#যদি_প্রেম_দিলে_না_প্রাণে,পর্ব ৪
রিয়া সেন দত্ত
—দুপুরে ইন্দ্রানী আর সুপ্রতীক বসু ভিলায় এসেছে | সেখানে কয়েকদিন থেকে আবার অপর্ণার সাথে দেখা করে আলিপুরদুয়ার ফিরে যাবে | সুপ্রতীককে যা করতে হবে, তা এর মধ্যেই করতে হবে | তীর্থ ছেলেটি সৎ, যতদূর সম্ভব নিরপরাধও | কাজেই এই লড়াই তে অপর্ণাকে সাহায্য সুপ্রতীককে করতেই হবে |
ওদিকে মৈনাক এর সাথে সুপ্রতীক এর দীর্ঘদিন পর দেখা | অপর্ণা আসবে না | এতো কাছে থেকেও সে আসতে চায় না | কিন্তু কেন? মৈনাক তো তাকে মেনে নিতে প্রস্তুত তাও কেন? এসবই বসে বসে ভাবছিলো মৈনাক | অপর্ণাকে সেদিন কোর্টে দেখার পর থেকেই মৈনাক একবার তার সাথে দেখা করতে চায় কিন্তু আজ আর সেটা সম্ভব না | ওরা একে অপরের প্রতিপক্ষ মামলাগত কারণে | তার ওপর অপর্ণার প্রতি স্বামী হিসেবে নিজের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা তাকে লজ্জিত করে | তাই আজ জামাইবাবুর থেকেই অপর্ণার যাবতীয় খোঁজ সে নেবে |
…..আজ অনেকদিন পর সারাদুপুর শালা – জামাইবাবুর আড্ডা চলবে | গত কয়েকবছরে এই চিত্রটা বাড়ির সবাই ভুলতে বসেছিল | এককালে সুপ্রতীক বাড়ি আসা মানেই মৈনাক এর পোয়া বারো | সারাদিন জামাইবাবুর সাথে বাড়ির পেছনে বাড়ির পুকুরে মাছ ধরা, গাড়ি নিয়ে কাছে পিঠে যাওয়া এসবই চলতো | মৈনাক নিজের যাবতীয় কথা সব বলতো সুপ্রতীককে | মল্লিকার সাথেও খুব ভালো সম্পর্ক ছিল সুপ্রতীকের |
❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤
—সেরাতে যখন অপর্ণার সাথে মৈনাক ওভাবে ব্যবহার করলো তখন মনপ্রভা একটাই সমাধান পেয়েছিলো সুপ্রতীক | কিন্তু সুপ্রতীক আসবে শুনে মৈনাক নিজেকে কাজের মধ্যে এতটাই ব্যস্ত করে রাখলো যাতে জামাইবাবুর মুখোমুখি তাকে না হতে হয় | যতদিন বাড়িতে সুপ্রতীক ছিল মৈনাক রাতেও চেম্বারে থাকত | অপর্ণার বেহুঁশ জ্বরের সময় ও মৈনাক দেখতে যায়নি | জ্বর কমলে সুপ্রতীক অপর্ণার সাথে কথা বলে স্বাভাবিকভাবেই |
অপর্ণার মনে তখন সেই রাতের প্রভাব এতটাই পড়েছিল যে সে দিনদিন চুপচাপ হয়ে যাচ্ছিলো | মৈনাক তাকে ভালোবাসে না সে জানে, কিন্তু এতটা ঘৃণার পাত্র কেন সে তা একবার সুপ্রতীককে জিজ্ঞেস করলে সুপ্রতীক ও কোনও জবাব দিতে পারে না |
— ফিরে যাওয়ার দুদিন আগে বাধ্য হয়ে সুপ্রতীক নিজেই চেম্বারে গিয়ে মৈনাকের সাথে কথা বলে | মৈনাকের সাথে কাজ নিয়ে কথা বলতে বলতেই তার নতুন স্ত্রী এর সাথে কেমন সময় কাটছে জানতে চাইলে মৈনাক বিরক্তির সাথে উত্তর দেয় তাকেও | সুপ্রতীক শেষ অবধি শুধু বলে ”বিয়ে হয়ে গেছে এখন তো আর কিছুই করার নেই, তুমি নিজেই রাজি হয়েছিলে বিয়েতে বরং ওর মতামতটাই কেউ নেয়নি – মেয়েটি অসহায় ওর মা নেই বাবা দায়িত্বজ্ঞানহীন – ওর যদি কেউ থেকে থাকে তা কেবল তুমিই আছ, ওর ভরসা হয়ে দাঁড়াও, ও ভালো মেয়ে |”
মৈনাক জানিয়ে দেয় সুপ্রতীককে, তার পক্ষে মল্লিকার জায়গায় ওই মেয়েটিকে বসানো সম্ভব নয় | আর অপর্ণা মিথ্যে বলছে | যা হয়ে গেছে তার জন্যে তার মা দায়ী, সে নিজে নয় | এমন উত্তর শুনে সুপ্রতীক কোনও কিছু না বলে চলে যায় | সে বোঝে মৈনাক এখন সবরকম বোঝানোর উর্দ্ধে চলে গেছে |
এদিকে আরেক বিপত্তি বাধে ইন্দ্রানী সুপ্রতীকের ফিরে যাওয়ার দিন যত এগোয় অপর্ণা ততই ইন্দ্রানীকে আঁকড়ে ধরে | কিছুতেই ছাড়তে চায় না তাকে | সুপ্রতীক বাধ্য হয়ে একাই ফিরে যায় | মনপ্রভা অপর্ণার ব্যাপারে নিজেকেই দোষারোপ করে চলেন | সুপ্রতীক যাওয়ার পর মৈনাক ও মগ্ন হয়ে ভাবতে থাকে সে যা করেছে তা ঠিক না ভুল!
❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤
ওদিকে অপর্ণা আস্তে আস্তে শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে | ঐটুকু মেয়ে তার ওপর গ্রামের | এতো কিছু সে জানবে কি করে? ইন্দ্রানীর খুব রাগ হয় নিজের ভাই এর ওপর | তার থেকেও বেশি রাগ হয় নিজের মা এর ওপর | ছেলে ছেলে করেই মনপ্রভা ছোট থেকে একটু ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তেন | ছেলের দোষ ধরার সময় খানিক অন্ধ হয়ে যান |
–ইন্দ্রানী অপর্ণার আরো কাছের হওয়ার জন্যে মৈনাকের আর তার নিজের ছোটবেলার গল্প শোনাতে থাকে | কিন্তু অপর্ণা সে রাতের পর থেকে সবসময় চুপচাপ থাকে | মৈনাককে দূর থেকে দেখলে ভয়ে লুকিয়ে পড়ে | ব্যাপারটা মৈনাক ও লক্ষ্য করে | বাধ্য হয়ে ইন্দ্রানী তার মা এর সাথে আলোচনা করে অপর্ণাকে একজন মনের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তিনি অপর্ণাকে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যেতে বলেন | এই কাজটা মৈনাক করলে সবচেয়ে ভালো হত কিন্ত সে তো রাজিই হবে না | কাজেই বাধ্য হয় ইন্দ্রানী নিজের সাথে অপর্ণাকে আলিপুরদুয়ার নিয়ে যেতে | মনপ্রভা না করেননি এতে | অপর্ণা চলে যায় আলিপুরদুয়ার |
…..প্রকৃতির সানিধ্যে এসে অপর্ণা ধীরে ধীরে ঠিক হতে শুরু করে | সুপ্রতীক আর ইন্দ্রানীর কোনও সন্তান নেই | কিন্তু স্বামী-স্ত্রী র মধ্যে কি যে অগাধ ভালোবাসা সেটা অপর্ণা অনুভব করতো | দেখে খুব ভালো লাগতো | মৈনাকের কথা মনে পড়ে অপর্ণার | ওই রাগী মুখটার আড়ালে একটা অন্য মানুষকে যেন ও দেখতে পায় | কিন্তু এখানে আসার পর প্রায় একমাস হতে চললো তাও মৈনাক একবারও তার খোঁজ নেয়নি | অপর্ণার মনে একটা শূন্যতা তৈরী হয় | উদাস হয়ে দূরে চেয়ে থাকে | আগের থেকে কথা একটু আধটু বলে | সুপ্রতীক মাঝেমধ্যেই ছোট গিন্নী বলে নিজের কাজের গল্প শোনায় অপর্ণাকে | অপর্ণাও মন দিয়ে শোনে সেসব গল্প | তার ইচ্ছে হয় আবার পড়াশোনা করার |
❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤
— ইন্দ্রানীর কাছ থেকে মল্লিকার ব্যাপারে জেনেছে অপর্ণা | মৈনাক মল্লিকাকে ভালোবেসে “মলি” ডাকতো | মলি চলে যাওয়ার পর থেকেই মৈনাকের এমন পাগল পাগল দশা | সে কাজের মধ্যেই বেঁচে আছে | চলমান যন্ত্রের মতো সে শুধু কাজ করে | কোনোদিকে খেয়াল রাখে না – কিন্তু মৈনাক ছিল হাসি খুশি মানুষ – এমনিতে কম কথা বললেও মিশুকে ভদ্র স্বভাবের ছেলে ছিল – ছোট থেকে ওকালতি করার বিশেষ ইচ্ছে না থাকলেও পরবর্তীকালে বাবার কথায় এই পেশার সাথে যুক্ত হয় | মৈনাক খুব ভালো আঁকত | মলি চলে যাবার পর সেসবের পাঠ চুকেছে |
