#মোহঘোর
#পর্বঃ১৭,১৮
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
১৭
হঠাৎ মেয়েলী চিৎকারে বিভ্রান্ত হয় ইনজাদ। ঘোর কেটে তাকাতেই দেখে একজন কাস্টমার স্টাফকে বকাবকি করে যাচ্ছে। ইনজাদ কথা বলছিল মানানের সাথে। কথা থামিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। একজন সুশ্রী নারীর এমন ব্যবহারে কিঞ্চিৎ হকচকিয়ে যায় ইনজাদ। ঘটনার বিস্তৃত জানতেই অবাক হয় সে। তিমনের সাথে ভদ্রমহিলার বাচ্চার ধাক্কা লেগে খাবারগুলো বাচ্চাটির গায়ে মেখে যায়। আর তাতেই ক্ষুব্ধ হোন ভদ্রমহিলা। ইনজাদ সচেতন চোখে তাকাল তিমনের দিকে। নব্য যুবা ছেলেটির শরীর জুড়ে কম্পন। ইনজাদের দৃষ্টিগোচর হলো তা। তিমন কাঁপছে। ভয়ে তার চোখে টলটল জল। ঝিমুনি দিয়ে উঠছে শরীর। ভদ্রমহিলা গলা ফেড়ে বললেন—
” এইটা কী ধরনের সার্ভিস আপনাদের? এসব কেয়ারলেস ছেলেদের কেনো রাখেন আপনারা? দেখুন তো কী অবস্থা হয়েছে আমার বাচ্চাটার।”
চোখ উপচে কান্না এলো তিমনের। থরথরিয়ে যাচ্ছে সে। ইনজাদ সচল চোখে তাকাল। দৃষ্টি স্থির করে রইল। ছেলেটির মুখ লালিমায় রাঙানো। ভয়ে যেন প্রাণপাখি পাখা ঝাঁপটাচ্ছে! রেস্তোরাঁর অন্য টেবিলে বসা কাস্টমাররা উদগ্রীব হয়ে চেয়ে আছে। কৌতূহলের ভরা যমুনা তাদের চোখে। বাচ্চাটি মায়ের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে মৃদু শব্দে কেঁদে যাচ্ছে। ইনজাদ শ্বাস ফেলল। উরুর উপরের জায়গায় প্যান্টের অংশ হালকা টেনে নিয়ে হাঁটু ভাঁজ করে শূন্যে বসল। বাচ্চাটির নাকের ডগা রঞ্জিত। চোখ অতল সাগর। ইনজাদ মিষ্টি করে হাসল। মোহনীয় সুরে বলল—
“কাম বেবি, ডোন্ট ক্রাই।”
বাচ্চাটি মায়ের দিকে তাকাল। মায়ের দেওয়া সাহসে ইনজাদের দিকে এগিয়ে গেল। ইনজাদ বাচ্চাটির কাঁধের দুই পাশে হাত রেখে মোলায়েম হেসে বলল—
“কী নাম তোমার?”
কাঁদো কাঁদো গলায় প্রত্যুত্তর করে বাচ্চাটি।
“মিহি।”
“চমৎকার নাম তো! কী খেতে পছন্দ করো তুমি?”
“আইসসীম, নুডুস, কোক।”
“বাব্বাহ! কত কিছু। আইসক্রীম নিয়ে আসি আঙ্কল?”
বাচ্চাটি মাথা দুলাল। ইনজাদ হাসল। তিমনকে উদ্দেশ্য করে বলল—
“যাও তিমন, ওর জন্য আইসক্রীম নিয়ে এসো। গো ফাস্ট।”
তিমন দেরি করল না। পা চালাল দ্রুত। ইনজাদ গাঢ় হাসল। বাচ্চাটির মা জোর গলায় বললেন—
“আইসক্রীমের প্রয়োজন নেই। আপনারা আপনাদের সার্ভিস সিস্টেম ডেবলপ করুন।”
ইনজাদ ঠোঁটের কোণ ছড়াল। উচ্চবাচ্য করল না। সজীব গলায় প্রশ্ন করল বাচ্চাটিকে—
“ভাইয়া তোমাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়েছে?”
“না। হাত লেগে পড়ে গেছে।”
“কার হাত?”
