মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু ? #পর্ব- ১১,১২

0
522

#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু ?
#পর্ব- ১১,১২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
১১

রোজিয়ানা আরফানের কাঁধে নিজের হাত রেখে, আরফানের দিকে ঝুঁকে যায়, সে কিছু বলার পূর্বেই, বর্ণ এসে আরফানের কক্ষে উপস্হিত বর্নকে দেখে আরফান রোজিয়ানাকে নিজের থেকে সরাতে চাইলে, রোজিয়ানা আরফানকে না ছেড়ে বরং আরফানের শার্টের বুতাম লাগাতে লাগাতে, বর্ণকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ তুই এসেছিস বর্ণ? আমরা এতোক্ষন তোকে নিয়েই কথা বলছিলাম। যাক গে ভালোই হলো তুই এসেছিস। ‘

বর্ণ ভ্রু কুচকে তাঁকায় রোজিয়ানার দিকে। রোজিয়ানা রহস্যময় হাঁসি হেসে আরফানকে ছেড়ে বর্ণের দিকে এগোতে এগোতে বলে,

‘ এখন তো আমাকে পাত্তা দে বর্ণ। দেখ আরফানের বিয়ে হয়ে যাবে কালকে। আমি একদম সিংগাল হয়ে যাবো। এখন তুই একমাত্র ভরসা আমার। একটু তো আমার দিকে তাঁকা। ‘

বর্ণের প্রচন্ড বিরক্ত হয় রোজিয়ানার উপর। হাত বাড়িয়ে রোজিয়ানার হাত ধরে, আরফানের কক্ষের বাইরে সদর দরজার কাছে দাঁড় করিয়ে বলে,

‘ জাস্ট স্টপ ইউ নোনসেস্স! কিসব কথা বলছিস? একদম মাথা গরম করাবি না তুই। এখন তুই যা এখান থেকে। আমাদের ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে। ‘

কথাটি বলেই রোজিয়ানার মুখ বরাবর দরজা বন্ধ করে দিলো সে। রোজিয়ানা এতে অপমান বোধ করে ধপ ধপ পায়ে সিড়ি বেয়ে নীচে নেমে গেলো।

আরফান বর্ণকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ কিসের জরুরী কথা বলবি? বল এখন। ‘

বর্ণ অধরের কোণে স্মিত হাসি ফুটিয়ে পাঞ্জাবির কলার ঠিক করতে করতে, আরফানের গলার দিকে তাকিয়ে, কিছুটা অবাক হয়ে বলে, ‘ গলায় খুব লেগেছে না? তুই তো খুঁড়িয়েও হাটছিস। মনে হচ্ছে কেউ তোর পুরো বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। ‘

বর্ণের কথা শুনে আরফান সোফায় বসে,নিম্ন গলায় তেজি সুরে বলে, ‘ কি বলতে চাচ্ছিস তুই? ‘

‘ কিছুই না।’

আরফানের কি হলো কে জানে, সে হঠাৎ করে প্রশ্ন করে বসলো, ‘ আচ্ছা তুই বাংলাদেশে কি শুধু নিজের পাপার বিসনেজ সামলাতে এসেছিস, নাকি তোর কোন উদ্দেশ্য রয়েছে। ‘

সঙ্গে সঙ্গে আরফানের পিঠে চা/পড় মে/রে বর্ণ আরফানের পাশে বসে বলে, ‘ একদম ঠিক ধরেছিস, অতীতের বেশ হিসাব বাকি রয়ে গেছে। অতীতে হারিয়ে যাওয়া কোন প্রিয়জনকে ফিরে পেতেই, দেশে ফিরে আসা। ‘

