মেঘ_ভাঙ্গা_রোদ্দুর #বোনাস_পার্ট

0
832

#মেঘ_ভাঙ্গা_রোদ্দুর।
#বোনাস_পার্ট।

– আমি এই বিয়ে করবো না মানে! কি বলতে চাইছিস তুই মেহু। অবাকের সুর কথাটা বলল মৌ।

– বিয়ে করবি না মানে করবি, ব্যাস। আলিহানের সাথে তোর বিয়ে হবে না। কাটকাট জবাব দেয় মেহের।

মেহেরের এমন জবাবে কিছুটা ক্ষিপ্ত হয় মৌ। চক্ষুদ্বয় কিছুটা সংকোচিত করে মেহেরের দিকে ক্রোধান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মৌ। অতঃপর বলে,

– তুই পাগল হয়ে গেছিস মেহু। তাছাড়া আন্টি যেখানে আলিহানকে মেনে নিয়েছে সেখানে তোর কিসের প্রবলেম। আর তুই ভুলে যাচ্ছিস মেহু আমি আলিহানকে
ভালোবাসি।

– আমি কিছুই ভুলিনি মৌ। চিৎকার করে বলে মেহের। মৌ তুই ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিস, আলিহান তোর জন্যে সঠিক নয়। কি গ্যারান্টি আছে আলিহান তোকে ঠকাবে না। বলতে পারবি তুই মৌ, যেটা আমার মায়ের সাথে হয়েছে সেটা তোর সাথে হবে না। মৌ তুই এই বিয়েটা করিস না।

এতক্ষণ ভালো শ্রোতার মতো মনোযোগ দিয়ে মেহেরের বলা কথা শুনছিল মৌ। মেহেরের বলা শেষ কথাটা মৌ -য়ের ভাবনা আরো বাড়িয়ে তুলে। সে মেহেরের কাছে এসে ওর দুই বাহু ধরে ওকে বিছানায় বসিয়ে দেয়। তারপর মেহেরের অন্যপাশে বসে মৌ। মেহেরের একটা হাত শক্তকরে চেপে ধরে মেহেরকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেয় মৌ। অতঃপর বলে,

– মেহু, আমার চোখে চোখ রেখে বলতো কি হয়েছে তোর। দেখ আন্টি যখন আলিহানের সাথে দেখা করতে চাইছে তখন সবচেয়ে বেশী এক্সাইটেড কিন্তু তুই হয়েছিলি। আজ সকালেও তুই আমাকে শান্তনা দিয়েছিস দুঃচিন্তা না করতে। তাহলে এখন কেন বিয়ে ভাঙ্গার কথা বলছিস বলতো। কি হয়েছে তোর?

মেহের মাথা নিচু করে বসে থাকে। কোন কথা বলে না সে।

– কি হলো মেহু তাকা আমার চোখের দিকে। বল কেন করছিস এমন।

মেহের মৌয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার নিচের দিকে তাকায়। হাত কচলাতে কচলাতে জবাব দেয়,

– আলিহান সৈয়দ নওশাদ আহমেদের বড় ভাইয়ের ছেলে। এটাই প্রবলেম। মৌ, আমার মা ও বাড়িতে টিকতে পারেনি। যদি তোর সাথে এমনটা হয়। যতই হোক আলিহান ও বাড়ির -ই ছেলে। ওদের আদর্শ মানুষ হয়েছে। যে বাড়িতে নওশাদ আহমেদের মতো একটা মানুষ আছে সেই বাড়িতে তোকে কি করে পাঠাই বলতো মৌ। কথাগুলো বলেই মেহের মৌকে জড়িয়ে ধরে। মৌ মেহেরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। মেহের বাহিরে যতটা স্টোং দেখাক না কেন আসলে যে তার স্বভাবটা এক্কেবারে বাচ্চাদের মতো। নিজের প্রিয়জনদের ভালো রাখার এক প্রখর নেশা কাজ করে ওর মধ্যে। সব সময় আপন জনের হাসি মুখ দেখতে চায় সে।

– আর যদি আমি মৌ-কে নিয়ে আলাদা থাকি তাহলেও কি তোর আপত্তি আছে মেহু।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথাটা বলল আলিহান। আলিহানের কণ্ঠস্বর শুনে মেহের মৌকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসে। ততক্ষণে আলিহান ভিতরে প্রবেশ করে নেয়। মৌ আলিহানের দিকে করুন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে যার ফলে আলিহান চোখের ইশারায় মৌ-কে শান্ত হতে বলে মেহেরের পাশে গিয়ে বসে। মেহের কিছুটা দূরে সরে যায়, আলিহান আবার গিয়ে মেহেরকে ঘেসে বসে। এবার মেহের উঠে চলে যেতে চাইলে আলিহান মেহেরের এক হাত ধরে বলে,