“আমার।”
“ওওও, তাই বুঝি। ব্যথা পেয়েছ তাই না। তাই তো ভাইয়াকে শাস্তি দিয়েছি। আইসক্রীম এনে দেবে তোমায়। খেলেই ব্যথা ফু ফু। উড়ে যাবে। গুড গার্ল।”
বাচ্চাটির গালে হাত ছোঁয়ায় ইনজাদ। উঠে দাঁড়ায় স্বগৌরবে। পকেটে হাত ঢুকিয়ে টানটান বুকে দাঁড়িয়ে বলল—
“দোষ আমার স্টাফের নয়, দোষ আপনার বাচ্চার। তার চেয়ে বড়ো দোষী আপনি। বুঝলাম তিমন ভুল করেছে, আপনি অভিযোগ করতে পারতেন। কিন্তু এভাবে অপদস্ত করতে পারেন না। যতটুকু ভয় আপনার বাচ্চা পেয়েছে, ঠিক ততটুকু ভয় তিমন ও পেয়েছে। ভুল কিন্তু সে করেনি। তবুও সে চুপ ছিল। নীরবতাকে কেন দুর্বলতা ভেবে নেন আপনারা?”
ভদ্রমহিলা সরোষে চিৎকার করে বললেন—
“কী বলতে চান আপনি? ওইটুকু ছেলেকে কেন রাখবেন এসব ফর্মে? আবার দোষ দেখাচ্ছেন! ম্যানেজার বলে মাথা কিনে নিয়েছেন? আপনার স্টাফ দোষ করেছে মানতে কেন চাইছেন না?”
ইনজাদ লাজুক হাসল। ভদ্রমহিলা বিচলিত হলেন। অক্ষিকোটর ক্ষীণ করলেন। ততক্ষণে তিমন এসে দাঁড়িয়েছে। ইনজাদ আইসক্রীম নিয়ে বাচ্চাটির হাতে তুলে দেয়। বাচ্চাটি আনন্দের সাথে তা লুফে নেয়। ইনজাদ সরব গলায় বলল—
“ভুলতো হয়েছে। তবে আমার স্টাফের নয়। তিমন আপনার বাচ্চার চেয়ে কয়েক বছরের বড়ো হবে। কিন্তু আপনি যে কথাগুলো ওকে বলেছেন সেগুলো ওর সাথে সাথে আপনার বাচ্চার মস্তিষ্কেও নেগেটিভ ভিউ তৈরি করবে। ক্ষমা মহৎ গুন, জানেন তো! আপনার উচিত ছিল ওকে বুঝিয়ে বলা না কী এভাবে চিৎকার -চেঁচামেচি করে সবাইকে ডিস্টার্ব করা। দেখুন সবাই আপনাকেই দেখছে।”
ভদ্রমহিলা পুরো রেস্তোরাঁয় চোখ বুলাল। লজ্জিত চোখ নত করল। পার্স থেকে টাকা বের করে ধুম করে টেবিলে রাখল। ইনজাদ ছোট্ট করে হাসল। বলল—
“টাকা নিয়ে যান। এইটা আপনার ক্ষতিপূরণ। তিমনের বেতন থেকে কাটা হবে। আসতে পারেন আপনি।”
ভদ্রমহিলা চোখ-মুখ খিঁচে ফেলল। বাচ্চার হাত শক্ত করে ধরে হনহন করে বেরিয়ে গেল।
ইনজাদ বাকি কাস্টমারদের বলল—
“প্লিজ!”
,
,
,
অনবরত কেঁদে যাচ্ছে তিমন। ইনজাদ এক হাতের আঙুলের ভাঁজে অন্য হাতের আঙুল ঢুকিয়ে কনুইতে ভর করে বিবশ নয়নে চেয়ে আছে। প্রশ্নের উত্তর চাই তার।
“আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি তিমন। কী হয়েছে বলো?”
তিমন হুরহুর করে কেঁদে বলল—
“কিছু হয়নি।”
“মিথ্যে বলা আমি পছন্দ করি না।”
ইনজাদের কঠিন স্বরে দৃষ্টি তুলল তিমন। কান্না গিলে নিল। চোখ পরিষ্কার করে বলল—
“আমার পরীক্ষা স্যার। এখনো বেতন ক্লিয়ার হয়নি। বাবা হঠাৎ করে অ্যাকসিডেন্ট করায় অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এখন…।”
“তিমন আর কিছু বলতে পারল না। ঝরঝর করে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে লাগল। ইনজাদ উঠে দাঁড়াল। তিমনের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তার কাঁধে হাত রেখে বলল—
“কত টাকা লাগবে?”
“ছয় হাজার।”
“ওকে। অ্যাকাউন্ট করতে বলেছিলাম, রুলস এখানের, করেছ?”
“জি স্যার।”
“অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিয়ো আমায়। টাকা পাঠিতে দেবো। তবে ধার। শোধ করতে হবে। আর বি কেয়ারফুল। তোমাদের কাজের খুশিতে মাস শেষে যেমন প্রণোদনার ব্যবস্থা আছে, ঠিক তেমন ভুল হলে শাস্তিও। তোমার স্যালারির তিন পার্সেন্ট কেটে নেওয়া হবে। এটাই রুলস। তাই সাবধান। এখানে সবাই তোমরা একটা পরিবার। প্রবলেম শেয়ার করবে। ওকে?”
