মেঘ_রোদ্দুর পর্বঃ৪

0
2950

মেঘ_রোদ্দুর পর্বঃ৪
#লেখিকা_তাজরিয়ান_সরকার

?
?

তিয়াশা ঘুম থেকে উঠে দেখে তার বেডের সামনের সোফায় তার কাজিন মিফতা বসে বসে ল্যাপটপ ঘাটছে আর চকলেট খাচ্ছে।

সে একলাফে খাট থেকে উঠে দৌঁড়ে মিফতাকে জড়িয়ে ধরে। বেশ কিছুক্ষণ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ছিল।

মিফতাঃ তিয়ু! কেমন আছিস তুই?

তিয়াশাঃ খুব ভালো। তোকে কত বছর পর দেখলাম। জানিস আমি খুব খুব খুউউউউউব খুশি হয়েছি। জমিয়ে আড্ডা দিব আজ।

মিফতাঃ তুই হসপিটালে যাবি না??

তিয়াশাঃ আজ বন্ধ মানে ছুটি নিয়েছি। কাল দুটো সার্জারি করে একটু টায়ার্ড আর আজ তোরা আসলি তাই সবমিলিয়ে আর কি!

মিফতাঃ বুঝতে পেরেছি।

তিয়াশাঃ চাচি, চাচ্চু, অর্পণ কেমন আছে ওরা??

মিফতাঃ ভালো আছে। তোর জন্য সবাই ওয়েট করছে। আমাকে বড়মা (তিয়াশার মা) মানা করলো তোকে ডাকতে তাই ডাকিনি! ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। আমরা সবাই তোর জন্য ওয়েট করছি।

তিয়াশাঃ ওকে যা আমি আসছি

তিয়াশা ফ্রেশ হয়ে নেই নিচে নামে। নিচে নেমে দেখে সবাই ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে। তিয়াশা গিয়ে সবাইকে জড়িয়ে ধরে। তারপর গিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে বসে। তিয়াশা ব্রেকফাস্ট করছে পাশে মিফতা বসে আছে।

আর বাকিরা গল্প করছে বসে। মি. খান অফিসে
তিয়াশা আর মিসেস খান বাসায়। আর কয়েকজন সার্ভেন্ট আছে।

অর্পণঃ কিরে আমাকে ভুলেই গেছিস!

তিয়াশাঃ না রে। ভুলিনি। ওয়েট কর ব্রেকফাস্ট করে আসছি জমিয়ে আড্ডা দিব।

তিয়াশার দাদা আজিম খানের দুই ছেলে। তিয়াশার বাবা রিহান খান বড় আর ছোট ওর চাচ্চু
সিফাত খান।

রিহান খানের একমাত্র মেয়ে তিয়াশা খান একজন ডক্টর এবং স্ত্রী লিয়া খান গৃহিণী। সিফাত খানের ছেলে অর্পণ খান একটি বেসরকারি ব্যাংকের ম্যানেজার এবং মেয়ে মিফতা খান অর্নাস কমপ্লিট করেছে। সিফাত খানের স্ত্রী মায়া খানও একজন গৃহিনী।

তিয়াশা খাবার শেষ করে এসে সবার সাথে বসে দুপুর অব্দি আড্ডা দেয়। তার মা আর চাচী রান্না করতে চলে যায়। সে তার চাচ্চুর সাথে আর মিফতা এবং অপর্ণের সাথে বসে বসে আড্ডা দেয়।

তারপর তিয়াশার বাবা অফিস থেকে আসে। সবাই একসাথে লাঞ্চ করে তারপর যার যার রুমে চলে যায়।

দোতলায় তিনটে বেডরুম সাথে প্রত্যেকটির রুমে এটাচ ওয়াশরুম আছে। আর দুটো বেডরুমের সাথে দুটো বড় বড় বারান্দা। একটি রুমে তিয়াশা আর মিফতা আরেকটি রুমে অর্পণ থাকবে। আরেকটা রুম গেস্টের জন্য।

নিচতলায়ও তিনটে বেডরুম সাথে এটাচ ওয়াশরুম। একটি বেডরুমের সাথে এটাচ বারান্দা। বড় ড্রয়িংরুম। ডাইনিং আর কিচেন একসাথেই লাগানো। একটা রুমে রিহান খান আর লিয়া খান এবং আরেকটি রুমে সিফাত খান এবং মায়া খান থাকবে। আরেকটা রুম খালি।

সবাই যার যার রুমে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে। একটু রেস্ট নেয়। তারপর বিকেলে সবাই মিলে ছাদে যায়। হালকা কিছু নাস্তা আর কফি নিয়ে।

সিফাতঃ ভাই চাচ্ছিলাম মিফতার বিয়েটা দিতে। অনার্স তো কমপ্লিট করলো।

রিহানঃ মিফতা কি তাতে রাজি?