স্টাডি রুমে মলির ছবিটা মৈনাকের নিজের হাতে আঁকা | ওটা মলিকে প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে মৈনাক দিয়েছিলো | দুজন যেন দুজনের জন্যেই তৈরী হয়েছিল | অগাধ ভালোবাসা ছিল একে অপরের প্রতি |
বিয়ের দুবছরের মাথায় গাড়ি দুর্ঘটনায় মল্লিকা মারা যায় | মৈনাক তখন কাজের জন্যে এলাহাবাদে | একটু একটু করে সবে পসার শুরু হয়েছে | হঠাৎ ঝড়ে ওর জীবনটা ওলোট পালট হয়ে যায় | নিজেকে একটা শক্ত আবরণে ঢেকে রেখে যাহোক করে বেঁচে আছে |
মল্লিকার সাথে মৈনাকের আলাপ হয় ওদেরই এক বন্ধুর বিয়েতে | তারপর প্রেম পর্ব | মল্লিকার বাবা প্রফেসর, মা ফ্যাশন ডিসাইনার | মল্লিকা নিজেও ছিল তার মা এর মতো ফ্যাশন ডিসাইনার | আধুনিকা, সুন্দরী, শিক্ষিতা, মার্জিত একেবারে বসু ভিলার আদর্শ বৌ | আর মৈনাকের চোখের মণি |
—কিন্তু যেদিন দুর্ঘটনাটা হয় সেদিন ওর কাজে যাওয়ার সময় ড্রাইভার ছুটিতে থাকায় বাড়ির গাড়ি না নিয়ে রাস্তা থেকে ট্যাক্সি ধরে বেড়িয়ে যায় | একটা বাসের সাথে ট্যাক্সিটার রেষারেষি করতে গিয়ে দুর্ঘটনাটা ঘটে | মৈনাক ফিরে এসে ওর মল্লিকার সাদা চাদরে ঢাকা শরীরটা দেখেছিল | মৈনাক একফোঁটা চোখের জল ফেলেনি সেদিন | পাথরের মতো দাঁড়িয়ে দেখেছিলো ওর মলির শরীরটা পুড়ে যেতে | সেই যে চুপ করে গেল আর কথা বলতো না কারোর সাথে | একমুখ দাড়ি নিয়ে বসে থাকতো | জীবন থেকে বাঁচার ইচ্ছেটুকু চলে গেলো | সারাদিন শুধু কাজে ডুবে থাকলো | মদ ধরলো | চোখের সামনে ছেলের এরকম অবস্থা কোন মা মেনে নিতে পারে | মনপ্রভাও পারেনি | সব শুনে অপর্ণার চোখে জল চলে আসে |
ইন্দ্রানী অপর্ণাকে ওর পড়াশোনার ব্যাপারে জানতে চাইলে অপর্ণা সব খুলে বলে | সব শুনে ইন্দ্রানী অপর্ণাকে আবার পড়াশোনা শুরু করার কথা বলে | অপর্ণা নিজেই ইন্দ্রানী আর সুপ্রতীককে জানায় সে আইন নিয়ে পড়তে চায় | ভবিষ্যতে ওকালতি করার ভীষণ ইচ্ছে তার | শুনে ইন্দ্রানী আর সুপ্রতীক ভীষণ খুশি হয় | সুপ্রতীক বুঝতে পারে এই মেয়েই পারবে মৈনাক বসুকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে | অপর্ণা ইন্দ্রানীর বাড়িতে থেকেই আবার পড়াশোনা শুরু করে | তাকে যে পারতেই হবে | নিজের সম্মান আদায় করে নিতেই হবে |
❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤
মৈনাক ইন্দ্রানীর কাছ থেকে পরে খবর পেয়েছিলো অপর্ণা আইন নিয়ে পড়াশোনা করছে যদিও এবিষয়ে জানার তার খুব একটা আগ্রহ ছিল না | এরমধ্যে গ্রামে অপর্ণার বাবা হঠাৎ অসুস্থ হলে চিঠি আসে বসু ভিলায় | চিঠিটা সেদিন বাড়ির কাজের লোক মৈনাকের হাতেই দেয় | বিয়ের পর একবারও মৈনাক সে মুখো হয়নি | কিন্তু এবার কৌতূহলবশত কিছু জানার জন্যে অদৃষ্টের টানেই একপ্রকার গ্রামে অপর্ণাদের বাড়ি যায় | সেখানে দেখে অপর্ণার বাবা মৃত্যুশয্যায় | মেয়ের বিষয়ে সব ঘটনা সেদিন মৈনাককে খুলে বলে | মৈনাক অবাক হয়ে যায় সেটা শুনে যে অপর্ণা সত্যি কিছুই জানত না | সম্পূর্ণ দোষ তার বাবার | যেমন তার নিজের মা এর ক্ষেত্রে |