তিমন চোখের পানি মুছে নিল। তার প্রাণ জুড়ে জোরালো হাওয়া বইল। মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলো।
ইনজাদ বলল—
“যাও এখন। কাজে মনোযোগ দাও। কাজে গাফেলাতি আমার একদম পছন্দ নয়।”
বিনা শব্দ করে ইনজাদের ব্যক্তিগত কক্ষ থেকে বের হয় তিমন। ইনজাদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। মধ্যবিত্তদের টানা-পোড়েন তার জানা আছে। হোস্টেলে থাকতে কত বন্ধুদের দেখেছে সারা বছর দুটো শার্টে পার করে দিতে।
মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে দেখল বিকাল তিনটা। চট করেই মস্তিষ্কের টনক নড়ল। মেয়েটা খেয়েছে তো? ইনজাদ কল করবে ভাবল। কিন্তু তাতে লাভ কী? মেয়েটা রিসিভ তো করবে না। কথা বলা ছেড়ে দিয়েছে, তাকানো ছেড়ে দিয়েছে, এমনকি দূরত্ব বাড়িয়ে নিয়েছে বিছানায়। এত জেদ! এত রাগ। এই দহনে বাঁচা যে দায়! তবুও বেহায়া মন বোঝে না। ডায়াল নাম্বারে গিয়ে আর স্থির থাকতে পারল না। কল করল। রিং হচ্ছে। তবে ওপাশের অভিমানীনি রাগ ভাঙল না, মন গলল না প্রেমিক পুরুষের অন্তর্দহনে। সে নিরুত্তাপ। কল কেটে গেল। ইনজাদ আবেশিত দৃষ্টিতে চাইল মোবাইলের স্ক্রিনে। সকাল হতে ছত্রিশবার কল করেছে সে। রিসিভ করেনি তার বিষবাণ। স্বগতোক্তি করল ইনজাদ—এতটা নির্দয় হয়ো না বিষবাণ, ভাবতে বাধ্য কোরো না ভালোবেসে ভুল করেছি। যে দহনে জ্বলছি আমি, দেরি করো না, সময় চলে গেল শুধু ধ্বংসস্তুপ মিলবে তোমায়, আমায় পাবে না।”
মোবাইলের পাশে বসে অনবরত কেঁদে যাচ্ছে রেহাংশী। পাঁজর ভেঙে যাচ্ছে তার। রক্তিম চোখ জোড়ায় ঝাপসা সব। অসাঢ়তা গ্রাস করছে তাকে। আঙ্গার দেহে হতপ্রায় এক নারী। শরীরের দূরত্ব বাড়লেও মনের দূরত্ব তো বাড়েনি। আত্মার আত্মীয় পর হয় কী করে? ঘুম চোখে আসে না তার। পাশে থাকা পুরুষের আদুরে স্পর্শের জন্য ছটফটায় তার কোমল দেহ। রন্ধ্রে রন্ধ্রে তৃষ্ণা জেগে ওঠে। জ্বলতে থাকে বিনিদ্র রজনী। তবুও দূরে থাকা। কেন চরিত্রে দাগ লাগবে তার! সব তো উজাড় করে দিয়েছে সে, ভরসা করেছে, ভালোবেসেছে। তাহলে কেন এই সন্দেহ? জ্বলে যাক, পুড়ে যাক সব, আঙ্গার হয়ে যাক সমস্ত প্রেমানুভূতি। বারবার মৃত্যুর চেয়ে একবার মরে যাওয়া ভালো।
হাঁটুতে মুখ গুজে দেয় রেহাংশী। কামড়ে ধরে কান্না থামানোর জন্য। ক্রন্দন থামার নয়। কণ্ঠদেশ বিদীর্ণ করে বেরিয়ে আসছে তারা।
,
,
,
দগদগে রোদ মাথায় নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসেছেন পারভেজ মির্জা। চোখের পাতায় তপ্ত অনুভূতি। চোখ মেলে গগন পানে চাইতে গিয়েও পারলেন না। বন্ধ করে নিলেন আঁখি জোড়া। বাড়ির সদর দরজা ছেড়ে পা বাড়াতেই দেখলেন নুহাশকে। থমকালেন তিনি। উৎসুক চোখে চেয়ে থেকে বললেন—
“এই নুহাশ! বাজারে যাচ্ছ না কি?”
নুহাশ এলোথেলো চিন্তায় মগ্ন হয়ে হাঁটছিল। আচানক ভেসে আসা কণ্ঠে স্থবির হয়ে দাঁড়ায়। সতেজ চোখে তাকাল। পারভেজ মির্জা তুষ্ট হাসলেন। বাজারে যাওয়ায জন্য একজন সঙ্গী হলো!
