মেঘ_রোদ্দুর পর্বঃ৯
#লেখিকা_তাজরিয়ান_সরকার
?
?
পরদিন সকালে তিয়াশা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। গিয়ে দেখে মিফতা আগে থেকেই টেবিলে বসে আছে। তিয়াশাও গিয়ে টেবিলে বসে দুজনে একসাথে ব্রেকফাস্ট করে। ব্রেকফাস্ট শেষ করে তিয়াশা সবাইকে বিদায় জানিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।
হসপিটালে পৌঁছে নিজের কেবিনে ঢুকে নেহাকে ডাক দেয়। নেহা এলে তাকে কিছু রিপোর্ট নিয়ে আসতে বলে। নেহা রিপোর্ট আনতে যায়।
প্রিয়া তিয়াশার কেবিনে ঢুকে তার সাথে তার বড় বোন প্রাপ্তিও রয়েছে। প্রিয়া কেবিনে ঢুকে তিয়াশার সামনে গিয়ে চেয়ারের কাছে দাঁড়ায়।
প্রিয়াঃ আপু!
তিয়াশা মাথা উঠিয়ে বলে,”হ্যাঁ বলো!”
প্রিয়াঃ এটা আমার বড় আপু প্রাপ্তি।
তিয়াশাঃ আমি চিনি!
প্রাপ্তিঃ তুমি কিভাবে আমাকে চেনো?
তিয়াশাঃ না মানে আসলে! মি.আয়াশ বলেছিলো। কখন এলেন? কেমন আছেন?
প্রাপ্তিঃ কয়েকঘন্টা আগে। এয়ারপোর্টে থেকে সরাসরি এখানেই আসলাম।
তিয়াশাঃ বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিয়ে তারপর আসুন। আমি আছি। নার্সরা আছে। আপনার মায়ের কোনো সমস্যা হবে না। প্রিয়া তুমিও যাও!
প্রিয়াঃ নাহ আপু! আমি এখানেই ভালো আছি। আপু আর দুলাভাই যাবে। ভাইয়া একটু অফিসে গেছে ওর নাকি জরুরি কল করেছে।
প্রাপ্তিঃ আমি জানি তুমি আমার মায়ের খুব কেয়ার করছো। প্রিয়া আমাকে সব বলেছে ফোনে। তুমি খুব কেয়ারিং।
তিয়াশাঃ আন্টির সাথে দেখা করেছেন?
প্রাপ্তিঃ হ্যাঁ। আমি এখন আসি। ফ্রেশ হয়ে বিকেলে আবার এসে তখন কথা বলব। তুমি থাকবে কতক্ষণ?
তিয়াশাঃ আমি আজ রাত ৯টা অব্দি থাকব। সমস্যা নেই আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিয়ে আসুন। কাল তো আন্টির অপারেশন আমি একটু রিপোর্টগুলো নিয়ে স্টাডি করব। আমি আছি আপনারা যান।
প্রিয়াঃ আচ্ছা আপু। পরে কথা হবে।
প্রিয়া আর প্রাপ্তি কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর নেহা এসে কিছু পেপার্স তিয়াশাকে দেয়। তিয়াশা সেগুলো টেবিলে রেখে রাউন্ডে বের হয়। রাউন্ড শেষ করে আয়াশের মায়ের চেক-আপ করে নিজের কেবিনে এসে লাঞ্চ শেষ করে।
তিয়াশা বসে বসে কফি খাচ্ছে আর ল্যাপটপে কাজ করছে!
_________________________
বিকাল ৪ টা,,
নাহিন মিফতাকে কল দেয়। মিফতা ঘুমাচ্ছিল তখন। মিফতা ঘুম ঘুম চোখে কলটা রিসিভ করে।
নাহিনঃ কোথায় তুমি?
মিফতাঃ ঘুমাচ্ছি!
নাহিনঃ সারাদিন তো শুধু ঘুমাও ই!
মিফতাঃ তাতে আপনার সমস্যা কি? আমি কি আপনার বেডে ঘুমাই নাকি আপনার ডিস্টার্ব করি!
নাহিনঃ আমার বেডে আসলে তখন ঘুমানোর সুযোগ পাবা না। এখনই ঘুমিয়ে নেও!
মিফতাঃ কেন? তখন কি করবেন!
নাহিনঃ বুঝো না?