এরপর অপর্ণার বাবার হাতে কিছু টাকা দিয়ে মৈনাক ফিরে আসে বসু ভিলায় | সারাদিন ভাবে যেদিন অপর্ণা তার দিদি ইন্দ্রানীর সাথে চলে যাচ্ছিলো | একবার শুধু তাকে বলতে এসেছিলো | চোখে একরাশ ভয় নিয়ে | সেদিন তার স্টাডি রুম এর বাইরে দাঁড়িয়ে বলেছিলো “আমার কেন দোষ নেই আমি সত্যিই কিছুই জানতাম না | ” মৈনাক সিগরেট খেতে খেতে শুধু আড়চোখে একবার দেখেছিলো কিছুই বলেনি |
… অপর্ণাকে নিয়ে যাওয়া নিয়ে মৈনাক কোনও মন্তব্যই সেদিন করেনি | মনে মনে চেয়েছিলো অপর্ণা বাড়ি থেকে, ওর চোখের সামনে থেকে চলে যাক | কিন্তু পরবর্তী সময় অপর্ণার বাবার কাছ থেকে সব জানার পর এক তীব্র অপরাধবোধে ভুগতে থাকে মৈনাক | একেই ওইটুকু মেয়ে বয়সে প্রায় কুড়ি বছরের ছোট তার চেয়ে এর ওপর এভাবে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে তার বাবা | মৈনাক নিজের ব্যবহার এর কথা মনে করে নিজেকেই ভৎসনা করে | মল্লিকার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা |
…. অপর্ণার ছবি নেই বিশেষ ওই বৌভাতের দিনের কয়েকটাই যা আছে – সেগুলো মন দিয়ে দেখে মৈনাক | এই প্রথম মৈনাক অপর্ণাকে মন দিয়ে দেখলো | নিষ্পাপ চোখ দুটো দেখে বড়ো মায়া হয় মৈনাকের | কিকরে পারলো সে এতো নিষ্ঠুর হতে?
❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤
এদিকে অপর্ণা কলেজে ভর্তি হবার পর থেকেই মন দিয়ে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে | এরই মধ্যে তীর্থর সাথে অপর্ণার আলাপ হয় কলেজে | সেখান থেকেই বন্ধুত্ব | অপর্ণা নিজেকে সবসময় একটু গুটিয়ে রাখতো | সবার সাথে মেলামেশা করতে পারতো না | অপর্ণার কলেজের কেউই জানতো না সে বিবাহিতা | সুপ্রতীক – ইন্দ্রানী সবাইকেই জানিয়েছিল তাদের এক আত্মীয়র মেয়ে এখানে থেকে পড়াশোনা করে | ছোট জায়গা সবাই তাই জানতো |
কোচিং ক্লাসের নোটস সব কিছুতেই অপর্ণা তীর্থকে সাহায্য করতো | তীর্থ কলেজে যেত ঠিকই কিন্তু ইউনিয়ন রুমে কাটাতো বেশিক্ষন | মাঝে মধ্যে ক্লাসে আসতো | আগাগোড়াই ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল | আসলে তীর্থ মানুষের জন্যে কিছুই করতে চাইতো | তীর্থর বাড়িতে শুধু মা আছে বাবা অন্য জায়গায় সংসার পেতে চলে গেছে | তার মা বাড়িতে খাবার হোম ডেলিভারি দেয় | তীর্থ মনে মনে অপর্ণাকে পছন্দ করে সেটা জানায় | প্রথমে অপর্ণা রাগ করে বেশ কয়েকদিন কথা বন্ধ করলেও পরে তীর্থ নিজের এসে ঠিক করে সব | অপর্ণা সব কথা জানায় তীর্থকে |
