মেঘ_রোদ্দুর পর্বঃ৩

0
2733

মেঘ_রোদ্দুর পর্বঃ৩
#লেখিকা_তাজরিয়ান_সরকার

?
?

তিয়াশা সামনে যেয়ে দেখে নাহিন পায়ের উপর পা তুলে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে। তিয়াশা ওকে দেখে বেশ অবাক হয়। সে নাহিনকে আস্তে করে ডাক দেয়।

তিয়াশাঃ নাহিন! (কাঁধে ধাক্কা দিয়ে)

নাহিন হুড়মুড়িয়ে উঠে ঠিক হয়ে বসে।

নাহিনঃ এসে পড়েছিস?

তিয়াশাঃ তুই এত সকালে?

নাহিনঃ তুই ই তো গতকাল রাতে বললি হসপিটালে আসতে তাই দেরি না করে চলে আসলাম সকাল সকাল।

তিয়াশাঃ আমিতো তোকে আজই আসতে বলিনি। অন্যদিন আসতি। সমস্যা ছিলো না। আর এখন মাত্র সকাল ৭ টা বাজে। আজ তো আমার দু’টো অপারেশন আছে তাই আগে এসেছি। আর নয়ত অন্যদিন ৯টা থেকে আসি। আজ এসেছিস ভালো হয়েছে। দেখা হয়ে গেলো তোর সাথে। তবে Sorry রে আড্ডা দিতে পারব না। অটিতে ঢুকতে হবে তাই একটু কাজ আছে।

নাহিনঃ আমি জানি তোর আজকে দুটো অপারেশন আছে। তাই সকালে এসেছি কারণ আমার মুখ দেখলে তোর দিনটা ভালো যাবে। (চেয়ার থেকে উঠে তিয়াশাকে জড়িয়ে ধরে আবার ছেড়ে দেয়)

এমনভাবে তিয়াশা একটু অস্বস্তিতে পড়ে যায়। তবে নাহিনকে কিছু বলে না।

তিয়াশাঃ এহহহহ! তোর মুখ দেখে দিন ভালো যাবে। হাহা। Lame joke..

নাহিনঃ আচ্ছা। কতদিন পর আসলাম তোর সাথে দেখা করতে এক কাপ কফিও তো খাওয়াতে পারিস নাকি!

তিয়াশাঃ সরি। ওয়েট এখনি বলছি। তিয়াশা নেহাকে ডাক দেয়।

নেহাঃ জ্বী ম্যাম।

তিয়াশাঃ এক কাপ কফি।

নেহাঃ ওকে ম্যাম।

নেহা পিওনকে দিয়ে এক কাপ কফি পাঠায়। নাহিন সেটা খায় আর তিয়াশার সাথে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়। তারপর তিয়াশাকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে যায় তার কেবিন থেকে।

তিয়াশা আবার নেহাকে ডেকে পাঠায়। নেহা তিয়াশার জন্য এক কাপ ব্ল্যাক কফি নিয়ে আসে। তিয়াশা সেটা খেতে খেতে পেশেন্টের রিপোর্ট গুলো চেক করছিলো। আর নেহা গিয়ে অটি রেডি করছে।

সকাল ৯ টা,,

তিয়াশা অটিতে ঢুকবে এখন। তার সহযোগী ডাক্তাররা, নার্স সবাই রেডি। ও কেবিন থেকে বেরিয়ে পেশেন্টের বাড়ির লোকদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে। তাদের আশ্বস্ত করে সে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। তারপর অটিতে ঢুকে।

অটিতে ঢুকে ইউনিফর্ম পড়ে সৃষ্টিকর্তার নাম নিয়ে সার্জারী শুরু করে। এটা দেশে তার প্রথম সার্জারী। কানাডায় থাকতে আগে আরো করেছে।

_________________________

আয়াশ তিয়াশার হসপিটালের রিসেপশনে কল দেয়।

আয়াশঃ হ্যালো!

রিসেপশনিস্টঃ জ্বী স্যার বলুন। আমি কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি।

আয়াশঃ তিয়াশা খান কি হসপিটালে আছেন?

রিসেপশনিস্টঃ জ্বী স্যার। তবে উনি অটিতে আছেন এখন। উনার আজ দুটো মেজর সার্জারি আছে।

আয়াশঃ ওহ আচ্ছা। ধন্যবাদ।

আয়াশ কলটি কেটে দেয়। সে ভেবেছিলো তিয়াশার সাথে দেখা করবে। কিন্তু তা আর হবে না।

সে কিছুক্ষণ কেবিনে বসে থেকে তারপর মিটিংয়ে যায়।

_________________________

প্রায় চার ঘন্টা পর অপারেশন সাকসেসফুল করে তিয়াশা অটি থেকে বের হয়। আজ তার অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছে।

দেশে তার প্রথম সার্জারি সাকসেসফুল হয়েছে। এটা তার একটি বিরাট বড় প্রাপ্তি। আজ একটি পরিবারের মুখে সে হাসি ফুটিয়েছে।

ডাক্তার কাজটা খুব কঠিন। আবার খুব সহজ। কাজটাতে অনেক কিছু ফেস করতে হয়। নিজেকে অনেক শক্ত রাখতে হয়। অনেকগুলো প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এটি করতে হয়। নিজের ব্যাক্তিগত জিনিসও মাঝে মাঝে ত্যাগ করতে হয়।

তিয়াশা অটি থেকে বের হয়ে সোজা নিজের কেবিনে চলে আসে। এসে খুব জোড়ে একটা শ্বাস নেয়। এখন প্রায় দুপুর ২ টা বাজে। তার লাঞ্চের সময় হয়ে গিয়েছে।

নেহাঃ ম্যাম আসব?

