আজ হঠাৎ প্রাক্তনের সাথে দেখা মেয়েটির । ভাবতে পারেনি এভাবে তার সাথে দেখা হবে। সে মেয়েটির সামনে বসে আছে। কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। কথা বলতে ইচ্ছে করলেও কেন যেন বিবেকে বাধছে।
যে মানুষটা তাকে ছেড়ে গিয়েছিল তার যোগ্য নয় বলে আজ তাকে এরকম বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখবে মেয়েটি কল্পনাও করেনি। চুলগুলো বেশ উসকোখুসকো হয়ে আছে। মুখে একরাশ চিন্তার ছাপ। তার মুখোমুখি হতে চায় নি কখনো। উপরওয়ালা হয়তো চেয়েছেন তাই দেখাটা হয়েই গেল।
রাউন্ড শেষে নিজের কেবিনে যাওয়ার সময় বাহিরে চেয়ারে তাকে বসে থাকতে দেখে বেশ অবাক হলো মেয়েটি। তাও কিনা আবার তারই অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নিয়েছে। এটা শুনে অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেলো মেয়েটি।
মেয়েটি মাস্ক পড়া ছিল বিধায় চিনতে পারেনি সে তাকে। হয়তো খেয়াল করেনি। তবে মেয়েটি ঠিকই চিনেছে। তার সেই বাদামী চোখ মেয়েটিকে বার বার মায়ায় জড়িয়ে ফেলে। না চাইতেও কেন যেন বড্ড ইচ্ছে হয় তার সে চোখের দিকে তাকিয়ে পাড় করে দিতে পারবে হাজারো যুগ। তবে সেটা আর সম্ভব নয়।
মেয়েটি তিয়াশা খান। একজন এম বি বি এস ডাক্তার। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে স্বনামধন্য সরকারি হাসপাতালে চাকুরীরত। বেশ কয়েকবছর কানাডাতে ছিলাম। সেখানকার টরেন্টো ইউনিভার্সিটি থেকে লেখাপড়া শেষ করে দেশে আসলাম তিনমাস হলো। গত পরশু জয়েন করেছি হসপিটালে।
এম বিবি এস ডাক্তার তিয়াশা খান মা-বাবার একমাত্র সন্তান। বাবা রিহান খান এবং মা লিয়া খানের খুব আদরের সন্তান তিয়াশা। বাবা একজন স্বনামধন্য বিজনেসম্যান এবং মা গৃহিণী।
তিয়াশা দেখতে খুব ফর্সা। হাসলে গালে টোল পড়ে। ঠোঁটের ডান পাশে উপরে ছোট্ট একটি তিল আছে। চুল গুলো হাঁটু পর্যন্ত। ভার্সিটি লাইফের ক্রাশ গার্ল ছিলো তিয়াশা।
ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবে। বাবা তাকে খুব আদর করতেন। ইন্টার পাশ করার পর সে কানাডা চলে যায়। সেখান থেকেই একেবারে লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে।
:- ম্যাম চলুন!
তিয়াশাঃ হ্যাঁ চলো।
কেন যেন চোখদুটো ভিজে উঠছে বারবার। টিস্যু দিয়ে মুক্ত গুলো আটকানোর ব্যার্থ চেষ্টা করছে বরাবরের মতো। বেশ দ্রুতই নিজের কেবিনে চলে গেলো তিয়াশা।
:- ম্যাম! একটু রেস্ট করুন তারপর নেক্সট পেশেন্টকে ডাকব। নাকি এখনই?
তিয়াশাঃ নেক্সট এ কে?
:- ওয়েট দেখে আসছি!
তিয়াশাঃ নেহা শুনো?
