#মোহঘোর
#পর্বঃ২৯,৩০
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
২৯
বিস্তৃত নভোলোকে ঘনালো তমসায় জেগে আছে চন্দ্রিমা। তার উদ্ভাসিত প্রভায় ধরনীতলে নেমেছে চন্দ্রালোক। মেঠোপথের দু’ধারে জেগে থাকা বিরূৎ, গুল্ম আর কাঁটা জাতীয় বৃক্ষ পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে তূরন্ত জগতায়ু। হেমন্তের হিম পরশ পত্রপল্লবের ডানায় ডানায় ধরিয়েছে আবছা কম্পন। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট নয় সেই দৃশ্য।
আজ সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়িতে এসেছে ইনজাদ আর রেহাংশী। তমালিকা অধীর আগ্রহে বসে ছিলেন ছেলের জন্য। তার হৃৎগহ্বরের ছটফটানি কমে গেল ছেলের মুখশ্রী দেখেই। তবে রেহাংশীর উপস্থিতি সেই ছটফটানিত যেন জোয়ার তুলে দিলো। তমালিকা জোরপূর্বক তার তীর্যক আচরণে বেড় রাখলেন। ইনজাদ বুঝতে পেরেও তেমন একটা প্রতিক্রিয়া করল না। নিজের মায়ের স্বভাব সে জানে। সময় নেবে না এই রাগ বিগলিত হতে।
রেহাংশীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে ইনজাদ। তার মাথার দুই পাশের শিরা যেন আগুনের তপ্ত লাভার মতো ফুটছে। ছিড়ে যাচ্ছে স্নায়ু। মাথার যন্ত্রণায় পর্যদস্তু সে। রেহাংশী হালকা হাতে মালিশ করে দিচ্ছে। চোখ বুঝে আছে ইনজাদ। রেহাংশী মৌনতায় আলোড়ন তুলে বলল—
“ও বাড়ি থেকে একবার ঘুরে আসলে হতো না?”
ইনজাদ বুকের কাছে হাত ভাঁজ করে রেখেছে। মুদিত চোখে নির্বিকার গলায় বলল—
“কাল সকালে যেয়ো। এখন আর গিয়ে কাজ নেই। রাত হয়েছে অনেক।”
রেহাংশীর চিত্ত আকুলিবিকুলি করছে বাড়ির মানুষগুলোও স্বচক্ষে দেখার জন্য। বাড়ির প্রতিটি ইট, তার গন্ধ যেন টানছে তাকে এক অদৃশ্য শেকলে। রেহাংশী তপ্ত শ্বাস ফেলল। ইনজাদের কপালের দুই পাশে বুড়ো আঙুলের সাহায্যে হালকা ম্যাসাজ করতে করতে বলল—
“আপনার এই দাঁতটা এমন হলো কী করে?”
ইনজাদ চোখ খুলল। রেহাংশীর দিকে সপ্রতিভ চোখে তাকাল। উলটো চাহনিতে ভ্রূ জোড়া কুঁচকে গেল অনুপলেই। কপালে পড়ল সমান্তরাল ভাঁজ। নিশ্চল গলায় বলল—
“তখন আমার দাঁত পড়ার মৌসুম চলছিল। একদিন ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিলাম। রান নিতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাই। আর তাতেই মাড়ির দাঁতের পাশের দাঁত আমার কোমায় চলে যায়। রক্ত গিলে নেই আম্মার ভয়ে। দাঁত নড়তে শুরু করলেও আম্মার ভয়ে কাউকে বলিনি। যদি জানত জোর করে দাঁত ফেলে দিতো। আর দাঁতের শোকে আমার তিনদিনের খাওয়া বন্ধ। ওপর ওয়ালার মেহেরবানি! আরেকটা দাঁত ভালোবেসে দিয়ে দিলেন তার ওপরে।”
ইনজাদের অধরযুগল এড়িয়ে তেমন একটা চোখে পড়ে না তার সেই অপ্রত্যাশিত স্বনামধন্য দাঁত। যদি না সে হাসির ঝর্ণা বইয়ে অধর বিস্তৃত করে স্বাভাবিকের থেকে বেশি। কিন্তু স্বামীর অতি সন্নিকটে থাকার দরুন সেই অপ্রত্যাশিত দাঁতের কয়েকবার সাক্ষাত পেয়েছে রেহাংশী। খারাপ লাগার বদলে ইনজাদের হাসির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তার সেই দাঁত মহারাজ।
রেহাংশী ঝুমঝুমিয়ে হেসে ওঠে। ইনজাদ চট করে উঠে বসে। রেহাংশীর মুখের সন্নিকটে এসে বলল—
“হাসো কেন? আমার দাঁতে তোমার কী সমস্যা?”
