#যদি_দেখা_না_হতো
#পর্ব_১৮ (#Season_02)
#Writer_Tanisha_Esu
★
হঠাৎ বন্ধুক থেকে একটা গুলি লাগে মাথায় আর লুটিয়ে পরে মাটিতে সাবরিনা,,,
সবাই ভয় পেয়ে যায় গুলির শব্দে,,সামনে তাকিয়ে দেখে কাব্য
মেহেন্তাঃ কা,,,কাব্য (অবাক হয়ে)
হাতে বন্দুক নিয়ে দাড়িয়ে আছে,, মুখে অতিরিক্ত রাগের ছাপ,, দাড়িগুলো বেশ বড় হয়ে গেছে
কাব্যঃ কতো বড় সাহস মেয়েটার আমার তানিশাকে মারতে চাচ্ছিলো,,,তানিশা তানিশা তুমি ঠিক আছো তো( পাগলামি করে)
মেহেন্তাঃ তুমি এখানে কেন???
কাব্যঃ আমার বাচ্চা কোথায় বলো,,,আমার বাচ্চা আর তানিশাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাব( মেহেন্তার উদ্দেশ্যে)
মেহেন্তাঃ Are You sick,, Kabbo??
কাব্যঃ চলো তানিশা আমরা চলে যায় (তানিশার হাত ধরে)
তানিশাঃ ছাড়ুন আমাকে
শুভ্রঃ তানিশার গায়ে হাত দিবি না একদম
কাব্যঃ আমার আর তানিশার মধ্যে যে আসবে সেই মরবে
শুভ্রঃ ছাড় তানিশাকে
কাব্যঃ ওকে তাহলে তুই ই মর
কাব্য শুভ্রের দিকে বন্ধুকটা তাক করে,,যেই গুলি করতে যাবে তখনই পেছন থেকে আরেকটা গুলি এসে কাব্যের বুকে লাগে।পুলিশেরা গুলি করে কাব্যকে
আসলে কাব্য জেল থেকে পালিয়ে আসছিলো,,,তানিশাকে নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য।এই কয়েক মাসে পুরো পাগল হয়ে গেছিলো কাব্য,,এইটাই নাম জপছিলো তানিশা তুমি আমার,,আমি সবাইকে মেরে দিবো।
অফিসারঃ আপনারা ঠিক আছেন তো?? আর এই মেয়েটা কে??
শুভ্রঃ মেয়েটির নাম সাবরিনা,,,সে আমার ওয়াইফ তানিশাকে মারতে চাইছিলো পেছন থেকে কাব্য মেয়েটিকে গুলি করে।
এতো রক্তারক্তি দেখে তানিশা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরে,,,শুভ্র সব মিটাতে থাকে,,,আর বাকিরা তানিশাকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসে।শুভ্র থানায় গিয়ে সাবরিনার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ দিয়ে বাড়িতে ফিরে,,
শুভ্রঃ তানিশা কেমন আছে এখন
আয়ুশিঃ ডাক্তার ওকে একটা ঘুমের ইনজেকশন দিছে,,,আর ওর প্রতি বিশেষ খেয়াল নিতে বললো কারণ আর মাএ ১৫ দিন পর ডেলিভারি
শুভ্রঃ তোমরা কি আজ চলে যাবে
আরিয়ানঃ এখন যাওয়া পসিবল না
শুভ্রঃ আমিও চায়না তোমরা যাও,,আর তানিশা একটু সুস্থ হলে গ্রামে নিয়ে যাব,, তোমরাও তো যাবে তাইনা
আদিঃ আচ্ছা আমরাও যাব তার আগে তানিশাকে সুস্থ করা জরুরি
শুভ্রঃ হুম
শুভ্র রুমে এসে দেখে তানিশা নিষ্পাপ বাচ্চার মতো ঘুমাচ্ছে,, এই মেয়েটার নাকি আর কয়েকটা দিন পর বেবি হবে ভাবতেই মুচকি হাসলো শুভ্র।তানিশার পাশে বসে চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলো এমন সময় তানিশার ঘুম ভেঙ্গে যায়
তানিশাঃ শুভ্র,, (কান্না করতে করতে)
শুভ্রঃ কি হয়ছে পাগলি কাঁদছো কেনো??