মিফতাঃ না তো।
নাহিনঃ আনরোমান্টিক পারসন! এত আনরোমান্টিক মেয়ে আমি জীবনেও দেখি নাই।
মিফতাঃ আমাকে দেখেন। আর আমি মোটেও আনরোমান্টিক নই।
নাহিনঃ তুমি আনরোমান্টিক নও। তুমি আনরোমান্টিক আল্ট্রা প্রো ম্যাক্স। রেডি হও আমি আধা ঘন্টার ভিতরে তোমাকে নিতে আসব।
মিফতাঃ কেন? কোথায় যাব?
নাহিনঃ একটু ঘুরব রিকশা দিয়ে দু’জনে!
মিফতাঃ আম্মু দিবে না!
নাহিনঃ আরে গাধী! তোমার আম্মুকে আমি বলেছি তিনি অনুমতি দিয়েছেন। তুমি কথা কম বলে রেডি হও!
মিফতাঃ ওকে।
মিফতা ফোন রেখে নাচতে নাচতে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা হালকা পিঙ্ক এন্ড হোয়াইট কম্বিনেশনের তাঁতের থ্রি-পিস পড়ে। এক হাত ভর্তি চুড়ি আরেক হাতে ঘড়ি। চুলগুলো হাত খোঁপা করে কাঠি দিয়ে আটকানো সামনের কয়েকটা ছোট ছোট চুল উড়ছে। চোখে কাজল আর ঠোঁটে পিঙ্ক কালারের লিপস্টিক দিয়েছে। মিফতাকে অসম্ভব সুন্দর দেখতে লাগছে।
মিফতা রেডি হয়ে নিচে নেমে দেখে নাহিন ব্ল্যাক টি-শার্ট আর হোয়াইট জিন্স। চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা। বাম হাতে ঘড়ি সাথে হোয়াইট স্নেকারর্স। আর মুখে একটা মন মাতানো হাসি নিয়ে সোফায় বসে আছে অর্পণের সাথে। তারা দুইজন বসে গল্প করছে।
মিফতা গিয়ে হালকা কেসে তাদের পাশে দাঁড়ায়। নাহিন মিফতার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মিফতা সেটা দেখে নাহিনের দিকে চোখ গরম করে তাকায়।
নাহিনঃ আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। কই ও আমার দিকে তাকিয়ে একটু লাজুক হাসি দিবে তা না করে কিভাবে তাকাচ্ছে। আনরোমান্টিক বউ। আল্লাহ তুমি আমার কপালে এটা কি দিলা! এই মেয়ের মনে কোনো ফিলিংস ই নাই। ( কাঁদো কাঁদো ফেস করে)
তিয়াশার মায়ের কথায় নাহিনের ধ্যান ভাঙে।
লিয়াঃ মিফতা যাও! নাহিন সাবধানে যেও আর তাড়াতাড়ি চলে এসো!
মিফতাঃ আচ্ছা বড়মা। চলুন
নাহিনঃ হ্যাঁ। চলো
তারা দুইজনে বেড়িয়ে একটা রিকসা নিয়ে কয়েকঘন্টা ঘুরাঘুরি করে। দুজনেই এই কয়েকদিনে অনেকটা ফ্রি হয়েছে। ঘুরার সময় দুজন হালকা ঝগড়া করে একটু হাসাহাসি করে। তারপর একটা রেস্টুরেন্টে বসে হালকা নাস্তা করে নাহিন মিফতাকে বাসায় দিয়ে সে তার বাসায় চলে যায়।
মিফতা বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে দেখে অর্পণ রেডি হচ্ছে কোথাও বের হবে।
মিফতাঃ ভাইয়া! কোথায় যাও??
অর্পণঃ বড়মা বললো তিয়াশা বলেছে তার কয়েকটা দরকারি ফাইল ড্রাইভারকে দিয়ে পাঠাতে। বাসার গাড়ির ড্রাইভার তো ছুটিতে আছে দুইদিনের আর বড় বাবার গাড়ির ড্রাইভার বড় বাবাকে আনতে গেছে। তাই আমাকেই যেতে হবে!
মিফতাঃ আমিও যাব। (মনে মনে- আয়াশের সাথে কথা বলা দরকার।)
অর্পণঃ একটু আগেইতো আসলি বাহির থেকে! টায়ার্ড তো। পরে যাস
মিফতাঃ না। আমি বিন্দাস আছি। তুমি বসো আমি রেডি হয়ে আসছি!
অর্পণঃ তুমিতো বিন্দাস থাকবা ই। সামনে তোমার বিয়ে!
মিফতাঃ হ্যাঁ।
মায়াঃ মিফতা কোথায় যাস?
