যখন_এসেছিলে_অন্ধকারে #পর্ব_২৫

0
1039

#যখন_এসেছিলে_অন্ধকারে
#পর্ব_২৫

ওই বারোজনে খাওয়া মেয়ে নিয়ে আমার এখন সংসার করা লাগবে। কী কপাল আমার! পেটেও ধরেছি সোনার টুকরো ছেলেপেলে, তাদের পছন্দও সোনা দিয়ে বাঁধাই করে রাখার মতো। আরে মুখ থেকে যে ছ্যাপ ফেলে দিছিস সেই ছ্যাপ কেউ আর মুখে নেয়?’

সাইদা আপনমনে বকে চলেছেন। অনিকে মেনে নেওয়া তার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। পত্রিকা বা অনলাইন প্লাটফর্মে যেসব ছবি আসে অনির, সেগুলো তার দেখার কথা না। ইমরানের তো কিছু যায় আসেই না এতে, বউয়ের নানাঢঙের ছবি সে সারাদিন চোখের সামনে রেখে দেয়। ইমা আর ইকরাম দুজনেই অনির পক্ষে। ওরা উদারমনস্ক। অশালীন আর আপত্তিকর পোশাক অথবা কাজে সীমালঙ্ঘন করাকে উদারতার সার্টিফিকেট দিতে রাজি নন সাইদা। তাই ছেলেমেয়েদের সাথে তার মতের মিল হয় না। ওরাও কিছু শেয়ার করে না মায়ের সাথে। আব্দুল মজিদ সাহেব তো একেবারে বোবা হয়ে থাকেন, কোনো মতামত চাইলে হেসে ‘ঠিক আছে’ বলে দেন সবাইকেই। আর রইল সীমা। সেও নিজের বোনের টান টানে। ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ পদ্ধতির অনুকরণে সাইদা চেষ্টা করে যাচ্ছেন, অনির প্রতি সীমার নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে। কিন্তু সীমা তার আকার ইঙ্গিতের কথা ধরতে পারে না সম্ভবত, তাকে মাথামোটা গালি দিয়ে নিজের পুত্র আর পুত্রবধূভাগ্য নিয়ে আরেকবার কপাল চাপড়ান তিনি।
টিভিতেও ভারতীয় চ্যানেল চলে বলে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে না। অনির নতুন বিজ্ঞাপন অন এয়ার হলে দুই একবার কৌতুহলে দেখেছিলেন। বাংলাদেশের স্টান্ডার্ডে যথেষ্ট শালীন প্রেজেন্টেশন হলেও সাইদা বলেছিলেন ‘আধান্যাংটা!’
আত্মীয়পরিজনের কাছেও আর মুখ দেখানোর মতো নেই তার। বোনেরা ফোন করে কত কথা শুনাচ্ছে। ছোটোবোনের মেয়ে এসেছে বেড়াতে, সে তার মোবাইল থেকে আজ অনির ইনস্টাগ্রাম প্রফাইল ঘুরিয়ে দেখালো সাইদাকে। এতদিন যে আগুন ধিকিধিকি জ্বলছিল তা একেবারে দাউদাউ করে জ্বলে উঠল। ওড়না না রাখাটা যার কাছে বেহায়াপনা মনে হয়, একজন পারফর্মিং মডেলের পেশাদার ফটোগ্রাফি তার কাছে অসভ্যতা আর অশ্লীলতা ছাড়া আর কিছুই না।

তিনি সীমার উপর রেগে গেলেন। মনে হলো অনির এইবাড়িতে আসা বা ইমরানের জীবনে প্রত্যাবর্তন করার সেতু হচ্ছে সীমা। সীমাকে বাড়ির বউ করে না নিয়ে এলে, বেলায়েত শিকদারের পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক না থাকলে, অনিকে সহজেই ছাঁটাই করা সম্ভব হতো! তাই সকাল থেকে তিনি সীমাকে নিয়ে পড়েছেন। অনিকে সুত্র ধরে, সীমার পুরো পরিবার, পারিবারিক শিক্ষা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন।

সীমা অনেকক্ষণ চুপ করে শুনে, আর উত্তর না করে পারল না। ফট করে বলে ফেলল ‘আম্মা, এখনো সময় আছে, বড়ভাইয়াকে বোঝান, অনি অনির মতোই থাকুক।’

‘তোমাকে কথা বলতে বলিনাই। সে আমি কী করব, আমি বুঝব। অসভ্য মেয়ে, আমি কী করব, তুমি শিখাবা আমাকে?’

