মেঘ_রোদ্দুর পর্বঃ১৪

0
3061

মেঘ_রোদ্দুর পর্বঃ১৪
#লেখিকা_তাজরিয়ান_সরকার

?
?

খান বাড়ির প্রত্যেকটি মানুষের মুখে তৃপ্তির হাসি। বাড়ির প্রত্যেকটি ঘর প্রত্যেকটি ঘর আজ সবার হাসি আনন্দের সাক্ষী।

তাদের বাড়িতে একটা নয় দুইটা বিয়ে। খান পরিবারের দুই রাজকন্যার বিয়ে আজ। একজন খান পরিবারের বড় ছেলে রিহান খানের একমাত্র মেয়ে তিয়াশা খান আর আরেকজন খান পরিবারের ছোট ছেলে সিফাত খানের একমাত্র মেয়ে মিফতা খানের।

আজ তিয়াশা আর মিফতার গায়ে হলুদ। সারা বাড়ি কমলা আর সাদা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। মেয়েরা পড়বে কমলা শাড়ি আর ছেলেরা পড়বে সাদা পাঞ্জাবি।

সকাল থেকেই সবাই খুব ব্যাস্ত। তিয়াশা আর মিফতা খুব ভোরে উঠেছে। তারা উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট শেষ করে এসে নিজেদের রুমে বসে ফ্রেন্ডদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।

তিয়াশাদের গায়ে হলুদ,বিয়ে, বউ ভাত সব হবে শহরের সবচেয়ে বড় কমিউনিটি সেন্টারে। তিয়াশার আর মিফতার টা একসাথে হবে। নাহিনেরটা তাদের বাসায় আর রাফিদেরটাও তার বাসায়।

সারা বাড়িতে ছোট বাচ্চাদের দৌড়াদৌড়ি। বয়োজ্যেষ্ঠদের পুরনো দিনের গল্প। মাঝ বয়সীদের নানা রকম কাজ। কাজিনদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্ল্যানিং। সব মিলিয়ে বিরাট মহল তৈরি হয়েছে খান বাড়িতে।

মনে মনে একটু কষ্ট হচ্ছে একসাথে দুই মেয়েকে বিদায় দিতে হবে তবে সবাই হাসি মুখে সেটা মেনে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

রিহানের, সিফাতের, মায়ার, লিয়ার কাজের শেষ নেই। মেয়ের বিয়ে ঠিক মতো দম ফেলার সময়ও তাদের হাতে নেই। দুই মেয়ের বিয়ে বাবা- মা, ভাই কোনোকিছুরই কমতি রাখেনি। সবকিছুর আয়োজন করেছে।

খুব বেশি আত্মীয় স্বজনরা না আসলেও অনেকেই এসেছে। যারা এসেছে তারা সবাই ই মাতিয়ে রেখেছে বাড়িটাকে।

বিকাল ৪ টা,,

তিয়াশা আর মিফতা শাওয়ার নিয়ে লাঞ্চ করে বসে পড়েছে সাজতে। দুইজনকে সাজাতে পার্লারের দুইজন মেয়ে এসেছে।

মায়া তিয়াশার রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। পেছন থেকে লিয়া দেখে বলে.…

লিয়াঃ কাঁদছিস কেন পাগল?

মায়াঃ দেখতে দেখতে মেয়ে দুটো কত বড় হয়ে গেলো। আমাদের মতো তারাও আজ থেকে পরের বাড়ির মেয়ে হয়ে যাবে। সেটাই হবে তাদের আসল বাড়ি।

অর্পণ পেছন থেকে বলে উঠলো…

অর্পণঃ মা দাঁড়িয়ে আছো কেন তোমরা?

লিয়াঃ এমনি। তুইও বড় হয়ে গেছিস! তোর ও তো বিয়ে দিতে হবে!

মায়াঃ হ্যাঁ।

অর্পণঃ দিতে হবে না বলে দিয়ে দিলেই তো পারো। (বিড়বিড় করে)

লিয়াঃ কি বলছিস?

অর্পণঃ না কিছুনা। চলো নিচে বড় বাবা ডাকছে তোমাদের।

মায়াঃ চল।

কিছুক্ষণ পর নেহাও আসে। অর্পণ নেহাকে তিয়াশাদের রুমে নিয়ে যায়। নেহাকে রুম দেখিয়ে দিয়ে অর্পণ আবার নিচে চলে যায়। নেহা রুমে ঢুকে…

নেহাঃ ম্যাম!

তিয়াশাঃ আরে মেরি জান! আসো।

নেহাঃ রাগ করেছি আপনার সাথে!

তিয়াশাঃ কেন? আমি কি করেছি?

নেহাঃ আপনি আমাকে বলেননি কেন আপনার বিয়ে!