(নেহা রহমান। তিয়াশার এসিস্ট্যান্ট। মেয়েটি খবু ভালো। তিয়াশাকে খুব হেল্প করে)
নেহাঃ জ্বী, ম্যাম।
তিয়াশাঃ এক কাপ কফি লাগবে আমার।
নেহাঃ ওকে ম্যাম। আমি বলছি।
নেহা কেবিন থেকে বেরিয়ে দেখতে গেলো তার পরে কার সিরিয়াল। আর তিয়াশা তার চেয়ারে বসে উল্টোদিকে ঘুরে ভাবতে লাগলো। তার মন চাচ্ছে গিয়ে তার প্রাক্তনের সাথে কথা বলতে কিন্তু কোনো এক অজানা শক্তি তাকে আটকাচ্ছে মনে হচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর নেহা কেবিনে ঢুকে। তিয়াশা এইদিকে ফিরে বসে।
নেহাঃ ম্যাম। নেক্সটে আছেন আয়াশ আহমেদ।
নামটা শুনেই তিয়াশার ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। শ্বাস আটকে গেছে কিছু সেকেন্ডের জন্য। বুকের ভেতর কেমন যেন চিন চিন ব্যাথা করছে।
নেহাঃ ম্যাম!
তিয়াশাঃ হ্যাঁ।
নেহাঃ ঘামছেন কেন আপনি? রুমে তো এসি ছাড়া। খারাপ লাগছে আপনার?
তিয়াশাঃ না আমি ঠিক আছি। তুমি কফি এনেছো?
পিওনঃ ম্যাম আসবো?
নেহাঃ আসুন।
পিওনঃ কফি নিয়ে এসেছি।
নেহাঃ আমাকে দিন। ধন্যবাদ।
পিওন নেহার হাতে কফি দিয়ে ট্রে নিয়ে চলে যায়। নেহা নিয়ে তিয়াশাকে কফির মগটা দেয়। তিয়াশা কফি খেতে খেতে নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করছে। মাথাটা ঠান্ডা করার চেষ্টা করছে।
নেহা পাশের সোফায় গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে বসে।
নেহাঃ ম্যাম! আপনার কি মুড অফ??
তিয়াশাঃ না তো! কেন?
নেহাঃ মনে হলো।
তিয়াশা কফিটা শেষ করে। লম্বা একটা শ্বাস নেয়। তারপর চোখ বন্ধ করে কয়েকবার শ্বাস নেয়।
তিয়াশাঃ নেহা নেক্সট ডাক দাও।
নেহাঃ জ্বী ম্যাম।
নেহা কেবিনের বাহিরে যায়। গিয়ে আয়াশ আহমেদের নাম বললেই সে খুব ব্যাস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পরে। নেহা তাকে ভিতরে আসতে বলে। সে দরজা খুলে দিলে আয়াশ কেবিনে ঢুকে। তারপর সে দরজা লাগিয়ে বাহিরে গিয়ে দাঁড়ায়।
আয়াশঃ আসব?
তিয়াশাঃ জ্বী আসুন। (পিছনের দিকে ঘুরে)
আয়াশ কেবিনে ঢুকে দাঁড়িয়ে থাকে। তিয়াশা এই দিকে ফিরে তাকে বসতে বলে।
হ্যাঁ তিনিই আয়াশ আহমেদ। তিয়াশা খানের প্রাক্তন। যে তিয়াশা খানকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো তার যোগ্যতার উপর প্রশ্ন তুলে।
আয়াশ আহমেদ। দেশের একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ম্যানেজার। দেখতে খুব ফর্সা। জিম করা বডি। চুলগুলো খুব সিল্কি। চোখগুলো বাদামী। তার হাসিটা সবাইকে ঘায়েল করে দিতে সক্ষম। যে কেউ তার হাসি দেখলে তার হাসির প্রেমে পড়ে যাবে। উচ্চতা ৬ ফুট।
আয়াশ আহমেদ হলো বাবা-মায়ের তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে মেজো। বাবা আদিত আহমেদ মারা গিয়েছেন প্রায় চার বছর। মা নিয়তি আহমেদ এবং ছোট বোন প্রিয়া আহমেদকে নিয়েই সে দেশে থাকে। তার বড় বোন প্রাপ্তি আহমেদের বিয়ে হয়ে গেছে। তিনি স্বামীর সাথে দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন।
আয়াশের মা গৃহিণী আর ছোট বোন প্রিয়া ইন্টার প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
আয়াশ তিয়াশাকে দেখে বেশ অবাক হয়েছে তা আয়াশের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। সে এখনও দাঁড়িয়েই রয়েছে।
তিয়াশাঃ কি হলো? বসুন।
আয়াশঃ তুমি??
