#যখন_সে_আসে
#সূচনা_পর্ব
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখনীতে)
রাত প্রায় সাড়ে তিনটা চারদিকে নিস্তব্ধতা অন্ধকার পেছন থেকে ঝুনঝুন ছুনছন নুপুরের শব্দ আমি একা গ্রামের মেঠু পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। আমি আয়ান, বর্তমান বাসস্থান ঢাকা। ঢাকায় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি। মাসে স্যালারি যা আসে তাতে আমারও আমার মায়ের একলা সংসার দিব্যি কেটে যায়। বাবা মারা গিয়েছে কয়েক বছর হলো। এখন আমার সম্পূর্ণ পৃথিবী জুড়ে আমার মা। আজ হঠাৎ সন্ধ্যা বেলায় আমার ফোনে একটা রিং আসলো। নাম্বার টা ছিল আননোন প্রথমে কল রিসিভ করতে চাইনি। পরে কল কেটে দিতেও মন চাচ্ছিল সেজন্য রিসিভ করে কানে লাগাতেই অপরপাশ থেকে এক চেনা পরিচিতর কন্ঠ স্বর ভেসে আসে, আমি তাকে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে সে বলে, ‘ আমি তোমার প্রতিবেশি কলি খালা বলছি, তোমার মায়ের শরীর ভীষণ খারাপ তুমি জলদি চলে আসো। তোমার মা তোমাকে বলতে বারণ করেছিল অবস্থা বেশি খারাপ বলে আমি নিজেই তোমাকে জানালাম। ‘
আমি মা’কে কত করে বলেছি নিজের কাছে একটা ফোন রাখতে কিন্তু তাতে তার ভীষণ আপত্তি, আজ নিজেরই মায়ের অসুস্থতা অন্য আরেকজনের কাছ থেকে শুনতে হচ্ছে। খবরটা পাওয়ার পর কোনো কিছু চিন্তাভাবনা করার সময়ই পাইনি। মানিব্যাগে পাঁচশত টাকা ছিল সেটা নিয়েই বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরি। ঢাকা থেকে বাসে উঠে ছিলাম। এক ঘন্টা তো হবেই আমাদের গ্রামের থেকে অনেক দূর বাসস্ট্যান্ড সেখানে নামিয়ে দিয়ে বাস চলে যায়। বাস থেকে নেমেও অনেকটা পথ ব্যান গাড়ি করে আসতে হয়। দুই তিন মিনিট হাঁটতেই একটা ব্যান গাড়ি পেয়ে গেলাম। তাতে চড়ে আরও কিছু পথ আসলাম। চাচা বেশ হাঁপিয়ে গেছে তাকেও তো বাড়ি ফিরতে হবে তাই সে আর যেতে চাইলো না। আমিও জোর করিনি, তাকে তার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে হাঁটতে শুরু করি। এমনিতে আমি খুব সাহসী তবে আজ কেনো জানি মনের মধ্যে একটু একটু ভয় বাসা বাঁধছে। প্রায় দুই ঘন্টা ধরে হাঁটছি কিন্তু এই রাস্তা জেনো শেষই হচ্ছে না অথচ আমার মনে হচ্ছে আমি ঘুরে ঘুরে বারবার একই জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছি। আর প্রায় এক ঘন্টা আগে থেকে কানে নুপুরের শব্দ আসছে। মা সবসময় বলতো একা চলার পথে, পেছন থেকে যদি কেউ ডাক দেয় তবে জেনো পেছনে ঘুরে না দেখি, আর যদি কোনো কিছুর শব্দ কানে আসে তবুও জেনো পেছনে না ঘুরে তাকাই। আমি এইসব কখনোই বিশ্বাস করতাম না বন্ধুরা এগুলো নিয়ে কথা বললে উল্টে আমি হাসিঠাট্টা মজা করে উড়িয়ে দিতাম। কিন্তু আজকে আমার সাথে অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘঠছে। আমার মস্তিষ্ক বলছে পেছনে ঘুরে দেখতে কে নুপুর পায়ে হাঁটছে কিন্তু মন বলছে মা’য়ের কথার অমান্য না হতে। যদি কখনো আমি দ্বিধাদ্বন্দে মন আর মস্তিষ্কের মাঝে পরে যাই তখন আমি শুধু মনের কথা শুনি। তাই মনের কথা শুনেই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
