#মোহঘোর
#পর্বঃ৬,০৭
লেখনীতেঃ তাজরিয়ান খান তানভি
০৬
অতন্দ্রিত রাত শেষে এক ক্লান্ত ভোর। চোখের পাতায় অবসন্নতা। নির্ঘুম রাতের অবসাদ ঘিরে ধরেছে ইনজাদকে। তার চোখের কোণে কনকনে ব্যাথা। ঝিম ধরা মস্তিষ্ক নিশ্চল, স্থির, শ্রান্ত।
লালাভ দুই নেত্র মেলে তাকাতে পারছে না ইনজাদ। ভারী মস্তিষ্কের চাপে নুইয়ে যাচ্ছে ঘাড়। ছেলের এই অবস্থায় আতঙ্কিত গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন তমালিকা—
“কী হয়েছে তোর? এমন দেখাচ্ছে কেন? ঘুম হয়নি?”
পারভেজ মির্জা চায়ের কাপে নিঃশব্দে চুমুক বসালেন। চোখের চশমা খানিক নিচে নেমে এলো। হাত থেকে টেবিলের ওপর কাপ রেখে চশমাটা ঠিক জায়গায় স্থাপন করে তাকালেন ছেলের দিকে। বিষণ্ণ, বিধ্বস্ত আনন। ইনজাদ আড় চোখে তাকাল বাবার দিকে। বিরক্তি নিয়ে এক ভ্রু উঁচু করে অতিষ্ঠ গলায় বলল—
“কিছু হয়নি। আমি আজ সন্ধ্যায় ঢাকা যাচ্ছি। কাজ আছে আমার। আপনাকে বলে রাখলাম। যাওয়ার সময় আবার কান্নাকাটি শুরু করবেন না। আগে থেকে জানিয়ে রাখলাম।”
তমালিকা ব্যস্ত হয়ে বলল—
“কেন যাবি? তুই না বললি, এক মাস থাকবি! এখনো তো পনেরো দিনও হয়নাই।”
ইনজাদের মাথা ফেটে যাচ্ছে অজ্ঞাত রাগে। তার বুকের পাঁজর নিষ্পেষিত হচ্ছে একে অন্যের সাথে। থমথমে গলায় কিঞ্চিৎ রাগ মিশ্রণ করে বলল—
“আম্মা! বললাম তো কাজ আছে। কাজ শেষ হলেই চলে আসব। কেন এত প্রশ্ন করছেন?”
তমালিকা অনুধাবন করলেন তার শান্ত ছেলে হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক আচরণ করছে। অহেতুক রাগ ঝাড়ছে। তার কোমল মুখ কেমন অদ্ভুত অস্বস্তিতে ক্লান্ত। মায়ের মন! সব বুঝে। তবে কখনো কখনো বোঝেও না বোঝার মতো। তমালিকা ছেলের কাছে এলেন। চেয়ার টেনে একদম পাশ ঘেঁষে বসলেন। আদুরে গলায় বললেন—
“কী হয়েছে তোর? খারাপ লাগছে? কিছু খেতে ইচ্ছে করছে?”
ইনজাদ বিতৃষ্ণ হয়ে ওঠল। নত মুখ উঁচু করে ঝাঁঝিয়ে উঠে বলল—
“কেন কথা বাড়াচ্ছেন? ভালো লাগছে না আম্মা।”
ইনজাদ কাঁপছে। রাগে নয়, অন্তরিন্দ্রিয়তে ওঠা নীরব ঝড়ে। তোলপাড় শুরু হয়েছে তার বুকের অভ্যন্তরে। মেয়েটাকে দুইদিন দেখেনি সে। ছাদ বলো, রাস্তা বলো সব জায়গায় রেহাংশীকে খুঁজেছে ইনজাদ। দেখাই পেল না। মেয়েটা ছাদে আসা বন্ধ করে দিয়েছে, বাড়ি থেকেও বের হয় না। ঘুম হয় না ইনজাদের। অনেক প্রশ্ন করা বাকি, অনেক কিছু জানা বাকি।
তমালিকা ছেলের অস্বাভাবিক, অপ্রকৃতিস্থ আচরণে ঘাবড়ে গেলেন। ইনজাদের কড়া লাল রাগান্বিত চোখ, কথার বেফাঁস ধরণ তাকে ভয়ে আড়ষ্ট করে নিল। তিনি রয়ে সয়ে বললেন—
“এভাবে কেন কথা বলছিস তুই?”