তিয়াশাঃ আমি নিজেও ঘোরের মধ্যে ছিলাম। কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝতেই পারছিনা এখনও। আর আমি সময় পাইনি গো। তুমি তো জানো মিফতার বিয়ে। মাঝখান থেকে আমারটাও হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অর্পণকে বলেছিলাম তোমাদের কল দিয়ে বলতে! ও বলেনি??

নেহাঃ অর্পণ স্যার কল দিয়েছিল তাই তো আসলাম। আর আমাদের হসপিটালে যেই নতুন ডক্টর আসবে উনাকে স্বাগতম জানানোর প্রস্তুতি চলছে।

মিফতাঃ দুইজনকে একসাথেই স্বাগতম জানিও!

নেহাঃ দুইজন কে?

মিফতাঃ হুমম। তোমাদের সেই নতুন স্যারের বউ ই তোমাদের এই পুরাতন ম্যাম। (চোখ টিপ দিয়ে)

নেহাঃ তাই নাকি?? তাহলে তো ভালোই হলো!

আতিকাঃ কিরে! গায়ে হলুদ লাগানোর ইচ্ছে নেই?

তিয়াশাঃ কেন কি হয়েছে?

আতিকাঃ গল্প পরে করিস! সময় তো চলে যাচ্ছে। লেট হয়ে যাবে তো।

তিয়াশাঃ আমার বিয়েতে আমার ফ্রেন্ডরাই নেই! সব দোষ মিফতার।

মিফতাঃ আমি কি করলাম? আমি কি মানা করেছি আসতে?

তিয়াশাঃ নাহিনের কাছেই তো সবগুলো। আমাকে বললো শুধু এসে হলুদ দিয়ে চলে যাবে। নাহিন তো মনে হয় আসবেনা। আমার বেস্টু আসবেনা!

মিফতাঃ কেউ আসবেনা!

তিয়াশাঃ কেন?

মিফতাঃ জানিনা। কাল সবার সাথে দেখা তো হবেই। আর নাহিন ভাইয়ার হলুদে ও তো তুই যাবিনা।

আতিকাঃ ভাইয়া??????????

তিয়াশাঃ জামাইকে ভাইয়া। আরে ও তোর ভাইয়া না সাইয়া হয়!

মিফতাঃ লেগ পুল করিস না বলে দিলাম। ভুলে বলে ফেলেছি।

আতিকাঃ ওগো শুনছো! এভাবে ডাকবা!

রুমের সবাই আতিকার কথা শুনে উচ্চস্বরে হেসে দেয়। সবাই রেডি হতে বসে পড়ে।

সন্ধ্যা ৭ টা,,

বাড়ির সবাই আগে চলে গেছে কমিউনিটি সেন্টারে। দুইটা গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে মিফতা, তিয়াশা আর তাদের ফ্রেন্ডদের নিতে।

তারা সবাই গাড়ি করে রওনা হয় কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণ পর পৌঁছে যায়। গাড়ি থেকে নেমে দেখে অনেক মানুষ।

তিয়াশাঃ এত মানুষ কোথা থেকে? আত্নীয় স্বজনরা তো সবাই আসেনি। বাবার আর চাচ্চুর কলিগ মিলেও এত মানুষ হওয়ার কথা না।

আতিকাঃ চল সামনে দেখতে পারবি।

তিয়াশার হাতে ধরেছে আতিকা আর মিফতার হাতে ধরেছে নেহা। তিয়াশা তার আরেকটি হাত দিয়ে মিফতার আরেকটি হাত ধরে। তারা মিফতাকে আর তিয়াশাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে!

তিয়াশা আর মিফতা ভিতরে ঢুকে পুরো অবাক। নাহিন আর রাফিদ স্টেজে দাঁড়িয়ে আছে দু- হাত বাড়িয়ে। তারপর তারা স্টেজ থেকে নেমে তিয়াশার আর মিফতার সামনে এসে দাঁড়ায়।

নাহিন তিয়াশাকে উদ্দেশ্য করে বলে…

নাহিনঃ দোস্ত তোর হলুদ আর আমি আসবনা তা অসম্ভব। তাই আমার আর রাফিদের ভেন্যু ও এখানে নিয়ে আসলাম। আমাদের সব রিলেটিভসরাও এখানেই এসে পড়েছে।

মিফতাঃ এত বুদ্ধি কই রাখো ভাইয়া?

তিয়াশাঃ ভাইয়া না সাইয়া!

নাহিনঃ বুকে ব্যাথা করছে ( বুকে হাত দিয়ে)

মিফতাঃ কেন কেন?? ডাক্তার ডাকব?

রাফিদঃ আমরা কি ধোপা?