আরফান বিস্ফরক দৃষ্টিতে আশে পাশে তাঁকালো। বর্ণের ধোঁয়াশাময় কথা, অনেক কিছুকে ইংগিত করে। আরফান মিনমিনিয়ে সুরে বলে, ‘ মেয়েটাতো তোকে ধোঁকা দিয়েছে, তাহলে কেন তাকে পুনরায় খুঁজার চেষ্টা করছিস? যা হওয়ার হয়েছে বাদ দে। পাঁচটে বছর কেটে গিয়েছে। এখনো সেসব নিয়ে পরে থাকিস না। ‘

‘ তোর কথা শুনে এখন তো অতীতকে। আমার আরো ঘাটতে ইচ্ছে করছে। হতেও তো পারে কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বেড়িয়ে পরলো। ‘

বর্ণ ঘাড় বেকিয়ে অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাটি বললো। আরফান ঘাবড়ে গেলো। বর্ণ হুট করে হেসে উঠলো পুনরায়। একপ্রকার ঘর কাঁপিয়ে হাঁসলো। আরফানের কাঁধে চাপড় মেরে, তাকে নিশ্চিত করতে বললো, ‘ কালকে তোর বিয়ে ইয়ার৷ প্যারা নিস না। চিল কর। আজকে ব্যাচেলার পার্টি আছে মনে আছে তো? ‘

আরফান দ্রুত মাথা নাড়ায়। বর্ণ তার ফোন ঘাটতে ঘাটতে বলে, ‘ আমার অফিসে আজকে একটা জরুরী মিটিং রয়েছে। মিটিং টা এটেন্ড করে, আমি তোদের সাথে জয়েন করবো। কেমন? তুই রেডি হয়ে থাকিস। ‘

আরফান ‘হ্যা ‘ সূচক জবাব দেয়। বর্ণ দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যায়। আরফান পরে যায় দুশ্চিন্তায়। বিড়বিড়িয়ে আওড়াতে থাকে, ‘ না, না। বর্ণ অতীত ঘাটলে তো আমি ফিনিশড হয়ে যাবো।’

আরফান তার কাঁধ হেলিয়ে দেয় সোফায়। কাউকে না জানিয়েই, নিজের বাড়ি এসে পড়েছে অর্ষা। তার কেন যেন বর্ণের পাশে রোজিয়ানাকে অসহ্য রকম বিরক্তিকর লাগছিলো। অর্ষা মনে পড়ে যায় কিছুক্ষন আগের কথা। রোজিয়ানা বর্ণকে জোড় করে, নিজের ছবি তুলাচ্ছিলো। তার পাশেই আরফানের মা এবং বর্ণের মা দাঁড়িয়ে ছিলেন। বর্ণের মা খুশি হয়ে আরফানের মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ রোজিয়ানা বিদেশেনি হলেও, বড্ড মিশুকে। আমার কিন্তু বড্ড ভালো লাগে মেয়েটাকে। ‘

‘ তুমি কি তাকে তোমার ছেলের বউ করার কথা ভাবছো নাকি? ‘

আরফানের মায়ের উত্তরে, বর্ণের মা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলে, ‘ ইচ্ছে তো রয়েছে, কিন্তু আমার ছেলে যা হয়েছে বাপু! বিয়ের কথা শুনলেই নাক ছিটকে যায়।
কিন্তু আমিও এইবার পর্ণ করে রেখেছি বাপু। আরফানের বিয়েটা ভালোই ভালোই হয়ে গেলে, বর্ণকে জোড় করে হোক কিংবা ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেইল করে হলেও বিয়ের আসরে বসাবো। ‘

‘ তোমার ইচ্ছে যেন তাড়াতাড়ি পূরণ হয়। ‘

বলেই সৌজন্যপূর্ন হাসি দিলেন আরফানের মা। তাদের কথোপকথন শুনে কেন যেন সেখানে থাকতে ইচ্ছে হলো না অর্ষা। অর্ষা তার রুমে এসে শুয়ে পরলো, ক্লান্তিতে আখিজোড়া কেমন যেন বুজে আসছে তার। মুখে হাত দিয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলো। আজকের অনুষ্টানে তার বাবা- মাও ছিলো, তাদের একপ্রকার এড়িয়েই বাড়িতে চলে এসেছে অর্ষা। তারা এখনো আসেনি। ফোনে টুংটাং মেসেজ আসলো তার কাছে। যথেষ্ট ঘুম থাকা সত্ত্বেও সে মেসেজ চেক করলো। মিরার মেসেজ সে যেন আজ রাতে ব্যাচালার পার্টিতে চলে আসে সময়মতো। না চাইতেও ক্ষীন্ন হাঁসলো সে।

