#যখন_সে_আসে
#পর্ব_০২
#Sharmin_Akter_Borsha
______
কানের মধ্যে কারো ফিসফিসানি আওয়াজ ভেসে আসলে লাফিয়ে উঠল আয়ান। ভেবেছিল অন্য কিছু কিন্তু সামনে তাকিয়ে দেখল একটা মেয়ে খুব সুন্দর গায়ের চামড়া ধবধবে সাদা টানাটানা চোখ ঘন কালো লম্বা চুল। চুলগুলো কোমড় পর্যন্ত লম্বা। হাতে তার একটা কৌটে তাতে কি জেনো আছে৷ আমি তারে উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে যাবো। দরজার সামনে কেউ একজন আমার উদ্দেশ্য বললেন, ‘ ওই দিকে কি দেখছো বাবা? ‘
মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকালাম। উনার পরনে পাঞ্জাবি দেখে বুঝে নিলাম সে মসজিদের ইমাম। আমিও তার দিকে তাকিয়ে উৎকন্ঠিত হয়ে বললাম, ‘ কেনো এই যে এখানে একটা মেয়ে বসে আছে তাকে দেখছি ‘
ইমাম সাব প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকায় ক্ষীণস্বরে বলল, ‘ ওখানে তো কেউই নেই ‘
আয়ান চট করে ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকালো। সত্যি সত্যি এখানে কেউ-ই নেই, সে ভয় পেয়ে হুট করে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
পেছন থেকে ইমাম সাব আয়ানের কাঁধে হাত রাখে, চোখ দিয়ে ইশারা করে শান্ত হতে।
ইমাম সাহেব মসজিদের এক কোণায় আসর পেতে বসলেন, আর কাল কি কি হয়েছে সবটা জানতে চাইলেন। আয়ান কিছুক্ষণ নিরব থেকে পূণরায় সব কিছু আবৃত্তি করল। সব কিছু শুনে ইমাম সাহেবের বুক চিড়ে দীর্ঘ শ্বাস বের হয়ে আসে। সব কিছু শোনার পর ইমাম সাহেব কে গম্ভীর ও চুপচাপ দেখে আয়ান পূনরায় প্রশ্ন বাক্য ছুঁড়ে, ‘ কি হলো? আপনি কিছু বলছেন না কেনো? ‘
ইমাম সাব এক নজর আয়ানের চোখের মনি বরাবর তাকালো, তারপর সে পুরো মসজিদের ভেতরে চোখ বুলিয়ে বিস্মিত স্বরে বলল, ‘ আমি যা বুঝলাম, তোমার উপর একটা জ্বীনের আঁচড় নেই। ‘
ইমাম সাবকে থামিয়ে দিয়ে আয়ান ফের বলল, ‘ তাহলে কাল রাতে যা যা আমার সাথে ঘটলো ওই গুলো কি ছিল? ‘
গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘ কেউ কথা বলা শুরু করলে সেটা শেষ পর্যন্ত শোনার পরই মন্তব্য করা উচিত ‘
আয়ান নিচু কন্ঠে বলল, ‘ মাফ করবেন ‘
‘ তোমার উপর এক শক্তিশালী জ্বীন প্রভাব ফেলছে, সে তোমাকে মারতে চাচ্ছে, আর সে কাল রাতে সেটাই করতে চাচ্ছিল। তোমার মনে এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে এত অত্যাচার করার পরও তোমার কিছু হয়নি কেনো? ‘
আয়ান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, ইমাম সাব আবারও বলল, ‘ তুমি কিছুক্ষণ আগে এখানে যাকে দেখেছিলে তোমার গায়ে গাছন্ত ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছিল সেই তোমাকে ওই জ্বীনের হাত থেকে রক্ষা করছে, সেজন্যই শূন্যে ভাসিয়ে ফেলে দেওয়ার পরও তোমার কিছু হয়নি। যে তোমার পাশে বসে ছিল সে কি অধিক পরিমাণে ফর্সা ছিল? ‘
