়া তুমি আমাকে সুন্দর বলছো মানে, আজ আমাকে সবথেকে বেস্টই লাগছে। থ্যাংকস আ লট! ‘
অরু পিছনে ঘুড়ে অর্ষাকে দেখে মুখ ভেংচি কেটে বললো, ‘ যাদের সৌন্দর্য বা মেয়েদের ফ্যাশন নিয়ে সেন্স নেই, তারা কি বুঝবে কাকে কেমন লাগছে। ‘
অর্ষা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বর্ণ মিটিমিটি হাঁসছে তা দেখে। অর্ষা পায়ের উপর পা রেখে বর্ণের দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে, অরুকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে, ‘ যারা অন্যের কথায় কোনকিছু বিবেচনা না করে, লাফায়। তাদের মতো মূর্খ কেউ হতে পারে না। তুই তার বড় উদাহরণ।’
অরু কথাটি শুনে আখিজোড়া বড় বড় করে অর্ষার দিকে তাকায়। অর্ষা তাকে বর্ণের সামনে অপমান করে দিলো। বর্ণ কি ভাবলো? অরু বর্ণের দিকে তাকাতেই, দেখতে পায় বর্ণ তার পাঞ্জাবির পকেটে হাত রেখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে অর্ষার দিকে। অর্ষা রোদে দাঁড়িয়ে একপ্রকার ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছে। চুলগুলো খোপা করে। দু তিনটে অবাধ্য চুল এসে, অর্ষার ললাটে জুড়ে লেপ্টে রয়েছে। বর্ণের বড্ড ইচ্ছে হলো হাত বাড়িয়ে, অবাধ্য চুলগুলোকে সরিয়ে দিতে, কিন্তু সে তা করলো না। থাকুক না অবাধ্য চুলগুলো। সুন্দরই তো লাগছে।
অরু নিজেকে দেখিয়ে বললো, ‘ আচ্ছা এইভাবে ছেলেদের মতো না থেকে, আমাদের তো সেঁজেগুজে তো থাকতে পারো। ওহ আমিও না কাকে বলছি তুমি তো মনে হয় সাঁজতেই পারো না। ‘
অরু কথাটি বলে হু হা করে হেসে উঠে। অরুর পিছনে অরুর কাজিনেরা ছিলো, তারাও পিছন থেকে হেসে ফেললো অরুর কথায়। অর্ষা হাতে হাত রেখে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কোনরুপ বিরুপ প্রতিক্রিয়া করলো না।
বর্ণ অর্ষাকে জ্বালাতে একটু মুচকি হেসে ধীর গলায় বললো,
‘ কি হলো মিস ঝাঁঝওয়ালী কোন উত্তর দিলেন না যে। ‘
অর্ষা বর্ণের প্রশ্নের উত্তরে সকলের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো, ‘ মূর্খদের সাথে অযথা তর্কে জড়ানো সবথেকে বড় মূর্খতা। ‘
অর্ষা কথাটি বলেই, পা চালিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো। অরুসহ তার সকল কাজিনদের মুখে বিষন্নতার রেশ পরে গেলো। অপমানে নিচু হয়ে গেলো তাদের মাথা। বর্ণ পিছনে অরুর কাছে এসে, ঠোটে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বললো, ‘ একটু বেশিই পাম মেরে দিয়েছি আজকে, একটু কম ম্যাকাপ করিও কেমন? বড় ভাই হয়ে এডভাউজ দিচ্ছি। নাহলে সবাই সত্যি ভয় পেয়ে পালাবে। ‘
[ লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
বর্ণ কথাটি বলেই, অর্ষার পিছনে গেলো। অরু অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। যার জন্যে এত্তো সাঁজলো সে, সেই তাকে অপমান করে দিলো! অরুর সকল কাজিনেরা মিটিমিটি করে হাসছে। অরু তাদের দেখে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাঁকাতেই, তারা চুপ হয়ে গেলো।
অর্ষা বাড়ির ভিতরে ঢুকে, মিরার মায়ের কাছে জিজ্ঞাসা করলো, ‘ মামি আরো কিছু লাগবে? মানে বাজার থেকে আর কিছু নিয়ে আসতে হবে? ‘
মিরার মা শরবতের গ্লাসটা অর্ষার হাতে ধরিয়ে দিয়ে, তাড়া দিয়ে বললেন, ‘ সকাল থেকে অনেক কাজ করেছিস, এইবার গ্লাসটা খেয়ে শেষ করতো বাপু। আমার আবার মেলা কাজ রয়েছে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে। পাত্রপক্ষরা চলে এসেছে, আরফান বাদে। আরফান চলে আসলেই শুরু হয়ে যাবে। ‘
মিরার মা কথাটি বলেই, সামনে তাকাতে দেখেন বর্ণ তার দিকেই এগিয়ে আসছে। বর্ণকে দেখেই মিরার মা প্রশ্ন করলেন, ‘ ওহ বাবা তোমরা তো সবাই চলে এসেছে, আরফান কোথায়? ও কখন আসবে? মিরা তো প্রায় রেডি। ‘