‘না আম্মা, আপনাকে শিখাচ্ছি না। দেখেন, আপনিও ওকে আনতে নারাজি আর ওকেও অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বড়ভাইয়ের সাথে দেখা করতে রাজি করানো হয়েছে। দুজনের কথাবার্তায় যদি মিল হয়ে যায়, তাহলে আটকানো কঠিন হবে। এইবেলা দুজনের দেখা হওয়ার আগেই থামিয়ে দেন।’

‘সে আমি তোমাদের পরিকল্পনা কিছু বুঝি না ভেবেছ?’

‘মানে? আমরা কী পরিকল্পনা করলাম? আর আমরা মানে কারা?’

‘তোমার ওই বোন আর তোমরা সবাই। সবই ষড়যন্ত্র। এতবড় চাকরি নিয়ে আসছে ইমরান। লোভে পাগল হয়ে গেছ সবাই। বালিপড়া, চিনিপড়া কী যে করেছ কে জানে। হারামজাদা, দিনরাত ওই বেহায়ার নাম জপতেছে।’
সীমারও বয়স কম। বোনের সম্পর্কে আজেবাজে কথা শুনে শুনে মনে মনে বিরক্ত। ও বলল ‘কে চিনিপড়া খাওয়াবে আম্মা? অনি? এতদিন ধরে ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করাতে হয়েছে, বড়ভাইয়ের সাথে দেখা করতে, কথা বলতে। সব দোষ ওর মাথায় কেন চাপান আম্মা? অথচ পুরো ব্যাপারে ওই সবচেয়ে নির্দোষী!’

‘হ্যাঁ। শিশু ও! বুঝিয়ে রাজি করাতে হইছে! নাটকে নেমে নাটক করে। আমি আর কিছু বুঝি না?’

‘কী বুঝলেন আপনি?’

‘এই চোখ নামিয়ে কথা বলো। তোমার বাপের বাড়ি না এইটা! বড় মাছ পেয়েছ, টোপ দিয়েছ, বোকা মাছ টোপ গিলে বসে আছে তাও টের পেয়েছ। এখন খেলিয়ে খেলিয়ে তুলছ সেটাকে তা আর আমি বুঝি না? বাতাসে চুল পাকেনি আমার।’

‘অনি খেলিয়ে তুলছে বড়ভাইকে?’

‘তা না হলে এত ঢঙ কেন এই মেয়ের? বেহায়া নটি!’

সীমা কথা বলতে যায় এই মিথ্যে দোষারোপের বিরুদ্ধে। ইকরাম দূরে দাড়িয়ে ইশারায় চুপ থাকতে বলে কাছে ডেকে নেয়।

ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপনের শ্যুটিং শেষ হয়েছে। তার পরেই অনেকগুলো কাজের অফারও এসে গেছে অনির হাতে। ভীষণ ব্যস্ত দিন সামনে। কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের সিঁড়িটা পেয়ে গেছে ও। পরশ বলেছিল ওকে, অনেক উঁচুতে উঠতে চাইলে নিজের পায়ে সিঁড়ি ভাঙাই সবচেয়ে সহজ। কিন্তু এতে পরিশ্রম সবচেয়ে বেশি। কষ্ট করতে অনির না নেই কোনো। সামনের দিনগুলোতে সময় বের করা হয়তো কঠিন হবে তাই ইমরানের সাথে দেখা করার জন্য সময় দিয়েছে ও। সীমার জমজ রিমার বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়েছে। পানচিনি অনুষ্ঠানে থাকবে অনি। সীমার বিয়েতে থাকেনি নিজে ইচ্ছে করেই, সাইদা বা তার পরিবারের মুখোমুখি হবে না বলে। রিমার বিয়েটা ও মিস করবে না। বোনেদের বিয়েতে লেহেঙ্গা পরে নাচবে, এই শখ ওর একদম ছোটোবেলার। ইকরামের পরিবারও আসবে অনুষ্ঠানে, ইমরানও আসবে। সে তো এখনো বাড়ির জামাই। তাই পলাশডাঙাতেই ওর সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে

ও।

বহুদিন পরে গ্রামে এসেছে অনি। সেই বিয়ে বিয়ে খেলাটার পরে একবার এসেছিল। বেলায়েত শিকদার সবাইকে অনির বিয়ে নিয়ে মুখ খুলতে নিষেধ করে দিলেও ছোটোমানুষ অলির মুখ দিয়ে কীভাবে যেন প্রতিবেশীরা জেনে গিয়েছিল। আর যা হয় তাই, কানাকানি, হাসাহাসি, সমবেদনার নামে এটাসেটা জিজ্ঞাসা করে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার মানুষের অভাব হয়নি।

অনি পাড়াবেড়ানি মেয়ে। ঘরে বসে থাকা কষ্টসাধ্য ছিলো, কিন্তু ঘর থেকে বেরুলেই শুনতে হতো ‘এই অনি জামাই থাকছিল সাথে?’ ‘তালাক দিলো ক্যান?’ ‘আগে বিয়ে আছে?’ ‘তোকে পছন্দ করে নাই?’ ‘কী করছিলি যে সাথে সাথেই তালাক দিলো?’