তিয়াশাঃ তুমি নয় আপনি।
আয়াশঃ Sorry..!
তিয়াশাঃ বলুন কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?
আয়াশঃ আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো!
তিয়াশাঃ জ্বী বলুন।
আয়াশঃ এত বছর কোথায় ছিলেন?
তিয়াশাঃ দরকারি কথা থাকলে বলুন। অযাচিত প্রশ্ন করে অস্বস্তিতে ফেলবেন না প্লিজ।
আয়াশঃ এত পরিবর্তন?
তিয়াশাঃ বাস্তবতা বাধ্য করেছে। নিজেকে ভালো রাখতে পরিবারকে ভালো রাখতে পরিবর্তন করতে হয়েছে নিজেকে।
আমার মনে হয় আপনার আর কোনো কথা নেই। আপনি আজ আসতে পারেন। আমার বেশ অনেকগুলো রোগী আছে সেগুলো দেখে বাসায় ফিরতে হবে।
আয়াশঃ আচ্ছা। তবে আপনাকে আমার প্রয়োজন। আমার মা খুব অসুস্থ। তাকে যদি একবার চেক-আপ করতেন!
তিয়াশাঃ জ্বী অবশ্যই। কেন নয়! আপনি আসার আগে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসবেন। আমি চেক-আপ করে দিব। সমস্যা নেই।
আয়াশঃ আজ তাহলে উঠি। ধন্যবাদ।
তিয়াশাঃ জ্বী।
তিয়াশা হাতের কাছে রাখা একটা সুইচে চাপ দিলো। তখন বাহিরে একটা মৃদু শব্দ হলো। তখন নেহা রুমে ঢুকলো।
নেহাঃ ম্যাম। আসব?
তিয়াশাঃ হ্যাঁ।
নেহা কেবিনে ঢুকার পরপরই আয়াশ বেরিয়ে গেলো। তিয়াশা বাকি কয়েকটা রোগী দেখে লাঞ্চ করতে বসলো।
__________________________
আয়াশ তার অফিসে এসে কেবিনে ঢুকে চেয়ারে এসে বসলো। একটা কফি বললো তার কেবিনে দিয়ে যেতে।
সে ভাবতেই পারছে না তার সাথে তিয়াশার এমনভাবে দেখা হবে। তার কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।
পিওনঃ স্যার কফি!
আয়াশঃ রেখে যান।
আয়াশ কফিতে চুমুক দেয়। কেন যেন কফিটাও আজ তার মনের চঞ্চলতা কমাতে পারছে না। শান্তি এনে দিতে পারছে না তার মনে।
আয়াশ কফি শেষ করে লাঞ্চ করে। বিকেলে মিটিং আছে তার। সেই ফাইলগুলোই বসে বসে রিচেক করছিলো।
__________________________
তিয়াশা খাওয়া শেষ করে একটু রেস্ট নেয়। তারপর বাকি রোগী গুলো দেখে।
রোগী দেখতে দেখতে তার প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। সে নেহাকে ড্রপ করে তারপর বাসায় ফিরে।
বাসায় এসে মাকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু দেয়। তারপর ফ্রেশ হতে নিজের রুমে যায়। গিয়ে শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে ঢুকে। বেশ কয়েক মিনিট পর বের হয়ে তিয়াশা দেখে! যা দেখে তা দেখে তার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে যায়….
চলবে…..!!
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। চলে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন আরেকটি গল্প নিয়ে। আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে]
?
?
মেঘ রোদ্দুর পর্বঃ১
#লেখিকা_তাজরিয়ান_সরকার