যখন_এসেছিলে_অন্ধকারে #পর্ব_৪,৫

0
1316

#যখন_এসেছিলে_অন্ধকারে
#পর্ব_৪,৫
Afsana Asha
পর্ব_৪

ছোট একটা খাবারের রেস্টুরেন্ট। বেশ ছিমছাম। হোগলাপাতার বেড়া, বাঁশের চাটাই দিয়ে ডেকরেশন করা। পাটের দড়ি দিয়ে বানানো ল্যাম্পশেড থেকে মৃদু অথচ রঙিন আলোয় চারপাশ মোহনীয় হয়ে আছে। অনি অবাক চোখে তাকাচ্ছে চারিদিকে।

একটু আগে তালাকের কাগজে সইসাবুদ করে এসেছে, নামসই করতে গিয়ে হাপুস করে কেঁদেছে, নাকের পানি চোখের পানিতে ভেসেছে, এমন কোনো চিহ্নই নেই যেন ওর চোখেমুখে।

বিয়ে বোঝার আগেই যে তালাক হলো ওর, এর ভয়াবহতা বোঝার মতো মানসিক পরিপক্কতাও ওর নেই, ভেবে একটু দুঃখিত হলো ইমরান।

এতো ছোটো একটা মেয়ের জীবনে ইমরান নামটা একটা কালো অধ্যায় হয়ে থেকে যাবে চিরদিনের জন্য। অথচ ইমরান তো এমনটা চায়নি।

কাউকে কষ্ট দেওয়ার কথা তো ও ভাবেই না।

মেনুকার্ড প্রায় বানান করে করে পড়ছে অনি। রিডিং স্কিল ভালো না। এই মেয়েকে বেছে এনেছে মা ওর বউ করার জন্য, হেসে ফেলল ইমরান।

ভালো করে দেখল অনিকে।

বয়সে খাটো হলেও উচ্চতা সাড়ে পাঁচেরও বেশি। পাঁচ সাত হবে হয়তো। তাই অতটা ছোটোও দেখায় না।

কাটাকাটা নাক-চোখ, কপালটা বেশ সুন্দর। মেয়েটাকে দেখতে ভালো লাগে।

শুধু ভালো না, বেশ ভালো। নজরকাড়া সুন্দরী বলা যায়। এই যে এখানে বসে আছে, আশপাশটা আলো হয়ে আছে।

পাশের টেবিলে বসা জোড়ার ছেলেটা ঘাড় ঘুরিয়ে দুএকবার দেখার চেষ্টা করেছে অনিকে, তাতে নিজের সঙ্গিনীর তিরস্কারও জুটেছে।

ইমরান পাঁচ এগারো। ওর সাথে অনি বেমানান না। হয়তো পাশাপাশি দেখতে গেলে ইমরানকেই মানায় না অনির পাশে। তবুও ইমরানের বয়স, শিক্ষা, ওর মানসিকতা, ওর ব্যাক্তিত্ব কোনোকিছুর সাথেই অনির মতো অল্পবয়সী মেয়ে যায় না। শুধু বয়স না, স্বামী-স্ত্রীর যোগ্যতার এতোখানি ফারাকও মেনে নেওয়া কষ্টকর ভার্সিটির গোল্ড মেডেলিস্ট ইমরানের জন্য।

স্বামী-স্ত্রী কথাটা ভুল, এমনিতেও নাবালক অনির সাথে বিয়েটা সিদ্ধ ছিলো না ইমরানের দৃষ্টিতে, একটু আগে কাগজে কলমেও সেটা নিপাতনে অসিদ্ধ করে নিলো।

সেই অসিদ্ধ বিয়ের এইমাত্র সিদ্ধ তালাক হওয়া স্ত্রীর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকানোতে নিজের উপরেই খানিক বিরক্ত হলো ও।

মায়ের পাতা ফাঁদেই পা দিয়ে দিতো, তালাকটা না হলে। ভাগ্যিস এই বুদ্ধিটা এসেছিল। নইলে অনিতে আটকে নিজের স্বপ্ন অধরাই রেখে দিতে হতো।

নিজের বুদ্ধিমত্তার উপর এমনিতেই ওর অগাধ বিশ্বাস ছিলো, সেটা আরও এক লেভেল বেড়ে গেল।