বন্ধু যারা ছিলো তাদের মায়েরা তাদেরকে নিষেধ করে দিয়েছিল অনির সাথে মিশতে। অলক্ষী, অপয়া, কুফা অনেক বিশেষণ যোগ হয়ে গিয়েছিল ওর নামের সাথে।

এবার গ্রামে এসে অন্যরকম লাগছে। অনেক মানুষ আসছে অনিকে দেখতে, ছবি তুলতে। অনির সাথে মেশা, কথা বলার বারণ ছিলো যাদের তারাই অনির সাথে সেলফি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছে, ‘আমার ছোটোবেলার বান্ধবী’ ক্যাপশনে।
সুমনার এসব কিছু ভালো লাগছে না। খুব দ্বিধায় পড়ে গিয়েছেন। এতদিন একমনে চেয়েছেন ইমরান ফিরে আসুক অনির জীবনে। কিন্তু সীমার মুখে অনি সম্পর্কে ওদের শাশুড়ী সাইদার ধারণা আর বক্তব্য শুনে ভয় পাচ্ছেন। তবে অনি যদি এইসব নাটকের কাজ বাদ দিয়ে দেয় তবে সাইদা মেনে নিলেও নিতে পারে অনিকে। কিন্তু অনি শুনবে কী না কে জানে! সুমনাকে জড়িয়ে ধরে আঁচল ধরে বসেছিল অনি। যখন থেকে এসব বুঝানো শুরু করেছেন তিনি, অমনি অনি আর তার সামনেও আসছে না। এতটা খেয়ালি মেয়েকে ইমরান সামলাতে পারবে তো? একমাত্র ইমরানই হয়তো পারবে, অনিকে বেপরোয়া জীবন থেকে ফেরাতে। আর দেশেও তো থাকবে না ওরা। ইমরান এত এত পাশ দিয়েছে কি দেশে থাকার জন্য? ও যেদেশে যাবে অনিকেও সেখানেই যেতে হবে। এসব নাটক সিনেমার ভুত বাপ বাপ করে মাথা থেকে নেমে যাবে তখন!

দূর থেকে দুটো গাড়ি গ্রামের রাস্তায় ঢুকতেই তিনি অনিকে খুঁজতে বেরোলেন। গ্রামে এসে জামাকাপড় পালটে গেছে অনির। সাধারণ জামা সালোয়ার ওড়না পরেছে। কিন্তু মাথায় কাপড় দেওয়ার কথা বলে দিতে হবে। শ্বশুরবাড়ির মানুষদের সামনে আলগামাথায় আসা ঠিক না!

অনিকে পেলেন পুকুরপাড়ে। বড় ঘাটে না। বড় ঘাটটার একপাশে খেঁজুর গাছের গুঁড়ি ফেলানো আছে। পানির লেভেল নিচে নেমে যাওয়ায়, সেই গাছের গুঁড়ির ঘাটের ঘাটে বসলে পানিতে পা অনেকটাই ডুবে যায়৷ অনি সেখানে বসে আছে পানিতে পা চুবিয়ে। অলি, রিমা, অনির বান্ধবীরা অনেকেই সেখানে আছে। অনি সবার মধ্যমণি হয়ে হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলছে। সুমনার খুব ভালো লাগল ওকে দেখে। এরকম হাসিখুশি অনিকে অনেকদিন দেখেন না তিনি। একমূহুর্তের জন্য মনে হলো, এই তো ভালো!

পরক্ষণেই অনিকে ডাকলেন। অনি পানি থেকে উঠে এলে বেশ মিনতির সুরে সুমনা বললেন ‘মা গো, যা হইছে সবার ভুলের জন্য হইছে। সেই ভুলের শাস্তি এখন যদি দিতে চাও তোমার আপনজনেরাও কষ্টও পাবে। মানও যাবে। তুমি এখন আর ছোটো না, একটু বুঝে মা। মেয়েদেরকে আল্লাহ সহনশীলা করে পাঠাইছেন। নইলে দুনিয়াতে সংসার, মায়া, মমতা এগুলো কিছু থাকত না। সম্পর্ক টিকত না। মেয়েদের সহ্যশক্তি হইতে হয় মাটির মতো। দেখো না, এত পাড়াইতেছ তবুও মাটি টু শব্দটি করে না। তাই তো প্রসববেদনা সহ্য করে মেয়েরাই মা হয়। সন্তান হইতে সময় একজন মা যে কষ্টসহ্য করে তার একশোভাগের একভাগও যদি পুরুষে সহ্য করতে হইতো তাইলে সে আর সন্তানের জন্ম দিতো না।’

‘তুমি কী বলতে চাও?’