তানিশাঃ তুমি ঠিক আছো তো
শুভ্রঃ এই দেখো আমি একদম ঠিক আছি,,,তুমি মেডিসিন গুলো খেয়ে নাও তো
তানিশাঃ আমি যদি মরে যায় আমার বাচ্চার খেয়াল রেখো
শুভ্রঃ মরবা মানে তুমি বলেছিলেনা আমরা দুজনে বুড়ো-বুড়ি হয়ে আকাশের চাঁদ দেখবো,,এইসব আজেবাজে চিন্তা মাথা থেকে বের করে দাও তো,,এই নাও মেডিসিন লক্ষ্ণি মেয়ের মতো খেয়ে নাও
তানিশাও আর কথা না বলে মেডিসিন খেয়ে নেয়।
শুভ্রঃ তুমি এখন কেমন ফিল করছো
তানিশাঃ ভালো
শুভ্রঃ কালকে কি গ্রামে যেতে পারবা
তানিশাঃ হুম
শুভ্রঃ তুমি একটু রেষ্ট নাও আমি ওদের বলে আসি
তানিশাঃ আচ্ছা
শুভ্র গিয়ে ওদের বলতে লাগলো,,, তানিশা বসে বসে সেই অতীত থেকে সব ভাবতে থাকে,,কতো বাধাই না আসলো তানিশা আর শুভ্রের জীবনে। কিন্তু কিছু বিপদ,,কিছু কষ্টের জন্য আজ দুজনে একএে হতে পেরেছে এখন কেউ চাইলেও তাদের আলাদা করতে পারবেনা।
এসব ভাবতে ভাবতে বসা অবস্থায় ঘুমিয়ে পরেছে,,শুভ্র এসে তানিশাকে ঠিক করে শুইয়ে দিলো।ওইদিকে,, আয়ুশি আর মেহেন্তা ঘুমাইছে একরুমে আর অন্য রুমে আদি আর আরিয়ান।আদির কিছুতেই ঘুম হচ্ছে না তাই আয়ুশিকে মেসেজ করে জ্বালিয়েই যাচ্ছে
সকালে,,,,
শুভ্র সব আগে থেকেই গুছিয়ে রেখে তানিশাকে রেডি করে সবাই মিলে বেড়িয়ে পরলো,,,তানিশা বাসে কম্ফোর্ট নয় বলে ট্রেনে যাচ্ছে
আদি আয়ুশি একসাথে,,আয়ুশি আদির কাধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে রাতে ঘুমাতে পারেনি বলে,,,আরিয়ান আর মেহেন্তা তার সামনে বসা দুজন একে অপরের সাথে কথা বলছে।আর তার পাশে শুভ্র আর তানিশা,,তানিশা সব আচারের বয়ম ট্রেনেই শেষ করে ফেলবে এমন অবস্থা
শুভ্রঃ এতো আচার খাচ্ছো বলেই হেলডি কিছু খেতে পারোনা,,,এইগুলো রাখো(বয়ম গুলো নিয়ে)
আপেল আঙ্গুর,,কমলা হাতে দিয়ে বলে এগুলো খাও,,তানিশা একটা ভেংচি কেটে
রাগে রাগে খেতে থাকে
অবশেষ পৌছে,,,,
নিজের এলাকায় এসেই প্রাণ জুড়িয়ে গেলো তানিশার,,,বাড়িতে এসেই রেষ্ট নিতে না নিতেই তানিশার পরিবার আর শশুড় বাড়ির লোকজন এসে জুড়ে বসলো।
তানিশার মাঃ এই তুই কই ছিলি,,কতো ফোন দিছি খুঁজেছি একবারও পায়নি।আমাদের কথা একবারও ভাবলি না( কান্না করতে করতে)
শুভ্র এসে সবাইকে থামালো যাতে তানিশার উপর কোন প্রেশার না পরে,,এমনি বেচারির এই অবস্থা আবার এতো জিজ্ঞেসা তানিশারও সহ্য হচ্ছিল না।।।
শুভ্র তানিশাকে রেষ্ট নেওয়ার জন্য নিজের রুমে নিয়ে আসে,,
শুভ্রঃ তুমি রেষ্ট নাও আমি খাবার আনছি
তানিশাঃ খাব না আমি
শুভ্রঃ আমি কোন কথা শুনবো না খেতেই হবে আর বাড়ির সবাইকে আমি বুঝাচ্ছি তুমি চিন্তা করো না
আয়ুশি মেহেন্তা আদি,,আরিয়ান মিলে অলরেডি সবাইকে বুঝিয়ে দিছে,,সবাই এখন নিশ্চিন্ত হলেও তানিশার মা কিছুতেই শান্ত হতে পারছে না