রাগের মাত্রা চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করল ইনজাদের। দাপিয়ে উঠে বলল—
“এখন কী আমাকে কথা বলাও শিখতে হবে? কোনো স্বাধীনতা নেই আমার। আমি কোনো ছোট্ট শিশু নই আম্মা। ”
রাগে গজগজ করে ঘর থেকে বের হয়ে গেল ইনজাদ। পারভেজ মির্জা টু শব্দ করল না। গভীর, স্থির, শান্ত দৃষ্টিতে ছেলের প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি তিনি পর্যবেক্ষণ করলেন। তার ঠোঁটে অপ্রত্যাশিত গূঢ় হাসি।
,
,
,
ইনজাদের আঙুলের ভাঁজে সিগারেট। না খাওয়া পেটে নিকোটিনের চালান হচ্ছে। মুখের সম্মুখে ধোঁয়ার জাল। তার নির্লিপ্ত মনের দৃঢ় দৃষ্টি রেহাংশীদের বাড়ির লোহার ফটকে। চেয়ে রইল অনিমেষ। দুই বার হেঁটেও এসেছে সেই ফটকের সামনে দিয়ে। বাড়ির ভেতরের কোনো শব্দ বাইরে এলো না। আচমকা রিকশার টুংটাং শব্দে সরব হয় ইনজাদ। পেছন ফিরতেই দেখল নুপূরকে। রিকশা তাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছে। নুপূর রিকশা থেকে নেমে তার পাশেই দাঁড়ায়। রিকশাওয়ালা এক এক করে তার জিনিসপত্র নামিয়ে দিচ্ছে। ইনজাদ ব্যস্ত পায়ে এসে দাঁড়ায় নুপূরের বিপরীত দিকে। কাছ থেকে দেখল সে তাকে। ইনজাদ হতভম্ব হলো। তার চোখ নুপূরকে ছুঁইয়ে বারবার বাড়ির সদর দরজায় বিদ্ধ হচ্ছে। নুপূর কপাল কুঁচকাল। বিভ্রান্ত গলায় বলল—
“আপনি? কাকে চাই?”
সকালের মিহি রোদ। ইনজাদের উলটো দিকে থাকা সূর্যের নরম, হলদে রোদ পড়ছে নুপূরের চোখে। সেই চোখে এক অবিশ্বাস্য দীপ্ততা। কিন্তু তা আজ আর নজর কাড়ল না ইনজাদের। সমীরণে উড়ে চলা নুপূরের অবাধ্য, বাচ্চা চুলের ওই মুগ্ধ আনন দ্বিতীয়বার দেখার তৃষ্ণা জাগল না তার। ইনজাদ নীরস হাসল। নিভন্ত সুরে বলল—
“আমি ইনজাদ। মির্জা কুটিরে থাকি।”
নুপূর বিস্ময়ের সাথে উচ্ছ্বাস মিশিয়ে বলল—
“আপনি তমালিকা চাচীর ছেলে? সেদিন আপনাকেই দেখেছিলাম!”
ইনজাদ জোরপূর্বক অধর বিস্তৃত করল। তার হৃৎপ্রকোষ্ঠ দ্বিধাগ্রস্ত। নুপূর! যাকে প্রথমবার দেখে ভালোবাসার তৃষ্ণা জেগেছে। মনে হয়েছে এমন কাউকেই সে খুঁজছে তার জীবনসঙ্গিনী হিসেবে। কিন্তু এখন তার মন, মস্তিষ্ক জুড়ে অন্য কেউ। সেই একরত্তি মেয়ে তার ঘুম কেড়ে নিয়েছে। নিয়েছে তার চিত্তের সুখ, করেছে তাকে অশান্ত, অতৃপ্ত, অসাঢ়। ঘুম চোখে ওই একটা মুখ কেন ভেসে ওঠে! না চাইতেই ওই বিষবাণ কেন তার অন্তঃকরণকে ক্ষত-বিক্ষত করে। তার এত বছরের কেতাদুরস্ত জীবনে সবকিছু আজ এলোমেলো, বিশৃঙ্খল।
ইনজাদ মোলায়েম গলায় বলল—
“কোথাও গিয়েছিলেন?”
“জি, আমার মামার বাসায়। আমি ওখানেই পড়ালেখা করেছি। কিছু জরুরি কাগজপত্র রেখে এসেছিলাম। সেগুলোই আনতে গেছি। মামা-মামী ছাড়ছিল না। তাই কিছুদিন থেকে আসলাম।”
ইনজাদ গহন হাসল। তার দৃষ্টি ঘুরে বেড়াচ্ছে বাড়ির ছাদে আর দরজায়। মুখ ফুটে সাবলীল গলায় বলল—
“একাই এসেছেন?”