‘কিছু না। তোমার যা ভালো মনে হয়, যাতে তুমি সুখি হও সেটাই করবা। শুধু মনে রাখবা তোমার আজকের সিদ্ধান্তের পরে দুইটা পরিবার, দুইটা পরিবারের এতগুলা মানুষের আনন্দ আর সুখও নির্ভর করবে।’

‘আচ্ছা।’ অনির সহজ উত্তর বিশ্বাসযোগ্য হলো না সুমনার কাছে। অনির হাত চেপে ধরে বললেন ‘মাথাটা ঠান্ডা রাখবা আর বেয়াদবি করবা না।’

অনি উত্তর না করলে সুমনা বললেন, ‘ওরা চলে আসলো প্রায়, জামাটা পালটে একটা শাড়ি পরে ফেলবা?’

অনি হেসে ফেলল। হেসে হেসে বলল ‘আম্মু শাড়ি পরলে পেট দেখা যাবে, কাঁধ দেখা যাবে।’

‘অন্যরাও তো পরে।’

‘আমিও পরি মা। কিন্তু এখানে আজ অন্যদের সাথে আমার তুলনা হবে না। অন্যদের জন্য যেটা সহজ সেটা আমার জন্য স্বাভাবিক না। অন্যরা শাড়ি পরলে কোমর দেখা গেলেও দোষ হবে না কিন্তু আমার ঘোমটা খুললেও বেপর্দা মনে হবে।’
আচ্ছা, আচ্ছা, শাড়ি না পরো, মুখে একটু সাজো।’

‘আমার সাজগোজ করা হাজার হাজার ছবি আছে, তুমি দেখবে মা?’

‘সেসব আর আজকের দিন আলাদা।’

‘না আলাদা না। আমার কাছে আলাদা না। তোমার কথা শেষ হয়েছে, মা? শেষ হলে যাও, মেহমান নওয়াজী করো।’

সুমনা চলে গেলেন। অনিকে শান্তই দেখাচ্ছে। রাগিয়ে দিতে চাইলেন না। তাছাড়া অনির বড়চাচাও অনেক বুঝিয়েছেন ওকে। আল্লাহ ভরসা বলে মনে মনে বললেন ‘আল্লাহ যেটা অনির জন্য ভালো হবে সেই সিদ্ধান্তই আজ ওকে দিয়ে নেওয়াও তুমি। আমার কোনো নালিশ নেই।’

*****

বিয়ের সময় রাতে। সাইদা পুরো পরিবার নিয়ে বিকেলেই এসে গেছেন। রাতে ফিরে যেতে পারবেন। আর একটা বিষয় মাথায় রেখেছেন, রিমার বিয়ের আগেই অনির সাথে ইমরানের মুখোমুখি হওয়াটা। আনন্দঘন পরিবেশটা কিছুতেই নিরানন্দ করে দিতে চাইবে না অনি, তাই কোনো নেতিবাচক সিদ্ধান্তও ওর কাছ থেকে আসার সম্ভাবনা কম থাকবে। সাইদা অনিকে পছন্দ করেন না, কিন্তু ওর সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার সবরকম উপায় আটঘাট বেঁধেই এসেছেন।

নিজেরা বিয়ের আয়োজন দেখতে ব্যস্ত হয়ে ইমরানকে পাঠিয়ে দিলেন অনির কাছে। ইমরানও খুব উদগ্রীব হয়েছিল এই সময়টার জন্য। শত চেষ্টা আর অনেক প্রতীক্ষার পরে অনির সাথে কিছুটা একান্ত সময় পেতে যাচ্ছে ও।

পুকুরঘাটে এসে চুপচাপ দাঁড়ালো ইমরান। তখন বিকেলের সূর্যটা বাগানের ওইপাশে চলে গেছে। শান্ত পানির পুকুরটা অনির পায়ের দুলুনিতে আন্দোলিত হচ্ছে। গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে মরা বিকেলের চিরলবিরল আলো পুকুরের পানিতে চিকচিক করছে। অনির মুখের একপাশে এসে পড়েছে গোধুলি নামার আগের শেষ আলোর ছটা। একে বলে কনে দেখা আলো। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে অনিকে। ওর মুখে লালচে আলো, পুকুরে রোদের দ্যুতি – সবমিলিয়ে সুন্দর একটা দৃশ্য। এই মূহুর্তটা অন্য কোনো পৃথিবীতে ঘটছে মনে হচ্ছে – আলৌকিক, নষ্ট করে দিতে ইচ্ছে করল না ইমরানের।

অনি পেছনে ফিরল। ইমরানের দিকে তাকিয়ে একটুখানি চোখটা নামিয়ে নিলো। তারপর আবার তাকালো ওর দিকে। একটুখানি হাসি দেখা গেল ঠোঁটের কোণে, হেসে হেসেই বলল ‘পুকুরে পা ডুবিয়ে বসতে অসুবিধা না হলে চলে আসুন!’

