মেঘ_রোদ্দুর পর্বঃ১১
#লেখিকা_তাজরিয়ান_সরকার
?
?
পরদিন সকালে তিয়াশা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়। মিফতাও উঠে ফ্রেশ হয়। তিয়াশা গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়ায়। মিফতা দু’জনের জন্য দুই কাপ কফি নিয়ে এসে তিয়াশার পাশে দাঁড়িয়ে একটা কফির মগ তিয়াশার হাতে দেয়।
মিফতাঃ ভালো হয়েছে কফিটা?
তিয়াশাঃ হুম পারফেক্ট! তুই বিয়েটা করতে চাচ্ছিস না কেন? তোকে তো দেখলাম নাহিনের সাথে বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে! তুই কি অন্য কাউকে ভালোবাসিস? আমি কি চাচ্চুকে বলব!
মিফতাঃ ব্যাপারটা তা না। আমি তোদের সবাইকে ছেড়ে থাকতে পারব না তাই বিয়েটা করব না। অন্য কোনো কারণ নেই!
মিফতার কথা শুনে তিয়াশা পুরো আহাম্মক বনে যায়। তিয়াশা হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারছে না। তিয়াশা কিছুক্ষণ হ্যাবলার মতো অসহায় ফেস করে মিফতার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
তিয়াশাঃ গাধী! এর জন্য তুই বিয়ে করতে চাস না?
মিফতাঃ হ্যাঁ।
তিয়াশাঃ মেয়ে হয়ে যেহেতু জন্ম নিয়েছি বিয়ে তো করতেই হবে। বিয়ে করা দায়িত্ব, কর্তব্য। আর আমরা তো সবসময় আছি। যখন ইচ্ছে হবে চলে আসবি। আমরাও যাব তোর সাথে দেখা করতে।
মিফতাঃ আমিতো দুবাইতে চলে যাব। তখন?
তিয়াশাঃ এখন তো আর যাচ্ছিস না। আর দুবাইতে গেলে তো আর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে না। প্রতি বছর তো নাহিন তার ফ্যামিলি নিয়ে আসবেই ঘুরতে। তাহলে সমস্যা কোথায়। সবকিছু ভালো হবে। টেনশন করিস না। এর জন্য বলেছিলি বিয়ে করবি না আমিতো ভয়ে আর টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম।
মিফতাঃ হুম। তুই কবে বিয়ে করবি বল? অর্পণ ভাইয়াও বিয়ে করেনি। শুনতাম বড়রা আগে করে ছোটরা পরে। এখন দেখি আমাদের ফ্যামিলিতে উল্টো। হেহেহেহে!
তিয়াশাঃ হু। আচ্ছা আজ বিকেলে তো শপিংয়ে যাওয়ার কথা। আমাকেও হসপিটালে যেতে হবে।
মিফতাঃ গতকাল তো আয়াশ ভাইয়ার মায়ের অপারেশন ছিলো। এখন কেমন আছেন উনি?
তিয়াশাঃ ভালো আছে। নেহা তো বললো কোনো সমস্যা হয়নি। আর কয়েকদিন পর সব ঠিকঠাক থাকলে রিলিজ দিয়ে দিব।
মিফতাঃ আমার বিয়ের আগে হবে তো?
তিয়াশাঃ হ্যাঁ হ্যাঁ। চিন্তা করিস না। তোরা শপিংয়ে যাওয়ার আগে আমাকে কল দিস। আমি গাড়ি নিয়ে ওইদিক দিয়ে চলে যাব আর তোরা বাসা থেকে যাবি। ওকে টাটা। দেখা হচ্ছে শপিংমলে। টেক কেয়ার।
মিফতাঃ ইউ অলসো। বায়।
তিয়াশা রেডি হয়ে নিচে নেমে ব্রেকফাস্ট করে হসপিটালে চলে যায়। হসপিটালে গিয়ে আগে আয়াশের মায়ের কেবিনে গিয়ে উনাকে চেক-আপ করে তারপর রাউন্ডে বের হয়।
রাউন্ড শেষে নিজের কেবিনে এসে লাঞ্চ করতে বসে। তিয়াশার কল আসলে ফোন হাতে নিয়ে দেখে নাহিনের কল এসেছে। তিয়াশা কলটি রিসিভ করে..