মিফতাঃ বড় বাবা তোমরা সবাই মিলে যা সিদ্ধান্ত নিবে আমি তাতেই রাজি।

তিয়াশাঃ বড় হয়ে গেছিস দেখি তুই!

অর্পণঃ হ্যাঁ। তোর বিয়ে হয়ে গেলে বাঁচব! জ্বালাবে না কেউ। হিহিহিহি

মিফতাঃ আরো বেশি জ্বালাবো। আমার জামাই সহ জ্বালাবে।

তিয়াশাসহ সবাই জোড়ে হেসে দেয় তাদের কথা শুনে। তারা দুইজনও একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেয়।

বড় ভাই মানেই ঝগড়া মারামারি খুনসুটি আড্ডা। আবার বড় ভাই ই হলো ছায়া। ভাই-বোনের ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ভালোবাসা।
ভাইয়ের সাথেই ঝগড়া হয় মারামারি হয় আবার ভাই ই সব বিপদ থেকে নিজের প্রাণ দিয়ে নিজের বোনকে রক্ষা করে। ভাই ই তার বোনকে সাহস জোগায়। ভাই তার বোনের হাসি মুখ দেখার জন্য নিজের জীবন বাজি রাখতেও পিছপা হয় না।
একজন আদর্শবান ভাই তার বোনের সবকিছু। বাবার পরে ভাই ই তার ছায়া। তার ছোটগুলো দুষ্টুমিগুলো সহ্য করে। মারামারি করে বোন যখন রাগ করে ভাই ই তখন সেই রাগটা ভাঙায়। কোনো আবদার করলে ভাই ই সেই আবদার পূরণ করে। এক আকাশ ভালোবাসে একটা বোন একটা ভাইকে। ভাইয়ের প্রতি বোনের ভালোবাসার মধ্যে কোনো বাজে উদ্দেশ্য নেই কখনো থাকেও না।

তিয়াশা অর্পণ আর মিফতা ছাদো হাঁটছে আর গল্প করছে। বাকিরা পাটিতে বসে বসে গল্প করছে।

মিসেস খানঃ তিয়াশা!

তিয়াশাঃ হ্যাঁ মা!

মিসেস খানঃ তোর ফ্র্যান্ড দের ইনভাইট কর। আগামীকাল দুপুরে বল লাঞ্চ করতে আমাদের সাথে।

তিয়াশাঃ সবার সাথে যোগাযোগ নেই তো আমার। অনেক ফ্রেন্ডকেই হারিয়ে ফেলেছি।

মিসেস খানঃ আতিকা আছে, নাতাশা আছে, নাহিন আছে, নাভিদ আছে,। তোরা যারা সবসময় একসাথে ছিলি তাদের সাথে তো তোর যোগাযোগ আছে। আমি তাদের কথা ই বলছি। তুই সহ এই পাঁচজন তো সবসময় একসাথে থাকতি।

তিয়াশাঃ হুম বুঝতে পেরেছি।

মিসেস খানঃ কল দিয়ে বলিস কিন্তু। ভুলে যাস না।

মি.খানঃ তো সিফাত! মিফতার জন্য কি কোনো ছেলে দোখেছিস? নাকি ওর কাউকে পছন্দ আছে?

মায়াঃ ভাইয়া ওরকম কিছু তো বলেনি। বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছি কাউকে পছন্দ কিনা। বলছে তার কাউকে পছন্দ নয়। তাই আমি আর বেশি কিছু বলিনি।

মি.খানঃ তাহলে তো আর কথাই রইলো না। আমি তাহলে পাত্র দেখা শুরু করে দেই?

সিফাতঃ হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।

সবাই ছাদে আড্ডা দিয়ে বাসায় আসে। সন্ধ্যা বেলায় সবাই একসাথে টিভি দেখতে বসে আরো কিছুক্ষণ গল্প করে।

রাত ৯ টা,,

সবাই টেবিলে বসে ডিনার করছে। মিফতার বিয়ে নিয়ে ই সবার মধ্যে আলোচনা চলছে। তিয়াশা আর অর্পণ তো এখন থেকেই প্ল্যান শুরু করে দিয়েছে।

আর মিফতা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে খাচ্ছে আর তাদের কার্যকলাপ দেখছে। তার বিয়ে নিয়ে এতটাই মেতে উঠেছে সবাই। তার দিকে কোনো খেয়াল ই নেই।

সবাই ডিনার শেষ করে যার যার রুমে চলে যায়। তিয়াশা আর মিফতা তাদের রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ বারান্দার ডিভানে বসে রেস্ট নেয় তারপর তিয়াশা রুমে আসে আর মিফতা আরো কিছুক্ষণ সেখানেই বসে থাকে।

তিয়াশা রুমে এসে ফোন নিয়ে নাহিনকে কল দেয়। নাহিনকে কল দিয়ে সবকিছু খুলে বলে। নাহিন বলে সে সবাইকে জানিয়ে দিবে।

তিয়াশা নাহিনের সাথে কথা শেষ করে আবার বেলকনিতে যায়। বেলকনিতে গিয়ে মিফতার পাশে বসে।

তিয়াশাঃ তোমার তো বিয়ে! হিহি

মিফতাঃ তুই ও বিয়ে করে ফেল।

তিয়াশাঃ আমি তেমন কাউকে এখনও পাই নি। পেলে অবশ্যই মা-বাবাকে বলব তারা তখন যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই ই।

মিফতাঃ আয়াশ ভাইয়ার কি খবর?