অচিন্তনীয় সুন্দর আহবান। অনি এতটা আরাধ্য হয়ে উঠেছে ওর কাছে, ভাবতেও ইমরানের ভালো লাগে। পাঁচ বছরের আক্ষেপ আছে, পোড়ায় ওকে সেটা। আজ মহেন্দ্রক্ষণ সামনে উপস্থিত, পাঁচসেকেন্ডও দেরি করল না ও। প্যান্ট গুটিয়ে নেমে গেল।

অনির কোনো ভাবান্তর নেই, যেন একটা নাটকের দৃশ্যে অভিনয় করে চলেছে, সাবলীল, অথচ বয়সে বড় আর নানা রঙের মানুষ দেখে অভিজ্ঞ ইমরানের বুকের ভেতরে হাতুড়িপেটার শব্দ হচ্ছে। সেই একইরকম মিষ্টি হেসে অনি বলল ‘আই ওয়ান্ট আ ডিভোর্স!’ এতটা সহজভাবে বলল ও যে ডিভোর্স শব্দটার অর্থ সহজে ধরতে পারল না ইমরান। তাকিয়ে থাকল।

অনি খিলখিল করে হাসল কিছুক্ষণ। তারপর স্বাভাবিক ভাবে বলল ‘সরি, আই এম সরি। আমাকে বলা আপনার প্রথম কথা ছিলো এটা। তাই আমিও এভাবে শুরু করলাম! সরি। মজা করার লোভটা ছাড়তে পারলাম না! বলুন কী বলবেন?’
ইমরান চোখ নামিয়ে ফেলল। ওর এখন আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। যেন সব বলা হয়ে গেছে। সাধা লক্ষী পায়ে ঠেলেছে ও। কথা তো শুনতেই হবে। সবাই শোনাচ্ছে। আজকে অনিই শোনাক। অনিই বলুক, যা বলে ওর শান্তি হয়! পাঁচ বছরের ব্যথার ঘা একটু যদি উপশম হয়। নিজের নির্বুদ্ধিতার মাশুল এভাবে দিতে হবে জানলে এই কাজ কি কখনো করত ও? কখনো না।

‘কী ব্যাপার, বলুন? চুপ করে থাকবেন না!’ অনি যেন শাসন করল। ওর কপালের উপর আলো এসে পড়েছে। ইমরানের ইচ্ছে করল ছুঁয়ে দিতে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল ‘অনি? আমার খুব ভুল হয়েছে!’

‘বেশ! মানলাম আপনি অনুতপ্ত!’

‘ক্ষমা করে দাও।’

‘আমি আসলে বুঝতে পারছি না, জ্ঞানবুদ্ধি নেই তো এত বেশি, অত বুঝিও না। সবাই নানাভাবে বোঝাচ্ছে আমাকে, গত একমাস ধরে আপনার কথাগুলো আমাকে পৌঁছে দিচ্ছে কেউ, কেউ আমার উত্তর আপনাকে শুনিয়ে দিচ্ছে। নতুন করে কিছু বলার নেই। আপনি কী আলাদা করে আরও কিছু বলবেন, নাকী শুধু ক্ষমা চাইতে চাইছিলেন?’

ইমরানের সহ্য হচ্ছে না। অনিকে থামিয়ে দিয়ে বলল ‘অনি আমি আর কখনো তোমাকে অবহেলা করব না। তুমি যেভাবে যা বলবে, আমি সেভাবে করব। একটা নতুন শুরু হোক আমাদের। আমি অনেক ভালোবাসি তোমাকে, অনেক ভালোবাসব। সবকিছু ভুলিয়ে দেবো, প্রমিজ করছি। আমার ভুলে যা যা হয়েছে, ফেরাতে পারব না কিছু কিন্তু ভরিয়ে দেবো তোমাকে, কথা দিচ্ছি।’

‘পাঁচ বছর পরে আপনার আজকের এই দিনটা, এই প্রতিজ্ঞা মিথ্যে মনে হতে পারে!’