নাহিনঃ কি করিস? কেমন আছিস?
তিয়াশাঃ খাওয়া শেষ করলাম। ভালো আছি।
নাহিনঃ আচ্ছা শোন। একটা জরুরি কথা ছিল!
তিয়াশাঃ হ্যাঁ বল।
নাহিনঃ শপিংয়ে আমি আসতে পারব না। আমার একটা কাজ আছে। আম্মু আর নায়না আসবে৷ তুই বাকিটা ম্যানেজ করে নিস। আমাকে আব্বুর সাথে একটা জরুরি কাজে যেতে হবে।
তিয়াশাঃ ওকে।
আয়াশঃ আসব?
তিয়াশাঃ হ্যাঁ আসুন।
আয়াশঃ তোমার কি সামনে বিয়ে?
তিয়াশাঃ নাহ তো! হঠাৎ এই প্রশ্ন? আর আমার বিয়ে নিয়ে এত ইন্টারেস্টেড!
আয়াশঃ নাহ আসলে কয়েকদিন যাবত শুনছিলাম তো তাই।
তিয়াশাঃ আমার কাজিন মিফতার বিয়ে। ছেলে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নাহিন রহমান। মা-বাবার দুইমাত্র সন্তানের মধ্যে নাহিন বড়। তার ছোট বোন নায়না রহমান। নাহিনের বাবা রায়হান রহমান আর মা নিশা রহমান। পরিবার নিয়ে দুবাইতে সেটেল্ড। সেখানে বাবার বিজনেস আছে। ও নিজে একটা কোম্পানিতে চাকরি করে। আশা করি আপনার মনের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন!
আয়াশঃ হুম। তুমি কেমন যেন হয়ে গেছো! আগে খুব নরম ছিলে আর এখন খুব স্ট্রিক্ট।
তিয়াশাঃ হয়তোবা। আপনার মায়ের খেয়াল রাখবেন। আর কয়েকদিন পরই উনাকে রিলিজ দিয়ে দিব। সবকিছু ঠিকঠাক?
আয়াশঃ হুম। আরেকটা সুযোগ?
তিয়াশাঃ আপনি এখন আসতে পারেন। আমার কাজ আছে।
আয়াশ আর কিছু না বলে উঠে চলে যায়। তিয়াশা উঠে দাঁড়িয়ে গ্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে…
তিয়াশাঃ আমি তোমার হাতের খেলার পুতুল নই আায়শ আহমেদ তুমি যখন যেভাবে আমাকে নিয়ে খেলবে আমি তখন সেরকম ই করব। তুমি আমার আর আমার বাবার এবং আমার পরিবারের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলে আমি সেই যোগ্যতা প্রমাণ করেছি।
যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা যায় তাকে ঘৃণাও করা যায় আর আমি তোমাকে ঘৃণা করি। তোমার জন্য আমার বিন্দু মাত্র মায়া হয় না। যেই তুমি আমার ভালোবাসা যোগ্যতা আর টাকা দিয়ে মেপেছো সেই তুমি আমাকে ভালোবাসো। নাহ কখনোই বাসো না। এখনও বাসোনি। তুমি এখনও আমাকে চাও আমার যোগ্যতা আর টাকা। আমি তোমাকে ভালোবাসিনা আর।
তোমাকে আর সুযোগ দেওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। তোমার সাথে তিয়াশা খানের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি আর এসব নিয়ে ভাবব না অবশ্য ভাবা অনেক বছর আগেই ছেড়ে দিয়েছি।
তিয়াশা ওয়াশরুমে গিয়ে চোখেমুখে পানির ঝাপটা দেয়। তারপর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে তার ফোন বাজছে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে মিফতার কল।
তিয়াশা ফোনটা কেটে দিয়ে মিফতাকে মেসেজ করে সে আসছে। নেহাকে ডাক দেয়।
নেহাঃ ম্যাম আপনি যান। আমি সব ম্যানেজ করে নিব।
তিয়াশাঃ হুম। টেক কেয়ার।
তিয়াশা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে শপিংমলের উদ্দেশ্যে। তিয়াশা যেতে নাহিনের মাকে কল দিয়ে রওনা দিতে বলে।
শপিংমলে,
তিয়াশাঃ নিশা আন্টি আর নায়না আসেনি এখনো।
নায়নাঃ তিয়ুপি এসে পড়েছি। নো টেনশন!
