মেঘ_রোদ্দুর পর্বঃ১৩
#লেখিকা_তাজরিয়ান_সরকার
?
?
তিয়াশা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কিছু একটা নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবে। সে মন থেকে চাইছে তার পরিবারকে খুশি দেখতে কিন্তু সেই শক্তিটা নিজের মধ্যে সঞ্চার করতে পারছে না।
প্রায় বেশ কয়েকঘন্টা তিয়াশা একা ছিল রুমে। অনেককিছু ভাবলো। অনেক সমস্যার সমাধান সে করতে পেরেছে। মিফতা রুমে ঢুকে,,
মিফতাঃ চল!
তিয়াশাঃ কোথায়?
মিফতাঃ বড় বাবার রুমে। সবাই ওখানেই আছে আর রাফিদ ভাইয়ার মা-বাবাও এসেছেন।
তিয়াশাঃ তুই যা আমি আসছি।
মিফতা আর বেশি কিছু না বলে চলে যায়। তিয়াশা একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে তার মা-বাবার রুমের দিকে এগিয়ে যায়। দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বাহিরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে একটু শক্ত হয়ে দরজায় নক করে।
রিহানঃ এসো মামনী!
তিয়াশা রুমে ঢুকে দেখে রাফিদ আর তার মা-বাবা সোফায় বসে আছে। অর্পণ আর মিফতা একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। রিহান আর সিফাত বেডে বসা। লিয়া আর মায়া বেডের অপর পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
মিসেস শিকদারঃ এসো মা! এখানে বসো।
তিয়াশা গিয়ে রাফিদের মায়ের পাশে বসে। ওর অসম্ভব ভয় হচ্ছে। জীবনের সবচেয়ে বড় একটি সিদ্ধান্ত এখন তাকে নিতে হবে। সে জানেনা তার গ্রহণ করা সিদ্ধান্তটা ঠিক হবে কি না!
রিহানঃ বলো তিয়াশা! তুমি কি চাও? তুমি যা চাইবে তাই ই হবে! তোমার উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে!
তিয়াশাঃ আমি বিয়েটা করব! (কম্পিত স্বরে)
রিহানঃ ভেবে বলছো? আমি কিন্তু তোমায় জোড় করে করতে বলছিনা।
তিয়াশাঃ আমি এই বিয়েটা করব। তোমরা যেইদিনই ঠিক করবে সেইদিনই। আমি মন থেকে বলছি আমি বিয়েটা করব।
রিহান খান সহ সবাই একসাথে বলে উঠেঃ আলহামদুলিল্লাহ।
মি.শিকদারঃ নাও রাফিদ। এই আংটিটা তিয়াশার হাতে পড়িয়ে দাও।
রাফিদ তিয়াশার হাতে আংটিটা পড়িয়ে দেয়। তিয়াশাকে তার মা একটি আংটি দেয় সে সেটা রাফিদের হাতে পড়িয়ে দেয়।
আগামীকাল মিফতার সাথেই তিয়াশার গায়ে হলুদ হবে আর একই দিনে দুই বোনের বিয়ে।
রাফিদরা সবাই চলে যায় কারণ তাদের আগে থেকে কোনো প্রস্তুতি ছিল না। তারা তিয়াশাদের বাড়ি থেকে সোজা শপিংমলে যায়। সেখান থেকে শপিং শেষ করে প্রায় সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে।
রাফিদদের কাছের কয়েকজন আত্মীয় স্বজনদের শুধু বলেছে। আপাদত ছোট করেই হচ্ছে। পরে বড় করে বউভাত করবে তিয়াশা আর রাফিদের।
রাফিদরা যাওয়ার পর লিয়া আর মায়াও শপিং করতে বের হয় তিয়াশার জন্য। তাদের সাথে অর্পণও যায়। তিয়াশার জন্য শপিং শেষে সবাই বাসায় আসে!
খান বাড়িতে,,
তিয়াশার কাছে সবকিছু ঘোর ঘোর লাগছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো তার এখনও যেমন বোধগম্য হচ্ছে না। বাড়ির সবাই আরো বেশি খুশি হয়ে গেছে। মিফতা নাহিনের সাথে কথা বলতে বলতে রুমে ঢুকে। নাহিনের সাথে কথা শেষ করে মিফতা গিয়ে তিয়াশার পাশে বসে!