‘না অনি। তোমাকে ভালোবাসাটা আমার আজকের, হঠাৎ উপলব্ধি নয়। এই পাঁচ বছরে প্রতিটিদিন কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবেসেছি। তোমাকেই ভালোবেসেছি। বাইরের পৃথিবীতে অনেক রঙিন আহবান, সেসব কিছুতে আমার মন টলেনি। আমার ইন্দ্রিয় কখনো তোমাকে ছাড়া কিছু ভাবেনি। আর ভবিষ্যতেও এমন হবে না। তোমাকে ভালো রাখব আমি, আমরা ভালো থাকব।’

অনি হাত দেখিয়ে থামালো ওকে। ‘দেখুন আমি শিক্ষিত না। পড়াশোনা হয়নি আমাকে দিয়ে, হবে না সেটা আমি জেনে গিয়েছিলাম। আর এখনো পড়তে টরতে আমার বিশেষ ভালো লাগে না। এক্টিং লাইনে যাব না, এইজন্যই। কেননা ওখানে স্ক্রিপ্টট্রিপ্ট পড়তে হয়, মুখস্থ করতে হয়। যাই হোক, যা বলছিলাম, শিক্ষিত না যেহেতু অত যুক্তি দিয়ে সুন্দর করে আমি বুঝাতে পারব না। যে পারবে সে এই লোকটা।’

ফোন বের করে রাজন মানিকের একটা ছবি দেখালো অনি ‘এনার নাম রাজন মানিক। ফ্যাশন ফটোগ্রাফির ওস্তাদ লোক। আমার মতো আবেগী মেয়ের মাথা উনি চিবিয়ে খান বলেও গুজব আছে। ওনার আরেকটা বিষয়ে ওস্তাদি আছে। ভুলভাল যুক্তি দিয়ে মানুষকে ভুলভাল বোঝানো! তো উনি সেদিন আমাকে যুক্তি দিয়ে কাত করে ফেলেছিলেন। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আমিও আপনাকে ভালোবাসি। আমারও তাই মনে হতে শুরু হয়েছিল। ওনার কাউন্সেলিং শুনে আমার উচিত ছিলো তখনি সিনেমা স্টাইলে আপনার কাছে ছুটে চলে আসা। হিহিহি।’

‘আসলে না কেন? ওনার যুক্তি ভুল ছিলো?’

‘অবশ্যই ভুল। আমি দুঃখিত কিন্তু আমার মনের দূর দূরান্তে, আনাচে কানাচে কোথাও আপনি নেই। ওই বিয়েটাই মনে পড়ে না আমার৷ তাই আমি সময় নিলাম। নিজের মন বুঝতে চাইলাম। আপনাকে ভাবতে চাইলাম। সেই শুরুটা ভাবতে চাইলাম। কিন্তু কিছুতেই আপনি আমার ভাবনা, চিন্তা, কল্পনায় আসলেন না। এই রাজন মানিক নামের লোকটাই কল্পনার সবটুকু জুড়ে দাপটের সাথে বিচরণ করে বেড়াতে থাকল। বিয়ে যেটাকে বলে, কল্পনায় স্বামী চরিত্রটা যেভাবে আসে সেখানে বারবার ওই লোকটাই ঢুকে যাচ্ছে। আর আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে, তাকে আমি সেখান থেকে সরাতে চাইছি না এতটুকুও।’

‘আমাকে একবার সুযোগ দিয়ে দেখার কথাটা ভাবা যায় না?’
দেখুন, আমার বয়স অল্প, বুঝিও অল্প৷ কিন্তু আমি আমার নিজের অল্পবুদ্ধিতেই চলি৷ এই অল্পবুদ্ধি আমাকে বলছে, আপনার সাথে আমার সম্পর্কটা স্বাভাবিক স্বামী-স্ত্রীর মতো হওয়াটা কোনোভাবেই সম্ভব না। চাইলেও পাঁচ বছরের দাগটা আমরা মুছে ফেলতে পারব না। এখন আপনি নত হয়ে এসেছেন, এই কথাটা সবসময়ই আমাদের সম্পর্কে থেকে যাবে। এমন হলো যে আমি আপনাকে সুযোগ দিলাম। দিলাম সুযোগ। এটা কিন্তু আর সম্পর্ক থাকল না, সুযোগ হয়ে গেল৷ খুব ভালোবাসায় হয়তো আমাকে ভরিয়ে দিলেন আপনি, কিন্তু আসলে কী হবে জানেন? আমি রাণীর মতো থাকব আর আপনি আমার সব ছেলেমানুষী মেনে নিতে থাকবেন। আমি যাচ্ছেতাই করার স্বাধীনতা পেয়ে যাব, আর আপনি মুখবুজে আমার সব ন্যায় অন্যায় হজম করতে থাকবেন। এই যেমন এখন আমি বলব, এই দেশ ছেড়ে আমি যাব না। আমার ক্যারিয়ার তো এখানে।’

ইমরান ফট করে বলল ‘আমি বলছি না তোমাকে তোমার কাজ ছাড়তে। এটা কোনো সমস্যা না। আমি দেশেই থাকতে পারি। আর বাইরে গেলেও তুমি সুযোগমতো যাবে আমার কাছে, আমিও আসব ছুটিতে। এটা কোনো সমস্যা না। আমি সবটা ভেবে রেখেছি।’

অনি হাসল ‘এই যে দেখলেন আমি বলার আগেই আপনি আমার কথা মেনে নেওয়া শুরু করে দিয়েছেন। আমাদের সম্পর্কের ভবিষ্যতটা ঠিক এরকম। তারপর একসময় আপনি বিরক্ত হয়ে যাবেন, আমারও আর ভালো লাগবে না। পুরো ব্যাপারটা খুব অসুস্থ মনে হচ্ছে আমার।’

‘সহজ করে ভাবলে এত জটিল কিছু না!’