______________

মাথায় ক্যাপ পরে নিজের দলের ছেলেদের নিয়ে রাস্তার এক ধারে বসে পানির বোতল হাতে নিয়ে পান করে যাচ্ছে। রাস্তার এক ধারে কিছু লোক একজন বৃদ্ধ লোককে এক নাগাড়ে মে/রে যাচ্ছে। অর্ষা উঠে গিয়ে বলে, ‘ লোকটাকে সকলে মিলে মা/রছে কেন?’

প্রতিউত্তর তার দলের এক ছেলে সাজিদ উত্তর দেয়,

‘ বৃদ্ধ লোক, ছেলে-মেয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। ক্ষুধার জ্বালায় এক মুদি দোকান থেকে এক পিচ রুটি চুরি করেছিলো, তা নিয়ে কখন থেকে মে/রে যাচ্ছে লোকটাকে। ‘

অর্ষা অস্হিরতার সহিত বললো, ‘ না, না। এইভাবে লোকটাকে মা/রতে দেওয়া যাবে না। তোরা থাক আমি এখুনি আসছি। ‘

রনি হাত ঝাডা মে/রে তাড়া নিয়ে বলে, ‘ কিন্তু আমাদের এখন কাউন্সিলারের কাছে একবার যেতে হবে। এমনিতেই অনেক লেট হয়ে গেছে অর্ষা। ‘

অর্ষা কি আদোও তাদের কথা শুনলো? উহু একদমই নয়। সে এগিয়ে গেলো তাদের কাছে। অপরদিকে বর্ণ তার ব্লেজার হাতে নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। তার পাশে দুজন সেক্রিটারি। একজন দেহরক্ষী এসে, বর্ণের গাড়ির দরজা খুলে দিলো। বর্ণ গাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেও গিয়ে গেলো না। দূরের টং দোকানে ঝামালা হচ্ছে দেখে, সে নিজেও এগিয়ে গেলো। অর্ষা সেখানে গিয়ে সকলকে থামিয়ে, চেচিয়ে বলে, ‘ হচ্ছে টা কি এখানে? একজন বৃদ্ধ মানুষকে এইভাবে মে/রে নিজেদের ক্ষমতা দাপট দেখাতে চাইছেন? আসুন পারলে আমার সাথে আসুন। দেখি আপনাদের কত ক্ষমতা। ‘

অর্ষাকে দেখে সকলে থেমে গেলো। একজন লোক পাশ থেকে বললো, ‘ এতো জর্জ সাহেবের মেয়ে। ‘

অর্ষা সঙ্গে সঙ্গে তেড়ে গিয়ে, তার দিকে আঙ্গুল উচিয়ে বললো, ‘ আমি অর্ষা রেজওয়ান। এইটাই আমার পরিচয়। আমার পরিচয় আমি নিজেই। কোন জর্জ সাহেবের মেয়ে নই আমি। ‘