নুহাশ ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে আসে। পারভেজ মির্জা নির্মল হেসে বললেন—
“বাজারে যাচ্ছ বুঝি?”
“না, দোকানে। ”
“ওও। খন্দকার সাহেবের এখন অবস্থা কেমন?”
নুহাশ অসন্তুষ্ট। কিন্তু বাইরে তা প্রকাশ না করে সাবলীল গলায় বলল—
“আগের চেয়ে ভালো।”
পারভেজ মির্জা চটজলদি প্রশ্ন করলেন—
“নুপূর কেমন আছে?”
“জি,ভালো। এহসাস খারাপ ছেলে নয়। ব্যস, ওর পরিস্থিতি ভালো ছিল না।”
পারভেজ মির্জা ব্যথাতুর গলায় বললেন—
“তবে রেহাংশীর সাথে যা করেছে তা ঠিক করেনি। আর মিসেস খন্দকার! আমি অবাক হয়েছি। এমন কেউ করে?”
নুহাশ বিমর্ষ গলায় বলল—
“জানা নেই আমার। তখন আমি ছিলাম না। আর থাকলেও আমি কী করতাম? তাদের বাড়ি, তাদের মেয়ে। আমি অতিথি মাত্র।”
“তবুও তো ও তোমার বোন।”
‘বোন’ শব্দ শুনতেই বুকটা মোছড় দিয়ে উঠল নুহাশের। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোঝার ক্ষমতা হওয়ার পর থেকে রেহাংশীকে ভালোবেসে নুহাশ। মেয়েটার সারল্য, চাঞ্চল্য আর কিশোরীপনায় নিজেকে হারিয়েছে বারে বারে। মায়ের সাথে অনেকটা জবরদস্তি করেই রেহাংশীর কাছাকাছি থাকার জন্য এই বাড়িত উঠেছে সে। কিন্তু মেয়েটা তাকে কখনোই বুঝলই না। আর একা ফেলে চলে গেল! দীর্ঘশ্বাস ফেলল নুহাশ। সহজ সুরে বলল—
“আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন। হয়তো ওর কপালে এত সুখ লেখা ছিল বলে আগে এত কষ্ট পেয়েছে। এই বাড়িতে সুখ না হয় পেল না, আপনার বাড়ির পুত্রবধূ হয়ে নাহয় বাকি জীবনটা সুখে কাটাক। ইনজাদকে আগলে রাখতে বলবেন ওকে। ভালোবাসার কাঙ্গাল তো মেয়েটা! একটু আপন করে নিয়ে দেখুন, আপনাদের সবাইকে মাথায় করে রাখবে। সুখি করবে ইনজাদকে, আসি।”
নুহাশ দাঁড়াল না। বুকের ভেতর চাপা কষ্ট গলা ভেদ করতে চাইছে। কণ্ঠ জমে যাচ্ছে তার। হয়তো চোখ উপচে পানিও এসেছে! মুছে নিল তা। পারভেজ মির্জা অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছেন। ছেলেটার কণ্ঠ কেমন অপরিচিত ঠেকল!
,
,
,
কলিং বেল না বাজিয়েই দরজার নব ঘুরালো মেহমাদ। তটস্থ হয়ে ভেতরে ঢুকতেই থমকে গেল। রেহাংশী হাতে কিছু একটা নিয়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। মেহমাদকে দেখেই আবার ত্রস্তে রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকল। মেহমাদ ঢোক গিলল। অপ্রস্তুত গলায় মিহি সুরে বলল—
“সসসরি ভাবী। আসলে এতদিনের অভ্যাস তাই ভুল হয়ে গেছে। আই এম এক্সট্রিমলি সরি।”
রেহাংশী রান্নাঘরের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইল। ভয়ে তার আত্মারাপ কাঁপাকাঁপি করছে। বাসায় কেউ নেই। সবে সন্ধ্যা ঘনিয়েছে। ইনজাদ আসতে আসতে সেই রাত এগারোটা। রেহাংশীর গলা শুকিয়ে এলো। শাড়ির আঁচল খামছে ধরে ক্ষীণ শ্বাস ফেলে যাচ্ছে। মেহমাদ কোনো সাড়া না পেয়ে বলল—
