যদি_দেখা_না_হতো #পর্ব_১৬ (#Season_02)

0
187

#যদি_দেখা_না_হতো
#পর্ব_১৬ (#Season_02)
#Writer_Tanisha_Esu


সব নিয়ম মেনে কাজ করে আয়ুশির গায়ে হলুদ সমাপ্ত হলো,,,,আজ রাত আয়ুশি আদির সাথে কথা বলেই পার করেই দিবে এমন ভাব,,,

তানিশা নিজের রুমে এসে খোলা চুলগুলো বেনুনী করলো তারপর আয়নার সামনে তাকিয়েই আছে,,নিজেকে নিজেই চিনে উঠতে পারছে না বাকি যা আছে সেখানে শুধু শুভ্রের স্মৃতি মাখা,,চাইলেও যে সে কখনোই শুভ্রের কাছে যেতে পারবে না।

তানিশাঃ কাল বিয়ে,সকাল সকাল উঠতে হবে ঘুমিয়ে পরি

তানিশা এসে শুয়ে পরে।কি আজব পৃথিবী কোথাও খুশি.. কোথাও দুঃখ,,কেউ ভালো না থেকেও হাসি নিয়ে বেঁচে থাকে আবার কেউ ভালো খবরের জন্য হাসতে থাকে,,কারোর সংসার ভাঙছে আবার কারোর সংসার শুরু হচ্ছে,, কেউ প্রিয় মানুষটার সাথে সারারাত কথা বলছে আবার কেউ প্রিয় মানুষটার সাথে কথা বলার জন্য ছটফট করছে,,,,সুখ ৩০% বাকি ৭০% কষ্ট……..

অন্যদিকে,,,

আরিয়ানঃ ভাই কাল একটা বিয়ের দাওয়াত আছে তুই আমার সাথে যাবি ওকে

শুভ্রঃ ভালো লাগছেনা তুই যা

আরিয়ানঃ প্লিজ চল না তুই না গেলে ভালো লাগবে না

শুভ্রঃ বললাম না আমি কোথাও যাবনা(মোবাইলের দিকে তাকিয়ে)

আরিয়ানঃ ওকে আমিও যাব না

শুভ্রঃ তুই কেনো যাবি না??

আরিয়ানঃ তুই না গেলে আমিও যাব না

শুভ্রঃ বিয়েটা কার???

আরিয়ানঃ আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড আদির

শুভ্রঃ ওও আচ্ছা,, ওকে যাবোনে

আরিয়ানঃ প্রমিস (খুশি হয়ে)

শুভ্রঃ ওকে প্রমিস,, এখন যা ঘুমিয়ে পর

আরিয়ান রুমে এসে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো,,,

আরিয়ানঃ আমি চাই ভাইয়া তোর সব সত্যি তানিশা ভাবি জানুক,,,আদি না থাকলে তো সব জানতেও পারতাম না,,আর আয়ুশি ভাবিও সত্যিই জেনে খুব খুশি হয়েছিলো ,,, শুধু কালকের দিনের অপেক্ষা (মনে মনে)

কিছুদিন আগে,,,,

আরিয়ান,,, আদি আর আয়ুশি ঘুরতে এসেছিলো,,এমন সময় আরিয়ানের গ্যালারি ঘাটতে ঘাটতে হঠাৎ শুভ্রের পিক দেখে আদি ও আয়ুশি চমকে উঠে,,

আদিঃ আরিয়ান এই ছেলেটা কে??

আরিয়ানঃ এটা আমার মামাতো ভাই শুভ্র

আদিঃ তাহলে তানিশা তোর ভাবি হয়

আরিয়ানঃ হুম কিন্তু তুই তানিশা ভাবিকে কিভাবে জানলি(অবাক হয়ে)

আয়ুশি সব খুলে বললো আরিয়ানকে,,,,,,,,,,,,

আরিয়ানঃ তোমরা শুভ্র ভাইয়াকে ভুল বুঝছো,,আমি ছাড়া এই সত্যিটা কেউ জানেনা,,,কেনো তানিশা ভাবিকে দূরে সরিয়ে দেয় শুভ্র ভাইয়া…

আয়ুশিঃ কেনো??