অর্ষার কথায় লোকটি দমে গেলো। অর্ষা ঘুড়ে সকলের উদ্দেশ্য কড়া গলায় বললো, ‘ আপনাদের মধ্যে আদোও মনুষ্যত্ব রয়েছে? লোকটার পেটের খুদায় একটা রুটি চুরি করেছে বলে, আপ্নারা এইভাবে তাকে মা/রবেন? ক্ষুদার কষ্টা কতটা ভ/য়ংকর আপনারা জানেন? ম/রে গেলে তো সব কষ্ট একেবারেই শেষ হয়ে যায়, কিন্তু ক্ষুধার জ্বা/লা নিয়ে বেঁচে থাকাটা কতটা ভয়ংকর! কল্পনা করতে পারেন আপনারা? তার মধ্যেএই বৃদ্ধ লোকটা নিজের সবটুকু নিজের সন্তানদের দিয়ে বড় করেছে, আজ তারাই তাকে পথে বসিয়ে দিলো। তাদের বিশাল অট্টলিকায় ছোট্ট এক জায়গাতেও লোকটার ঠায় হলো না। আর আপনাকে তাকে সামান্য এক রুটির জন্যে মে/রে যাচ্ছেন। ছিহ! সেম অন ইউ গাইস। ‘

অর্ষার কথা শুনে সকলে মাথা নিচু করে ফেলে। অর্ষার রাগ টগবগ করে যাচ্ছে। বৃদ্ধ লোকটা মাথা নিচু করে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে। অর্ষা লোকটার কাছে গিয়ে, আখিজোড়ার অস্রু মুছিয়ে বলে,

‘ একটুও কাঁদবেন না, আপনি। রনি? ‘

অর্ষার ডাক শুনে রনি গলা উচিয়ে বলে, ‘হ্যা অর্ষা বল। ‘

‘ তুই উনাকে হসপিটালে নিয়ে ট্রিটমেন্ট করা, এবং আমাদের সেই পরিচিত আশ্রমে থাকার সব ব্যবস্হা করে দিবি। ‘

রনি মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘ সব হয়ে যাবে। প্যারা নিস না।’

বৃদ্ধ লোকটি অর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘ সত্যি তুমি অনেক ভালে মা। সুখি হও মা। দোয়া করি। দুনিয়ার সব সুখ মহান আল্লাহ তায়ালা তোমাকে দেখ। ‘

লোকটির কথায় অর্ষা মিষ্টি করে হাঁসে। অতঃপর সকলের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ ড্রামা দেখা শেষ? এখন যেতে পারেন সকলে। ‘

সকলে আস্তে ধীরে চলে যেতে থাকে। রনির সাথে লোকটিও চলে যায়। অর্ষা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনের দিকে তাঁকাতেই, কেউ তার দিকে পানির বোতল এগিয়ে দেয়। অর্ষা তাকিয়ে দেখে বর্ণ। বর্ণ মিষ্টি হেসে বলে, ‘ বহুত ভাষন দিয়েছেন। এখন পানি টুকু পান করুন। বড্ড ক্লান্ত দেখাচ্ছে আপনাকে। ‘

অর্ষা আগ বাড়িয়ে পানির বোতল নিলো। বর্ণ টিস্যু বের করে, অর্ষার ললাটে জুড়ে থাকা ঘামটুকু মুছে বললো, ‘ মিস ঝাঁঝওয়ালী আপনি বড্ড অদ্ভুদ রমনী। আপনার প্রতি নানাভাবে নিত্যদিন মুগ্ধ হওয়া যায়। আমার বড্ড ইচ্ছে করে, দুনিয়ার সকল সুখ আপনার কাছে এনে দিতে। ‘