তানিশা মাঃ বাবা তুমি কি তানিশার খাবার দিচ্ছো
শুভ্রঃ জ্বী, মা
তানিশার মাঃ আমি ওকে খাইয়ে দি
শুভ্রঃ হুম অবশ্যয়,,এই নিন
তানিশার মা খাবার নিয়ে রুমে চলে আসে তানিশা ওর মাকে দেখে উঠে বসে,,,
তানিশার মাঃ এ কি অবস্থা করেছিস মা,,তোর বাবা দেখেছিস কি অবস্থা তোর টেনশনে
তানিশা মাথা নিচু করে রইলো এমন সময় তানিশার বাবাও রুমে চলে আসলো,,
তানিশার মাঃ এই নে মা একটু খেয়ে নে
তানিশাও বাধ্য মেয়ের মতো খেতে লাগলো তানিশার আব্বু তার মেয়ের এমন অবস্থা দেখে কাঁদতে লাগলো,,পুরুষ তো সহজে কাঁদে না তাও সে যদি হয় একজন বাবা
তানিশাঃ আব্বু তুমি কাঁদছো কেনো
আব্বুঃ তোর এই অবস্থা আমি দেখতে পারছিনা মা,,আজ তুই যদি আমার কাছে থাকতিস তাহলে এমন অবস্থা হতো না,,কি করেছিস আয়নায় দেখেছিস( চোখ মুছে)
তানিশাঃ আমি তো এখন ঠিক আছি আব্বু প্লিজ কান্না করোনা তাহলে আমিও কান্না করে দিব( বাচ্চাদের মতো করে)
তানিশার এমন কথা এবার তানিশার আব্বু একটু হাসলো,,,
আব্বুঃ বুঝলে তানিশার মা আমাদের তানিশা সেই আগের মতোই আছে
আম্মুঃ হুম তাই তো দেখছি
আব্বুঃ শোন মা যখন যা খেতে মন বলবে তখন আমাকে বলবি আর ডেলিভারি কবে মা
তানিশাঃ আর ১৫ দিন পর
এইভাবেই তারা কথা বলতে লাগলো শুভ্র আড়ালে সব শুনলো,, শুভ্রের চোখেও আজ পানি টলমল করছে
দুদিন পর,,
তানিশার পরিবারের সবাই একসাথে বসেছে তানিশার কথা মতো,,,
তানিশাঃ বড় চাচ্চু
বড় চাচ্চুঃ হ্যাঁ মা বল
তানিশাঃ আমি চায় তুমি মেহেন্তা আপুর বিয়ে ঠিক করো
বড় চাচ্চুঃ কথা তো খারাপ বলিসনি,,তো পাএ খুঁজতে হবে
তানিশাঃ পাএ রেডিই আছে
বড় চাচ্চুঃ কে সে??
তানিশাঃ শুভ্রের মামাতো ভাই আরিয়ান,,আর ও মেহেন্তার আপুর সম্পর্কে সব জেনে ভালোবাসে ইভেন মেহেন্তা আপুও আরিয়ান ভাইয়াকে ভালোবাসে
মেহেন্তা এবার মাথা নিচু করে আছে,,মেহেন্তা আপু কাউকে কিছু বলিনি শুধু পাষ্টের কারণে
বড় চাচ্চুঃ সবাই যখন রাজি আমরাই বা বাদ থাকি কেনো? বাট আমার একটা সর্ত আছে
তানিশাঃ কি চাচ্চু
বড় চাচ্চুঃ বিয়েটায় পারিবারিক যা আয়োজন হবে বাইরের লোক আসবে না
আরিয়ানঃ আমার কোন আপত্তি নেই
তানিশাঃ যাক সবাই যখন রাজি তাহলে কেনাকাটা শুরু করা যাক
বড় চাচ্চুঃ তোরা কেনাকাটা করবি কারণ,, তোদের পছন্দ অনেক ভালো
পরের দিন,,
ছয়জনে মার্কেটে গেলো,,তানিশাকে আনতে চাইছিলো না বাট তানিশার যে জেদ কেউ আটকাতেও পারলো না,,
সবাই সবার মতো চয়েজ করছে,,শুভ্র তার বেবি আর বেবির মায়ের জন্য অনেক জিনিস কিনেছে,,,মেহেন্তার একটা বেনারসি কিনলো,,,,আয়ুশি সবার থেকে চয়েজ করতে করতে কিছুটা দূরুত্বে চলে এসেছে এমন সময় আয়ুশি নাম ধরে কেউ ডাকলো,,তখন আয়ুশি পেছনে ঘুরে দেখে আকাশ দাড়িয়ে আছে
আকাশঃ আমি জানি আমি ভুল করেছিলাম তাই বলে এতো বড় শাস্তি দিলে আমাকে??