তীর্থ ভীষণ কষ্ট পেলেও অপর্ণাকে বুঝতে দেয় না শুধু বলে যদি কখনো কোনও সমস্যা হয় তার দরজা অপর্ণার জন্যে চিরকাল খোলা থাকবে | কিন্তু অপর্ণা নিজের প্রতিজ্ঞায় অবিচল | শুধু বাড়ি এসে ইন্দ্রানীকে তীর্থর ব্যাপারে জানালে, ইন্দ্রানী অপর্ণাকে বলে জীবনে এমন কোনও ভুল যেন না সে করে যাতে তার নিজের বিবেককে জবাবদিহি করতে হয় | ইন্দ্রানী বিষয়টি সুপ্রতীককে জানালে সে বলে অপর্ণার ওপর তার ভরসা আছে |
এদিকে ধীরে ধীরে সময় কাটলো | অপর্ণা আর তীর্থ ভীষণ ভালো বন্ধু হয়ে উঠলো একে অপরের | তীর্থর বাড়ি ও অপর্ণা গিয়েছিলো | যদিও ব্যাপারটা ইন্দ্রানীর সেদিন খুব একটা ভালো লাগেনি | এরপর থেকে ইন্দ্রানী অপর্ণাকে ছেলেটির সাথে খুব বেশি মেলামেশা করতে দিতে চাইতো না | যদি অপর্ণা কোনও ভুল করে বসে | বছর কাটতে লাগলো এক এক করে | তীর্থ আস্তে আস্তে দলের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো | ফাইনাল ইয়ারে অপর্ণা পরীক্ষায় বসলো ঠিকই কিন্তু তীর্থ দলের কাজের জন্যে বসতে পারে না | কলেজ ছাড়ার পর অপর্ণার সাথে তার যোগাযোগ ফোনেই হত | ধীরে ধীরে সেটাও কমলো | আসলে তীর্থ নিজে থেকেই সরে গেছিলো সেদিন কারণ সে জানত অপর্ণাকে ফিরে যেতে হবে মৈনাকের কাছে | তাই মনের ভালোবাসা মনে রেখে সে নিজের কাজ নিয়ে নতুন উদ্যোমে লেগে পড়লো |
অপর্ণার পরীক্ষা শেষ হয়ে রেজাল্ট বেরোলে খুব ভালো ফল করে |
❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤
সুপ্রতীকের কাছে থেকে হাতে কলমে সব শেখে অপর্ণা | সুপ্রতীকের সাথে প্রতিদিন কোর্টে গিয়ে বসে দেখত কোর্টের কাজ | এভাবে কয়েক বছর কেটে গেলে অপর্ণা কলকাতায় চলে আসে কিন্তু বসু ভিলায় ফেরে না | সে সুপ্রতীকের ফ্ল্যাটে থাকা শুরু কিরে সব ব্যবস্থা সুপ্রতীক করে | যদিও এ বিষয়ে ইন্দ্রানী নিমরাজি ছিল তাও অপর্ণার কথা ভেবে তার সিদ্ধান্তে সায় দেয় |
এরপর মৈনাকের কাছে অপর্ণার বাবার মৃত্যু সংবাদ আসে | সে আরেকবার সেই গ্রামে যায় | ফিরে আসার পর কাউকে এ সংবাদ সে জানায়নি এমনকি অপর্ণাকেও না | এতগুলো বছরে দিদি জামাইবাবু দু একদিনের জন্যে আসলে নিজেকে চেম্বারে বন্দী রাখত | অপর্ণা ওকালতি পড়ছে জেনে প্রথমে একটু অবাক হলেও বিশেষ গুরুত্ব দেয় না | কিন্তু অপর্ণার বাবার সাথে দেখা করার পর থেকে মৈনাকের অপর্ণা সম্পর্কে ধারণার খানিক বদল ওদের শেষ হতে যাওয়া সম্পর্ককে নতুন আলোর দিশা দেখাতে শুরু করে | অপর্ণা কলকাতায় তার ই জামাইবাবুর ফ্ল্যাটে থাকে | মৈনাকের ইচ্ছে করে একবার যাওয়ার | চরম দ্বন্দ্ব নিয়ে নিজের মনকে বোঝায় সে যা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য | তাই ওই মেয়েটিকে আইনত মুক্তি দেওয়াই হয়তো তার উচিত কাজ হবে |
❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤
(চলবে