অনিতে এই মুগ্ধতা বিপদজনক নয় কিছুতেই, নিজেকেই নিজে বোঝানোর চেষ্টা করল।

ফুটে থাকা গোলাপ বা সুনীল আকাশ, জারুল বাগান বা নদীর ঢেউ, পদ্মপাতা বা পাহাড়ের উচ্চতা – সবকিছুই তো মানুষকে মুগ্ধ করে।

অনির সৌন্দর্যও সেরকম মাতাল করে হয়তো, তাতে এমন তো না সব সৌন্দর্যকে প্রেয়সী বানিয়ে নিতে হবে৷ আর অনিকে তো সেই ছোটবেলা থেকেই চেনা। একেবারে এতোটুকু একটা পিচ্চি থাকতে। একদম পুতুলের মতো দেখাতো। সেই পিচ্চিটাকেই নতুন করে দেখতে গতকালও মন সায় দেয়নি।

অথচ একটা বেলার ভেতর অন্য চোখেই ইমরান অনুভব করতে লাগল অনিকে। মাথার ওড়নাটা আরেকটু টেনে দিয়ে গভীর মনোযোগী ছাত্রীর মতো খাবারের নাম পড়ে যাচ্ছে ও। ভাসা ভাসা চোখের উপরে বাঁকানো ভুরু। গভীর কালো চোখের পাঁপড়ি। প্লাক না করা ভুরুর ভাঁজে ভাঁজে বুনোভাব, একটু আগে কান্নাকাটি করায় চোখের কাজল একটুখানি ম্লান হয়ে ছড়িয়ে গেছে, নাকের কাছে একটু কাজল লেগেও আছে। হাতের আঙ্গুল ছুঁইয়ে মুছে দিতে ইচ্ছে করে ইমরানের, নাকি ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে অনিকেই? কেঁদে সর্দিলাগা নাক কুঁচকে ধরে একটু পরপরই নাক টানছে অনি।

হঠাৎ যেন মাতাল লাগে ইমরানের।

সে কি অনির মনোযোগ হারিয়েছে বলে? নাকি করায়ত্ত অধিকার ফসকে গেল বলে!

এই এতোখানি জংলি সারল্যমাখা সৌন্দর্য অন্য কারো অধিকারে যাবে ভেবে, একটু আগে নিজের আগ্রহে ছেড়ে দেওয়া অধিকারবোধ যেন হুট করেই মাটি ফুড়ে চারাগাছের মতো বেরিয়ে এসে নিজের অবাধ্য পাতাদুটো বেহায়ার মতো নাড়তে শুরু করল।

অনি গেছো, অনি জংলি, অনি অবুঝ হলেও অবাধ্য নয়। আর কিশোরির বিয়ের জল্পনা কল্পনার ফ্যান্টাসি ভেঙে গিয়ে একটা বেলার ব্যবধানে অনি স্তম্ভিত হয়ে গেছে।

নিজের বিস্ময় গোপন করতে নিজেকে খাবারের আইটেমের নাম আর দামের হিসাবে ব্যস্ত করে ফেলেছে।

জোরে জোরে ইংরেজিতে লেখা লিস্ট পড়ে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতেও উঠেপড়ে লেগেছে।

একসময় সাতচল্লিশটা আইটেম পড়া শেষ করে, আর কাজ খুঁজে না পেয়ে, সোজা হয়ে বসে হাতের তালুতে নাক ঘষে ইমরানকে জিজ্ঞাসা করে বসল ‘আমি কি আজকেই বলে দেবো সবাইকে?

একটু হকচকিয়ে উঠল ইমরান, অনির হঠাৎ জিজ্ঞাসায়। অপ্রস্তুত হয়ে জানতে চাইল, ‘কী? কী বলে দেবে?’

আবারও নাক টানল অনি। ‘এই যে তালাক দিলেন আমাকে? আজকেই বলে দেবো নাকি আপনি চলে গেলে বলব?’

ইমরানের সব ফাঁকা লাগল। একটুবা নিজের উপরেই রাগ হলো। রাগটা অনির উপরেই ঝাড়ল। ‘এইটুকু বোঝো না? আজকেই যদি বলবে তো গোপনে করলাম কেন? এতো তাড়া কিসের তোমার?’