– আমি কি অপরাধ করেছি মেহু।

– মেহু নয় মেহের।

– আমার কাছে তুই মেহু। আমার ছোট্ট মেহু। বস এখানে। মেহেরকে টেনে আলিহান তার পাশে বসিয়ে নেয়। তখন সৈয়দা মাহবুবা রুমে প্রবেশ করে রুমে। আলিহান মেহেরের হাত ছেড়ে মৌ-য়ের দিকে এক পলক তাকায়। তারপর সৈয়দা মাহবুবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

– ছোটমনি, মেহু মৌ তোমাদের মনে প্রশ্ন জাগে না আমি কেন আমার গার্ডিয়ান না এনে বৃন্ধুদের নিয়ে আসলাম।
যেখানে ছেলেপক্ষ পাত্রী দেখতে আসে গার্ডিয়ান নিয়ে সেখানে আমি কেন বন্ধু নিয়ে আসলাম। তোমাদের মনে প্রশ্ন জাগছে না। আচ্ছা আমিই বলছি, আমার পরিবার নেই ছোটমনি। ছোট বেলাতে মা বাবাকে হাড়িয়েছি তারপর আমি আমার ছোটমনিকে পেয়েছিলাম কিন্তু বছর যেতে না যেতেই আমার ছোট মনিও আমাকে ছেড়ে চলে যায়। একদম একা হয়ে যাই আমি। কথাগুলো বলে উঠে দাঁড়ায় আলিহান। পকেটে দু-হাত গুজে দিয়ে বড় করে শ্বাস ফেলে তারপর সৈয়দা মাহবুবার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তার মুখের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে বলে,

– তুমি চলে আসার পর অনেক কিছুই বদলে গেছে ছোটমনি। যেদিন যদি একবার পিছনে ফিরে তাকাতে তাহলে দেখতে পেতে, প্রিয়জন শুধু তুমি নয়, আমরা সবাই হাড়িয়েছিলাম। ছোট চাচা যখন তার নতুন বিয়ে করতে যায় তখন তার সুন্দরী বউ নিজের দেনমোহর হিসাবে বাড়িটা নিজের নামে করে নেয়। সুন্দরী বউ পাওয়ার লোভ ছোট চাচাকে এতটাই বেকে ধরেছিলো যে নিজের বাড়িটা তার নামে করে দিতে দুবার ভাবে নি সে। বিয়ের পর সে ফুপ্পিদের এ বাড়িতে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। সারাক্ষণ পার্টি বন্ধু নিয়ে মেতে থাকতো সে। আমি আর দাদি ঘরের এক কোনে পরে থাকতাম। মাঝে মাঝে দাদি তার এমন আচরনের প্রতিবাদ করতো বলে
বিয়ের তিনমাস যেতে না যেতে ছোট চাচার নতুন বউ দাদিকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়। এতে ছোট চাচা প্রতিবাদ জানালে সে স্পষ্ট জানান দেয়, এটা আমার বাড়ি আমি যাকে খুশি বাড়িতে রাখবো আর যাবে খুশি উচ্ছেদ করে দিবো। ছোটা চাচা নতুন বউয়ের কথায় উঠতো বসতো। দাদিকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর পর ছোট চাচার সুন্দরী বউ বাড়িকে মদের আসর বানিয়ে রাখতো। রাত ভোর পার্টি করতো নেশা করতো। ছোট চাচা সবটা মুখ বুজে সহ্য করে নিতো। তখনো প্রতিবাদ করতো না।এদিকে আমিও এসব সহ্য করতে পারতাম না তাই বাধ্য হয়েই বাড়ি ছেড়ে চলে আসি। তারপর থেকে নানার বাড়িতেই বড় হয়েছি আমি। কখনো ও বাড়িতে পা রাখিনি আমি। এখন আমার গার্ডিয়ান বলতে আছে শুধু আমার নানা নানি আর আমার ছোটমনি। ছোটমনি আমি মৌ-কে খুব ভালোবাসি। তুমি তোমার মেয়েটাকে আমার হাতে তুলে দিবে ছোটমনি। কথা দিচ্ছি আমি কখনো তোমার মেয়েকে কোন অভিযোগ করার সুযোগ দিবো না। ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবো তোমার মেয়েকে।