” আপনি কী ভয় পাচ্ছেন ভাবী? প্লিজ ভয় পাবেন না।আমি আমার রুমে চলে যাচ্ছি। এখানে একটা ব্যাগ রাখলাম। নিয়ে যাবেন প্লিজ। আসলে আম্মাকে আপনার কথা বলেছিলাম। তাই কিছু জিনিস পাঠিয়েছে। গ্রামের মানুষ তো তাই। কিছু পুলি পিঠা, নারিকেলের চিড়া আর ইনজাদের জন্য কিছু নাড়ু পাঠিয়েছে। আম্মার হাতের নাড়ু ও আবার খুব পছন্দ করে। ও আসলে দিয়েন ওকে।”
মেহমাদ সোজা নিজের কক্ষের দিকে চলে যায়। দরজা লাগানোর শব্দ হতেই উঁকি দিলো রেহাংশী। ধাতস্থ হয়ে ছোটো ছোটো পায়ে এসে দরজার কাছ থেকে ব্যাগটা নিয়ে রান্নাঘরে রাখল। তারপর হুড়মুড়িয়ে নিজের কক্ষে ছুট লাগায়।
চলবে,,,
#মোহঘোর
#পর্বঃ১৮
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
তমসার চাঁদোয়া ফুড়ে নেমেছে স্বচ্ছ, শীতল জলের ফোয়ারা। নভোলোকের আস্ত চাঁদ কেঁপে যাচ্ছে বাদলের কম্পনে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে আচ্ছন্ন ধরণী। নৃত্যের তালে তালে মৃদু প্রভঞ্জনের আবেশিত ঝংকার। বৃষ্টি মাথায় করে ফিরেছে ইনজাদ। শহরের পিচ ঢালা রাস্তায় ঢল নেমেছে। বৃষ্টির তেজ কমে এলেও বেড়েছে হাওয়ার দাপট। শরীরের চামড়া ভেদ করে অস্থিমজ্জায় কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। ভিজে জবুথবু ইনজাদ কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলল রেহাংশী। চক্ষু জোড়া উন্মেষিত করে চাইতেই দেখল ইনজাদের চুল বেয়ে ঝরছে পানি। কাপড় লেপ্টে আছে গায়ের সাথে। ভ্রূযুগল সিক্ত। রেহাংশী চোখের পাতা নামাল। সরে দাঁড়াল নিজ গরজেই। ইনজাদ ভেতরে ঢুকল। সরাসরি তাকাতেই দেখল মেহমাদ দাঁড়িয়ে আছে নিজ কক্ষের চৌকাঠে। ইনজাদ চোখের ইশারায় বোঝাল সে তাকে দেখতে পেয়েছে। নিজ কক্ষে ঢুকল ইনজাদ। জামা ছাড়ল গা থেকে। তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকল। বের হতেই দেখল রেহাংশী কক্ষে নেই। তার একটা পাতলা টিশার্ট আর ট্রাউজার বিছানার ওপর রাখা। ইনজাদ মৃদু হাসল। কাপড় পরে নিয়ে টেবিলে তাকাতেই দেখল বাটি ভর্তি নাড়ু রাখা। নরম পায়ে টেবিলের কাছে হেঁটে গেল। একটা নাড়ু নিয়ে মুখে দিতেই বুঝল মেহমাদের মায়ের হাতের নাড়ু। কক্ষ থেকে বের হলো ইনজাদ। অবিন্যস্ত কুন্তল কপাল জুড়ে খেলছে। রান্নাঘরের পাশে ছোট্ট টেবিল রাখা। রেহাংশী খাবার বেড়ে রেখেছে। ইনজাদ বিষণ্ণ মনে ভাবল,” মেয়েটা আজও কথা বলবে না?”
ছোট্ট টেবিলটার ওপর থেকে খাবারের প্লেট হাতে নিতেই দেখল রেহাংশীর বেরিয়ে আসছে রান্নাঘর থেকে। গলা বাড়িয়ে ব্যস্ত গলায় বলে উঠে ইনজাদ—
“তুমি খেয়েছ?”
রেহাংশী কথা বলল না। থমথমে মুখে নিজ কক্ষের দিকে হাঁটা দিলো। ক্লান্ত শ্বাস ফেলল ইনজাদ। বুকের ভেতর এক তীক্ষ্ম দীর্ঘশ্বাস। গলা ফেড়ে বেরিয়ে আসছে তা। পা বাড়ায় মেহমাদের কক্ষের দিকে। মেহমাদ ল্যাপটপে কিছু করছিল। ইনজাদকে দেখেই প্রসন্ন হাসল। ইনজাদ খাবারের প্লেট এগিয়ে দিলো মেহমাদের দিকে। মেহমাদ আগ্রহের সাথে তা হাতে নিল। টুল টেনে বসল ইনজাদ। তালুর ওপর প্লেট রেখেই ঘাড় বাঁকিয়ে প্রশ্ন করল—
“কখন এসেছিস?”