অনি বুঝে গেছে ইমরান শুধু অকারণ বকতেই জানে। আগে এমন ছিলো না।

ওদের গ্রামে যখন যেত, আরও আগে, সে সাত আটবছর আগে, তখনো ফ্রক পরে অনি আর হাফপ্যান্ট। তরতরিয়ে গাছে উঠে যেত, পেয়ারাগাছের আঁকাবাঁকা ডাল বেয়ে।

সফেদাগাছে কাঠের তক্তা বেঁধে ও গাছঘর বানিয়েছিল।

জামগাছের মাথায় উঠে যেতো পলকে।

কোচরভরে বরই আনত হয়তো ইমরানের জন্য। দুটো বরই উঠিয়ে নিয়ে আস্তে করে একটু হাসত ইমরান আর সুন্দর করে বলত ‘থ্যাঙ্কিউ পিচ্চি!’

গত সাত আট বছর ধরে আর যায়নি। অনেক অনেক পড়া নাকি!

এই সাত আট বছরে অনেকখানি গম্ভীর হয়েছে আর শয়তান হয়েছে একটা।

কোনো কারণ ছাড়াই বকে। কাল রাতেও বকেছিল। সবাই যখন ঠেলেঠুলে ইমরানের ঘরে পাঠিয়ে দিলো ওকে, ও ভয় আর লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে বিছানার কিনার ঘেঁষে বসেছিল।

তখন ইমরান এসে হিসহিস করে বলেছিল ‘এতো ছোটো মেয়েকে কেউ বিয়ে দেয়? কেন রাজি হলে তোমরা? তুমি মানা করতে পারোনি?’

এমন দাঁত কিটকিট করেছিল যে অনি অসম্ভব ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। এত ভয় পেয়েছিল যে প্রায় দাঁতকপাটি লেগে গিয়েছিল।

এখনও অনেক আস্তে বলল ইমরান কিন্তু এমনভাবে বলল যে ও কেঁপে উঠল। তারপর চুপ করে গেল। আসলেই তো, অনিরই ভুল। লোকটা চলে গেলেই বলবে সবাইকে। আর নিজে চলে যাবে পলাশডাঙায়।

আঁধার ঘনিয়ে আসা মুখটা দেখে ইমরানের ভেতরে তোলপাড় হতে লাগল। খুব ইচ্ছে করল বলতে ‘কাউকে কিচ্ছু বলো না, মেয়ে। আমার বড্ড ভুল হয়ে গেছে!’

কিন্তু ইমরান তো পুরুষমানুষ। মানুষের মস্তিষ্কে কাজ করা সব আবেগের ভিতর অন্যতম জটিল আবেগটার নাম অহংবোধ বা ইগো। সহজ কথায় ‘আমি কেন ছোটো হব?’ এই অহংবোধ তীব্রতর হয় পুরুষে। মেয়েদের মতো অতোখানি দুর্বলতা কি ইমরানের সাজে?

চলবে
Afsana Asha

#যখন_এসেছিলে_অন্ধকারে
#পর্ব_৫

‘আই ওয়ান্ট আ ডিভোর্স!’ এতোটা অতর্কিতে বলেছিল ইমরান যে অনি হঠাৎ করে ‘ডিভোর্স’ শব্দটার অর্থ বুঝে উঠতে পারেনি। লোকটা চাইছে, সেটা কী জিনিস, খায় নাকি মাথায় দিয়ে ঘুমায় বুঝতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল ওর।

গ্রামের দিকে মেয়েদের বিয়ে আগে আগেই হয়। রাস্ট্রের প্রচলিত আইনে অনুমতি নেই। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন দুইহাজার সতেরো অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ের ন্যুনতম বয়স আঠারো, তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ষোলো বছর হতে পারে। এর কম হলে বিবাহসংশ্লিষ্ট প্রত্যেকেরই অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডের বিধান আছে।

যতই আইনি বিধিনিষেধ থাকুক, বয়স লুকিয়ে, আইন ফাঁকি দিয়ে ঠিকই চৌদ্দ থেকে সতেরো বছরের মেয়েগুলোকে বিয়ে দিয়ে পার করে নিশ্চিত হয় বাপ-মা। এই বাচ্চামেয়েগুলো না সংসার বোঝে না বিয়ে। কিন্তু বাপ-মার তো আর দায় নেই। মেয়ের বিয়ে দেওয়াটাই তাদের একমাত্র কর্তব্য। কর্তব্য আর দায়িত্বের চাপে এই মেয়েগুলো কেমন পিষ্ট হয়, তা আর ভাববার দরকার পড়ে না একেবারেই।