আয়ুশিঃ নিশ্চুপ
আকাশঃ আমাকে ক্ষমা করে দাও আয়ুশি চলো আমরা নতুন করে সব শুরু করি
আয়ুশিঃ আদি এখানে একটু শোন( চিল্লিয়ে)
আয়ুশির চিল্লানো শুনে আদিসহ সবাই চলে আসে,,
আয়ুশিঃ My husband Adi,,,আর তোমাকে আমি অনেক আগেই ক্ষমা করে দিছি
আকাশ যেন আয়ুশির কথা বিশ্বাস করতেই পারছেনা কারণ,, এর আগে আকাশ যা বলেছে তাই শুনেছে আয়ুশি,,আকাশ জানতো আয়ুশি তাকে অনেক ভালোবাসতো,তাকে ছাড়া কোথাও যাবেনা বাট হয়তো ভুলটা বুঝতে পেরেছে।
আয়ুশিঃ তোমার নাকি সংসার টিকছে না,,একটা কথা মনে রেখো কাউকে এতোটাও কষ্ট দিওনা যে সে বদলে যায় বা ডিভোর্সের কথা ভাবে।তাই এতোটুকুই বলবো নেক্সট টাইম কাউকে বিয়ে করলে এট লিষ্ট তাকে বুঝার চেষ্টা কইরো, যেমনঃ আবির নিতির সংসার এখনো টিকে আছে,, শুভ কামনা রইলো
এই বলে আয়ুশি আদির হাত ধরে ওর সামনে থেকে চলে গেলো আমরাও চলে আসলাম।
দুদিন পরেই মেহেন্তা আর আরিয়ানের বিয়ে হয়ে গেলো চাচ্চুর কথা অনুযায়ী,, প্রকৃত সুখ ঠিকি আসে যদি ধৈর্য ধারণ করা যায়।প্রতিটি সম্পর্ক ভাঙার আগে দুজন দুজনকে একমাসের জন্য টাইম দেওয়া উচিত হয়তো এই এসমাসে দুজন দুজনকে বুঝে নিলো তাহলে ডিভোর্সের আর কি দরকার হলো
”
”
”
”
”
১৫ দিন হওয়ার দুইদিন আগে হঠাৎ তানিশার অনেক পেইন ওঠে,,শুভ্রের ভয়টা চুড়ান্তে পৌছে যায়….
তানিশাকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে সিফট করানো হয়,,,তানিশার অবস্থা খুব সিরিয়াস হয়ে পরে,,,ডাক্তার বেশ কিছুক্ষণ পরে এসে বলে,,
ডাক্তারঃ মি. শুভ্র কে??
শুভ্রঃ জ্বী আমি
ডাক্তারঃ আপনার ওয়াইফের অবস্থা খুব খারাপ,,খুব রিস্ক ডেলিভারি করাটা,,যে কোন একজনকে বাঁচাতে হবে,,আর ব্লাড শর্ট,, আপনি কাকে বাঁচাতে চান
শুভ্রের বুকে কেউ হাতুড়ি দিয়ে পিটাচ্ছে,,নিজের সন্তান আর বউয়ের মধ্যে যেকোন একজনকে বাঁচানোর কথা আসলেই একজন বাবার কাছে একটা বিশাল প্রশ্ন,,শুভ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,,
শুভ্রঃ আমি আমার ওয়াইফকে বাঁচাতে চায়
ডাক্তারঃ কিন্তু আপনার ওয়াইফ বাচ্চাকে বাঁচাতে চায়
শুভ্রঃ আমি কি ওর সাথে কথা বলতে পারি এখন
ডাক্তারঃ দ্রুত,, সময় কিন্তু কম
শুভ্র দৌড়ে তানিশার ওটিতে গেলো,,
”
”
”
”
চলবে….
(বানান ভুল হলে মাফ করবেন)