আলিহানের কথা শুনে চোখের কোনে অশ্রু জমে গেছে সৈয়দা মাহবুবার। ছলছল নয়নে আলিহানের দিকে তাকিয়ে রইলেন সে। আলিহান একপলক মৌ-য়ের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসার চেষ্টা করে মেহেরের হাতদুটি আবার তার হাতের মুঠিতে নিয়ে নিলো অতঃপর বলল,

– এই পাগলী একবার ভাইয়া বলে ডাকবি আমার। তুই যখন ছোটমনির পেটে ছিলি তখন আমি ছোটমনিকে কি বলতাম জানিস, তুই হবি আমাদের ছোট্ট প্রিন্সেস। তোকে খাইয়ে দিবো, বউ সাজিয়ে দিবো, চুলে বেনুনী করে দিবো আর মাঝে মাঝে খুব জ্বালাতন করবো তোকে। কিন্তু দেখ তুই যখন এই পৃথীবির আলো দেখলি তখন আমি জানতেই পারলাম না। আর যখন জানতে পারলাম আমার ছোট্টপরির কথা তখন ছোটমনি তার বাপের বাড়ি ছেলে চলে আসে। কোনদিন তোকে আদর করতে পারিনি। ভাইয়া ডাকটা আজও শুনা হয়নি আমার।

– নওশাদ আহমেদের সাথে থেকে থেকে ড্রামাটা ঠিক শিখে নিয়েছো। মৃদু হেসে বলল মেহের। আমি তোমাকে কিছুতেই ভাইয়া বলে ডাকবো না। যে নওশাদ আহমেদকে আমি বাবা বলে স্বীকার করি না তার ভাইয়ের ছেলে আমার ভাই হয় কি করে! তবে আমি তোমাকে দুলাভাই বলে ডাকতে পারি। শুধু একটাই রিকুয়েস্ট নওশাদ আহমেদের থেকে আমার বোনটাকে দূরে রাখবে।

– সেটা আবার বলতে। একবার হুকুম করেন মহারানী। আপনার বোন চিরদিনি আপনার কাছেই থাকবে।

– তোমার কি ঘর জামাই থাকার ইচ্ছে নাকি। স্মিত হেসে বলে মেহের। মেহেরের কথা শুনে আলিহান মৌ সহ সৈয়দা মাহবুবা হেসে দেয়।

২০,
রাতে টিউশন শেষে বাসায় ফিরে যাচ্ছে রাহনাফ। চাদের নির্মল আলোতে রাস্তায় হাটতে ভালো লাগছে তার। অনেকদিন পর রাতের বেলা রাস্তায় হাটছে সে। প্রতিদিন রিক্সা করে বাসায় ফিরে যাওয়া হয়। আজ হঠাৎ করেই রাহনাফের ইচ্চে হলো সে হেটে যাবে। মনের উপর নাকি কারো জোর চলে না। তাই সে মনের মর্জিমাফিক হেটে যাচ্ছে। খুব সুন্দর জোছনা নেমেছে।চাদের মধ্যে হলুদ হলুদ একটা ভাব চলে এসেছে।কালো কালো অংশগুলো কেমন কেমন যেন লাগছে।চাদের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না।নেশা নেশা লাগে। তার এই নেশাকে আরো তীব্র নেশাক্ত বাড়িয়ে তুলে মেহেরের ভাবনা। ইশ এই সোনালি চাদের আলোয় যদি মেহের হাট ধরে পাশাপাশি হাটতে পারতো সে। উপরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে রাহনাফ। বুকের বা পাশে হাত রেখে বলে উঠে,

– ভালোবাসি লেখিকা সাহেবা। খুব বেশী ভালোবাসি আপনাকে।

রাহনাফের ভাবনার ছেদ ঘটায় ওর মোবাইলের রিংটোন। কিছু সময়ের জন্যে হলেও রাহনাফের মনে হচ্ছিলো এই মোবাইল যদি আবিষ্কার না হতো তাহলো অনেক ভালো হতো। মানুষ শান্তুি মতো ঘুমাতে পারতো। কাজে মনোযোগ দিতে পারতো এমনি প্রাণ ভরে স্বপ্ন দেখতে পারতো। বুক পকেট থেকে মোবাইটা বের করে স্কিনে নাম্বার দেখে চমকে উঠে সে। মনে মনে বলে,

– নওশাদ স্যার। তিনি কেন কল করছেন? নিশ্চয় মেয়ের নেকামো সহ্য করতে না পেরে কল করেছেন। কি করবো কল রিসিভ করবো কি করবো না অনেক ভেবে চিন্তে শেষে কল রিসিভ করে কথা বলে নেয়।

চলবে,,,,,

#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here