ভুনা খিচুড়ির সাথে ইলিশ মাছ ভাজা। সাথে বেগুন ভাজা। মেহমাদ দেরি করল না। হাত ধুয়ে খাবার মুখে দিলো। থমকে গেল ইনজাদের প্রশ্নে। ভেবেছিল রেহাংশী এতক্ষণে জানিয়ে দিয়েছে তাকে। কিন্তু আশ্চর্য হলো সে। মেহমাদ মুখের খাবার গিলে বলল—
“সন্ধ্যায়।”
“ও।”
“আমার আম্মাকে নোবেল দেওয়া উচিত বুঝলি। কী নাটকটাই না করল! ”
ইনজাদ ক্লান্ত হাসল। তার অধর প্রশস্ত হলো না। মেহমাদ খাচ্ছে আর বলে যাচ্ছে—
“আম্মা ভাবল কী করে আমি তার বোনের মেয়েকে বিয়ে করব! ”
ভাবাবেশ ছাড়াই উদাস গলায় বলল ইনজাদ—
“বিয়ে করে নিতে। বয়স তো হয়েছে তোর।”
কণ্ঠ ভার করল মেহমাদ। বলল—
“পাগল হয়েছিস! ওই মেয়ের বয়স মাত্র পনেরো বছর! আর তিয়া! তিয়া জানলে খুন করে ফেলবে আমাকে।”
জোরপূর্বক হাসল না ইনজাদ। তার বিষন্ন ঠোঁটে সত্যিই হাসি ফুটল। মৃদু গলায় বলল—
“চাচিকে তিয়ার কথা বলেছিস?”
“বলেছি।”
“কী বলল?”
“আর কী! মানতে চায় না। বলে, শহরের মেয়ে গ্রামে এসে থাকতে পারবে না। তবে আমিও সাফ বলে দিয়েছি। বিয়ে আমি ওকেই করব।”
ইনজাদ ভাবনার ঘোরে ডুবে গেল। স্টুডেন্ট লাইফে বন্ধু-বান্ধব, ঘোরা-ফেরা ছাড়া আর কিছুতে তার মন ছিল না। মেয়ে বন্ধু যে ছিল না তা নয়। তবে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি কখনো। ভালো তো বেসেছে। তবে তার বিষবাণকেই। এক অব্যক্ত প্রণয়ের পরিণয় তাদের। তবুও ইনজাদ তুষ্ট, প্রসন্ন, তৃপ্ত। মেয়েটা তাকে এমনভাবে নেশায় ফেলেছে যে এখন এক মুহূর্ত দূর হতেই এক ভয়ংকর বলয় তাকে আবৃত করে নেয়। মনে হয় এই যেন সব শেষ! ভালোবেসেছে সে। নিবিড়ভাবে বিদ্ধ হয়েছে তার বিষবাণের বিষে। এখন সেই বিষের একমাত্র প্রতিষেধকও সে। তার ভালোবাসা, প্রেমাত্মক চাহনি, শ্বাসের উষ্ণতা, অধরের গহন পরশ, মাখো মাখো প্রণয়ে কেটে যাওয়া বিনিদ্র রজনী। দুঃসপ্ন হয়ে গেল কেন সব?
মেহমাদের ধাক্কায় ঘোর কাটে ইনজাদের। খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে নিস্তব্ধ বসে আছে। প্লেট খালি হলো মেহমাদের। ডাসা ডাসা চোখে চেয়ে বলল—
“কী হয়েছে তোর? খাচ্ছিস না যে? ভাবীর হাতের রান্না তো দারুণ!”
ইনজাদ কী যেন ভাবল। বলল—
“তোর জন্য আরও নিয়ে আসব?”
” আরে না। পেট ভরে গেছে আমার। তোরটা খা।”
ইনজাদের ইচ্ছে হলো না। খাবার প্লেটের দিকে আস্ত চোখে চেয়ে রইল। পানি জমে গেল জলপুকুরে। মেয়েটা এত নির্দয় কেন? একটুও বোঝে না তাকে। উদাসমনে এক লোকমা খিচুড়ি মুখে দিতেই গলা দিয়ে উগরে আসলো সব। ইনজাদ বেখেয়ালিতে প্লেট রাখে বিছানার ওপর। মেহমাদের কক্ষেও আলাদা ওয়াশরুম। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই মেহমাদ ভীতসন্ত্রস্ত গলায় বলল—
“তুই ঠিক আছিস তো? এমন কেন করছিস?”
ইনজাদ বিছানায় বসল। লম্বা লম্বা শ্বাস নিতে লাগল। বুকের ওপর ভারী কিছু অনুভূত হলো তার। ধীরে ধীরে লম্বা শ্বাস নিচ্ছে ইনজাদ। মেহমাদ ভয়ার্ত, চিন্তিত, ঘোরগ্রস্ত চোখে চেয়ে আছে। তার চোখের পল্লবে কৌতূহলের হুটোপুটি চলছে। ইনজাদ চোখ বন্ধ করল। ঢোক গিলল। এক প্রেমিক পুরুষের হৃদয় জ্বলছে প্রেমানলে। জ্বলন্ত কুন্ডলির রক্তিম তেজ ঝলসে দিচ্ছে সব। ইনজাদ চোখ খুলল। অধৈর্য হয়ে তার পাশে বসল মেহমাদ। তেজহীন গলায় ভয় নিয়ে বলল—
“এই তোর কী হয়েছে রে? এমন করছিস কেন? ডাক্তারের কাছে যাবি?”