তিয়াশাঃ ভালোই। ওইদিন হসপিটালে এসেছিলো।

মিফতাঃ তোর সাথে দেখা করতে?

তিয়াশাঃ অবশ্যই না। তার মা অসুস্থ। তাই ডাক্তারের সাথে একটু আলোচনা করতে। সে জানতো না হসপিটালের নতুন জয়েন করা ডাক্তার আমি।

মিফতাঃ কি বলেছে তোকে?

তিয়াশা মিফতাকে সবকিছু খুলে বলে। তিয়াশার কথা শেষ হলে তারা দুইজন রুমে আসে। রুমে এসে মিফতা তার ফোনটা হাতে নিয়ে ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলে আর তিয়াশা বসে বসে ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রল করছে।

মিফতা তার ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলা শেষ করে। তারপর দুজনেই শুঁয়ে পড়ে। মিফতা মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুকে নিউজফিড স্ক্রল করছে আর তিয়াশা ঘুমানোর চেষ্টা করছে।

কাল সকালে তিয়াশাকে হসপিটালে যেতে হবে। বাসায় এসে সবার সাথে লাঞ্চ করে আর হসপিটালে যাবে না এমনটাই ঠিক করেছে।

তিয়াশা চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।

_________________________

আয়াশঃ মা তোমার কিচ্ছু হবে না। আমি আছিতো।

আয়াশের মাঃ তাড়াতাড়ি চল হাসপাতালে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।

আয়াশের মায়ের মাথায় একটি টিউমার হয়েছে। সেটিকে অপারেশন করে বাদ দিতে হবে। তিনি ব্যাথা না উঠার জন্য মেডিসিন খান তবুও আজ ওনার ব্যাথা উঠেছে।

ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে তিনি একটা সময় অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আয়াশ তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে পৌঁছায়।

গিয়ে রিসেপশনে জানতে পারে আজ বড় কোনো ডাক্তার নেই হাসপাতালে। তিয়াশা খান ছুটিতে আছে।

আয়াশ খবু রিকুয়েষ্ট করে তাকে কল করার জন্য। যেই ডাক্তার ডিউটিতে ছিল তারা আয়াশের মাকে নিয়ে কেবিনে যায়। উনার বেসিক ট্রিটমেন্ট শুরু করে।

_________________________

তিয়াশা ঘুমে মগ্ন। তার মাথার পাশে থাকা ফোনটা বেজে উঠে। মিফতা তখনও সজাগ। মিফতা ফোন হাতে নিয়ে দেখে হসপিটাল থেকে কল এসেছে।

মিফতা তিয়াশাকে ডাকে। তিয়াশা ঘুম ঘুম চোখে কথা বলে উঠে ফ্রেশ হতে যায়। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে অর্পণ দাঁড়িয়ে আছে।

তিয়াশাঃ কিরে! কিছু বলবি?

অর্পণঃ এত রাতে তোর একা যাওয়াটা ঠিক হবে না। এখন রাত প্রায় ২ টা বাজে। চল আমি নিয়ে যাচ্ছি।

মিফতাঃ আমি একা থাকব নাকি! আমিও যাব তোমাদের সাথে।

অর্পণঃ আচ্ছা চল। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আয়। আমি গাড়িতে ওয়েট করছি।

তিয়াশাঃ বাবাকে ডাক দিয়ে বলিস আমরা হসপিটাল যাচ্ছি ইমার্জেন্সি কল এসেছে।

অর্পণঃ ওকে।

তারা তিনজন হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে। যেহেতু রাত রাস্তায় কোনো জ্যাম নেই তাই তাড়াতাড়ি চলে এসেছে।

তিয়াশা হসপিটালে এসে দেখো নেহা ও এসে পড়েছে। এত তাড়াহুড়ার মধ্যে নেহাকে কল দিতে মনে ছিল না।

তিয়াশা অর্পণ আর মিফতাকে তার কেবিনে বসিয়ে সে নেহাকে নিয়ে দ্রুত পেশেন্টের কাছে যায়।

কেবিনে ঢুকেই সে দেখে আয়াশ বসে আছে। তখনই বুঝতে পারে তার মায়ের কিছু হয়েছে। তিয়াশা হাতের পালস চেক করে দেখে…..

চলবে…..!!

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা নিয়ে লিখেছি। বেশ বড় করে দিয়েছি। ধন্যবাদ সবাইকে ]

তৃতীয় পর্বের লিংকঃ

https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2889502817945118/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here