তিয়াশাঃ হুম গুড।
তিয়াশা, লিয়া, মায়া, অর্পণ, মিফতা, নিশা আর নায়না শপিংমলে ঢুকে। প্রথমে সবাই মিফতার আর নাহিনের ড্রেস কিনতে যায়।
মিফতা আর নাহিনের যাবতীয় সবকিছু কেনা হয়ে গেলে তিয়াশা নিজের জন্য ড্রেস কিনে। নায়না তার নিজের জন্য ড্রেস কিনে। অর্পণও নিজের জন্য ড্রেস কিনে। নাহিন, অর্পণ, তিয়াশা, নায়না আর মিফতার এই কয়েকজনের সব ড্রেস আর শু কেনা শেষ। বাড়ির বাকিদের জন্য রয়েছে।
এগুলো কিনতে কিনতেই রাত ৯ টা বেজে যায়। তাদের আরো অনেক কেনাকাটা বাকি। সবাই মিলে ঠিক করে পরেরদিন সেগুলো কিনবে। নায়না আর নিশা বাসায় চলে যায়। তিয়াশারাও সবাই বাসায় চলে আসে।
খান ম্যানশন,,
রিহামঃ কেনাকাটা শেষ তোমাদের??
অর্পণঃ না বড় বাবা! ৪০% ও হয়নি তাদের। আরো অনেক রয়েছে।
সিফাতঃ কালও তো তাহলে যেতে হবে?
তিয়াশাঃ হ্যাঁ চাচ্চু। কাল আমরা যাব না। কাল শুধু আম্মু আর চাচি যাবে। নিশা আন্টি আর লিয়াও আসবে। আমাদের তিনজনের আর কাজ নেই কাল।
লিয়াঃ নিজেদেরটা হয়ে গেছে তাই আর যাবিনা।
তিয়াশাঃ হ্যাঁ। হিহি।
মায়াঃ আচ্ছা যেতে হবেনা।
সিফাতঃ কালকে ডেকোরেটরের লোকদের কল করতে হবে। আত্মীয় স্বজনদের সবাইকে এখন দাওয়াত দেওয়া শেষ হয়নি।
তিয়াশাঃ ওহ শিট! আমাদের ফ্রেন্ডদেরও তো বলা হয়নি। আমার ফ্রেন্ডদের নাহিন অবশ্য বলেছে তাও আমাকে তো বলতে হবে। তোদের দুইজনের ফ্রেন্ডদেরও নিশ্চয়ই বলিস নি?
মিফতা এবং অপর্ণঃ হ্যাঁ।
তিয়াশাঃ কাল বসে বসে এইসব কমপ্লিট করবি। চাচ্চু আর বাবা তোমরা তোমরাও বাকিদের ইনভাইটেশন কার্ড পাঠিয়ে দাও। তোমাদের কলিগদের তো দাওয়াত দিয়েছো ই। আম্মু আমার অনেক খিদে পেয়েছে। তুমি খাবার দাও আমরা ফ্রেশ হয়ে আসছি!
মিফতাঃ হুম চল।
সবাই ফ্রেশ হয়ে এসে টেবিলে একসাথে ডিনার করতে বসে। ডিনার শেষ করে যার যার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। সবাই খুব টায়ার্ড। তারা শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ সবাইকে। ]
চলবে….!!
দশম পর্বের লিংকঃ
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2902927923269274/