হঠাৎ করেই পেছন থেকে নুপুরের শব্দটা আসা বন্ধ হয়ে গেলো। আমি জেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। কিছুপথ হাঁটার পর সামনে দেখি একটা কুঁজো বুড়ি লাঠি ভোড় দিয়ে এদিকেই হেঁটে আসছে। আমি তো মহা খুশি এই একা রাস্তায় যাওয়ার জন্য একজন দাদী তো পেলাম। গল্প করতে করতে বাকি পথ চলে যাবো ভেবে জলদি জলদি পায়ে তার দিকে যেতে লাগলাম। হঠাৎ করেই আমার হাঁটা বন্ধ হয়ে গেলো।
রাস্তার দুই পাশে ঘন জঙ্গল আশেপাশে মানুষ তো দূরের কথা মানুষের ছায়া পাওয়া ও মনে হয় মুশকিল। সেখানে আয়ান কুঁজো বুড়ি দেখে অবাক না হয়ে খুশি হলো তার কাছে কি সন্দেহ জনক লাগেনি?
সামনে তাকিয়ে দেখল বুড়ি টা আসতে আসতে লম্বা হতে লাগল তার হাত পা লম্বা হতে হতে সে অনেক টা লম্বা হয়ে গেলো। বুড়িটা আমার থেকে বেশ অনেকটা দূরে চাঁদের জ্যোৎস্না মাখা আলোয় সবটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বুড়িটা হঠাৎ করে একটা কালো ঘোড়ায় পরিনত হয়ে গেলো। ঘোড়া টা দৌঁড়ে আয়ানের দিকেই আসছে। আয়ান নিজের চোখের সামনে এগুলো দেখে সে বাক প্রতিবন্ধি হয়ে গেছে। ঘোড়া টি দৌঁড়ে এসে আয়ানের ঠিক সামনে দিয়ে বা পাশের জঙ্গলের দিকটায় নেমে যায়। কিছুক্ষণ পর্যন্ত ঘোড়ার পায়ের শব্দ শোনা যায় তারপরে আবার পুরো রাস্তা নিস্তব্ধতায় গেয়ে যায়। আয়াতুল কুরসি চারকুল সূরা পড়ে বুকে ফু দেয় আয়ান। সে জেনো এখনও নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার পা পাথরের মতো ভাড়ি হয়ে গেছে। সে জেনো বরফের মতো জমে গেছে হাঁটতে পারছে না এক কদমও তবুও নিজের সর্বশক্তি দিয়ে হাঁটার চেষ্টা করে। কপাল বেয়ে ঘাম জড়ছে, চুলের গোড়ায় গোড়ায় ঘামের বিন্দু বিন্দু জল জমেছে। ভয়ে শুকনো ঢোক গিলছে আয়ান। কপাল বেয়ে ঘাম চিবুক পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, শার্টের পেছন ও সামনের দিক দিয়ে ভিজে চিপচিপে হয়ে গেছে। এই অবস্থায় আরও দশ মিনিট হাঁটল আয়ান। উপর দিয়ে নিজেকে সাহসী প্রমাণ করার চেষ্টায় সফল হলেও ভেতর দিয়ে সে ভীত দিশাহীন বোধ করছে। আরও কিছু পথ হাঁটার পর সে একটা বট গাছের পাশে এসে পৌঁছালো। রাস্তার পাশে এ বট গাছ আয়ান আগে কখনো দেখেনি। সে নিজেও জানে না সে কোন পথে হাঁটছে আর কোন দিকে এসে পৌঁছাচ্ছে সব কিছুই জেনো তার কাছে গোলকধাঁধার মতো গুলিয়ে যাচ্ছে।