আরিয়ান সব সত্যি আদি আর আয়ুশিকে বললো,,আয়ুশি কেঁদে ফেলছিলো সব শুনে,,

আদিঃ মানে,, এরা একে অপরকে ভুল বুঝে দূরে সরে আছে,, আবার দুজনই কষ্ট পাচ্ছে,,,এদের মিল করাতেই হবে যে করেই হোক না কেনো,,আর সাবরিনাকে যে করেই হোক দূরে সরাতে হবে

তারপর তিনজনে মিলে প্লান করলো,,কিভাবে তানিশা আর শুভ্রকে মিল করা যায়….

পরের দিন,,,

আজ আয়ুশি আর আদির বিয়ে,,আয়ুশি সাজাতে পার্লারের মেয়েরা এসেছে খুব সুন্দর করে সাজাচ্ছে।

আয়ুশিঃ আপনারা একটু তানিশাকে সাজিয়ে দিন

তানিশাঃ আমার ভালো লাগছেনা না

আয়ুশিঃ তুই কি আমার শেষ ইচ্ছেটা ও রাখবি না(মন খারাপ করে)

তানিশাঃ শেষ ইচ্ছে মানে

আয়ুশিঃ আমার তো বিয়ে হয়ে গেলে তোর থেকে দূরে সরে যাব,,প্লিজ আমার রিকুয়েষ্ট টা রাখ

তানিশাঃ আচ্ছা

পার্লারের মেয়েরা তানিশাকে সাজাতে লাগলো,,তানিশার সেই পুরোনো কথা মনে পরতে লাগলো,,মোটেও ভালো লাগছেনা কিন্তু আয়ুশির জন্য কিছু বলতেও পারছেনা

আয়ুশিঃ তোকে আজ সাজালে অতীত মনে পরবে ,,,সরি বোন তোর কষ্ট হলেও তোদের মিল করতে হলে এতোটুকু কষ্ট দিতে হবে (মনে মনে)

বেশ কিছুক্ষণ পর বর পক্ষ চলে আসলো আর আয়ুশিকে আদির পাশে বসানো হলো,,আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব আসতে লাগলো আর আয়ুশির সাথে পরিচয় হতে লাগলো,,,আর ক্যামেরা ম্যান তো আছেই দুজন এবং বাকিদের ছবি তোলার জন্য…

হঠাৎ,,

শুভ্র আর আরিয়ান আসলো এবং আয়ুশি আর আদির সামনে দাড়ালো,,আরিয়ান আদির হাতে গিফ্ট দিলো,,,

আরিয়ানঃ তো দোস্ত তোর সিঙ্গেল নাম একেবারে ঘুচে গেলো

আদি হাসতে লাগলো,,

শুভ্রঃ এই আদির সাথে তানিশার বান্ধবী আয়ুশির বিয়ে কিন্তু আমি তো ভেবে ছিলাম এই ছেলেটা তানিশার হাজবেন্ড,, তাহলে তানিশা কি এখনো বিয়ে করেনি আর তাহলে ওর পেটে যে বেবি সেটা কি আমার???(কিছুই হিসাব মিলাতে পারছে না)

আদিঃ আপনাকে স্টেচ লাগছে ঠিক আছেন তো

শুভ্রঃ হুম( শান্ত হয়ে)

তানিশা আয়ুশিকে ডাকতে এমন সময় শুভ্রকে দেখে থমকে যায়,,,,

আয়ুশিঃ মাশা-আল্লাহ,, তানিশা তোকে তো অনেক সুন্দর লাগছে

তানিশাঃ তোরা ওই রুমে চল কাজি সাহেব সব রেডি করে রেখেছে( নিচের দিকে তাকিয়ে)

সবাই এখন অন্য রুমে গেলো আয়ুশি আর আদি সামনা- সামনি বসে আছে।আর একটু পরই বিয়ে পড়ানো শুরু হবে তানিশার খুব খারাপ লাগছে তাই সেখান থেকে নিরিবিলি রুমে চলে আসলো।অতীতের সব যেন চোখের সামনে ভাসছে।

শুভ্র তানিশার পিছু করে রুমে এসে রুম লক করে দেয়,,গেট লাগানোর আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দেখে শুভ্র অবাক নয়নে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে,,,

তানিশাঃ কি করছেন আপনি,,গেট লাগাচ্ছেন কেন??