দৈবাৎ ফকফক করে হেসে ফেলল ইনজাদ। ভাবান্তর হলো না তার। নির্বাক, ক্লান্ত, নিষ্প্রাণ চোখে বেশ সময় ধরে চেয়ে রইল সে। চট করে বলল—
“বস, আমি আসছি।”
ইনজাদ উঠে দাঁড়াল। বাড়ন্ত পায়ে প্রাণোচ্ছাস নেই। নিজের কক্ষে আসতেই দেখল জানালার পাশে বসে আছে রেহাংশী। জানালার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছে। তার পিঠ জুড়ে কালো ঘন চুলেরা দোল খেলছে। ইনজাদ বিভ্রান্ত হলো। মায়াময় চোখে চেয়ে রইল। মুগ্ধতা আকুলিবিকুলি শুরু করল চোখের পাতায়। রেহাংশী ফিরে তাকাল। তার আচমকা দেহভঙ্গিমা বদলানোর ফলে দৃশ্যমান হলো অসংবৃত উদর। ইনজাদ চাহনি গাঢ় করল। রেহাংশী অপ্রস্তুত হলো। নিজেকে আবৃত করে গুটিসুটি মেরে বসল। ইনজাদ বিবশ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। বাইরের শীতল মলয় ছুঁয়ে যাচ্ছে রেহাংশীর থমথমে আনন। নতমুখে চেয়ে আছে সে নিজের গুটানো হাতের দিকে। বায়ুর দোলে উড়ছে রেহাংশীর ক্ষুদ্র কেশ। অভিমানিনী কন্যার স্নিগ্ধ রূপে কাতর পুরুষ। চোখের পল্লবে মুগ্ধতা, নাকের ডগায় আসক্তি, ঠোঁটের ছোঁয়ায় নেশা। ইনজাদের পুরুষালী মন তপ্ত হচ্ছে। বাদলের ধারায় সিক্ত ধরণী হিমশীতল। কিন্তু দন্ডায়মান পুরুষের অন্তঃকরণ তীব্র তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্ত, মরুভূমির মতো শুষ্ক, বজ্রের মতো দৃঢ়, উন্মাদের মতো বেপরোয়া, ফুলে ওঠা সায়রের মতো প্রমত্তা। ইনজাদ গহন, স্থির, নিষ্কম্প শ্বাস ফেলল। পা বাড়াল। তার বাড়ন্ত পদযুগলে নিজেকে গুটিয়ে নিল রেহাংশী। ইনজাদ থমকে গেল। প্রেয়সীর ভয়াতুর অঙ্গভঙ্গি ব্যথাতুর করল ইনজাদের চিত্ত। চিত্তদাহে হতপ্রায় পুরুষ! প্রাণময়ীর নীরব অনুরক্তি শূলের মতো বিঁধলো ইনজাদের বলিষ্ঠ কায়ার কোণে কোণে। সে চোখ ফেরাল। অভুক্তের তৃষ্ণা হারিণী মেটাতে চায় না। বুক ফুড়ে বেরিয়ে আসলো প্রস্ফুটিত বিতৃষ্ণা। টেবিলের দিকে অগ্রসর হলো ইনজাদ। ড্রয়ার হাতড়ালো। কাঙ্খিত জিনিস পেল না। তটস্থ হলো। ভ্রূ কুঁচকে আঁখি চঞ্চল করল। ইনজাদ স্থির হলো। বাম হাতের তর্জনী দিয়ে কপাল চুলকাল। মসৃণ চোয়ালের পেশি দৃঢ় হলো। অশান্ত হলো মন। চোখের কোণ ক্ষীণ করে ভাবনায় পড়ল। কিঞ্চিৎ শিয়র বাঁকিয়ে জনান্তিকে তাকাল রেহাংশী। চিবুকের গাথুনি একটু উঁচু করে ইনজাদকে দেখল। স্বামীর চিন্তিত চোখে সংঘর্ষ হতেই নিচু করল চাহনি। ইনজাদ হতভম্ব। সিগারেটের প্যাকেট ড্রয়ারেই ছিল। মেয়েটা ফেলে দিলো না কি?