_______চলবে কি?

#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু ?
#পর্ব- ১২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
বিয়ের আগের রাতে হবু বউকে ছেড়ে অন্য রমনীকে সাথে নিয়ে বেড়িয়েছে আরফান। হবু বরের খবর না পেয়ে, মিরা চারপাশে পাইচারি করে যাচ্ছে। হাতে থাকা টাচ স্ক্রিনের ফোনখানা নিয়ে বারংবার ফোন করে যাচ্ছে আরফানকে। ব্যাচালার পার্টির জন্যে মিরার কাজিনসহ আরফানের সকল বন্ধুবান্ধব উপস্হিত কিন্তু আরফানের খবর নেই। এমনকি অর্ষাও এখনো অব্দি পৌঁছায় নি। বর্ণ তার একটি ফার্ম হাউজে পার্টির ব্যবস্হা করে ফেলেছে। মিরা বিরক্তি নিয়ে চেয়ারে বসে পরে,বিড়বিড়িয়ে আওড়াতে থাকে, ‘ বিয়ে নিয়ে কিসের এতো উদাসিনতা আরফানের? সবকিছু তে সে লেট করছে আজকাল। অন্যদিকে অর্ষারও কোন খবর নেই। আচ্ছা কোনভাবে কি অর্ষা এবং আরফান একসাথে রয়েছে? ‘
মিরা আপনমনে কথাগুলো ভেবে দুশ্চিন্তায় পরে যায়। বর্ণ কি ভেবে যেন তার বন্ধুদের জানায়, তারা যেন এদিকটা দেখে নেয়। সে কিছুক্ষনের মধ্যে ফিরে আসবে। বর্ণ তার গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায় ফার্ম হাউজ থেকে।

________________________

অপরদিকে শপিংমলে আরফানকে একপ্রকার ব্ল্যাকমেইল করেই নিয়ে এসেছে রোজিয়ানা। রোজিয়ানা নিজের পছন্দের গয়না, জামা সবকিছু কিনছে। আরফান ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে অসহায় সুরে বলে, ‘ রোজিয়ানা এইসব কি? তোমার তো এখন আমার প্রতি কোন ইন্টেরেস্ট নেই, তাহলে আমাকে আমাদের রিলেশনের কথা সবাইকে বলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শপিংমলে কেন নিয়ে আসলে?’

রোজিয়ানা আরফানের গলা জড়িয়ে ধরে আহ্লাদীর সুরে বললো, ‘ বেবী! বর্ণ তো আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। তার মধ্যে বিডির কিছুই আমি চিনি না। আমার শপিং করাও তো অনেক জরুরী। তাই তোমাকে নিয়ে আসলাম। মিরার কাছে যাওয়ার জন্যে এতো বেকুল হচ্ছো কেন? আমার সাথে রিলেশনে যাওয়ার আগে মিরার কথা মনে ছিলো না? ‘

শেষের কথাটি তেজের সহিত বলে নিজের শপিং করাতে মন দেয় রোজিয়ানা। আরফান আর কিছু বলার ভাষা পেলো না প্রতিউত্তরে। নিরব হয়ে শুধু রোজিয়ানার কার্যকলাপ দেখতে লাগলো, সে এমনভাবে শপিং করছে যেন কালকে তার নিজের বিয়ে! শাড়ি থেকে গয়না কিছু্ই ছেড়ে দিচ্ছে না। আরফান তা দেখে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে রোজিয়ানার দিকে তাকিয়ে,অবাকের সুরে বলে, ‘ এতো শাড়ি গয়না কিনছো কেন? তুমি কি এইসব বাঙ্গালী পোষাক পড়বে নাকি? ‘

‘ তো? আমার বয়ফ্রেন্ডের বিয়ে কালকে, আমাকেও তো একটু সেঁজেগুজে থাকতে হবে নাকি তাইনা? আচ্ছা সেসব বাদ দাও। আগে দেখে তো। কোন শাড়িতে আমাকে সবথেকে বেশি সুন্দর লাগবে?’

কথাটি বলে রোজিয়ানা একটা লাল শাড়ি কিছুটা বেনারসির মতো নিজের গাঁয়ে মেলে ধরলো। আরফান কিছুক্ষনের জন্যে স্হীর নয়নে রোজিয়ানার দিকে তাকিয়ে, হালকা সুরে বললো,’ সুন্দর। খুব সুন্দর। ‘

রোজিয়ানা খুশি হয়ে আরফানকে জড়িয়ে ধরে বলে,’ ওকে ডান! তাহলে কালকে এইটাই পরবো।’