রেহাংশী ঠোঁটের মাঝ বরাবর আঙুল চেপে ধরে হাসি রোধ করে। চটকদার গলায় বলল—
“আমি কী কিছু বলেছি! এই দাঁতের জন্য আপনাকে হাসলে আরো বেশি সুন্দর লাগে। আমি যখন এইটে পড়তাম তখন আমাদের ক্লাসের রিতা পুব পাড়ার সুজন ভাইয়াকে পছন্দ করত। সুজন ভাইয়ারও…..।”
রেহাংশীর কথা শেষ হওয়ার আগেই তার ওষ্ঠাধর নেমে গেল ভরা যমুনায়। ইনজাদের এহেন কাজ হেতু হতভম্ব হয়ে গেল রেহাংশী। ইনজাদ জিব ভার করে বলল—
“আমার সামনে অন্য ছেলের কথা বলো কেন? আর এসব ভাইয়ারাই পরে ছাইয়্যা হয়। তোমার পায়েল আপুকে দেখো না?”
রেহাংশী বক্রোক্তি করল—
“আপনারও তো বোন আছে। আপনিও….।”
পূনরায় একই কাজ করল ইনজাদ। প্রণয়ের ঘনত্ব বাড়তেই তার কঠিন ছাপ ফেলে দিলো রেহাংশীর নরম ওষ্ঠাধরে। কণ্ঠ কঠিন করে বলল ইনজাদ—
“বোন হয় আমার। মনে রেখো।”
রেহাংশীর ফোলা ফোলা চোখে তাকায়। স্বামীর প্রণয় সংঘর্ষে হতপ্রায় তার ঠোঁট। কথা কাটাতে বলল—
“বললেন না আপনার মাথা ব্যথা করছে?”
“আর তুমি যে আমার হৃদয় ব্যথা করে দিলে তার কী হবে!”
“ধুর!”
রেহাংশী উঠে চলে যায়। তার কর্ণরন্ধ্র ছেদ করল না ইনজাদের কণ্ঠস্বর।
রান্নাঘরের দোরগোড়ায় যেতেই পেছন থেকে ডেকে উঠেন পারভেজ মির্জা। তড়িঘড়ি করে মাথায় কাপড় টানে রেহাংশী। নিম্ন স্বরে বলল—
“কিছু বলবেন বাবা?”