ফাঁকেফোঁকরে দুএকজন হয়তো পড়াশোনায় একটু তাক লাগিয়ে দেয়, তাদের বিয়েটা একটু পিছিয়ে যায়।

অনি প্রথম দলের। পড়ালেখার চাইতে দুরন্তপনায় বেশি মনোযোগ।

আর একের পর এক সমবয়সীদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় নিজের বিয়ে নিয়েও ফ্যান্টাসি তৈরি হয়েছিল। ইমরানের সাথে বিয়ের প্রস্তাব কানে আসার পর থেকেই নানারকম ফিল্মি খেয়ালের আকাশে ডানা মেলতে শুরু করেছিল।

বিয়ের রাতেই ইমরানের বাসর রাতের সাথে বেমানান কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল অনি।’কেন’ বলতে চেয়েছিল ও, কিন্তু মাথাটা এতখানিই ফাঁকা ফাঁকা মনে হচ্ছিল যে গলার আওয়াজ কোথায় লুকালো ও খুঁজেই পেল না। বিয়ের নামে পুতুপুতু স্বপ্নগুলো নিমিষেই গুলিয়ে গেল।

‘দেখ পিচ্চি, আমার বাবা, মা জোর করে বিয়ে দিয়েছে আমাকে। এমন না যে বিয়েটা আটকাতে পারতাম না। কিন্তু এব্রোড যাওয়ার আগে আমি কোনো ঝামেলায় জড়ায়ে চাইছিলাম না। স্পেশিয়ালি, বাবা মার সাথে একেবারেই না। তাই জেনেশুনেই বিষ খেয়ে নিয়েছি আমি।’

অনির কাজল আঁকা বড় বড় চোখ ছাপিয়ে উঠতে শুরু করেছিল ইমরানের কথা শুনে তখন ইমরান আরও বলে চলেছে, ‘হ্যাঁ বিষই তো। আমার জন্য তুই বিষের চাইতে কোনো অংশে কম না। রূপবতী হলেই কি আমার সহধর্মিণী হওয়া যায়? একে হাঁটুর বয়সী তায় পড়াশোনায় ক অক্ষর গোমাংস। আমার বউ একটা গেঁয়ো, খ্যাত, আর ক্লাস নাইন ফেল – এ আমি স্বপ্নেও মেনে নিতে পারব না। শুধু সুন্দরী হলেই হয়?’ বাবা মায়ের উপর যত রাগ ছিলো তার সবটুকুই অনির উপর ঢেলেছিল ইমরান।

‘শোন, আমার কোনো শখ নাই রূপবতী বউ দেখিয়ে নিয়ে বেড়ানোর। যে আমার মন, আমার মনের চাহিদা বোঝার মতো হবে না, বুদ্ধি, শিক্ষা, ম্যাচুরিটি থাকবে না, আমাকে বুঝবে না, আমার স্বপ্ন বুঝবে না, আমার সাথে তাল মিলিয়ে চলার যোগ্যতা যার নেই তাকে বউ হিসেবে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। তাই আমার ডিভোর্স চাই। আর এটা শুধু তোর আর আমার ভিতর থাকবে। কালকে আমার সাথে যাবি, সকালেই। সকালেই তালাকনামায় সইসাবুদ যা করার করে আসবি, বুঝতে পেরেছিস?’

অনি কিছুই বোঝেনি তবু্ও মাথাটা বাধ্য ছাত্রীর মতো উপর-নিচে নাড়িয়েছিল শুধু। একবারও জিজ্ঞেস করেনি এই পুতুলখেলা কেন তবে?