ইনজাদকে বিস্ময়ের সাত আসমান ছোঁয়াল রেহাংশী। বাচ্চাদের মতো হাপুড় দিয়ে ঝর্ণার অবিশ্রান্ত ধারার ন্যায় বিছানায় এপাশটায় এসে ইনজাদের মাথার বালিশ আলগা করে। তার নিচেই সিগারেটের প্যাকেট। চট করে নিয়েই টেবিলে ধম করে রাখে। নিজের জায়গায় গিয়ে এক কাত হয়ে শুয়ে পড়ে। পুরো ঘটনায় চমকিত ইনজাদ। ভাসা ভাসা বদ্ধ দৃষ্টি নিমীলিত করে ছোট্ট শ্বাস ফেলল। চোখ খুলে সিগারেটের প্যাকেট হাতে নিয়ে আগ্রহের সাথে চেয়ে রইল রেহাংশীর পৃষ্ঠদেশের বাঁকে। অনাবৃত কোমর, আলুথালু চিকুরের মায়াজাল, উজ্জ্বল ফর্সা ত্বকে নারীর কমণীয় রূপ আছড়ে পড়ছে। ইনজাদ প্রতিক্রিয়া করল না। সে বের হয়ে আসতেই সোজা হলো রেহাংশী। সিক্ত চোখচ্ছেদের মায়াময়, কম্পিত চাহনি।
,
,
,
গাঢ়, অনিমেষ চাহনি মেহমাদের। একের পর এক সিগারেটের ফিল্টার জ্বালিয়ে যাচ্ছে ইনজাদ। দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে পা দুটো সামনের দিকে টানটান করে রেখেছে মেহমাদ। পায়ের ওপর থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে রেখে সামনে এগিয়ে এলো। বিছানার সাথে পা রাখল। মেঝে ছোঁয়া পায়ে চপলতা। ইনজাদের কাঁধে হাত রাখল মেহমাদ। ভরাট চোখে চেয়ে অধীর গলায় বলল—
“কী হয়েছে তোর? ভ্যাদা মাছের মতো আচরণ করছিস কেন?”
শুভ্র ধোঁয়ার পাক চোখ জ্বালাচ্ছে না ইনজাদের। চোখের জলে সিক্ত চোখ জ্বলছে অন্তরাত্মার দহনে। ইনজাদ প্রত্যুত্তর করল না। সিগারেটে টান লাগাল। ঝট করেই সেইটা টেনে নিল মেহমাদ। ঠোঁটের ভাঁজে পুরে দিলো এক লম্বা টান। তৃপ্তির সাথে ধোঁয়া নিঃসৃত করে। রসালো গলায় বলল—
“আমার ঘর কে কী সরকারি উদ্যান পেয়েছিস? নিজের ঘরে যা। বউ রেখে এখানে বসে আছিস কেন? ”
ইনজাদ কম্পনহীন চোখে তাকাল। বিদুর চোখের ছায়া নজর কারলো মেহমাদের। মেহমাদ অস্থির হলো। উৎসুক্য গলায় বলল—
“এখন বলবি না যে বউয়ের সাথে ঝগড়া করেছিস!”
বিষিয়ে উঠল ইনজাদের মনের কোণ। উচাটন শ্বাস ফেলে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল—
“কী করব আমি বল! কথাই বলছে না আমার সাথে। তাকাচ্ছে না পর্যন্ত।”
উদ্বিগ্ন হলো মেহমাদ। সচল চোখে চেয়ে উদগ্রীব হয়ে বলল—
“ঘটনা কী ঘটিয়েছিস তুই? নিশ্চয়ই ঝামেলা বাঁধিয়েছিস?”
ইনজাদ ভার কণ্ঠে সবটা খুলে বলল। প্রগাঢ় মনোযোগে বৃত্তান্ত শুনল মেহমাদ। কাষ্ঠ গলায় বলল—
“এইটা কোনো কথা হলো?”
“আম কী করব বল তো? সহ্য হচ্ছে না আমার আর। সারাদিন কাজ শেষে ওর ওই মুখের হাসি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে আমার। চাঁদ এখন অমাবস্যায় হারিয়ে গেছে আমার।”
ইনজাদের কাঁধের দিকটা শক্ত করে ধরে মেহমাদ। সান্ত্বনা দিয়ে বলল—
“এইটা কোনো সমাধান নয়। স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হবেই। তাই বলে কথা বলা বন্ধ করে দেবে না কি? আর তুই এমন হাঁদারাম হলি কবে থেকে? রাগের মাথায় তো পরীক্ষার হলে খাতা পর্যন্ত ছুড়
এ ফেলে দিয়েছিলি। গেল কই সেই তেজ?”
ইনজাদ মাথা তুলল। নরম দৃষ্টিতে অথৈ জল। অনুরক্তির সাথে বলল—
“ওর সাথে জোর করতে পারব না আমি। ওর দিকে তাকালেই….।”
“ঘরে যা, কথা বল। কথা বললেই সব সমাধান হবে। এভাবে থাকলে কোনো কিছুই শোধরাবে না।”
ইনজাদ ভাবিত নয়নে চেয়ে রইল । কী করবে সে?
চলবে,,,