রোজিয়ানা আরফানকে ছেড়ে শাড়িটা প্যাকিং করতে বলে।

____________

কাউন্সিলরের অফিস থেকে হাতের ঘড়ি দেখতে দেখতে বের হচ্ছে অর্ষা। রনি অর্ষাকে উদ্দেশ্য করে বলে,’ অনেক রাত হয়ে গেছে, আমি কি তোকে বাড়ি ছেড়ে আসবো? ‘

অর্ষা মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘ আরে না না। আমি পারবো। তাছাড়া আমাকে এখন মরুর ওইসব ব্যাচালার পার্টিতে যাবো। ‘

‘ বাহ আজকাল পার্টিও এটেন্ড করছিস। আমাদের একটা পার্টিতেও তুই এটেন্ড করতে পারিস না। শুধু ব্যস্ততা দেখিয়ে যাস। ‘

কিছুটা অভিমান নিয়ে রনি কথাটি বললো। অর্ষা তার মাথার ক্যাপ ঠিক করতে করতে বললো,

‘ আরে তেমন কিছুনা ইয়ার। তুই তো জানিস মরু আমার কাছে ঠিক কি। আমার জান আমার মরু। এতো করে রিকুয়েস্ট করেছে, তাই মানা করতে পারে নি। বুঝলেন স্যার? ‘

রনির কাঁধে চাপড় মে/রে স্মিত হাসে অর্ষা। প্রতিউত্তরে রনিও মুচকি হেসে নিজের বাইকে চড়ে বসে বলে, ‘ বুঝলাম, এইবার বাইকে উঠে পর তো। আমি তোকে ছেড়ে আসি। তুই তো তোর বাইকটাও নিয়ে আসিস নি। রাত হয়েছে প্রচুর। ‘

রনির প্রস্তাব অর্ষা নাখোচ করতে পারেনা। চট করে রনির বাইকে উঠে বসে। রনি খুশি হয়ে বাইক স্টার্ট দেয়, হাত নাড়িয়ে তার দলের ছেলেদের চলে যেতে বলে। তারাও বিদায় নিয়ে চলে যায়। রনি বাইক ঘুড়িয়ে, ফার্ম হাউজের দিকে নিয়ে যায়। অন্যদিকে বর্ণ বার বার অর্ষাকে ফোন করে যাচ্ছে, কিন্তু সে রিসিভ করছে না। অর্ষা এতো রাতে বাইরে থাকায় কিছুটা চিন্তিত হয়েই,অর্ষাকে খুঁজতে এসেছে সে।বেখায়ালীতে সামনে থাকা বাইককে সে খেয়াল করেনি, যার ফলে সামনে থাকা বাইকের সাথে তার গাড়ির ধাক্কা লেগে যায়, সে ব্রেক মারার আগেই। সেই বাইকে রনি এবং অর্ষা ছিলো। রনি নিজেকে সামলে রাখলেও, অর্ষা নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বাইক থেকে পরে যায়। রনি বাইক থেকে নেমে যায়। বর্ণও গাড়ি থেকে নেমে অর্ষাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। রনি অর্ষার পাশে বসে, অর্ষার হাত ধরে চিন্তিত সুরে বলে, ‘ তুই ঠিক আছিস তো? বেশি লাগে নি তো?’

অর্ষা মাথা নাড়ানোর পূর্বে বর্ণের দিকে তার নজর যায়। রনি বর্ণকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ দেখেশুনে গাড়ি চালাতে পারেন না? আপনার জন্যে যদি অর্ষার কিছু হয়, তাহলে গাড়ি গুড়িয়ে ভে/ঙ্গে দিবো। ‘

অর্ষা আখিজোড়ার ইশারায় রনিকে শান্ত হতে বলে।অর্ষা তেজি গলায় বলে, ‘ আপনি আবারোও? এই নিয়ে দু দুবার আপনি নিজের গাড়ির সাথে, আমার বাইকের এক্সিডেন্ট করিয়েছেন। আচ্ছা আপনি কি আদোও গাড়ি চালাতে পারেন? ‘