“হ্যাঁ। একাই আসা – যাওয়া হয়। আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”
ইনজাদ ম্লান হাসল। ফ্যাকাশে গলায় বলল—
“কোথাও না। এমনি হাঁটছিলাম।”
” ও।”
রিকশাওয়ালা ততক্ষণে সব মালামাল নিচে নামিয়ে রেখেছে। ইনজাদ ফেরার পথ ধরতেই অকস্মাৎ তার তৃষ্ণা নিবারণের জল বর্ষিত হলো। রেহাংশী বেরিয়েছে বাড়ি থেকে। নুপূরকে দেখে কোনো উদ্দীপনা দেখা গেল না তার মাঝে, এমনকি ইনজাদকেও দৃষ্টিগোচর করল না সে। ইনজাদের রক্ত ফুটতে শুরু করল। ইচ্ছে করছে এক্ষুণি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করতে,” এত কীসের দেমাগ তার? এত ছল! সহ্য হচ্ছে না তার।”
ইনজাদ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল। নুপূর একগাল প্রাণবন্ত হেসে বলল—
“কোথায় যাচ্ছিস তুই?”
রেহাংশী জড়ানো গলায় বলল—
“পারুলের বাসায়। ”
নুপূর মাথা ঝাঁকাল। নম্র গলায় সম্মতি দিয়ে বলল—
“সাবধানে যাস।”
“হুম।”
মেয়েটা তার দিকে তাকাল-ই না। ইনজাদের হাত নিশপিশ শুরু হলো। নুপূর তার জিনিসপত্র নিয়ে এগোতে গেল সোমা বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে। তার সাথে চলতে শুরু করল নুপূর। ইনজাদ দ্রুত পা চালাল। তাদের বাড়ি পেছনে ফেলে এসেছে রেহাংশী। ইনজাদ ডেকে উঠল—
“শুনুন!”
রেহাংশী দাঁড়াল না। কান্না পাচ্ছে তার। ইনজাদকে দেখেও না দেখার ভান করেছে সে। অন্যের জিনিস সে কেন দেখবে? এতটা নিচু নয় সে। রেহাংশী দ্রুত পা চালাল। তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। ইনজাদের সামনে পড়তে হবে বলেই সে ছাদে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বাড়ির বাইরেও আসেনি। ইনজাদ উদ্বেলিত গলায় পূনরায় আশা নিয়ে ডেকে উঠে—
“একটু দাঁড়ান প্লিজ!”
রেহাংশী দাঁড়াল না। ওড়নার কোনা দিয়ে সংগোপনে চোখের নোনতা জল মুছে এগোতে থাকল। ইনজাদ থমকে গেল। রুষ্ট গলায় ডেকে উঠল—
“বিষবাণ!”
থমকে গেল রেহাংশী। মানুষটা তাকে আবার এই নামে ডাকল! তাকে থামতে দেখে পল ব্যয় করল না ইনজাদ। বিদ্যুৎ বেগে ছুটে এসে বলল—
“কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছেন না?”
রেহাংশী কান্না গিলে নিল। চোখের তারায় নিয়ে এলো স্বাভাবিকতা। সাবলীল গলায় বলল—
“কেন ডাকছেন?”
ইনজাদ বলতে গিয়ে থেমে গেল। তার সাজানো কথামালা ক্ষণপলেই কেমন অস্থিতিশীল হয়ে গেল। বুঝতে পারল না সে। রেহাংশীর সিক্ত চোখে তাকিয়ে বেমালুম ভুলে গেল সব।
সূর্য তার স্থান পরিবর্তন করছে। ক্রশম চলতে চলতে মাথায় ওপরে গিয়ে ঠেকেছে। সকালের সোনা রোদ দুপুরের তপ্ত রোদে লীন হচ্ছে। তাপমাত্রা বাড়ছে তার। ইনজাদ টিমটিমে গলায় বলল—
“বিয়ে ঠিক হয়েছে আপনার?”
রেহাংশী কটাক্ষ করে বলল—
“মিষ্টি খেয়েছেন নিশ্চয়ই?”
ইনজাদের কী হলো সে নিজেও জানে না। গলা চড়িয়ে কপালে ভাঁজ তুলল সে। মেজাজ দেখিয়ে বলল—
“তাহলে সেদিন রাতে এত নাটক করলেন কেন? ”
রেহাংশী চোখের কোটর সংকুচন করল। বিচলিত কণ্ঠে বলল—
“কী বলছেন আপনি?”
ইনজাদ তাচ্ছল্য চোখে চেয়ে বক্রোক্তি করে বলল—
“এখন কিছুই বুঝতে পারছ না। ওই ছেলের সম্পর্কে সব জেনেও কী করে রাজি হলে তুমি?”