ওর মনেই আসেনি।

যখন খুব ছোটো তখন থেকেই ও জানে, পলাশডাঙার মানুষ জানে, ইমরান খুব পড়াশোনা জানা ছেলে। খুব জ্ঞানী। পরীক্ষায় ফার্স্ট ছাড়া সেকেন্ড হয় না৷

এই ইমরান যখন ডাক্তার হলো না, মেডিকেল পড়ল না, তখন সবাই খুব অবাক হয়েছিল, ওদের কাছে বিদ্বান মানেই ডাক্তার, ভালো ছাত্র মানেই সায়েন্স নিয়ে পড়ে।

তারপর যখন বিদেশে পড়তে যাবে শুনল, তখন আগের ধারণাটাই আবার জেগে উঠল।

ঠিক, বিদ্বান বটে ইমরান।

এহেনও বিদ্বান ছেলে, জ্ঞানী ছেলে যা বলবে তাই বিনা সংকোচে সবার মেনে নেওয়া উচিত, কোনো প্রশ্ন না করেই।

অনির তখন মনের ভিতর তাই চলছিল।

ইমরান যখন বলছে তালাক হবে তখন তালাকই ঠিক। অন্য কিছু নয়। নিজের মতো করেই বুঝে নিয়েছিল অনি। তবুও কান্না পাচ্ছিল।

বিয়ের স্বপ্নটা তো মাত্রই দেখতে শুরু করেছিল। আর ইমরান তো সেই স্বপ্নের নায়ক।

নায়করা কি এইভাবে, এতো কঠিন কঠিন কথা বলে নাকি? এইভাবে কি বকে?

কই, ওর বন্ধুদের যাদের বিয়ে হয়েছে, তাদের বরেরা তো কত ভালোবাসে! উঠে আসা কান্না আটকাতে গিয়ে উলটো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে ও।

‘খবরদার অনি। সিনক্রিয়েট করবি না। সিনক্রিয়েট বুঝিস? এমন কিছু করবি না, যেন তোকে অনেক কঠিন কথা শোনাতে হয়। আমিআমাদের বাপ-ছেলের ভেতর তোকে আনতে চাই না, তোকে অপমান করতে চাই না বলেই কাল সকালেই ডিভোর্সের কথা বলছি। কান্নাকাটি করে সব নষ্ট করিস না অনি। কোনো লাভও নেই। আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে নড়ব না। এটাই ভালো হবে, আমরা আলাদা হয়ে যাই।’

ভাঙা ভাঙা গলায় কাঁদোকাঁদো হয়ে অনি শুধু এইটুকুই বলতে পেরেছিল ‘আমার কী দোষ? আপনে সত্যিই আমারে ছাইড়ে দেবেন?’

ইমরান একটু দ্বিধায় পড়েছিল। তারপর ভেবে নিয়ে বলল ‘অনি, তুই ভেবে দেখ, আমার সাথে তোর জুটি যায়? আই মিন, মানায় কোনোভাবে? নিজেকে আমার যোগ্য তোর মনে হয় কোনোভাবে? ভালো করে দেখ। শিক্ষা নেই, বুদ্ধি নেই। চলাফেরা জানিস না, শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলাটাই বলতে পারিস না, গেঁয়ো টান এসে যায়, দুটো কথা ইংরেজিতে বলতে পারবি না। জামাকাপড় কীভাবে পরিস? আমার সাথে তাল মিলিয়ে, মানানসই পোশাকেও চলতে পারবি না। মা বলবে, শিখিয়ে নিতে, কিন্তু আমি তো স্কুল খুলে বসিনি। আজ মায়ের জোরাজুরিতে বিয়ে করেছি, কাল তুই বলবি বাচ্চা! আমার সেই ছাপোষা মানুষ হয়েই কাটাতে হবে জীবনটা। চাকরি করো, বাচ্চা পালো, রিটায়ার হয়ে নাতি পালো। তোর শুনতে অনেক খারাপ লাগছে, আমি সরি চেয়ে নিচ্ছি তার জন্য, তবুও যেটা সত্যি, সেটা ভালোভাবে কানে ঢুকিয়ে নে, আমার সাথে তুই কোনোভাবেই যাস না, আমরা একসাথে থাকতে পারি না। তোর সাথে থাকার কথা আমি ভাবতেই পারি না, আমার রুচিই হচ্ছে না।’

বিয়ের রাতে, ফুলে ফুলে সাজানো বাসরে অতো ভয়ংকর কথাটা বলার পরেও যখন অনি সারাদিনের ক্লান্তিতে হাই তুলে ঘুমিয়ে গেল, ইমরানের নিজের নেওয়া সিদ্ধান্তের উপর আরেকবার শ্রদ্ধাবোধ জেগেছিল।

এই বাচ্চা মেয়েটা কোনোদিক থেকেই ইমরানের বউ হওয়ার উপযুক্ত না!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here