‘ অর্ষা তুই এই লোকটা চিনিস? ‘

রনির প্রশ্নে অর্ষা দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘ খুব ভালো করে চিনি। ‘

বর্ণ শান্ত দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রয়েছে দুজনের দিকে। বিশেষ করে রনি অর্ষার হাত ধরে তার সাথে কথা বলছে। রনির পাতলা গড়নের ফর্সা মুখস্রী বেশ চিন্তা বিদ্যমান অর্ষাকে ঘিড়ে।

‘ আচ্ছা অর্ষা তোর কি পায়ে কোথাও লেগেছে? ‘

কথাটি বলে রনি অর্ষার পায়ে হাত দিতে নিলে, বর্ণ শক্ত করে রনির হাত ধরে ক্ষিপ্ত সুরে বলে, ‘ বাকিটুকু আমি দেখে নিবো। আপনাকে না দেখলেও চলবে। ‘

‘ হাউ ডেয়ার ইউ! কে আপনি হ্যা? আমাকে মানা করার? ‘

রনি চেচিয়ে বলে। বর্ণ পকেট থেকে তার কার্ড বের করে, রনির হাতে ধরিয়ে দেয়। রনি ভরকে যায় বর্ণের পরিচয়ে। আহমেদ গ্রুপের এমডি বর্ণ। বর্ণ অর্ষার পায়ে হাত দিতে নিলে অর্ষা সামান্য চেচিয়ে বলে,

‘ কি করছেন? ‘

‘ জাস্ট স্টপ! ডোন্ট টক এনিমর। ‘
বর্ণ গম্ভীর কন্ঠে ধমকে চুপ করিয়ে দেয় অর্ষাকে। অর্ষার পা কিছুক্ষন পর্যবেক্ষন করে বর্ণ বুঝতে পারে বেশ কিছু চট লেগেছে। তৎক্ষনাৎ হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। বর্ণ হুট করে অর্ষাকে কোলে তুলে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলে, ‘ চলুন আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যাই। ‘

‘ আরে আমি ঠিক আছি, আমাকে নামান বলছি। ‘

বর্ণের কোলে পা ছোড়াছুড়ি করতে থাকে অর্ষা। বর্ণ চোখ রাঙ্গিয়ে জোড় করেই, গাড়িতে বসিয়ে দেয় অর্ষাকে। রনির দিকে তাকিয়ে, গম্ভীর গলায় সুধোয়,

‘ আপনি নিজের কাজে ব্যস্ত থাকুন, অর্ষার জন্যে বর্ণ আহমেদ রয়েছে। ‘

কথাটি বলে বর্ণ নিজেও গাড়িতে ঢুকে পরে। রনির সামনেই অর্ষাকে নিয়ে সে চলে যায়। অর্ষা হাত পা ছুড়াছুড়ি করতে করতে বলে, ‘ আমাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার কোন দরকার নেই।’

‘ব্যাথা যখন আমি দিয়েছি, তখন তা আমিই সারিয়ে তুলবো। ‘

‘আপনি আপনার রোজিয়ানার কাছে যান। নাহলে সে বর্ণ বর্ন করে পুরো ফার্ম হাউজ মাথায় তুলে রাখবে। ‘

দাঁতে দাঁত চেপে কথাটি বলে অর্ষা। প্রতিউত্তরে বর্ণ বাঁকা হেসে, তার হ্যান্ড স্যানিটাইজার বের করে, অর্ষার হাতে লাগিয়ে দিয়ে বলে, ‘ যে কেউ যখন তখন যেন আপনার হাত না ধরে, আজকে ওয়ার্ন করে দিলাম।’

নিজের হাত ছাড়িয়ে, বর্ণকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ রনি যে কেউ না। ও আমার অনেক ভালো ফ্রেন্ড। ‘