‘আপনি সবকিছু সহজ করে ভাবতে পারেন। এখন এইসময়ে ভাবতে পারছেন, কিন্তু আগামীতেও পারবেন এটা মনে হচ্ছে না। খুব মজার একটা ব্যাপার বলি? এই এখন যে কথাগুলো হলো তার ভেতরই একটা খুব ইন্টারেস্টিং জিনিস আছে। বলব?’

‘হ্যাঁ বলো!’

‘আপনি খুব একচোখাটাইপ। এক্সাক্ট শব্দটা আমি বলতে পারছি না। বুঝিয়ে বলতে চেষ্টা করছি। আমার মনে হচ্ছে আপনি যে জিনিসটা বা যে বিষয়টাতে মনোযোগ দেন, সেটা ছাড়া পারিপার্শ্বিক কিছু আপনার বিবেচনাতে আসে না। যেমনটা আমার সাথে করেছেন। নিজের স্বপ্ন সামনে ছিলো বলে, আমার অপমান, কষ্ট, দুর্দশা আপনার ভাবনায় আসেনি। আজকে আমাকে চাইছেন বলে আমার খারাপ দিকগুলো আপনি দেখতে পাচ্ছেন না। এই অল্পকিছু কথার মাঝেই আমি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছি, আমি রাজন মানিককে ভালোবাসি। আমার চেতনাজুড়ে সে আছে। অথচ আপনি সেটা খেয়ালই করলেন না! এটা আমাকে ভাবাচ্ছে।’

‘ভাবাচ্ছে, কেননা তুমি সম্পর্কটাকে নেগেটিভ ধরেই এসেছ। আর আমি সবকিছুকেই পজিটিভ দেখছি।’

‘কতটা পজিটিভ? মানে, আপনাকে আমি একসেপ্ট করব আবার রাজন মানিককেও ভালোবাসব – এতটা পজিটিভ?’

ইমরানের উত্তর জোগালো না।
অনি হাসল। ‘আপনি কতটা কী মেনে নেবেন জানি না। আপনি মেনে নিলেও অন্যরা মানবে? একটা ছেলে যখন শোবিজে আসে একই ঘনিষ্ঠদৃশ্যে অভিনয় করে সে হয় অনেকের স্বপ্নের নায়ক আর নায়িকাটা পতিতা। একজন নায়িকাকে সামনে থেকে দেখার জন্য সাধারণ মানুষের যতটা পাগলামি, সেই নায়িকাকে সংসারে প্রতিষ্ঠা করা ততটাই কঠিন। আমাদের পথ আলাদা হয়ে গেছে ইমরান সাহেব, একে আর জোর করে মেলানো যাবে না!’

‘অন্য কেউ কী মানবে বা কী মানবে না তাতে আর কী আসে যায়?’

‘কিছু আসে যায় না। আমার কিছু যায় আসে না। আজকে কিছু যায় আসে না। কারণ আজকে আমি নাগালের বাইরে বলে আপনার সমস্ত আগ্রহ শুধু আমাকে পাওয়াতেই। আমি যদি এখন খুব সহজলভ্য হতাম, আপনার আশায় দিন গুণে বসে থাকতাম তবে আপনার এই এতখানি আগ্রহটা থাকত না।’

‘এটা ভুল কথা অনি। সবাই এই ভুলটাই ভাবছে। কিন্তু এমন না। আমি জাপান বসেও জানতাম তুমি আমার হয়েই আছ। হ্যাঁ ভুল ভাবতাম, কিন্তু ভুলটাকেই সত্যি ভেবে আমি আনন্দ পেতাম। আজকের মতো ততটাই চেয়েছি আমি তখনও, আজকেও চাইছি।’

‘আমিও তো এখন আমার সমস্ত নিয়ে একজনের প্রত্যাশায় বসে আছি। তবে বলুন কে জিতবে? আমি না আপনি। শুধু তালাকের কাগজটা ফিরিয়ে এনেছিলেন বলে আপনি জিতে যাবেন? আর কাবিন নামের অস্ত্রটা আমার নেই বলে আমি হেরে যাব?’