শুভ্রঃ এই বেবির বাবা কে??

তানিশাঃ কে আবার আমার সাজবেন্ড

শুভ্রঃ তুমি এখনো বিয়ে করোনি তাহলে হাজবেন্ড আসলো কোথা থেকে বলো,,এর বাবা কে??

তানিশাঃ যেই হোক না কেনো আপনার কি

শুভ্রঃ আমাকে রাগিও না তানিশা,,বলো কে এই বেবির বাবা আমি তাইতো,,একবারও বলার প্রয়োজন করলে না

তানিশাঃ আপনি শোনার ইচ্ছে করেছেন কখনো

শুভ্রঃ মানে??

তানিশাঃ সেদিন আপনাকে বলেছিলাম আমার কিছু বলার আছে আপনাকে তারাতারি বাড়িতে ফিরবেন,,, আসলেন ঠিকি কিন্তু আপনি আমাকে কি কি বলেছিলেন মনে নেই আপনার?? এখন আপনার আর আমার পথ আলাদা,,আমার থেকে দূরে থাকবেন( এক নিশ্বাসে)

শুভ্র ধপ করে বেডে বসে পরলো,,,সে যে একটা বড় ভুল করে ফেলেছে,,যার কোন কুল কিনারা পাচ্ছে না….

শুভ্রঃ তানিশা আমার একটা কথা শুনবা প্লিজ

তানিশাঃ আপনার কোন কথা শোনার মতো ইচ্ছে নাই আমার,,

শুভ্রঃ প্লিজ তানিশা( চোখ থেকে অনবরত পানি পরছে)

তানিশাঃ আপনি তো ওই সাবরিনার সাথে জীবন শুরু করেছেন,, কেন আবার আমার কাছে আসতে চাচ্ছেন ,, আমাকে না মেরে ফেললে আপনার হচ্ছে না

শুভ্রঃ Shut up,,just shut up Tanisha… আমি কারোর সাথে কোন সম্পর্কে জড়াইনি,,,ইভেন সেদিন যা যা বলেছিলাম সব মিথ্যে

তানিশাঃ মিথ্যে মানে???

এইবার শুভ্র সব সত্যি বলে দিলো,,আর একটা কথাও গোপন করলো না,,তানিশা সব শুনে কাঁপতে লাগলো,,

তানিশাঃ আপনি কেনো আমাকে সেইদিন বলেননি

শুভ্রঃ আমার কাছে তোমার জীবন বেশি মুল্য ছিলো তানিশা,,আমার মাথায় কোন কাজ করছিলো না

তানিশাঃ যাই হোক আপনার আর আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে,,এখন আমি আর চাইনা আপনার হতে।আর, আপনি সাবরিনাকে বিয়ে করে নিন..

শুভ্রঃ একটা থাপ্পড় দিয়ে তোমার দাঁত ফেলাই দিবো বেয়াদব মেয়ে

শুভ্রের ধমক শুনে তানিশা বেশ অবাক হয়ে উঠলো,,হঠাৎ কেনো বকলো এটাই বুঝে উঠতে পারছে না তানিশা??

তানিশাঃ এই আপনি আমার সাথে এমন করে কথা বললেন কেনো?? আমি কি আপনার বউ নাকি

শুভ্রঃ হুম তুমি আমার বউ

তানিশাঃ কিভাবে??(রেগে)

শুভ্রঃ আমাদের ডিভোর্স ই হয়নি

তানিশাঃ মানে??