‘ যতই ভালো ফ্রেন্ড হোক, আপনার হাত কেন ধরবে? আপনার হাত কি ওর প্রপোর্টি? ‘

‘ আমার হাত তো আপনারও প্রোপার্টি নয়, তাও স্টিল আমার হাত ধরে আপনি বসে রয়েছেন। ‘

অর্ষার কথায় বর্ণের চোখ যায় নিজের হাতের দিকে। সে অর্ষার হাত ধরে রেখেছে। অর্ষা ঝুঁকে বর্ণকে উদ্দেশ্য করে ভ্রু কুচকে বলে, ‘ আর ইউ জেলাস মিঃ বর্ণ আহমেদ? ‘

অর্ষার কথায় ফিক করে হেসে দেয় বর্ণ। তার কথায় অর্ষা তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। অর্ষা নিজেও হেসে দেয়৷ বর্ণ সে হাসির দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে। গালে হাত দিয়ে সেই অপরুপ হাসিমাখা মুখস্রীকে দেখে নেয় মুগ্ধতার সহিত। অর্ষা একপ্রকার খিলখিলিয়ে হাঁসছে। কতদিন পরে এতোটা প্রানবন্ত হয়ে সে হাসছে, ভাবতেই নিজেই অবাক হয়ে পরে। হাঁসতে হাঁসতে বর্ণের দিকে তার নজর গেলে, বর্ণ কিছুটা কাছে এসে, অর্ষার দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বলে,

‘ আপনার হাঁসি বড্ড প্রিয় আমার কাছে। বেশি করে হাসঁবেন, আমি নিষ্পলক তাকিয়ে তা দেখে নিজের জীবনের বহু অপেক্ষাকৃত তৃষ্ণা নিবারণ করবো। ‘

‘ সবাইকে হাঁসলে মানায় না। আমাকে তো নইয়। আমার জীবনের হাসি সুখ আনন্দ সবকিছু কয়েকবছর আগেই হারিয়ে গেছে। আমার জীবন শুধু মেঘাচ্ছন্ন আকাশের ন্যায় ঘোর অন্ধকারে পরিপূর্ন।

কথাটি বলতে গিয়ে নিজের নেত্রপল্লব বুজে ফেলে অর্ষা। বর্ণ অর্ষার থেকে সরে গিয়ে, গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলে, ‘ মিস ঝাঁঝওয়ালী আপনার হাঁসিকে আপনার মেঘাচ্ছন্ন জীবনে আমি ফিরিয়ে দিবো, কোন এক রংধনু হয়ে।

_________________

হসপিটাল থেকে অর্ষাকে ড্রেসিং করিয়ে, ফার্ম হাউজে নিয়ে আসে বর্ণ। বর্ণের পিছনে পিছনে আরফানদের গাড়িও পিছনে থামে। বর্ণ গাড়ির ভিতরে অর্ষাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ আপনি একটু থাকুন, আমি ফোনে জরুরী কথা বলে আসছি। আপনাকে নিয়ে যাবো। আপনি একা হাঁটতে পারবেন না। ‘

বর্ণও বেড়িয়ে বাগানের দিকে যেতে থাকে। অপরদিকে আরফানকে ছেড়েই, নিজের শপিং ব্যাগ নিয়ে তড়িঘড়ি করে ফার্ম হাউজে ঢুকে রোজিয়ানা। অর্ষা বর্ণের অপেক্ষা করে না। নিজেই বিড়বিড়িয়ে বলে,

‘ আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি যে একা হাঁটতে পারবো না? দিব্যি পারবো আমি। ‘

অর্ষা কোনরকম গাড়ি থেকে বেড়িয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটতে থাকে। আরফান তার গাড়ি লক করে আসছিলো, অর্ষা হুট করে পরে যেতে নিলে সে তৎক্ষনাৎ অর্ষাকে ধরে ফেলে, তখনি সেখানে মিরা এসে দেখে……….

লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি
চলবে কি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here