‘এখানে হারজিতের কিছু নেই অনি। জাপানে পড়াশোনার চাপে আমি যখন একেবারে দিশেহারা, আরেকটা কোর্সে এডমিশন নিয়ে নিয়েছি, দুটো সাবজেক্ট একসাথে সামলাতে কী প্রচন্ড পরিশ্রম, খুব ক্লান্ত হয়ে পড়লে আমার তখন খুব ফোন পেত। মানে খিদে পাওয়া, ঘুম পাওয়ার মতো ফোন করে তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করত। বলে দিতে ইচ্ছে করত, অনি তুমি আমারই আছো। কিন্তু নিজেকে আবার সামলে নিতাম। যদি একবার তোমার সাথে কথা বলি, বারবার মন চাইবে তাই। মনে হতো তুমি জানো না এটাই তোমার থেকে দূরে থাকার শক্তি আমার। একবার জেনে গেলেই সব শেষ। সব ফেলে তোমার কাছে ছুটে আসতে হবে আমার। ঘরভরা খাবার নিয়ে যেমন রোজার দিনে সংযম রাখি আমরা, আমার চারিদিকে তোমাকে খুঁজে পেলেও আমি ধৈর্য রেখেছি। আমার ভুল এইটুকুই যে তোমার ভুলটা আমি ভেঙে রেখে যাইনি। এই ভুলের ক্ষমা হবে না, অনি? আমি খুব ভালোমতো বুঝে গেছি আমার ভুলের বোঝা বিশাল। বিরাট বোকামো করেছি আমি। কিন্তু না বুঝে করা এই ভুলের ক্ষমা কি এতটাই অসম্ভব?’
দেখুন আমি এটা বুঝতে পারছি না, একটা অন্যায়কে, একটা অপরাধকে না বুঝে করা বোকামোর নাম কীভাবে দিতে পারছেন? আপনার বোকামির দায় আমি কেন নেবো? কোনো মেয়ে বলে না, যেকোনো মানুষকেই কি এতটা টেকেন ফর গ্রান্টেড ধরে নেওয়া যায়, যে আপনি পায়ে দলেমথে এসে সরি বলবেন আর আমি ঘাসফুলটি হয়ে ফুটে থাকব? আশ্চর্য তো, আমাকে নিয়ে ভাবছেন এটাই তো আপনার দুঃসাহস। আমি এত কঠিন করে বলতে চাইনি, কিন্তু মাফ করবেন আমাকে, আপনাকে খুব স্বার্থপর শোনাচ্ছে। আপনি বিয়ে করবেন, আপনি তালাক দেবেন, আপনি তালাক দেবেন না, আপনি ভালোবাসবেন, আপনি ভালোবাসার কথা জানাবেন না, আপনি বোকামি করবেন, আপনি ক্ষমা চাইবেন! সবজায়গায় শুধু আপনি! আর আমার একটাই কাজ ক্ষমা করা! কীসের ক্ষমা চান আপনি? পাঁচ বছর আগে তালাক দেওয়ার অপরাধের নাকী তালাক না দিয়ে আমাকে অন্ধকারে রাখার অপরাধের? নাকী আজকে তালাক দিয়ে আমাকে মুক্তি না দেওয়ার? ছিঃ এত স্বার্থপর কীভাবে হয় মানুষ? সেদিনও আপনি আপনার ভালোটা বাদে কিছু দেখেননি। আজও আপনি শুধু আপনার ভালোবাসাই দেখতে পাচ্ছেন!’ উত্তেজিত হয়ে যায় অনি।

ইমরান ওর হাতটা ধরে ফেলে শক্ত করে। অনি ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও ছাড়ে না, আরো শক্ত করে নিজের বুকে চেপে ধরে। সন্ধ্যার অন্ধকার নামতে শুরু করেছে। রাত আর দিনের মিলন হচ্ছে। আকাশের আবিররঙ মুছে যাচ্ছে একটু একটু করে। খুব মোহনীয় চারপাশটা। ইমরান আস্তে করে বলে ‘সবকিছুর পরেও আমাদের বিয়েটা মিথ্যে না অনি। সেদিন অফিসে যেভাবে অধিকার খাটিয়েছিলাম সেটাও অনধিকার না… তুমিও সেটা জানো…!’

কেঁদে ফেলল অনি। সবদিক ভেঙে কান্না পাচ্ছে ওর। হেঁচকি তুলে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।

মাগরিবের আজান পড়েছে কাছের মসজিদে। অনি অভ্যাসবশত ওড়নাটা মাথায় টেনে নিলো। ছোটো ঘোমটায় অনিকে বউ বউ মনে হলো ইমরানের। অনির চোখের জলে ভেজা চিবুকটা দুইহাতে আলতো ধরে টেনে তুলল। তারপর ফোঁপাতে থাকা ঠোঁটদুটো টেনে নিলো গাঢ়চুম্বনে…

চলবে

Afsana Asha

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here