রেহাংশী স্থির নয়নে ইনজাদের কথার ধারা বুঝতে চাইল। সে বিচলিত, উৎকণ্ঠিত, তটস্থ।
ইনজাদ আরেক দফা হাসল। রেহাংশীর দিকে তাচ্ছিল্য ছুড়ে বলল—
“ও সরি! আপনাকে তুমি বলে ফেললাম। ক্ষমা করবেন।”
রেহাংশীর বুক ভেঙে কান্না আসছে। তার অসাঢ়,নিরানন্দ জীবনে স্বচ্ছ আকাশের রঙধনু হয়ে এসেছিল ইনজাদ। এক তুখোড় বর্ষণের পর চুপটি করে যেমন শুভ্র আকাশকে রাঙিয়ে দেয় সাত রঙা রঙধনু, ঠিক তেমন করে তার অন্ধকার, অবহেলিত, অযত্নে গড়ে ওঠা জীবনে প্রাণদেব হয়ে এসেছিল ইনজাদ। কিন্তু এখন সব শেষ। নিজেকে একটা ভাঙা কাঁচের টুকরো মনে হচ্ছে তার। অন্যকে নয় নিজের রক্ত ঝরাচ্ছে সে নীরবে। অভিমানী কন্যার চোখের ভাসা বুঝল না পরদেশী। নিজেকে অতি মাত্রায় স্বাভাবিক করে নিল রেহাংশী। টলটলে স্বচ্ছ জলের ন্যায় ভাসা ভাসা স্বরে বলল—
“বলতে পারেন। এখন তো আমি আপনার শালি হবো।”
শ্রাবণ ধারার অনুপস্থিতিতেই এক বজ্রপাত হলো ইনজাদের চোখের সামনে। আঁতকে উঠে বলল—
” কীসের শালি?”
রেহাংশী হাসল। সে হাসিতে ছিল পুড়ে যাওয়া হৃদয়ের দগ্ধ গন্ধ। বলল—
“নুপূর আপুর সাথে আপনার বিয়ে হলে তো আমি আপনার শালি-ই হবো। ”
“আমার বিয়ে! এসব কী বলছ?”
রেহাংশী একটা শ্বাস টেনে নিল। লম্বা শ্বাস। পরিষ্কার চোখে তাকাল। কোনোরকম ভনিতা ছাড়াই বলল—
“আপনার মা এসেছিল গতকাল সন্ধ্যায়। চাচী নুপূর আপুকে খুব পছন্দ করেন। আপনিই না কি তাকে নুপূর আপুর কথা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছেন? তিনি আপনার আর নুপূর আপুর বিয়ে দিতে চান। বড়ো আম্মুর কোনো আপত্তি নেই। নুপূর আপুরও হবে না। আর আমি তো তার ছোটো বোন। সে হিসেবে আমি আপনার শালি হবো। তাই আপনি আমাকে তুমি করে বলতে পারেন।”
ইনজাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এক বিক্ষিপ্ত রাগ তরতরিয়ে বয়ে চলছে। দুপুর রোদের সূর্যের নয়, তার তেজস্বিতে পৃথিবী জ্বালিয়ে দেবে সে। মায়ের এহেন কাজে খুশি হতে পারল না ইনজাদ। একবার তাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করল না! রেহাংশী চট করেই বলে উঠে—
” ইচ্ছে করলে আজই আপুকে আংটি পরিয়ে আসতে পারেন। চাচিকে জানিয়ে দেবেন নুপূর আপু এসেছে। সে যেন জলদি আপনাদের বিয়ে দিয়ে দেয়। আপনাদের বিয়ে হলেই তো পায়েল আপুর বিয়ে হবে। এরপর বড়ো আম্মু আমাকে বাড়ি থেকে বিদায় করতে পারবেন। বড়ো আব্বু বলেছে বড়ো দুই মেয়ের বিয়ে না দিয়ে আমার বিয়ে দেবেন না। তাই ফটাফট বিয়ে করে ফেলুন।”
ইনজাদ সরল চোখে তাকায়। রেহাংশীর নয়ন ভরা দিঘীর স্বচ্ছ, শীতল জল। তা উপচে এসে কাণায় কাণায় ভরেছে। সেসবের তোয়াক্কা না করে মখমলে গলায় বলে উঠে ইনজাদ—
“এই বিয়েতে কেন রাজি হলে তুমি? ওই ছেলে ভালো নয় বিষবাণ। ও তোমার যোগ্য নয়।”
রেহাংশী হাসল। উদ্ভ্রান্তের মতো কারণ ছাড়া হাসি। জমাট গলায় বলল—
“বিষবাণ আজ নিজেই বিষাক্ত। তার মৃত্যু অনিবার্য। কে বাঁচাবে তাকে? কে করবে তাকে বিষমুক্ত?”