তিয়াশাঃ হুম এসো।

নেহাঃ আপনার খাবারটা!

তিয়াশাঃ টেবিলে রাখো।

নেহা খাবারের ট্রে টেবিলে রেখে চলে যেতে নিলে তিয়াশা পেছন থেকে ডাক দেয়।

নেহাঃ ম্যাম কিছু বলবেন??

তিয়াশাঃ আমার সাথে লাঞ্চ করো আজ। তোমার খাবারটাও নিয়ে এসো।

নেহা খুশি হয়ে যায়। দ্রুত গিয়ে নিজের খাবারটা নিয়ে আসে। তারপর তারা দুইজন বসে বেশ মজা করে গল্প করতে করতে লাঞ্চ শেষ করে।

লাঞ্চ শেষ তিয়াশা সোফায় একটু শুয়ে থাকে। আরেকটা সিঙ্গেল সোফায় তিয়াশার পাশে নেহা বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। দুজন মিলে কিছুক্ষণ গল্প করে।

তারপর নেহা এক কাপ কফি এনে বসে খেতে থাকে আর তিয়াশ একটু ঘুমায়।

বেশ অনেক সকালে উঠেছে আর অনেক্ক্ষণ যাবত সার্জারি করেছে তাই একটু টায়ার্ড লাগছে তার। আবার আরেকটা সার্জারি আছে রাতে তাই একটু ঘুমচ্ছে। বিকাল চারটা থেকে আবার রোগী দেখতে বসবে।

_________________________

দুপুরে নাহিন শাওয়ার শেষ করে লাঞ্চ করে নিজের রুমে বসে মোবাইল ঘাটছে।

আজও সেই হাসি, সেই চোখ, সে চঞ্চলতা ভুলতে পারেনি সে। কতবছর তাকে দেখে না নাহিন। নামটুও জানেনা। শুধু কলেজ ফাংশনে দেখেছিলো তাকে দেখেছিলো। কেন যেন সে ই নাহিনের বুকে গেঁথে আছে।

_________________________

তিয়াশা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এক কাপ কফি খেয়ে রোগী দেখতে বসে। রোগী দেখা শেষ করে একটু ফ্রেশ হয়।

রাত ৯ টা,,

তিয়াশা অটিতে ঢুকে নেক্সট সার্জারি করার জন্য। এটিও মেজর সার্জারি। সৃষ্টিকর্তার নাম নিয়ে শুরু করে এই সার্জারি।

বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পর একটি সমস্যা হয়। তিয়াশা সহ বাকিরাও খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। তবে সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবকিছু ঠিকঠাক হয়।

রাত ১২ টা,,

তিয়াশা অটি থেকে বের হয়ে সোজা তার কেবিনে চলে আসে। নেহাও আসে তার সাথে। তিয়াশা এসে চোখে মুখে একটু পানি দেয়। তারপর আরেক কাপ কফি খেয়ে রাউন্ডে বের হয়।

রাউন্ড শেষ করে রাত ২ টায়। তারপর বাসায় আসে। বাসায় এসে দেখে তার মা বাবা দু’জনেই বসে আছে। বসে তারা তিয়াশার জন্য অপেক্ষা করছে। তার মা বসে টিভি দেখছে আর তার বাবা বসে অফিসের কাজ করছে।

তিয়াশা তাদের সাথে বেশি কথা বলে না। ডিনারটা করে সে তার রুমে চলে যায়। সে খুব টায়ার্ড। রুমে এসে শাওয়ার নিতে ঢুকে।

বেশ কিছুক্ষণ পর শাওয়ার নিয়ে বের হয়। বের হয়ে দেখে তার মা এসেছে রুমে।

তিয়াশাঃ মা! কিছু বলবে?

মিসেস খানঃ অপারেশন কেমন হয়েছে?

তিয়াশাঃ দু’টোই সাকসেসফুল। (খুশি হয়ে)

মিসেস খানঃ আলহামদুলিল্লাহ। (মেয়েকে জড়িয়ে ধরে)৷ ঘুমিয়ে পড়ো তাড়াতাড়ি। খুব টায়ার্ড মনে হয় আজকে।

তিয়াশাঃ হুম। টাটা মা। Good night..

মিসেস খানঃ Good night.

তিয়াশা কিছুক্ষণ ল্যাপটপে কাজ করে। তারপর ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে বেশ বেলা করেই উঠে। আজ ছুটি তার। ঘুম থেকে উঠে দেখে….

চলবে….!!

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। দেশের এমন পরিস্থিতিতে মন-মেজাজ খুব খারাপ। মানসিকভাবেও ভালো না। সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকি। তাই একটু ছোট হয়ে গেছে আজকের পার্ট। এমন অবস্থায় ভেবেছিলাম দিব না। তাও যতটুকু পেরেছি লিখেছি। সবাই সাবধানে থাকবেন। ধন্যবাদ সবাইকে ]

দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্কঃ

https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2888728828022517/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here