আয়ান মুখে কিছু বলল না, উপর নিচ মাথা নাড়ালো। ইমাম সাব এবার বললেন, ‘ নিঃসন্দেহে সে একটা পরী। তুমি একজন খুবই সুদর্শন ছেলে আর সুন্দর ছেলেদের প্রতি পরীদের ঝোঁক একটু বেশি থাকে। এ আজ নতুন থেকে শুরু হয়নি অনেক আগেই হয়েছিল তুমি বুঝতে পারোনি। বাড়ি গিয়ে দেখো তোমার মা’য়ের কিছুই হয়নি। এটা শুধু একটা ফাঁদ ছিল তোমাকে জঙ্গলে নিয়ে আসার জন্য। ভাগ্য ক্রমে ফজরের আজানের জন্য বেঁচে গেছো। কিন্তু ভাগ্য সবসময় সহায় হয় না। তুমি এখান থেকে গিয়ে ভালো একটা কবিরাজ দেখাও, যাওয়ার আগে এক বোতল পানি আয়ানের হাতে দিয়ে বলে, ‘ এটা জমজম কূপের পানি, যখনই মনে হবে আশে পাশে কেউ আছে (বিসমিল্লাহ) বলে এক ঢোক পানি খেয়ে নিবে, পরক্ষণেই বোতলে পানি ভোড়ে রাখবে। বোতল জেনো খালি না হয়। কোথাও বের হলে সবসময় বুকে আয়াতুল কুরসি দোয়া পড়ে তিনবার ফু দিয়ে বের হবে। রাতে ঘুমানোর আগেও এই প্রক্রিয়া করবে। সবসময় তিনটা ফেরেশতা তোমার আশেপাশে থাকবে। এখন যাও আল্লাহর উপর ভরসা রেখে নিজের বাড়ি ফিরে যাও। আর শুনো ভুলেও এক সপ্তাহের আগে এই রাস্তায় ফিরবে না। কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ দিন সে তোমার অপেক্ষায় এই রাস্তা তেই থাকবে।
আয়ান ইমাম সাবকে সালাম দিলো, ‘ আসসালামু আলাইকুম ‘
সে জবাব দিলেন, ‘ ওয়া-আলাইকুমুস সালাম ‘
আয়ান শুকরিয়া আদায় করে চলে গেলো। আয়ানের যাওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে মসজিদ সহ ইমাম সাব হাওয়ায় বিলুপ্ত হয়ে গেলো।
আয়ান বুকে সাহস নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে চারদিকে সুরসুর করে বাতাস বইছে।আয়ানের এখন আর ভয় করছে না। কিন্তু বারবার মনে হচ্ছে তার পেছনে কেউ আছে৷ রাতে একবার পেছনে ঘুরে যা ভয়ংকর চেহারা দেখেছিল এখন তার পেছনে ঘুরার সাধ মিটে গেছে। ঘুমের মধ্যে ফর্সা মেয়েটি যা গায়ে মাখিয়ে দিয়েছিল তাতে সে আস্তে আস্তে ঠিক সুস্থ হয়ে উঠছে, পেছন থেকে আবারও কেউ মধুলিহ কন্ঠে ডাক দিলো, ‘ আয়ান ‘
আয়ানের পা জেনো আবারও থমকে গেলো। নিস্তব্ধ হয়ে গেলো সারা শরীর। কপাল বেয়ে আবারও ঘামের বিন্দু কোণা চুলের গোড়ায় জমেছে। কিছুদূর সামনে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই জঙ্গলের সীমানা শেস হবে। সামনেই গ্রামের হাট বাজার। আর কিছু টা গেলো আয়ান স্বস্তি পেতো। কিন্তু তার আগেই, হঠাৎ পেছন থেকে কাঁধের উপরে সে তার ঠান্ডা শীতল হাত রাখল, আয়ান চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে এক চিৎকার দেয়। সেখানেই সেন্সলেস হয়ে মাটিতে পরে যায়।
দুপুরের দিকে কারো কান্নার আওয়াজে হুশশ ফিরে পায় আয়ান। সে তো ভেবেছিল তার শেষ সময় এসে গেছে। মাথা ঝিমঝিম করছে, এক হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে উঠে বসল, চারদিকে এক নজর চোখ বুলিয়ে আনমনে বলে উঠল, ‘ আমি কোথায় বেঁচে আছি না মরে গেছি? মরে গিয়ে ভূত হয়ে যায়নি তো? ‘
বলে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দৌঁড়ে রুমের বাহিরে চলে যায়। বাহিরে এসে আরেক ধাক্কা খায়, শাড়ির আঁচল মুখের উপর রেখে কাঁদছে খায়রুল বেগম। আয়ান ভেবে নেয় সে মারা গিয়েছে বলে তার মা এভাবে কান্না করছে। সে হেঁটে তার মায়ের পায়ের সামনে গিয়ে বসে তার মা তাকে দেখে চোখ দু’টো বেরিয়ে আসার অতিক্রম হয়। সে দু-হাত দিয়ে ছেলেকে টেনে বুকের সাথে চেপে ধরে। আয়ান ভয়তে চিৎকার দেয়। খায়রুল বেগম আয়ানকে ছেড়ে দিয়ে দুই গালে হাত রেখে হতভম্ব হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে, ‘ কি হয়েছে বাবা এমন ভাবে চিৎকার করছিস কেন? ‘