ইনজাদের কণ্ঠে দরদ নেমে আসে। হৃদয়ভেদী মর্মাহত গলায় বলল—
” বিষবাণ নিজের বিষে তার শত্রুকে দমন করে। না কি নিজেকে শেষ করে দেয়! নিজের শক্তি আর সামর্থ্যকে চিনে নাও বিষবাণ। যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার আগেই কেন আত্মসমর্পণ করছ তুমি?”
“বিয়ে করবেন আমায়?”
ইনজাদ হকচকিয়ে যায়। দুপুরের ক্লান্ত রোদে তার কপাল চুইয়ে ঘামের নহর নামছে। চোখ জ্বলে ওঠল। তার শিথিল কপাল কুঞ্চিত হলো। চোখের পাতায় এলো দ্বিধা। উৎসুক্য নজর ক্ষেপনে বিদ্ধ হলো রেহাংশী। ফিক করে হেসে ফেলে বলল—
“ভয় পাবেন না পরদেশী। ঘুটেকুড়োনিদের জন্য ঘোড়ায় চড়ে রাজকুমার আসে না। আমায় বিয়ে করলে যৌতুক দেবে কে? বরের সম্মান করবে কে? আমার তো কেউ নেই। আমিই আমার। আমারই আমি। আপনি তাড়াতাড়ি বিয়েটা করে ফেলুন। সাবধান পরদেশী। রাস্তা আগলে আর দাঁড়াবেন না। বদনামী হবে, কলঙ্কিত হবো। আমার হয়ে লড়ার যে কেউ নেই, আসি।”
রেহাংশী তার উদ্দেশ্যে পা বাড়াল। লম্বা লম্বা পা। একবারো পেছনে ফেলে আসা পুরুষটিকে দেখল না। দেখলে সে জানতে পারত, তার মুখ নিঃসৃত প্রতিটি শব্দ সত্যিই বিষবাণের ন্যায় গেঁথে গেছে কারো হৃৎপিন্ডে।
চলবে,,,
#মোহঘোর
#পর্বঃ৭
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
সূর্যের দামাল আভা মাথার ওপর থেকে পশ্চিম দিকে কিঞ্চিৎ নেমে এসেছে। তার তপ্ততায় হাঁপিয়ে উঠেছে ধরণী। গনগনে বিবস্নানের উত্তপ্ততা বিষিয়ে তুলছে ধরনীস্থ মানুষের জনজীবন।
কাঠের জানালার কপাট খোলা। হুরহুরে দক্ষিণা পবনের শীতলতা। খাটের একপাশে বসে আছে রেহাংশী। ভরা পেটে অতি সাবধানে পা ফেলে তার দিকে এগিয়ে আসছে পারুল। তার হাতে মাঝারি সাইজের একটা ট্রে। রেহাংশী দেখতেই হুড়মুড়িয়ে উঠে তার হাত থেকে ট্রে নিয়ে নেয়। অস্থির হয়ে বলল—
“তোকে কে বলল এসব করতে? বস এখানে।”
পারুল স্নিগ্ধ হাসল। ক্লান্ত, ভারী শরীরে প্রশান্তির হাসি। তাকে খাটের ওপর বসায় রেহাংশী। ট্রে টা পড়ার টেবিলের কোণায় রেখে মৃদু রাগ দেখিয়ে বলল—
“তোকে এসব কে করতে বলেছে? আমি কী খেতে এসেছি?”
পারুল মুচকি হেসে বলল—
“আমি কী বলেছি তোকে তুই খেতে এসেছিস! মেহমানকে বুঝি নাশতা দিতে হয় না?”
“আমি কী মেহমান?”
“না, তুই আমার সতীন।”
খিলখিলিয়ে উঠে দুই বান্ধবী। পল ব্যয়ে চুপ হয়ে যায় পারুল। কপট রাগ দেখিয়ে বলল—
“বিয়েতে আছিসনি কেন তুই? আমি কত আশা করেছিলাম!”
রেহাংশী স্বাভাবিক হেসে বলল—
“বিয়ের সময় আসলে কি এখন আসতে পারতাম? পারতাম না।”
পারুল রুষ্ট হয়ে বলল—
“বাজে কথা বলিস কেন? ওসব আমি বিশ্বাস করি না।”
রেহাংশী ঝলমলে হাসে। তার অন্তঃকরণের ব্যাথা চাপা পড়ে সেখানেই। অমায়িক গলায় বলল—
“তুই না করিস, সবাই তো করে। তাতে কী? বিয়েতে আসিনি তো। এখন তো এসেছি। বাবুকে দেখতে। এই কত মাস রে। তোকে তো পুরো ফুটবল লাগছে।”
পারুল মোলায়েম হাসে। চোখে তারায় খুশি নিয়ে বলল —
“আট।”
রেহাংশী ঠেস মেরে বলল—
“এত জলদির কী ছিল রে? বিয়ে হয়েছে তো একবছরও ঠিক করে হয়নি।”
চোখ লুকোয় পারুল। লজ্জামিশ্রিত গলায় বলল—
“হয়ে গেছে। আল্লাহর ইচ্ছে। ”
“হু, তোরে বলছে।”
পারুল ঠোঁট চিপে লজ্জা লুকোয়। আচমকা ভ্রূ নাচিয়ে বলল—
“কাকীমা তোকে একা আসতে দিলো?”