পারভেজ মির্জা আমতা আমতা করে বললেন—
“ইনজাদের মায়ের পায়ের ব্যথাটা বেড়েছে। তুমি কী একটু….।”
রেহাংশী হৃদয় বিগলিত হেসে বলল—
“আপনি যান আমি আসছি।”
,
,
,
মধ্য রাত পেরিয়েছে খানিক আগেই। রেহাংশীর উপস্থিতি এখনো চোখে পড়ল না ইনজাদের। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। বিছানার একপাশে উপুর হয়ে শুয়ে পড়ল। তার চোখের পাতায় নিদ্রাবতী ছুঁই ছুঁই করছে।
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল রেহাংশী। ইনজাদের সমাহিত দেহ দেখে ক্লান্ত শ্বাস ফেলল। আননে এলো বিধ্বস্ততা। বিছানার একপাশ খালি। রেহাংশী সন্তর্পণে শুয়ে পড়ল। ডিম লাইট নেই। তাই বাতি অফ করেনি ইনজাদ। বিছানায় আলোড়ন তুলল রেহাংশীর ভর। ইনজাদ বিমর্ষ গলায় বলল—
“কিছু মনে করো না। আমার আম্মা এমন নয়।”
রেহাংশী কোনো শব্দ করল না। নীরব রইল তার কণ্ঠ। ইনজাদ ফের বলল—
“আমার আম্মা কখনো এসবে বিশ্বাস করত না। ছোটো বেলা থেকে গ্রামেই ছিল আমাদের বসবাস। তবুও আম্মা কোনোদিন কোনো কুসংস্কারে বিশ্বাস করেনি। এই গ্রামে আসার পর আমার আম্মা অনেকটা বদলে গেছে। যাওয়ার কথা। তোমার বাড়ির পাগলের দল আমার আম্মার মস্তিষ্কের বারোটা বাজিয়েছে। তাই এখানে আম্মার কোনো দোষ নেই। সময় দাও, আম্মা ঠিক তোমাকে বুঝতে পারবে। যেভাবে তার ছেলে বুঝেছে।”
রেহাংশী হেসে ফেলে। ইনজাদ গলা চড়িয়ে বলল—
“তুমি নিশ্চয়ই হাসছ?”
রেহাংশী পাশ ফিরল। ইনজাদের পিঠের দিকে মুখ করে বলল—
“আপনি কী করে বুঝলেন?”
ইনজাদ মুখ ফেরাল না। রেহাংশীর বিপরীত দিকেই তার মুখ। মুক্ত গলায় বলল—
“তোমার নীরব হাসিও আমার হৃদয়ে বাজে। ঘুমাও এখন। কাল তো আবার পাগলাগারদে ঢুকবে। সেখান থেকে এসে আবার আমাকে পাগল বানিয়ে ফেলো না।”
রেহাংশী রুদ্ধশ্বাসে চেয়ে রইল। ইনজাদের পিষ্ঠদেশে উজ্জ্বল বাতির শিখার নরম আলো। সে ঘুরে দেহভঙ্গি বদলাল। বাতির দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থেকে কাল সকালের কথা ভাবতে লাগল।
,
,
,
“তোমার মাথা কী একেবারে গেছে?”
পারভেজ মির্জার উত্তপ্ত স্বরেও নিশ্চুপ রইলেন তমালিকা। রেহাংশীকে পা ব্যথার নাম করে শুধু আটকে রেখেছিলেন। পারভেজ মির্জা মোটা স্বরে ধমকে উঠে বললেন—
“দু’দিনের জন্য এসেছে ইনজাদ। তোমার কী মনে হয় একদিন ওর কাছ থেকে রেহাংশীকে দূরে রাখলে তোমার ছেলে ওর বউকে ছেড়ে দেবে?
আমি বুঝতে পারছি না তুমি কী করতে চাইছ বলোতো?”
তমালিকা রা করলেন না। নিজের ছেলের পাশে ওই মেয়েকে তার সহ্য হচ্ছে না। পারভেজ মির্জা বিছানায় বসলেন। ভারী শ্বাসের সাথে বললেন—
“একবার খেয়াল করে দেখেছ, গতদিনগুলোতে ইনজাদ কতবার জ্বরে পুড়েছে? কতবার ওর সর্দি লেগেছে? না খেয়ে থেকেছে?
খেয়াল করেছ তুমি?”