শুভ্রঃ আবুল মেয়ে ডিভোর্সের পেপারটা কি ভালো ভাবে পড়েছো কখনো?? আমি সাইন করেছি মানেই আমি ডিভোর্স দিয়ে দিছি,,,ওটা রেজিট্রি পেপার ছিলো আমি এক্সচেঞ্জ করে দিছিলাম,,মানে বুঝো তোমার আর আমার ৩ বার বিয়ে হয়ছে

তানিশা এবার পুরোই অবাক হয়ে গেলো,,আর কিছু ভাবতে পারছেনা শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলো।

শুভ্রঃ i am sorry Jan,,,অনেক কষ্ট দিছি তোমাকে,,বিশ্বাস কর তোমার থেকে আমি অনেক গুণ কষ্ট পেয়েছি।আমি প্রমিস করছি তোমার আর আমার বেবিকে কষ্ট দিবো না,,ভালো বাবা হইয়ে দেখাবো

তারপর দুজন স্বাভাবিক হয়ে এসে দেখে আয়ুশি আর আদির বিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে গেছে।

আয়ুশি আদি,,আরিয়ান,,শুভ্র আর তানিশা একটা রুমে আসে আয়ুশির কথা মতো,,

আয়ুশিঃ কি মিল হয়ছে আপনাদের

আয়ুশির কথা শুনে তানিশা আর শুভ্র বেশ অবাক হয়ে উঠলো,,,একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে

আদিঃ আরে আর লজ্জা পেতে হবেনা

তানিশাঃ তোমরা সব জানতে

আরিয়ানঃ আরে তোমাদের মিল করাতে আমরা তিনজন প্লান করে করেছি

শুভ্রঃ?????

আরিয়ান সব বলে,, সব শুনে শুভ্র আর তানিশা আরেকটা শকড খায়।

আদিঃ আর আরিয়ান সবাই তো বিয়ে করে নিলো,,তানিশা আর শুভ্র ভাইয়ার মিল হয়ে গেলো আবার আমার আর তোর ভাবির বিয়েও হয়ে গেলো তুই কি সিঙ্গেলই থাকবি

আরিয়ানঃ কে বললো আমি সিঙ্গেল,,আমার তো জিএফ আছে আর তানিশা ভাবি রাজি থাকলেই বিয়ে করবো

তানিশাঃ আমার রাজি মানে??

আরিয়ানঃ মানে,,আপনার বোন মেহেন্তা আমার জিএফ (মাথা নিচু করে)

শুভ্রঃ তুই কি মেহেন্তার সম্পর্কে সব জানিস

আরিয়ানঃ হুম সব বলেছে ও আমাকে,,আমার মনে হয় ওকে বাঁচার জন্য আরেকটা সুযোগ দেওয়া উচিত,, আমিও ওকে অনেক ভালোবাসি,,সেও

তানিশাঃ আমার কোন আপত্তি নেই তোমার আছে নাকি??

শুভ্রঃ আরে নাহহ,,, আর মেহেন্তা অনেক লাকি বুঝলা,,এতো কিছু হয়ে গেলেও সব মেনে নিয়ে একজন ভালোবাসার মানুষ পেয়েছে

আদিঃ বুঝলে সবাই,, আরিয়ান পাগল সেজে সন্দেশ খাই

আদির কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো মন খুলে,,,

অন্যদিকে,,

সাবরিনাঃ এই শুভ্রের লোকেশন ট্রাক কর,,, আজ কেনো ফোন ধরলোনা।ও যেখানে আছে আমি সেখানে যাব

সাবরিনার বাবাঃ চিন্তা করিস না ওই শুভ্র তোর পায়ে এসে পরবে।

——-

আয়ুশির বিদায়ের সময় আয়ুশি তানিশাকে জড়িয়ে অনেক কান্না করে,,,,,,,,,,,

তানিশাঃ আরে পাগলি এতো কাঁদছিস কেনো হুমম,,তুই তো সারা জীবনের জন্য যাচ্ছিস না

আয়ুশিঃ তুই থাকবি তো আমার পাশে সারা-জীবন

তানিশাঃ হুম অবশ্যয়

বেশ কিছুক্ষণ পর আয়ুশি বিদায় হয়ে গেলো,,একে একে সবাই চলে গেলো,,আয়ুশির পরিবার ও রওনা দিলো নিজের বাড়িতে।বাড়িতে আজ শুধু শুভ্র আর তানিশা,,আরিয়ান অনেক আগেই চলে গেছে,, কারণ তানিশা আর শুভ্রকে একটু টাইম স্পেন্ড করতে দিতে হবে,,,,,,,,,,,,,,,


চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here