রেহাংশী ঝুমঝুমিয়ে হাসে। হেসে হেসে বলল—
“মেম্বারের ছেলের বউ হচ্ছি। একটা ভাব আছে না!”
পারুল আঁতকে উঠে বলল—
“কী বলছিস তুই?”
সানন্দে বলে উঠে রেহাংশী—-
“হ্যাঁ। বড়ো আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করেছে।”
“তাই বলে রতন গুন্ডার সাথে?”
“গুন্ডা বলছিস কেন? ও তো এখন ভালো হয়ে গেছে। আর আমি কোন রাজকন্যারে? যে আমার জন্য ঘোড়ায় চড়ে রাজকুমার আসবে!”
পারুলের মন ক্ষুণ্ণ হয়। জ্বলন্ত মোমবাতি যেন ক্ষীণ হাওয়ায় নিভে গেল। মন খারাপ করে বলল—
“তুই বিয়েতে রাজি?”
শব্দ করে হেসে উঠে রেহাংশী। চাপা গলায় বলল—
“হবো না কেন? আমার মতো অপয়াকে কেউ বিয়ে করবে এই তো ঢের! তার আবার রাজি হওয়া আর না হওয়া কী!”
পারুলের নেত্রযুগল সিক্ত হয়। ভার গলায় বলল—
“তুই সত্যিই ওই রতন গুন্ডাকে বিয়ে করবি?”
রেহাংশী সচল চোখে তাকায়। মৌনতার দ্বারে কড়া নেড়ে বলল—
“হুম।”
পারুল ক্ষুণ্ণ গলায় বলল—
“প্লিজ এমন করিস না।”
রেহাংশী স্বাভাবিক গলায় বলল—
“দুর! তুই এত ইমোশনাল হচ্ছিস কেন? বিয়ের এখনো অনেক সময়। ততদিনে রতন ভালো হয়ে যাবে। আরে ঘরে বউ থাকলে ডাকাতও মসজিদের ইমাম হয়ে যায়। আমাকে নিয়ে এত ভাবিস না।”
রেহাংশীর শ্লেষাত্মক কথার ধার পারুল বুঝতে পারল। বাধ্য হয়ে এই বিয়েতে রাজি সে। অবশ্য করার কিছু নেই। তার বাবাও তো আসবে না এই বিয়ে বন্ধ করতে। একা রেহাংশীর ক্ষমতা কোথায়?
রেহাংশী ফিক করে হেসে ফেলে। যারপরনাই অবাক হয় পারুল। মেয়েটা এতকিছুর মধ্যে হাসে!
সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ে পারুল—-
“দেরি কেন?”
“নুপূর আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে তো।”
পারুল একরাশ উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল—
“কার সাথে?”
“ওই যে আমাদের বাড়ির সামনে যে নতুন বাড়িটা হয়েছে ওই বাড়ির ছেলে। ”
“ছেলে কী করে রে?”
“তা জানি না। তবে শহরে থাকে। ”
“ও। বিয়ে কী ঠিক হয়েই গেছে?”
“উঁহু। তার মা এসেছিল বড়ো আম্মুর কাছে। চাচী বলেছে তার ছেলের সাথে কথা বলে সব পাকাপাকি করবে।”
পারুল পেলব গলায় বলল—
“তুই কী নুপূর আপুর বিয়েতেও থাকবি না?”
এক মরুভূমিতে তৃষ্ণার্ত পথিকের দৃষ্টির ন্যায় পারুলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রেহাংশী। তার কোমল চিত্তের হৃদয়ভেদী আর্তনাদ হাসিতে এক পলকে উড়িয়ে দিয়ে বলল—
“জানি না তো। থাকতে দিলে থাকব। না হলে নানুর বাড়ি চলে যাব। মামী অবশ্য রাগ করবে। তবে ফিরিয়ে দেবে না।”
খিলখিলিয়ে উঠে রেহাংশী। তার বুকের গহ্বর এখন ম্যাজিক খাতার মতো। যাতে তার কষ্টগুলো খুব যতন করে সে লিখে। কিন্তু মুহূর্তেই তা কর্পূরের ন্যায় উবে যায়। তাই কোনো কষ্ট তাকে স্পর্শ করতে পারে না। রেহাংশী নিজের কথা বাদ দেই। অনেকটা রোদ্র ঝলমলে দিনের মতো চকচক চোখে চেয়ে প্রাণবন্ত গলায় বলল—
“দুলাভাই আসেনি?”