তমালিকা চোখ তুললেন। ইনজাদ খাবারের প্রতি যত্নশীল নয়। কখনো ইচ্ছে হলে খুব খাওয়া-দাওয়া করে, আবার কখনো দিনভর না খেয়ে থাকে। জ্বর, ঠান্ডা অনেক ভুগিয়েছে ইনজাদকে।
পারভেজ মির্জা গাঢ় স্বরে বললেন—
“একজন স্ত্রী শুধু তার স্বামীর ফিজিক্যাল সাপোর্টার নয়, তার মেন্টাল সাপোর্টারও। রেহাংশী ঢাকা যাওয়ার পর থেকে ইনজাদের অসুস্থতার পরিমাণ কমে এসেছে। নিজের প্রতি যত্নশীল হয়েছে সে। তুমি তো রোজ ওরসাথে কথা বলো। কেন ভাবনি মেয়েটা তোমার ছেলের জন্য অভিশাপ নয় আশির্বাদ! তমালিকা, শোনো আমার কথা। একবার অন্তত মস্তিষ্ক বাদ দিয়ে মন দিয়ে ভাবো। ওকে একবার নিজের মেয়ের জায়গায় রেখে ভাবো। মেয়েটা সারাজীবন শুধু অবহেলা পেয়েছে। এখন ওর ভালোবাসা পাওয়ার সময়। তা শুধু স্বামীর থেকে নয়, নতুন রূপে যে মা-বাবা পেয়েছে তাদের কাছ থেকে। ওকে ভালো রাখলেই আমাদের ছেলে ভালো থাকবে।”
তমালিকা শ্বাস ফেললেন। তীব্র বিতৃষ্ণা আবৃত শ্বাস। তার মানসপটে ঝাপসা হয়ে উঠল অনেক ভাবনার প্রজাপতি।
চলবে,,,
#মোহঘোর
#পর্বঃ৩০
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
সতেজ, প্রাণবন্ত প্রভাতের কুয়াশাচ্ছন্ন আবেশে লুপ্ত বসুন্ধরা ঝিমিয়ে আছে এখনো। মিহি কুয়াশার চাদর আদরে লেপ্টে রেখেছে তাকে। হিম,হিম শীতল পরশ এঁকে যাচ্ছে থম ধরা পৃথিবীর ঘুমন্ত পরিবেশে। স্বচ্ছ বৃষ্টির ফোঁটার মতো শিশির জমেছে পাতার বুকে।
নিজেকে শাড়ির ভাঁজে আবৃত করেছে রেহাংশী। শুভ্র টাইলসের ঘরে যেন শীতলতার রাজা রেগে আছেন! তার হুংকার ছড়ানো শীতলতা। হিমশীলার এক অদৃশ্য অনুভূতি।
রান্না ঘরে অতি সাবধানে পা রাখে রেহাংশী। তমালিকা বেলন-পিঁড়িতে ব্যস্ত। ইতি-বিতি করছে রেহাংশীর মনকুঠির। গলার কথা দাঁতের কাছে এসে যেন মিলিয়ে যাচ্ছে বারংবার। রেহাংশী শ্বাস ফেলল। তার উপস্থিতিতে তমালিকার ভাবান্তর হলো না। রেহাংশী কণ্ঠ শিথিল রেখে জড়তা নিয়ে বলল—
“আম্মা, আমি রুটি বানিয়ে দিই?”
রেহাংশীর বুকটা দুরুদুরু করছে। সকাল সকাল তমালিকার উত্তাপে সে পড়তে চায় না। তবুও…।
রেহাংশীকে অবাক করে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন তমালিকা। রেহাংশীর বুকের ভেতর যেন রঙধনু উঠে গেল বিনা বর্ষণে! সে চট করে বসে পড়ল। তমালিকা নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইলেন রান্নাঘরের তাক ঘেঁষে। রেহাংশী ইতস্তত বোধ করছে। তমালিকার স্থির, সরল, গভীর চাহনি তাকে কেমন অস্বস্তিতে আচ্ছন্ন করে ফেলল। তবুও নিজের কাছ সারলো সে। গরম তাওয়ায় যখন রুটি দিলো রেহাংশী আচানক তমালিকা আড়ষ্ট গলায় বললেন—
” ইনজাদ তোমাকে খুব ভালোবাসে তাই না?”