বট গাছের সামনে আসতেই আবার কানে ভেসে আসল সে নুপুরের আওয়াজ এই বার জেনো আওয়াজ টা অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেলো। বট গাছটার দিকে তাকাতেি আয়ান হতভম্ব হয়ে গেলো। গাছের প্রতিটা ঢালে অগুণতি বেগুনি রঙের বাতি জ্বলছে। সাথে গাছের আড়াল থেকে নুপুরের আওয়াজ। সব মিলিয়ে আয়ান অধিক ভয় পেয়ে যায়। সে সোজা সামনের দিকে দৌঁড় লাগায়। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে সে অনেক দূর চলে আসে। এখন আর কোনো রকমের আওয়াজ তার কান অব্ধি আসছে না। মাথা তুলে সামনে তাকালো। নিস্তব্ধ রাস্তা, ঘাড় ঘুরিয়ে বা পাশে তাকালো। বিপত্তি তখনই হলো যখন ঘাড় ঘুরিয়ে ডান পাশে ঘুরলে। ডান পাশে মাথা ঘুরিয়ে তাকালে দেখতে পেলো। এক বিশাল কবরস্থান এখানে না জানি কত শতশত মানুষের কবর। জায়গা ভীষণ ভয়ানক। আশপাশে থেকে জংলী জানোয়ারদের চিল্লানোর আওয়াজ ভেসে আসছে। কিছু ডাক কুকুর ও শেয়ালের বুঝা যাচ্ছে বাকি গুলো কিসের তা আন্দাজ করা মুশকিল। কবরস্থানের মধ্য খান থেকে একটা গলাকাটা লাশ হেঁটে আয়ানের দিকে আসছে। গায়প সাদা চাদর গলার কাটা, গলার কাটা অংশ দিয়ে গলগল করে রক্ত উপচে পরছে। সে বড় বড় পা ফেলে আয়ানের দিকেই যাচ্ছে। আয়ান নিজের জীবন বাঁচানের জন্য আবারও সোজা সামনের দিকে দৌঁড় লাগায়। পেছনে পেছনে সে গলা কাটা লাশটাও দৌঁড় দেয়। কিছুদূর আসার পর লাশটা উধাও হয়ে যায়। কিন্তু আয়ানের দৌঁড় থামেনি সে এখনো দৌঁড়ে যাচ্ছে। ভয়ে তার আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে দেহ থেকে এখনই আত্মা টা বের হয়ে যাবে। গা থেকে ঘাম জড়ে শার্ট প্যান্ট দু’টো ভিজে গেছে। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। কপালের উপর এসে পরে রয়েছে। ঘামে ভেজায় চুলগুলো কপালের সাথে লেপ্টে রয়েছে।
উপরের দিকে তাকিয়ে দৌঁড়াচ্ছিল আয়ান। হুট করে মাঝপথে হুচট খেয়ে পরে যায়। কিসের সাথে হচট খেয়েছে দেখতে নিলে দেখে একটা গাছের ডাল মাঝ পথে ফেলে রাখা হয়েছে। ডালের সাথে পা লেগে কেটে যায় এতে আয়ানের পায়ে অনেকটা ক্ষত হয়।
সে ক্ষত স্থানে হাত ছুঁয়ে দিয়ে উঠে আবারও দৌঁড় দিতে নিবে তখনই কে জেনো তার পা ধরে নিলো এতে আয়ানের ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়।
হুট করে হিচকা টান মেরে আয়ানকে শূন্যে ভাসিয়ে ফেলে। তারপর আয়ানকে জিছুটা দূরে পাথর যেমন ঢিল মারে তেমনই ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এতে আয়ানের হাত পা ভেঙে যাওয়ার কথা কিন্তু তার কিছুই হয়নি। অবশ্য হাতে পায়ে অনেক ব্যথা সে পায়। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে বারং বার। ‘ #অদৃশ্য_সে ‘ বারবার আয়ানকে শূন্যে ভাসিয়ে তুলছে আবারও দূরে ছুঁড়ে ফেলছে। মাঝেমধ্যে এক বিচ ছিঁড়ি হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। ‘ #অদৃশ্য_সে ‘ জেনো আয়ানকে ছুঁড়ে ফেলে মজা পাচ্ছে। সেটা তার ভয়ানক হাসির শব্দে প্রকাশিত হচ্ছে। শরীরে প্রচন্ড রকমের ব্যাথা অনুভব করছে আয়ান। সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। #অদৃশ্য_সে তাকে নিয়ে মৃত্য_খেলায় মেতে উঠেছে আর আয়ানকে নিজেকে বাঁচাতে হলে এখান থেকে পালাতে হবে। নিজের শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি হারিয়ে ফেলেছে আয়ান। তবুও পালানোর জন্য শক্তি সঞ্চয় করে। আয়ানকে আবারও শূন্যে তুলে আরও দূরে ছুঁড়ে ফেলে। আয়ান নিজের শক্তি ব্যয় করে উঠে দাঁড়ায়। সামনেই একটা মসজিদ দেখা যাচ্ছে আর তাতে লাইটও জ্বলছে। আয়ান সেখানে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই পেছন থেকে এক মিষ্টি মধুর স্বুর ভেসে আসে সে বলল, ‘ আয়ান ‘
এত মধুর ডাক আয়ান আগে শুনেনি। সে পেছনে ঘুরে তাকালো একনজর তাকিয়ে সে চিৎকার দিয়ে সেখানেই জ্ঞান হারালো।
সামনে তাকিয়ে দেখলো, এক ভয়ংকর ও কুৎসিত চেহারা। চুলগুলো সাদা চোখগুলো অনেক বড়সড় চোখের মনি একটা বের হয়প জুলে আছে মুখে নাক নেই। নাকে সে তো কপালে চোখ একটা বাহিরে জুলে আছে সেটা পুরো মুখের অর্ধেক জায়গা দখল করে রাখছে। অন্য চোখ সে ওই চোখের থেকে সামান্য ছোট।
মুখ নেই শুধু বিচ ছিঁড়ি দাঁত গুলো দেখা যাচ্ছে হা করে আছে। শরীরে তেমন কিছুই নেই শুধু একটা সাদা কাপড়ের টুকরো তিন পেজ দিয়ে গায়ের সাথে জড়িয়ে রাখছে। তার শরীর জেনো পুরো টা কঙ্কাল মুখটা সাংঘাতিক ভয়ানক।
জিনিস টা উড়ে গিয়ে আয়ানের বা পা ধরে শূন্যে তুলতে যাবে তখনই মসজিদের মাইকে ইমাম সাহেব আজান প্রচার দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে #অদৃশ্য_সে আয়ানের পা ছেড়ে চিৎকার দিয়ে চলে গেলো।
আয়ানকে কেউ কোলে করে তুলে নিয়ে এসে মসজিদের সামনে শুয়ে দিয়ে চলে যায়। তবে সে কে অজানা।
ইমাম সাহেব আজান শেষ করে বাহিরে এসে দেখল। একটা ছেলে শরীরে তার হাজারও ক্ষত শার্ট প্যান্টের অবস্থা নেই। ইমামের বুঝতে অসুবিধা হয়নি ছেলেটার সাথে কে এমন করেছে। সে কিছু দোয়া দুরুদ পড়ে আয়ানের বুকে ফু দেয়। আয়ানকে দু-হাত দিয়ে ধরে নিয়ে। মসজিদের ভেতরে চলে যায়। তারপর ইমাম সাহেব আয়ানকে,
চলবে?
(বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম রিডার্স। সর্বপ্রথম আমার লেখা কোনো ভৌতিক গল্প। আশা করি আপনাদের সবার ভালো লাগবে। আর হ্যাঁ অবশ্যই ঘটনা মূলক মন্তব্য করে নিজেদের মন্তব্য জানাবেন। গল্পটা আপনাদের কেমন লাগল। গল্পের ভালো মন্দ দুইটা দিকই তুলে ধরবেন। সবার ভালো রেসপন্স না পেলে আমি পেইজ থেকে গল্পটা ডিলিট করে দেবো হুহহ, গল্প পড়ে চলে যাবেন না কমেন্ট করে জানিয়ে যাবেন গল্পটা কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে।
রি-চেইক করতে পারিনি, ভূলক্রুটি সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)