“এসেছিল, চলে গেছে।”
“ইশ! তোর বরকে আমার দেখা হলো না। এই ছবি আছে তোর কাছে?”
“আছে তো। তুই বস, আমি দেখাচ্ছি।”
পারুল উঠতে গেলে তাকে বাঁধা দেয় রেহাংশী। শাষণ করে বলল—
“একদম উঠবি না। আমাকে বল, আমি এনে দিচ্ছি।”
পারুল তাদের স্টিলের শোকেস দেখিয়ে দেয়। তার ওপরেই মোবাইল রাখা। রেহাংশী গুটগুট পায়ে মোবাইল নিয়ে আসে। দুই বান্ধবী একে অপরের সাথে সেঁটে বসে। পারুল তার বিয়ের ছবিগুলো দেখাতে থাকে। রেহাংশীর চোখের মনিতে খুশি ঝরে পড়ে। বিয়েতে সে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু ওই যে তার অপয়া ট্যাগ। তা আর দিলো কই! গ্রামের মানুষ এসব অনেক বেশি মেনে চলে। যার পুরোটাই কুসংস্কার।
“তোকে তো ভারি মিষ্টি লাগছে! তুই কী শশুড় বাড়িতেই থাকিস?”
“হ্যাঁ।”
“শুনলাম তোর বড় না কি শহরে থাকে?”
“হুম। কিন্তু ও বলেছে বাবু হওয়ার পর আমাকেও ঢাকা নিয়ে যাবে।”
“তাই না কি?”
“হ্যাঁ।”
“ইশ! তাহলে তো ভীষণ মজা হবে!”
পারুল নরম চোখে তাকায়। গ্যালারির ছবিতে আঁখি নিবদ্ধ রেহাংশীর। পারুলের মনে ব্যাথা হয়। তার বাবার বাজারে একটা দোকান আছে। তা দিয়েই তাদের সংসার ভালোই চলে। ছোটো ভাইটা মাদ্রাসায় পড়ে। মোটামুটি সচ্ছল পরিবার দেখেই তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। রেহাংশীর পরিবার তার থেকেও উন্নত। গ্রামে তাদের নাম ডাকও আছে। তবুও কতটা অবহেলিত সে। বাবা-মা না থাকলে যা হয়। সন্তানের সবচেয়ে বড়ো আপনজন-ই তো মা-বাবা। তাদের মতো নিঃস্বার্থবাবে পৃথিবীর কেউ ভালোবাসতে পারে না। পারুলের ব্যথিত নয়ন দেখে রেহাংশীর উজ্জ্বল হাসি।
,
,
,
নিজের শার্টের হাতা গুটিয়েছে ইনজাদ। বিক্ষিপ্ত চাহনি তার। রাগে, ক্রোশে আচ্ছন্ন সে। মায়ের এমন কাজ সে মোটেও আশা করেনি। তবে প্রশ্নও করেনি। কারণ প্রশ্ন করলেই তমালিকা জানতে পারবে রেহাংশী এসব বলেছে। আর তখন তা মেয়েটার জন্য একদম সুখকর হবে না।
বিতৃষ্ণা নিয়ে ঢাকা ফেরার জোগাড় করেছে ইনজাদ। তমালিকা উদ্বিগ্ন, উদ্বেলিত। কাঁধের ব্যাগটা একপাশে নিয়েই নিজের কক্ষ থেকে বের হলো ইনজাদ। তমালিকা ত্রস্ত গলায় বলল—
“কী হয়েছে তোর? দুপুরে ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়াও করলি না। বললি সন্ধ্যায় যাবি। আর এই বিকেল বেলায় কেন পাগলামি শুরু করলি?”
ইনজাদ রাগ চেপে রাখতে পারল না। দমদমে গলায় বলল—
“ভালো লাগছে না আমার। তাই। আর সন্ধ্যায় বলেছি তো কী হয়েছে? এক্ষুণি যাব আমি।”
“কিছু মুখে দিয়ে তো যা।”
“ইচ্ছে করছে না। ”
বসার ঘরে নিমগ্নচিত্তে বসে আছেন পারভেজ মির্জা। তার দিকে কোনোমতে এক পলক তাকিয়ে চওড়া গলায় বলল—
“আমি যাচ্ছি বাবা। ”
পারভেজ মির্জা হালকা করে মাথা ঝাঁকালেন। ইনজাদ বের হওয়ার পরও তমালিকা ছেলের যাওয়ার পথে অনিমেষ চেয়ে রইলেন। চোখের পাতা ছড়িয়ে যে ছেলে কখনো কথা বলেনি, সে আজ ঘাড়ের রগ ফুলিয়ে কথা বলছে! মায়ের বাধ্য ছেলে হঠাৎ করেই অবাধ্য হয়ে গেল। মা কেন ছেলের মনের কথা বুঝতে পারছে না?