মিফতাঃ আম্মু! আমি একটু হসপিটালে যাব ভাইয়ার সাথে।
মায়াঃ ওহ আচ্ছা। তাড়াতাড়ি এসে পড়িস।
মিফতা কিছুক্ষণের মধ্যেই রেডি হয়ে নিচে নামে। তারপর দু’জন মিলে হসপিটালে যায়।
_________________________
তিয়াশা কেবিনে বসে আছে। তখন অর্পণ আর মিফতা কেবিনে ঢুকে। অর্পণ ফাইলগুলো টেবিলে রেখে চেয়ারে বসে।
মিফতাঃ বনু! কি কলো।
তিয়াশাঃ তোর বিয়ের প্ল্যান।
মিফতাঃ ওফ সবাই খালি বিয়ে বিয়ে করে!
কিছুক্ষণ বসে তারা তিনজন গল্প করে। তারপর প্রাপ্তি প্রিয়া আর আয়াশ আসে তিয়াশার কেবিনে। অর্পণের কল আসায় সে একটু বাহিরে যায়।
প্রাপ্তিঃ ডিস্টার্ব করলাম?
তিয়াশাঃ না না আপু। আসুন। এটা আমার কাজিন মিফতা আর যে বাহিরে গেলো সে ওর ভাই অর্পণ। আমরা বসে একটু গল্প করছিলাম। আন্টির কি অবস্থা??
প্রাপ্তিঃ একটু ভালো!
তিয়াশাঃ বসুন আপনারা।
প্রাপ্তি আর আয়াশ সামনের চেয়ারে বসে। প্রিয়া গিয়ে মিফতার সাথে সোফায় বসে।
আয়াশ তিয়াশার দিকে তাকাচ্ছে না। তিয়াশার কথাগুলো তার ইগোতে লেগেছে। তিয়াশা জানে আয়াশের ইগোতে তার কথাগুলো লেগেছে তাও তার বিন্দু মাত্র কষ্ট হচ্ছে না কারণ যেটা সত্যি সেটা বলতেই হবে।
প্রাপ্তিঃ প্রিয়ু আমাকে বলে তোমার কথা। তুমি খুব কিউট একটা মেয়ে। খুব কেয়ার করো তোমার পেশেন্টদের। তুমি যদি আমার আয়াশের বউ হতে! তোমার মতো এমন ভালো একটা মিষ্টি বউ ই আয়াশের জন্য লাগবে।
প্রাপ্তির কথায় মিফতা তিয়াশা আর আয়াশ তিনজনেই বেশ অবাক হয়। তিয়াশা একটু অস্বস্তিতে পরে যায় তার হাসিতে।
মিফতাঃ হ্যাঁ। সবাই চায় এমন ভালো বউ। আমার বোন বলে না ও সত্যি ই অনেক ভালো মেয়ে।
তিয়াশাঃ আপু আমার একটু কাজ আছে। কালকে অপারেশন আমাকে একটু মেন্টালি তৈরি হতে হবে!
প্রাপ্তিঃ আচ্ছা। আজ উঠি। পরে একদিন কথা বলব।
তিয়াশাঃ আচ্ছা (মেকি হাসি দিয়ে)
প্রাপ্তি আর প্রিয়া কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। আয়াশ যেতে নেয় মিফতা পেছন থেকে ডাক দেয়।
আয়াশঃ বলো। ওপস সরি। বলুন
মিফতাঃ কেমন আছেন?
আয়াশঃ বুঝতেই তো পারছেন।
মিফতাঃ সময় জবাব দেয়। ভালো থাকবেন।
আয়াশঃ মিস. তিয়াশা আমার বোনের কথায় কিছু মনে করবেন না৷ আমি বুঝতে পেরেছি আপনার খারাপ লেগেছে তার জন্য আমি দুঃখিত। আসি আল্লাহ হাফেজ।
আয়াশ কেবিন থেকে বেরিয়ে তার মায়ের কাছে যায়।
রাত ১০ টা,,
মিফতারা হসপিটাল থেকে বাসায় এসে ডিনার করে সোজা যার যার রুমে গিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
তিয়াশা পরদিন বেশ সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে নামে। ব্রেকফাস্ট করে তারপর হসপিটালে যায়। হসপিটালে গিয়ে দেখে…
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ সবাইকে । ব্যাস্ততার কারণে নিয়মিত দিতে পারছি না। তার জন্য আমি দুঃখিত। ]
চলবে….!!
অষ্টম পর্বের লিংকঃ
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2899096603652406/