বর্ণ কিছু বলার পূর্বেই, বর্ণকে দেখে অর্ষা অত্যান্ত বিরক্তির সহিত বললো, ‘ মামি! আমি বরং মরুর কাছে যাই। তুমি থাকো। ‘
কথাটি বলেই অর্ষা মুখ বেকিয়ে মিরার কক্ষের দিকে পা বাড়ালো। মিরা আজ একটি গোলাপী লেহেংগা পরেছে। বেশ সুন্দর লাগছে তাকে। মিরাকে দেখেই, অর্ষা মুচকি হেসে বললো, ‘ বাহ আমার মরু সুন্দরীকে আজ বেশ লাগছে। কারো নজর যেন না লাগে। ‘
অর্ষার কথার বিপরীতে, মিরা কিছুটা মুখ কালো করেই উত্তর দেয়, ‘ তা না হয় বুঝলাম, কিন্তু তুই রেডি হবে নাকি এই শার্ট পরেই আজ রং খেলতে যাবি। ‘
‘ হ্যা তো? আমি আবার কি রেডি হবো? ‘
মিরা হতাশ পানে তাকিয়ে রইলো অর্ষার দিকে। অরু এবং কাজিনেরা প্রবেশ করে, মিরার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ আপাই এইবার স্টেজে চল, একটু পরই অনুষ্টান শুরু হয়ে যাবে। ‘
সকলে মিলে মিরাকে নিয়ে বাগানের দিকে চলে গেলো। অর্ষা ও বেড়োতে নিলে, বর্ণ হাত বাড়িয়ে দরজায় হাত রেখে, অর্ষাকে একপ্রকার বাঁধা দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। বর্ণকে দেখে চলে যেতে চাইলে, অপর হাত দিয়ে পুরোপুরি বন্দী করে ফেললো বর্ণ। অতঃপর বললো, ‘ বর্ণ আহমেদকে ইগ্নোর করছেন আপনি মিস ঝাঁঝওয়ালী। ওয়াও গ্রেট! ‘
অর্ষার হুট করে বর্ণের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে বললো, ‘ আমার পিছনে ঘুড়ঘুড় করছেন কেন আপনি? অরু তো বেশ সুন্দর! অনেক সুন্দর! তো সেই অরুর কাছেই যান। আমার পিছনে পিছনে কি হ্যা? ‘
‘ কোথায় যেন পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। আর ইউ জেলাস মিস ঝাঁঝওয়ালী? ‘
বর্ণের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে বর্ণকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ালো অর্ষা।
বর্ণ কি ভেবে যেন অর্ষার হাত ধরে আয়নার সামনে অর্ষাকে দাঁড় করিয়ে, ধীর কন্ঠে বললো,
‘ আপনি চুল খুলে একটি শাড়ি পরে, আয়নায় নিজেকে একপলক দাঁড়িয়ে থাকবেন, একদম সাঁজবিহীন৷ দেখবেন আপনার কঠোরতার মুখোশে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত স্নিগ্ধ মুখশ্রীখানা ধরা দিবে। খুব সুন্দর লাগবে আপনাকে। খুব সুন্দর। ‘
বর্ণের কথা শুনে স্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে পরে অর্ষা। বর্ণও কিছুক্ষনের জন্যে নিষ্চুপ হয়ে থাকে। বর্ণের হাত অর্ষার কাঁধে। অর্ষা আয়নার দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, অর্ষা কেমন মায়া নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অদ্ভুদ মায়া যাকে বলে!
_____________________
আরফান ও কিছুক্ষনের মাঝে চলে আসলো। অনুষ্টান শুরুর পথে। অনুষ্টান শুরু হওয়ার পূর্বে আরফানের কাধে হাত রেখে বর্ণ বলে, ‘ তুই তো
শা/লা বিয়ে করে ফেলছিস। নিজের সিংগাল বন্ধুদের দিকেও একটু নজর দে এইবার। ‘
প্রতিউত্তরে আরফান সামান্য হেসে সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিয়ে বলে, ‘ নেক্সটে তুইও বিয়ে করে ফেল। ভালোই তো। আর আমি বলি কি! তুই অর্ষার থেকে যত দূরে থাকতে পারিস থাক বুঝলি। মেয়েটা আসলে ভালো না। বখাটে টাইপ আর কি! ‘
কিছুটা ভয় নিয়েই বললো আরফান। বর্ণ হুট করে অধরের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘ তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? অতীতের কোন রহস্য বেড়িয়ে আসবে বলে? ‘
বর্ণের কথা শুনে আরফান ভয়ে ঢুগ গিললো। তা দেখে বর্ণ অদ্ভুদ ভাবে তাকালো আরফানের দিকে। আরফান দেখতে পেলো বর্ণের নেত্রজোড়া স্বাভাবিকের তুলনায় আজকে কেমন টকটকে লালবর্ণ ধারণ করে রয়েছে। আরফান কিছু বলার পূর্বেই, বর্ণ হুট করে দাঁড়িয়ে পরলো। কেননা সামনে….
চলবে কি?