তখন হম্বিতম্বি করে আয়ান অস্ফুটস্বরে বলল, ‘ আমি মরি নাই, আম্মা আমি বাঁইচা আছি। ‘
আয়ানের এমন অদ্ভুত কথার মাথা মন্ডু কেউই বুঝলো না। এই কথা মুখে নিয়ে বাড়ির উঠানে কিছুক্ষণ লাফায় আয়ান৷ পরক্ষণেই দৌঁড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে।
আয়ান কিছুটা রিলাক্স হয়, পরবর্তী তে জানতে পারে গ্রামের কিছু লোক তাকে রাস্তায় পরে থাকতে দেখে ধরা ধরি করে বাড়ি নিয়ে আসে। সারাদিন ভালো কাটে আয়ানের তবে বিপরীত ঘটে রাতে,
আয়ান যখন রাতে রুমে একা ঘুমাচ্ছিল তখন সে অনুভব করছে কেউ তার উন্মুক্ত বুকের উপর হাত বুলাচ্ছে, এমনকি কেউ তার বা পাশের দিকে শুয়ে আছে৷ আয়ানকে তার আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে তার সাথে মিশিয়ে নিচ্ছে। পিঠে বুকে কারো হাতের ছুঁই ছুঁই স্পর্শ তাকে ঘুমাতে বাঁধা দিচ্ছে। আয়ান মস্তিস্ক স্থীর করছে, এইসবই সে স্বপ্নে কল্পনা করছে কিন্তু তার ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটে তখন যখন সে বুঝতে পারে৷ তার অষ্টজোড়া চুষে নিচ্ছে তার নিশ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে। বিছানার চাদর দুই হাত দিয়ে খামচে ধরে। আয়ানের চোখের কার্নিশে এক ফোঁটা অশ্রু জড় হয়৷ সে আর সইতে না পেরে শরীর ঝাঁকা দিয়ে চোখ মেলে তাকায়।
হাফ ছেড়ে বাঁচল, এতক্ষণ বুকের উপর পাহাড় চাপা দিয়ে রেখেছিল মনে হচ্ছে। এক হাত বুকের উপর রেখে হাঁপাতে হাঁপাতে জানালার দিকে তাকায়, সেখানে দেখতে পেলো। একটা কালো ছায়া জানালা দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। বাড়িটা হচ্ছে পুরানো দিনের, টিনের বাসা পুরানো দিনের হওয়ায় টিনে জং ধরেছে। বৃষ্টির দিনে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা পরে, কয়েক মাস হয়েছে ভালো জব পেয়েছে তা থেকে কিছু সঞ্চয় করছে বাড়িটা নতুন করে বানানোর জন্য, আয়ান তার মাকে কতবার বলেছে তার সাথে ঢাকা চলে যাওয়ার জন্য কিন্তু সে রাজি হয়নি। তার স্বামীর বাড়ি ছেড়ে সে কোথাও যাবেন না শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত এখানেই থাকবে।
তাই মা’য়ের কাছে প্রতিমাসে দুই থেকে তিনবার তাকে আসতে হয়।
ছায়া মুর্তি টাকে বের হয়ে যেতে দেখার সাথে সাথে আয়ান ‘ মাগো ‘ বলে চিৎকার দেয়। চিৎকার শুনে পাশের রুম থেকে ছুটে আসে খায়রুল বেগম।
দরজায় শক্ত হাতে কড়া নাড়াচ্ছে, আয়ান বিছানা থেকে উঠে দরজা পর্যন্ত যেতে পারে না। কারণ তার আগেই সে জ্ঞান হারিয়ে বিছানায় উপর পরে যায়। ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে সে দরজার বাহিরেই বসে পরে।
দিন যত যাচ্ছে আয়ানের অবস্থা তত খারাপ হচ্ছে, হঠাৎ একদিন আয়ান নিজেই নিজের হাতের উপর,
#চলবে?
____________
কিছু কথা_~
গল্পটা বাস্তব, এই ঘটনা টা যার সাথে ঘটেছিলো তার কাছ থেকেই আমরা সবাই শুনেছি অনেক বছর আগে, আর কাল রাতে হুট করেই আমার এই গল্পটা লিখতে ইচ্ছে হলো, আপনাদের সবার মাঝে তুলে ধরতে মনে চাইলো। অনেক ভাবছেন কাল্পনিক কিন্তু কাল্পনিক নয় সম্পূর্ণ সত্যি ঘটনা। সত্য ঘটনা বলেই আমার একটু লিখতেও সংকোচ বোধ হচ্ছে। কিছুটা ভয় লাগছে৷ জানি না গল্পটা আপনাদের কাছে কেমন লাগছে, যেমনই লাগুক কমেন্ট করে জানাবেন।