মিফতাঃ আমি জানতাম তোর উত্তরটা হ্যাঁ ই হবে। আমি রাফিদ ভাইয়াকে চিনি বহুবছর। আমার মনে হয় সে তোর জন্য পারফেক্ট একজন। যা হয় ভালোর জন্য ই হয়। কোনো চিন্তা করিস না। সব ভালো হবে ইনশাআল্লাহ। জাস্ট চিল করো বেব!
তিয়াশাঃ তুই না আনরোমান্টিক ছিলিস?? রোমান্টিক হলি কিভাবে??
মিফতাঃ বিয়ের বাতাস গায়ে লাগলে এমনই হয়। তুইও কিছুক্ষণ পর আমার মতো হয়ে যাবি। আর তুই তো আনরোমান্টিক না।
তিয়াশাঃ রাফিদ যখন আংটিটা পড়িয়েছিল তখন কেমন অন্যরকম অনুভূতি হয়েছিল। কয়েক মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিল আমি হয়ত ঠিক সিদ্ধান্ত ই নিয়েছি।
মিফতাঃ উহুম উহুম! বুঝতে পেরেছি। পেয়ার হু গেয়া!
তিয়াশাঃ প্রতিবন্ধী!
তিয়াশা মিফতাকে এটা বলে চলে যায়। মিফতা হা করে দাঁড়িয়ে ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করে কি বললো তিয়াশা তাকে।
মিফতাঃ তিয়াশা (চিৎকার করে)
রাত ১০ টা,,
তিয়াশা আর মিফতা খেয়ে চলে যায় নিজেদের রুমে। বাকিরা সবাই যার যার কাজে ব্যাস্ত। আতিকা নাহিনদের বাসা থেকে তিয়াশাদের বাসায় এসে শোনে সবটা। সে তো খুশি আত্মহারা!
তিয়াশার এমন সিদ্ধান্তে সবাই খুব খুশি হয়েছে সেটা তাদের মুখের সেই তৃপ্তির হাসি দেখলে নিঃসন্দেহে যে কেউ বলে দিতে পারবে!
তিয়াশা মিফতা আর আতিকা শুয়ে আছে বেডে। মিফতার বাকি ফ্রেন্ডরা অন্য রুমে। তিয়াশার বাকি ফ্রেন্ডরা নাহিনদের বাসায়।
তিয়াশা আর মিফতা দুই পাশে তাদের দুইজনের মাঝখানে শুয়েছে আতিকা।
আতিকাঃ বাবা আমার কি বিয়ে হবে না! ওওওওও বাবা আমার কি বিয়ে হবে না!
তিয়াশা আর মিফতার দুজনেই উঠে বসে আতিকার গান শুনে। এক অপরের দিকে তাকায় আবার দুইজন আতিকার দিকে তাকায়। আতিকাও এবার উঠে বসে!
আতিকাঃ এভাবে তাকানোর কি আছে!
তিয়াশাঃ এই গান গাইছিস কেন?
আতিকাঃ না মানে আসলে তোরা তো এখন বিবাহিত। আমি তোদের দুইজনের মাঝে অবিবাহিত অবলা শিশু! তাই এটা গাইলাম
তিয়াশাঃ আঙ্কেলকে বলব তোর বিয়ে দিতে!
আতিকাঃ প্লিজ বইন। বল বইন। আমার বাবারে বল আমারে যেন বিয়ে দেয়। তোর কাছে নাম্বার না থাকলে আমি দিচ্ছি তাও কল দিয়ে বল আমারে বিয়ে দিতে।
মিফতাঃ আতু আপি! তুমি দেখি বিয়ে পাগল!
আতিকাঃ হ্যাঁ বনু। তোমার মতো!
মিফতাঃ এ্যাঁ?? আমি বিয়ে পাগল?
তিয়াশাঃ হ্যাঁ। চুপ থাক এখন! আতু তোর বিয়ে হবেনা কোনোদিন। আজীবন সিঙ্গেল ই থাক।
আতিকাঃ তবেরে!
তিয়াশা দৌড় দেয় তার পিছন পিছন আতিকাও দৌড় দেয়। মিফতা বেডে বসে বসে মজা নিচ্ছে আর ওর দুইজন সারা রুম দৌড়াচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ ছুটোছুটির পর বেডে এসে বসে পরে তারা দুইজন। তারপর তিনজনই হেসে দেয়। কিছুক্ষণ হাসাহাসি করে তারপর তিনজনই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ সবাইকে ]
চলবে….!!
দ্বাদশ পর্বের লিংকঃ
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2908963682665698/