নিহানঃ দুইটা ডাক্তার থাকতে আবার ডাক্তার ডাকবে? ভাইয়া ডাকলা তাই তো বুকে ব্যাথা করছে!

অর্পণঃ একটু জোড়ে বলো তোমরা চারজন কি ফুসুরফুসুর করছো! আমরাও শুনি।

মিফতাঃ কিছুনা। চলো।

তারা চারজন গিয়ে স্টেজে উঠে। মিফতা আর নাহিন একপাশে আর তাদের ঠিক বরাবর সামনে মুখোমুখি হয়ে তিয়াশা আর রাফিদ বসে।

রাফিদঃ You look like my dream fairy..

তিয়াশাঃ Really!

রাফিদঃ Yeah my love..

তিয়াশাঃ Thanks..

তিয়াশা পড়েছে হলুদ রঙের লেহেঙ্গা। সাথে সারা গা ভর্তি সাদা আর হলুদ কম্বিনেশনের ফ্লোরাল জুয়েলারি সেট। চুলগুলো মাঝখানে সিঁতি করে হাত খোঁপা করে ফুল দিয়ে পেঁচানো আর খোঁপার মাঝে ছোট ছোট ফ্লাওয়ার ক্লিপ। মাথায় টিকলি আর সামনে দিয়ে কয়েকটা ছোট চুল বের করা। ঠোঁটে রেড লিপস্টিক। পায়ে সাদা শু

রাফিদ পড়েছে সাদা শালোয়ার আর হলুদ কাবলি তার সাথে ফুল সাদা শু। হাতে ব্র্যান্ডের ঘড়ি।চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা।হ্যান্ডসাম লাগছে অনেক।

আর নাহিনও রাফিদের মত সেইম কস্টিউম ই পড়েছে। শুধু নাহিনের কাবলি কমলা রঙের।

আর মিফতা পড়েছে কমলা আর সাদার কম্বিনেশনের লেহেঙ্গা। বাকি সব তিয়াশার মতো সেইম সেইম।

তাদের দুই জুটি অর্থাৎ রাফিদ+তিয়াশাএবং নাহিন+ মিফতা জুটির ফটোসেশান হয়। ফটোসেশান শেষে শুরু হয় মেইন প্রোগ্রাম। প্রথমে তাদের বাবা-মায়েরা গিয়ে হলুদ লাগা। তারপর রুশা আর অর্পণ গিয়ে হলুদ লাগায়। সবাই আস্তে আস্তে এক এক করে ওদের দুই জুটিকে হলুদ ছোঁয়ায়। কলিগ, ফ্রেন্ড সবাই মিলে খুব ইনজয় করে। সব মিলিয়ে সবাই কয়েক হাজার ফটো তুলে।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হয় তিয়াশা আর রাফিদ গিয়ে যখন মিফতা আর নাহিনকে হলুদ ছোঁয়ায় আবার তারা এসে যখন তিয়াশা আর রাফিদকে হলুদ ছোঁয়ায়।

সবশেষ করে সবাই বাসায় চলে আসে! নাহিনরা আর রাফিদরাও বাসায় চলে যায়। সবাই খুব টায়ার্ড।

অনেক রাত হয়েছে বিধায় সেখানে আর মেহেদী দেয়নি মিফতা আর তিয়াশা। বাসায় এসে ওদের বাসার ছাদে ছোট করে অর্পণ সেটআপ করে দেয়। সেখানে বসে তিয়াশার আর মিফতার হাতে মেহেদী দেওয়ার জন্য যাদের আনা হয়েছে তারা এসে তাদের হাতে মেহেদী দিয়ে দেয়। আতিকা আর নেহাও মেহেদী দেয়। ফটোসেশান করা হয়।

রাত ৩ টা,,

মেহেদী দেওয়া শেষ করে ফ্রেশ হয়ে মিফতা আর তিয়াশা গিয়ে শুয়ে পড়ে। বাকিরাও কেউ কেউ একটু শুয়েছে। বাড়ির বড়রা সবাই প্রায় জেগে আগামীকালের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তিয়াশা আর মিফতা গিয়ে শুয়ে ঘুমি পড়ে পরদিন সকালে খুব ভোরে উঠতে হবে। বাকিরা বেলকনিতে বসে সারারাত আড্ডা দেয়। তিয়াশা আর মিফতাও দিতে চেয়েছিল কিন্তু আতিকা জোর করে তাদের পাঠিয়ে দেয়। সারাদিন অনেক ধকল গেছে তাদের উপর সেটা তারা না বুঝালেও মুখ দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ সবাইকে ]

চলবে….!!

ত্রয়োদশ পর্বের লিংক ঃ

https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2911971575698242/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here