মেঠোপথ ধরে হাঁটছে ইনজাদ। বিকেলের তাজা হাওয়ায় তার হাতের পশমে দোলা লাগলেও মনের স্বস্তি হচ্ছে না। মৃদু মলয়ে পরাবৃত মেদিনীর পত্রপল্লব দোল খেলছে। কিন্তু ইনজাদের মানসপটে ভেসে উঠা সেই রমণীর তীক্ষ্ম কথার ছুরি তাকে প্রতিনিয়ত থমকে দিচ্ছে। সিগারেট ধরায় ইনজাদ। হেঁটে হেঁটে সিগারেটে সুখটান দেওয়া ঠিক জমে না। তাও এই একলা একা পথে! মেঠোপথ ছেড়ে পাকা সড়কে পা রাখে ইনজাদ। চলতে থাকে নিষ্পেষিত মস্তিষ্কে।
,
,
,
বিকেল গড়িয়েছে। সূর্যের ম্লান আলোয় বসুন্ধরা নিষ্প্রভ। নিস্পৃহ পায়ে হেঁটে চলছে রেহাংশী। পারুল না খাইয়ে ছাড়ল না। বিকেলের মেঠোপথ জনশূন্য। মানুষজন ভাতঘুমে ব্যস্ত। রেহাংশী বাড়ি ফিরছে। পথের দুই পাশে নারিকেল গাছ, রেইনট্রি আর খেজুর গাছের ঝাড়। খেজুর গাছের পাশে ঝা লাগানো। তাতে লতানো সিমগাছ। তাতে সাদা আর বেগুনী রঙের ছোটো ছোটো ফুল ধরেছে। ছোট্ট আমগাছের ডগায় কালচে বেগুনী রঙের কচিপাতা। পুকুরের শ্যাওলা পড়া পানিতে হাঁসের অবাধ বিচরণ। মাথা ডুবিয়ে জলখেলায় মত্ত তারা। পাড়ে থাকা গাছের নির্মল ছায়া পড়ছে পুকুরের জলে। রেহাংশী দাঁড়াল। খেজুর গাছের সাথে হাত ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে সেই হাঁসগুলোর জলখেলা দেখছে। তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। মনে পড়ে দাদির কথা। তাকে খেজুর গাছের কাঁটা নিয়ে যেতে বলেছে। নিয়ে নিল সে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে যখন যাওয়ার জন্য পা বাড়াল তার সামনেই ভূতের মতো আবির্ভুত হলো রতন। বাইকের জোরালো, কর্কশ আওয়াজে শিউরে উঠে সে। রতন গালভর্তি হাসে। প্রশ্ন করে—
“কই গেছিলা?”
“পারুলের বাসায়।”
“কেন?”
“ওকে দেখতে।”
“কাঁটা দিয়া কী করবা?”
“দাদি নিতে বলেছে। পিঠা বানাবে।”
রতন চোখে হাসল। গদগদ গলায় বলল—
“চলো, তোমার বাড়ি পৌঁছাইয়া দেই।”
রেহাংশী আপত্তি করে বলল—
“লাগবে না। আমি একাই যেতে পারব।”
রতন হাসল। বাইকের ফ্রন্ট গ্লাসে নিজের মুখটা দেখে চুলে হাত গলালো। হেসে হেসে বলল—
“এখন তো আর সমস্যা নাই। কেউ তোমারে কথা শুনাইতে পারব না। বসো, আমি পৌঁছাইয়া দেই।”
রেহাংশী দৃঢ় গলায় বলল—
“বললাম তো না। আপনি যান।”
“আংটি কই তোমার?”
রেহাংশী থতমত খেয়ে যায়। ভীতসন্ত্রস্ত গলায় বলল—
“আঙুল ব্যাথা করছিল তাই খুলে রেখেছি।”
“মিথ্যা বইল না। মিথ্যা কথা তোমারে মানায় না। আচ্ছা, যাও। সাবধানে যাইয়ো।”
রতন জোর একটা শব্দ করে তার বাইক সচল করে। দুইজনকে পাকা রাস্তার মোড় থেকে দাঁড়িয়ে দেখছিল ইনজাদ। ভুলেও একবার তার দিকে ফিরে তাকাল না রেহাংশী। ছোটো ছোটো পায়ে তার সামনে দিয়ে এসে একটা ছোট্ট মেঠোপথে ঢুকে পড়ে। হাতের সিগারেট দলিয়ে ফেলে মুষ্ঠিতে ইনজাদ।
চলবে,,,