একটা সরল বাক্য কেমন অদ্ভুত শোনাল রেহাংশীর কাছে। সে স্তব্ধ হয়ে চাইল। তমালিকার চোখে অপরাধবোধের ঢেউ উঠেছে। তিনি কাছে এগিয়ে এসে রেহাংশীর মাথায় হাত রাখলেন। গভীর মমতায় জাগ্রত মাতৃত্বের অবাধ স্বরে বললেন—
“আমার একটাই ছেলে। পড়ালেখার জন্য ওকে বেশি একটা কাছে পাইনি। ওর খেয়াল রেখো। আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই তোমার কাছে।”
অরবে বুক কেঁপে যাওয়া রেহাংশী ঝমঝম করে কেঁদে ফেলল। তমালিকাকে জড়িয়ে ধরল গভীর আবেশে।
,
,
,
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের হাতা গুটালো ইনজাদ। ভেতরে ঢুকল রেহাংশী। তার জলপুকুরের জলোচ্ছ্বাস চলছে। ইনজাদকে সময় না দিয়েই তার বুকে হামলে পড়ে। বুক ভাসানো কান্নায় ভিজিয়ে তুলে তার বক্ষদেশ। ইনজাদ আলতো হাত রাখে রেহাংশীর পিঠের ওপর। স্বাভাবিক গলায় বলল—
“কী হয়েছে? আম্মা কিছু বলেছেন?”
রেহাংশী ফুঁফাতে লাগল। কণ্ঠরোদ হয়ে এলো তার। জমাট গলায় বুকের পাঁজর ঝাকিয়ে বলল—
“আম্মা আপনার খেয়াল রাখতে বলেছেন।”
ইনজাদ নরম হাসল। দুই হাতে দৃঢ় চাপে বুকে গেঁথে নিল রেহাংশীকে।
“বলেছি তো, আমার আম্মা এমন নন। একবার তার মনে জায়গা করে নাও, আমার চেয়ে বেশি তোমায় ভালোবাসবেন।”
“হুম।”
“চেঞ্জ করবে?”
“না।”
“তাহলে যাও। দেখা করে এসো। আমি আসছি।”
রেহাংশী মাথা সরিয়ে উঁচু করে বলল—
“আপনি যাবেন না?”
ইনজাদ ফিচেল হেসে বলল—
“প্রথমবার শশুর বাড়ি যাচ্ছি। খালি হাতে যাওয়া যায়?”
“কী আনবেন?”
“তোমাকে বলব কেন?”
রেহাংশী মৃদু হাসল। মিষ্টি করে বলল—
“আম্মাকে নিয়ে যাব?”
“না, তুমি একাই যাও। আম্মা সন্ধ্যায় যাবেন।”
“আচ্ছা।”
ইনজাদ ঠোঁট চিপে মাথা হেলায়। ইনজাদ থেকে সরে এসে দরজার কাছে যেতেই স্বামীর কণ্ঠে পেছন ফেরে রেহাংশী।
“ও বাড়িতে গিয়ে আমাকে ভুলে যাবে না তো?”
রেহাংশী ত্রস্ত পায়ে দৌড়ে এসে ইনজাদকে শেষ বিকেলের রোদের মতো আঁকড়ে ধরে। যেন ছেড়ে দিলেই সাঁঝ বেলার আঁধারে মিলিয়ে যাবে!
“আমি আপনাকে এ জীবনে ভুলতে পারব না।”
“আমিও তোমাকে ভুলতে দেবো না বিষবাণ।”
রেহাংশীর সন্নিকটে এসে নিজের সংসর্গে দলিত করে তাকে। ঘনশ্যামের মাঝে দোল খেলানো হিম বায়ুর মতো ফুরফুরে কণ্ঠে বলল—-
“ও স্বয়ংপ্রভা!
আমার রিক্ত দিবসের ঘন আভা, আমার বদ্ধ হৃদয়ের অকুন্ঠিত প্রজ্জ্বলিত শিখা, আমার আঁধার আকাশের সুধাবর্ষী;
যার বিগলিত কিরণ চুইয়ে পড়ে আমার প্রকোষ্ঠে, যার চন্দ্রানন ভেসে উঠে আমার শতবর্ষের পূন্যে, আমার আজীবনের আবাস, তোমার কাঁপন ধরা প্রণয়েই আমার নাশ!”
চলবে,,,